পরিচ্ছেদঃ ২৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান
১১০৬-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে রাত্রে ছিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের পেছন দিয়ে তাঁর হাত দ্বারা আমার হাত ধরে পেছন দিক দিয়ে নিয়ে আমাকে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْمَوْقِفِ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: بِتُّ فِي بَيت خَالَتِي مَيْمُونَةَ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِيَدِي مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ فَعَدَلَنِي كَذَلِكَ مِنْ وَرَاءِ ظَهره إِلَى الشق الْأَيْمن
ব্যাখ্যা: হাদীসটির বাচনভঙ্গি থেকে বুঝা যায়, মুক্তাদী একজন হলে সে ইমামের ডানদিকে বরাবর হয়ে দাঁড়াবে, আগে-পিছে হবে না। মুহাম্মাদ বিন হাসান থেকে বর্ণিত; মুক্তাদী সে তার দু’পায়ের আঙ্গুলগুলো ইমামের পায়ের গোড়ালির নিকট রাখবে। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, ইমামের বরাবর হয়ে দাঁড়ানো অপেক্ষা কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়ানো মুস্তাহাব। ইমাম শাওকানী বলেন, এ ব্যাপারে আমি যা জানি তা হচ্ছে এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই। উল্লেখিত হাদীস থেকে যা শিক্ষা নেয়া যায়ঃ
১। দু’ ব্যক্তিতে জামা‘আত হয়; ইমাম ইবনু মাজাহ এর উপরে (باب الاثنان جماعة) অর্থাৎ ‘‘দু’ ব্যক্তিতে জামা‘আত’’ এ শিরোনামে একটি অধ্যায় বেঁধেছেন।
২। একজন শিশু ও একজন প্রাপ্তবয়স্ক এমন দু’জনের মাধ্যমেও জায়াত সংঘটিত হতে পারে কেননা এক শব্দে ইবনু ‘আব্বাস-এর বয়স সম্পর্কে এসেছে তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলাম তখন আমি দশ বছরের বালক..... শেষ পর্যন্ত। আহমাদ একে সংকলন করেছেন। ইবনু তায়মিয়্যাহ্ ‘মুনতাক্বা’ গ্রন্থে এ ব্যাপারে অধ্যায় বেঁধেছেন, দু’জনের মাধ্যমে জামা‘আত সংঘটিত হওয়ার অধ্যায় যাদের একজন শিশু। ‘আয়নী বলেন, হাদীসে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্কের পক্ষে প্রাপ্তবয়স্কের অনুসরণ করা জায়িয হওয়ার ব্যাপারে দলীল রয়েছে। এ ব্যাপারে ইমাম বায়হাক্বী তার সুনান গ্রন্থে অধ্যায় বেঁধেছেন। ইমাম শাওকানী বলেন, যারা একজন অপ্রাপ্তবয়স্কের সাথে প্রাপ্তবয়স্কের জামা‘আত সংঘটিত হওয়াকে অস্বীকার করে তাদের কথার উপর কোন দলীল নেই। তাদের (رفع القلم) হাদীসাংশ ছাড়া কোন দলীল হস্তগত হয়নি। আর (رفع القلم) হাদীস অপ্রাপ্তবয়স্কের সালাত বিশুদ্ধ না হওয়ার উপর প্রমাণ করে না এবং তার দ্বারা জামা‘আত সংঘটিত হওয়ার উপরও প্রমাণ করে না। আর প্রমাণ আছে বলে যদি ধরেই নেয়া হয় তাহলে অবশ্যই তা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)ও অনুরূপ হাদীস (আর ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীসে অপ্রাপ্তবয়স্ক কর্তৃক জামা‘আত সংঘটিত হওয়ার দিকটিই বোঝা যাচ্ছে)
৩। হাদীস থেকে বুঝা যায় যে ব্যক্তি ইমামতি করার নিয়্যাত করেনি মুক্তাদী কর্তৃক এমন ব্যক্তিরও সালাতের অনুসরণ করা যায়। ইমাম বুখারী এ ব্যাপারে একটি অধ্যায় বেঁধেছেন। মাসআলাটির ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে; হানাফীগণ বলেন, পুরুষ মুক্তাদীর ক্ষেত্রে ইমামের নিয়্যাতের শর্ত নেই যেহেতু পুরুষ মুক্তাদীর কারণে ইমামের ওপর অতিরিক্ত হুকুম আরোপ হয় না। তবে মহিলা মুক্তাদীর ক্ষেত্রে শর্ত, কেননা মহিলা পুরুষ ইমামের বরাবর হয়ে দাঁড়ানোতে ইমামের সালাত নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। ইমাম শাফি‘ঈর কাছে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত হচ্ছে মুক্তাদী পুরুষ বা মহিলা যেই হোক ইমামের ইমামতির নিয়ত করা শর্ত নয়। ইবনুল মুনযির এর স্বপক্ষে আনাস (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানে ক্বিয়াম (কিয়াম) করতেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশে দাঁড়ালাম আরও একজন এসে আমার পাশে দাঁড়াল। পরিশেষে আমরা একটি দলে পরিণত হলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের উপলব্ধি করলেন সালাতে সামনে বাড়ালেন উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ইমামতির নিয়্যাত করেননি পরে যখন সঙ্গে সাহাবীদের উপস্থিতি উপলব্ধি করলেন তখন তাদেরকে স্বীকৃতি দিলেন। হাদীস বিশুদ্ধ।
