বিভিন্ন প্রকার পশুর মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা কেবলমাত্র بهيمة الأنعام তথা উট, গরু ও ছাগলের যাকাত ফরয করেছেন। মহিষ গরুর অন্তর্ভুক্ত এবং ভেড়া ও দুম্বা ছাগলের অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ رَجُلٍ تَكُوْنُ لَهُ إِبِلٌ أَوْ بَقَرٌ أَوْ غَنَمٌ لاَ يُؤَدِّى حَقَّهَا إِلاَّ أُتِىَ بِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْظَمَ مَا تَكُوْنُ وَأَسْمَنَهُ، تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا، وَتَنْطَحُهُ بِقُرُوْنِهَا، كُلَّمَا جَازَتْ أُخْرَاهَا رُدَّتْ عَلَيْهِ أُوْلاَهَا، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ-
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক উট, গরু ও ছাগলের অধিকারী ব্যক্তি যে তার যাকাত আদায় করবে না, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে আনা হবে বিরাটকায় ও অতি মোটাতাজা অবস্থায়। তারা দলে দলে তাকে মাড়াতে থাকবে তাদের ক্ষুর দ্বারা এবং মারতে থাকবে তাদের শিং দ্বারা। যখনই তাদের শেষ দল অতিক্রম করবে, পুনরায় প্রথম দল এসে তার সাথে এরূপ করতে থাকবে, যাবৎ না মানুষের বিচার ফায়ছালা শেষ হয়ে যায়।[1]
(ক) নিছাব পরিমাণ হওয়া : গৃহপালিত পশুর যাকাত ফরয হওয়ার জন্য ইসলামী শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত নিছাব সংখ্যক পশুর মালিক হতে হবে। আর তা হল, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা ৪০ টি, গরু ৩০ টি এবং উট ৫ টি। উল্লিখিত সংখ্যা হতে কম হলে তার উপর যাকাত ফরয নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لَيْسَ فِيْمَا دُوْنَ خَمْسِ ذَوْدٍ صَدَقَةٌ مِنَ الإِبِلِ-
‘পাঁচের কম সংখ্যক উটের যাকাত নেই।[1] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْيَمَنِ وَأَمَرَنِيْ أَنْ آخُذَ مِنَ الْبَقَرِ مِنْ كُلِّ أَرْبَعِيْنَ مُسِنَّةً وَمِنْ كُلِّ ثَلاَثِيْنَ تَبِيْعًا أَوْ تَبِيْعَةً-
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন আমাকে ইয়ামানের উদ্দেশ্যে পাঠালেন, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন, গরুর যাকাতে প্রত্যেক চল্লিশটিতে একটি ‘মুসিন্নাহ’ (দু’বছর অতিক্রম করে তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু) এবং প্রত্যেক ত্রিশটিতে একটি ‘তাবী’ অথবা ‘তাবী‘আহ্’ (এক বছর অতিক্রম করে দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু) গ্রহণ করবে।[2]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
فَإِذَا كَانَتْ سَائِمَةُ الرَّجُلِ نَاقِصَةً مِنْ أَرْبَعِيْنَ شَاةً وَاحِدَةً فَلَيْسَ فِيْهَا صَدَقَةٌ-
‘কারো গৃহপালিত ছাগলের সংখ্যা চল্লিশ হতে একটিও কম হলে তার উপর যাকাত নেই’।[3]
