আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য আনন্দ ও খুশির দিন হিসাবে ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহা নামক দু’টি দিন নির্ধারণ করেছেন। ঈদুল ফিৎরের খুশির দিনে ধনীদের সাথে গরীবরাও যেন সমানভাবে আনন্দ ও খুশিতে শরীক হতে পারে সেজন্য মুসলমানদের উপর যাকাতুল ফিৎর ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى ‘অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে, যে যাকাত (যাকাতুল ফিতর) আদায় করবে’ (আ‘লা ৮৭/১৪)।
হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِيْنِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِىَ زَكَاةٌ مَقْبُوْلَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِىَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ-
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর ফরয করেছেন ছিয়াম পালনকারীর অসারতা ও যৌনাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাদ্য স্বরূপ। যে ব্যক্তি তা ছালাতের পূর্বে (ঈদের ছালাত) আদায় করবে তা যাকাত হিসাবে গ্রহণীয় হবে। আর যে ব্যক্তি ছালাতের পরে আদায় করবে তা (সাধারণ) ছাদাক্বার মধ্যে গণ্য হবে’।[1] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما قَالَ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ، وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ-
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর হিসাবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-দাস প্রত্যেকের উপর এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ যব ফরয করেছেন এবং তিনি ছালাতের উদ্দেশ্যে লোকেদের বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন’।[2]
[2]. বুখারী হা/১৫০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিৎর’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫।
যাকাতুল ফিৎর ফরয হওয়ার জন্য নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া শর্ত নয়। কেননা যাকাতুল ফিৎর ব্যক্তির উপর ফরয; মালের উপর ফরয নয়। মালের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। মালের কম-বেশীর কারণে এর পরিমাণ কম-বেশী হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর হিসাবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-ক্রীতদাস প্রত্যেকের উপর এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ জব ফরয করেছেন।[1]
অত্র হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছোট ও ক্রীতদাসের উপর যাকাতুল ফিৎর ফরয বলে উল্লেখ করেছেন। যাকাতুল ফিৎর ফরয হওয়ার জন্য নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া শর্ত হলে, ছোট ও ক্রীতদাসের উপর যাকাত ফরয হত না। কেননা সবেমাত্র জন্ম গ্রহণ করা সন্তানও ছোটদের অন্তর্ভুক্ত, যার নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। অনুরূপভাবে দাস সাধারণত নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় না। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দাসের উপর যাকাতুল ফিৎর ব্যতীত তার সম্পদের যাকাত ফরয করেননি। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيْسَ فِيْ الْعَبْدِ صَدَقَةٌ إِلاَّ صَدَقَةُ الْفِطْرِ-
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছাদাক্বাতুল ফিৎর ব্যতীত ক্রীতদাসের উপর কোন ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) নেই’।[2]
এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ধনী-গরীব সকলের উপর যাকাতুল ফিৎর ফরয বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
