পরিচ্ছেদঃ ২৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
আল্লাহ তা’আলা বলেন, إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِي سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوْصٌ
অর্থাৎ ’’নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ সমস্ত লোকদের ভালোবাসেন যারা তার পথে কাতারবন্দী হয়ে যুদ্ধ করে’’- (সূরাহ্ আস্ সফ ৬১: ৪)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَإِنَّا لَنَحْنُ الصَّافُّوْنَ অর্থাৎ ’’অবশ্যই আমরা কাতারবন্দী’’- (সূরাহ্ আস্ সা-ফ্ফা-ত ৩৭: ১৬৫)। আর তিনি আমাদেরকে ঐভাবে কাতারবন্দী হওয়ার কথা বলেছেন যেভাবে মালায়িকাহ্ তাদের পালনকর্তার সামনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ায়। আর কাতার সোজা করার অর্থ হচ্ছে একই পদ্ধতিতে সোজা লাইন, কাতারের মাঝখানের ফাঁকা বন্ধ করে কাঁধের সঙ্গে কাঁধ, পায়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো।
ইবনু ’আবদুল বার ইসতিযকার গ্রন্থে বলেন, কাতার সোজা করার ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ এবং পরবর্তীতে খুলাফায়ে রাশিদীনদের আ’মালের ব্যাপারে বিভিন্ন সানাদে অনেক আসার রয়েছে এবং এটা এমন বিষয় যাতে বিদ্বানদের মাঝে কোন মতানৈক্য নেই। তবে বিদ্বানগণ এর হুকুম ওয়াজিব না মানদুব এ ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন।
’আয়নী বলেন, তা ইমাম আবূ হানীফাহ্, শাফি’ঈ ও মালিক-এর নিকট সালাতের সুন্নাত। ইবনু হাযম দাবি করেন, নিশ্চয় তা ফরয। কারো মতে মানদূব। ইমাম বুখারী ওয়াজিব এর দিকে গিয়েছেন। যেমন তিনি তার সহীহ গ্রন্থে (যারা কাতার সোজা করবে না তাদের গুনাহ) এভাবে একটি অধ্যায় বেঁধেছেন। ’আয়নী বলেন, ইমাম বুখারী অধ্যায় বাঁধার বাহ্যিক দিক ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, তিনি কাতার সোজা করা ওয়াজিব মনে করতেন। তবে সঠিক কথা এ ব্যাপারে এ ধরনের বর্ণনা কঠোর ধমক স্বরূপ। অন্যত্র বলেন, নির্দেশসূচক শব্দের দাবি অনুপাতে কাতার সোজা করা ওয়াজিব কথাটি ঠিক। কিন্তু তা সালাতের ওয়াজিবাতের অন্তর্ভুক্ত নয় যে, যখন কেউ তা ছেড়ে দিবে তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বাতিল হয়ে যাবে অথবা সালাতে ঘাটতি হয়ে যাবে।
তবে এ অধ্যায়ে শেষ কথা হচ্ছে যখন ব্যক্তি কাতার সোজা করা বর্জন করবে তখন সে গুনাহগার হবে। আমি বলব, আমার নিকট যা হক বলে মনে হচেছ তা হচ্ছে কাতার সোজা করা ও ঠিকঠাক করা জামা’আতে সালাতের ওয়াজিবাতের অন্তর্ভুক্ত। যখন সালাত আদায়কারী তা ছেড়ে দিবে, সালাতের ঘাটতি করে দিবে এবং কাতার সোজা করার ব্যাপারে নির্দেশসূচক শব্দ প্রয়োগ হওয়ার কারণে এবং তার মৌলিক অর্থ ওয়াজিব অর্থে হওয়ার কারণে কাতার সোজা করার বিষয়টি বর্জনকারী গুনাহগার হয়ে যাবে। পাপী হওয়ার আরও কারণ হল যেহেতু এ ব্যাপারে অন্য হাদীসে এসেছে কাতার সোজা করা সালাত প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত। অপর কাতার সোজা না করার কারণে কঠোর ধমকের কথা এসেছে। অন্য বর্ণনাতে এসেছে কাতার সোজা করা সালাত এর পূর্ণতার অন্তর্ভুক্ত। অন্য বর্ণনাতে কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যতার অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে। সৌন্দর্য বলতে সালাতের পূর্ণতা উদ্দেশ্য। কাতার সোজা না করলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী পাপী হওয়ার আরও কারণ হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার চার খুলাফায়ে রাশিদীন এ ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