(খ) পূর্ণ এক চন্দ্র বছর মালিকানায় থাকা : হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ لاَ زَكَاةَ فِيْ مَالٍ حَتَّى يَحُوْلَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ-
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘পূর্ণ এক বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত সম্পদের যাকাত নেই’।[4]
তবে গৃহপালিত পশুর বাচচা তার মায়ের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ বছরে একবার গৃহপালিত পশুর যাকাত আদায় করা হবে। আর আদায়ের সময় বাচ্চা মায়ের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(গ) ‘সায়েমা’ তথা বিচরণশীল হতে হবে : যে পশু বছরের অধিকাংশ সময় নিজেই বিচরণ করে খাদ্য গ্রহণ করে তাকে সায়েমা বলা হয়। অতএব বছরের অধিকাংশ সময় মালিক নিজে খাদ্য সংগ্রহ করে পশুকে খাওয়ালে সে পশুর উপর যাকাত ফরয নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
وَفِيْ صَدَقَةِ الْغَنَمِ فِيْ سَائِمَتِهَا إِذَا كَانَتْ أَرْبَعِيْنَ إِلَى عِشْرِيْنَ وَمِائَةٍ شَاةٌ-
‘বিচরণশীল ছাগলের যাকাতে চল্লিশটি হতে একশত বিশটি পর্যন্ত একটি ছাগল।[5] তিনি অন্যত্র বলেন,
فِيْ كُلِّ إِبِلٍ سَائِمَةٍ مِنْ كُلِّ أَرْبَعِيْنَ ابْنَةُ لَبُوْنٍ-
‘বিচরণশীল প্রত্যেক চল্লিশটি উটে একটি বিনতু লাবুন (দু’বছর অতিক্রম করে তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উট)।[6]
[2]. তিরমিযী হা/৬২৩; নাসাঈ হা/২৪৫০; ইবনু মাজাহ হা/১৮০৩; মিশকাত হা/১৮০০, ‘যাকাত’ অধ্যায়, আলবানী, সনদ ছহীহ।
[3]. বুখারী হা/১৪৫৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাগলের যাকাত’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/১৭৯৬।
[4]. আবূদাউদ হা/১৫৭৩; তিরমিযী হা/৬৩১; ইবনু মাজাহ হা/১৭৯২; আলবানী, সনদ ছহীহ।
[5]. বুখারী হা/১৪৫৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়; মিশকাত হা/১৭৯৬।
[6]. নাসাঈ হা/২৪৪৯; আলবানী, সনদ হাসান।
গৃহপালিত পশুর যাকাত আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رضى الله عنه كَتَبَ لَهُ هَذَا الْكِتَابَ لَمَّا وَجَّهَهُ إِلَى الْبَحْرَيْنِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ هَذِهِ فَرِيْضَةُ الصَّدَقَةِ الَّتِيْ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى الْمُسْلِمِيْنَ، وَالَّتِيْ أَمَرَ اللهُ بِهَا رَسُوْلَهُ، فَمَنْ سُئِلَهَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ عَلَى وَجْهِهَا فَلْيُعْطِهَا، وَمَنْ سُئِلَ فَوْقَهَا فَلاَ يُعْطِ فِيْ أَرْبَعٍ وَعِشْرِيْنَ مِنَ الإِبِلِ فَمَا دُوْنَهَا مِنَ الْغَنَمِ مِنْ كُلِّ خَمْسٍ شَاةٌ، إِذَا بَلَغَتْ خَمْسًا وَعِشْرِيْنَ إِلَى خَمْسٍ وَثَلاَثِيْنَ فَفِيْهَا بِنْتُ مَخَاضٍ أُنْثَى، فَإِذَا بَلَغَتْ سِتًّا وَثَلاَثِيْنَ إِلَى خَمْسٍ وَأَرْبَعِيْنَ فَفِيْهَا بِنْتُ لَبُوْنٍ أُنْثَى، فَإِذَا بَلَغَتْ سِتًّا وَأَرْبَعِيْنَ إِلَى