ইমাম মুসলিম একে বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী একে ‘সিয়াম’ পর্বে তা‘লিকভাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ ফরয এবং নফলের মাঝে পাথর্ক্য করেছেন। ফারযের (ফরযের/ফরজের) ক্ষেত্রে তিনি ইমামতির জন্য নিয়্যাতকে শর্ত করেছেন নফলের ক্ষেত্রে নয়। তবে তার মাসআলাটিতে ভাবার অবকাশ আছে কারণ তার মাসআলার বিপরীতে আবূ সা‘ঈদ-এর সুস্পষ্ট হাদীস রয়েছে যে, নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একাকী সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, এমন কোন লোক নেই কি, যে এ লোকটির ওপর সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতে অর্থাৎ তার সাথে সালাত আদায় করে তাকে জামা‘আতের সাওয়াব দান করবে। হাদীসটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন।
ইমাম তিরমিযী একে হাসান ও ইবনু খুযায়মাহ্, ইবনু হিব্বান, হাকিম একে সহীহ বলেছেন, আহলুল হাদীসের কাছে প্রাধান্যতর মাসআলাহ্ হচ্ছে ফরয ও নফলের মাঝে পার্থক্য না করা এবং পুরুষ মহিলার ক্ষেত্রে শর্ত না করা। আর তা মূলত পার্থক্যের ব্যাপারে হাদীস না থাকার কারণে।
৪। নফল সালাতে ইমামতি জায়িয এবং তাতে জামা‘আত করা বিশুদ্ধ মত।
৫। সালাতরত অবস্থায় সালাতের ভিতরের বিষয় শিক্ষা দেয়া জায়িয।
৬। নফল সালাতেও ফরয সালাতের মতো কথা বলা হারাম। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে ইবনু ‘আব্বাসকে সালাতের বিষয়ে ভুল ঠিক করে দিয়েছেন তবে কথা বলেননি।
৭। প্রয়োজনসাপেক্ষে সালাতরত অবস্থায় অল্প কাজ করলে সালাত নষ্ট হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান
১১০৭-[২] জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্যে দাঁড়ালেন। আমি এসে তাঁর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পেছন দিয়ে আমার ডান হাত ধরলেন। (পেছন দিয়ে টেনে এনেই) আমাকে ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তারপর জাব্বার ইবনু সাখর আসলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন। (এরপর) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দু’জনের হাত একসাথে ধরলেন। আমাদেরকে (নিজ নিজ স্থান হতে) সরিয়ে এনে নিজের পেছনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْمَوْقِفِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيُصَلِّيَ فَجِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَدَارَنِي حَتَّى أَقَامَنِي عَن يَمِينه ثُمَّ جَاءَ جَبَّارُ بْنُ صَخْرٍ فَقَامَ عَنْ يَسَارِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخَذَ بيدينا جَمِيعًا فدفعنا حَتَّى أَقَمْنَا خَلفه. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে বুঝা যায়, যখন ইমামের ডানদিকে কোন মুক্তাদী থাকবে তারপর আরেকজন মুক্তাদী এসে তার বামদিকে দাঁড়াবে তখন ইমামের পিছনে জায়গা থাকলে তার পক্ষে মুক্তাদীদ্বয়কে পেছনে ঠেলে দেয়া জায়িয রয়েছে। অতবা সামনে জায়গা থাকলে ইমাম নিজেই সামনে চলে যাওয়া জায়িয রয়েছে। এ ব্যাপারে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আগত সামুরার হাদীস প্রমাণ বহন করছে। তাতে সালাতে ইমামের পেছনে দু’ব্যক্তির দাঁড়ানোর কথা আছে। ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীসে অনেক উপকারিতা রয়েছেঃ
১। সালাতরত অবস্থায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বহির্ভূত অল্প কাজ করা বৈধ। প্রয়োজন সাপেক্ষে তা করা মাকরূহ নয়। তবে বিনা প্রয়োজনে মাকরূহ।
২। একজন মুক্তাদী হলে সে ইমামের ডানদিকে দাঁড়াবে। অন্যথায় বাম দিকে দাঁড়ালে ইমাম ডানদিকে করে দিবে।
