পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযান
এ অধ্যায়ে আযান প্রবর্তনের সূচনা ও আযানের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আযান শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ঘোষণা দেয়া। শারী’আতের পরিভাষায় বিশেষ কিছু শব্দের মাধ্যমে সালাতের সময়ের ঘোষণা দেয়াকে আযান বলা হয়।
’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) এবং ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে আযানের বিবরণ এসেছে। প্রথম হিজরীতে আযানের প্রবর্তন হয়।
৬৪১-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সালাতে শরীক হবার জন্য ঘোষণা প্রসঙ্গে) আগুন জ্বালানো ও শিঙ্গায় ফুঁক দেবার প্রস্তাব হলো। এটাকে কেউ কেউ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রথা বলে উল্লেখ করেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিলালকে নির্দেশ দিলেন আযান জোড়া শব্দে ও ইক্বামাত(ইকামত/একামত) বেজোড় শব্দে দেয়ার জন্য।
হাদীস বর্ণনাকারী ইসমা’ঈল বলেন, আমি আবূ আইয়ূব আল আনসারীকে (ইক্বামাত(ইকামত/একামত) বেজোড় দেয়া সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তবে ’’ক্বদ্ ক্ব-মাতিস্ সলা-হ্’’ ছাড়া (অর্থাৎ- ’ক্বদ্ ক্ব-মাতিস্ সলা-হ্’ জোড় বলতে হবে)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْاَذَانِ
عَن أنس قَالَ: ذَكَرُوا النَّارَ وَالنَّاقُوسَ فَذَكَرُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى فَأُمِرَ بِلَالٌ أَنْ يَشْفَعَ الْأَذَانَ وَأَنْ يُوتِرَ الْإِقَامَةَ. قَالَ إِسْمَاعِيلُ: فَذَكَرْتُهُ لِأَيُّوبَ. فَقَالَ: إِلَّا الْإِقَامَة
ব্যাখ্যা: ইমাম তিরমিযী বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, মধ্যবর্তী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হলো ফাজরের (ফজরের) সালাত। আমি (লেখক) ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত কোন সূত্র পাইনি। হ্যাঁ, তবে ইবনু কাসীর বলেছেন, যে, ইবনু আবী হাতিম ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আবূ মুহাম্মাদ ‘আবদুল মু’মিন তাঁর গ্রন্থ ‘‘কাশফুল গিতা আনিস সালাতিল উসত্বা’’ গ্রন্থে ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে যে মত বর্ণনা করেছেন তাতে মধ্যবর্তী সালাত হলো ‘আসরের সালাত। এ সম্পর্কে আল্লাহই সর্বাধিক জানেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - আযান
৬৪২-[২] আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং আমাকে ’আযান’ শিখিয়েছেন। তিনি আযানে বললেন, বলোঃ (১) আল্লা-হু আকবার, (২) আল্লা-হু আকবার, (৩) আল্লা-হু আকবার, (৪) আল্লা-হু আকবার; (১) আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, (২) আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, (১) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, (২) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ। তারপর (তিনি) বললেন, তুমি আবার বলো, (১) আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, (২) আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, (১) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, (২) আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, (১) হাইয়্যা ’আলাস্ সলা-হ্, (২) হাইয়্যা ’আলাস্ সলা-হ্, (১) হাইয়্যা ’আলাল ফালা-হ, (২) হাইয়্যা ’আলাল ফালা-হ। (১) আল্লা-হু আকবার, (২) আল্লা-হু আকবার। লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْاَذَانِ
وَعَن أبي مَحْذُورَة قَالَ: أَلْقَى عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التَّأْذِينَ هُوَ بِنَفْسِهِ فَقَالَ: قُلِ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. ثُمَّ تَعُودَ فَتَقُولَ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ. اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ تَعُودُ فَتَقُولُ) ‘‘তারপর তুমি আবার বলবে।’’ অর্থাৎ- ‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’ (দু’বার) ও ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার্ রসূলুল্ল-হ’’ (দু’বার) নীচু আওয়াজে বলার পর পুনরায় উভয় বাক্য উচ্চৈঃস্বরে দু’বার করে বলবে। একে তারজী‘ বলা হয়।
‘আল্লামা নাবাবী বলেনঃ আবূ মাহযূরাহ্ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ এবং জমহূর ‘আলিমদের স্বপক্ষে সুস্পষ্ট দলীল যে, আযানের মধ্যে তারজী' সাব্যস্ত আছে এবং তা শারী‘আতের বিধান। ইমাম আবূ হানীফাহ্ এবং কুফাবাসীগণ বলেন যে, আযানে তারজী' নেই। কেননা ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ-এর হাদীসে তারজী'-এর উল্লেখ নেই।
জমহূর ‘উলামাহগণের দলীল আবূ মাহযূরাহ্ কর্তৃক বর্ণিত সহীহ হাদীস। আবূ মাহযূরাহ্ বর্ণিত হাদীসে এ বিষয়টি অতিরিক্ত রয়েছে যা ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ-এর হাদীসে নেই। আর দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিষয় অগ্রগণ্য। তাছাড়া আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বশেষ বর্ণনা। কেননা তা হিজরী ৮ম সালের হুনায়নের যুদ্ধের পরের ঘটনা। তাছাড়া মক্কা ও মদীনাবাসীর ‘আমলও আবূ মাহযূরাহ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের উপর।
‘আল্লামা সিন্দী ইবনু মাজাহ্-এর হাশিয়াতে (ثم قال لي ارجع فمد من صوتك) ‘‘তুমি পুনরায় উচ্চৈঃস্বরে বলো’’ এ বাক্যের ব্যাখ্যায় বলেনঃ এটা সুস্পষ্ট যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মাহযূরাহকে তারজী‘ আযান দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং তাদের সে সমস্ত ধারণাপ্রসূত বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত যারা বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তা শিক্ষা দেয়ার জন্য পুনরায় বলেছিলেন। আর তিনি তা তারজী' মনে করেছেন। আর বিলাল (রাঃ)-এর আযান তারজী' ব্যতীত সাব্যস্ত আছে। অতএব তারজী'সহ ও তারজী'বিহীন উভয় ধরনের আযানই বৈধ তথা সুন্নাত।