سِتِّيْنَ فَفِيْهَا حِقَّةٌ طَرُوْقَةُ الْجَمَلِ، فَإِذَا بَلَغَتْ وَاحِدَةً وَسِتِّيْنَ إِلَى خَمْسٍ وَسَبْعِيْنَ فَفِيْهَا جَذَعَةٌ، فَإِذَا بَلَغَتْ يَعْنِى سِتًّا وَسَبْعِيْنَ إِلَى تِسْعِيْنَ فَفِيْهَا بِنْتَا لَبُوْنٍ، فَإِذَا بَلَغَتْ إِحْدَى وَتِسْعِيْنَ إِلَى عِشْرِيْنَ وَمِائَةٍ فَفِيْهَا حِقَّتَانِ طَرُوْقَتَا الْجَمَلِ، فَإِذَا زَادَتْ عَلَى عِشْرِيْنَ وَمِائَةٍ فَفِيْ كُلِّ أَرْبَعِيْنَ بِنْتُ لَبُوْنٍ، وَفِيْ كُلِّ خَمْسِيْنَ حِقَّةٌ، وَمَنْ لَمْ يَكُنْ مَعَهُ إِلاَّ أَرْبَعٌ مِنَ الإِبِلِ فَلَيْسَ فِيْهَا صَدَقَةٌ، إِلاَّ أَنْ يَشَاءَ رَبُّهَا، فَإِذَا بَلَغَتْ خَمْسًا مِنَ الإِبِلِ فَفِيْهَا شَاةٌ، وَفِيْ صَدَقَةِ الْغَنَمِ فِيْ سَائِمَتِهَا إِذَا كَانَتْ أَرْبَعِيْنَ إِلَى عِشْرِيْنَ وَمِائَةٍ شَاةٌ، فَإِذَا زَادَتْ عَلَى عِشْرِيْنَ وَمِائَةٍ إِلَى مِائَتَيْنِ شَاتَانِ، فَإِذَا زَادَتْ عَلَى مِائَتَيْنِ إِلَى ثَلاَثِمِائَةٍ فَفِيْهَا ثَلاَثٌ، فَإِذَا زَادَتْ عَلَى ثَلاَثِمِائَةٍ فَفِيْ كُلِّ مِائَةٍ شَاةٌ، فَإِذَا كَانَتْ سَائِمَةُ الرَّجُلِ نَاقِصَةً مِنْ أَرْبَعِيْنَ شَاةً وَاحِدَةً فَلَيْسَ فِيْهَا صَدَقَةٌ، إِلاَّ أَنْ يَشَاءَ رَبُّهَا، وَفِيْ الرِّقَةِ رُبْعُ الْعُشْرِ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ إِلاَّ تِسْعِيْنَ وَمِائَةً فَلَيْسَ فِيْهَا شَىْءٌ، إِلاَّ أَنْ يَشَاءَ رَبُّهَا-
আবূ বকর (রাঃ) আনাস (রাঃ)-কে বাহরাইনের উদ্দেশ্যে প্রেরণকালে গৃহপালিত পশুর যাকাত আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে তাঁকে লিখে দিয়েছিলেন যে, ২৪টি ও তার চেয়ে কম সংখ্যক উটের যাকাত ছাগল দ্বারা আদায় করবে। প্রত্যেক ৫টি উটে ১টি ছাগল এবং উটের সংখ্যা ২৫টি হতে ৩৫টি পর্যন্ত হলে ১টি মাদী বিনতু মাখায। ৩৬টি হতে ৪৫টি পর্যন্ত ১টি মাদী বিনতু লাবূন। ৪৬টি হতে ৬০টি পর্যন্ত ১টি হিক্কাহ। ৬১ টি হতে ৭৫টি পর্যন্ত ১টি জায‘আহ্। ৭৬টি হতে ৯০টি পর্যন্ত ২টি বিনতু লাবূন। ৯১টি হতে ১২০টি পর্যন্ত ২টি হিক্কাহ। আর ১২০ টির বেশী হলে অতিরিক্ত প্রতি ৪০ টিতে ১টি করে বিনতু লাবূন এবং অতিরিক্ত প্রতি ৫০ টিতে ১টি করে হিক্কাহ। যার ৪ টির বেশী উট নেই, তার উপর কোন যাকাত নেই। তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিতে চাইলে দিতে পারবে। কিন্তু যখন ৫ টিতে পৌঁছবে তখন তার উপর ১টি ছাগল যাকাত দেওয়া ওয়াজিব।
আর ছাগলের ক্ষেত্রে গৃহপালিত ছাগল ৪০টি হতে ১২০টি পর্যন্ত ১টি ছাগল। এর বেশী হলে ২০০টি পর্যন্ত ২টি ছাগল। ২০০-এর অধিক হলে ৩০০টি পর্যন্ত ৩টি ছাগল। ৩০০-এর অধিক হলে প্রতি ১০০ টিতে ১টি করে ছাগল যাকাত দিবে। কারো গৃহপালিত ছাগলের সংখ্যা ৪০টি হতে ১টিও কম হলে তার উপর যাকাত নেই। তবে স্বেচ্ছায় দান করতে চাইলে করতে পারে’।[1]
উপরোক্ত হাদীছ সহ আরো অন্যান্য হাদীছের আলোকে উট, গরু ও ছাগলের যাকাত পৃথকভাবে ছকের মাধ্যমে দেখানো হল।
