পরিচ্ছেদঃ ২৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৯৩-[৯] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ (সালাতে) তোমাদের কাতারগুলো মিলেমিশে দাঁড়াবে এবং কাতারগুলোও কাছাকাছি (প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রেখে) বাঁধবে। নিজেদের কাঁধ মিলিয়ে রাখবে। কসম ওই জাতে পাকের যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি শায়ত্বনকে তোমাদের (সালাতের) সারির ফাঁকে ঢুকতে দেখি যেন তা হিজাযী ছোট কালো বকরী। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رُصُّوا صُفُوفَكُمْ وَقَارِبُوا بَيْنَهَا وَحَاذُوا بِالْأَعْنَاقِ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لَأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে শিক্ষণীয়, জামা‘আতরত অবস্থায় মুসল্লীগণ পরস্পর এঁটে এঁটে দাঁড়াবে, পরস্পরের মাঝে কোন ফাঁক রাখবে না। তারা তাদের প্রতি দুই কাতারের মাঝে এমন ফাঁক রাখবে না যাতে কাতারদ্বয়ের মাঝে তৃতীয় কাতার ঢুকে যেতে পারে। বরং কাতারসমূহের ব্যবধান কাছাকাছি রাখতে হবে। মুসল্লীগণ যেভাবে পায়ে পা মিলাবে সেভাবে তারা কাঁধে কাঁধ মিলাবে। পরিশেষে বলা যেতে পারে কাতার যথাযথভাবে ঠিক করতে হবে। পরস্পর দু’ মুসল্লী তাদের মাঝে ফাঁকা রাখবে না। ফাঁকা রাখা শায়ত্বন (শয়তান) প্রবেশের কারণ। হাদীসটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন। তিনি এবং মুনযিরী হাদীসটির ব্যাপারে নীরব থেকেছেন। ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীসটির সানাদ ইমাম মুসলিমের শর্তে। হাদীসটিকে মীরাক নকল করেছেন। হাদীসটিকে ইমাম নাসায়ী, ইবনু খুযায়মাহ্ ও ইবনু হিব্বান তাদের সহীহ গ্রন্থদ্বয়ের এবং ইমাম বায়হাক্বীও তাঁর কিতাবের ৩য় খন্ডে ১০০ পৃষ্ঠাতে সংকলন করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৯৪-[১০] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা পূর্বে প্রথম কাতার সম্পূর্ণ করো, এরপর পরবর্তী কাতার পুরা করবে। কোন কাতার অসম্পূর্ণ থাকলে সেটা হবে একেবারে শেষের কাতার। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتِمُّوا الصَّفَّ الْمُقَدَّمَ ثُمَّ الَّذِي يَلِيهِ فَمَا كَانَ مِنْ نَقْصٍ فَلْيَكُنْ فِي الصَّفّ الْمُؤخر» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হাদীসে প্রথমে সামনের কাতারকে পূর্ণ করতে, অতঃপর দ্বিতীয় কাতার পূর্ণ করতে, এরপর অতিরিক্ত হলে তা শেষ কাতারে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। সামনে ইমামের দিকে লক্ষ্য করে সোজা পেছন বরাবর দাঁড়াবে যাতে সম্ভবপর ইমামের অধিক কাছ থেকে কাতার শুরু করা ছুটে না যায়।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৯৫-[১১] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করতেনঃ যেসব ব্যক্তি প্রথম কাতারের নিকটবর্তী গিয়ে পৌঁছে তাদের ওপর আল্লাহ তা’আলা অনুগ্রহ করেন ও তাঁর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ তা’আলার কাছে তার কদমের চেয়ে ভাল কোন কদম নেই যে লোক হেঁটে কাতারের খালি স্থান পূরণ করে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الَّذِينَ يَلُونَ الصُّفُوفَ الْأُولَى وَمَا مِنْ خُطْوَةٍ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ من خطْوَة يمشيها يصل العَبْد بهَا صفا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে সালাতের প্রথম কাতারগুলোর উপর মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) দু‘আ ও আল্লাহর রহমাত অবতীর্ণ হওয়ার শিক্ষা নেয়া যায়। প্রথম কাতারের মুসল্লীগণ তাদের অগ্রগামীতার দিকে লক্ষ্য করে সাওয়াব পাবে। তবে শেষ কাতারে উপস্থিত মুসল্লী এ বিশেষ রহমাত থেকে বঞ্চিত হবে। আরও শিক্ষা নেয়া যেতে পারে মুসল্লীগণ দুনিয়াতে যে পদচারণা করে থাকে তার মাঝে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় পদচারণা হচ্ছে মুসল্লী জামা‘আতে উপস্থিত হওয়ার জন্য যে পদচারণা করে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৯৬-[১২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের কাতার ডানদিকের মানুষের ওপর আল্লাহ তা’আলা ও মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى مَيَامِنِ الصُّفُوفِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আবূ দাঊদের এ হাদীসটিকে খায়রী সা‘ঈদ দুর্বল বললেও মুসলিমে বারা বিন ‘আযিব থেকে উল্লেখিত হাদীসে রসূলের ইমামতিকালে সাহাবীগণ রসূলের ডান দিকে অবস্থান করাকে ভালবাসতেন, অধিকাংশ সময়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতারের ডানদিকের সাহাবীদের দিকে ঘুরে বসতেন।