أَدُّوْا عَنْ كُلِّ إِنْسَانٍ صَاعًا مِنْ بُرٍّ عَنِ الصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى وَالْغَنِىِّ وَالْفَقِيْرِ فَأَمَّا الْغَنِىُّ فَيُزَكِّيْهِ اللهُ وَأَمَّا الْفَقِيْرُ فَيَرُدُّ اللهُ عَلَيْهِ أَكْثَرَ مِمَّا أَعْطَى-
‘মানুষের মধ্যে প্রত্যেক ছোট-বড়, পুরুষ-নারী, ধনী-গরীবের নিকট থেকে এক ছা‘ গম (যাকাতুল ফিৎর) আদায় কর। আর ধনী, যাকে আল্লাহ এর বিনিময়ে পবিত্র করবেন। আর ফকীর, যাকে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার প্রদানকৃত যাকাতুল ফিৎরের অধিক ফিরিয়ে দিবেন’।[3]
[2]. মুসলিম হা/৯৮২; মিশকাত হা/১৭৯৫।
[3]. দারাকুতনী হা/২১২৭।
মুসলমানদের উপর যেমন যাকাতুল ফিৎর ফরয করা হয়েছে। তেমনি তা কি দ্বারা আদায় করবে তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَدُّوْا صَاعًا مِنْ طَعَامٍ فِي الْفِطْرِ ‘তোমরা ছাদাক্বাতুল ফিৎর আদায় কর এক ছা‘ খাদ্যদ্রব্য দ্বারা’।[1]
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ رضى الله عنه يَقُوْلُ كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيْبٍ-
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা এক ছা‘ ত্বা‘আম বা খাদ্য অথবা এক ছা‘ যব অথবা এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ পনির অথবা এক ছা‘ কিশমিশ থেকে যাকাতুল ফিৎর বের করতাম’। [2]
অত্র হাদীছে যাকাতুল ফিৎর প্রদানের ব্যাপারে বিভিন্ন খাদ্যশস্যের নাম সহ সাধারণভাবে ‘ত্বা‘আম’ বা খাদ্যের কথা এসেছে, যা দ্বারা পৃথিবীর ঐ সকল খাদ্যশস্যকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রধান খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। হাদীছে সরাসরি চাউলের কথা উল্লেখ না থাকলেও তা যে ‘ত্বা‘আম’ বা খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ধান খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা ধান মানুষের সরাসরি খাদ্য নয়। যবের উপরে ধানের ক্বিয়াস করা যাবে না। কেননা যব খোসা সহ পিষে খাওয়া যায়। কিন্তু ধান খোসা সহ পিষে খাওয়া যায় না। সুতরাং বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য হিসাবে চাউল দ্বারা ফিৎরা প্রদান করাই শরী‘আত সম্মত।
[2]. বুখারী হা/১৫০৬; মুসলিম হা/৯৮৫; মিশকাত হা/১৮১৬।
টাকা দ্বারা ফিৎরা আদায়ের রীতি ইসলামের সোনালী যুগে ছিল না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম টাকা দ্বারা ফিৎরা আদায় করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা বাজারে চালু থাকা সত্ত্বেও তিনি খাদ্য বস্ত্ত দ্বারা ফিৎরা আদায় করেছেন, আদায় করতে বলেছেন এবং বিভিন্ন শস্যের কথা হাদীছে উল্লেখ রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা এক ছা‘ ত্বা‘আম বা খাদ্য, অথবা এক ছা যব, অথবা এক ছা খেজুর, অথবা এক ছা পনির, অথবা এক ছা কিশমিশ থেকে যাকাতুল ফিৎর বের করতাম।[1] ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর হিসাবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-দাস প্রত্যেকের উপর এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ যব ফরয করেছেন এবং তিনি ছালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।[2]
অতএব খাদ্যশস্য দ্বারা ‘যাকাতুল ফিৎর’ আদায় করাই ইসলামী শরী‘আতের বিধান। টাকা-পয়সা দ্বারা ফিৎরা প্রদান করা তার পরিপন্থী। ছায়েম নিজে যা খান, তা থেকেই ফিৎরা দানের মধ্যে অধিক মহববত নিহিত থাকে। যে ব্যক্তি ২০ টাকা কেজি দরের চাউল খান সে উক্ত মানের চাউল এক ছা‘ ফিৎরা দিবেন। আর যে ব্যক্তি ৫০ টাকা কেজি দরের চাউল খান সে উক্ত মানের চাউল এক ছা‘ ফিৎরা দিবেন। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে টাকা-পয়সার দ্বারা ফিৎরা আদায়ের ফলে একজন রিক্সা চালক যে ২০ টাকা কেজি দরের চাউল খায়, আর একজন দেশের মন্ত্রী যে ৭০-১০০ টাকা কেজি দরের চাউল খান, উভয়ের যাকাতুল ফিৎরের মান সমান হয়ে যায়। অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত টাকা দ্বারা রাজা প্রজা সকলেই ফিৎরা আদায় করে থাকে। যা ইসলাম ও মানুষের বিবেক বিরোধী।