আনাস (রাঃ) কাতার সোজা না করার কারণে সালাত আদায়কারীদের বলতেন আমি তোমাদের কোন কিছু অস্বীকার করি না তবে তোমাদের কাতার সোজা না করাকে অস্বীকার করি। হাদীসটি বুখারীতে এসেছে। অত্র হাদীসে কাতার সোজা করার কথা আবশ্যক সাব্যস্ত হয়েছে যদি তা না হত তাহলে কাতার সোজা না করার বিষয়টিকে আনাস (রাঃ) অস্বীকার করতেন না। অন্যত্র এসেছে ’উমার (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ)কাতার সোজা করার জন্য মুসল্লীদের পায়ে মারতেন। মুসল্লীদের পায়ে আঘাত করা ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করে যে মুসল্লীরা সালাতের ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার কারণে তারা এমন করতেন।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে যে মুসল্লী কাতার সোজা করাকে বর্জন করবে তার সালাত কি বাতিল হয়ে যাবে না হবে না? বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝা যায়, সালাত বিশুদ্ধ হবে এবং এ ব্যাপারে স্পষ্ট ভাষ্য বর্ণিত না হওয়ার কারণে সালাত বাতিল হবে না।
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী ফাতহুল বারীতে বলেন, কাতার সোজা করা ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও যে মুসল্লী কাতার সোজা করার বিপরীত করবে এবং ভালভাবে কাতার সোজা করবে না (তার সালাত বাতিল হবে না)। এ কথাকে সমর্থন করছে আনাস (রাঃ)-এর ঐ বিষয় যে, তিনি মুসল্লীদের কাতার সোজা না করাকে অসমিচীন মনে করা সত্ত্বেও তাদেরকে সালাত দোহরাতে বলেননি। ইবনু হাযম একটু বাড়াবাড়ি করছেন এবং সালাত বাতিল হওয়ার ব্যাপারেই দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন।
১০৮৫-[১] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধনুকে তীর সোজা করার ন্যায় আমাদের কাতার সোজা করতেন। এমনকি আমরা তাঁর হতে কাতার সোজা করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছি। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘর থেকে) বের হয়ে এসে সালাতের জন্যে দাঁড়ালেন। তাকবীরে তাহরীমা বাঁধতে যাবেন ঠিক এ মুহূর্তে এক ব্যক্তির বুক সালাতের কাতার থেকে একটু বেরিয়ে আছে দেখতে পেয়ে বলেন, হে আল্লাহর বান্দা! তোমাদের কাতার সোজা করো। নতুবা আল্লাহ তোমাদের চেহারায় বিভেদ সৃষ্টি করে দিবেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَسْوِيَةِ الصَّفِّ
