গৃহপালিত পশুর যাকাত আদায়ে কতিপয় লক্ষণীয় বিষয়

গৃহপালিত পশুর মালিক যাকাত বাবদ যা দিবে এবং যাকাত আদায়কারী যা গ্রহণ করবে, তাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।

(ক) দোষ-ত্রুটি মুক্ত হওয়া : রোগ মুক্ত পশু থাকতে রোগাক্রান্ত, অঙ্গহীন, জীর্ণশীর্ণ পশু যা ক্রয়-বিক্রয়ে অযোগ্য এবং যা দ্বারা কুরবানী বৈধ নয়, এমন পশু দ্বারা যাকাত আদায় করা জায়েয নয়। এরূপ বিধান এই জন্য যে, ত্রুটিযুক্ত পশু গ্রহণ করা হলে তাতে দরিদ্র লোকদের ক্ষতি সাধিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَلاَ تَيَمَّمُوْا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيْهِ إِلَّا أَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِ وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় কর (যাকাত দাও) এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না। কেননা তা তোমরা কখনও গ্রহণ করবে না; তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত’ (বাক্বারাহ ২/২৬৭)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

ثَلاَثٌ مَنْ فَعَلَهُنَّ فَقَدْ طَعِمَ طَعْمَ الْإِيْمَانِ مَنْ عَبَدَ اللهَ وَحْدَهُ وَأَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَعْطَى زَكَاةَ مَالِهِ طَيِّبَةً بِهَا نَفْسُهُ رَافِدَةً عَلَيْهِ كُلَّ عَامٍ وَلاَ يُعْطِيْ الْهَرِمَةَ وَلاَ الدَّرِنَةَ وَلاَ الْمَرِيْضَةَ وَلاَ الشَّرَطَ اللَّئِيْمَةَ وَلَكِنْ مِنْ وَسَطِ أَمْوَالِكُمْ فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَسْأَلْكُمْ خَيْرَهُ وَلَمْ يَأْمُرْكُمْ بِشَرِّهِ-

‘তিন ধরনের লোক যারা এরূপ করবে, তারা পরিপূর্ণ ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করবে- যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদতে রত থাকে এবং স্বীকার করে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই; যে ব্যক্তি পত্যেক বছর তার মালের যাকাত হিসাবে উত্তম মাল প্রদান করে এবং বৃদ্ধ বয়সের, রোগগ্রস্ত, ত্রুটিপূর্ণ, নিকৃষ্ট মাল প্রদান করে না, বরং মধ্যম মানের মাল প্রদান করে। আল্লাহ তোমাদের নিকট তোমাদের উত্তম মাল চান না এবং নিকৃষ্ট মাল প্রদান করতেও নির্দেশ দেননি’।[1]

(খ) শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত বয়সের হওয়া : হাদীছে যে বয়সের পশু দ্বারা যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঠিক সেই বয়সের পশু দ্বারাই যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা এর চেয়ে কম বয়সের পশু গ্রহণ করা হলে তাতে গরীবদের হক নষ্ট ও ক্ষতি সাধিত হয়। আর বেশী বয়সের নেওয়া হলে পশুর মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতএব মালিকের নিকট শরী‘আত নির্দিষ্ট বয়সের পশু না থাকলে তার নিকট বিদ্যমান পশু দ্বারাই যাকাত আদায় করবে। তবে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ সাথে দু’টি ছাগল অথবা ২০ দিরহাম দিবে।

হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ رضى الله عنه أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رضى الله عنه كَتَبَ لَهُ فَرِيْضَةَ الصَّدَقَةِ الَّتِيْ أَمَرَ اللهُ رَسُوْلَهُ صلى الله عليه وسلم مَنْ بَلَغَتْ عِنْدَهُ مِنَ الإِبِلِ صَدَقَةُ الْجَذَعَةِ، وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ جَذَعَةٌ وَعِنْدَهُ حِقَّةٌ، فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ الْحِقَّةُ وَيَجْعَلُ مَعَهَا شَاتَيْنِ إِنِ اسْتَيْسَرَتَا لَهُ أَوْ عِشْرِيْنَ دِرْهَمًا، وَمَنْ بَلَغَتْ عِنْدَهُ صَدَقَةُ الْحِقَّةِ وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ الْحِقَّةُ وَعِنْدَهُ الْجَذَعَةُ، فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ الْجَذَعَةُ، وَيُعْطِيْهِ الْمُصَدِّقُ عِشْرِيْنَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ، وَمَنْ بَلَغَتْ عِنْدَهُ صَدَقَةُ الْحِقَّةِ وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ إِلاَّ بِنْتُ لَبُوْنٍ فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ بِنْتُ لَبُوْنٍ، وَيُعْطِى شَاتَيْنِ أَوْ عِشْرِيْنَ دِرْهَمًا، وَمَنْ بَلَغَتْ صَدَقَتُهُ بِنْتَ لَبُوْنٍ وَعِنْدَهُ حِقَّةٌ فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ الْحِقَّةُ وَيُعْطِيْهِ الْمُصَدِّقُ عِشْرِيْنَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ، وَمَنْ بَلَغَتْ صَدَقَتُهُ بِنْتَ لَبُوْنٍ وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ وَعِنْدَهُ بِنْتُ مَخَاضٍ، فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ بِنْتُ مَخَاضٍ وَيُعْطِى مَعَهَا عِشْرِيْنَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আবূ বকর (রাঃ) তাঁর কাছে আল্লাহ তাঁর রাসূল (ছাঃ)-কে যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন তা লিখে পাঠান : যে ব্যক্তির উপর উটের যাকাত হিসাবে জায‘আহ্ (পঞ্চম বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) ফরয হয়েছে, অথচ তার নিকট জায‘আহ্ নেই বরং তার নিকট হিক্কাহ্ (চতুর্থ বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) রয়েছে, তখন হিক্কাহ্ গ্রহণ করা হবে। এর সাথে সম্ভব হলে (ক্ষতিপূরণ স্বরূপ) দু’টি ছাগল দিবে অথবা ২০ দিরহাম দিবে। আর যার উপর যাকাত হিসাবে হিক্কাহ্ ফরয হয়েছে, অথচ তার কাছে হিক্কাহ্ নেই বরং জায‘আহ্ রয়েছে তখন তার নিকট হতে জায‘আহ্ গ্রহণ করা হবে। আর যাকাত আদায়কারী (ক্ষতিপূরণ স্বরূপ) মালিককে ২০ দিরহাম অথবা দু’টি ছাগল দিবে। যার উপর হিক্কাহ্ ফরয হয়েছে, অথচ তার নিকট বিনতু লাবূন (তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) রয়েছে, তখন বিনতু লাবূনই গ্রহণ করা হবে। তবে মালিক দু’টি ছাগল অথবা ২০ দিরহাম দিবে। আর যার উপর বিনতু লাবূন ফরয হয়েছে, কিন্তু তার কাছে হিক্কাহ্ রয়েছে, তখন তার নিকট হতে হিক্কাহ্ গ্রহণ করা হবে এবং আদায়কারী মালিককে ২০ দিরহাম অথবা দু’টি ছাগল দিবে। আর যার উপর বিনতু লাবূন ফরয হয়েছে, কিন্তু তার নিকটে বিনতু মাখায (দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী উষ্ট্রি) রয়েছে, তবে তার নিকট থেকে তাই গ্রহণ করা হবে, অবশ্য মালিক এর সঙ্গে ২০ দিরহাম অথবা দু’টি ছাগল দিবে’।[2]

(গ) পশু মধ্যম মানের হওয়া : অতীব উত্তম পশু বাছাই করে গ্রহণ করা যাকাত আদায়কারীদের জন্য যেমন জায়েয নয়, তেমনি জায়েয নয় অতীব নিকৃষ্ট পশু গ্রহণ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানের শাসক নিয়োগ করে পাঠানোর সময় বলেছিলেন,

فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لَكَ بِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ، وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُوْمِ، فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ-

‘তুমি তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) ফরয করেছেন- যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের গরীবদের মাঝে বণ্টন করা হবে। তোমার এ কথা যদি তারা মেনে নেয়, তবে কেবল তাদের উত্তম মাল থেকে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে এবং মাযলূমের বদদো‘আকে ভয় করবে। কেননা তার (বদদো‘আ) এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না’।[3]

[1]. আবূদাউদ হা/১৫৮২; সিলসিলা ছহীহা হা/১০৪৬।

[2]. বুখারী হা/১৪৫৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়; মিশকাত হা/১৭৯৬।

[3]. বুখারী হা/১৪৯৬, ‘যাকাত’ অধ্যায়; মুসলিম হা/১৯; মিশকাত হা/১৭৭২।