পরিচ্ছেদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৬২-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করো না। তবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য তাদের জন্যে ঘরই উত্তম। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَمْنَعُوا نِسَاءَكُمُ الْمَسَاجِدَ وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (بُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ) ‘‘ঘর তাদের জন্য উত্তম’’ অর্থাৎ ঘরে সালাত আদায় করা তাদের জন্য উত্তম মসজিদে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার চাইতে। কেননা ঘর তাদের জন্য নিশ্চিতভাবে নিরাপদ।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৬৩-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের তাদের ঘরের মাঝে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা তাদের বাইরের ঘরে সালাত আদায় করার চেয়ে ভাল। আবার কোন কামরায় তাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা তাদের ঘরে সালাত আদায় করার চেয়ে ভাল। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلَاةُ الْمَرْأَةِ فِي بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي حُجْرَتِهَا وَصَلَاتُهَا فِي مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي بَيْتِهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (وَصَلَاتُهَا فِي مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي بَيْتِهَا) ‘‘বাড়ীর প্রশস্ত আঙিনায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার চাইতে ঘরের ছোট প্রকোষ্টে সালাত আদায় করা তাদের জন্য উত্তম। কেননা তাদের প্রতি এ নির্দেশের ভিত্তি হচ্ছে পর্দা। কাজেই যেখানে যত বেশী পর্দা রক্ষিত হবে সেখানে সালাত আদায় করা তাদের জন্য উত্তম।
উপরে বর্ণিত হাদীসগুলোর মূল কথা হলো ‘‘পুরুষের জন্য মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া তখনই ওয়াজিব অথবা মুস্তাহাব যখন তারা সুগন্ধি, গহনা ও সাজসজ্জা বর্জন করবে। পক্ষান্তরে তারা যখন এগুলো বর্জন না করবে তখন পুরুষের পক্ষে তাদের স্ত্রীদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া ওয়াজিব নয়।
আর সর্বাবস্থায় ঘরে সালাত আদায় করাই তাদের জন্য উত্তম মসজিদে সালাত আদায় করার চাইতে। ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত এ হাদীসটিই তার প্রমাণ।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৬৪-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার মাহবুব আবুল ক্বাসিম (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ঐ মহিলার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কবূল হবে না যে সুগন্ধি মেখে মসজিদে যায়, যতক্ষণ সে গোসল না করে নাপাকী থেকে গোসল করার ন্যায়। (আবূ দাঊদ, আহমাদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ حِبِّي أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ امْرَأَةٍ تَطَيَّبَتْ لِلْمَسْجِدِ حَتَّى تَغْتَسِلَ غُسْلَهَا مِنَ الْجَنَابَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وروى أَحْمد وَالنَّسَائِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: (تَطَيَّبَتْ لِلْمَسْجِدِ) ‘‘মসজিদের জন্য সুগন্ধি লাগায়’’ অর্থাৎ মসজিদে যাওয়ার জন্য সুগন্ধি লাগায়।