৩। দু’জন মুক্তাদী হলে ইমামের পেছনে আলাদা কাতার করবে যেমন তিন বা ততোধিক মুক্তাদী হলে করতে হয়। এটি সকল ‘আলিমগণের অভিমত; ইবনু মাস্‘ঊদ এবং তার দুই সাথী ‘আলক্বামাহ্ ও আসওয়াদ ছাড়া। তাদের অভিমত মুক্তাদী দু’জন হলে তারা ইমামের ডানে বামে দাঁড়াবে তবে মুক্তাদী তিনজন হলে তারা ইমামের পেছনে দাঁড়াবে এ ব্যাপারে তারা একমত। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলবঃ ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে ‘আলক্বামাহ্ ও আসওয়াদ কর্তৃক যা বর্ণনা করেছেন তা হল তারা উভয়ে ‘আবদুল্লাহর কাছে পৌঁছলে অতঃপর ‘আবদুল্লাহ বলেন, তোমাদের পেছনে যারা রয়ে গেছে তারা কি সালাত পড়েছে? তারা উভয়ে বলল, হ্যাঁ, অতঃপর ‘আবদুল্লাহ তাদের মাঝে দাঁড়াল এবং তাদের একজনকে তার ডানদিকে ও অপরজনকে তার বামদিকে দাঁড় করালো। এরপর আমরা রুকূ‘তে গিয়ে আমাদের হাতগুলোকে আমাদের হাঁটুর উপর রাখলাম তখন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের হাতগুলোতে মারলেন, অতঃপর তার দুই হাত একত্র করে তার দুই উরুর মাঝে করলেন।
অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত করলেন তখন বললেন এভাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন। ইমাম আহমাদ আসওয়াদ থেকে বর্ণনা করেন। আসওয়াদ বলেন, আমি এবং আমার চাচা ‘আলক্বামাহ্ দ্বিপ্রহরে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর কাছে পৌঁছলাম। আসওয়াদ বলেন, অতঃপর আমরা তার পেছনে দাঁড়ালাম, অতঃপর তিনি আমার হাত এবং আমার চাচার হাত ধরলেন ও আমাদের একজনকে তার ডানদিকে ও অন্যজনকে তার বামদিকে করলেন, তারপর আমরা এক কাতার করলাম; এরপর তিনি বললেন, মানুষ যখন তিনজন হত তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করতেন। ইবনু সীরীন উল্লেখিত বর্ণনা সম্পর্কে উত্তর প্রদান করেন নিশ্চয়ই তা জায়গা সংকীর্ণ হওয়া বা অন্য কোন আপত্তির কারণে তা মূলত সুন্নাত নয়। ত্বহাবী একে বর্ণনা করেন। হাযমী বলেন, নিশ্চয় তা রহিত হয়ে গেছে। কেননা ইবনু মাস্‘ঊদ এ সালাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মক্কা নগরীতে শিক্ষা করেছিলেন।
আর মক্কা নগরীতে দু’হাটুর মাঝে হাত রাখারও অন্যান্য বিধান ছিল। এখন তা বর্জনযোগ্য। এর সামষ্টিক কথা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনাতে আগমন করলেন তখন তা ছেড়ে দিলেন। দলীল জাবির (রাঃ)-এর হাদীস। ইবনু হুমাম বলেন, ‘আবদুল্লাহর কাছে নাসেখের বিষয়টি গোপন আর এটা অসম্ভব নয় কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সঙ্গে অনেকের ইমামতি করতেন দু’জনের নয় তবে দু’জনের ইমামতির উল্লেখ রয়েছে আর তা বিরল। যেমন উল্লেখিত হাদীসের ঘটনা এবং ইয়াতীমের হাদীস আর তা মহিলার গৃহে ছিল ফলে ‘আবদুল্লাহ মাস্‘ঊদ যা জানত তার বিপরীত হাদীস ‘আবদুল্লাহর জানা ছিল না।
ইবনু সায়্যিদিন নাস বলেন, বিষয়টি এমন নয় অর্থাৎ ইমামের পেছনে দাঁড়ানো কারো নিকট শর্ত নয় তবে উত্তমতার ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে। আহমাদ জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের সালাত আদায় করতে দাঁড়ালেন, তারপর আমি এসে তার বামপাশে দাঁড়ালাম তখন তিনি আমাকে নিষেধ করলেন ও আমাকে তার ডানপাশে দাঁড় করালেন, অতঃপর আমার অপর একজন সাথী আসলে আমরা তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান
১১০৮-[৩] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও ইয়াতীম আমাদের ঘরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম। আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ)ছিলেন আমাদের পেছনে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْمَوْقِفِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: صَلَّيْتُ أَنَا وَيَتِيمٌ فِي بَيْتِنَا خَلْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأم سليم خلفنا. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটি ঘরে নফল সালাতের ক্ষেত্রে জামা‘আত বিশুদ্ধ হওয়ার উপর দলীল স্বরূপ।
