পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩২৬-[২৭] আবূ রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বকরীর পেটের মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) (কলিজা প্রভৃতি) ভুনা করে দিতাম (তিনি তা খেতেন)। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন, কোন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন না। (মুসলিম)[1]
عَن أبي رَافع قَالَ: أَشْهَدُ لَقَدْ كُنْتُ أَشْوِي لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَطْنَ الشَّاةِ ثُمَّ صلى وَلم يتَوَضَّأ. رَوَاهُ مُسلم
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩২৭-[২৮] উক্ত রাবী [আবূ রাফি’ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাকে একটি বকরী হাদিয়্যাহ্ দেয়া হলো এবং তিনি তা পাতিলে রান্না করলেন। এমন সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা কী, হে আবূ রাফি’? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাদেরকে একটি বকরী হাদিয়্যাহ্ হিসেবে দেয়া হয়েছে, হে আল্লাহর রসূল! পাতিলে তা পাক করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে আবূ রাফি’! আমাকে এর একটি বাজু দাও তো। আমি তাঁকে একটি বাজু দিলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাকে আরো একটি বাজু দাও। অতঃপর আমি তাঁকে আরো একটি বাজু দিলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেন, আমাকে আরো একটি বাজু দাও। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! একটি বকরীর তো দু’টি বাজু হয়। এটা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আহ! তুমি যদি চুপ থাকতে, তাহলে ’বাজুর পর বাজু আমাকে দিতে পারতে, যে পর্যন্ত তুমি নিশ্চুপ থাকতে।
এরপর তিনি পানি চাইলেন। তিনি কুলি করলেন, নিজের আঙ্গুলের মাথা ধুয়ে নিলেন, অতঃপর সালাতে দাঁড়ালেন এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর তিনি আবার তাদের কাছে ফিরে এলেন। এবার তাদের কাছে ঠাণ্ডা মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) দেখতে পেলেন। তিনি তা খেলেন, এরপর মসজিদে প্রবেশ করলেন এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। কিন্তু তিনি পানি ব্যবহার করলেন না, অর্থাৎ- উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন না। (আহমাদ)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: أُهْدِيَتْ لَهُ شَاةٌ فَجَعَلَهَا فِي الْقِدْرِ فَدَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ مَا هَذَا يَا أَبَا رَافِعٍ فَقَالَ شَاةٌ أُهْدِيَتْ لَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَطَبَخْتُهَا فِي الْقِدْرِ قَالَ نَاوِلْنِي الذِّرَاعَ يَا أَبَا رَافِعٍ فَنَاوَلْتُهُ الذِّرَاعَ ثُمَّ قَالَ نَاوِلْنِي الذِّرَاعَ الْآخَرَ فَنَاوَلْتُهُ الذِّرَاعَ الْآخَرَ ثُمَّ قَالَ ناولني الذِّرَاع الآخر فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّمَا لِلشَّاةِ ذِرَاعَانِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَكَتَّ لَنَاوَلْتَنِي ذِرَاعًا فَذِرَاعًا مَا سَكَتُّ ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ فَتَمَضْمَضَ فَاهُ وَغَسَلَ أَطْرَافَ أَصَابِعِهِ ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى ثُمَّ عَادَ إِلَيْهِمْ فَوَجَدَ عِنْدَهُمْ لَحْمًا بَارِدًا فَأَكَلَ ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَصَلَّى وَلَمْ يَمَسَّ مَاءً. رَوَاهُ أَحْمد
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩২৮-[২৯] ইমাম দারিমী (রহঃ) আবূ ’উবায়দ (রাঃ)হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, কিন্তু ’’তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পানি চাইলেন হতে শেষ পর্যন্ত’’ বর্ণনা করেননি।[1]