عَن النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَوِّي صُفُوفَنَا حَتَّى كَأَنَّمَا يُسَوِّي بِهَا الْقِدَاحَ حَتَّى رَأَى أَنَّا قَدْ عَقَلْنَا عَنْهُ ثُمَّ خَرَجَ يَوْمًا فَقَامَ حَتَّى كَادَ أَنْ يُكَبِّرَ فَرَأَى رَجُلًا بَادِيًا صَدْرُهُ مِنَ الصَّفِّ فَقَالَ: «عِبَادَ اللَّهِ لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: কাতারের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝাতে গিয়ে সাহাবী নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তীরের মতো করে কাতার সোজা করতেন এবং পূর্ণাঙ্গ সোজা করার পর তিনি সালাতে দাঁড়াতেন। ইমম আহমাদের বর্ণনাতে আছে, কাতারসমূহকে এমনভাবে সোজা করতেন যেন আমাদেরকে তীরের মতো সোজা করতেন। আহমাদের অন্য বর্ণনাতে আছে, তিনি কাতারসসূহ সোজা করতেন যেভাবে তীরসমূহ সোজা করা হয়। আহমাদের অন্য বর্ণনাতে ও ইবনু মাজাহতে আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতার সোজা করতেন পরিশেষে তা তীরের মতো করে দিতেন।
আবূ দাঊদের এক বর্ণনাতে আছে, একদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ধারণা করে নিলেন আমারা তাঁর থেকে কাতার সোজা করার বিষয়টি গ্রহণ করেছি ও বুঝতে পেরেছি তখন তিনি মুখ করে আগমন করলেন যখন এক ব্যক্তি তার বক্ষকে কাতার থেকে আগে বাড়িয়ে ছিল। আহমাদের এক বর্ণনাতে আছে, যখন তিনি তাকবীর দেয়ার ইচ্ছা করলেন তখন এক ব্যক্তিকে কাতার থেকে নিজ বক্ষকে অগ্রগামী অবস্থায় পেলেন। আহমাদের অন্য এক বর্ণনাতে ও ইবনু মাজহতে আছে, অতঃপর তিনি এক লোকের বক্ষকে কাতার থেকে বহির্গত অবস্থায় তথা তার সাহাবীদের বক্ষ থেকে অগ্রগামী করা ভাসাবস্থায় দেখতে পেলেন।
আহমাদ ও আবূ দাঊদ এর এক বর্ণনাতে আছে ও বায়হাক্বীতে আছে, নু‘মান বিন বাশীর বলেন, আমি এক লোককে দেখলাম তিনি তার টাখনুকে তার সাথীর টাখনুর সাথে এবং তার হাঁটুকে তার হাঁটুর সাথে এবং তার কাঁধকে তার (সাথীর) কাঁধের সাথে এঁটে দাঁড়াতে। উপরোক্ত হাদীসগুলোর বর্ণনা থেকে বুঝা যায় কাতার সোজা করার গুরুত্ব অপরিসীম এবং তা জামা‘আতে সালাত আদায়ের ওয়াজিবসমূহ থেকে একটি ওয়াজিব।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৮৬-[২] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে চেহারা ফিরালেন এবং বললেন, নিজ নিজ কাতার সোজা করো এবং পরস্পর গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়াও! নিশ্চয় আমি আমার পেছনের দিক হতেও তোমাদেরকে দেখতে পাই। (বুখারী; বুখারী ও মুসলিমের মিলিত বর্ণনা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের কাতারগুলোকে পূর্ণ করো। আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই।)[1]
بَابُ تَسْوِيَةِ الصَّفِّ
وَعَن أنس قَالَ: أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَأَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِوَجْهِهِ فَقَالَ: «أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ وَتَرَاصُّوا فَإِنِّي أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ. وَفِي الْمُتَّفَقِ عَلَيْهِ قَالَ: «أَتِمُّوا الصُّفُوف فَإِنِّي أَرَاكُم من وَرَاء ظَهْري»
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ‘ইক্বামাত ও সালাতে প্রবেশের মাঝে কথা বলা জায়িয এ কথার প্রমাণ রয়েছে এবং কাতার সোজা করা ওয়াজিব এ কথার প্রমাণ রয়েছে। এক বর্ণনাতে বুখারী বৃদ্ধি করছেনঃ
وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنَكَبَه بِمَنْكِبِ صَاحِبِه وَقَدَمَه بِقَدَمِه.
