মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) - 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

إِيْمَانِ (ঈমান)-এর শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস স্থাপন করা, সত্যায়ন করা ইত্যাদি। এর শার’ঈ অর্থ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। হানাফীদের মতেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের অত্যাবশ্যকীয় বিস্তারিত এবং সংক্ষিপ্ত যে বিধানাবলী নিয়ে এসেছেন সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন দলীল না থাকলেও চূড়ান্তভাবে তাকে সত্যায়ন করা। ঈমানটি তাদের নিকট যৌগিক কোন বিষয় নয় বরং এটি(بَسِيْطٌ) বাসীত্ব (একক) যা পরিমাণের দৃষ্টিকোণ থেকে কম-বেশি গ্রহণ করে না। (অর্থাৎ- ঈমান কোন সৎকাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় না এবং পাপ কাজের মাধ্যমে হ্রাস পায় না)। মুরজিয়াহ্ সম্প্রদায়ের মতেঃ ঈমান হলো শুধুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করা। জিহ্বার স্বীকৃতি ঈমানের কোন রুকনও না, শর্তও না। ফলে হানাফীদের মতো তারাও ’আমলকে ঈমানের প্রকৃত অর্থের বহির্ভূত গণ্য করেছে এবং ঈমানের আংশিকতাকে অস্বীকার করেছে। তবে হানাফীরা এর (’আমলের) প্রতি গুরুত্বারোপ, এর প্রতি উদ্বুদ্ধ এবং ঈমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটিকে একটি কারণ হিসেবে গণ্য করলেও মুরজিয়ারা এটিকে সমূলে ধ্বংস করে বলেছে ’আমলের কোন প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করলেই পরিত্রাণ মিলবে তাতে যে যত অপরাধই করুক না কেন। কাররামিয়্যাহ্ সম্প্রদায়ের মতেঃ ঈমান হলো শুধুমাত্র উচ্চারণ করা। ফলে তাদের নিকট নাজাতের জন্য মৌখিক স্বীকৃতিই যথেষ্ট, চাই সত্যায়ন পাওয়া যাক বা না যাক।

ইমাম মালিক, শাফি’ঈ, আহমাদসহ জমহূর ’উলামাগণের মতেঃ ঈমান হলো অন্তরে বিশ্বাস করা, জিহবায় উচ্চারণ করা এবং রুকনসমূহের প্রতি ’আমল করা। তাদের নিকট ঈমান একটি যৌগিক বিষয় যা কমে এবং বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। এটিই হলো সর্বাধিক সঠিক অভিমত। মু’তাযিলাহ্ এবং খারিজীগণের নিকট ঈমানের সংজ্ঞা জমহূরের মতই তবে উভয়ের মাঝে পার্থক্য হলো ঈমানের সকল অংশকে জমহূর সমান হিসেবে গণ্য করেননি। ফলে তাদের নিকট ’আমলসমূহ যেমন সালাতের ওয়াজিব বিষয়গুলো তার রুকনের মতো নয়।

অতএব ’আমল না থাকলে কোন ব্যক্তি ঈমানের গণ্ডী থেকে বের না হয়ে তার মধ্যেই থাকবে এবং ’আমল পরিত্যাগকারী অনুরূপ কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে জড়িত ব্যক্তি ফাসিক্ব-মু’মিন থাকবে সে কাফির হয়ে যাবে না। পক্ষান্তরে কারো মাঝে যদি শুধু তাসদীক না পাওয়া যায় তাহলে সে মুনাফিক্ব আর ইক্বরার বা স্বীকৃতি না পাওয়া গেলে কাফির। কিন্তু যদি শুধুমাত্র ’আমলগত ত্রুটি থাকে তাহলে সে ফাসিক্ব যে জাহান্নামে চিরদিন অবস্থান করা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর খারিজী এবং মু’তাজিলীরা যৌগিক ঈমানের সকল অংশকে সমান হিসেবে গণ্য করে এভাবে যে, ঈমানের কিছু অংশ বাদ পড়লে সমস্তটাই বাদ বলে পরিগণিত হবে। আর ’আমলটি তাদের নিকট ঈমানের একটি রুকন যেমনটি সালাতের বিভিন্ন রুকন রয়েছে। তাই ’আমল পরিত্যাগকারী তাদের নিকট ঈমান বহির্ভূত লোক। খারিজীদের মতে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি অনুরূপ ’আমল পরিত্যাগকারী ব্যক্তি কাফির যে জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করবে। আর মু’তাজিলাদের মতে সে মু’মিনও নয় কাফিরও নয় বরং তাকে ফাসিক্ব বলা হবে যে চিরস্থায়ী জাহান্নামী।


২-[১] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি আমাদের নিকট আত্মপ্রকাশ করলেন। ধবধবে সাদা তাঁর পোশাক। চুল তাঁর কুচকুচে কালো। না ছিল তাঁর মধ্যে সফর করে আসার কোন চিহ্ন, আর না আমাদের কেউ তাকে চিনতে পেরেছেন। তিনি এসেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসে পড়লেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাঁটুর সাথে তাঁর হাঁটু মিলিয়ে দিলেন। তাঁর দু’হাত তাঁর দুই উরুর উপর রেখে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু বলুন, অর্থাৎ- ইসলাম কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’ইসলাম হচ্ছে- তুমি সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত আর কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে এবং বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ/হজ্জ) করবে যদি সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে।’’ আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।’’ আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম একদিকে তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (অজ্ঞের ন্যায়) প্রশ্ন করলেন, আবার অপরদিকে রসূলের বক্তব্যকে (বিজ্ঞের ন্যায়) সঠিক বলে সমর্থনও করলেন।

এরপর তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ’’আমাকে ঈমান সম্পর্কে কিছু বলুন।’’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর দিলেন, ঈমান হচ্ছেঃ আল্লাহ তা’আলা, তাঁর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ), তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রসূলগণ এবং পরকালকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। এছাড়া তাক্বদীরের উপর, অর্থাৎ- জীবন ও জগতে কল্যাণ-অকল্যাণ যা কিছু ঘটছে, সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হচ্ছে- এ কথার উপর বিশ্বাস করা। উত্তর শুনে আগন্তুক বললেন, ’’আপনি ঠিকই বলেছেন’’।

অতঃপর তিনি আবার বললেন, ’’আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন।’’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ইহসান হচ্ছে, ’’তুমি এমনভাবে আল্লাহর ’ইবাদাত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছো। আর তুমি যদি তাকে না-ও দেখো, তিনি তোমাকে অবশ্যই দেখছেন’’।

আগন্তুক এবার বললেন, ’’আমাকে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সম্পর্কে বলুন।’’ উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তিনি প্রশ্নকারীর চাইতে অধিক কিছু জানেন না।’’ আগন্তুক বললেন, ’’তবে কিয়ামতের (কিয়ামতের) নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে বলুন।’’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’কিয়ামতের (কিয়ামতের) নিদর্শন হলো, দাসী তাঁর আপন মুনীবকে প্রসব করবে, তুমি আরো দেখতে পাবে- নগ্নপায়ী বিবস্ত্র হতদরিদ্র মেষ চালকেরা বড় বড় দালান-কোঠা নিয়ে গর্ব ও অহংকার করবে।’’ ’উমার (রাঃ) বললেন, অতঃপর আগন্তুক চলে গেলে আমি কিছুক্ষণ সেখানেই অবস্থান করলাম। পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, হে ’উমার! প্রশ্নকারী আগন্তুককে চিনতে পেরেছো?’’ আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, ’’ইনি হচ্ছেন জিবরীল (আঃ)। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের দীন শিক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন’’। (মুসলিম)[1]

الفصل الاول

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعْرِ لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم فأسند رُكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخْذَيْهِ وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِسْلَامِ قَالَ: الْإِسْلَامُ: أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلًا . قَالَ: صَدَقْتَ. فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقُهُ. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيمَانِ. قَالَ: «أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ» . قَالَ صَدَقْتَ. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِحْسَانِ. قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ» . قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ. قَالَ: «مَا المسؤول عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ» . قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَاتِهَا. قَالَ: «أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ» . قَالَ: ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا ثُمَّ قَالَ لِي: «يَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ» ؟ قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «فَإِنَّهُ جِبْرِيل أَتَاكُم يعلمكم دينكُمْ» . رَوَاهُ مُسلم

عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال بينا نحن عند رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم اذ طلع علينا رجل شديد بياض الثياب شديد سواد الشعر لا يرى عليه اثر السفر ولا يعرفه منا احد حتى جلس الى النبي صلى الله عليه وسلم فاسند ركبتيه الى ركبتيه ووضع كفيه على فخذيه وقال يا محمد اخبرني عن الاسلام قال الاسلام ان تشهد ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله وتقيم الصلاة وتوتي الزكاة وتصوم رمضان وتحج البيت ان استطعت اليه سبيلا قال صدقت فعجبنا له يساله ويصدقه قال فاخبرني عن الايمان قال ان تومن بالله وملاىكته وكتبه ورسله واليوم الاخر وتومن بالقدر خيره وشره قال صدقت قال فاخبرني عن الاحسان قال ان تعبد الله كانك تراه فان لم تكن تراه فانه يراك قال فاخبرني عن الساعة قال ما المسوول عنها باعلم من الساىل قال فاخبرني عن اماراتها قال ان تلد الامة ربتها وان ترى الحفاة العراة العالة رعاء الشاء يتطاولون في البنيان قال ثم انطلق فلبثت مليا ثم قال لي يا عمر اتدري من الساىل قلت الله ورسوله اعلم قال فانه جبريل اتاكم يعلمكم دينكم رواه مسلم

Chapter - Section 1


‘Umar b. al-Khattab said:
One day when we were with God's messenger, a man with very white clothing and very black hair came up to us. No mark of travel was visible on him, and none of us recognised him. Sitting down beside the Prophet, leaning his knees against his, and placing his hands on his thighs, he said, “Tell me, Muhammad, about Islam." He replied, “Islam means that you should testify that there is no god but God and that Muhammad is God’s messenger, that you should observe the prayer, pay the zakat, fast during Ramadan, and make the pilgrimage to the House if you have the means to go." He said, “You have spoken the truth." We were surprised at his questioning him and then declaring that he spoke the truth. He said, “Now tell me about faith.” He replied, “It means that you should believe in God, His angels, His books, His apostles, and the last day, and that you should believe in the decreeing both of good and evil." Remarking that he had spoken the truth, he then said, “Now tell me about doing good." He replied, “It means that you should worship God as though you saw Him, for He sees you though you do not see Him." He said, “Now tell me about the Hour." He replied, “The one who is asked about it is no better informed than the one who is asking." He said, “Then tell me about its signs." He replied, “That a maid-servant should beget her mistress, and that you should see barefooted, naked, poor men and shepherds exalting themselves in buildings." [‘Umar] said: He then went away, and after I had waited for a long time [the Prophet] said to me, “Do you know who the questioner was, ‘Umar?" I replied, “God and His messenger know best." He said, “He was Gabriel who came to you to teach you your religion."

Muslim transmitted it.