[2]. বুখারী হা/১৫০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিৎর’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫।
যাকাতুল ফিৎর হিসাবে কি পরিমাণ খাদ্যশস্য দিতে হবে তার স্পষ্ট বর্ণনা হাদীছে এসেছে,
فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ-
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর হিসাবে মুসলমানদের ছোট-বড়, পুরুষ-নারী এবং স্বাধীন-দাস প্রত্যেকের উপর এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ যব ফরয করেছেন।[1]
অতএব প্রত্যেক মুসলিমকে যাকাতুল ফিৎর হিসাবে এক ছা‘ খাদ্যশস্য প্রদান করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে অর্ধ ছা‘ ফিৎরা প্রদানের যে প্রচলন রয়েছে তা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। সর্বপ্রথম মু‘আবিয়া (রাঃ) কোন এক প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র গমের ক্ষেত্রে অর্ধ ছা‘ ফিৎরা আদায়ের প্রচলন ঘটিয়েছিলেন। আর এটা ছিল মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর ইজতিহাদ যা আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) সহ অন্যান্য ছাহাবায়ে কেরাম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। হাদীছটি নিম্নরূপ-
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ كُنَّا نُخْرِجُ إِذْ كَانَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ عَنْ كُلِّ صَغِيْرٍ وَكَبِيْرٍ حُرٍّ أَوْ مَمْلُوْكٍ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيْبٍ فَلَمْ نَزَلْ نُخْرِجُهُ حَتَّى قَدِمَ عَلَيْنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِيْ سُفْيَانَ حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا فَكَلَّمَ النَّاسَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَكَانَ فِيْمَا كَلَّمَ بِهِ النَّاسَ أَنْ قَالَ إِنِّيْ أُرَى أَنَّ مُدَّيْنِ مِنْ سَمْرَاءِ الشَّامِ تَعْدِلُ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ فَأَخَذَ النَّاسُ بِذَلِكَ. قَالَ أَبُوْ سَعِيْدٍ فَأَمَّا أَنَا فَلاَ أَزَالُ أُخْرِجُهُ كَمَا كُنْتُ أُخْرِجُهُ أَبَدًا مَا عِشْتُ-
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন যে, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় প্রত্যেক ছোট-বড়, স্বাধীন-দাস এক ছা‘ করে খাদ্যবস্ত্ত অথবা এক ছা‘ পনির অথবা এক ছা‘ যব অথবা এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ কিশমিশ ‘যাকাতুল ফিৎর’ হিসাবে আদায় করতাম। আমরা এরূপভাবেই (যাকাতুল ফিৎর) বের করতাম। এমন সময় মু‘আবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) হজ্জ বা ওমরাহ উপলক্ষে মদ্বীনায় এলেন। (তাঁর সঙ্গে সিরিয়ার গমও এল)। তিনি মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে জনগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আমি মনে করি সিরিয়ার দুই মুদ (অর্ধ ছা‘) গম (মূল্যের দিক দিয়ে) মদ্বীনার এক ছা‘ খেজুরের সমতুল্য। অতঃপর লোকজন তা গ্রহণ করল। তখন আবুসাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, ‘আমি যতদিন দুনিয়ায় বেঁচে থাকব ততদিন তা (অর্ধ ছা‘ গমের ফিৎরা) কখনোই আদায় করব না। বরং (রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায়) আমি যা দিতাম তাই-ই দিয়ে যাব’।[2]
একদা আবুসাঈদ খুদরী (রাঃ) যাকাতুল ফিৎর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