অর্থাৎ আমাদের কেউ তার সাথীর কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতেন।
হুমায়দ থেকে মা‘মার এর এক বর্ণনাতে আছে, قال أنس: فلقد رأيت أحدنا إلى اخره (অর্থাৎ আনাস (রাঃ) বলেন, আমি আমাদের কাউকে দেখেছি হাদীসের শেষ পর্যন্ত) আনাস (রাঃ)-এর এ পরিষ্কার বিবরণ ঐ উপকারিতা দিচ্ছে যে, নিশ্চয় পায়ের সাথে পা, কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ছিল আর কাতার ঠিক করা ও সোজা করা থেকে কি উদ্দেশ্য সে বিবরণের উপর প্রমাণ উপস্থাপন হচ্ছে। মা‘মার আর এক বর্ণনাতে বৃদ্ধি করে বলেন, যদি আজ তাদের কারো সাথে আমি এটা করি অবশ্যই সে পলায়ন করবে যেন সে অবাধ্য খচ্চর।
আমি (লেখক) বলব, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (تَرَاصُّوْا) তোমরা পরস্পর এঁটে দাঁড়াও। অপর বাণীঃ (رَصُّوْا صُفُوْفَكُمْ) অর্থাৎ তোমরা তোমাদের কাতার গুলোকে এঁটে দাও। অপর বাণীঃ (سُدُّوا الْخَلَلَ، وَلَا تَذَرْوُا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ) অর্থাৎ তোমরা পরস্পরের মাঝের ফাঁকা বন্ধ করে দাও এবং শায়ত্বনের (শয়তানের) জন্য ফাঁকা রেখনা। নু‘মান বিন বাশীর-এর উক্তি (আমি লোকটিকে দেখলাম তার কাঁধ তার সাথীর কাঁধের সাথে মিলাতে..... শেষ পর্যন্ত) আনাস (রাঃ)-এর উক্তিঃ (وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكَبَه بِمَنَكَبِ صَاحِبِه) আমাদের কেউ তার কাঁধ তার সাথীর কাঁধের সাথে মিলাতো..... শেষ পর্যন্ত। উল্লেখিত সকল হাদীস পরিষ্কারভাবে ঐ কথার উপর প্রমাণ করছে যে, কাতার ঠিক করা, সোজা করা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীরা একই পদ্ধতিতে কাতারে পরস্পরের মাঝের ফাঁকা বন্ধ করে কাঁধে কাঁধ, পায়ে পা মিলিয়ে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো।
আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সাহাবীগণ এমন করত। পরবর্তীতে সাহাবী ও তাবি‘ঈদের যুগে এ ধরনের ‘আমল ছিল। অতঃপর মানুষ এ ব্যাপারে অমনোযোগী হয়ে যায়। বর্তমান অন্ধ অনুকরণকারী মুকাল্লিদরা জামা‘আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের সময় দু’ মুসল্লীর মাঝে এক বিঘত বা তার চাইতেও বেশি ফাঁক রেখে দেয় কখনো তারা এত বেশি ফাঁক রাখে যে, আরেকজন ব্যক্তি সে ফাঁকে দাঁড়াতে পারবে। যখন কোন হাদীস অনুসারী ব্যক্তি কোন মুকাল্লিদের সাথে দাঁড়িয়ে পায়ের সাথে পা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর চেষ্টা করে তখন মুকাল্লিদ সুন্নাতকে বর্জন করে হাদীস অনুসারী হতে আলাদা হয়ে যায়।
তার দু’ পাকে মিলিয়ে নেয়। আবার কখনো মুকাল্লিদ তার প্রতি বক্র দৃষ্টিতে তাকায় বরং কখনো বন্য গাধার মতো করে পলায়ন করে। ফায়জুল বারী গ্রন্থের লেখক বলেন, ফুক্বাহা আরবাআর কাছে কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানো থেকে উদ্দেশ্য হল উভয় মুসল্লীর মাঝে এমন ফাঁক রাখা যাবে না যাতে অন্য তৃতীয় আরেকজন সেখানে প্রবেশ করে নেয়। তিনি বলেন, আমি একাকী ও জামা‘আতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে সালাফদের নিকট কোন পার্থক্য পাইনি যে, ব্যক্তির দু’ পায়ের মাঝে ফাঁক করে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে একাকী সালাত আদায় অপেক্ষা তারা জামা‘আতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের দু’ পায়ের মাঝে অধিক ফাঁক করে দাঁড়াতেন। এ মাসআলাটি শুধু গাইরে মুকাল্লিদীনেরা অস্তিত্ব দিয়েছেন অথচ এ ব্যাপারে তাদের কাছে (إلزاق) শব্দ ছাড়া অন্য কোন দলীল নেই। যার অর্থ মিলিয়ে দাঁড়ানো।
