পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬৩৬-[১৩] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) ও ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উভয়ে বলেন, ’উস্ত্ববা সালাত’ (মধ্যবর্তী সালাত) যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। ইমাম মালিক (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে এবং ইমাম তিরমিযী উভয় হতে মু’আল্লাক্ব হিসেবে বর্ণনা করেছেন।[1]
عَن زيد بن ثَابت وَعَائِشَة قَالَا: الصَّلَاةُ الْوُسْطَى صَلَاةُ الظُّهْرِ رَوَاهُ مَالِكٌ عَن زيد وَالتِّرْمِذِيّ عَنْهُمَا تَعْلِيقا
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ‘‘নিশ্চয়ই ফাজরের (ফজরের) সালাতে উপস্থিত হয়’’-এর ব্যাখ্যায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ সালাতের সময়ে একদল মালাক (ফেরেশতা) পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয় এবং অন্য একদল মালাক আকাশে উঠে যায়। আয়াতটিতে ফজরের সালাতকে ফজরের কুরআন নামাঙ্কিত করার উদ্দেশ্য হলো, ফাজরের (ফজরের) সালাতে লম্বা ক্বিরাআত (কিরআত) পড়ার প্রতি উৎসাহিত করা যাতে মানুষ (মুসল্লীরা) কুরআন শুনতে পারে। আর এজন্যই ক্বিরাআতের দিক থেকে সকল সালাতের মধ্যে ফাজরের (ফজরের) সালাত দীর্ঘতম।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬৩৭-[১৪] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আগে আগে আদায় করতেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন না যা তাঁর ( সাহাবীগণের জন্য যুহরের চেয়ে কষ্টসাধ্য ছিল। তখন এ আয়াত নাযিল হলোঃحَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوتِ وَالصَّلوةِ الْوُسْطى ’’তোমরা সব সালাতের, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের হিফাযাত করবে’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২: ২৩৮)। তিনি [যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)] বলেন, যুহরের সালাতের আগেও দু’টি সালাত (’ইশা ও ফাজর (ফজর)) আছে, আর পরেও দু’টি সালাত (’আসর ও মাগরিব) আছে। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الظُّهْرَ بِالْهَاجِرَةِ وَلَمْ يَكُنْ يُصَلِّي صَلَاةً أَشَدَّ عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهَا فَنَزَلَتْ (حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى)
وَقَالَ إِنَّ قَبْلَهَا صَلَاتَيْنِ وَبَعْدَهَا صَلَاتَيْنِ. رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর মতে মধ্যবর্তী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হলো যুহরের সালাত। যুহরের সালাতকে মধ্যবর্তী সালাত বলা হয়েছে এজন্য যে, এ সালাত দিনের দু’ প্রান্তের (সকাল ও বিকাল) মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করা হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬৩৮-[১৫] ইমাম মালিক-এর নিকট বিশ্বস্ত সূত্রে পৌঁছেছে যে, ’আলী ও ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলতেনঃ ’সালাতুল উস্ত্বা’ দ্বারা উদ্দেশ্য ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। (মু’আত্তা)[1]
وَعَن مَالك بَلَغَهُ أَنَّ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبَّاسٍ كَانَا يَقُولَانِ: الصَّلَاةُ الْوُسْطَى صَلَاة الصُّبْح. رَوَاهُ فِي الْمُوَطَّأ
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পরপরই খুব গরমের মধ্যে এ সালাতটি আদায় করতেন। সাহাবীগণের কষ্ট হতো বিধায় তারা তাদের কাপড়ের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দিতেন। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বাণী উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তোমরা সালাতসমূহ ওয়াক্ত মতো এবং এগুলোর শর্ত যথাযথভাবে পূরণ করে নিয়মিত আদায় করার মাধ্যমে সালাতসমূহকে সংরক্ষণ করবে। বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতকে অর্থাৎ- সকল সালাতকে সংরক্ষণের আদেশ একত্রে দেয়ার পরে পৃথকভাবে মধ্যবর্তী সালাতকে সংরক্ষণ করার আদেশ দেয়া হয়েছে এজন্য যে, তোমাদের কেউ যেন যুহরের সালাতকে ভারী ভেবে পরিত্যাগ না করে।
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেন, এ মধ্যবর্তী সালাতের পূর্বে দু’টি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), যার একটি দিনের (ফাজর) অপরটি রাতের (‘ইশা) এবং এরপরে দু’টি সালাত, যারও একটি দিনের (‘আসর) অপরটি রাতের (মাগরিব)। যুহরের সালাতকে মধ্যবর্তী সালাত এজন্য বলা হতে পারে যে, এটি দিনের মধ্যভাগে আদায়কৃত সালাত।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬৩৯-[১৬] তিরমিযী ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে মু’আল্লাক্ব হিসেবে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيّ عَن ابْن عَبَّاس وَابْن عمر تَعْلِيقا
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ‘আলী (রাঃ)-এর মতে মধ্যবর্তী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হিসেবে ফাজরের (ফজরের) সালাতকে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ ‘আলী (রাঃ)-এর থেকে এর বিপরীত তথা ‘আসরের সালাত সম্পর্কে মত পাওয়া যায়।
‘আলী (রাঃ)-এর মতে যে, মধ্যবর্তী সালাত হলো ‘আসরের সালাত। এ মতের পক্ষে দু’টি বর্ণনা মূল গ্রন্থে রয়েছে। তাছাড়া ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নামেও বর্তমান হাদীসে যে মত প্রকাশিত হয়েছে তারও বিপরীত তার থেকে প্রমাণিত। মোটকথা, এ হাদীসে ‘আলী (রাঃ) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে যে মত বর্ণিত হয়েছে তা তাদের প্রকৃত মত নয়। বিস্তারিত জানার জন্য মূল গ্রন্থ (মির্‘আত) দেখুন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬৪০-[১৭] সালমান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে লোক ভোরে ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য গেল সে লোক ঈমানের পতাকা উড়িয়ে গেল। আর যে লোক ভোরে বাজারের দিকে গেল সে লোক ইবলীসের (শায়ত্বনের (শয়তানের)) পতাকা উড়িয়ে গেল। (ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنْ سَلْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ غَدَا إِلَى صَلَاةِ الصُّبْحِ غَدَا بِرَايَةِ الْإِيمَانِ وَمَنْ غَدَا إِلَى السُّوقِ غَدَا بِرَايَةِ إِبْلِيسَ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ফাজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের উদ্দেশে মসজিদে যাওয়া ইসলামের নিদর্শনসমূহ প্রকাশের নিদর্শন। আর ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বাজারের দিকে শায়ত্বনের (শয়তানের) পতাকা উত্তোলন করে নিজের দীনকে অপমাণিত করার প্রমাণ। আর এ ব্যক্তি শায়ত্বনের (শয়তানের) দলভুক্ত কর্মী। তবে কেউ যদি হালাল রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) উপার্জনের উদ্দেশে আল্লাহর আনুগত্যের কাজ সম্পন্ন করে এবং ‘ইবাদাতের জন্য পিঠকে সোজা রাখা তথা খাদ্য অর্জনের উদ্দেশে কিংবা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বাঁচতে বাজারে যায় তাহলে সে আল্লাহর দলেই থাকবে। এ হাদীস দ্বারা আরো বুঝা যায় যে, কোন জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাজারে যাওয়া উচিত নয়। কারো মতে, এ হাদীসে বর্ণিত ‘‘বাজারে গমনকারী ব্যক্তি ইবলীসের পতাকা হাতে সকাল করল’’ সেই ব্যক্তি যে ভোরে ফাজরের (ফজরের) সালাত আদায় না করে বাজারে যায়।