নিম্নের ছকে ছাগলের যাকাতের নিছাব, সংখ্যা ও যাকাতের পরিমাণ বর্ণনা করা হল :
নিছাব |
সংখ্যা |
যাকাতের পরিমাণ |
|
৪০ টি (এর কম হলে যাকাত ফরয নয়)। |
থেকে |
পর্যন্ত |
|
৪০ |
১২০ |
১ টি ছাগল |
|
১২১ |
২০০ |
২ টি ছাগল |
|
২০১ |
৩০০ |
৩ টি ছাগল |
বি : দ্র : এর পরে প্রত্যেক একশত ছাগলে একটি করে ছাগল যাকাত দিতে হবে।
নিম্নের ছকে উটের যাকাতের নিছাব, সংখ্যা ও যাকাতের পরিমাণ বর্ণনা করা হল :
নিছাব |
সংখ্যা |
যাকাতের পরিমাণ |
|
৫ টি (এর কম হলে যাকাত ফরয নয়)। |
থেকে |
পর্যন্ত |
|
৫ |
৯ |
১ টি ছাগল |
|
১০ |
১৪ |
২ টি ছাগল |
|
১৫ |
১৯ |
৩ টি ছাগল |
|
২০ |
২৪ |
৪ টি ছাগল |
|
২৫ |
৩৫ |
বিনতু মাখায (দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) |
|
৩৬ |
৪৫ |
বিনতু লাবূন (তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) |
|
৪৬ |
৬০ |
হিক্কাহ্ (চতুর্থ বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) |
|
৬১ |
৭৫ |
জায‘আহ্ (পঞ্চম বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) |
|
৭৬ |
৯০ |
২টি বিনতু লাবূন |
|
৯১ |
১২০ |
২ টি হিক্কাহ্ |
বি : দ্র : উটের সংখ্যা ১২০ টির বেশী হলে প্রত্যেক ৪০ টিতে একটি বিনতু লাবূন এবং প্রত্যেক ৫০ টিতে একটি হিক্কাহ যাকাত দিবে। যা নিম্নে ছকের মাধমে দেখানো হল :
সংখ্যা |
যাকাতের পরিমাণ |
|
থেকে |
পর্যন্ত |
|
১২১ |
১২৯ |
৩ টি বিনতু লাবূন |
১৩০ |
১৩৯ |
১ টি হিক্কাহ ও ২ টি বিনতু লাবূন |
১৪০ |
১৪৯ |
২ টি হিক্কাহ ও ১ টি বিনতু লাবূন |
১৫০ |
১৫৯ |
৩ টি হিক্কাহ |
১৬০ |
১৬৯ |
৪ টি বিনতু লাবূন |
১৭০ |
১৭৯ |
৩ টি বিনতু লাবূন ও ১ টি হিক্কাহ |
১৮০ |
১৮৯ |
২ টি হিক্কাহ ও ২ টি বিনতু লাবূন |
১৯০ |
১৯৯ |
৩ টি হিক্কাহ ও ১ টি বিনতু লাবূন |
২০০ |
২০৯ |
৪ টি হিক্কাহ ও ৫ টি বিনতু লাবূন |
গৃহপালিত পশুর মালিক যাকাত বাবদ যা দিবে এবং যাকাত আদায়কারী যা গ্রহণ করবে, তাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।
(ক) দোষ-ত্রুটি মুক্ত হওয়া : রোগ মুক্ত পশু থাকতে রোগাক্রান্ত, অঙ্গহীন, জীর্ণশীর্ণ পশু যা ক্রয়-বিক্রয়ে অযোগ্য এবং যা দ্বারা কুরবানী বৈধ নয়, এমন পশু দ্বারা যাকাত আদায় করা জায়েয নয়। এরূপ বিধান এই জন্য যে, ত্রুটিযুক্ত পশু গ্রহণ করা হলে তাতে দরিদ্র লোকদের ক্ষতি সাধিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَلاَ تَيَمَّمُوْا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيْهِ إِلَّا أَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِ وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় কর (যাকাত দাও) এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না। কেননা তা তোমরা কখনও গ্রহণ করবে না; তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত’ (বাক্বারাহ ২/২৬৭)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