وَرَوَاهُ الدَّارِمِيُّ عَنْ أَبِي عُبَيْدٍ إِلَّا أَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ: ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ إِلَى آخِرِهِ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্ট করে বাহু বা রানের গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) চেয়েছেন যার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। তা হলোঃ
* রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহু বা রানের গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) পছন্দ করতেন।
* তা দ্রুত সিদ্ধ হয় এবং অধিক সুস্বাদু।
আবূ রাফি‘-এর উক্তি (إِنَّمَا لِلشَّاةِ ذَرِاعَانِ) আহমাদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে (هَلْ لِلشَّاةِ إِلَّا ذِرَاعَانِ) আর তিরমিযী এবং দারিমী-এর বর্ণনায় রয়েছে (وَكَمْ لِلشَّاةِ ذِرَاعً)
তবে ইসতিফহাম-এর দ্বারা এখানে অস্বীকার করা উদ্দেশ্য নয় বরং বিষয়টিকে দূরবর্তী মনে করা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (اَمَا إِنَّكَ لَوْسَكَتَّ لَنا وَذِرَاعًا فَذَرِاَعَا مَا سَكَتٌ) আহমাদ-এর অন্য বর্ণনায় রয়েছে (لَوْ سَكَتَّ لَنَا وَلْتَمْنِىْ مِنْهَا مَا دَعَوْتَ بِه) অর্থাৎ- যদি আমার কথার প্রত্যুত্তর না করে নীরব থাকতে তাহলে আমার চাওয়া অবধি আমাকে তা দিতেই থাকতে কারণ আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন আর তিনি তাঁর নাবীর মর্যাদা ও মু‘জিযা প্রকাশার্থে তাতে একটির পর একটি বাহুর গোশত বা রান সৃষ্টি করতেন। মূলত তার প্রত্যুত্তরে করায় এর প্রতিবন্ধক হয়েছে।
(এর কারণ হিসেবে) বলা হয়েছে যে, সাহাবী বা তার প্রশ্নোত্তরের প্রতি মনোযোগী হওয়ায় প্রতিপালকের প্রতি মনোযোগের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।
(এর কারণ হিসেবে আরও) বলা হয়েছে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে রীতির বিপরীতে কোন কিছু প্রকাশ পাওয়ার শর্তই হলো তা সন্দেহমুক্ত হওয়া। আর সুনিশ্চিত ও সত্যায়িত বিষয়ে কোন ত্রুটি থাকবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩২৯-[৩০] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি, উবাই ইবনু কা’ব ও আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ)-এ তিনজন এক জায়গায় বসে মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) ও রুটি খেলাম। অতঃপর খাওয়া শেষে আমি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার জন্য পানি চাইলাম। এটা দেখে তাঁরা [উবাই ইবনু কা’ব ও আবূ ত্বালহাহ্ (রাঃ)] বললেন, তুমি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) কেন করবে? আমি বললাম, এ খাবারের কারণে? তাঁরা উভয়ে বললেন, এ পাক-পবিত্র খেয়েও কি তুমি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে? অথচ তোমার চেয়ে অনেক বেশী উত্তম যিনি ছিলেন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর আহারের পর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেননি। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: كُنْتُ أَنَا وَأَبِي وَأَبُو طَلْحَةَ جُلُوسًا فَأَكَلْنَا لَحْمًا وَخُبْزًا ثُمَّ دَعَوْتُ بِوَضُوءٍ فَقَالَا لِمَ تَتَوَضَّأُ فَقُلْتُ لِهَذَا الطَّعَامِ الَّذِي أَكَلْنَا فَقَالَا أَتَتَوَضَّأُ مِنَ الطَّيِّبَاتِ لَمْ يَتَوَضَّأْ مِنْهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْك. رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে যে বিষয়টি সাব্যস্ত হয় তা হলো, উযূর পরিপন্থী অপবিত্রতার কারণে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ হয়। যেমন আগের পিছনের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়ার যে বিষয়টি দ্বারা বোধগম্য হয়। এছাড়াও ঘুম, চৈতন্যহীনতা, পাগলামীর মতো বোধাতীত বিষয়গুলোর মাধ্যমেও উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ হয়। কারণ এগুলো (পিছনের রাস্তা দিয়ে) খাবিস বের হওয়ার সম্ভাব্য স্থান (৩৩১ নং হাদীস দ্রষ্টব্য)।