অন্যান্য শিক্ষাবলীঃ বারাকাত গ্রহণ ও শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় বিশুদ্ধ। মুক্তাদী দু’জন হলে তাদের দাঁড়ানোর স্থান ইমামের পিছনে। কোন মহিলার পক্ষে পুরুষদের ইমামতি করা বৈধ নয়।
কেননা একজন মহিলার পক্ষে যদি পুরুষদের কাতারে তাদের সাথে বরাবর হয়ে দাঁড়ানো জায়িয না হয় তাহলে তাদের থেকে এগিয়ে দাঁড়িয়ে ইমামতি করা আরও না জায়িয। সকল শ্রেণীর মুক্তাদী হলে তাদের ধারাবাহিক হয়ে দাঁড়ানো আবশ্যক। তবে উত্তম হল মর্যাদায় যে অগ্রগামী সে তার অপেক্ষা নিম্নগামী মর্যাদাবানের আগে দাঁড়াবে।
আর এজন্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে যে বুদ্ধিতে ও জ্ঞানে বড় সে যেন আমার কাছাকাছি হয়ে দাঁড়ায়। ভাল মন্দের পার্থক্য করতে পারে এমন বাচ্চার সালাত বিশুদ্ধ। নিশ্চয় এমন বাচ্চার পুরুষ-মহিলার মাঝে দাঁড়ানোকে গুরুত্ব দেয়া হয় এবং পুরুষ মহিলার সাথে সংঘটিত হওয়া সম্ভব এমন অপরাধ থেকে সে বাধা দেয়। ‘ইয়াতীম’ শব্দের উল্লেখ দ্বারা তাই বুঝা যায়, কেননা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কেউ ইয়াতীম থাকে না। ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে এমন বাচ্চার সালাত বিশুদ্ধ এ কথাটিকে আরও জোরদার করছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ইবনু ‘আব্বাসকে বামদিক হতে ডানদিকে নিয়ে আসা এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইবনু ‘আব্বাসের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা এমতাবস্থায় ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বাচ্চা বয়সের। হাদীসটি আরও প্রমাণ করছে বাচ্চা একা হলে সে বড় পুরুষের সাথে একই কাতারে দাঁড়াবে। এমনিভাবে মহিলা পুরুষদের সাথে দাঁড়াবে না।
মহিলা একাকী হলে একা এক কাতারে দাঁড়াবে। মহিলার সাথে অন্য মহিলা না থাকা মহিলার ক্ষেত্রে আপত্তি স্বরূপ। তবে মহিলা যদি একাকীবস্থায় কোন পুরুষের সাথে দাঁড়ায় তাহলে তার সালাত যথেষ্ট বা জায়িয হবে, কেননা হাদীসে মহিলাদেরকে পেছনের কাতারে দাঁড়ানোর কথা আছে আর সেটাই মহিলার দাঁড়ানোর স্থান। তাতে এমন কোন প্রমাণ নেই যে, মহিলা অন্যের সাথে সালাত আদায় করলে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। তবে আবূ হানীফাহ্ বলেন, তা পুরুষের সালাত নষ্ট করে দিবে মহিলার নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন প্রমাণ নেই। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, নিশ্চয় মহিলা পুরুষদের সাথে কাতারবন্দী হবে না এ নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ হচ্ছে মহিলাদের কারণে পুরুষদের ফেৎনার আশংকা। তবে মহিলা উল্লেখিত নিষেধাজ্ঞার বিপরীত করলে জমহূরের নিকট মহিলার সালাত যথেষ্ট হয়ে যাবে।
তবে হানাফীদের কাছে পুরুষের সালাত নষ্ট হয়ে যাবে মহিলার নয়; মূলত তা খুবই আশ্চর্যজনক। তার এ ধরনের দিক নির্দেশনাতে দুঃখ রয়েছে। যেমন হানাফীদের কেউ বলেন, এর স্বপক্ষে দলীল ইবনু মাস্‘ঊদের উক্তি তোমরা মহিলাদেরকে পেছনে রাখ যেভাবে আল্লাহ তাদের পেছনে রেখেছেন। উল্লেখিত উক্তিতে নির্দেশসূচক বাক্য ওয়াজিবের উপর প্রমাণ স্বরূপ। সুতরাং কোন নারী পুরুষদের কাতারে দাঁড়ালে পুরুষের সালাত নষ্ট হয়ে যাবে আর তা মূলত নারীদের পেছনের কাতারে রাখার ব্যাপারে পুরুষদের যে নির্দেশ করা হয় তা বর্জন করার কারণে। এ ধরনের উত্তর তার পক্ষ থেকে কৃত্রিমতামূলক।
আর আল্লাহই ঐ সত্ত্বা যার কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। এ ধরনের আরও শার‘ঈ বিষয় যেমন ছিনতাইকৃত কাপড়ে সালাত পড়া থেকে নিষেধ করার বিষয়টি প্রমাণিত আছে; এ ধরনের কাপড় পরিধানকারীকে কাপড় খুলে ফেলতে নির্দেশ করা হয়েছে, এরপরও যদি এ ধরনের কাপড় পরিধানকারী উল্লেখিত নির্দেশের বিরোধিতা করে ঐ কাপড়েই সালাত আদায় করে তাহলে সে পাপী হবে তার সালাত জায়িয হবে। এ ধরনের সালাত আদায়কারীর সালাত নাজায়িয হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি, অতএব ঐ ব্যক্তি যার বরাবর হয়ে কোন নারী সালাত আদায় করছে তার সালাত জায়িয না হওয়ার ব্যাপারে কথা বলা হবে কেন?