ব্যাখ্যা : আগন্তুক লোকটির আগমন ঘটেছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনের শেষের দিকে। হাদীসটি ইমাম মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ। এ হাদীস বর্ণনার কারণ মুসলিমে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমার নিকট জিজ্ঞেস কর। কিন্তু তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করতে ভীত হলো। অতঃপর এক ব্যক্তি এসে তাঁর দুই হাঁটুর নিকট বসে পড়ল। ‘‘একজন লোক আমাদের নিকট উদয় হল’’ অর্থাৎ- একজন লোক আমাদের নিকট প্রকাশ পেলেন যিনি ছিলেন ভাবগাম্ভির্যে পরিপূর্ণ এবং মর্যাদার উচ্চাসনে। যেমন আমাদের নিকট সূর্যের উদয় ঘটে। এতে এটা সাব্যস্ত হয় যে, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) যে কোন মানুষের রূপ ধারণ করতে সক্ষম, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন ‘‘অতঃপর সে মারইয়াম (আঃ)-এর নিকট একজন সুঠাম দেহের মানবের আকৃতিতে প্রকাশ পেল।’’

আর জিবরীল (আঃ)  দিহ্ইয়া ক্বলবী ও অন্য কোন মানুষের রূপ ধরতেন। লোকটি এসে অনুমতি চাইলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে ঝুঁকে পড়লেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাঁটুর নিকট স্বীয় হাঁটু পেতে বসলেন। কেননা হাঁটু পেতে বসা নম্রতা ও শিষ্টাচারের বহিঃপ্রকাশ এবং হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে বসা পূর্ণ মনোযোগ সৃষ্টির উৎকৃষ্ট উপায় এবং এবং সহানুভূতি লাভের পূর্ণাঙ্গ পন্থা। এ আচরণ দ্বারা জিবরীল (আঃ)  স্বীয় পরিচয় গোপনের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করেন। যাতে এ ধারণা মজবুত হয় যে, তিনি অশিক্ষিত বেদুঈন। এজন্য তিনি মানুষের ঘাড় টপকিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটবর্তী হন। এজন্যই সাহাবীগণ তার আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেন। ক্বদ্‌র (কদর) বলতে তাই বুঝায়, আল্লাহ যা নির্ধারণ করছেন ও ফায়সালা করেছেন। এর উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলা কোন জিনিস সৃষ্টির পূর্বেই তার পরিমাণ ও যামানা সম্পর্কে অবহিত আছেন। অতঃপর তিনি স্বীয় অবগতি অনুযায়ী তা সৃষ্টি করেছেন। অতএব সকল নতুন বস্তু তার জ্ঞান, পরিমাণ ও তার ইচ্ছানুযায়ী সংগঠিত হয় যা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত।

‘‘আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন’’ এর অর্থ আমাকে ‘ইবাদাতের ইহসান সম্পর্কে সংবাদ দিন। আর তা হলো সুন্দরভাবে, নিষ্ঠার সাথে, ভীতিপূর্ণ মনোযোগ সহকারে সম্পাদন করা এবং তা মা‘বূদের তত্ত্বাবধানে আছে এমন অনুভূতি জাগরুক রাখা।

হাফিয ইবনু হাজার বলেন, এর জবাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি অবস্থার ইঙ্গিত করেছেন। তন্মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের অবস্থা এই যে, তার নিকট মহান প্রভুর উপস্থিতি প্রাধান্য পাওয়া যেন ‘ইবাদাতকারী স্বচক্ষে তাকে অবলোকন করছে। আর দ্বিতীয় অবস্থা এই যে, ‘ইবাদাতকারী অনুভব করবে যে, মহান সত্তা তার বিষয়ে অবহিত আছেন। তাকে দেখছেন, তার সকল কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। এ দু’টি অবস্থার ফলাফল মহান আল্লাহর পরিচিতি ও তাঁর ভয় অন্তরে প্রতিষ্ঠিত করে।

ইমাম নাবাবী বলেনঃ এর অর্থ এই যে, মহান সত্তা তোমাকে সর্বদাই দেখছেন, অতএব সুন্দরভাবে তার ‘ইবাদাত সম্পন্ন কর যদিও তুমি তাকে দেখতে না পাও। তাহলে হাদীসের অর্থ এই যে, যদিও তুমি তাকে দেখতে না পাও তবুও তুমি সুন্দরভাবে তার ‘ইবাদাত অব্যাহত রাখো, কেননা তিনি তোমাকে দেখছেন।

‘আয়নী বলেন, ইহসান হলো আল্লাহ তা‘আলার জন্য তোমার ‘ইবাদাত এমন অবস্থায় সম্পন্ন হবে যে রকম সম্পন্ন হত তাকে দেখার অবস্থায়।

মোট কথা এই যে, ইহসান হলো ‘ইবাদাতের অবস্থায় বিনয় ও নম্র থাকা যেমনটি তাকে দেখার অবস্থায় হতো। এতে কোন সন্দেহ নেই যে ‘ইবাদাতের অবস্থায় যদি ‘ইবাদাতকারী আল্লাহকে দেখতে পেতো তাহলে তার সাধ্যানুযায়ী বিনয় ও নম্রতার কিছুই পরিত্যাগ করতো না। আর এ অবস্থার সৃষ্টি এজন্যই হতো যে, তিনি তার সকল অবস্থা তত্ত্বাবধান করছেন ও সবকিছু দেখছেন। আর এ অবস্থা তখনো বিদ্যমান যখন বান্দা তাকে দেখতে না পায়। এজন্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি তাঁকে না দেখতে পেলেও তিনি তোমাকে দেখছেন। আর এটাই তোমার বিনয়ী নম্র হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

‘দাসী তার মুনীবকে প্রসব করবে’ এর অর্থ হলো কন্যা তার মায়ের সাথে এমন অসদাচরণ করবে যেমন মুনীব তার দাসীর সাথে করে থাকে। যেহেতু অবাধ্যতা মহিলাদের মধ্যে অতিমাত্রায় দেখা দিবে, তাই কন্যা ও দাসীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘‘বকরীর রাখালেরা অট্টালিকায় অহংকার করবে’’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিম্নশ্রেণীর লোকেরা নেতায় পরিণত হবে, তাদের মাল বৃদ্ধি পাবে। ফলে তারা বড় বড় দালান নির্মাণ ও তার সৌন্দর্যের অহংকারে লিপ্ত হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতেও সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনে হাদীসটি বর্ণিত রয়েছে। তা হচ্ছে- যখন নগ্নপায়ী বিবস্ত্র এবং মূক ও বধিরগণকে, অর্থাৎ- অযোগ্য লোকেদেরকে দেশের রাজা বা শাসক হতে দেখবে। সে পাঁচটি বিষয় কিয়ামতের (কিয়ামতের) আলামাতের অন্তর্গত, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তারপর তিনি প্রমাণ হিসেবে কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ اِنَّ اللهَ عِنْدَه’ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَঅর্থাৎ- ’’আল্লাহ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সম্পর্কে ভালো জানেন কবে তা সংঘটিত হবে? কিভাবে হবে? বৃষ্টি তিনিই বর্ষিয়ে থাকেন’’- (সূরাহ্ লুক্বমান ৩১: ৩৪)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَرَوَاهُ أَبُو هُرَيْرَة مَعَ اخْتِلَافٍ وَفِيهِ: وَإِذَا رَأَيْتَ الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الصُّمَّ الْبُكْمَ مُلُوكَ الْأَرْضِ فِي خَمْسٍ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا اللَّهُ. ثُمَّ قَرَأَ: (إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ)

ورواه ابو هريرة مع اختلاف وفيه واذا رايت الحفاة العراة الصم البكم ملوك الارض في خمس لا يعلمهن الا الله ثم قرا ان الله عنده علم الساعة وينزل الغيث

Chapter - Section 1


Abu Huraira transmitted it with a difference containing the following:

When you see the barefooted, the naked, the deaf, the dumb as kings of the earth, as -well as five things which no one but God knows. Then he recited, ‘‘God has knowledge of the Hour, and He sends down the rain…”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা : বর্ণিত দুই হাদীসে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) আলামত সম্পর্কে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার সারাংশ হলো নেতৃত্ব চলে যাবে অযোগ্য লোকেদের হাতে। যখন পাদুকাহীন উলঙ্গ বকরীর রাখালেরা নেতা হবে যারা প্রকৃতপক্ষে মূর্খ ও অসভ্য এবং তারাই সম্পদের অধিকারী হবে, বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করতে থাকবে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তারা দীন ও দুনিয়ার সকল নিয়ম-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে ফেলবে। তারা লোকদের প্রাপ্য আদায় করবে না বরং যে সম্পদের উপর তাদের দখল থাকবে তা নিজেরাই কুক্ষিগত করে ফেলবে। সেই সাথে তারা মূর্খ ও অসভ্য হওয়ায় মানুষের ধর্মকেও বিনষ্ট করবে। কেননা তাদের কোন যোগ্যতাই থাকবে না মানুষের ধর্ম ও ধর্মীয় জ্ঞানকে সংশোধন করার। বরং তাদের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান থাকবে সম্পদ সংগ্রহ ও তা বৃদ্ধি করার। কোন বিষয়ে তারা কোন পরোওয়াই করবে না।

হাদীসে ও আয়াতে যে ‘ইলম বা জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য পূর্ণজ্ঞান। ‘তাঁর নিকটই অদৃশ্য জ্ঞানের চাবীকাঠি’- এ কথা দ্বারা এ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। জ্যোতিষ বা ওলীদের নিকট যে জ্ঞান বা ‘ইলম আছে তা’ খন্ড ‘ইলম মাত্র। পূর্ণ ‘ইলমের অধিকারী একমাত্র মহান আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন। নাবীগণ যা কিছু আমাদের জানিয়েছেন তা’ এই ‘ইলমের অন্তর্গত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪-[৩] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম করা, যাকাত আদায় করা, হাজ্জ (হজ/হজ্জ) পালন করা এবং রমাযান মাসের সিয়াম পালন করা। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ

وعن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بني الاسلام على خمس شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده ورسوله واقام الصلاة وايتاء الزكاة والحج وصوم رمضان

Chapter - Section 1


Ibn ‘Umar reported God's messenger as saying, “Islam is based on five things:

the testimony that there is no god but God and that Muhammad is His servant and messenger, the observance of the prayer, the payment of zakat, the Pilgrimage, and the fast during Ramadan.”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা : এ হাদীসে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভকে এমন দালানের বা তাঁবুর সাথে তুলনা করা হয়েছে যা পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামের স্তম্ভগুলোর কেন্দ্রবিন্দু হলো শাহাদাহ্ তথা আল্লাহর একত্ববাদ ও তার রসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়া। যেমনটি তাঁবুর পাঁচটি খুঁটির মধ্যে তার মধ্যস্থলের খুঁটিটি অন্যান্য খুঁটির কেন্দ্রবিন্দু। ঈমানের অন্যান্য শাখা প্রশাখা তাঁবুর পেরেকের ন্যায় যা তাকে পূর্ণতা দান করে। যদি তাঁবুর পেরেকগুলোর কোন একটি নাও থাকে তাহলে তাঁবুর মধ্যে অসম্পূর্ণতা থাকবে যদিও তা দন্ডায়মান  থাকবে। তবে পাঁচটি খুঁটির একটিও না থাকে তবে তাঁবু আর দন্ডায়মান  থাকবে না। অনুরূপভাবে ইসলামের সবগুলো স্তম্ভ হারিয়ে গেলে ইসলাম থাকবে না। তেমনি আল্লাহর একত্ববাদ ও রসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য বাদ দিলে ইসলাম বিদূরীত হয়ে যাবে।

তবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কিছুসংখ্যক পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বিদ্বানের মতে সালাত পরিত্যাগ করা কুফরী। তারা একাধিক হাদীস দ্বারা এর প্রমাণ পেশ করেছেন যা সালাত পরিত্যাগকারীকে কাফির বলে প্রমাণ করে। মুহাম্মাদ বিন নাসর বলেনঃ অধিকাংশ হাদীস বিশারদের অভিমতও তাই। আর তাদের একদলের মতে, যে ব্যক্তি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের কোন একটি ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে সে কাফির হয়ে যাবে।

ইমাম নাবাবী বলেনঃ শাহাদাতায়নের মাধ্যমেই বাহ্যিকভাবে কোন লোক ইসলামের গণ্ডীরমধ্যে আছে বলে সাব্যস্ত হয়। এই শাহাদাতায়নের সাথে সালাত ও অন্যান্য স্তম্ভকে তার দিকে নিসবাত করা হয়েছে এজন্য যে, তা ইসলামের সর্বাপেক্ষা বাহ্যিক আলামত। তা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তার ইসলাম পূর্ণতা লাভ করে। কোন ব্যক্তি তা পরিত্যাগ করলে সে ইসলামের বন্ধন খুলে ফেলেছে বলে অনুভূত হয়। যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ভিত্তি ও তার উপর প্রতিষ্ঠিত বস্তু এক নয়। তাহলে এর জবাব হলো সবগুলো স্তম্ভের সমন্বয়েই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত। এর কোন একটি বাদে সবগুলো পাওয়া সম্ভব নয়। অথবা বলা যায় যে, ইসলাম অর্থ সাধারণভাবে আত্মসমপর্ণের নাম, বিশেষ কোন আত্মসমর্পণের নাম নয়। যাতে এটা আবশ্যক হয় যে, ভিত্তি ও তার উপর প্রতিষ্ঠিত বস্তু একই। অর্থাৎ- সাধারণ আত্মসমর্পণ সঠিক হওয়া নির্ভর করে ঐ সমস্ত কাজ সম্পাদনের উপর যা করণীয় আবশ্যক।

হাদীসে শুধুমাত্র পাঁচটি জিনিসের উল্লেখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে এজন্য যে, ‘ইবাদাত হয়তো শুধুমাত্র কথার দ্বারা পালন হয় যেমন শাহাদাতায়ন। অথবা পরিত্যাগ করার মাধ্যমে পালন হয় যেমন সওম অথবা কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে পালন হয়। তা হয়ত শারীরিক কর্ম যেমন- সালাত, অথবা আর্থিক কর্ম যেমন যাকাত অথবা শারীরিক ও আর্থিক উভয়টিই যেমন হাজ্জ (হজ/হজ্জ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো ’’আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই’’- এ ঘোষণা দেয়া। সাধারণ শাখা হলো, কষ্টদায়ক কোন বস্ত্তকে পথ থেকে অপসারিত করা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি শাখা। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْإِيمَانُ بضع وَسَبْعُونَ شُعْبَة فأفضلها: قَول لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَدْنَاهَا: إِمَاطَةُ الْأَذَى عَن الطَّرِيق وَالْحَيَاءُ شُعْبَة مِنَ الإِيمَانِ

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الايمان بضع وسبعون شعبة فافضلها قول لا اله الا الله وادناها اماطة الاذى عن الطريق والحياء شعبة من الايمان

Chapter - Section 1


Abu Huraira reported God’s messenger as saying, “Faith has over seventy branches, the most excellent of which is the declaration that there is no god but God, and the humblest of which is the removal of what is injurious from the road. And modesty is a branch of faith.”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা : কোন বস্তুর অংশকে ‘আরাবীতে بِضْعٌ বলা হয়। তিন হতে নয় পর্যন্ত সংখ্যাকে بِضْعٌ বলা হয়। কেননা এ সংখ্যাগুলো মূল সংখ্যার অংশ বিশেষ। যদিও এর দ্বারা অনির্দিষ্ট সংখ্যাকে বুঝানো হয় তবুও তা তিন থেকে নয় সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। شُعْبَةٌ শব্দটি شُعَبٌ এর একবচন যার অর্থ গাছের শাখা। হাদীসের উদ্দেশ্য হলো ঈমানের মধ্যে অনেক স্বভাব বা কার্যাবলী বিদ্যমান। এটি সর্বজনবিদিত যে, শাখা, পাতা ও ফল গাছের অংশ। গাছ বিদ্যমান থাকলে তার শাখা, পাতা ও ফল থাকতেও পারে, নাও পারে। অনুরূপ মূল ঈমান বিদ্যমান থাকলেও ‘আমল থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। অতএব ঈমানের সাথে ‘আমলের সম্পর্ক হলো গাছের সাথে শাখা, পাতা ও ফলের সম্পর্কের ন্যায়।

الْأَذى ঐ বস্তুকে বলা হয় পথের মধ্যে পড়ে থাকা যে বস্তু কষ্ট দেয়। যেমন কাঁটা, পাথর ও অপবিত্র বস্তু। হাদীসের মধ্যে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, ঈমানের স্তরের মধ্যে মর্যাদার ভিন্নতা রয়েছে।

শাব্দিক অর্থে হায়া বা লজ্জা মানুষের এমন পরিবর্তন বা নীচতাকে বুঝায় যা ভয়ের কারণে উদ্রেক হয়। যার দরুন তাকে তিরস্কার করা হয়। কোন কারণে কোন কিছু ছেড়ে দেয়াকেও হায়া বা লজ্জা বলা হয়ে থাকে। মূলত এ ছেড়ে দেয়াটা লাজুকতার আবশ্যকীয় বিষয়।

শারী‘আতের পরিভাষায় এমন স্বভাবকে হায়া বা লজ্জা বলা হয় যা মানুষকে কোন খারাপ কাজ হতে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে এবং প্রাপকের প্রাপ্য দানে কোন প্রকার অলসতা থেকে বিরত রাখে। এজন্যেই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ‘‘লজ্জার পুরাটাই কল্যাণকর’’।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৬-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূর্ণাঙ্গ মুসলিম সে ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ হতে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির হলো সে ব্যক্তি, যে সকল কাজ পরিত্যাগ করেছে যেসব কাজ করতে আল্লাহ বারণ করেছেন। হাদীসের শব্দগুলো সহীহুল বুখারীর। আর মুসলিম এ শব্দে বর্ণনা করেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলো, মুসলিমদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যার জিহ্বা ও হাত (’র অনিষ্ট) হতে অন্য মুসলিমগণ নিরাপদে থাকে।[1]

الفصل الاول

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ» هَذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ وَلِمُسْلِمٍ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الْمُسْلِمِينَ خَيْرٌ؟ قَالَ: مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ من لِسَانه وَيَده

وعن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده والمهاجر من هجر ما نهى الله عنه هذا لفظ البخاري ولمسلم قال ان رجلا سال النبي صلى الله عليه وسلم اي المسلمين خير قال من سلم المسلمون من لسانه ويده

Chapter - Section 1


‘Abdallah b. ‘Amr reported God's messenger as saying, “The Muslim is he from whose tongue and hand the Muslims are safe, and the Emigrant is he who abandons what God has prohibited.” This is Bukhari’s wording. Muslim has:

A man asked the Prophet, “Which of the Muslims is best?” He replied, “He from whose tongue and hand the Muslims are safe.”.

ব্যাখ্যা: ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহর হক ও মুসলিমদের হক আদায় করার স্বভাব একত্র করতে পেরেছে সেই উত্তম মুসলিম। এটাও উদ্দেশ্য হতে পারে যে, এর দ্বারা মুসলিমের এমন নিদর্শন বুঝা যায় যা ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর সেই নিদর্শন হলো মুসলিমের হাত ও জিহবার অনিষ্ট হতে নিরাপদ থাকা। যেমনটি মুনাফিক্বের নিদর্শন উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসের মধ্যে ‘মুসলিমকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা’ কথাটি আধিক্য বুঝানোর জন্য বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিমও এর আওতাভুক্ত। কেননা কোন মুসলিম ভাইকে কষ্ট দেয়া হতে বিরত থেকে তাকে সংরক্ষণ করার বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অমুসলিমও যে এ নির্দেশের আওতাভুক্ত তার সত্যতা পাওয়া যায় ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনা থেকে। তাতে আছে ‘‘যার থেকে লোকেরা নিরাপদে থাকলো’’।

হাদীসে বিশেষভাবে হাত ও জিহবার উল্লেখ এজন্য করা হয়েছে যে, অধিকাংশ কষ্ট এ দু’টো অঙ্গ দ্বারাই হয়ে থাকে। অথবা এর দ্বারা উদাহরণ দেয়া উদ্দেশ্য। এজন্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান ইবনু সাবিতকে বলতেনঃ মুশরিকদের দোষ বর্ণনা কর। কেননা তা তাদের উপর তীর নিক্ষেপ করার চাইতেও কষ্টদায়ক। আর তা এ জন্য যে এর দ্বারা জীবিত ও মৃত সবাইকে লক্ষবস্তুতে পরিণত করা যায়।

হাদীসের দ্বারা উদ্দেশ পরিপূর্ণ মুসলিম অথবা উত্তম মুসলিম। যার কষ্ট থেকে মানুষ নিরাপদে থাকে সে উত্তম মুসলিম এবং পরিপূর্ণ মুসলিম। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, ইসলামে কিছু কিছু কাজ অন্যান্য কাজ হতে উত্তম। এটাও সাব্যস্ত হয় যে, ঈমান হ্রাস ও বৃদ্ধি পায়। এ হাদীস মুরজিয়াহ্ সম্প্রদায়ের ‘আক্বীদার খণ্ডন হয়। কেননা তাদের মতে ঈমান ও ইসলামের মধ্যে হ্রাস বৃদ্ধি নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৭-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ (প্রকৃত) মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ হতে প্রিয়তম হই। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»

وعن انس رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يومن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين

Chapter - Section 1


Anas reported God’s messenger as saying, “None of you believes till I am dearer to him than his father, his child, and all mankind.”

(Bukhari and Muslim).

ব্যাখ্যা: হাদীসে স্বীয় সত্তার কথা উল্লেখ করা হয়নি এজন্য যে, তা وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ এর মধ্যে নিহিত রয়েছে। অথবা পিতা ও সন্তান উল্লেখ করার পর স্বীয় সত্তার উল্লেখ করা প্রয়োজন হয়নি এজন্য যে, পিতা ও সন্তান নিজ সত্তার চেয়েও ব্যক্তির নিকট মর্যাদাবান। ইমাম খাত্ত্বাবী বলেনঃ হাদীসে মুহাব্বাত বা ভালোবাসা দ্বারা অভ্যাসগত ভালোবাসা বুঝানো হয়নি। বরং তা দ্বারা ইখতিয়ারী (ইচ্ছাকৃত) ভালোবাসা বুঝানো হয়েছে। কেননা মানুষের পরিবার ও সম্পদের প্রতি ভালোবাসা প্রকৃতিগত ভালোবাসা যা থেকে পরিত্রাণ মানুষের সাধ্যাতীত। তা পরিবর্তন করার কোন পথ নেই। অতএব হাদীসের মর্ম হলো, কোন ব্যক্তি তার ঈমানের দাবীতে সঠিক বলে প্রমাণিত হবে না যতক্ষণ না সে স্বীয় সত্তাকে আমার আনুগত্যের উদ্দেশে উৎসর্গ করবে এবং আমার সন্তুষ্টিকে স্বীয় প্রবৃত্তির উপর প্রাধান্য দিবে।

হাদীসের শিক্ষাঃ

১। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালোবাসা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।

২। এ ভালোবাসা অর্জনে মানুষের মধ্যে শ্রেণী বিন্যাস রয়েছে। অর্থাৎ- রসূলের প্রতি ভালোবাসা অর্জনে সকলে একই স্তরের নয়।

৩। রসূলের প্রতি ভালোবাসার কারণে ঈমান বৃদ্ধি পায়। আর তাঁর প্রতি ভালোবাসা কমে গেলে ঈমানও কমে যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৮-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোকের মধ্যে তিনটি গুণের সমাবেশ ঘটে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ পেয়েছে। (১) তার মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ভালোবাসা দুনিয়ার সকল কিছু হতে অধিক প্রিয়। (২) যে লোক কোন মানুষকে কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশেই ভালোবাসে। (৩) যে লোক কুফরী হতে নাজাতপ্রাপ্ত হয়ে ঈমান ও ইসলামের আলো গ্রহণ করার পর পুনরায় কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে এত অপছন্দ করে যেমন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ: مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَمَنْ أَحَبَّ عَبْدًا لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ وَمَنْ يَكْرَهُ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ كَمَا يكره أَن يلقى فِي النَّار

وعن انس رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاث من كن فيه وجد بهن حلاوة الايمان من كان الله ورسوله احب اليه مما سواهما ومن احب عبدا لا يحبه الا لله ومن يكره ان يعود في الكفر بعد ان انقذه الله منه كما يكره ان يلقى في النار

Chapter - Section 1


Anas reported God’s messenger as saying, “There are three qualities for which anyone who is characterised by them will experience the sweetness of faith:
he to whom God and His messenger are dearer than all else; he who loves a human being for God’s sake alone; and he who has as great an abhorrence of returning to unbelief after God has rescued him from it as he has of being cast into hell.”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায় আনুগত্যের মাধ্যমে। অর্থাৎ- তা’ হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির উদ্দেশে কষ্ট সহ্য করা এবং একে দুনিয়াবী উন্নতি ও অগ্রগতির উপর প্রাধান্য দেয়া। তা এজন্য যে, মানুষ যখন এ বিষয়ে চিন্তা করে যে, শারী‘আত প্রণেতা দুনিয়াবী কল্যাণ অথবা পরকালীন মুক্তির উদ্দেশ্য ব্যতীত কোন আদেশ দেন না বা নিষেধ জারি করেন না। তখন তার প্রবৃত্তি তার অনুগামী হয়। ফলে সে শারী‘আত প্রণেতার আদেশ পালনে স্বাদ অনুভব করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কষ্ট সহ্য করতে সক্ষম হয়।