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩৩০-[৩১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলতেন, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে চুমু দেয়া অথবা তার স্বীয় হাত দিয়ে স্পর্শ করা ’লামস্’-এর মধ্যে গণ্য। সুতরাং যে লোক তার স্ত্রীকে চুমু দিবে কিংবা হাত দিয়ে স্পর্শ করবে তার জন্য উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা ওয়াজিব। (মালিক ও শাফি’ঈ)[1]
وَعَن ابْن عمر كَانَ يَقُولُ: قُبْلَةُ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ وَجَسُّهَا بِيَدِهِ مِنَ الْمُلَامَسَةِ. وَمَنْ قَبَّلَ امْرَأَتَهُ أَوْ جَسَّهَا بِيَدِهِ فَعَلَيهِ الْوضُوء. رَوَاهُ مَالك وَالشَّافِعِيّ
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩৩১-[৩২] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে চুমু দিলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা অত্যাবশ্যক। (মালিক)[1]
وَعَن ابْن مَسْعُود كَانَ يَقُولُ: مِنْ قُبْلَةِ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ الْوُضُوءُ. رَوَاهُ مَالك
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩৩২-[৩৩] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। ’উমার (রাঃ) বলেছেন, চুমু দেয়া ’লামস্’ এর অন্তর্ভুক্ত। (যা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে)। সুতরাং চুমু দেয়ার পরে তোমরা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে।[1]
وَعَن ابْن عُمَرَ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: إِن الْقبْلَة من اللَّمْس فتوضؤوا مِنْهَا
ব্যাখ্যা: সর্বশেষ তিনটি (৩০, ৩১, ৩২) ‘আমর-এর সানাদ কতিপয় সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে যারা لمس (লামস্)-কে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যে আসারগুলো মারফূ‘র হুকুম রাখে না। তাদের এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অভিমতের অবকাশ রয়েছে। আর তারা আল্লাহ তা‘আলার উক্তি أَوْلَا مَسْتُمُ النِّسَآءَ থেকে গ্রহণ করে আয়াতের বুঝ অনুপাতে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। অথচ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্ত্রী চুম্বন ও স্পর্শকরণের মাধ্যমে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যেমনটি পূর্বে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে অতিবাহিত হলো। আর এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাসঙ্গিক দলীল যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আয়াতে কারীমার لمس (লামস্) দ্বারা উদ্দেশ্য স্ত্রী সঙ্গম। ইবনু ‘আব্বাস এবং ‘আলী (রাঃ)-এর মতো সাহাবী আয়াতের এ তাফসীরই করেছেন। অতএব সুস্পষ্ট সহীহ মারফূ‘ হাদীসের প্রতি ‘আমল করাই অত্যাবশ্যক এবং আয়াতে لمس (লামস্) এর সহীহ তাফসীর جماع (স্ত্রী সহবাস) হওয়ার বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা উচিত হবে না। কেননা সহীহ মারফূ‘ হাদীসের মোকাবেলায় সাহাবীর উক্তি দলীল হিসেবে গৃহীত হতে পারে না।
