তিন রাক‘আত বিতর একটানা পড়তে হবে। মাঝখানে কোন বৈঠক করা যাবে না। এটাই সুন্নাত। কিন্তু অধিকাংশ মুছল্লী মাঝখানে বৈঠক করে ও তাশাহ্হুদ পড়ে। মুহিউদ্দ্বীন খান লিখেছেন, ‘প্রথম বৈঠকে কেবল আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দাঁড়িয়ে যাবে। দুরূদ পড়বে না এবং সালাম ফিরাবে না। যেমন মাগরিবের নামাযে করা হয়, তেমনি করবে’।[1] অথচ উক্ত আমলের পক্ষে কোন ছহীহ দলীল নেই।
(أ) عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ الْوِتْرُ ثَلاثُ رَكَعَاتٍ كَصَلاةِ الْمَغْرِبِ.
(ক) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, মাগরিবের ছালাতের ন্যায় বিতরের ছালাত তিন রাক‘আত।[2]
তাহক্বীক্ব : ইবনুল জাওযী বলেন, এই হাদীছ ছহীহ নয়।[3]
(ب) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ كَانَ يَقُوْلُ صَلَاةُ الْمَغْرِبِ وِتْرُ صَلَاةِ النَّهَارِ
(খ) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা) বলেন, মাগরিবের ছালাত দিনের বিতর ছালাত।[4]
তাহক্বীক্ব : অনেকে উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বিতর ছালাত মাগরিব ছালাতের ন্যায় প্রমাণ করতে চান। অথচ তা ত্রুটিপূর্ণ। বর্ণনাটি কখনো মারফূ‘ সূত্রে এসেছে, কখনো মাওকূফ সূত্রে এসেছে। তবে এর সনদ যঈফ। মুহাদ্দিছ শু‘আইব আরনাঊত বলেন, ঐ অংশটুকু ছহীহ নয়।[5]
(ج) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ وِتْرُ اللَّيْلِ ثَلاَثٌ كَوِتْرِ النَّهَارِ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ.
(গ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, রাত্রির তিন রাক‘আত বিতর দিনের বিতরের ন্যায়। যেমন মাগরিবের ছালাত।[6]
তাহক্বীক্ব : ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া যাকে ইবনু আবীল হাওয়াজিব বলে। সে যঈফ। সে আ‘মাশ ছাড়া আর কারো নিকট থেকে মারফূ হাদীছ বর্ণনা করেনি।[7] ইমাম বায়হাক্বী বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া ইবনু হাযিব কূফী আ‘মাশ থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেছে। কিন্তু সে যঈফ। তার বর্ণনা আ‘মাশ থেকে বর্ণিত অন্যান্য বর্ণনার বিরোধিতা করে।[8] এছাড়াও ইমাম দারাকুৎনী উক্ত বর্ণনার পূর্বে তার বিরোধী ছহীহ হাদীছ উল্লেখ করেছেন। সেখানে মাগরিবের মত করে বিতর পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ لاَ تُوْتِرُوْا بِثَلاَثٍ أَوْتِرُوْا بِخَمْسٍ أَوْ سَبْعٍ وَلاَ تُشَبِّهُوْا بِصَلاَةِ الْمَغْرِبِ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা (মাগরিবের ছালাতের ন্যায়) তিন রাক‘আত বিতর পড় না, পাঁচ, সাত রাক‘আত পড়। আর মাগরিবের ছালাতের ন্যায় আদায় কর না’। ইমাম দারাকুৎনী উক্ত হাদীছকে ছহীহ বলেছেন।[9]
বিশেষ জ্ঞাতব্য : ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ ও ‘নবীজীর নামায’ শীর্ষক বইয়ে যঈফ হাদীছটি দ্বারা দলীল পেশ করা হয়েছে। কিন্তু ছহীহ হাদীছটি সম্পর্কে কোন কিছু বলা হয়নি। এটা দুঃখজনক।[10] ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন,
لَمْ أَجِدْ حَدِيْثاً مَرْفُوْعاً صَحِيْحاً صَرِيْحاً فِىْ إِثْبَاتِ الْجُلُوْسِ فِى الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ عِنْدَ الْإِيْتَارِ بِثَلاَثٍ
‘তিন রাক‘আত বিতরে দ্বিতীয় রাক‘আতে বৈঠক করার পক্ষে আমি কোন মারফূ ছহীহ দলীল পাইনি’।[11]
[2]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৯৩১১; মাজমাউল বাহরাইন হা/১০৮৭।
[3]. -هَذَا حَدِيْثٌ لاَيَصِحُّ তানক্বীহ, পৃঃ ৪৪৭।
[4]. মালেক, মুওয়াত্ত্বা হা/২৫৪।
[5]. তাহক্বীক্ব মুসনাদে আহমাদ হা/৫৫৪৯ - صحيح دون قوله " صلاة المغرب وتر صلاة النهار فأوتروا صلاة الليل " فقد رواه عدة موقوفا।
[6]. দারাকুৎনী হা/১৬৭২; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৯৩০৯ ও ৯৩১০; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/৩১।
[7]. يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا هَذَا يُقَالُ لَهُ ابْنُ أَبِى الْحَوَاجِبِ ضَعِيْفٌ. وَلَمْ يَرْوِهِ عَنِ الأَعْمَشِ مَرْفُوعًا غَيْرُهُ -সুনানু দারাকুৎনী হা/১৬৭২; তানক্বীহ, পৃঃ ৪৪৭।
[8]. وقد رفعه يحيى ابن زكريا بن ابي الحاجب الكوفي عن الاعمش وهو ضعيف وروايته تخالف رواية الجماعة عن الاعمش -বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/৩১।
[9]. দারাকুৎনী ২/২৪ পৃঃ, সনদ ছহীহ كُلُّهُمْ ثِقَاتٌ; ত্বাহাবী হা/১৭৩৯ لَا تُوتِرُوْا بِثَلَاثِ رَكَعَاتٍ تَشَبَّهُوْا بِالْمَغْرِبِ ।
[10]. মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ৩২৪; নবীজীর নামায, পৃঃ ২৪৯।
[11]. মির‘আতুল মাফাতীহ হা/১২৬২-এর আলোচনা দ্রঃ।