হাদীসে বর্ণিত তিনটি বিষয় পূর্ণ ঈমানের পরিচায়ক। যা দ্বারা সে এমন স্বাদ অনুভব করে, যে স্বাদ যা দুনিয়ার সকল স্বাদের উপর বিজয়ী। ইমাম বায়যাবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসে বর্ণিত তিনটি বস্তু পূর্ণ ঈমানের পরিচায়ক এজন্য যে, কোন লোক যখন আল্লাহতে প্রকৃত নি‘আমাত প্রদানকারী বলে বিশ্বাস করে, তখনই সে মনে করে যে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ব্যতীত কোন দাতাও নেই এবং তা প্রতিহতকারীও কেউ নেই। নি‘আমাত অর্জনে তিনি ব্যতীত যা কিছু আছে তা উপকরণ মাত্র। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের উদ্দেশ্য বর্ণনাকারী। ফলে সে পরিপূর্ণভাবে তার অভিমুখী হয়। তাই সে সেটাই ভালোবাসে যা তিনি ভালোবাসেন। আর তাঁর জন্যই অন্যকে ভালোবাসে। এ হাদীসটি ذَاقَ طَعْمَ الْإِيْمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِيْنًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا এই হাদীসের অর্থই বহন করে। কেননা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও তাঁর রসূল কে ভালোবাসার কারণে কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া অপছন্দ করা তার পক্ষেই সম্ভব যার অন্তরের ঈমান দৃঢ় ও মজবুত। যার জন্য তার অন্তর প্রশস্ত হয় এবং যা তার মজ্জাগত সেই ব্যক্তিই এর স্বাদ পায়। আর আল্লাহর জন্য ভালোবাসা আল্লাহকে ভালোবাসারই ফল।

বান্দা তার রবকে ভালোবাসতে পারে কেবল তার রবের বিরোধিতা পরিত্যাগ ও তাঁর আনুগত্য করার মাধ্যমে। অনুরূপভাবে তাঁর রসূলের ভালোবাসাও তার বিরোধিতা পরিত্যাগ করে তার আনুগত্যের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। এই হাদীসে এ ইঙ্গিতও রয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূল  উভয়ের ভালোবাসা ব্যতীত যে কোন একজনের ভালোবাসা অনর্থক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৯-[৮] ’আব্বাস ইবনু ’আবদুল মুত্ত্বালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট, সে-ই ঈমানের স্বাদ পেয়েছে। (মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَن الْعَبَّاس بن عبد الْمطلب قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَاقَ طَعْمَ الْإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن العباس بن عبد المطلب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ذاق طعم الايمان من رضي بالله ربا وبالاسلام دينا وبمحمد رسولا رواه مسلم

Chapter - Section 1


Al-‘Abbas b. ‘Abd al-Muttalib reported God’s messenger as saying, “He who is well-pleased with God as Lord, with Islam as religion, and with Muhammad as messenger will experience the savour of faith,”

Muslim transmitted it.

ব্যাখ্যা: সাহিবুত্ তাহরীর (তাহরীর গ্রন্থের লেখক) বলেনঃ হাদীসের অর্থ হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট কোন কিছু চায় না, ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন পন্থায় প্রচেষ্টা চালায় না এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনীত শারী‘আত ব্যতীত অন্য পথে চলে না- সেই প্রকৃত ঈমানের স্বাদ পেয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। তার অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেছে এবং সে এর স্বাদ পেয়েছে। ক্বাযী ‘ইয়ায বলেনঃ তার ঈমান সঠিক। এর মাধ্যমে তার অন্তর প্রশান্তি লাভ করেছে এবং তা তার গভীরে প্রোথিত হয়েছে। কোন ব্যক্তি যখন কোন বিষয়ের প্রতি সন্তুষ্ট ও রাযী থাকে তখন তা তার জন্য সহজ হয়ে যায়। অনুরূপভাবে মু’মিনের অন্তরে যখন ঈমান প্রবেশ করে তখন তার পক্ষে আল্লাহর আনুগত্য করা সহজ হয় এবং এতে সে স্বাদ পায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
১০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১০-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে প্রতিপালকের হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাঁর কসম! এ উম্মাতের যে কেউই চাই ইয়াহূদী হোক বা খ্রীষ্টান, আমার রিসালাত ও নুবূওয়্যাত মেনে না নিবে ও আমার প্রেরিত শারী’আতের উপর ঈমান না এনেই মৃত্যুবরণ করবে, সে নিশ্চয়ই জাহান্নামী। (মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا يسمع بِي أحدق مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَّا كَانَ من أَصْحَاب النَّار» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم والذي نفس محمد بيده لا يسمع بي احدق من هذه الامة يهودي ولا نصراني ثم يموت ولم يومن بالذي ارسلت به الا كان من اصحاب النار رواه مسلم

Chapter - Section 1


Abu Huraira reported God’s messenger as saying, "By Him in whose hand Muhammad’s soul is, anyone of this people, Jew or Christian, who hears of me and then dies without believing in my message, will be among those who go to hell.”

Muslim transmitted it.

ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে উদ্দেশ্য হলো, তাঁর সময়ের লোক হোক অথবা তাঁর পরবর্তী সময়ের হোক, ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত যাদের নিকটই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দা‘ওয়াত পৌঁছবে সে যে ধর্মাবলম্বী হোক না কেন তাদের কর্তব্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আহবানে সাড়া দেয়া এবং তার আনীত বিধানের আনুগত্য করা। যাদের প্রতি আল্লাহর নাযিলকৃত গ্রন্থ বিদ্যমান সেই ইয়াহূদী ও নাসারা যখন এ অবস্থা তখন যাদের প্রতি কোন আসমানী গ্রন্থ নাযিল হয়নি সাড়া দেয়ার প্রয়োজনতো আরো বেশী উপযোগী। তবে ইয়াহূদী ও নাসারাদের উল্লেখ এজন্য করা হয়েছে যে, তাদের কুফরী করাটা অধিক দোষণীয়। কেননা তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এরূপ জানে যেরূপ তাদের সন্তান সম্পর্কে জানে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘তারা তাঁর বিষয়ে তাওরাতে ও ইনজীলে লিখিত বক্তব্য দেখতে পায়।’’ (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭ঃ ১৫৭)

মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেনঃ হাদীসের অর্থ হচ্ছে ‘‘যে ব্যক্তি আমার নুবূওয়্যাতের কথা শুনার পরও আমার প্রতি ঈমান আনবে না, সে যেই হোক না কেন সে জাহান্নামী’’।

হাদীসের শিক্ষাঃ

(১) আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের মাধ্যমে অন্য সকল ধর্মই রহিত হয়ে গেছে।

(২) যার নিকট ইসলামের দা‘ওয়াত পৌঁছেনি তার আপত্তি গ্রহণযোগ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
১১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১১-[১০] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন লোকের জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। প্রথমত যে আহলি কিতাব নিজের নবীর প্রতি ঈমান এনেছে আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিও ঈমান এনেছে। দ্বিতীয়ত যে ক্রীতদাস যথানিয়মে আল্লাহর হক আদায় করেছে পুনরায় নিজের মুনীবের হকও আদায় করেছে। তৃতীয়ত যার তত্ত্বাবধানে ক্রীতদাসী ছিল, সে তার সঙ্গে সহবাস করেছে, তাকে উত্তমরূপে আদব-কায়দাও শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে মুক্ত করে দিয়ে স্বীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছে, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثَةٌ لَهُمْ أَجْرَانِ: رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمَنَ بِنَبِيِّهِ وَآمَنَ بِمُحَمَّدٍ وَالْعَبْدُ الْمَمْلُوكُ إِذَا أَدَّى حَقَّ اللَّهِ وَحَقَّ مَوَالِيهِ وَرَجُلٌ كَانَتْ عِنْدَهُ أَمَةٌ يَطَؤُهَا فَأَدَّبَهَا فَأَحْسَنَ تَأْدِيبَهَا وَعَلَّمَهَا فَأَحْسَنَ تَعْلِيمِهَا ثُمَّ أَعْتَقَهَا فَتَزَوَّجَهَا فَلَهُ أَجْرَانِ

وعن ابي موسى الاشعري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاثة لهم اجران رجل من اهل الكتاب امن بنبيه وامن بمحمد والعبد المملوك اذا ادى حق الله وحق مواليه ورجل كانت عنده امة يطوها فادبها فاحسن تاديبها وعلمها فاحسن تعليمها ثم اعتقها فتزوجها فله اجران

Chapter - Section 1


Abu Musa al-Ash‘ari reported God’s messenger as saying, "Three types will have a double reward:

one of the people of the Book who believes in his prophet and believes in Muhammad; a slave when he fulfils what is due to God and what is due to his patrons; and a man who has a slavegirl with whom he has intercourse, who gives her a good training in manners and a good education, then sets her free and marries her—he will have a double reward.”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: তিন শ্রেণীর প্রত্যেক লোকের জন্যই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। আহলি কিতাব নারী আহলি কিতাব পুরুষদের মতই। যেহেতু হুকুমের ক্ষেত্রে নারীগণ পুরুষের অন্তর্গত। তবে বিশেষ প্রমাণের ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। নাসায়ীতে আবূ উমামাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে ‘‘মক্কা বিজয়ের দিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাহনের পাশেই ছিলাম। তিনি তখন উত্তম ও সুন্দর কথা বললেন। তিনি যা বলেছিলেন তার মধ্যে এ কথাও ছিল ‘‘দুই আহলি কিতাবের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করবে তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার আর তার জন্য তা-ই প্রযোজ্য যা আমাদের জন্য প্রযোজ্য। আর মুশরিকদের মধ্য থেকে যে ইসলাম গ্রহণ করবে তার জন্য তার পুরস্কার রয়েছে। তার জন্যও তাই প্রযোজ্য আমাদের জন্য যা প্রযোজ্য।’’

আহলি কিতাবগণ দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে, কারণ তারা তাদের নাবীর প্রতি ঈমান আনার পর আবার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিও ঈমান এনেছে। (الْعَبْدُ الْمَمْلُوْكُ) দ্বারা উদ্দেশ্য দাস দাসী। عَبْدُ কে مَمْلُوْكُ দ্বারা এজন্য বিশেষায়িত করা হয়েছে যে, সকল মানুষই আল্লাহর দাস। তাদের থেকে পৃথক করার জন্য مَمْلُوْكُ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহর হক দ্বারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সওম ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে। আর মুনীবের হক দ্বারা তাদের বৈধ খেদমত উদ্দেশ্য।

দাসী আযাদ করে বিয়ে করলে মুনীব দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে কারণ আযাদ করা একটি ‘ইবাদাত এবং বিয়ে করা আরেকটি ‘ইবাদাত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
১২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১২-[১১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পক্ষ হতে আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা এ কথা স্বীকার করে সাক্ষ্য না দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রসূল এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম করবে ও যাকাত আদায় করবে- ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার। যখন তারা এরূপ কাজ করবে আমার পক্ষ হতে তাদের জান ও মাল নিরাপদ থাকবে। কিন্তু ইসলামের বিধান অনুযায়ী কেউ যদি কোন দণ্ড পাওয়ার উপযোগী কোন অপরাধ করে, তবে সে দণ্ড তার ওপর কার্যকর হবে। তারপর তার অদৃশ্য বিষয়ের (অন্তর সম্পর্কে) হিসাব ও বিচার আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত। (বুখারী, মুসলিম)[1]

তবে সহীহ মুসলিমে ’’কিন্তু ইসলামের বিধান অনুযায়ী’’ বাক্যটি উল্লেখ করেননি।

الفصل الاول

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا بِحَق الْإِسْلَام وحسابهم على الله. إِلَّا أَنَّ مُسْلِمًا لَمْ يَذْكُرْ» إِلَّا بِحَقِّ الْإِسْلَام

وعن ابن عمر رضي الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت ان اقاتل الناس حتى يشهدوا ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله ويقيموا الصلاة ويوتوا الزكاة فاذا فعلوا ذلك عصموا مني دماءهم واموالهم الا بحق الاسلام وحسابهم على الله الا ان مسلما لم يذكر الا بحق الاسلام

Chapter - Section 1


Ibn ‘Umar reported God’s messenger as saying, "I am commanded to fight with men till they testify that there is no god but God and that Muhammad is God's messenger, observe the prayer and pay the zakat. When they do that they will keep their lives and their property safe from me, except for what is due to Islam; and their reckoning will be at God’s hands.”

(Bukhari and Muslim, but Muslim did not mention, "except for what is due to Islam”.)

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে যুদ্ধ পরিচালনার সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর একত্ববাদ ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়ার পর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কায়িম করবে ও যাকাত আদায় করবে তার রক্ত পবিত্র। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে না।

আর রিসালাতের সাক্ষ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনীত সকল বিষয়ের সত্যতার সাক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করে। তা সত্ত্বেও সালাত ও যাকাতের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ এ দু’টির গুরুত্ব অন্যগুলোর তুলনায় বেশী। এ দু’টি শারীরিক ও আর্থিক ‘ইবাদাতের মূল।

এ হাদীস দ্বারা এ মতের পক্ষে দলীল পেশ করা হয়ে থাকে যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিত্যাগ করবে তাকে শাস্তি স্বরূপ মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে। অনুরূপভাবে এ মতেরও দলীল পেশ করা হয় যে, সালাত পরিত্যাগকারী কাফির বিধায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে।

وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ অংশে এ কথার প্রমাণ মেলে যে, যারা যাকাত দিতে অস্বীকার করবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে। আর এ কারণেই আবূ বাকর সিদ্দীক্ব (রাঃ) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। আর সাহাবীগণ এ ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেন।

হাদীসের মর্ম হলো হাদীসে বর্ণিত কাজগুলো যারা করবে তাদের জান ও মাল নিরাপদ। ইসলামের কোন হক অথবা জরিমানা ব্যতীত তাদের রক্ত প্রবাহ করা এবং সম্পদ নেয়া অবৈধ। ‘‘তাদের হিসাব আল্লাহর নিকট’’ অর্থাৎ- তাদের বাহ্যিক কাজের উপর নির্ভর করেই মু‘আমলাহ্ (আচরণ) করতে হবে। আভ্যন্তরীণ বিষয় আল্লাহর নিকট সোপর্দ করা হবে।

হাদীসের শিক্ষাঃ

(১) ঈমান ‘আমলের মুখাপেক্ষী

(২) ‘আমল ঈমানের অংশ

(৩) হাদীসটি আল্লাহ তা‘আলার বাণী ‘‘তারা যদি তাওবাহ্ করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত আদায় করে তবে তাদের রাস্তা ছেড়ে দাও’’ এর অনুকূল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
১৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৩-[১২] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আমাদের কা’বাকে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলাহ) হিসেবে গ্রহণ করে, আমাদের যাবাহকৃত পশুর মাংস (গোসত/গোস্ত) খায়, সে এমন মুসলিম যার জন্য (জান-মাল, ইজ্জাত-সম্ভ্রম রক্ষায়) আল্লাহ ও রসূলের ওয়া’দা রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করো না। (বুখারী)[1]

الفصل الاول

وَعَن أنس أَنَّهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى صَلَاتَنَا وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَا وَأَكَلَ ذَبِيحَتَنَا فَذَلِكَ الْمُسْلِمُ الَّذِي لَهُ ذِمَّةُ اللَّهِ وَذِمَّةُ رَسُولِهِ فَلَا تُخْفِرُوا اللَّهَ فِي ذمَّته» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن انس انه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى صلاتنا واستقبل قبلتنا واكل ذبيحتنا فذلك المسلم الذي له ذمة الله وذمة رسوله فلا تخفروا الله في ذمته رواه البخاري

Chapter - Section 1


Anas reported God’s messenger as saying, "If anyone observes our form of prayer, faces our qibla, and eats what we kill, that one is a Muslim who has protection from God and His messenger; so do not betray God’s protection.”

Bukhari transmitted it.

ব্যাখ্যা : সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তার দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব যিনি তাওহীদ ও নুবূওয়্যাতে বিশ্বাসী। আর যিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নুবূওয়্যাত স্বীকার করেন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা সবই তিনি বিশ্বাস করেন। প্রত্যেক ব্যক্তিই ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) সম্পর্কে অবহিত যদিও সে তার সালাত সম্পর্কে হয়ত পূর্ণ অবহিত নয়। আর আমাদের সালাতের ‘আমল অন্যদের সালাতেও পাওয়া যায়, যেমনঃ ক্বিরাআত (কিরআত) ও ক্বিয়াম (কিয়াম)। কিন্তু আমাদের (মুসলিমদের) ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) শুধু আমাদের জন্যই খাস।

এ হাদীসে ইসলামের মাত্র তিনটি রুকন (সালাত, ক্বিবলাহ্ ও যাবীহাহ্) উল্লেখ করার কারণ এই যে, এগুলো অতি প্রকাশ্য যা দ্রুত অবহিত হওয়া যায়। কোন ব্যক্তির সাথে প্রথম দিবসের সাক্ষাতেই তার সালাত ও খাবার সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। এতেই বুঝা যায় যে, সে কোন ধর্মে বিশ্বাসী। যে ব্যক্তি তার মধ্যে ইসলামের নিদর্শনের প্রকাশ ঘটায় এবং মুসলিমদের বিষয়গুলো তার মধ্যে প্রতিষ্ঠা করে সে আল্লাহর নিরাপত্তার আওতায় চলে আসে। মুসলিমের যা কিছু হারাম তারও তা হারাম। ফলে সে আল্লাহর যিম্মাদারীর অন্তর্ভুক্ত। অতএব তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীকে বিনষ্ট করবে না।

হাদীসের শিক্ষাঃ

(১) লোকজনের বাহ্যিক বিষয়ই ধর্তব্য, আভ্যন্তরীণ বিষয় ধর্তব্য নয়। অতএব যে ব্যক্তি ধর্মীয় নিদর্শনের প্রকাশ ঘটাবে তার প্রতি সে ধর্মের বিধিবিধান কার্যকরী হবে।

(২) ‘আমল ব্যতীত শুধু ঈমান যথেষ্ট নয় যেমনটি মুরজিয়াহ্ সম্প্রদায় মনে করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
১৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৪-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক (বেদুঈন) লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন যা করলে আমি সহজে জান্নাতে পৌঁছতে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর ’ইবাদাত করতে থাকবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে এবং রমাযানের সিয়াম পালন করবে- এ কথা শুনে লোকটি বলল, আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন রয়েছে! আমি এর থেকে বেশিও করবো না, কমও করবো না। সে লোক যখন চলে গেল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউ যদি জান্নাতী কোন লোককে দেখে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন এ লোককে দেখে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: أَتَى أَعْرَابِيٌّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ. قَالَ: «تَعْبُدُ اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ وَتُؤَدِّي الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ وَتَصُومُ رَمَضَانَ» . قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا أَزِيدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُ. فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْجنَّة فَلْينْظر إِلَى هَذَا»

وعن ابي هريرة قال اتى اعرابي النبي صلى الله عليه وسلم فقال دلني على عمل اذا عملته دخلت الجنة قال تعبد الله ولا تشرك به شيىا وتقيم الصلاة المكتوبة وتودي الزكاة المفروضة وتصوم رمضان قال والذي نفسي بيده لا ازيد على هذا شيىا ولا انقص منه فلما ولى قال النبي صلى الله عليه وسلم من سره ان ينظر الى رجل من اهل الجنة فلينظر الى هذا

Chapter - Section 1


Abu Huraira reported that an Arab came to the Prophet and said, "Guide me to a deed by doing which I shall enter paradise.” He said, “Worship God and associate nothing with Him, observe the prescribed prayer, pay the obligatory zakat, and fast during Ramadan.” He replied, "By Him in whose hand my soul is, I shall not add anything to this, or fall short of it.” Then when he turned away the Prophet said, "If anyone wishes to look at a man who will be among the people of paradise, let him look at this man.”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: হাদীসে আরকানে ইসলামের মাত্র তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এ বিষয়গুলো অন্যগুলোর তুলনায় অধিক প্রকাশ্য। আর বাকী রুকনগুলোও এর সাথেই সম্পৃক্ত।

প্রথমে আল্লাহর ‘ইবাদাতের উল্লেখের পর শির্ক-এর বিষয় এজন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, কাফিররাও আল্লাহর ‘ইবাদাত করে কিন্তু পাশাপাশি মূর্তির পূজাও করে এবং মনে করে যে, এ মূর্তিগুলো আল্লাহর অংশীদার। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা অস্বীকার করেছেন।

এ হাদীস ও সামনের ত্বলহাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে প্রশ্নকারীকে নফল ‘ইবাদাতের কথা জানানো হয়নি। বরং ত্বলহার হাদীসে নফল পরিত্যাগ করার শপথকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কেননা এ ঘটনায় বর্ণিত লোকজন ইসলামে নবদীক্ষিত ছিল। তাই তাদের জন্য আবশ্যক কাজগুলোই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। যাতে তা তাদের জন্য ভারী না হয়ে যায়।

হাদীসের শিক্ষা: ঈমানের জন্য ‘আমল আবশ্যক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
১৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৫-[১৪] সুফ্ইয়ান ইবনু ’আবদুল্লাহ আস্ সাক্বাফী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে ইসলামের এমন একটি চূড়ান্ত কথা বলে দিন, যে সম্পর্কে ’আপনার পরে’; অপর এক বর্ণনায় আছে, ’আপনি ছাড়া’ আমাকে আর কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে না হয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’আমি আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি’- তুমি এ কথা বল এবং এ ঘোষণায় দৃঢ় থাক। (মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَن سُفْيَان بن عبد الله الثَّقَفِيّ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ قُلْ لِي فِي الْإِسْلَامِ قَوْلًا لَا أَسْأَلُ عَنْهُ أَحَدًا بَعْدَكَ وَفِي رِوَايَةٍ: غَيْرَكَ قَالَ: قُلْ: آمَنْتُ بِاللَّه ثمَّ اسْتَقِم. رَوَاهُ مُسلم

وعن سفيان بن عبد الله الثقفي قال قلت يا رسول الله قل لي في الاسلام قولا لا اسال عنه احدا بعدك وفي رواية غيرك قال قل امنت بالله ثم استقم رواه مسلم

Chapter - Section 1


Sufyan b. ‘Abdallah ath-Thaqafi reported that he said, "Messenger of God, say something about Islam concerning which I shall need to ask no one after you are gone.” (A version has "anyone else”.) He said, "Say, ‘I believe in God’, then keep to the straight path.”

Muslim transmitted it.

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমন একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য শিক্ষা দিতে বললেন যাতে ইসলামের সকল বিষয়কে সম্পৃক্ত করে। পরবর্তীতে অন্য কারো নিকট জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন না হয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে তাকে বললেন, তুমি বলোঃ ‘‘আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম’’। অর্থাৎ- আল্লাহর কথা অন্তরে স্মরণ করে, তা উচ্চারণ ও সে অনুযায়ী কর্মের মাধ্যমে তোমার ঈমানকে নবায়ন করে নাও। এর দ্বারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণাঙ্গ তাওহীদ উদ্দেশ নিয়েছেন যার ধারক জাহান্নামের জন্য হারাম।

‘‘অতঃপর এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাক’’ اسْتَقِامَةٌ অর্থ সরল পথে চলা। আর তা হচ্ছে মজবুত দীন। যার মধ্যে ডান ও বামের কোন বক্রতা নেই। আর তা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল কাজে আনুগত্য প্রকাশ এবং সকল প্রকার নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকা শামিল করে।

এ হাদীসটি আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘যারা বলে আল্লাহ আমাদের রব, অতঃপর তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে’’ এর সমার্থক।