পরিশেষে বলা যায় উপরোক্ত হাদীস থেকে আমাদেরকে কাঁধে কাঁধ, পায়ে পা মিলিয়ে দাঁড়ানোর শিক্ষা নিতে হবে। প্রাসঙ্গিক কথা যদি আমরা জামা‘আতের সাথে সালাতে দাঁড়ানোর সময় আমাদের দু’ পায়ের মাঝে অধিক মাত্রায় ফাঁক রাখি তাহলে আমাদের পক্ষে কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৮৭-[৩] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের সালাতের কাতার ঠিক করে নাও। কারণ সালাতের কাতার সোজা করা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম করার অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَسْوِيَةِ الصَّفِّ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ من إِقَامَة الصَّلَاة» . إِلَّا أَنَّ عِنْدَ مُسْلِمٍ: «مِنْ تَمَامِ الصَّلَاةِ»
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে কাতার সোজা করার নির্দেশসূচক বাণী কাতার সোজা করা ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ। পক্ষান্তরে ইবনু হাযম হাদীসে ব্যবহৃত مِنْ تَمَامِ الصَّلَاةِ থেকে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন কাতার সোজা করা এবং পরস্পর এঁটে দাঁড়ানো ফরয। পরিশেষে বলতে পারি, আমাদের কাতার সোজা করার বিষয়টি ভালভাবে গুরুত্ব দিতে হবে যাতে অপরাপর হাদীসে কাতার সোজা না করার যে ভয়াবহতার কথা বলা হয়েছে তা থেকে রক্ষা পেতে পারি।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৮৮-[৪] আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সময় আমাদের কাঁধে হাত রেখে বলতেনঃ সোজা হয়ে দাঁড়াও, সামনে পিছনে হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী, তারা আমার নিকট দাঁড়াবে। তারপর সমস্ত লোক যারা তাদের নিকটবর্তী (মানের), তারপর ঐসব লোক যারা তাদের নিকটবর্তী হবে। আবূ মাস্’ঊদ (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন, আজকাল তোমাদের মাঝে বড় মতভেদ। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَسْوِيَةِ الصَّفِّ
وَعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا فِي الصَّلَاةِ وَيَقُولُ: «اسْتَوُوا وَلَا تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبكُمْ ليليني مِنْكُم أولُوا الْأَحْلَامِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ» . قَالَ أَبُو مَسْعُودٍ: فَأَنْتُمُ الْيَوْمَ أَشَدُّ اخْتِلَافا. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা : উপরোক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায়, মানুষের বাহ্যিক বিভিন্নমুখী হয়ে যাওয়া তাদের অভ্যন্তরীণ দিক বিভিন্নমুখী হয়ে যাওয়ার কারণ। অপরদিকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে যারা বড় তারা যেন তাঁর কাছাকাছি দাঁড়ায়’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা রসূলের সালাতের বিষয়গুলো ভাল করে বুঝবে এবং সালাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ছুটে গেলে যেন তাদের কাউকে সেখানে দাঁড় করিয়ে যেতে পারেন এবং সালাতের পরে অন্য সময়ে যেন সালাতের বিষয়গুলো মানুষকে জানাতে পারে। ইমাম নাবাবী বলেন, উল্লেখিত হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মর্যাদার স্তর হিসেবে তাদেরকে মর্যাদা দান করেছেন, কারণ তিনি সম্মান করার বেশি অধিকার রাখেন। কখনো প্রয়োজনবোধে যেন ইমাম হিসেবে কাউকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে কোন কিছু ভুলে গেলে যেন তারা লোকমা দিতে পারেন।
