১৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৮-[১৭] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঘিরে একদল সাহাবা (সাহাবা) বসেছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে উদ্দেশ করে বললেন, আমার হাতে এ কথার বায়’আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার (যিনা) করবে না, নিজেদের সন্তানাদি (অভাবের দরুন) হত্যা করবে না। কারো প্রতি (যিনার) মিথ্যা অপবাদ দিবে না। শারী’আতসম্মত কোন বিষয়ে অবাধ্য হবে না। তোমাদের মধ্যে যারা এ সকল অঙ্গীকার পূর্ণ করতে পারবে, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে পুরস্কার রয়েছে। অপরদিকে যে লোক (শির্ক ব্যতীত) অন্য কোন অপরাধ করবে এবং এজন্য দুনিয়ায় শাস্তি পেয়ে যাবে, তাহলে এ শাস্তি তার গুনাহ মাফ হবার কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। আর যদি কোন গুনাহের কাজ করে, অথচ আল্লাহ তা ঢেকে রাখেন (বা ধরা না পড়ে), এজন্য দুনিয়ায় এর কোন বিচার না হয়ে থাকে, তাহলে এ কাজ আল্লাহর মর্যীর উপর নির্ভর করবে। তিনি ইচ্ছা করলে আখিরাতে তাকে ক্ষমা করে দিবেন অথবা শাস্তিও দিতে পারেন। বর্ণনাকারী (’উবাদাহ্) বলেন, আমরা এ সকল শর্তানুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়’আত করলাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]

الفصل الاول

وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَوْلَهُ عِصَابَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ: بَايَعُونِي عَلَى أَنْ لَا تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا تَسْرِقُوا وَلَا تَزْنُوا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ وَلَا تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ وَلَا تَعْصُوا فِي مَعْرُوفٍ فَمَنْ وَفَى مِنْكُمْ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ بِهِ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا ثُمَّ سَتَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ إِلَى اللَّهِ: إِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ وَإِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ فَبَايَعْنَاهُ عَلَى ذَلِك

وعن عبادة بن الصامت قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم وحوله عصابة من اصحابه بايعوني على ان لا تشركوا بالله شيىا ولا تسرقوا ولا تزنوا ولا تقتلوا اولادكم ولا تاتوا ببهتان تفترونه بين ايديكم وارجلكم ولا تعصوا في معروف فمن وفى منكم فاجره على الله ومن اصاب من ذلك شيىا فعوقب به في الدنيا فهو كفارة له ومن اصاب من ذلك شيىا ثم ستره الله عليه في الدنيا فهو الى الله ان شاء عفا عنه وان شاء عاقبه فبايعناه على ذلك

Chapter - Section 1


‘Ubada b. as-Samit reported that God's messenger said when a number of his Companions were around him, “Swear allegiance to me on the basis that you will not associate anything with God, or steal, or commit fornication, or kill your children, or produce slander which you yourselves have falsely fabricated, or be disobedient concerning what is good. If any of you fulfils his promise, God will undertake his reward but if anyone perpetrates any of these things and is punished for it in this world, it will be an atonement for him. If, however, anyone perpetrates any of those things and God conceals it regarding him, the matter lies in God’s hands; if He wishes He will forgive him, and if He wishes He will punish him.” So we swore allegiance to him on that basis.

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: ইসলামের উপর অটল থাকার অঙ্গীকার লেনদেনের চুক্তি (বায়‘আত) নামে অভিহিত। এর কারণ এই যে, এখানে ক্রয় বিক্রয়ের মতই শর্ত বিদ্যমান। কেননা আনুগত্য করে এর বিনিময়ে সাওয়াব অর্জন, ক্রয় বিক্রয়ের মালের বিনিময়ে মাল অর্জনের চুক্তির মতই। যেমন মহান আল্লাহর বাণী, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মু’মিনদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন।’’ (সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯ঃ ১১১)

অন্যায়ভাবে সকল হত্যাই হারাম। তা’ সত্ত্বেও এ হাদীসে বিশেষভাবে সন্তান হত্যা নিষেধ করা হয়েছে। এজন্য যে, এটা হত্যা ছাড়াও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শামিল। তাই একে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর এজন্য যে, সন্তান হত্যা তৎকালীন সময়ে ব্যাপক ছিল। তখন জীবিত কন্যা সন্তান প্রোথিত করা হত। আর দরিদ্রতার ভয়ে পুত্র সন্তান হত্যা করা হত।

তোমরা তোমাদের হাত ও পায়ের মাঝে অপবাদ রচনা করবে না। এতে এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কোন মহিলা যিনার ফলে সন্তানকে যেন মিথ্যাপ্রাপ্ত তার স্বামীর সন্তান বলে দাবী না করে। পরবর্তীতে পুরুষদের বায়‘আতের ক্ষেত্রে এ শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। তখন এর অর্থ হচ্ছে তুমি নিজ থেকে কোন অপবাদ রচনা করবে না।

মা‘রূফ কাজে আমার অবাধ্য হবে না- যে কাজ আল্লাহর আনুগত্য ও মানবের প্রতি কল্যাণরূপে পরিচিত এবং যে কাজ করতে শারী‘আত আহবান জানিয়েছে এমন সকল কাজকেই মা‘রূফ বলে। এ কথার দ্বারা সতর্ক করা হয়েছে যে, আল্লাহর বিরোধিতা হয় না শুধুমাত্র এমন কাজেই আনুগত্য করা কর্তব্য।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এ হাদীসে তো শুধু নিষিদ্ধ কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আদিষ্ট কাজ উল্লেখ করা হয়নি কেন?

এর জবাবে বলা যায় যে, আদিষ্ট বিষয় একেবারে পরিত্যাগ করা হয়নি বরং তা সংক্ষিপ্তাকারে আমার অবাধ্য হবে না- এ বাক্যের মাধ্যমে বলে দেয়া হয়েছে।

‘‘কোন ব্যক্তি উল্লিখিত বিষয়গুলোতে যদি কোন অপরাধ করে আর আল্লাহ তা গোপন রাখেন তবে তার শাস্তি প্রদান বা ক্ষমা করা আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত। আল্লাহ তাকে শাস্তি দিতে পারেন আবার ক্ষমাও করতে পারেন।’’ এর দ্বারা বুঝা যায় কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের দ্বারা কেউ কাফির হয়ে যায় না। কেননা কাফিরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।

 

হাদীসের শিক্ষাঃ পৃথিবীতে কোন ব্যক্তি অপরাধ করার পর তার ওপর শরী‘আত নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করলে এটা তার গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। ‘আলী (রাঃ) থেকে আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও হাকিমে বর্ণিত হাদীস থেকেও এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان)