عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّى مِنَ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى وَيُوْتِرُ بِرَكْعَةٍ.
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) রাত্রে দুই দুই রাক‘আত করে ছালাত আদায় করতেন এবং এক রাক‘আত বিতর পড়তেন।[1] রাসূল (ছাঃ) এক রাক‘আত বিতর পড়ার নির্দেশও দিয়েছেন। যেমন-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الْوِتْرُ رَكْعَةٌ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ.
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বিতর এক রাক‘আত শেষ রাত্রে’।[2]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُوْلَ اللهِ عَنْ صَلَاةِ اللَّيْلِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَام صَلَاةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى فَإِذَا خَشِيَ أَحَدُكُمْ الصُّبْحَ صَلَّى رَكْعَةً وَاحِدَةً تُوْتِرُ لَهُ مَا قَدْ صَلَّى.
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বিতর ছালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাত্রির ছালাত দুই দুই রাক‘আত করে। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন সকাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করবে, তখন সে যেন এক রাক‘আত পড়ে নেয়। তাহলে সে এতক্ষণ যা পড়েছে তার জন্য সেটা বিতর হয়ে যাবে’।[3]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَاةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى وَالْوِتْرُ رَكْعَةٌ وَاحِدَةٌ.
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘রাত্রির ছালাত দুই দুই রাক‘আত। আর বিতর এক রাক‘আত’।[4]
عَنْ أَبِىْ أَيُّوْبَ الأَنْصَارِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الْوِتْرُ حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوْتِرَ بِخَمْسٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوْتِرَ بِثَلاَثٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوْتِرَ بِوَاحِدَةٍ فَلْيَفْعَلْ.
আবু আইয়ুব আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বিতর পড়া প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর বিশেষ কর্তব্য। সুতরাং যে পাঁচ রাক‘আত পড়তে চায়, সে যেন তাই পড়ে। আর যে তিন রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তা পড়ে এবং যে এক রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তাই পড়ে।[5]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ إِنَّ اللهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ فَأَوْتِرُوْا يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ বিজোড়। তিনি বিজোড়কে পসন্দ করেন। সুতরাং হে কুরআনের অনুসারীরা! তোমরা বিতর পড়’।[6]
সুধী পাঠক! উপরিউক্ত হাদীছগুলো থাকতে কেন বলা হয় যে, এক রাক‘আত কোন ছালাত নেই? সর্বশেষ হাদীছটিতে সরাসরি আল্লাহর সাথে তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ এক বিজোড়, না তিন, না পাঁচ বিজোড় তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? হাদীছের গ্রন্থগুলো বিভিন্ন মাদরাসায় পড়ানো হয়, বরকতের জন্য ‘খতমে বুখারী’ নামে লোক দেখানো অনুষ্ঠানও করা হয়। কিন্তু উক্ত হাদীছগুলো কি তাদের চোখে পড়ে না? এটা অবশ্যই মাযহাবী নীতিকে ঠিক রাখার অপকৌশল মাত্র। রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছকে যদি এভাবে অবজ্ঞা ও গোপন করা হয়, তবে ক্বিয়ামতের মাঠে কে উদ্ধার করবে? যে সমস্ত ব্যক্তি ও মাযহাবের পক্ষে ওকালতি করা হচ্ছে তারা কি বিচারের দিন কোন উপকারে আসবে?
ঢাকার ‘জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া’-এর শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মতিন ‘দলিলসহ নামাযের মাসায়েল’ বইয়ে বিতর ছালাত সম্পর্কে ৯৮-১৩১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অনেক আলোচনা করেছেন। ছলে বলে কৌশলে মিথ্যা ও উদ্ভট তথ্য দিয়ে প্রচলিত তিন রাক‘আত বিতরকে প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। আর এক রাক‘আত বিতরের হাদীছগুলো সম্পূর্ণই আড়াল করেছেন। একজন সচেতন পাঠক পড়লেই বুঝতে পারবেন কিভাবে তিনি প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন। দুনিয়াতে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ গোপন করলেও পরকালে তাঁর কথা ঠিকই মনে পড়বে। কিন্তু কোন লাভ হবে কি? আল্লাহ বলেন, ‘যালিম সেদিন তার হাত দুইটি দংশন করবে আর বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের পথে চলতাম। হায়! দুর্ভোগ আমার, অমুককে যদি সাথী হিসাবে গ্রহণ না করতাম। আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল- আমার নিকট বিধান আসার পর। শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক’ (ফুরক্বান ২৭-২৯)। অতএব লেখকের চিন্তা করা উচিৎ তিনি কাকে অনুসরণ করে পথ চলছেন!
[2]. ছহীহ মুসলিম হা/১৭৯৩-৯৯ (৭৫২), ১ম খন্ড, পৃঃ ২৫৭, (ইফাবা হা/১৬২৭-১৬৩৩), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়-৭, ‘রাত্রির ছালাত দুই দুই রাক‘আত’ অনুচ্ছেদ-২০; মিশকাত হা/১২৫৫, পৃঃ ১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৮৬, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৩১।
[3]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; ছহীহ বুখারী হা/৯৯০, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৫, (ইফাবা হা/৯৩৭, ২/২২৫ পৃঃ), ‘বিতর ছালাত’ অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-১; ছহীহ মুসলিম হা/১৭৮২, ১৭৮৪, ১৭৮৫, ১৭৮৬, ১/২৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৬১৮-১৬২১); মিশকাত হা/১২৫৪, পৃঃ ১১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৮৫, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৩০।
[4]. ছহীহ নাসাঈ হা/১৬৯৩, ১/১৯০ পৃঃ, ‘রাতের ছালাত’ অধ্যায়, ‘এক রাক‘আত বিতর’ অনুচ্ছেদ।
[5]. আবুদাঊদ হা/১৪২২, ১/২০১ পৃঃ; নাসাঈ হা/১৭১২, ১/১৯২ পৃঃ; ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৪১১; মিশকাত হা/১২৬৫, পৃঃ ১১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৯৬, ৩/১৩৫ পৃঃ, ‘বিতর ছালাত’ অনুচ্ছেদ।
[6]. আবুদাঊদ হা/১৪১৬, ১/২০০ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/১১৭০; তিরমিযী হা/৪৫৩; মিশকাত হা/১২৬৬, পৃঃ ১১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৯৭, ৩/১৩৫ পৃঃ।