হাদীসের শিক্ষাঃ

(১) আদিষ্ট কাজের আনুগত্য করা ওয়াজিব।

(২) গুনাহের কাজ হতে বিরত থাকা অবশ্য কর্তব্য।

(৩) এ হাদীসটি মুরজিয়াদের ‘আক্বীদাহ্ প্রত্যাখ্যান করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
১৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৬-[১৫] ত্বলহাহ্ ইবনু ’উবায়দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন নাজদবাসী লোক এলোমেলো কেশে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলো। আমরা তার ফিসফিস শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু বেশ দূরে থাকার কারণে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এমনকি সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খুব নিকটে এসে পৌঁছল। সে ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো (ইসলাম কি?)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। তখন সে লোকটি বলল, এছাড়া কি আর কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আমার ওপর ফরয? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। তবে তুমি নফল সালাত আদায় করতে পারো। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে। সে ব্যক্তি বলল, এছাড়া কি আর কোন সিয়াম আমার ওপর ফরয? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। তবে ইচ্ছামাফিক (নফল) সিয়াম পালন করতে পারো। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতের কথা বর্ণনা করলেন। পুনরায় সে লোকটি বলল, এছাড়া কি আর কোন সদাক্বাহ্ (সাদাকা) আমার ওপর ফরয? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। কিন্তু স্বেচ্ছায় দান করার অবকাশ রয়েছে। অতঃপর লোকটি এ কথা বলতে বলতে চলে গেল- আল্লাহর কসম, এর উপর আমি কিছু বেশিও করবো না এবং কমও করবো না। (এটা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি যদি তার কথায় সত্য বলে থাকে, তাহলে (জাহান্নাম হতে) সাফল্য লাভ করল। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنْ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ ثَائِرُ الرَّأْسِ نَسْمَعُ دَوِيَّ صَوْتِهِ وَلَا نَفَقَهُ مَا يَقُولُ حَتَّى دَنَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا هُوَ يَسْأَلُ عَنِ الْإِسْلَامِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَمْسُ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ» . فَقَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُنَّ؟ فَقَالَ: لَا إِلَّا أَنْ تَطَّوَّعَ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَصِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ . قَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُ؟ قَالَ: «لَا إِلَّا أَنْ تَطَّوَّعَ» . قَالَ: وَذَكَرَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الزَّكَاةَ فَقَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهَا؟ فَقَالَ: لَا إِلَّا أَنْ تَطَّوَّعَ. قَالَ: فَأَدْبَرَ الرَّجُلُ وَهُوَ يَقُولُ: وَاللَّهِ لَا أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْلح الرجل إِن صدق»

وعن طلحة بن عبيد الله قال جاء رجل الى رسول الله صلى الله عليه وسلم من اهل نجد ثاىر الراس نسمع دوي صوته ولا نفقه ما يقول حتى دنا من رسول الله صلى الله عليه وسلم فاذا هو يسال عن الاسلام فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم خمس صلوات في اليوم والليلة فقال هل علي غيرهن فقال لا الا ان تطوع قال رسول الله صلى الله عليه وسلم وصيام شهر رمضان قال هل علي غيره قال لا الا ان تطوع قال وذكر له رسول الله صلى الله عليه وسلم الزكاة فقال هل علي غيرها فقال لا الا ان تطوع قال فادبر الرجل وهو يقول والله لا ازيد على هذا ولا انقص منه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افلح الرجل ان صدق

Chapter - Section 1


Talha b. ‘Ubaidallah said:
A man of the people of Najd with dishevelled hair came to God’s messenger. We could hear the sound of his voice, but could not understand what he was saying till he came near God’s messenger and we realised that he was asking about Islam. God’s messenger said, “Five times of prayer each day and night.” He asked, “Must I observe any more than them?” He replied, “No, unless you do it voluntarily.” God's messenger said, “And fasting during the month of Ramadan.” He asked, “Must I observe anything else?” He replied, “No, unless you do it voluntarily.” Talha said that God's messenger mentioned the zakat to him, and he asked, “Must I pay anything else?” He replied, “No, unless you do it voluntarily.” He said that the man turned away saying, “I swear by God that I shall not add anything to this or fall short of it.” So God’s messenger said, “The man will prosper if he is speaking the truth.”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: (نَسْمَعُ دَوِيَّ صَوْتِه وَلَا نَفْقَهٗ مَا يَقُوْلُ) এর অর্থ হচ্ছে বাতাসে তার আওয়াজের শব্দের গুঞ্জরণ শুনা যাচ্ছিল কিন্তু তা থেকে কিছু বুঝা যাচ্ছিল না। যেমন মৌমাছি বা মাছির গুঞ্জরণ শুনা যায়। সে ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিল অর্থাৎ- ইসলামের বিধানাবলী এবং ফরযসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা। এটি জানা যায় ইমাম বুখারীর কিতাবুস্ সিয়ামে ত্বলহাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের শেষাংশ থেকে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইসলামের বিধানাবলী সম্পর্কে অবহিত করলেন।

(اِلَّا أَنْ تَطَوَّعَ) অর্থাৎ- তোমার মুসতাহাব এই যে, তুমি নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। হাদীসের এ অংশ দ্বারা এ দলীল গ্রহণ করা হয় যে নফল ‘ইবাদাত শুরু করে ফেললে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব নয়। পূর্ণ করা মুসতাহাব, অতএব তা ছেড়ে দেয়া বৈধ। ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিক অথবা ওজরের কারণে ছেড়ে দিক তা পূর্ণ করা ওয়াজিব নয়। তিরমিযীতে উম্মু হানী থেকে বর্ণিত হাদীসে বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়। তাতে আছে ‘‘নফল সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি নিজ সত্তার ওপর নিজেই আমীর বা পরিচালক। সে ইচ্ছা করলে সিয়াম পালন করতে পারে আর ইচ্ছা করলে তা ভঙ্গ করতেও পারে।’’ অনুরূপভাবে নাসায়ীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে মারফূ‘ হাদীসেও এ বক্তব্যের সমর্থন মিলে। তাতে আছে ‘‘নফল সওম পালনকারীর উদাহরণ ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে স্বীয় মাল থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে। ইচ্ছা করলে সে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতে এবং ইচ্ছা করলে তা পরিত্যাগ করতে পারে।’’

নাসায়ীতে বর্ণিত হাদীস ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো নফল সিয়ামের নিয়্যাত করতেন পরে আবার তা ভেঙ্গে ফেলতেন। বুখারীতে বর্ণিত হাদীস ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুওয়াইবিয়াহ্ বিনতু হারিস  (রাঃ)-কে জুমু‘আর দিনে সিয়াম শুরু করার পর ভাঙ্গতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে তাকে তা ক্বাযা করার নির্দেশ দেননি।

বায়হাক্বীতে আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাদ্য প্রস্তুত করলাম। অতঃপর যখন তা দস্তরখানে রাখা হলো তখন এক ব্যক্তি বললোঃ আমি সায়িম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার ভাই তোমাকে দা‘ওয়াত দিয়েছে, তোমার জন্য কষ্ট করেছে। তুমি সিয়াম ভেঙ্গে ফেল ইচ্ছা হলে তুমি তদস্থলে আরেকটি সিয়াম পালন করবে। এ হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, নফল ‘ইবাদাত শুরু করলে তা পূর্ণ করা জরুরী নয়। সিয়ামের ক্ষেত্রে তা সরাসরি দলীল দ্বারা প্রমাণিত।

‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারীকে যাকাতের কথাও উল্লেখ করলেন’’ এ বাক্যটি বর্ণনাকারীর নিজের। মনে হয় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারীর উত্তরে যাকাত সম্পর্কে কি শব্দ প্রয়োগ করে উত্তর দিয়েছিলেন বর্ণনাকারী তা ভুলে গেছেন অথবা তার সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তিনি স্বীয় ভাষায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংবাদটি অবহিত করেছেন। এতে বুঝা যায়, হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে বর্ণিত শব্দ সংরক্ষণ করাও জরুরী।

হাদীসের শিক্ষাঃ

(১) মুক্তি লাভের জন্য ইসলামের ফরয ও ওয়াজিবগুলোর প্রতি ‘আমল করা আবশ্যক।

(২) এতে মুরজিয়াদের ‘আক্বীদাহ্- নাজাত তথা মুক্তির জন্য বিশ্বাসই যথেষ্ট ‘আমলের প্রয়োজন নেই- প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
১৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭-[১৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আবদুল ক্বায়স গোত্রের এক প্রতিনিধি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এরা কোন্ গোত্রের লোক (বা কোন্ প্রতিনিধি দল)? লোকেরা জবাব দিল, এরা রবী’আহ্ গোত্রের লোক। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, গোত্র বা প্রতিনিধি দলকে মুবারকবাদ! অপমান ও অনুতাপবিহীন অবস্থায় আগত প্রতিনিধি দলকে মুবারকবাদ! প্রতিনিধি দল আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনার ও আমাদের মধ্যে কাফির যুদ্ধবাজ মুযার বংশ অন্তরায়স্বরূপ থাকায় হারাম মাস ব্যতীত অন্য মাসে আপনার নিকট আসতে পারি না। তাই আপনি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী এমন কিছু পরিষ্কার নির্দেশ দিন যা আমরা মেনে চলব এবং যাদেরকে দেশে রেখে এসেছি তাদেরকে গিয়ে বলতে পারব। যা দ্বারা আমরা (সহজে) জান্নাতে যেতে পারি। এর সাথে তারা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) পানীয় বস্তু (পান পাত্র) সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলেন।

প্রত্যুত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে চারটি কাজের আদেশ দিলেন আর চারটি কাজ হতে নিষেধ করলেন। (প্রথমে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আদেশ করলেন এবং বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ কি, তা কি তোমরা জান? তারা জবাবে বলল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল ই অধিক ভালো জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
(১) আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল - এ সাক্ষ্য দেয়া।
(২) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম করা।
(৩) যাকাত আদায় করা। এবং (৪) রমাযান মাসের সিয়াম পালন করা। এরপর (চারটি কাজ ছাড়াও) গনীমাতের (জিহাদলব্ধ মালের) ’খুমুস’ এক-পঞ্চমাংশ দেয়ার হুকুম দিলেন।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চারটি (মদের) পানপাত্র ব্যবহার নিষেধ করলেন। এগুলো হলোঃ হানতাম (নিকেল করা সবুজ পাত্র), দুব্বা (কদুর খোল দ্বারা প্রস্তুতকৃত পাত্রবিশেষ), নাকীর (গাছের বা কাঠের পাত্রবিশেষ), মুযাফফাত (তৈলাক্ত পাত্রবিশেষ, এ জাতীয় পাত্রে তৎকালীন সময়ে মদ ব্যবহার করা হত)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেন, এ সকল কথা ভালোভাবে স্মরণ রাখবে। যাদের দেশে ছেড়ে এসেছো তাদেরকেও বলবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: إِنَّ وَفْدَ عَبْدِ الْقَيْسِ لَمَّا أَتَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنِ الْقَوْمُ؟ أَوْ: مَنِ الْوَفْدُ؟ قَالُوا: رَبِيعَةُ. قَالَ: مَرْحَبًا بِالْقَوْمِ أَوْ: بِالْوَفْدِ غَيْرَ خَزَايَا وَلَا نَدَامَى . قَالُوا: يَا رَسُول الله إِنَّا لَا نستطيع أَن نَأْتِيَكَ إِلَّا فِي الشَّهْرِ الْحَرَامِ وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ هَذَا الْحَيُّ مِنْ كُفَّارِ مُضَرَ فَمُرْنَا بِأَمْرٍ فصل نخبر بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا وَنَدْخُلُ بِهِ الْجَنَّةَ وَسَأَلُوهُ عَنِ الْأَشْرِبَةِ. فَأَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ: أَمَرَهُمْ بِالْإِيمَانِ بِاللَّهِ وَحْدَهُ قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الْإِيمَانُ بِاللَّهِ وَحْدَهُ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصِيَامِ رَمَضَانَ وَأَنْ تُعْطُوا مِنَ الْمَغْنَمِ الْخُمُسَ»
وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ: عَنِ الْحَنْتَمِ وَالدُّبَّاءِ وَالنَّقِيرِ وَالْمُزَفَّتِ وَقَالَ: «احْفَظُوهُنَّ وَأَخْبِرُوا بِهِنَّ مَنْ وَرَاءَكُمْ» وَلَفظه للْبُخَارِيّ

وعن ابن عباس رضي الله عنهما قال ان وفد عبد القيس لما اتوا النبي صلى الله عليه وسلم قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من القوم او من الوفد قالوا ربيعة قال مرحبا بالقوم او بالوفد غير خزايا ولا ندامى قالوا يا رسول الله انا لا نستطيع ان ناتيك الا في الشهر الحرام وبيننا وبينك هذا الحي من كفار مضر فمرنا بامر فصل نخبر به من وراءنا وندخل به الجنة وسالوه عن الاشربة فامرهم باربع ونهاهم عن اربع امرهم بالايمان بالله وحده قال اتدرون ما الايمان بالله وحده قالوا الله ورسوله اعلم قال شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله واقام الصلاة وايتاء الزكاة وصيام رمضان وان تعطوا من المغنم الخمسونهاهم عن اربع عن الحنتم والدباء والنقير والمزفت وقال احفظوهن واخبروا بهن من وراءكم ولفظه للبخاري

Chapter - Section 1


Ibn ‘Abbas said that when the deputation of ‘Abd Qais came to the Prophet, God's messenger asked, “Who are the people?” or, “Who are the deputation?” They replied, “Rabi‘a”, and he said, “Welcome to the people (or deputation), neither ashamed nor regretful.” They said, “Messenger of God, we are able to come to you only in the sacred month, for this tribe of the infidels of Mudar is between us and you; so give us a decisive command which we may tell to those at home and by [obeying] which we may enter paradise;” and they asked him about drinks. He commanded them to observe four things and he forbade them four things. He commanded them to put their faith in God alone saying, “Do you know what faith in God alone is?” They replied, “God and His messenger know best.” He said, “It includes the testimony that there is no god but God and that Muhammad is God’s messenger, the observance of the prayer, the payment of zakat, the fast of Ramadan, and your giving a fifth of the booty.” And he forbade them four things:
glazed jars, gourds, hollowed stumps of palm trees, and receptacles smeared with pitch, saying, “Observe them and tell your people at home about them.”

