পরিচ্ছেদঃ ২৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১১০০-[১৬] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করতেনঃ তোমরা সালাতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে, তোমরা সালাতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে, তোমরা সালাতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। আমার জীবন যার হাতে নিহিত তাঁর কসম করে বলছি, আমি তোমাদেরকে সামনে যেমন দেখতে পাই পেছনেও তদ্রূপ দেখতে পাই। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول: «اسْتَووا اسْتَوُوا اسْتَوُوا فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لَأَرَاكُمْ من خَلْفي كَمَا أَرَاكُم من بَين يَدي» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে বুঝা যায়, কাতার একই নিয়মে এঁটে এঁটে দাঁড়াতে হবে পরস্পরের মাঝে ফাঁক রাখা যাবে না। হাদীসের শুরুতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কথা তথা ‘তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াবে’ বারংবার উল্লেখ করে এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। সম্ভবত প্রথম কথাটি সামষ্টিক কথা। দ্বিতীয় কথাটি কাতারের ডান দিকের মুসল্লীদের জন্য এবং তৃতীয় কথাটি কাতারের বাম দিকের মুসল্লীদের জন্য।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১১০১-[১৭] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) সালাতে প্রথম সারিতে দাঁড়ানো লোকদের ওপর করুনা বর্ষণ করেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! দ্বিতীয় কাতারে দাঁড়ানো লোকদের ওপর? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, ’’আল্লাহ ও তাঁর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) সালাতের প্রথম কাতারের উপর করুণা বর্ষণ করেন। সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আর দ্বিতীয় কাতারের উপর? তিনি জবাবে বললেন, দ্বিতীয় কাতারের উপরও। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ তোমরা তোমাদের সালাতের কাতারগুলোকে সোজা রাখো, কাঁধকে সমান করো, ভাইদের হাতের সাথে হাত নরম করে রাখো। কাতারের মাঝে খালি স্থান ছাড়বে না। তা না হলে শায়ত্বন (শয়তান) তোমাদের মাঝে হিজাযী ছোট কালো ছাগলের মতো ঢুকে পড়বে। অর্থাৎ ভেড়ার ছোট বাচ্চা। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصَّفِّ الْأَوَّلِ» قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَعَلَى الثَّانِي قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصَّفِّ الْأَوَّلِ» قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَعَلَى الثَّانِي قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصَّفِّ الْأَوَّلِ» قَالُوا يَا رَسُولَ الله وعَلى الثَّانِي؟ قَالَ: «وعَلى الثَّانِي» قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَوُّوا صُفُوفَكُمْ وَحَاذُوا بَيْنَ مَنَاكِبِكُمْ وَلِينُوا فِي أَيْدِي إِخْوَانِكُمْ وَسُدُّوا الْخَلَلَ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ بَيْنَكُمْ بِمَنْزِلَةِ الْحَذَفِ» يَعْنِي أَوْلَادَ الضَّأْنِ الصِّغَارِ. رَوَاهُ أَحْمد
পরিচ্ছেদঃ ২৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১১০২-[১৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা সালাতের কাতার সোজা রাখবে। কাঁধকে সমান করো। কাতারের খালি স্থান পুরা করো। নিজেদের ভাইদের হাতে নরম থাকবে। কাতারের মধ্যে শায়ত্বন (শয়তান) দাঁড়াবার কোন খালি স্থান ছেড়ে দেবে না। যে লোক কাতার মিশিয়ে রাখবে আল্লাহ তা’আলা (তাঁর রহমতের সাথে) তাকে মিলিয়ে রাখবেন। আর যে লোক কাতার ভেঙ্গে দাঁড়াবে আল্লাহ তা’আলা তাকে তার রহমত থেকে কেটে দেন। (আবূ দাঊদ; নাসায়ী এ হাদীসকে, ’ওয়ামান ওয়াসালা সাফফান’ হতে শেষ পর্যন্ত নকল করেছেন)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَقِيمُوا الصُّفُوفَ وَحَاذُوا بَين المنكاكب وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِينُوا بِأَيْدِي إِخْوَانِكُمْ وَلَا تَذَرُوا فرجات للشَّيْطَان وَمَنْ وَصَلَ صَفًّا وَصَلَهُ اللَّهُ وَمَنْ قَطَعَهُ قطعه الله» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ مِنْهُ قَوْلَهُ: «وَمَنْ وَصَلَ صَفًّا» . إِلَى آخِرِهِ
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীস থেকে বুঝা যায়, যে সকল লোক কাতার সোজা করে দেয় তাদের হতে মুসল্লীদের বিনম্র হতে হবে, সহজ সরল আনুগত্যশীল হতে হবে। এতে আশা করা যায় আনুগত্যশীলগণ পারস্পারিক সৎ কাজ ও আল্লাহ-ভীরুতার কাজে সহায়তার সাওয়াব লাভ করতে পারবে। আরও বলা যেতে পারে কাতারে পরস্পরের মাঝে ফাঁক রাখা তাতে শায়ত্বন (শয়তান) প্রবেশে সুযোগ করে দেয়ার কারণ।
