(أ) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَقْعُدُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.
(ক) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি শেষের রাক‘আতে ব্যতীত বসতেন না।[1]
বিশেষ সতর্কতা : মুস্তাদরাকে হাকেমে বর্ণিত لاَ يَقْعُدُ (বসতেন না) শব্দকে পরিবর্তন করে পরবর্তী ছাপাতে لاَيُسَلِّمُ(সালাম ফিরাতেন না) করা হয়েছে। কারণ পূর্ববর্তী সকল মুহাদ্দিছ لاَ يَقْعُدُ দ্বারাই উল্লেখ করেছেন।[2] আরো দুঃখজনক হল- আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) নিজে স্বীকার করেছেন যে, আমি মুস্তাদরাক হাকেমের তিনটি কপি দেখেছি কিন্তু কোথাও لاَيُسَلِّمُ (সালাম ফিরাতেন না) শব্দটি পাইনি। তবে হেদায়ার হাদীছের বিশ্লেষক আল্লামা যায়লাঈ উক্ত শব্দ উল্লেখ করেছেন। আর যায়লাঈর কথাই সঠিক।[3]
সুধী পাঠক! ইমাম হাকেম (৩২১-৪০৫ হিঃ) নিজে হাদীছটি সংকলন করেছেন আর তিনিই সঠিকটা জানেন না!! বহুদিন পরে এসে যায়লাঈ (মৃঃ ৭৬২ হিঃ) সঠিকটা জানলেন? অথচ ইমাম বায়হাক্বী (৩৮৪-৪৫৮ হিঃ)ও একই সনদে উক্ত হাদীছ উল্লেখ করেছেন। সেখানে একই শব্দ আছে। অর্থাৎ لاَ يَقْعُدُ (বসতেন না) আছে। একেই বলে মাযহাবী গোঁড়ামী। অন্ধ তাকলীদকে প্রাধান্য দেয়ার জন্যই হাদীছের শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে।
(ب) عَنِ بْنِ طَاوُوسَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّهُ كاَنَ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَقْعُدُ بَيْنَهُنَّ.
(খ) ইবনু ত্বাঊস তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। মাঝে বসতেন না।[4]
(ج) عَنْ قَتَادَةَ قال كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَقْعُدُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.
(গ) ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। শেষের রাক‘আতে ছাড়া তিনি বসতেন না।[5]
(د) عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُوْتِرُ بِثَلاَثِ رَكَعَاتٍ كَانَ يَقْرَأُ فِى الأُولَى بِ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى) وَفِى الثَّانِيَةِ بِ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ) وَفِى الثَّالِثَةِ بِ (قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ) وَيَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوْعِ فَإِذَا فَرَغَ قَالَ عِنْدَ فَرَاغِهِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ يُطِيْلُ فِىْ آخِرِهِنَّ.
(ঘ) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। প্রথম রাক‘আতে ‘সাবিবহিসমা রাবিবকাল আ‘লা’ দ্বিতীয় রাক‘আতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফেরূন’ এবং তৃতীয় রাক‘আতে ‘কুল হুওয়াল্লা-হুল আহাদ’ পড়তেন এবং তিনি রুকূর পূর্বে কুনূত পড়তেন। অতঃপর যখন তিনি শেষ করতেন তখন শেষে তিনবার বলতেন ‘সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’। শেষবার টেনে বলতেন।[6] উক্ত হাদীছও প্রমাণ করে রাসূল (ছাঃ) একটানা তিন রাক‘আত পড়েছেন, মাঝে বৈঠক করেননি।
(ه) عَنْ عَطاَءَ أَنَّهُ كَانَ يُوْتِرُ بِثَلاَثٍ لاَ يَجْلِسُ فِيْهِنَّ وَ لاَ يَتَشَهَّدُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.
(ঙ) আত্বা (রাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন কিন্তু মাঝে বসতেন না এবং শেষ রাক‘আত ব্যতীত তাশাহহুদ পড়তেন না।[7] এমন কি পাঁচ রাক‘আত পড়লেও রাসূল (ছাঃ) এক বৈঠকে পড়েছেন।
(و) عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِىَّ كَانَ يُوْتِرُ بِخَمْسٍ وَلاَ يَجْلِسُ إِلاَّ فِىْ آخِرِهِنَّ.
(চ) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) পাঁচ রাক‘আত বিতর পড়তেন। কিন্তু তিনি শেষ রাক‘আতে ছাড়া বসতেন না।[8]
সুধী পাঠক! যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন তারাই সমাধান পেশ করেছেন। সুতরাং তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে মাঝে তাশাহ্হুদ পড়া যাবে না; বরং একটানা তিন রাক‘আত পড়তে হবে। তারপর তাশাহ্হুদ পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।
জ্ঞাতব্য : তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে দুই রাক‘আত পড়ে সালাম ফিরিয়ে পুনরায় এক রাক‘আত পড়া যায়। তিন রাক‘আত বিতর পড়ার এটিও একটি উত্তম পদ্ধতি।[9] উল্লেখ্য যে, তিন রাক‘আত বিতরের মাঝে সালাম দ্বারা পার্থক্য করা যাবে না মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।[10]
[2]. হাকেম হা/১১৪০; ফাৎহুল বারী হা/৯৯৮-এর আলোচনা দ্রঃ; আল-আরফুশ শাযী ২/১৪ পৃঃ।
[3]. আল-আরফুয যাশী শারহু সুনানিত তিরমিযী ২/১৪- وأما أنا فوجدت ثلاث نسخ للمستدرك وما وجدت فيها ما أخرج الزيلعي بلفظ لا يسلم وإنما وجدت فيها وكان لا يقعد وظني الغالب أن لفظ لا يسلم لا بد من أن يكون في مستدرك الحاكم ، فإن الزيلعي متثبت في النقل।
[4]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৪৬৬৯, ৩য় খন্ড, পৃঃ ২৭।
[5]. মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৪৭১, ৪/২৪০; বিস্তারিত দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪১৮-এর আলোচনা।
[6]. নাসাঈ হা/১৬৯৯, ১/১৯১ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[7]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/১১৪২।
[8]. নাসাঈ হা/১৭১৭, ১/১৯৩ পৃঃ, সনদ ছহীহ; শারহুস সুন্নাহ ১/২৩১ পৃঃ।
[9]. বুখারী হা/৯৯১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৫, (ইফাবা হা/৯৩৭, ২/২২৫); সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৯৬২; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৪২০-এর আলোচনা দ্রঃ, ২/১৪৮ পৃঃ; দেখুনঃ আলবানী, ক্বিয়ামু রামাযান, পৃঃ ২২; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৬৮৭১, ৬৮৭৪- عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُوْتِرُ بِرَكْعَةٍ وَكَانَ يَتَكَلَّمُ بَيْنَ الرَّكْعَتَيْنِ وَالرَّكْعَةِ।
[10]. ইওয়াউল গালীল হা/৪২১, ২/১৫০ পৃঃ; আহমাদ হা/২৫২৬৪।