(Bukhari and Muslim, but the wording is Bukhari’s).

ব্যাখ্যা : ‘আবদুল ক্বায়স-এর গোত্র থেকে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দু’বার দু’টি প্রতিনিধি দল এসেছিল। ১ম দলটি এসেছিল ৫ম হিজরী সালে অথবা তার কিছু আগে বা পরে। এ দলের সদস্য ছিল ১৩ জন। তাদের মধ্যে আল্ আশাজ্ আল আসরীও ছিলেন। ২য় দলটি এসেছিল মক্কা বিজয়ের পরে। যে সালটি ‘প্রতিনিধি দলের বৎসর’ নামে খ্যাত সেই সালে। এ দলে সদস্য ছিল ৪০ জন। তাদের মধ্যে আল্ জারূদ আল্ ‘আবদীও ছিলেন। তারা এসে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সম্বোধন করে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মাঝে ও আপনার মাঝে কাফির মুযার গোত্রের অবস্থান, তাই আমরা হারাম মাস ব্যতীত আপনার নিকট আসতে পারি না। এতে বুঝা যায়, তারা রসূলের নিকট আসার পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিল।

এ হাদীসটি ঐ হাদীসের বিপরীত নয় যাতে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমল তোমাদের কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না’’। কেননা এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ব্যতীত শুধুমাত্র ‘আমল জান্নাতে প্রবেশ করাবে না। এ কথা দ্বারা তাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে যারা মনে করে ‘আমলই সবকিছু এবং আল্লাহর রহমাত বলতে কিছু নেই। অথচ ‘আমল করতে পারাটাই আল্লাহর রহমাত যা ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ অসম্ভব।

তাঁরা তাঁকে পানীয় সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করে। অর্থাৎ- বিভিন্ন পান পাত্রের মধ্যে কোন ধরনের পান পাত্রের পানীয় বৈধ? আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ প্রদান করেন। এ হাদীসে দু’টি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়ঃ

(১) আদেশ করা হয়েছে একটির, বাকীগুলো এর ব্যাখ্যা, তা হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ তোমরা জান কি, এক আল্লাহর প্রতি ঈমান কাকে বলে? তাহলে এখানে একটি বিষয়ের উল্লেখ করা হলো, তা হলো ঈমান। অথচ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ দিব। তাহলে আর তিনটি কোথায়?

(২) আরকান পাঁচটি উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম বলেছেন তা চারটি।

প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো ঈমান মূলত একটি হলেও তার শাখা অনুপাতে তা চারটি বলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ- চারটি বস্ত্তর সমন্বয়ের নামই ঈমান।

২য় প্রশ্নের উত্তর এই যে, কথা সাহিত্যিকদের সাধারণ নিয়ম এই যে, তারা যখন কোন বিষয় কথা বলে তখন তার মূল বক্তব্যকেই এর মধ্যে গণ্য করা হয়। তা ব্যতীত আর যা কিছু তা ধর্তব্যের মধ্যে আসে না। এখানে শাহাদাতায়নের উল্লেখ মূল উদ্দেশ্য নয়। কেননা প্রশ্নকারী সম্প্রদায় শাহাদাতায়নের প্রতি আগে থেকেই বিশ্বাসী ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে এমন চারটি বস্ত্তর নির্দেশ দেন যা তাদের জানা ছিল না যে, এগুলো ঈমানের মৌলিক বিষয়। এ কথার সমর্থন মিলে সহীহুল বুখারী ২য় খণ্ডের ৬১২ পৃষ্ঠায় আদব পর্বে বর্ণিত হাদীসে। তাতে উল্লেখ আছে ‘‘আর চারটি বিষয় হলো তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমাযান মাসে সিয়াম পালন করবে এবং গানীমাতের এক-পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে জমা দিবে।’’

এ হাদীসে উল্লিখিত পাত্রসমূহে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবিয তৈরি করতে নিষেধ করার কারণ এই যে, এই পাত্রসমূহের নাবীযে দ্রুত মাদকতা আসে। ফলে কেউ এ পাত্রে নাবিয তৈরি করার ফলে তার অজান্তেই সে মাদক পান করে ফেলতে পারে। পরবর্তীতে সকল প্রকার পাত্রেই নাবিয তৈরি করার অনুমতি প্রদান সাব্যস্ত আছে। তবে মাদক অবশ্যই বর্জনীয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
১৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৮-[১৭] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঘিরে একদল সাহাবা (সাহাবা) বসেছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে উদ্দেশ করে বললেন, আমার হাতে এ কথার বায়’আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার (যিনা) করবে না, নিজেদের সন্তানাদি (অভাবের দরুন) হত্যা করবে না। কারো প্রতি (যিনার) মিথ্যা অপবাদ দিবে না। শারী’আতসম্মত কোন বিষয়ে অবাধ্য হবে না। তোমাদের মধ্যে যারা এ সকল অঙ্গীকার পূর্ণ করতে পারবে, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে পুরস্কার রয়েছে। অপরদিকে যে লোক (শির্ক ব্যতীত) অন্য কোন অপরাধ করবে এবং এজন্য দুনিয়ায় শাস্তি পেয়ে যাবে, তাহলে এ শাস্তি তার গুনাহ মাফ হবার কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। আর যদি কোন গুনাহের কাজ করে, অথচ আল্লাহ তা ঢেকে রাখেন (বা ধরা না পড়ে), এজন্য দুনিয়ায় এর কোন বিচার না হয়ে থাকে, তাহলে এ কাজ আল্লাহর মর্যীর উপর নির্ভর করবে। তিনি ইচ্ছা করলে আখিরাতে তাকে ক্ষমা করে দিবেন অথবা শাস্তিও দিতে পারেন। বর্ণনাকারী (’উবাদাহ্) বলেন, আমরা এ সকল শর্তানুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়’আত করলাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَوْلَهُ عِصَابَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ: بَايَعُونِي عَلَى أَنْ لَا تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا تَسْرِقُوا وَلَا تَزْنُوا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ وَلَا تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ وَلَا تَعْصُوا فِي مَعْرُوفٍ فَمَنْ وَفَى مِنْكُمْ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ بِهِ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا ثُمَّ سَتَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ إِلَى اللَّهِ: إِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ وَإِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ فَبَايَعْنَاهُ عَلَى ذَلِك

وعن عبادة بن الصامت قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم وحوله عصابة من اصحابه بايعوني على ان لا تشركوا بالله شيىا ولا تسرقوا ولا تزنوا ولا تقتلوا اولادكم ولا تاتوا ببهتان تفترونه بين ايديكم وارجلكم ولا تعصوا في معروف فمن وفى منكم فاجره على الله ومن اصاب من ذلك شيىا فعوقب به في الدنيا فهو كفارة له ومن اصاب من ذلك شيىا ثم ستره الله عليه في الدنيا فهو الى الله ان شاء عفا عنه وان شاء عاقبه فبايعناه على ذلك

Chapter - Section 1


‘Ubada b. as-Samit reported that God's messenger said when a number of his Companions were around him, “Swear allegiance to me on the basis that you will not associate anything with God, or steal, or commit fornication, or kill your children, or produce slander which you yourselves have falsely fabricated, or be disobedient concerning what is good. If any of you fulfils his promise, God will undertake his reward but if anyone perpetrates any of these things and is punished for it in this world, it will be an atonement for him. If, however, anyone perpetrates any of those things and God conceals it regarding him, the matter lies in God’s hands; if He wishes He will forgive him, and if He wishes He will punish him.” So we swore allegiance to him on that basis.

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: ইসলামের উপর অটল থাকার অঙ্গীকার লেনদেনের চুক্তি (বায়‘আত) নামে অভিহিত। এর কারণ এই যে, এখানে ক্রয় বিক্রয়ের মতই শর্ত বিদ্যমান। কেননা আনুগত্য করে এর বিনিময়ে সাওয়াব অর্জন, ক্রয় বিক্রয়ের মালের বিনিময়ে মাল অর্জনের চুক্তির মতই। যেমন মহান আল্লাহর বাণী, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মু’মিনদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন।’’ (সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯ঃ ১১১)

অন্যায়ভাবে সকল হত্যাই হারাম। তা’ সত্ত্বেও এ হাদীসে বিশেষভাবে সন্তান হত্যা নিষেধ করা হয়েছে। এজন্য যে, এটা হত্যা ছাড়াও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শামিল। তাই একে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর এজন্য যে, সন্তান হত্যা তৎকালীন সময়ে ব্যাপক ছিল। তখন জীবিত কন্যা সন্তান প্রোথিত করা হত। আর দরিদ্রতার ভয়ে পুত্র সন্তান হত্যা করা হত।

তোমরা তোমাদের হাত ও পায়ের মাঝে অপবাদ রচনা করবে না। এতে এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কোন মহিলা যিনার ফলে সন্তানকে যেন মিথ্যাপ্রাপ্ত তার স্বামীর সন্তান বলে দাবী না করে। পরবর্তীতে পুরুষদের বায়‘আতের ক্ষেত্রে এ শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। তখন এর অর্থ হচ্ছে তুমি নিজ থেকে কোন অপবাদ রচনা করবে না।

মা‘রূফ কাজে আমার অবাধ্য হবে না- যে কাজ আল্লাহর আনুগত্য ও মানবের প্রতি কল্যাণরূপে পরিচিত এবং যে কাজ করতে শারী‘আত আহবান জানিয়েছে এমন সকল কাজকেই মা‘রূফ বলে। এ কথার দ্বারা সতর্ক করা হয়েছে যে, আল্লাহর বিরোধিতা হয় না শুধুমাত্র এমন কাজেই আনুগত্য করা কর্তব্য।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এ হাদীসে তো শুধু নিষিদ্ধ কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আদিষ্ট কাজ উল্লেখ করা হয়নি কেন?

এর জবাবে বলা যায় যে, আদিষ্ট বিষয় একেবারে পরিত্যাগ করা হয়নি বরং তা সংক্ষিপ্তাকারে আমার অবাধ্য হবে না- এ বাক্যের মাধ্যমে বলে দেয়া হয়েছে।

‘‘কোন ব্যক্তি উল্লিখিত বিষয়গুলোতে যদি কোন অপরাধ করে আর আল্লাহ তা গোপন রাখেন তবে তার শাস্তি প্রদান বা ক্ষমা করা আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত। আল্লাহ তাকে শাস্তি দিতে পারেন আবার ক্ষমাও করতে পারেন।’’ এর দ্বারা বুঝা যায় কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের দ্বারা কেউ কাফির হয়ে যায় না। কেননা কাফিরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।

 

হাদীসের শিক্ষাঃ পৃথিবীতে কোন ব্যক্তি অপরাধ করার পর তার ওপর শরী‘আত নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করলে এটা তার গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। ‘আলী (রাঃ) থেকে আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও হাকিমে বর্ণিত হাদীস থেকেও এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
১৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৯-[১৮] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর কিংবা কুরবানীর ঈদের দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং নারীদের নিকট পৌঁছলেন। অতঃপর তাদের উদ্দেশে বললেন, ’’হে নারী সমাজ! তোমরা দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) কর। কেননা আমাকে অবগত করানো হয়েছে যে, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী নারী সমাজেরই হবে।’’ (এ কথা শুনে) তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল! এর কারণ কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’তোমরা অধিক মাত্রায় অভিসম্পাত করে থাক এবং নিজ স্বামীদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে থাক। বুদ্ধি ও দীনদারীতে দুর্বল হবার পরও বিচক্ষণ ও সচেতন পুরুষদের বেওকুফ বানিয়ে দেবার জন্য তোমাদের চেয়ে অধিক পারঙ্গম আমি আর কাউকে দেখিনি।’’

(এ কথা শুনে) নারীরা আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল! বুদ্ধি ও দীনের ব্যাপারে আমাদের কী দুর্বলতা রয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’একজন নারীর সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়?’’ তারা বলল, জি হাঁ! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’এটাই হলো নারীদের বুদ্ধিমত্তার দুর্বলতা। আর নারীরা মাসিক ঋতু অবস্থায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে ও সিয়াম পালন করতে পারে না। এটা কি সত্য নয়?’’ তারা উত্তরে বলেন, হাঁ তা-ই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ’’এটাই হলো তাদের দীনের দুর্বলতা।’’ (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ إِلَى الْمُصَلَّى فَمَرَّ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ فَإِنِي أُرِيتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ فَقُلْنَ وَبِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَذْهَبَ لِلُبِّ الرجل الحازم من إحداكن قُلْنَ وَمَا نُقْصَانُ دِينِنَا وَعَقْلِنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ أَلَيْسَ شَهَادَةُ الْمَرْأَةِ مِثْلَ نِصْفِ شَهَادَةِ الرَّجُلِ قُلْنَ بَلَى قَالَ فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَان عقلهَا أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تَصِلِّ وَلَمْ تَصُمْ قُلْنَ بَلَى قَالَ فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَانِ دِينِهَا

وعن ابي سعيد الخدري قال خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم في اضحى او فطر الى المصلى فمر على النساء فقال يا معشر النساء تصدقن فاني اريتكن اكثر اهل النار فقلن وبم يا رسول الله قال تكثرن اللعن وتكفرن العشير ما رايت من ناقصات عقل ودين اذهب للب الرجل الحازم من احداكن قلن وما نقصان ديننا وعقلنا يا رسول الله قال اليس شهادة المراة مثل نصف شهادة الرجل قلن بلى قال فذلك من نقصان عقلها اليس اذا حاضت لم تصل ولم تصم قلن بلى قال فذلك من نقصان دينها

Chapter - Section 1


Abu Sa'id al-Khudri said that when God’s messenger went out to the place of prayer on the day of sacrifice, or on the day when the fast was broken, he came upon some women and said, "Give alms, you women folk, for I have been shown that you will be the majority of the inhabitants of hell.” They asked, “For what reason, messenger of God?” He replied, “You are greatly given to abuse, and you are ungrateful to your husbands. Among women who are deficient in intelligence and religion I have not seen anyone more able to remove the understanding of a prudent man than one of you.” They asked, “What is the deficiency of our religion and our intelligence, messenger of God?” He replied, “Is not the testimony of a woman equivalent to half the testimony of a man?” They said, “Yes.” Remarking that that pertained to the deficiency of her intelligence, he asked, “Is it not the case that when she menstruates she neither prays nor fasts?” When they replied, “Yes,” he said, “That pertains to the deficiency of her religion.”

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: আল্লাহর রসূলের বাণী, ‘‘আমাকে জাহান্নামের অধিবাসী অধিকাংশ মহিলাকে দেখানো হয়েছে’’। এই দেখার ঘটনা হয়ত মি‘রাজ রজনীতে অথবা সূর্যগ্রহনের সালাতে সংঘটিত হয়েছে, যেমনটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস হতে জানা যায়।

এ হাদীসটি ঐ সমস্ত হাদীসের বিরোধী নয় যাতে বলা হয়েছে, ‘‘জান্নাতে প্রত্যেক পুরুষকে দুনিয়ার মধ্যকার দুজন নারীকে তার স্ত্রী হিসেবে দেয়া হবে।’’ যাতে প্রমাণিত হয় জান্নাতেই নারীদের সংখ্যা বেশী জাহান্নামে নয়। কেননা হতে পারে যে, এই আধিক্য জাহান্নাম হতে গুণাহগারদের বের করার পূর্বে তাতে নারীদের সংখ্যাই বেশী থাকবে। অথবা এমন হতে পারে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন জাহান্নাম দেখানো হয় তখন তাতে নারীদের সংখ্যাই ছিল বেশী।

হাদীসে বর্ণিত الْعَشِيْرَ অর্থ স্বামী। তারা তাদের স্বামীদের সাথে কুফরী করে। তাদের স্বামীর অনুগ্রহ ও সদাচরণকে তারা অস্বীকার করে এবং তাদের জন্য যা করে তা খাটো করে দেখে।

হাদীসে বর্ণিত ‘‘মহিলাদের হায়য চলাকালীন সময়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও রোযা ছেড়ে দেয়া তাদের ধর্মের মধ্যে ঘাটতি রয়েছে বলায় কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে এটা ধর্মের ঘাটতি হলো কি করে? এর জবাবে বলা যেতে পারে যে, দীন, ঈমান ও ইসলাম একই বস্তু। কেননা আনুগত্যকে দীন ও ঈমান বলা হয়। এ থেকে সাব্যস্ত হয় যে, যার ‘ইবাদাত বেশী হয় তার দীন ও ঈমান বৃদ্ধি পায় বা পূর্ণ হয়। পক্ষান্তরে যার ‘ইবাদাত কম হয় তার দীন ও ঈমানে ঘাটতি হয়। হাদীসে তাদের এই ঘাটতিকে দোষের বলা হয়নি। বরং এর দ্বারা তাদের সতর্ক করা হয়েছে, তাদের শাস্তির কারণ বলা হয়েছে তা তাদের কুফরী করাকে তাদের এই ঘাটতিকে নয়।

হাদীসের শিক্ষাঃ

(১) অনুগ্রহ অস্বীকার করা হারাম।

(২) লা‘নাত দেয়া, গালি-গালাজ করা হারাম।

(৩) আল্লাহর সাথে কুফরী ছাড়াও অন্য কোন কাজকে কুফরী বলা বৈধ। তবে এ কুফরী আল্লাহর সাথে কুফরী করার সমতুল্য নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
২০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০-[১৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আদম সন্তান আমাকে মিথ্যাবাদী বানাচ্ছে, অথচ এটা তাদের জন্য অনুচিত। সে আমায় মন্দ বলছে অথচ এটাও তাদের পক্ষে সমীচীন নয়। আমাকে মিথ্যা বলার অর্থ হল- তারা বলে, এমনভাবে আল্লাহ আমাকে (আখিরাতে) অবশ্যই সৃষ্টি করতে পারবেন না ঠিক যেভাবে আল্লাহ আমাকে প্রথম (এ দুনিয়ায়) সৃষ্টি করেছেন। অথচ আমার পক্ষে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা প্রথমবার সৃষ্টি করার তুলনায় অধিকতর সহজ নয় কি? আর আমার ব্যাপারে মন্দ বলার অর্থ হলো, তারা বলে, আল্লাহ নিজের পুত্র বানিয়েছেন, অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে জন্ম দেইনি, আমাকেও কেউ জন্ম দেইনি, আর কেউ আমার সমকক্ষও নয়।[1]

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللَّهُ كَذبَنِي ابْن آدم وَلم يكن لَهُ ذَلِك وَشَتَمَنِي وَلم يكن لَهُ ذَلِك أما تَكْذِيبه إيَّايَ أَن يَقُول إِنِّي لن أُعِيدهُ كَمَا بَدأته وَأما شَتمه إيَّايَ أَن يَقُول اتخذ الله ولدا وَأَنا الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ أَلِدْ وَلَمْ أُولَدْ وَلَمْ يكن لي كُفؤًا أحد (لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفؤًا أحد)
كُفؤًا وكفيئا وكفاء وَاحِد

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الله كذبني ابن ادم ولم يكن له ذلك وشتمني ولم يكن له ذلك اما تكذيبه اياي ان يقول اني لن اعيده كما بداته واما شتمه اياي ان يقول اتخذ الله ولدا وانا الصمد الذي لم الد ولم اولد ولم يكن لي كفوا احد لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا احدكفوا وكفيىا وكفاء واحد

Chapter - Section 1


Abu Huraira reported that God’s messenger declared that God said, “The son of Adam has accused me of falsehood, which he had no right to do; and he has reviled me, which he had no right to do. His accusation of falsehood is in his saying, ‘He will not bring me back to life as He created me’, whereas the original act of creation is no easier for me than to bring him back to life. His reviling of me is in his saying, ‘God has taken a son’, whereas I am the One, to whom men repair, who has not begotten and has not been begotten, and to whom no one is equal.”

Bukhari transmitted it.

ব্যাখ্যা: এ জাতীয় হাদীসকে হাদীসে কুদসী বলা হয়। হাদীসে কুদসী ও কুরআনের মধ্যে পার্থক্য এই যে, হাদীসে কুদসীতে নাবীগণ ইলহাম, স্বপ্ন অথবা মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) ভাষার মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ অবগত হন। অতঃপর ভাষায় তার মর্ম তার উম্মাতদেরকে অবহিত করেন।

সরাসরি আল্লাহর যে বাণী নিয়ে জিবরীল (আঃ) স্বয়ং অবতীর্ণ হন এবং তা আল্লাহর ভাষায়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছিয়ে দেন। কুরআন মুতাওয়াতির, হাদীসে কুদসী তা নয়- হাদীসে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে। পুনরুত্থান বাস্তব এবং তা সম্ভব। কেননা সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও আকৃতির উপর শরীরের গঠন নির্ভরশীল তার অস্তিত্ব যদি অসম্ভব হত তাহলে শরীরের অস্তিত্ব পাওয়া যেত না অথচ শরীরের অস্তিত্ব বিদ্যমান। প্রথমবার যার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব হয়েছে দ্বিতীয়বার তার পক্ষে তা অসম্ভব নয়।

‘‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’’ এটা তার জন্য গালি এজন্য যে, এতে তার ত্রুটি ব্যক্ত হয়েছে। কেননা সাধারণত সন্তানের জন্ম হয় তার মা থেকে। মা সন্তান গর্ভে ধারণ করে, এরপর প্রসব করে। এর জন্য আগে বিয়ের প্রয়োজন হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা এসব কিছু থেকে পবিত্র।

‘‘আমার সমকক্ষ কেউ নেই’’ এর দ্বারা সকল প্রকার সমকক্ষতাকে অস্বীকার করা হয়েছে। পিতা না হওয়া স্ত্রী না থাকা এর অন্তর্ভুক্ত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
২১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১-[২০] আর ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর অপর বর্ণনায় আছে, ’’আর তার আমাকে মন্দ বলার’’ অর্থ হলো এ কথা বলা যে, আল্লাহর সন্তান আছে, অথচ আমি স্ত্রী ও পুত্র হতে পবিত্র। (বুখারী)[1]

الفصل الاول

وَفِي رِوَايَة عَن ابْنِ عَبَّاسٍ: وَأَمَّا شَتْمُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ: لِي وَلَدٌ وَسُبْحَانِي أَنْ أَتَّخِذَ صَاحِبَةً أَوْ وَلَدًا

وفي رواية عن ابن عباس واما شتمه اياي فقوله لي ولد وسبحاني ان اتخذ صاحبة او ولدا

Chapter - Section 1


A version from Ibn ‘Abbas has:
“His reviling of me is his statement that I have a son. Far be it from me that I should have a consort or a son.”

Bukhari transmitted it.

ব্যাখ্যা : (বলা হয়ে থাকে) আমার সন্তান আছে অথচ আমার সত্তাকে আমি পবিত্র রেখেছি সন্তান ও স্ত্রী গ্রহণ করা থেকে। এ হাদীসের সাথে কিতাবুল ঈমানের সম্পর্ক এই যে, হাশর বা পুনরুত্থান অস্বীকার করা এবং আল্লাহর সন্তান আছে দাবী করা হাদীসে জিবরীলে বর্ণিত ঈমানের বিপরীত। তাই হাদীসটি এ পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৯৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 পরের পাতা »