(حَتّى تَغْتَسِلَ غُسْلَهَا مِنَ الْجَنَابَةِ) যতক্ষণ পর্যন্ত সে জানাবাতের গোসলের মতো গোসল করে’’ অর্থাৎ জানাবাত তথা নাপাকী দূর করার জন্য যেরূপ নাপাকী দূর না হওয়া পর্যন্ত গোসল করতে হয়। অনুরূপভাবে পূর্ণভাবে সুগন্ধি দূর না হওয়া পর্যন্ত গোসল করবে। অতঃপর চাইলে সে মসজিদে যাবে। যদিও আবূ দাঊদে বর্ণিত এ হাদীসটি দুর্বল ‘আসিম ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ) নামক রাবীর দুর্বলতার কারণে তথাপি হাদীসটির অর্থ সঠিক। কেননা ইবনু খুযায়মাহ্ ও বায়হাক্বী মূসা ইবনু ইয়াসার সূত্রে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ লায়স ইবনু আবী সুলায়ম-এর বরাতে ‘আবদুল কারীম সূত্রে আবূ রূহম-এর মুক্ত গোলাম থেকে বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম নাসায়ী সাফওয়ান ইবনু সুলায়ম-এর বরাতে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির সূত্রে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। অতএব হাদীসটি গ্রহণযোগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৬৫-[১৪] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি চক্ষুই ব্যভিচারী। আর যে মহিলা সুগন্ধি দিয়ে পুরুষদের সভায় যায় সে এমন এমন অর্থাৎ ব্যভিচারকারিণী। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ وَإِنَّ الْمَرْأَةَ إِذَا اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ بِالْمَجْلِسِ فَهِيَ كَذَا وَكَذَا» . يَعْنِي زَانِيَةً. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَلِأَبِي دَاوُد وَالنَّسَائِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: (كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ) ‘‘সকল চক্ষুই যিনাকারী’’ অর্থাৎ যে চোখ আযনাবী তথা যাকে দেখা বৈধ নয় তার দিকে শাহওয়াতের তথা যৌন কামনার দৃষ্টিতে তাকায় সে চোখ যিনাকারী। কেননা চোখ দ্বারা তাকানোটাই যিনা। ‘‘মহিলা যখন সুগন্ধি লাগিয়ে পুরুষের মাজলিসের নিকট দিয়ে গমন করে তখন সে মহিলা যিনাকারিণী। কেননা উক্ত মহিলা সুগন্ধি লাগিয়ে পুরুষের যৌন কামনাকে উসকে দিয়েছে। যা তার দিকে তাকাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আর যে ব্যক্তি তার দিকে তাকালো সে চোখের যিনা করল। উক্ত মহিলাই এ যিনার কারণ হওয়ার ফলে ঐ মহিলা যিনার অপরাধে অপরাধী। তাই এ যিনার পাপও তার উপর বর্তাবে।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৬৬-[১৫] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর বললেন, অমুক লোক কি হাযির আছে? সাহাবীগণ বললেন, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় বললেন, অমুক লোক কি হাযির আছে? সাহাবীগণ বললেন, না। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সব সালাতের মাঝে এ দু’টি সালাত (ফাজর ও ’ইশা) মুনাফিক্বদের জন্যে খুবই কষ্টসাধ্য। তোমরা যদি জানতে এ দু’টি সালাতের মাঝে কত পুণ্য, তাহলে তোমরা হাঁটুর উপর ভর করে হলেও সালাতে আসতে।
সালাতের প্রথম কাতার মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) কাতারের মতো (মর্যাদাপূর্ণ)। তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফাযীলাত জানতে তবে এতে অংশগ্রহণ করার জন্য তাড়াতাড়ি পৌঁছার চেষ্টা করতে। আর একা একা সালাত আদায় করার চেয়ে অন্য একজন লোকের সঙ্গে মিলে সালাত আদায় করা অনেক সাওয়াব। আর দু’জনের সাথে মিলে সালাত আদায় করলে একজনের সাথে সালাত আদায় করার চেয়ে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। আর যত বেশী মানুষের সঙ্গে মিলে সালাত আদায় করা হয়, তা আল্লাহর নিকট তত বেশী প্রিয়। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا الصُّبْحَ فَلَمَّا سَلَّمَ قَالَ: «أَشَاهِدٌ فُلَانٌ؟» قَالُوا: لَا. قَالَ: «أَشَاهِدٌ فُلَانٌ؟» قَالُوا: لَا. قَالَ: «إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ أَثْقَلُ الصَّلَوَاتِ عَلَى الْمُنَافِقِينَ وَلَو تعلمُونَ مَا فيهمَا لأتيتموهما وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الرُّكَبِ وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلَ عَلَى مِثْلِ صَفِّ الْمَلَائِكَةِ وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فضيلته لابتدرتموه وَإِن صَلَاة الرجل من الرَّجُلِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ وَحْدَهُ وَصَلَاتَهُ مَعَ الرَّجُلَيْنِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ مَعَ الرَّجُلِ وَمَا كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ) ‘‘এ দু’টি সালাত’’ অর্থাৎ ‘ইশা ও ফাজর (ফজর) (أَثْقَلُ الصَّلَوَاتِ عَلَى الْمُنَافِقِينَ) মুনাফিক্বদের উপর খুব বেশী ভারী। এতে বুঝা যায় যে, সকল সালাতই মুনাফিক্বদের জন্য ভারী। কিন্তু ‘ইশা অধিক ভারী এ কারণে যে, তখন আরামের সময় আর ফাজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এ জন্য ভারী যে, তা স্বাদের ঘুমের সময়। যেহেতু মুনাফিক্ব ব্যক্তি সালাতের সাওয়াবে বিশ্বাসী নয় কাজেই তাতে তার প্রতি ধর্মীয় কোন আবেদন নেই।
মূলত মুনাফিক্ব ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশে সালাত আদায় করে থাকে। আর এ সালাত দু’টি রাতের অন্ধকারে অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে তার স্বার্থ অনুপস্থিত, যেহেতু লোকজন তার সালাতের গমনাগমন দেখতে পাবে না ফলে তাতে দুনিয়াবী আবেদনও অনুপস্থিত ফলে এ সালাত আদায় করা তাদের জন্য কষ্টকর।
(وَمَا كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللّهِ) যাতে লোকের সমাগম বেশী হয় তা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। এতে বুঝা গেল যে, যে জামা‘আতের লোক সংখ্যা বেশী তা ঐ জামা‘আতের চাইতে উত্তম যাতে লোক সংখ্যা কম। এতে জামা‘আতের মর্যাদার ভিন্নতা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, যদিও জামা‘আত হিসেবে সকল জামা‘আতই সাতাশ গুণ মর্যাদার অধিকারী। এ হাদীস তাদের অভিমতকে প্রত্যাখ্যান করে যারা বলে যে, সকল জামা‘আতের মর্যাদাই সমান, চাই লোক সংখ্যা বেশী হোক বা কম হোক।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৬৭-[১৬] আবুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে গ্রামে বা জঙ্গলে তিনজন মানুষ বসবাস করবে, সে স্থানে জামা’আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা না হলে তাদের ওপর শায়ত্বন (শয়তান) জয়ী হয়। অতএব তুমি জামা’আতকে নিজের জন্যে অপরিহার্য করে নাও। কারণ দলচ্যুত ছাগলকে নেকড়ে বাঘ ধরে খেয়ে ফেলে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِي قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلَاةُ إِلَّا قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ) ‘‘শায়ত্বন (শয়তান) তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে’’ অর্থাৎ শায়ত্বন (শয়তান) তাদের ওপর বিজয়ী হয়ে এভাবে চেপে বসে যে, সে তাদেরকে তার অভিমুখী করে ফেলে এবং তাদের অন্তর থেকে আল্লাহর স্মরণ বিদূরীত করে ফেলে।
(فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ) ‘‘তুমি জামা‘আতকে আঁকড়িয়ে ধরো’’ কেননা শায়ত্বন (শয়তান) জামা‘আত থেকে দূরে থাকে এবং যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তার ওপর চেপে বসে। পাল থেকে বিচ্ছিন্ন ছাগল রাখালের দৃষ্টি থেকে দূরে থাকার কারণে যেরূপ তা বাঘে খেয়ে ফেলে অনুরূপভাবে জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যে ব্যক্তি একাকী সালাত আদায়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় শায়ত্বন (শয়তান) তার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করে।
এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, জামা‘আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৬৮-[১৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক মুয়াযযিনের আযান শ্রবণ করল এবং আযান শেষে সালাতের জামা’আতে হাযির হতে তার কোন বাধা সৃষ্টিকারী ওযর না থাকে। লোকেরা প্রশ্ন করল, ওযর কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ভয় বা রোগ (জামা’আত ছেড়ে দেয়ায়) তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কবূল হবে না যা সে আদায় করেছে। (আবূ দাঊদ, দারাকুত্বনী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من سمع الْمُنَادِي فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنِ اتِّبَاعِهِ عُذْرٌ» قَالُوا وَمَا الْعُذْرُ؟ قَالَ: «خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلَاةُ الَّتِي صَلَّى» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالدَّارَقُطْنِيّ
ব্যাখ্যা: (لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلَاةُ الَّتِي صَلّى) ‘‘তার সে সালাত কবূল হবে না যে সালাত সে আদায় করেছে। অর্থাৎ ফরয সালাতের আযান শ্রবণ করার পরও যে ব্যক্তি জামা‘আতে হাযির না হয়ে বাড়ীতেই সালাত আদায় করবে কোন ওযর অথবা অসুস্থতা ব্যতীত তার সে সালাত গ্রহণ করা হবে না। ইমাম নাবাবী বলেনঃ তার সালাত গ্রহণ করা হবে না এর অর্থ হলো এতে সে সাওয়াব পাবে না যদিও সে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করার পাপ থেকে নিস্কৃতি পাবে। যদিও হাদীসটি জামা‘আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব হওয়ার দলীল, কিন্তু এ হাদীসে আবূ জানাব ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবী হাইয়্যা আল কালবী নামক একজন রাবী আছেন তিনি দুর্বল এবং মুদাল্লিস। আর তিনি এটি (عنعن) ‘আন্‘আনা প্রকারে বর্ণনা করেছেন। অতএব হাদীসটি দুর্বল।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৬৯-[১৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) হয়ে গেলে তখন তোমাদের কারো পায়খানার বেগ ধরলে সে যেন আগে পায়খানা করে নেয়। (তিরমিযী, মালিক, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ وَوَجَدَ أَحَدُكُمُ الْخَلَاءَ فَلْيَبْدَأْ بِالْخَلَاءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَرَوَى مَالِكٌ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: (وَجَدَ أَحَدُكُمُ الْخَلَاءَ فَلْيَبْدَأْ بِالْخَلَاءِ) ‘‘তোমাদের কারো ওপর যখন পায়খানার বেগ চেপে বসে সে যেন আগে পায়খানার কাজ সেরে নেয়’’। কেননা পায়খানার চাপ নিয়ে যদি সে সালাতে দাঁড়ায় তাহলে তার খুশু‘ ও একাগ্রতাকে বিনষ্ট করবে। তাই এ ব্যক্তির জন্য জামা‘আত ছেড়ে দেয়া বৈধ। অতএব পায়খানা বা পেশাবের অতিরিক্ত চাপ জামা‘আত ছেড়ে দেয়ার জন্য একটি বৈধ ওযর।
হাদীসের শিক্ষা: পায়খানা, পেশাবের চাপ অনুভবকারী ব্যক্তি সালাতে দাঁড়াবে না। এ অবস্থায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা মাকরূহ। এতে জামা‘আত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাক অথবা না থাক। যদিও এ অবস্থায় সালাত আদায় করলে তার সালাত হয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৭০-[১৯] সাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ তিনটি জিনিস এমন আছে যা করা কারো জন্যে বৈধ নয়। প্রথম, কোন লোক যদি কোন জামা’আতে ইমামতি করে, দু’আয় জামা’আতকে অংশগ্রহণ না করে শুধু নিজের জন্য দু’আ করে। যদি সে এমন করে তাহলে সে জামা’আতের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। দ্বিতীয়, কোন ব্যক্তি যেন কারো ভেতর বাড়িতে অনুমতি ছাড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে। যদি কেউ এমন করে তবে সে ব্যক্তি ঐ ঘরওলাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল। তৃতীয়, কারো পায়খানায় যাওয়ার দরকার হলে সে তা থেকে হালকা না হয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে না। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)[1]