হাদীস থেকে আরও প্রতীয়মান হয়, কাতারের ফাঁক বন্ধ করে দেয়া বন্ধকারীর উপর আল্লাহর রহমাত বর্ষণ হওয়ার কারণ। পক্ষান্তরে কাতারে পরস্পরের মাঝে ফাঁক রাখা আল্লাহর রহমাত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ। যারা কাতারের পরস্পরের মাঝে ফাঁক রাখে হাদীসে তাদের প্রতি কঠোর ধমক ও মারাত্মক হুমকি আরোপ করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১১০৩-[১৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ইমামকে মধ্যখানে রাখো, কাতারের মাঝে খালি স্থান বন্ধ করে দিও। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَوَسَّطُوا الْإِمَامَ وَسُدُّوا الْخَلَلَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ২৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১১০৪-[২০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিছু লোক সব সময়ই সালাতে প্রথম কাতার থেকে পেছনে থাকে, এমনকি আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে জাহান্নামের দিকে পিছিয়ে দেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَزَالُ قَوْمٌ يَتَأَخَّرُونَ عَنِ الصَّفِّ الْأَوَّلِ حَتَّى يُؤَخِّرَهُمُ اللَّهُ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে বুঝা যায়, যারা প্রথম কাতারের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে গুরুত্ব দেয় না এবং সে ব্যাপারে পরওয়া করে না আল্লাহ তাদের কাজে পিছিয়ে দিবেন অথবা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া প্রথম দলের আওতাভুক্ত করবেন না। অথবা প্রথম ধাপে জান্নাতের প্রবেশকারীদের থেকে আল্লাহ তাদেরকে পিছিয়ে রাখবেন এবং জাহান্নামে তাদেরকে আবদ্ধ রাখবেন। আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের নিম্নস্তরের মাঝে পতিত করবেন- এ অর্থ নেয়াও সম্ভব। ত্বীবী বলেন, আল্লাহ তাদেরকে কল্যাণ থেকে পিছিয়ে রাখবেন এবং তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১১০৫-[২১] ওয়াবিসাহ্ ইবনু মা’বাদ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে কাতারের পেছনে একা দাঁড়িয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখলেন। তিনি ওই লোককে আবার সালাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ; তিরমিযী বলেন- এ হাদীসটি হাসান)[1]
وَعَنْ وَابِصَةَ بْنِ مَعْبَدٍ قَالَ: رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا يُصَلِّي خَلْفَ الصَّفِّ وَحْدَهُ فَأَمَرَهُ أَنْ يُعِيدَ الصَّلَاةَ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে দলীল পাওয়া যাচ্ছে কাতারের পেছনে একাকী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলে সালাত বিশুদ্ধ হবে না। যে ব্যক্তি কাতারের পেছনে একাই সালাত আদায় করবে তার ওপর আবশ্যক সালাত দোহরানো। এ মত পোষণ করেছেন, ইবরাহীম নাখ্‘ঈ, হাসান বিন সালিহ, আহমাদ, ইসহাক অধিকাংশ আহলে যাহির ও ইবনুল মুনযির। এ ব্যাপারে কুফাবাসীদের একটি সম্প্রদায়ও উক্তি করেছেন।
তাদের মাঝে আছে হাম্মাদ বিন আবূ সুলায়মান, ‘আবদুর রহমান বিন আবূ লায়লা এবং অকী। ইবনু হাযম বলেন, এ ব্যাপারে আওযা‘ঈ ও হাসান বিন হাই কথা বলেন, এবং এটি সুফ্ইয়ান সাওরীর দু’মতের এক মত। ‘আবদুল্লাহ বিন আহমাদ মুসনাদ এর চতুর্থ খন্ডে দু’শত আটাশ পৃষ্ঠাতে ওয়াবিসাহ্ এর হাদীসের পর একটি হাদীস নকল করে বলেন, আমার পিতা এ হাদীসের মতটি পেশ করতেন। এ মতের দিকে গিয়েছেন ইমাম দারাকুত্বনীও; অতঃপর তিনি তার সুনান গ্রন্থে ওয়াবিসার হাদীসের পর বলেন, আবূ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এ মত পোষণ করি।
ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও আবূ হানীফাহ্ বলেন, যে কাতারের পেছনে একাকী সালাত আদায় করবে তার সালাত বিশুদ্ধ কিন্তু সে গুনাহগার হবে। তবে প্রথম উক্তিটিই সত্য। তার, উপর প্রমাণ করে ওয়াবিসার হাদীস আর তা বিশুদ্ধ হাদীস। ‘আলী ইবনু শায়বান-এর হাদীসও এর উপর প্রমাণ বহন করে।
তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতারের পেছনে এক লোককে একাকী সালাত আদায় করতে দেখে থেমে গেলেন এমনকি লোকটি সালাত থেকে সালাম ফিরাল তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি তোমার সালাত দোহরাও কারণ কাতারের পেছনে একাকী কোন ব্যক্তির সালাত নেই। ইমাম আহমাদ মুসনাদে চতুর্থ খন্ডে ২৩ পৃষ্ঠাতে সংকলন করেছেন। ইবনু মাজাহ, ইবনু হাযম মুহাল্লার ৪র্থ খন্ডে ৫৩ পৃষ্ঠাতে। ইমাম বায়হাক্বী তাঁর কিতাবের ৩য় খন্ডে ১০৫ পৃষ্ঠাতে। এভাবে আরও কতকে উল্লেখ করেছেন হাদীস সহীহ।
পরিশেষে বলা যেতে পারে ওজর-আপত্তির কারণে কেউ কাতারের পেছনে একাকী সালাত আদায় করলে তার সালাত বিশুদ্ধ হবে অন্যথায় বাতিল হয়ে যাবে। এ উক্তিটি করেছেন হাসান বসরী, হানাফীদের এক উক্তি, শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্ ও তার ছাত্র ইবনুল ক্বইয়্যিম এ মতটিকে পছন্দ করেছেন। ‘আল্লামা ইবনু উসায়মীন এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।