এর অপেক্ষাও সুস্পষ্ট যুক্তি যদি কোন মসজিদের দরজার মালিকানাভুক্ত বারান্দা থাকে, অতঃপর মসজিদের জায়গার দিকে এক কদমে স্থানান্তর হওয়ার উপর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোন ব্যক্তি যদি বারান্দার মালিক-এর অনুমতি ছাড়া সেখানে সালাত আদায় করে তাহলে তার সালাত বিশুদ্ধ হবে। এমনিভাবে ঐ ব্যক্তির (পুঃ) সালাত যার কাতারে কোন মহিলা প্রবেশে করে গেছে তার সালাত বাতিল হবে না। বিশেষ করে পুরুষ ব্যক্তি কাতারে প্রবিষ্ট হওয়ার পর যদি কোন নারী সে কাতারে শামিল হয়ে পুরুষের পাশে সালাত আদায় করে তাহলে পুরুষের সালাত বাতিল হবে না।
শাওকানী (السيل الجرار) ‘‘আস্ সায়লুল জারার’’ কিতাবে বলেন, কোন মহিলা যখন তার দাঁড়ানোর স্থানে দাঁড়াবে না যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে মহিলাদের কাতারে দাঁড়ানো বা পুরুষদের পেছনে একাকী দাঁড়ানো তাহলে সে নারী অবাধ্য নারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। পক্ষান্তরে এতে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই এবং পুরুষদের সালাত বাতিল হওয়ার উপরেও কোন দলীল নেই। কেননা বিষয়টির চূড়ান্ত সীমা অর্থাৎ মহিলাদেরকে পেছনের কাতারে দাঁড়ানোর নির্দেশ মূলত পুরুষদের কাতারে তাদের শামিল হওয়া এবং তাদের দিকে পুরুষদের দৃষ্টি দেয়া হতে বিরত রাখা।
কোন মহিলা যদি পুরুষদের কাতারে শামিল হয়ে যায় তাহলে তা সালাত বাতিল হয়ে যাওয়াকে আবশ্যক করে দিবে না। বরং যে পুরুষ মহিলার জন্য নির্ধারিত স্থান নিজের জন্য নির্বাচন করে মহিলার পাশে দাঁড়াবে এবং তার দিকে দৃষ্টি দিবে তাহলে সে পুরুষ অবাধ্য হিসেবে সাব্যস্ত হবে এবং তার সালাত বিশুদ্ধ হবে। পক্ষান্তরে যে পুরুষ মহিলাদের পাশে দাঁড়াবে না এবং মহিলাদের দিকে দৃষ্টি দিবে না সে অবাধ্য নয়। তার কারণ একই ইমামের অনুসরণার্থে কোন নারী পুরুষদের কাতারে শামিল হয়ে তাদের সাথে সালাত আদায় করলে পুরুষের সালাত নষ্ট হয় না। মূলকথা প্রমাণহীন অভিমতের মাধ্যমে শার‘ঈ হুকুম সাব্যস্তকরণে তাড়াতাড়ি করা ইনসাফপন্থী ও আল্লাহভীরু লোকদের কাজ নয়।
যায়লাঈ, খাত্ত্বাবী ও ইবনু বাত্তাল উল্লেখিত হাদীস দ্বারা কাতারের পেছনে একাকী সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার উপর দলীল গ্রহণ করছেন। যায়লা‘ঈ বললেন, এ ব্যাপারে পুরুষ ও মহিলাদের হুকুম এক। ইবনু বাত্তাল বলেন, কাতারের পেছনে একাকী সালাত আদায়ের বিষয়টি যখন মহিলার জন্য সাব্যস্ত হল তখন তা পুরুষের জন্য সাব্যস্ত হওয়ার আরও বেশি হক রাখে। তবে এ হাদীস হতে এ ধরনের দলীল গ্রহণ করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কেননা কাতারের পেছনে সালাত আদায়ের বৈধতার বিষয়টি কেবল মহিলাকে ব্যাপৃত করেছে আর তা মূলত পুরুষদের সাথে মহিলাদের কাতারবন্দী হওয়ার নিষেধাজ্ঞার কারণে যা পুরুষদের ক্ষেত্রে বিপরীত। কেননা পুরুষদের জন্য সুযোগ রয়েছে এক পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে দাঁড়ানো, তাদের সাথে চেপে দাঁড়ানো এবং কাতারের মাঝ থেকে একজনকে টেনে এনে আলাদা হয়ে দাঁড়ানো।
ইবনু খুযায়মাহ্ বলেন, হাদীস হতে এভাবে দলীল গ্রহণ বিশুদ্ধ হবে না। কেননা কাতারের পেছনে পুরুষ ব্যক্তির একাকী দাঁড়ানোর অথবা যারা বলে সালাত জায়িয না সকলের ঐকমত্যে নিষেধ। পক্ষান্তরে মহিলা যখন একাকী হবে তখন কাতারের পেছনে তার একাকী সালাত আদায়ের ব্যাপারে মহিলা নির্দেশিত এ ব্যাপারে সকলে একমত। সুতরাং একটি নির্দেশিত বিষয়কে কিভাবে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ের উপর কিয়াস করা যেতে পারে?