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثٌ لَا يَحِلُّ لِأَحَدٍ أَنْ يَفْعَلَهُنَّ: لَا يَؤُمَّنَّ رَجُلٌ قَوْمًا فَيَخُصَّ نَفْسَهُ بِالدُّعَاءِ دُونَهُمْ فَإِنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ خَانَهُمْ. وَلَا يَنْظُرْ فِي قَعْرِ بَيْتٍ قَبْلَ أَنْ يَسْتَأْذِنَ فَإِنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ خَانَهُمْ وَلَا يُصَلِّ وَهُوَ حَقِنٌ حَتَّى يَتَخَفَّفَ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وللترمذي نَحوه
ব্যাখ্যা: (لَا يَؤُمَّنَّ رَجُلٌ قَوْمًا فَيَخُصَّ نَفْسَه بِالدُّعَاءِ دُونَهُمْ) ‘‘কোন ব্যক্তি কোন ক্বওমের ইমামাতকালে সে যেন তাদের বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য দু‘আ না করে।’’ এ হাদীস থেকে বুঝা যায় সালাতের মধ্যে দু‘আতে মুক্তাদীদের শরীক না করে ইমামের শুধু নিজের জন্য দু‘আ করা মাকরূহ। কিন্তু সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে ইমামতিকালে সালাতে, রুকূ‘তে, সাজদাতে, তাশাহুদে একবচনের শব্দ ব্যবহার করে শুধু নিজের জন্য দু‘আ করেছেন। এ বৈপরীত্য দূরীকরণার্থে মনিষীগণ বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন।
(১) সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আলোচ্য এ হাদীসটি ‘‘মাওযূ‘ (বানোয়াট)’’। (২) দু‘আ বলতে দু‘আ কুনূত। কেননা বায়হাক্বীর বর্ণনাতে কুনূতের দু‘আতে বহুবচন ব্যবহৃত হয়েছে। (৩) ইমাম একবচনের শব্দ ব্যবহার করে দু‘আ করলে ও নিয়্যাতের মধ্যে মুক্তাদীদের শামিল করবে। তা দু‘আ কুনূতই হোক বা রুকূ‘ অথবা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা)-এর দু‘আ হোক।
(فَإِنْ فَعَلَ ذلِكَ فَقَدْ خَانَهُمْ) ‘‘কেউ এরূপ করলে সে খিয়ানাত করল।’’ অর্থাৎ বাড়ীর মালিক-এর অনুমতি ব্যতীত কেউ যদি বাড়ীর অভ্যন্তরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাহলে সে বিনা অনুমতিতে বাড়ীতে প্রবেশের অপরাধে অপরাধী হলো। ত্বীবী বলেনঃ অনুমতির বিধান এজন্য যে, যাতে কেউ অপরের গুপ্ত বিষয় দেখে না ফেলে। তাই বাড়ীর অভ্যন্তরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে গুপ্ত বিষয় দেখা খিয়ানাত তথা বিনা অনুমতিতে বাড়ীতে প্রবেশতুল্য অপরাধ।
পরিচ্ছেদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৭১-[২০] জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আহার বা অন্য কোন কারণে সালাতে দেরি করবে না। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُؤَخِّرُوا الصَّلَاةَ لِطَعَامٍ وَلَا لغيره» . رَوَاهُ فِي شرح السّنة
ব্যাখ্যা: ‘‘খাবারের জন্য বা অন্য কোন কারণে সালাত বিলম্বিত করো না।’’ অর্থাৎ খাবারের কারণে বা অন্য কোন কারণে সালাতকে তার নির্ধারিত সময়ের পরে আদায় করবে না। যে হাদীসে খাবার উপস্থাপন করা হলে ইক্বামাত বলা সত্ত্বেও আগে খাবার খেতে বলা হয়েছে তা শুধুমাত্র সালাতের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিলম্বে আদায় করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সালাতের ওয়াক্ত অতিক্রম করে বিলম্বিত করার অনুমতি দেয়া হয়নি। মোটকথা হলো সালাতকে অন্য সকল বিষয়ের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। তবে যে ক্ষেত্রে সালাতের ওয়াক্ত প্রশস্ত থাকে এবং বিলম্ব করার বৈধ কোন কারণে ঘটে সে ক্ষেত্রে তা বিলম্বিত করা বৈধ। কিন্তু ওয়াক্ত সংকীর্ণ হয়ে গেলে কোন কারণেই তা বিলম্বিত করা বৈধ নয়।