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩৩৩-[৩৪] ’উমার ইবনু ’আবদুল ’আযীয (রহঃ) তামীম আদ্ দারী (রাঃ)হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রবহমান রক্তের কারণেই উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে হবে।[1]
দারাকুত্বনী হাদীস দু’টো বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ’উমার ইবনু ’আবদুল ’আযীয (রহঃ) এ হাদীসটি তামীম আদ্ দারী (রাঃ)হতে শুনেননি। তিনি তাঁকে দেখেনওনি। অপর রাবী ইয়াযীদ ইবনু খালিদ ও ইয়াযীদ ইবনু মুহাম্মাদ উভয়ই অজ্ঞাত ব্যক্তি। সুতরাং এ হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ عَنْ تَمِيمِ الدَّارِيّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْوُضُوءُ مِنْ كُلِّ دَمٍ سَائِلٍ» . رَوَاهُمَا الدَّارَقُطْنِيُّ وَقَالَ: عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ وَلَا رَآهُ وَيَزِيدُ بن خَالِد وَيزِيد بن مُحَمَّد مَجْهُولَانِ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কোন কোন ইমামের মতে সামনের পিছনের রাস্তা ছাড়াও শরীরের অন্য যে কোন স্থান থেকে তরল রক্ত প্রবাহিত হলেও তাতে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু হাদীসটি এতই দুর্বল যে, তা দ্বারা দলীল পেশ করা যাবে না। যারা বলেন সামনের পিছনের রাস্তা ছাড়াও শরীরের অন্য যে কোন স্থান থেকে নাপাকী বের হলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভেঙ্গে যাবে তারা তাদের মতের স্বপক্ষে এমন কিছু হাদীস এবং সাহাবীগণের উক্তি দ্বারা দলীল পেশ করেছেন যাতে আদৌ তাদের কোন দলীল নয়। তাদের সর্বাধিক শক্তিশালী দলীল মুস্তাহাযা রোগাক্রান্ত সাহাবী ফাত্বিমাহ্ বিনতু আবী হুবায়স (রাঃ) সম্পর্কিত বুখারীসহ অন্যান্য গ্রন্থে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি যেখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন এটি (মুসতাহাযা) মূলত একটি রোগ যা হতে রক্ত প্রবাহিত হয়। তাতে আরও রয়েছেঃ তুমি রক্তস্রাবের নির্দিষ্ট সময় আগমনের আগ পর্যন্ত প্রতি সালাতের জন্য নতুনভাবে উযূ করবে।
(এ হাদীসের আলোকে তারা বলেন) সাবিলায়ন দ্বারা উদ্দেশ্য মূলত প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা। আর ইসতিহাযার রক্ত প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বের হয় না। অতএব জানা গেল সামনের বা পেছনের রাস্তা দিয়ে বের না হওয়া সত্ত্বেও ইসতিহাযার রক্ত উযূ ভঙ্গের কারণ এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি إِنَّمَا ذلِكَ عِرْقٌ (এটি কেবলমাত্র একটি রোগ) এর দ্বারা সাবিলায়ন ছাড়াও শরীরের যে কোন স্থানের রগ থেকে রক্ত বের হওয়া দ্বারা যে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভেঙ্গে যাবে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অতএব শরীরের যে কোন অঙ্গ থেকে রক্ত বের হলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বাতিল হয়ে যাবে।
* (ভাষ্যকার এর প্রত্যুত্তরে বলেন) মহিলাদের লজ্জাস্থান বা গুপ্তাঙ্গ যেখান থেকে ইসতিহাযার রক্ত প্রবাহিত হয় তা পাশর্ববর্তীতার কারণে প্রস্রাব বের হওয়ার স্থানের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। সেজন্য রক্তস্রাব বা মানী উযূ ভঙ্গের কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। অনুরূপ ইসতিহাযার রক্তও উযূ ভঙ্গের কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি إِنَّمَا ذلِكَ عِرْقٌ (এটি কেবলমাত্র একটি রোগ) দ্বারা সাহাবী ফাত্বিমাহ্ বিনতু হুবায়শ (রাঃ) মুসতাহাযার রক্ত কেবলমাত্র হায়যের রক্তের হকুমের অন্তর্গত একটি বিষয় মর্মে যে ধারণা করেছিলেন তা খণ্ডন করেছেন। অর্থাৎ- মহিলারা হায়যের যে রক্ত দেখে অভ্যস্ত মুসতাহাযার রক্ত তার অন্তর্গত নয় বরং অসুস্থতার কারণে একটি বিশেষ শিরা থেকে নির্গত এক প্রকার রক্ত।