পরিচ্ছেদঃ ২৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান
১১০৯-[৪] আনাস (রাঃ) থেকেই বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে, তার মা ও খালাসহ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি বলেন আমাকে তিনি তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। মহিলাদেরকে দাঁড় করালেন আমাদের পেছনে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْمَوْقِفِ
وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى بِهِ وَبِأُمِّهِ أَوْ خَالَتِهِ قَالَ: فَأَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ وَأَقَامَ الْمَرْأَةَ خَلْفَنَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে যে, জামা‘আতে ইমামের সাথে যখন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা উপস্থিত হবে তখন পুরুষের দাঁড়ানোর স্থান ইমামের ডানপাশে ও মহিলার দাঁড়ানোর স্থান তাদের উভয়ের পেছনে। এ ক্ষেত্রে মহিলা পুরুষদের সাথে দাঁড়াবে না।
পরিচ্ছেদঃ ২৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান
১১১০-[৫] আবূ বকরাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি একবার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রুকূ’তে ছিলেন। রুকূ’ ছুটে যাওয়ার আশংকায় কাতারে পৌঁছার পূর্বেই তিনি তাকবীর তাহরীমা দিয়ে রুকূ’তে চলে গেছেন। এরপর ধীরে ধীরে হেঁটে এসে কাতারে শামিল হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ ঘটনা উল্লেখ করলে তিনি বললেন, ’আনুগত্য ও নেক ’আমলের ক্ষেত্রে আল্লাহ তোমাদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন করবে না। (বুখারী)[1]
بَابُ الْمَوْقِفِ
وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ أَنَّهُ انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ رَاكِعٌ فَرَكَعَ قَبْلَ أَنْ يَصِلَ إِلَى الصَّفِّ ثُمَّ مَشَى إِلَى الصَّفِّ. فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «زَادَكَ اللَّهُ حِرْصًا وَلَا تعد» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: নির্দিষ্ট কাতারের বাইরে রুকূ' করা সম্পর্কে মতানৈক্য। ইমাম মালিক ও লায়স বলেন, সালাত আদায়কারী নির্দিষ্ট কাতারে পৌঁছতে সময় দীর্ঘ হওয়াতে ইমাম রুকূ' হতে তার মাথা উঠিয়ে নেয়ার কারণে রাক্‘আত ছুটে যাওয়ার আশংকা করলে এমতাবস্থায় এমন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর জন্য নির্দিষ্ট কাতারের বাইরে রুকূ' করে কাতার কাছে হলে সেখানে হেঁটে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কাছে বলতে ইমাম সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার পূর্বে কাতারে পৌঁছা। কেউ বলেন, দুই কাতারের মাঝের ফাঁকা পরিমাণ হাঁটা। কেউ বলেন, তিন কাতার পরিমাণ; শাফি‘ঈ এটাকে অপছন্দ করেন। ইমাম আবূ হানীফাহ্ জামা‘আত ও একাকী সালাতের মাঝে পার্থক্য করেছেন।
তিনি একাকী সালাতের ক্ষেত্রে এমন করা অপছন্দ করেছেন তবে জামা‘আতের ক্ষেত্রে জায়িয মনে করেছেন। ইমাম মালিক যে দিকে গিয়েছেন তা মূলত যায়দ বিন সাবিত, ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ, ‘আবদুল্লাহ বিন যুবায়র, আবূ উমামাহ্ (রাঃ) ও ‘আত্বা থেকে বর্ণিত রিওয়ায়াত। ত্ববারানী তার কিতাবুল আওসাতে ইবনু ওয়াহ্ব কর্তৃক একটি হাদীস নিয়ে এসেছেন ইবনু ওয়াহ্ব যা ইবনু জুরায়য তিনি ‘আতা হতে বর্ণনা করেন। ‘আত্বা ‘আবদুল্লাহ বিন যুবায়রকে মিম্বারের উপর থাকাবস্থায় বলতে শুনেছেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদের প্রবেশ করবে এমতাবস্থায় মানুষ রুকূ‘রত অবস্থায় আছে তাহলে মসজিদে প্রবেশাবস্থায় সে যেন রুকূ‘ করে, অতঃপর রুকূ' করাবস্থায় হেঁটে হেঁটে কাতারে প্রবেশ করবে কেননা এটা সুন্নাত।
‘আত্বা বলেন, আমি তাঁকে এমন করতে দেখেছি। ত্ববারানী বলেন, ইবনু ওয়াহ্ব সানাদে একাকী হয়ে গেছেন। ইবনু ওয়াহ্ব থেকে এক হারমালাহ্ ছাড়া অন্য কেউ তা বর্ণনা করেনি। ইবনু যুবায়র থেকে এ সানাদ ছাড়া অন্য সানাদে তা বর্ণনা করা হয়নি। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, ইমাম বায়হাক্বী এ হাদীসটিকে তার কিতাবে তৃতীয় খন্ডে ১৬ পৃষ্ঠাতে সা‘ঈদ বিন হাকাম বিন আবী মারইয়াম ইবনু ওয়াহ্ব থেকে বর্ণনা করেন। হায়সামী ‘মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ’ দ্বিতীয় খন্ডে ৯৬ পৃষ্ঠাতে একে ত্ববারানী এর সাথে সম্পৃক্ত করার পর বলেন, এ সানাদের রাবীগণ ইমাম বুখারীর সহীহ এর রাবী। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, অগ্রাধিকারে প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য কথা হচ্ছে আবূ বাকরাহ ও এর হাদীস ও ত্বহাবী হাসান সূত্রে মারফূ‘ভাবে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর হাদীস থেকে যা উল্লেখ করেছেন তার কারণে উল্লেখিত ফাতাওয়াটি বাধাপ্রাপ্ত।
আবূ হুরায়রার সূত্রে হাদীসটি হল যখন তোমাদের কেউ সালাতে আসবে তখন যেন নির্দিষ্ট কাতার ছাড়া রুকূ‘ না করে বরং নির্দিষ্ট কাতারে পৌঁছার পর রুকূ‘ করে। এ মতের দিকে গিয়েছেন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)। যেমন ইবনু ‘আবদুল বার ও ইবনু আবী শায়বাহ্ তার থেকে সংকালন করেছেন। হাসান এবং ইবরাহীমও এ ব্যাপারে উক্তি করেছেন।
আবূ বাকরাহ্ এর হাদীস দ্বারা প্রমাণ গ্রহণ করা হয়েছে, নিশ্চয় যে ব্যক্তি ইমামকে রুকূ' অবস্থায় পেয়ে তার সাথে শামিল হবে তাহলে এ ব্যক্তির জন্য ঐ রাক্‘আতটিকে গণ্য করা হবে যদিও সে রুকূ' ও ক্বিয়াম (কিয়াম) হতে কিছু না পায়। তার কারণ রাক্‘আত ছুটে যাওয়ার আশংকায় আবূ বাকরাহ্ কাতারের পিছনে রুকূ' করেছিল। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য লালসা বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে দু’আ করেছিলেন; তাকে ঐ রাক্‘আত দোহরানোর জন্য নির্দেশ দেননি। এটা জমহূরের মাযহাব। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), আহলে যাহের, ইবনু খুযায়মাহ্, আবূ বাকর আয্ যব্‘ঈ এবং বুখারী বলেন, যখন ব্যক্তির সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ এবং ক্বিয়াম (কিয়াম) ছুটে যাবে তখন ইমামের সাথে রুকূ' পেলেও ঐ রাক্‘আত গণ্য করা হবে না।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী তার ফাতহুল বারী গ্রন্থে একদল শাফি‘ঈ মতাবলম্বীদের থেকে এ মাযহাবটির উল্লেখ করেছেন। শাইখ তাকিউদ্দীন সুবকী ও শাফি‘ঈ মতাবলম্বী অন্যান্য মুহাদ্দিস এ মাযহাবটি শক্তিশালী করেছেন। এ মুকবিলী এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। মুকবিলী বলেন, আমি এ মাসআলাটি হাদীস ও ফিকহী সর্বপ্রকারের গবেষণা দিয়ে গবেষণা করেছি, অতঃপর আমি যা উল্লেখ করেছি তার অপেক্ষা অতিরিক্ত কিছু আমি অর্জন করতে পারিনি। অর্থাৎ শুধু রুকূ‘ পাওয়ার মাধ্যমে রাক্‘আত গণ্য হবে না।
এটাই আমার কাছে প্রাধান্যতর উক্তি। সুতরাং যে ব্যক্তির সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ ও ক্বিয়াম (কিয়াম) থেকে কিছু ছুটে যাবে ঐ ব্যক্তি রুকূ‘ পেলেও তার ঐ রাক্‘আত গণ্য হবে না। কারণ রুকূ‘ এবং ক্বিয়াম (কিয়াম) উভয়টি সালাতের ফরয ও রুকনের অন্তর্ভুক্ত। অপর কারণ হাদীসে এসেছে তুমি যা পাও তা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হিসেবে আদায় কর আর তোমার থেকে যা ছুটে যাবে তা তুমি পূর্ণ করবে।
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, উল্লেখিত হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি ইমামকে রুকূ‘ অবস্থায় পাবে তাহলে ঐ রুকূ' পাওয়া রাক্‘আতটি ব্যক্তির জন্য রাক্‘আত হিসেবে গণ্য করা হবে না। কারণ হাদীসে সালাত আদায়কারীর যা ছুটে যাবে তা পূর্ণ করতে বলা হয়েছে আর ক্বিয়াম (কিয়াম) ও সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ রাক্‘আতেরই অন্তর্ভুক্ত।
আবূ বাকরার হাদীসঃ জমহূর যে মত পোষণ করেছেন সে ব্যাপারে আবূ বাকরার হাদীসে কোন দলীল নেই। কেননা আবূ বাকরার ক্বিয়াম (কিয়াম) ও সূরাহ্ ফাতিহাহ্ ছুটে যাওয়া রাক্‘আতটি দোহরানোর ব্যাপারে হাদীসে যেমন কোন নির্দেশ করা হয়নি তেমনিভাবে আবূ বাকরাহ্ শুধু রুকূ' পাওয়া রাক্‘আতটিকে রাক্‘আত হিসেবে গণ্য করছেন এমন কোন দলীলও আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়নি। পক্ষান্তরে হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে দু‘আর উল্লেখ আছে তা রুকূ‘ পাওয়া রাক্‘আতটি গণ্য করাকে আবশ্যক করে না।