لاَ أُخْرِجُ إِلاَّ مَا كُنْتُ أُخْرِجُ فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه و سلم صَاعَ تَمْرٍ أَوْ صَاعَ شَعِيْرٍ أَوْ صَاعَ أَقِطٍ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ : لَوْ مُدَّيْنِ مِنْ قَمْحٍ؟ فَقَالَ : لاَ تِلْكَ قِيْمَةُ مُعَاوِيَةَ لاَ أَقْبَلُهَا وَلاَ أَعْمَلُ بِهَا-
অর্থাৎ আমি রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় যেমন এক ছা‘ খেজুর অথবা এক ছা‘ যব অথবা এক ছা‘ পনির হতে যাকাতুল ফিৎর বের করতাম, কখনোই এর ব্যতিক্রম বের করব না। তখন গোত্রের কোন এক ব্যক্তি বললেন, যদি অর্ধ ছা‘ গম দ্বারা হয়? তিনি বললেন, না; এটা মু‘আবিয়া (রাঃ) কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য। আমি তা মানব না এবং তার উপর আমলও করব না।[3]
বুখারীর ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,
فِيْ حَدِيْثِ أَبِيْ سَعِيْدٍ مَا كَانَ عَلَيْهِ مِنْ شِدَّةِ الِاتِّبَاعِ وَالتَّمَسُّكِ بِالْآثَارِ وَتَرْكِ الْعُدُوْلِ إِلَى الِاجْتِهَادِ مَعَ وُجُوْدِ النَّصِّ وَفِيْ صَنِيْعِ مُعَاوِيَةَ وَمُوَافَقَةِ النَّاسِ لَهُ دَلَالَةٌ عَلَى جَوَازِ الِاجْتِهَادِ وَهُوَ مَحْمُوْدٌ لَكِنَّهُ مَعَ وُجُوْدِ النَّصِّ فَاسد الإِعْتِبَارِ-
অর্থাৎ উল্লিখিত হাদীছে নাছ বা দলীলের উপস্থিতিতে ইজতিহাদ বর্জন করার মাধ্যমে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর হাদীছ ধারণের দৃঢ়তা ও পূর্ণ ইত্তিবা প্রমাণিত হয়। আর মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর ইজতিহাদ এবং মানুষের তা গ্রহণ করার মাধ্যমে ইজতিহাদ জায়েয হওয়া প্রমাণ করে যা প্রশংসনীয়। কিন্তু যেখানে দলীল উপস্থিত সেখানে ইজতিহাদ অগ্রহণীয়।[4]
মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম মুহিউদ্দ্বীন নববী (৬৩১-৬৭৬ হিঃ) বলেন,
وَلَيْسَ لِلْقَائِلَيْنِ بِنِصْفِ صَاع حُجَّة إِلَّا حَدِيْثَ مُعَاوِيَةَ-
‘যারা অর্ধ ছা‘ গমের কথা বলেন, তাদের মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর এই হাদীছ ব্যতীত কোন দলীল নেই।[5]
অতএব স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, অর্ধ ছা‘ গম দ্বারা ফিৎরা আদায় করা মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর নিজস্ব রায় মাত্র, রাসূল (ছাঃ)-এর উক্তি নয়। যাকে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) সহ অন্যান্য ছাহাবায়ে কেরাম প্রত্যাখ্যান করে রাসূল (ছাঃ)-এর উক্তি ও আমল এক ছা‘ খাদ্যবস্ত্ত দ্বারা ফিৎরা আদায়ের উপর অটল ছিলেন। কেননা দলীল মওজূদ থাকতে ‘ইজতিহাদ’ বাতিল বলে গণ্য হয়। তাছাড়া হাদীছে যেসব খাদ্যদ্রব্যের নাম এসেছে তার সবগুলির মূল্য এক ছিল না। বরং মূল্যে পার্থক্য ছিল। তা সত্ত্বেও সকল খাদ্যদ্রব্য থেকে এক ছা‘ করে যাকাতুল ফিৎর আদায় করতে বলা হয়েছে। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের প্রতি দৃকপাত না করে তার পরিমাণ বা ওযনকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিপরীতে স্বয়ং রাষ্ট্রীয় আমীরের হুকুমকে ছাহাবায়ে কেরাম অগ্রাহ্য করেছেন শুধুমাত্র হাদীছের সার্বভৌম অধিকারকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। অনুরূপভাবে আমাদেরও উচিৎ হবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সার্বভৌম অধিকারকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাথা পিছু এক ছা‘ ফিৎরা আদায় করা।
[2]. বুখারী হা/১৫০৮; মুসলিম হা/৯৮৫।
[3]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৪১৯; মুস্তাদরাক হাকেম হা/১৪৯৫; আল-আ‘যামী, সনদ হাসান।
[4]. ফাতহুল বারী ৩/৩৭৪ পৃঃ, ১৫০৮ নং হাদীছের ব্যাখ্যা।
[5]. শারহু মুসলিম, ইমাম নববী (রহঃ) ৩/৪৪৭ পৃঃ, ৩৮৪ নং হাদীছের ব্যাখ্যা।