ثَلاَثٌ مَنْ فَعَلَهُنَّ فَقَدْ طَعِمَ طَعْمَ الْإِيْمَانِ مَنْ عَبَدَ اللهَ وَحْدَهُ وَأَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَعْطَى زَكَاةَ مَالِهِ طَيِّبَةً بِهَا نَفْسُهُ رَافِدَةً عَلَيْهِ كُلَّ عَامٍ وَلاَ يُعْطِيْ الْهَرِمَةَ وَلاَ الدَّرِنَةَ وَلاَ الْمَرِيْضَةَ وَلاَ الشَّرَطَ اللَّئِيْمَةَ وَلَكِنْ مِنْ وَسَطِ أَمْوَالِكُمْ فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَسْأَلْكُمْ خَيْرَهُ وَلَمْ يَأْمُرْكُمْ بِشَرِّهِ-
‘তিন ধরনের লোক যারা এরূপ করবে, তারা পরিপূর্ণ ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করবে- যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদতে রত থাকে এবং স্বীকার করে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই; যে ব্যক্তি পত্যেক বছর তার মালের যাকাত হিসাবে উত্তম মাল প্রদান করে এবং বৃদ্ধ বয়সের, রোগগ্রস্ত, ত্রুটিপূর্ণ, নিকৃষ্ট মাল প্রদান করে না, বরং মধ্যম মানের মাল প্রদান করে। আল্লাহ তোমাদের নিকট তোমাদের উত্তম মাল চান না এবং নিকৃষ্ট মাল প্রদান করতেও নির্দেশ দেননি’।[1]
(খ) শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত বয়সের হওয়া : হাদীছে যে বয়সের পশু দ্বারা যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঠিক সেই বয়সের পশু দ্বারাই যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা এর চেয়ে কম বয়সের পশু গ্রহণ করা হলে তাতে গরীবদের হক নষ্ট ও ক্ষতি সাধিত হয়। আর বেশী বয়সের নেওয়া হলে পশুর মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতএব মালিকের নিকট শরী‘আত নির্দিষ্ট বয়সের পশু না থাকলে তার নিকট বিদ্যমান পশু দ্বারাই যাকাত আদায় করবে। তবে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ সাথে দু’টি ছাগল অথবা ২০ দিরহাম দিবে।
হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ رضى الله عنه أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رضى الله عنه كَتَبَ لَهُ فَرِيْضَةَ الصَّدَقَةِ الَّتِيْ أَمَرَ اللهُ رَسُوْلَهُ صلى الله عليه وسلم مَنْ بَلَغَتْ عِنْدَهُ مِنَ الإِبِلِ صَدَقَةُ الْجَذَعَةِ، وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ جَذَعَةٌ وَعِنْدَهُ حِقَّةٌ، فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ الْحِقَّةُ وَيَجْعَلُ مَعَهَا شَاتَيْنِ إِنِ اسْتَيْسَرَتَا لَهُ أَوْ عِشْرِيْنَ دِرْهَمًا، وَمَنْ بَلَغَتْ عِنْدَهُ صَدَقَةُ الْحِقَّةِ وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ الْحِقَّةُ وَعِنْدَهُ الْجَذَعَةُ، فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ الْجَذَعَةُ، وَيُعْطِيْهِ الْمُصَدِّقُ عِشْرِيْنَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ، وَمَنْ بَلَغَتْ عِنْدَهُ صَدَقَةُ الْحِقَّةِ وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ إِلاَّ بِنْتُ لَبُوْنٍ فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ بِنْتُ لَبُوْنٍ، وَيُعْطِى شَاتَيْنِ أَوْ عِشْرِيْنَ دِرْهَمًا، وَمَنْ بَلَغَتْ صَدَقَتُهُ بِنْتَ لَبُوْنٍ وَعِنْدَهُ حِقَّةٌ فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ الْحِقَّةُ وَيُعْطِيْهِ الْمُصَدِّقُ عِشْرِيْنَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ، وَمَنْ بَلَغَتْ صَدَقَتُهُ بِنْتَ لَبُوْنٍ وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ وَعِنْدَهُ بِنْتُ مَخَاضٍ، فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ بِنْتُ مَخَاضٍ وَيُعْطِى مَعَهَا عِشْرِيْنَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আবূ বকর (রাঃ) তাঁর কাছে আল্লাহ তাঁর রাসূল (ছাঃ)-কে যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন তা লিখে পাঠান : যে ব্যক্তির উপর উটের যাকাত হিসাবে জায‘আহ্ (পঞ্চম বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) ফরয হয়েছে, অথচ তার নিকট জায‘আহ্ নেই বরং তার নিকট হিক্কাহ্ (চতুর্থ বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) রয়েছে, তখন হিক্কাহ্ গ্রহণ করা হবে। এর সাথে সম্ভব হলে (ক্ষতিপূরণ স্বরূপ) দু’টি ছাগল দিবে অথবা ২০ দিরহাম দিবে। আর যার উপর যাকাত হিসাবে হিক্কাহ্ ফরয হয়েছে, অথচ তার কাছে হিক্কাহ্ নেই বরং জায‘আহ্ রয়েছে তখন তার নিকট হতে জায‘আহ্ গ্রহণ করা হবে। আর যাকাত আদায়কারী (ক্ষতিপূরণ স্বরূপ) মালিককে ২০ দিরহাম অথবা দু’টি ছাগল দিবে। যার উপর হিক্কাহ্ ফরয হয়েছে, অথচ তার নিকট বিনতু লাবূন (তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) রয়েছে, তখন বিনতু লাবূনই গ্রহণ করা হবে। তবে মালিক দু’টি ছাগল অথবা ২০ দিরহাম দিবে। আর যার উপর বিনতু লাবূন ফরয হয়েছে, কিন্তু তার কাছে হিক্কাহ্ রয়েছে, তখন তার নিকট হতে হিক্কাহ্ গ্রহণ করা হবে এবং আদায়কারী মালিককে ২০ দিরহাম অথবা দু’টি ছাগল দিবে। আর যার উপর বিনতু লাবূন ফরয হয়েছে, কিন্তু তার নিকটে বিনতু মাখায (দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) রয়েছে, তবে তার নিকট থেকে তাই গ্রহণ করা হবে, অবশ্য মালিক এর সঙ্গে ২০ দিরহাম অথবা দু’টি ছাগল দিবে’।[2]
(গ) পশু মধ্যম মানের হওয়া : অতীব উত্তম পশু বাছাই করে গ্রহণ করা যাকাত আদায়কারীদের জন্য যেমন জায়েয নয়, তেমনি জায়েয নয় অতীব নিকৃষ্ট পশু গ্রহণ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানের শাসক নিয়োগ করে পাঠানোর সময় বলেছিলেন,
فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لَكَ بِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ، وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُوْمِ، فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ-