কেননা ইমামের সাথে শামিল হতে নির্দেশ করা হয়েছে চাই মুক্তাদী ইমামের সাথে যা পায় তা তার জন্য গণ্য করা হোক বা না হোক, যেমন হাদীসে এসেছে তোমরা যখন সালাতে আসবে এমতাবস্থায় আমরা (ইমামগণ) সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) অবস্থায় থাকলে তোমরাও সিজদা্ করবে তবে সে সিজদাকে কিছু গণ্য করবে না। একে বর্ণনা করেছেন আবূ দাঊদ ও অন্যান্যগণ ঐ কথার পিছনে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরাহ-কে তার কৃতকর্মের ন্যায় কাজের পুনরাবৃত্তি করা থেকে নিষেধ করেছেন। যে হাদীসে কোন একটি বিষয়কে নিষেধ করেছেন সে হাদীস থেকে আবার ঐ বিষয়ের স্বপক্ষে দলীল গ্রহণ করা বিশুদ্ধ হবে না। শাওকানী ‘নায়লুল আওতার’-এ এভাবেই উল্লেখ করেছেন।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব আবূ বাকরার হাদীসের শেষে ত্ববারানী এর ‘‘তুমি যা পাও তা সালাত হিসেবে আদায় কর আর যা তোমার ছুঁটে গিয়েছে তা ক্বাযা কর।’’ এ শব্দ দ্বারা অতিরিক্ত করা ক্বিয়াম (কিয়াম) ও সূরাহ্ ফাতিহা ছুটে যাওয়া রাক্‘আতটি গণ্য না হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। উল্লেখিত কথার উপর আরও প্রমাণ বহন করছে ইবনু আবী শায়বাহ্ তার মুসান্নাফে মু‘আয বিন জাবাল হতে যা বর্ণনা করেছেন তা। মু‘আয বিন জাবাল বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে অবস্থার উপরই পেয়েছি তাঁর সাথে সে অবস্থার উপরেই শামিল হয়েছি। সালাত থেকে যা আমার ছুটে গিয়েছে তা পরে আদায় করেছি। অতঃপর মু‘আয (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতের কিছু অংশ বা রাক্‘আতের কিছু অংশের সাথে পেয়েছেন। যতটুকু নাবীর সাথে পেয়েছেন ততটুকুর অনুসরণ করেছেন এবং নাবীর সালামের পর ছুটে যাওয়া রাক্‘আত আদায় করেছেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয-এর অবস্থা দেখে সাহাবীদেরকে বললেন, মু‘আয তোমাদের জন্য সুন্নাতের অনুসরণ করলেন। সুতরাং তোমরা তা কর। আহলে যাহির ও যারা তাদের অনুকূল করছেন তাদের উক্তিকে প্রাধান্য দেয়ার পর আমাদের শায়খ তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, আবূ বাকরার হাদীস একটি চাক্ষুস ঘটনা অর্থাৎ তাতে বহু ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে। যে হাদীস ইমামের পেছনে ছুটে যাওয়া সালাতাংশ পূর্ণ করার ব্যাপারে নির্দেশ এবং ক্বিয়াম (কিয়াম) ও সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে উক্তিগত দলীলের আওতাভুক্ত না।
শাওকানী তার ফাতাওয়া গ্রন্থে যাকে তার সন্তান আহমাদ বিন মুহাম্মাদ ‘আলী আশ্ শাওকানী ফাতহুর রব্বানী বলে নামকরণ করেছেন। সেখানে বলেন, ক্বিয়াম (কিয়াম) ও সূরাহ্ ফাতিহাহ্ ছুটে যাওয়া রাক্‘আত রাক্‘আত হিসেবে গণ্য হবে। মূলত তিনি শারহুল মুনতাক্বা গ্রন্থে যা বিশ্লেষণ করেছেন তা তার বিপরীত। যেমন তিনি ঐ অবস্থাকে যে ঐ অবস্থায় মুক্তাদী ইমামকে পায় ‘আম দলীলাদি অপেক্ষা খাস মনে করেন যে সকল ‘আম দলীলাদি প্রত্যেক রাক্‘আতে প্রত্যেক সালাত আদায়কারীর ওপর সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ করা আবশ্যক প্রমাণ করে।
এ ব্যাপারে তিনি প্রমাণ গ্রহণ করেছেন ইবনু খুযায়মাহ্, দারাকুত্বনী ও ইমাম বায়হাক্বী তার কিতাবে দ্বিতীয় খন্ডে ৮৯ পৃষ্ঠাতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক মারফূ‘ সূত্রে যা বর্ণনা করেছেন তার মাধ্যমে। তাতে আছে ইমাম তার মেরুদন্ড সোজা করার পূর্বে যে ব্যক্তি কোন রাক্‘আতে পাবে সে ঐ রাক্‘আত পাবে। এ মতকে সমর্থন করছেন বর্তমান সময়ে কিছু আহলে হাদীসগণ। উল্লেখিত হাদীস অনুসারে মতামত পোষণকারীদের সম্পর্কে প্রথম জওয়াব বা উত্তরঃ নিশ্চয়ই হাদীসটির সানাদে ইয়াহ্ইয়া বিন হুমায়দ রয়েছে। তার অবস্থা অজানা; হাদীসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। ইমাম বুখারী তাঁর জুয্উল ক্বিরাআতে এ ধরনের মত পোষণ করেছেন, দারাকুত্বনী তাকে দুর্বল বলেছেন। ‘উক্বায়লী তাকে দুর্বলদের মাঝে উল্লেখ করেছেন এ অবস্থায় যে, ইয়াহ্ইয়া তার উক্তি ‘ইমাম তার মেরুদন্ডকে সোজা করার পূর্বে’ দ্বারা সানাদে তার স্তরে একাকী হয়েছেন।
‘উক্বায়লী বলেন, একে মালিক ও যুহরীর সাথীবর্গ থেকে অন্যান্য হাফিযুল হাদীসগণ বর্ণনা করেছেন, তবে শেষের অতিরিক্তাংশ তারা উল্লেখ করেননি, সম্ভবত তা যুহরীর কথা। ইবনু আবী ‘আদী হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেন, এ অতিরিক্তাংশের বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি একাকী হয়েছেন। আমি তাকে ছাড়া এর অন্য কোন সানাদ জানি না। এর সানাদে কুররা বিন ‘আবদুর রহমান রয়েছে তার ব্যাপারে সমালোচনা করা হয়েছ। দ্বিতীয় উত্তর উল্লেখিত অতিরিক্তাংশ বিশুদ্ধ বলে সমর্থন করার পর তিনি তার এক স্থানে স্বীকার করেছেন নিশ্চয় প্রকৃতপক্ষে শার‘ঈ ও ‘উরফীভাবে (সমাজে প্রচলিত) সকল রুকন ও যিকর এর সামষ্টিক নাম রাক্‘আত।