পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৪৯০-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর পানি পান করে, তখন সে যেন তা সাতবার ধুয়ে নেয়। (বুখারী ও মুসলিম;[1]
মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ দিলে সে যেন তা সাতবার ধুয়ে নেয় এবং এর প্রথমবার মাটি দিয়ে।)[2]
[2] সহীহ : মুসলিম ২৭৯।
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا شَرِبَ الْكَلْبُ فِي إِنَاء أحدكُم فليغسله سبع مَرَّات»
وَفِى رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: «طَهُورُ إِنَاءِ أَحَدِكُمْ إِذَا وَلَغَ فِيهِ الْكَلْبُ أَنْ يَغْسِلَهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ أولَاهُنَّ بِالتُّرَابِ»
ব্যাখ্যা: সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের এ হাদীস হতে প্রমাণ হয় যে, কুকুর কোন পাত্রে পান করলে অথবা মুখ দিলে উক্ত পাত্রটি সাতবার ধুতে হবে। প্রথমবার মাটি দ্বারা ধুতে হবে। তবে হানাফী মাযহাব অনুসারে তিনবার ধৌত করলে যথেষ্ট হবে। যেমন কাপড়ে পায়খানা লাগলে তিনবার ধৌত করলে যথেষ্ট হয়। আর মাটি দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
এ কথা বলা সমীচীন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাটি দিয়ে ধৌত করার নির্দেশের মধ্যে উপকার নিহিত আছে। সেটি হলো কুকুরের ঝুটার মধ্যে বিষ থাকে। মাটি দিয়ে ঘষা দিলে উক্ত বিষ দূর হয়ে যায়। এ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম এবং অন্যান্য সুনানের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। সকল প্রকার রায়-ক্বিয়াস পরিহার করে বর্ণিত হাদীসের উপর ‘আমল করাটাই উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৪৯১-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক বেদুইন মসজিদে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে দিল। লোকেরা তাকে ঘিরে ধরলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, তাকে ছেড়ে দাও এবং প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। তোমাদেরকে (মানুষের জন্য) সহজ পন্থা অবলম্বনকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে, কঠোরতা সৃষ্টিকারীরূপে নয়। (বুখারী)[1]
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَامَ أَعْرَابِيٌّ فَبَالَ فِي الْمَسْجِدِ فَتَنَاوَلَهُ النَّاسُ فَقَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعُوهُ وَهَرِيقُوا عَلَى بَوْلِهِ سَجْلًا مِنْ مَاءٍ أَوْ ذَنُوبًا مِنْ مَاءٍ فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ وَلَمْ تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: মানুষের প্রস্রাব অপবিত্র। যার কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদে জনৈক লোক গ্রামের প্রস্রাব করায় পানি দিয়ে পবিত্র করতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের আদেশ দান করেন। এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতের প্রতি দয়ার গুণাবলী ফুটে উঠে। লোকটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্দর আচরণ ও ব্যবহারে মাসজিদ থেকে বের হয়ে কালিমায়ে তাওহীদ পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন সারা বিশ্ববাসীর জন্য রহমাত স্বরূপ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকটিকে মসজিদের পবিত্রতা বর্ণনা করেন এবং মাসজিদ নির্মাণের লক্ষ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুঝ দান করেন। ঐ লোকটির নাম আক্বরা‘ ইবনু হাবিস আত্ তামীমী।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৪৯২-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মসজিদে (নাবাবীতে) ছিলাম। এমন সময় জনৈক বেদুইন এসে মসজিদে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ বলে উঠলেন, থামো, থামো। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাকে প্রস্রাব করতে বাধা দিও না, তাকে তার অবস্থায় ছেড়ে দাও। তাই সাহাবীগণ তাকে ছেড়ে দিলেন। সে প্রস্রাব করা শেষ করলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, এ মাসজিদসমূহে প্রস্রাব ও অপবিত্রকরণের কোন কাজ করা জায়িয নয়। বরং এটা শুধু আল্লাহর যিকর, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও কুরআন পাঠের জন্য। (রাবী বলেন) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঠিক এ বাক্য বা অনুরূপ কিছু বলেছেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে উপস্থিত একজনকে নির্দেশ দিলেন সে এক বালতি পানি এনে (প্রস্রাবের উপর) ঢেলে দিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