‘তুমি তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) ফরয করেছেন- যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের গরীবদের মাঝে বণ্টন করা হবে। তোমার এ কথা যদি তারা মেনে নেয়, তবে কেবল তাদের উত্তম মাল থেকে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে এবং মাযলূমের বদদো‘আকে ভয় করবে। কেননা তার (বদদো‘আ) এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না’।[3]
[2]. বুখারী হা/১৪৫৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়; মিশকাত হা/১৭৯৬।
[3]. বুখারী হা/১৪৯৬, ‘যাকাত’ অধ্যায়; মুসলিম হা/১৯; মিশকাত হা/১৭৭২।
যদি একাধিক ব্যক্তি তাদের পশুগুলোকে একত্রিত করে এক সঙ্গে পালন করে থাকে। যেমন একজনের ২০ টি ছাগল এবং অপর জনের ২০ টি ছাগল মোট ৪০ টি ছাগল এক সঙ্গে পালন করা হয়। এমতাবস্থায় উভয় মালিকের পৃথক পৃথক নিছাব গণনা করা হবে, না উভয়ে এক নিছাবের অন্তর্ভুক্ত হবে? এক্ষেত্রে ছহীহ মত হল, তারা এক নিছাবের অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ ৪০ টি ছাগলের মালিক একাধিক হলেও তাদেরকে যাকাত হিসাবে ১ টি ছাগল দিতে হবে।
হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ رضى الله عنه أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رضى الله عنه كَتَبَ لَهُ فَرِيْضَةَ الصَّدَقَةِ الَّتِيْ أَمَرَ اللهُ رَسُوْلَهُ صلى الله عليه وسلم وَلاَ يُجْمَعُ بَيْنَ مُتَفَرِّقٍ، وَلاَ يُفَرَّقُ بَيْنَ مُجْتَمِعٍ، خَشْيَةَ الصَّدَقَةِ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন তা আবূবকর (রাঃ) তাঁর কাছে লিখে পাঠান, ‘যাকাত দেওয়ার ভয়ে বিচ্ছিন্ন প্রাণীগুলোকে একত্রিত করা যাবে না এবং একত্রিতগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না’।[1]
তবে একাধিক মালিকের পশু এক নিছাবের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য নিম্নে বর্ণিত শর্তসমূহ অবশ্য পূরণীয়। তা হল,
(ক) সকল মালিককে মুসলিম, স্বাধীন ও পশুর পূর্ণ মালিক হতে হবে। (খ) একাধিক মালিকের মিশ্রিত পশু নিছাব পরিমাণ হতে হবে। (গ) একাধিক মালিকের মিশ্রিত পশু একসঙ্গে পূর্ণ এক বছর পালিত হতে হবে। (ঘ) পাঁচটি বিষয়ে একজনের পশু অন্যজনের পশু থেকে আলাদা হবে না। যেমন-
(১) الفحل তথা একই এড়ে অথবা পাঠা দিয়ে গর্ভধারণ করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
(২) المسرح তথা একাধিক মালিকের মিশ্রিত সকল পশুর একই সময়ে চারণভূমিতে চরাতে হবে।
(৩) المرعى তথা একাধিক মালিকের মিশ্রিত সকল পশুর চারণভূমি একই হতে হবে।
(৪) المحلب তথা একাধিক মালিকের সকল পশুর দুগ্ধ দোহনের স্থান একই হতে হবে।
(৫) المراح তথা একাধিক মালিকের মিশ্রিত সকল পশুর রাত্রি যাপনের স্থান একই হতে হবে।
উপরোল্লিখিত শর্তসমূহ না থাকলে তারা এক নিছাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না। বরং প্রত্যেক মালিকের পৃথক পৃথক নিছাব ধরে যাকাত আদায় করতে হবে।[2]