এ হাদীস দ্বারা কাতারের ডান দিকের মর্যাদা বোঝা যাচ্ছে। ইবনু মাজাহ এর হাশিয়াতে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীসের অধীনে সিনদী বলেন, যদিও কাতারের ডানদিকে থাকা মূল কিন্তু বামদিক যখন খালি থাকবে তখন তা আবাদ করা ডানদিক অপেক্ষা উত্তম। এর উপর ভিত্তি করে ডান বাম উভয় দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এর পরও যদি অতিরিক্ত হয় তাহলে সে অতিরিক্ত মুসল্লীটি ডানদিকে দাঁড়াবে।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৯৭-[১৩] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সালাতে দাঁড়ালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রথমে মুখে অথবা হাতে ইশারা করে) কাতারগুলোকে ঠিক করে দিতেন। যখন আমরা ঠিক হয়ে দাঁড়াতাম তিনি তাকবীর তাহরীমা বলতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَوِّي صُفُوفَنَا إِذَا قُمْنَا إِلَى الصَّلَاةِ فَإِذَا اسَتْوَيْنَا كَبَّرَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীস থেকে দলীল পাওয়া যাচ্ছে ইমামের জন্য সুন্নাত হচ্ছে কাতারসমূহ সোজা করা, অতঃপর তাকবীর দেয়া আর কেউ কেউ (إِذَا قُمْنَا) অংশ থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন নিশ্চয়ই কাতার সোজা করা ইক্বামাতের পরে ছিল। এর অপেক্ষা আরও পরিষ্কার দলীল হচ্ছে- (فقام حتى كاد أن يكبر) অর্থাৎ ‘অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এমনকি তাকবীর দেয়ার উপক্রম হলেন’..... শেষ পর্যন্ত।
অপর দলীল (أقيمت الصلاة فأقبل علينا بوجهه) অর্থাৎ সালাতের ইক্বামাত দেয়া হল, অতঃপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ঘোরালেন। পরিশেষে বলা যায় কাতার সোজা করার বিষয়টি শিথিলভাবে না দেখে এর প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। প্রত্যেক ইমামের তা আবশ্যক দায়িত্ব।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৯৮-[১৪] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সালাত শুরু করার পূর্বে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে তাঁর ডানপাশে ফিরে বলতেন, ’ঠিক হয়ে দাঁড়াও, কাতারগুলোকে সোজা করো’। তারপর তাঁর বামপাশে ফিরেও বলতেন, ঠিক হয়ে দাঁড়াও, কাতারগুলোকে সোজা করো। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ عَنْ يَمِينِهِ: «اعْتَدِلُوا سَوُّوا صُفُوفَكُمْ» . وَعَنْ يَسَارِهِ: «اعْتَدِلُوا سَوُّوا صُفُوفَكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُ
পরিচ্ছেদঃ ২৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৯৯-[১৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যারা সালাতের মাঝে নিজেদের কাঁধগুলো নমনীয় রাখে, তোমাদের মাঝে তারাই ভাল। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خِيَارُكُمْ أَلْيَنُكُمْ مَنَاكِبَ فِي الصَّلَاة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে বুঝা যায়, মুসল্লীগণ কাতার থেকে আগপিছ হয়ে থাকলে বিশেষ কেউ তা সোজা করে দিতে পারে। কেউ সোজা করে দিলে তার সাথে অন্যদের ভাল আচরণ করা উচিত। মাযহার বলেন, হাদীসটির অর্থ হচ্ছে কেউ কাতারে আছে এ অবস্থায় অন্য কেউ তাকে কাতার সোজা করার ব্যাপারে নির্দেশ করলে অথবা তার কাঁধের উপর হাত রাখলে মুসল্লী ব্যক্তির দায়িত্ব নির্দেশকারী বা কাঁধে হাত রাখা ব্যক্তির আনুগত্য করা এবং অহংকার না করা। খাত্ত্বাবী মা‘আলিম গ্রন্থে বলেন, (لين المنكب) বলতে সালাতে প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি উদ্দেশ্য; এদিক ঐদিক তাকানো যাবে না একজনের কাঁধ অন্যজনের কাঁধ দ্বারা চুলকাবে না। তিনি বলেন, কখনো এর অন্য আরেকটি দিক পরিলক্ষিত হতে পারে আর তা হচ্ছে যে ব্যক্তি কাতারের মাঝের ফাঁক বন্ধের জন্য বা জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে কাতারসমূহের মাঝে প্রবেশের ইচ্ছা করে তাকে বাধা না দেয়া। বরং প্রবেশকারীর পক্ষে ফাঁকে প্রবেশ করা সম্ভব। তবে সেও কাতার এঁটে দেয়ার সময় অন্যকে নিজ কাঁধ দ্বারা প্রতিহত করবে না। মীরাক বলেন, তবে প্রথম ব্যাক্যটিই অধ্যায়ের সাথে অধিক সামঞ্জস্যশীল।