রামাযান শেষে শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে ঈদের মাঠে গমনের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে যাকাতুল ফিৎর আদায় করতে হবে। হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِيْنِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِىَ زَكَاةٌ مَقْبُوْلَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِىَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ-
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিৎর ফরয করেছেন ছিয়াম পালনকারীর অসারতা ও যৌনাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাদ্য স্বরূপ। যে ব্যক্তি তা ছালাতের পূর্বে (ঈদের ছালাত) আদায় করবে তা যাকাত হিসাবে গ্রহণীয় হবে। আর যে ব্যক্তি ছালাতের পরে আদায় করবে তা (সাধারণ) ছাদাক্বার মধ্যে গণ্য হবে।[1]
অন্য হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন,
وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ-
তিনি (রাসূল (ছাঃ) ছালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।[2]
উল্লিখিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) زَكَاةُ الْفِطْرِ নামকরণ করেছেন; زَكَاةُ رَمَضَان নামকরণ করেননি। আর ফিৎর আরম্ভ হয় রামাযান শেষে শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে।[3] অতএব শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময় যাকাতুল ফিৎর আদায়ের প্রকৃত সময়। তবে প্রয়োজনে এক অথবা দু’দিন পূর্বে থেকে যকাতুল ফিৎর আদায় করা যায়। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) ঈদুল ফিৎরের এক অথবা দু’দিন পূর্বে ফিৎরা আদায় করেছেন।
হাদীছে এসেছে,
كَانَ ابْنُ عُمَرَ رضى الله عنهما يُعْطِيْهَا الَّذِيْنَ يَقْبَلُوْنَهَا، وَكَانُوْا يُعْطُوْنَ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ-
ইবনু ওমর (রাঃ) জমাকারীদের নিকট ছাদাক্বাতুল ফিৎর প্রদান করতেন। আর তারা ঈদুল ফিৎরের একদিন অথবা দু’দিন পূর্বে তা আদায় করত।[4]
ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে আব্দুল ওয়ারেছের সূত্রে আইয়ূব থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হল,
مَتَى كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُعْطِي الصَّاعَ؟ قَالَ إِذَا قَعَدَ الْعَامِلُ، قُلْتُ مَتَى كَانَ الْعَامِلُ يَقْعُدُ؟ قَالَ قَبْلَ الْفِطْرِ بِيَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ-
ইবনু ওমর (রাঃ) ছাদাক্বাতুল ফিৎর কখন প্রদান করতেন? তিনি বললেন, আদায়কারী বসলে। তিনি আবার বললেন, আদায়কারী কখন বসতেন? তিনি বললেন, ঈদের ছালাতের একদিন বা দু’দিন পূর্বে।[5]
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, كَانُوْا يُعْطُوْنَ لِلْجَمْعِ لاَ لِلْفُقَرَاءِ ‘তাঁরা জমা করার জন্য দিতেন, ফকীরদের জন্য নয়’।[6]
অতএব শাওয়ালের চাঁদ উদয়ের পর থেকে ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাকাতুল ফিৎর জমাকারীর নিকট জমা করতে হবে। প্রয়োজনে এক দিন অথবা দু’দিন পূর্বে জমা করা জায়েয। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যাকাতুল ফিৎর জমা করে ঈদের ছালাতের পূর্বে হকদারদের মাঝে বণ্টন করা সম্ভব হলে তা বণ্টন করা জায়েয। তবে তা মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আর কষ্ট সর্বদা সহজতা অন্বেষণ করে। তাই ঈদের ছালাতের পূর্বে জমা করে ঈদের ছালাতের পরে বণ্টন করলে মানুষের জন্য সহজ হয়। সুতরাং সামাজিকভাবে যাকাতুল ফিৎর জমা করার ব্যবস্থা থাকলে ঈদের ছালাতের পূর্বে জমা করে সম্ভব হলে ঈদের ছালাতের পূর্বে বণ্টন করতে পারে। আর সম্ভব না হলে ঈদের ছালাতের পরেও বণ্টন করবে। আর জমা করার ব্যবস্থা না থাকলে ব্যক্তিগতভাবে ঈদের ছালাতের পূর্বে ফকীর-মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করবে।