রসূলের সালাতের বৈশিষ্ট্য যেন সংরক্ষণ করতে পারেন, মানুষকে তা শিক্ষা দিতে পারেন, তাদের পেছনের ব্যক্তিরা যেন তাদের সালাতের অনুসরণ করতে পারেন। পরিশেষে বলা যেতে পারে একজন ইমামকে মুসল্লীদের কাতার সোজা করার ব্যাপারে ব্যাপক গুরুত্ব দিতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৮৯-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞজন (সালাতে) আমার নিকট দিয়ে দাঁড়াবে। তারপর দাঁড়াবে তাদের নিকটবর্তী স্তরের লোক। এ কথা তিনি তিনবার উচ্চস্বরে বললেন। আর তোমরা (মসজিদে) বাজারের ন্যায় হৈ চৈ করবে না। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَسْوِيَةِ الصَّفِّ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِيَلِنِي مِنْكُمْ أُولُو الْأَحْلَامِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ» ثَلَاثًا وَإِيَّاكُم وهيشات الْأَسْوَاق . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ ইমামের কাছাকাছি দাঁড়াবে, ইমামের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সংরক্ষণ করবে এবং তাদের পেছনে যারা থাকবে তারা তাদের অনুসরণ করবে। ইমাম ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্বী এক নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনা করেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে সালাতে মুহাজির আনসারীদের অবস্থান করাকে ভালবাসতেন যাতে তাঁরা তাঁর কাছ থেকে মাসআলাহ্ মাসায়েল জেনে নিতে পারে। অপরদিকে বুঝা যায় মসজিদে কোন মুসল্লীর পক্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা পারস্পারিক টানা হেঁচড়া করা, বাদানুবাদ করা, উঁচু আওয়াজ করা, গোলমাল করা ও ফিৎনাহ্ সৃষ্টি করা উচিত নয়। কারণ মাসজিদ সালাতের স্থান যেখানে মুসল্লী আল্লাহর সামনে হাজির হয়, সুতরাং এমতাবস্থায় মুসল্লীদের দায়িত্ব চুপ থাকা ও ‘ইবাদাতের শিষ্টাচার রক্ষা করা।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৯০-[৬] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের মাঝে প্রথম সারিতে এগিয়ে আসতে গড়িমসি লক্ষ্য করে তাদেরকে বললেন, সামনে এগিয়ে আসো। আমার অনুকরণ করো। তাহলে যারা তোমাদের পেছনে রয়েছে তারা তোমাদের অনুকরণ করবে। এরপর তিনি বললেন, একদল লোক সর্বদাই প্রথম কাতারে দাঁড়াতে দেরী করতে থাকে। পরিণামে আল্লাহ তা’আলাও তাদের পেছনে ফেলে রাখবেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَسْوِيَةِ الصَّفِّ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَصْحَابِهِ تَأَخُّرًا فَقَالَ لَهُمْ: «تَقَدَّمُوا وَأْتَمُّوا بِي وَلْيَأْتَمَّ بِكُمْ مَنْ بَعْدَكُمْ لَا يَزَالُ قَوْمٌ يَتَأَخَّرُونَ حَتَّى يؤخرهم الله» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীস থেকে বুঝা যায়, ইমাম থেকে যে সকল মুক্তাদীরা দূরে অবস্থান করবে তারা তাদের সামনের মুক্তাদীদের দেখে ইমামের অনুসরণ করবে উপরন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীসে সামনের কাতারগুলো থেকে পিছপা হওয়ার কারণে আল্লাহ তাদের জান্নাতে প্রবেশে পিছপা করবেন কথা উল্লেখ করে মু’মিনদেরকে প্রথম কাতারে যথাসময়ে প্রথমে উপস্থিত থাকতে উৎসাহিত করেছেন এবং পিছপা হতে নিরুৎসাহিত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৯১-[৭] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট বের হয়ে এসে আমাদেরকে গোল হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বসা দেখে বললেন, কি ব্যাপার তোমাদেরকে বিভক্ত হয়ে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এরপর আর একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে আগমন করলেন এবং বললেন, তোমরা কেন এভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াচ্ছ না যেভাবে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) আল্লাহর সামনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মালায়িকাহ্ আল্লাহর সামনে কিভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়? তিনি বললেন, তারা প্রথমে সামনের কাতার পুরা করে এবং কাতারে মিলেমিশে দাঁড়ায়। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَسْوِيَةِ الصَّفِّ
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَآنَا حلقا فَقَالَ: «مَالِي أَرَاكُمْ عِزِينَ؟» ثُمَّ خَرَجَ عَلَيْنَا فَقَالَ: «أَلَا تَصُفُّونَ كَمَا تَصُفُّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟» فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ تَصُفُّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ قَالَ: «يُتِمُّونَ الصُّفُوفَ الْأُولَى وَيَتَرَاصُّونَ فِي الصَّفّ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে মসজিদে একাধিক দল হয়ে আলাদা হয়ে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। সালাতসহ অন্যান্য ‘ইবাদাতে মালাকগণের (ফেরেশতাদের) অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। জামা‘আতে সালাতের প্রথম কাতারগুলো আগে পূর্ণ করতে ও পরস্পরের মাঝে ফাঁক বন্ধ করে এঁটে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। আর তা এভাবে যে, প্রথম কাতার পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় কাতারে দাঁড়াবে না। দ্বিতীয় কাতার পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তৃতীয় কাতারে দাঁড়াবে না। এমনিভাবে তৃতীয় কাতার পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত চতুর্থ কাতারে দাঁড়াবে না।
পরিচ্ছেদঃ ২৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা
১০৯২-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে পুরুষদের জন্যে সবচেয়ে ভাল হলো প্রথম সারি এবং নিকৃষ্টতম হলো পেছনের সারি। আর মহিলাদের জন্য সবচেয়ে ভাল হলো পেছনের কাতার এবং সবচেয়ে খারাপ হলো প্রথম কাতার। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَسْوِيَةِ الصَّفِّ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وشرها أَولهَا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: সালাতে পুরুষদের কাতারসমূহের মাঝে প্রথম কাতারের অবস্থানকারীদের সাওয়াব, মর্যাদা বেশি। কারণ মসজিদে আগে উপস্থিত হওয়ার যে কথা বলা হয়েছে তা স্বভাবত প্রথম কাতারে অবস্থানকারীগণ সংরক্ষণ করে, তারা ইমামের কাছাকাছি থাকে। ইমামের অবস্থাসমূহ স্বচক্ষে অবলোকন করে। ইমামের ক্বিরাআত (কিরআত) শোনে। মহিলাদের থেকে দূরে থাকে। পক্ষান্তরে শেষ কাতারের উপস্থিত হওয়া কম সাওয়াব অর্জনের কথা বলা