[2]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল মুমতে ৬/৬৩-৬৪ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩৯ পৃঃ।
গাড়ী চালানো অথবা জমি চাষের কাজে নিয়োজিত পশু যত বেশীই হোক না কেন তার যাকাত দিতে হবে না। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَلِىِّ بْنِ أَبِيْ طَالِبٍ رضى الله عنه أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيْسَ فِيْ الْخَضْرَاوَاتِ صَدَقَةٌ وَلاَ فِيْ الْعَرَايَا صَدَقَةٌ وَلاَ فِيْ أَقَلَّ مِنْ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ صَدَقَةٌ وَلاَ فِيْ الْعَوَامِلِ صَدَقَةٌ وَلاَ فِيْ الْجَبْهَةِ صَدَقَةٌ، قَالَ الْصَقْرُ الْجَبْهَةُ الْخَيْلُ وَالْبِغَالُ وَالْعَبِيْدُ-
আলী ইবনু আবি ত্বালেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেছেন, শাক-শব্জিতে যাকাত নেই, আরিয়াতে[1] যাকাত নেই, পাঁচ ওসাকের কমে যাকাত নেই, কাজে নিয়োজিত পশুতে যাকাত নেই এবং যাবহাতেও যাকাত নেই। সাকার বলেন, জাবহা অর্থ হল, ঘোড়া, খচ্ছর এবং দাস-দাসী।[2]
[2]. দারাকুত্বনী হা/১৯৩০; মিশকাত হা/১৮১৩।
মহিষ ও গরু একই জাতবিশিষ্ট পশু এতে সকল বিদ্বান ঐক্যমত পোষণ করেছেন। হাসান (রাঃ) বলেন, ‘মহিষ গরুর স্থলাভিষিক্ত’।[1] অতএব নিছাব পরিমাণ গরুর মালিকের উপর যেমন যাকাত ফরয, তেমনি নিছাব পরিমাণ মহিষের মালিকের উপরেও যাকাত ফরয। আর গরু ও মহিষের নিছাব একই।
কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা যেসব পুশুর যাকাত আদায় করা ফরয সাব্যস্ত হয়েছে, ঘোড়া তার অন্তর্ভূক্ত নয়। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঘোড়ার যাকাত আদায় করতে হবে না বলে উল্লেখ করেছেন। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيْسَ عَلَى الْمُسْلِمِ فِيْ عَبْدِهِ وَلاَ فِيْ فَرَسِهِ صَدَقَةٌ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘মুসলমানদের উপর তাদের গোলাম ও ঘোড়ার যাকাত নেই’।[1]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘শাক-শব্জিতে যাকাত নেই, আরিয়াতে[2] যাকাত নেই, পাঁচ ওসাকের কমে যাকাত নেই, কাজে নিয়োজিত পশুতে যাকাত নেই এবং যাবহাতেও যাকাত নেই। সাকার বলেন, জাবহা অর্থ হল, ঘোড়া, খচ্ছর এবং দাস-দাসী।[3]
উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক ঘোড়ার ১ দ্বীনার অথবা ২০ দিরহাম যাকাত দিতে হবে বলে যে হাদীছ রয়েছে তা যঈফ।[4]
[2]. কোন গরীব ব্যক্তির নিকটে শুকনো খেজুর রয়েছে। কিন্তু তার ‘রুতাব’ খেজুর প্রয়োজন। এমতাবস্থায় কোন গাছের মালিকের নিকট থেকে শুকনো খেজুরের বিনিময়ে গাছে বিদ্যমান রুতাব খেজুর ক্রয় করাকে আরিয়া বলা হয়।
[3]. দারাকুত্বনী হা/১৯৩০; মিশকাত হা/১৮১৩।
[4]. নায়লুল আওতার ৪/১৩৭ পৃঃ ‘গোলাম, ঘোড়া ও গাধার যাকাত নেই’ অনুচ্ছেদ।