[2]. বুখারী হা/১৫০৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিতর’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/১৮১৫।
[3]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৬/১৬৬ পৃঃ।
[4]. বুখারী হা/১৫১১, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাকাতুল ফিতর’ অনুচ্ছেদ।
[5]. ছহীহ ইবনু খাযায়মা হা/২৩৯৭; আলবানী, সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৮৪৬।
[6]. ফাতহুল বারী (বৈরুত : দারুল মা‘রেফা) ৩/৩৭৬ পৃঃ ।
যাকাতুল ফিৎর বণ্টনের খাত নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে ছহীহ মত হল, যাকাতুল ফিৎর আল্লাহ নির্দেশিত যাকাত থেকে আলাদা নয়। আর আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে যাকাত বণ্টনের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِيْ الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيْضَةً مِنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ-
‘নিশ্চয়ই ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’ (তাওবা ৯/৬০)।
তবে ফকীর ও মিসকীন যাকাতুল ফিৎরের অধিক হকদার। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিতরকে طُعْمَةً لِلْمَسَاكِيْنِ তথা মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফরয করার কথা উল্লেখ করেছেন। রাসূল (ছাঃ)-এর এই বাণী যাকাতুল ফিতরকে শুধুমাত্র ফকীর-মিসকীনের জন্য খাছ বা নির্দিষ্ট করে দেয় না। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যাকাতুল ফিৎরের মধ্যে ফকীর-মিসকীনের খাদ্য নিহীত রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার ও মানার তাওফীক দান করুন- আমীন!
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। যার মধ্যে নিহিত আছে মানব জীবনের যাবতীয় সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান। আর অর্থনৈতিক সমস্যা মানব জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশে দু’টি প্রধান অর্থনৈতিক মতবাদ প্রচলিত আছে। পুঁজিবাদ বা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা। এ্যাডম স্মীথের হাত ধরে যে পুঁজিবাদের যাত্রা তাতে শুধুই ব্যক্তিস্বার্থ ও ইন্দ্রিয়পরায়ণতার গন্ধ। ব্যক্তির ভোগ ও তৃপ্তি চূড়ান্ত হতে হবে, সর্বোচ্চ পরিমাণ তৃপ্তি বা উপযোগ লাভের সর্বাত্মক চেষ্টা পুঁজিবাদের মূল দর্শন। সমাজের হতদরিদ্র বা বঞ্চিতদের জন্য ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ সেখানে নেই। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাও এর কোন সমাধান বের করতে পারেনি। আদর্শিকভাবে এই দুই বিপরীত মেরুর বিরুদ্ধে ইসলাম আমাদেরকে যাকাতের বিধান দিয়েছে। যার ফলে ব্যক্তির নৈতিক ও মানসিক উন্নতি হয়। সমাজ থেকে শ্রেণীবৈষম্য বিদূরিত হয়। গড়ে ওঠে অসহায় গরীব ও বিত্তবানদের মধ্যে এক সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক। হরাস পায় গাছতলা ও পাঁচতলার ভেদাভেদ। যাকাত ধনী-গরীবের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করে। যাকাত আদায়ের ফলে অন্তর পরিস্কার ও পরিশুদ্ধ হয় এবং কৃপণতার মত ঘৃণ্য চরিত্র থেকে মুক্তিলাভ করা যায়। যাকাত ব্যক্তিকে দানশীল, মহানুভব এবং অভাবে জর্জরিত বঞ্চিত মানবতার প্রতি দয়া পরবশ হতে অভ্যস্ত করে। আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও বিনিময় লাভ করা যায়। গোনাহ সমূহ মোচন হয়। যাকাত প্রদানের কারণে অর্থের অন্ধ মোহ হরাস পায়। অপচয় হতে মুক্ত থাকা যায় ও গরীব-দুঃখীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করার মানসিকতা তৈরী হয়। ফলে দুনিয়াতে গড়ে ওঠে সুশীল ও সুন্দর সমাজ এবং পরকালে অর্জিত হয় জান্নাতের অফুরন্ত নে‘মত। আল্লাহ আমাদেরকে তা অর্জন করার তাওফীক্ব দিন। আমীন!
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