হয়েছে কারণ প্রথম কাতারে অবস্থানকারী মুসল্লীর যে গুণসমূহ অর্জন হয় শেষ কাতারে তা অর্জন হয় না, মুসল্লী ইমাম থেকে দূরে থাকে, মহিলাদের কাছাকাছি থাকে। মহিলাদের জন্য শেষ কাতারে দাঁড়ানো সাওয়াব বেশি। পুরষদের সাথে উঠা-বসা থেকে তাদের দূরে থাকার কারণে, পুরুষদের উঠা-বসার সময় তাদের প্রতি অন্তর ধাবমান হওয়া ও তাদের কথা শ্রবণ থেকে দূরে থাকার কারণে। অনুরূপভাবে মহিলাদের জন্য প্রথম কাতারে দাঁড়ানো শেষ কাতারে দাঁড়ানোর বিপরীত। হাদীসে পুরুষদের প্রথম ও শেষ কাতারে দাঁড়ানোর যে সাওয়াবের কথা বলা হয়েছে তা স্বাভাবিকভাবে যা বুঝা যাচ্ছে সেভাবেই প্রযোজ্য।
পক্ষান্তরে মহিলাদের কাতারসমূহের যে বিবরণ হাদীসে উল্লেখ হয়েছে তা মূলত পুরুষদের সাথে মহিলাদের উঠা-বসার সময় প্রযোজ্য। ইমাম নাবাবী বলেন, পুরুষদের কাতারসমূহের যে বর্ণনা হাদীসে দেয়া হয়েছে তা স্বাভাবিকভাবে প্রযোজ্য তথা পুরুষদের জন্য প্রথম কাতার সর্বদাই উত্তম এবং শেষ কাতার সর্বদাই কম সাওয়াব অর্জনের কারণ। পক্ষান্তরে নারীদের কাতারসমূহের যে বিবরণ হাদীসে এসেছে তা মূলত ঐ সকল নারীদের কাতার যারা পুরুষদের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে।
পক্ষান্তরে যদি তারা পুরুষদের থেকে আলাদা হয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় করে তাহলে তাদের জন্যও প্রথম কাতারে সালাত আদায় করা বেশি সাওয়াবের কারণ আর শেষ কাতারে সালাত আদায় করা সাওয়াব কম হওয়ার কারণ। কেউ বলেন মহিলাদের কাতারও স্বাভাবিকভাবে প্রথম কাতারই শ্রেষ্ঠ হতে পারে যদি পর্দার মাধ্যমে পুরুষদের থেকে মহিলাদেরকে আলাদা করে দেয়া হয়। মাসআলাটি গবেষণার।
হাদীসটিতে প্রমাণ রয়েছে মহিলা কাতারবন্দী হয়ে পুরুষদের সাথে তাদের অবস্থানের মাঝে কোন কিছুর ব্যবধান ছাড়াই অথবা আলাদা একাকীভাবে সালাত আদায় করা জায়িয। জানা উচিত, মতবিরোধ করা হয়েছে ঐ ব্যাপারে যে, মসজিদে প্রথম কাতারটি ঐ কাতার যা সাধারণত ইমামের নিকটে থাকে অর্থাৎ যা ক্বিবলার অধিক নিকটবর্তী? নাকি প্রথম কাতার পূর্ণাঙ্গই উদ্দেশ্য? যা ইমামের নিকটবর্তী থাকে। যে কাতারের মাঝে বেষ্টিত কোন কিছু প্রবেশ হয়ে যায় তা উদ্দেশ্য নাকি প্রথম কাতার বলতে ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য যে আগে সালাতে আসে যদিও সে পেছনে সালাত আদায় করে? ইমাম নাবাবী বলেন, প্রথম কাতার বলতে ঐ প্রশংসিত কাতার যে কাতারের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে। তা ঐ কাতার যা ইমামের কাছাকাছি। চাই সে কাতারের মালিক আগে আসুক বা পরে আসুক। চাই কাতারের মাঝখানে সীমাবদ্ধ বা তার অনুরূপ কোন কিছু প্রবেশ করুক বা না করুক। এটিই সঠিক কথা যা হাদীসসমূহের বাহ্যিক দিক দাবি করছে।
বিশ্লেষকগণ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কথা বলেছেন। বিদ্বানদের একটি দল বলেন, প্রথম কাতার বলতে মসজিদের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত যার মাঝে সীমাবদ্ধ বা অনুরূপ কোন জায়গা বা বস্ত্তর প্রবেশ করবে না সুতরাং যে কাতার ইমামের কাছাকাছি তার মাঝে যদি কোন কিছু প্রবেশ করে তাহলে তা প্রথম কাতার বলে গণ্য হবে না বরং প্রথম কাতার বলতে ঐ কাতার যার মাঝে কোন কিছু প্রবশে করবে না যদিও তা পেছনে হয়। এক মতে বলা হয়েছে, প্রথম কাতার বলতে কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রথম আসা যদিও সে পেছনের কাতারে সালাত আদায় করে এ দু’টি উক্তি স্পষ্ট ভুল।