وَعَن أنس قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ فِي الْمَسْجِدِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ فَقَامَ يَبُولُ فِي الْمَسْجِدِ فَقَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَهْ مَه قَالَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَزْرِمُوهُ دَعُوهُ» فَتَرَكُوهُ حَتَّى بَالَ ثُمَّ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ: «إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تصلح لشَيْء من هَذَا الْبَوْل وَلَا القذر إِنَّمَا هِيَ لذكر الله عز وَجل وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ» أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَأمر رَجُلًا مِنَ الْقَوْمِ فَجَاءَ بِدَلْوٍ مِنْ مَاءٍ فسنه عَلَيْهِ
ব্যাখ্যা: (لَا تُزْرِمُوْهُ) ‘‘তাকে প্রস্রাব করতে বাধা দিও না।’’ কেননা প্রস্রাব মাঝখানে বাধাপ্রাপ্ত হলে তা প্রস্রাবকারীর জন্য ক্ষতির কারণ হয় এবং এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেলে প্রস্রাব তার শরীরে ও কাপড়ে লেগে তাকে নাপাক করে দিবে।
(إِنَّ هذِهِ الْمَسَاجِدَ) ‘‘এ মাসজিদসমূহ।’’ ‘মাসজিদ’ শব্দটি বহুবচনে উল্লেখ করেছেন যাতে কেউ এ সন্দেহে নিপতিত না হয় যে, এ হুকুম মসজিদে নাবাবীর জন্য খাস।
(إِنَّمَا هِىَ لِذِكْرِ اللهِ) ‘‘মাসজিদসমূহ আল্লাহর যিকিরের (জিকিরের) জন্য তৈরি করা হয়েছে।’’ ইমাম শাওকানী নায়লুল আওত্বার-এ (১/৪৩) বলেনঃ ‘‘মাসজিদসমূহ আল্লাহর যিকিরের (জিকিরের) জন্য’’। এ সীমাবদ্ধ উক্তি এ ইঙ্গিত বহন করে যে, তাতে হাদীসে উল্লেখিত প্রস্রাব ও ময়লা-আবর্জনা ব্যতীতও অনুরূপ কাজ যেমন- থু থু ফেলা, উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা, ঝগড়া করা, বেচা-কেনা করা, হারানো বস্ত্ত সন্ধান করা এবং যে সমস্ত কথার মধ্যে আল্লাহর যিকর নেই- এ রকম কথাবার্তা বলাও বৈধ নয়। তবে যে সমস্ত কাজের মধ্যে আল্লাহর আনুগত্য রয়েছে যেমন- ই‘তিকাফের জন্য বসা, ‘ইলম চর্চা করা, ওয়ায শ্রবণ করার জন্য বসা, সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকা এ সমস্ত কার্যাবলী বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে সকল মুসলিম ঐকমত্য পোষণ করেন। আর যে সমস্ত কাজের মধ্যে আল্লাহর আনুগত্য নেই- এ ধরনের সকল কাজই মসজিদে অবৈধ।
(فَسَنَّه عَلَيْهِ) ‘‘প্রস্রাবের উপর পানি ঢেলে দিলেন।’’ এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মাটির উপরে পতিত নাপাক বস্ত্ত যদি অধিক পরিমাণে পানি ঢেলে দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয় তাহলে ঐ জায়গা পবিত্র হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৪৯৩-[৪] আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক মহিলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে কারও যদি কাপড়ে হায়যের রক্ত লাগে, তখন সে কি করবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কারো কাপড়ে হায়যের রক্ত লেগে গেলে, সে আঙ্গুল দিয়ে তা খুঁটে ফেলবে। অতঃপর পানি ঢেলে ধুয়ে নিবে। তারপর তাতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ الصّديق أَنَّهَا قَالَتْ: سَأَلَتِ امْرَأَةٌ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إحدانا إِذا أصَاب ثوبها الدَّم من الْحَيْضَة كَيْفَ تَصَنُّعُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذا أصَاب ثوب إحداكن الدَّم مِنَ الْحَيْضَةِ فَلْتَقْرُصْهُ ثُمَّ لِتَنْضَحْهُ بِمَاءٍ ثُمَّ لتصلي فِيهِ»
ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদীস প্রমাণ করে যে, হায়যের রক্ত অপবিত্র। হায়যের রক্ত কাপড়ে লাগলে এবং শুকিয়ে গেলে হাতের নখ দিয়ে রক্ত উঠিয়ে পানি দিয়ে ধৌত করলে সে কাপড় পরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৪৯৪-[৫] সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে কাপড়ে লেগে থাকা মানী (বীর্য) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড় থেকে মানী ধুয়ে দিতাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের উদ্দেশে বের হতেন, অথচ তাঁর (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) কাপড়ে বীর্যের ’আলামত দেখা যেত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
وَعَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ عَنِ الْمَنِيِّ يُصِيبُ الثَّوْبَ فَقَالَتْ كُنْتُ أَغْسِلُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَخْرُجُ إِلَى الصَّلَاةِ وَأَثَرُ الْغَسْلِ فِي ثَوْبه بقع المَاء
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কাপড়ে বীর্য লেগে থাকা ত্বাহারাতের অনুকূল নয়। সে কারণে মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড়ে লেগে থাকা বীর্য ধুয়ে দিতেন। ধুয়ে দেবার কারণে ঐ স্থানটি ভেজা থাকায় বীর্যের আলামত বুঝা যেত। এমন নয় যে, বীর্য লেগে থাকতো। বীর্য তরল অবস্থায় থাকুক বা শুকিয়ে যাক ধুয়ে ফেলাই এ হাদীস শিক্ষা। আর ইমাম শাওকানী (রহঃ) নায়নুল আওত্বার-এর মধ্যে বলেনঃ সেটা ধৌত করা ওয়াজিব প্রমাণ হয় না। মানী শুকিয়ে গেলে নখ দিয়ে খুঁটিয়ে ফেললেই সেটা পাক হয়ে যায়। আর তরল থাকলে দাগ দূর করার জন্য পানি দিয়ে ধৌত করে নিবে। আর এটা ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল-এরও মত।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৪৯৫-[৬] আসওয়াদ ও হাম্মাম (রহঃ) হতে বর্ণিত। উভয়ে বলেন, ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড় হতে বীর্য খুঁটে তুলে ফেলতাম। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
وَعَن الْأسود وَهَمَّام عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كُنْتُ أَفْرُكُ الْمَنِيَّ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (كُنْتُ اَفْرُكُ الْمَنِىَّ مِنْ ثَوْبِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ) ‘‘আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড় হতে বীর্য খুঁটে তুলে ফেলতাম।’’ এ হাদীস দ্বারা ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, দাঊদ ও ইসহাক (রহঃ) প্রমুখ ইমামগণ দলীল পেশ করেছেন যে, বীর্য পবিত্র, তা নাপাক নয়। কেননা তা যদি নাপাক হত তাহলে শুধুমাত্র আঙ্গুল দিয়ে ঘষে ঘষে সেটার দাগ মিশিয়ে ফেলা যথেষ্ট হত না। অবশ্যই তা ধুতে হত। নতুবা ঐ কাপড়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা বৈধ হত না। কেননা আঙ্গুল দিয়ে যতই ঘষা হোক তাতে বীর্য দূরীভূত হয় না বরং তা শুধুমাত্র সেটার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। কিন্তু কাপড়ে সেটার অংশ থেকেই যায়। এতে বুঝা গেল যে, বীর্য পবিত্র।
আর যারা বলেন যে, বীর্য অপবিত্র তথা নাপাক তারা বলেনঃ এ হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত হয় না যে, বীর্য পবিত্র। বরং এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, বীর্য লাগা কাপড় পবিত্র করার জন্য তা ধোয়া জরুরী নয় বরং বীর্য খুঁটে ফেললেও কাপড় পবিত্র হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৪৯৬-[৭] ’আলক্বামাহ্ ও আসওয়াদ (রহঃ) কর্তৃক ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসও অনুরূপ। তবে তাতে আরো আছে, ’’অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে কাপড় পড়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন।’’[1]
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
وَبِرِوَايَةِ عَلْقَمَةَ وَالْأَسْوَدِ عَنْ عَائِشَةَ نَحْوَهُ وَفِيهِ: ثمَّ يُصَلِّي فِيهِ
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ يُصَلِّيْ فَيْهِ) ‘‘অতঃপর তিনি সে কাপড় পরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন।’’ অর্থাৎ- যে কাপড় থেকে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বীর্য খুঁটে তুলে ফেলতেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে কাপড় পড়েই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ধোয়ার প্রয়োজন মনে করতেন না।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৪৯৭-[৮] উম্মু ক্বায়স বিনতু মিহসান (রাঃ)হতে বর্ণিত। একদিন তিনি তার একটি শিশু নিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হলেন (পুত্র শিশুটি মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্য গ্রহণে অনুপযুক্ত ছিল)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আপন কোলে বসালেন। শিশুটি তাঁর কোলে প্রস্রাব করে দিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পানি আনালেন, প্রস্রাবের উপর পানি ঢেলে দিলেন, ধুলেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
وَعَن أم قيس بنت مُحصن: أَنَّهَا أَتَتْ بِابْنٍ لَهَا صَغِيرٍ لَمْ يَأْكُلِ الطَّعَامَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَجْلَسَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حِجْرِهِ فَبَالَ عَلَى ثَوْبِهِ فَدَعَا بِمَاء فنضحه وَلم يغسلهُ
ব্যাখ্যা: দুগ্ধ পানকারী শিশুর প্রস্রাব কাপড়ে লাগলে কাপড় ধৌত করার প্রয়োজন নেই। পানি ছিটিয়ে দিলেই পবিত্রতা অর্জন হয়ে যায়। কিন্তু মেয়ে হলে কাপড় ধৌত করতে হবে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলে ও মেয়ের প্রস্রাবের মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। মেয়েদের প্রস্রাব গাঢ় এজন্য কাপড়ে লাগলে ধৌত করতে বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে হানাফী মাযহাব মতে ছেলে-মেয়ের প্রস্রাবের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ফলে তাদের মাযহাব কাপড়ে প্রস্রাব লাগলে ধৌত করতে হবে। তারা পানি ছিটানোকে ধৌত করার অর্থে ব্যবহার করে, যা হাদীসের পরিপূর্ণ বিপরীত। আর হাসান বসরী হতে আবূ দাঊদে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের প্রস্রাব কাপড়ে লাগলে কাপড় ধৌত করতে হবে।
উম্মু ক্বায়স-এর হাদীসে প্রমাণ করে যে, ছোট বাচ্চা খানা খায় না তার প্রস্রাব কাপড়ে লাগলে শুধু পানি ছিটিয়ে দিলেই হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৪৯৮-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ (কাঁচা) চামড়া যখন পাকা (প্রক্রিয়াজাত) করা হয়, তখন তা পাক হয়ে যায়। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «إِذَا دُبِغَ الْإِهَابُ فَقَدْ طَهُرَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: প্রত্যেক জানোয়ার যার গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) হালাল সেগুলোর চামড়া রং করলে পবিত্র হয়ে যায়। চামড়াতে রং লাগানোর অর্থ চামড়ার দুর্গন্ধ দূর করা ও তরল নাপাকী দূর করা।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৪৯৯-[১০] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমার খালা) মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর এক মুক্তদাসীকে একটি বকরী দান করা হলো। পরে সেটি মারা গেল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট দিয়ে যাবার সময় বললেন, তোমরা বকরীর চামড়াটা খুলে নিয়ে পাকা করলে না, অথচ এটা কাজে লাগাতে পারতে। তারা বলল, এটা যে মৃত! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা শুধু খাওয়াই হারাম করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
وَعَن ابْن عبَّاس قَالَ: تُصُدِّقَ عَلَى مَوْلَاةٍ لِمَيْمُونَةَ بِشَاةٍ فَمَاتَتْ فَمَرَّ بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «هَلَّا أَخَذْتُمْ إِهَابَهَا فَدَبَغْتُمُوهُ فَانْتَفَعْتُمْ بِهِ» فَقَالُوا: إِنَّهَا مَيْتَةٌ فَقَالَ: «إِنَّمَا حُرِّمَ أكلهَا»
ব্যাখ্যা: মৃত ছাগল বা গরুর চামড়া রং করলে পবিত্র হয়ে যায়, তবে এটার গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) কেবল হারাম করা হয়েছে। চামড়া দ্বারা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা বৈধ আছে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন
৫০০-[১১] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী সাওদাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের একটি বকরী মারা গেলে আমরা এর চামড়াটা পাকা করলাম। অতঃপর আমরা সব সময় এতে ’নবীয’ বানাতে থাকি, যা পরবর্তীতে একটা পুরান মশকে পরিণত হলো। (বুখারী)[1]
بَابُ تَطْهِيْرِ النَّجَاسَاتِ
وَعَنْ سَوْدَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ: مَاتَتْ لَنَا شَاةٌ فَدَبَغْنَا مَسْكَهَا ثُمَّ مَا زِلْنَا نَنْبِذُ فِيهِ حَتَّى صَارَ شنا. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (فَدَبَغْنَا مَسْكَهَا) ‘‘আমরা সেটার চামড়া (দাবাগত) পাকা করলাম।’’ (ثُمَّ مَازِلْنَا نَنْبِذُ فِيْهِ) ‘‘এরপর আমরা অব্যাহতভাবে এ চামড়ার তৈরি মশকে নাবীয বানাতে থাকি।’’ অর্থাৎ- তাতে আমরা খেজুর ভিজিয়ে রেখে ঐ পানি পান করতাম। এতে প্রমাণিত হয় যে, যে সকল পশুর গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) খাওয়া হালাল ঐ পশু মারা গেলে তার চামড়া খুলে নিয়ে দাবাগাত (পাকা) করলে তা পবিত্র হয়ে যায়।