তারা তাদের মতের স্বপক্ষে আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে তিরমিযীতে বর্ণিত হাদীস দ্বারাও দলীল প্রদান করে যেখানে বলা হয়েছে قَاءً فَتَوَضَّأَ (অর্থাৎ- তিনি বমন করে উযূ করলেন)। তারা বলেন, অথচ বমনের কারণে উযূ ভঙ্গ হবে। যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে উযূ করেছেন।
* (ভাষ্যকার এর প্রতিউত্তরে বলেন) এ বর্ণনায় তাদের পক্ষে কোন দলীল নেই। কারণ এখানে فتوضأ টি কারণ হবে বর্ণনামূলক হওয়ার চেয়ে তা‘ক্বীর (অর্থাৎ- একটির পরে অন্য একটি করা) হওয়ার অধিক সম্ভাবনাময়। যদিও বা মেনে নেয়া হয় যে, فا টি এখানে কারণ (অর্থাৎ- বমনের কারণেই তিনি উযূ করেছেন) তারপরেও এটি দ্বারা বমনের কারণে উযূ ভঙ্গ প্রমাণিত হয় না। কারণ মানুষ কখনো বমনের পর নাক, মুখসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের অবশিষ্ট ময়লা দূর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশেও উযূ করে থাকে। অতএব বমন উযূর শার‘ঈ কোন কারণ নয়, বরং এটি একটি স্বভাবগত কারণ যাতে মানুষ উযূ করে থাকে। শার‘ঈ কারণ হওয়ার জন্য এর প্রবর্তকের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকা আবশ্যক। মূলকথা হলো শুধুমাত্র কোন কর্মের দ্বারা উযূ আবশ্যক হওয়া বা উযূ নষ্ট হওয়া সাব্যস্ত হয় না। কারণ কোন কর্ম কেবলমাত্র তখনই আবশ্যক প্রমাণিত হবে যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করবেন এবং লোকেদের তা করার নির্দেশ প্রদান করবেন। অথবা সেই কর্মের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করবেন যে, তা উযূ ভঙ্গের কারণ।
* তাদের মতে স্বপক্ষে সর্বাধিক সুস্পষ্ট প্রমাণ হলো ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে ইবনু মাজায় বর্ণিত মারফূ‘ হাদীস যেখানে বলা হয়েছে
من قاء أو رعف فى صلاته فلينصرف وليتوضأ
(অর্থাৎ- যার সালাতরত অবস্থায় বমন অথবা নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হবে সে যেন সালাত ছেড়ে দিয়ে উযূ করে)। (অতএব, বমন বা নাক দিয়ে রক্ষক্ষরণ উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের কারণ)
(ভাষ্যকার তাদের প্রতিউত্তরে বলেন) হাদীসটি একেবারে দুর্বল যাকে আহমাদ বিন হাম্বাল ছাড়াও অন্যরা য‘ঈফ বলেছেন।
এছাড়াও তারা আরো কতগুলো হাদীস দ্বারা দলীল প্রদান করেছেন যার সবগুলো গ্রহণের আযোগ্য বা দুর্বল হওয়ার সাথে সাথে সেই সহীহ হাদীসের বিপরীত যা ইমাম বুখারী জাবির (রাঃ) হতে মুয়াল্লাক সূত্রে বর্ণনা করেছেন,
اَنَّ النَّبِىَّ ﷺ كَانَ فِىْ غَزْوَةَ ذَاتِ الرِّقَاءِ، فَرَمى رَجُلٌ بِسَهْمٍ فَتَرَفَهُ الدَّمَ فَرَكَعَ وَسَجَدَ وَقَضى-فِيْ صَلَاتِه.
(অর্থাৎ- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাতুর রিক্বায় যুদ্ধে ছিলেন, সে সময় এক ব্যক্তি তীর দ্বারা আক্রান্ত হলে তার রক্ত ঝরলো, তারপরেও তিনি রুকূ‘ সিজদাসহ সালাত চালিয়ে গেলেন)। আর বায়হাক্বীর বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে যে ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি সেই সাহাবীকে ডাকলেন। রাবী বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পুনরায় আদায়ের আদেশ দেননি।’’
এছাড়া সাবিলায়ন ছাড়া শরীরের অন্য যে কোন অঙ্গ দিয়ে রক্ত বা অন্য কোন কিছু প্রবাহিত হওয়াতে উযূ ভঙ্গ না হওয়ার ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস এবং সাহাবীগণের উক্তি রয়েছে যা মূলকেই সমর্থন করে যেগুলো ইমাম যায়লা‘ঈ, দারাকুত্বনী এবং শাওকানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। অতএব, সামনের বা পিছনের রাস্তা ছাড়া শরীরের অন্য কোন অঙ্গ দিয়ে রক্ত, পূঁজ বা বমনের মতো কোন কিছু বের হলেও তাতে উযূ ভাঙ্গবে না বা নষ্ট হবে না।