আহবানের শির্ক বলতে পুণ্যার্জন বা মানুষের সাধ্যের বাইরে এমন কোন পার্থিব লাভের আশায় অথবা এমন কোন পার্থিব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কাউকে আহবান করাকে বুঝানো হয়।
সকল আহবান একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য এবং তা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। যা তিনি ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক। তবে মানুষের সাধ্যের বাইরে নয় এমন কোন সহযোগিতার জন্য সক্ষম যে কোন ব্যক্তিকে আহবান করা যেতে পারে। এতদ্সত্ত্বেও এ সকল ব্যাপারে মানুষের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল হওয়া ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
وَأَنَّ الْـمَسَاجِدَ للهِ فَلاَ تَدْعُوْا مَعَ اللهِ أَحَدًا
‘‘নিশ্চয়ই মসজিদসমূহ একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকার পাশাপাশি অন্য কাউকে ডেকো না’’।
(জিন : ১৮)
যারা আল্লাহ্ তা’আলাকে গর্ব করে ডাকছে না তাদেরকে তিনি জাহান্নামের হুমকি দিয়েছেন।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِيْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ، إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ»
‘‘তোমাদের প্রভু বলেন: তোমরা আমাকে সরাসরি ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। নিশ্চয়ই যারা অহঙ্কার করে আমার ইবাদাত (দো’আ বা আহবান) হতে বিমুখ হবে তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’। (মু’মিন/গাফির : ৬০)
আল্লাহ্ তা’আলা ভিন্ন অন্য কাউকে ডাকা হলেও তারা কখনো কারোর ডাকে সাড়া দিবে না। বরং তাদেরকে ডাকা সর্বদা ব্যর্থ ও নিষ্ফল হতে বাধ্য।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«لَهُ دَعْوَةُ الْـحَقِّ، وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ لاَ يَسْتَجِيْبُوْنَ لَـهُمْ بِشَيْءٍ إِلاَّ كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْـمَآءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهِ، وَمَا دُعَآءُ الْكَافِرِيْنَ إِلاَّ فِيْ ضَلاَلٍ»
‘‘সত্যিকারের একক ডাক একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। যারা তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে আহবান করে তাদের আহবানে ওরা কখনো কোন সাড়া দিবে না। তারা ওব্যক্তির ন্যায় যে মুখে পানি পৌঁছুবে বলে হস্তদ্বয় সম্প্রসারিত করেছে। অথচ সে পানি কখনো তার মুখে পৌঁছুবার নয়। বস্ত্তত কাফিরদের ডাক ব্যর্থ ও নিষ্ফল হতে বাধ্য’’। (রা’দ : ১৪)
যারা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কাউকে ডাকে তাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলা ভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لاَ يَسْتَجِيْبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَآئِهِمْ غَافِلُوْنَ»
‘‘সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে? যে আল্লাহ্ তা’আলার পরিবর্তে এমন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে ডাকে যা কস্মিনকালেও (কিয়ামত পর্যন্ত) তার ডাকে সাড়া দিবে না এবং তারা ওদের প্রার্থনা সম্পর্কে কখনো অবহিত নয়’’। (আহ্কাফ : ৫)
ইব্রাহীম (আ.) মুশরিকদেরকে এবং তারা যাদেরকে ডাকতো তাদেরকেও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকেন। যাঁকে ডাকলে কখনো সে ডাক ব্যর্থ হয় না।
তিনি বলেন:
«وَأَعْتَزِلُكُمْ وَمَا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَأَدْعُوْ رَبِّيْ عَسَى أَلاَّ أَكُوْنَ بِدُعَاءِ رَبِّيْ شَقِيًّا»
‘‘আমি তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া যাদেরকে ডাকছো সকলকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমি শুধু আমার প্রভুকে ডাকছি। আশা করি, আমার প্রভুকে ডেকে আমি কখনো ব্যর্থ হবো না’’। (মারইয়াম: ৪৮)
একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই সকল লাভ-ক্ষতির মালিক। অন্য কেউ নয়। তিনি ইচ্ছে না করলে কেউ কারোর লাভ বা ক্ষতি করতে পারে না। আর সকল কল্যাণাকল্যাণও কিন্তু মানব সাধ্যের আওতাধীন নয়। বরং তার অনেকটুকুই মানব সাধ্যাতীত। সুতরাং সকল ব্যাপারে তাঁকেই ডাকতে হবে।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَلاَ تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ، فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِيْنَ، وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ، وَإِنْ يُّرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَادَّ لِفَضْلِهِ، يُصِيْبُ بِهِ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهِ، وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ»
‘‘আর তুমি আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া এমন কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে ডাকো না যা তোমার কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারবে না। এমন করলে সত্যিই তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে কোন ক্ষতির সম্মুখীন করেন তাহলে তিনিই একমাত্র তোমাকে তা থেকে উদ্ধার করতে পারেন। আর যদি তিনি তোমার কোন কল্যাণ করতে চান তাহলে তাঁর অনুগ্রহের গতিরোধ করার সাধ্য কারোরই নেই। তিনি নিজ বান্দাহ্দের মধ্য থেকে যাকে চান অনুগ্রহ করেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়ালু’’। (ইউনুস : ১০৬-১০৭)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«قُلِ ادْعُوْا الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُوْنِ اللهِ لاَ يَمْلِكُوْنَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِيْ السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِيْ الأَرْضِ وَمَا لَـهُمْ فِيْهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَّمَا لَهُ مِنْهُمْ مِّنْ ظَهِيْرٍ، وَلاَ تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلاَّ لِـمَنْ أَذِنَ لَهُ»
‘‘হে নবী তুমি বলে দাও: তোমরা যাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলার পরিবর্তে পূজ্য মনে করো তাদেরকে ডাকো। তারা আকাশ ও পৃথিবীর অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয়। এতদুভয়ে তাদের কোন অংশীদারিত্বও নেই এবং তাদের কেউ তাঁর সহায়কও নয়। তাঁর নিকট একমাত্র অনুমতিপ্রাপ্তদেরই কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হতে পারে’’। (সাবা : ২২-২৩)
তিনি আরো বলেন:
«وَالَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ مَا يَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِيْرٍ، إِنْ تَدْعُوْهُمْ لاَ يَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْ وَلاَ يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيْرٍ»
‘‘তামরা আল্লাহ্ তা’আলার পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা (খেজুরের আঁটির আবরণ পরিমাণ) সামান্য কিছুরও মালিক নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা কিছুতেই শুনতে পাবে না। আর শুনতে পাচ্ছে বলে মেনে নিলেও তারা তো তোমাদের ডাকে কখনো সাড়া দিবে না। কিয়ামতের দিবসে তারা তোমাদের শির্ককে অস্বীকার করবে। আমার মতো সর্বজ্ঞের ন্যায় কেউই তোমাকে সঠিক সংবাদ দিতে পারবে না’’।
(ফাতির : ১৩-১৪)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল (সা.) আমাকে কিছু মূল্যবান বাণী শুনিয়েছেন যার কিয়দাংশ নিম্নরূপ:
إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ، وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَّنْفَعُوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُـوْكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ، وَلَوِ اجْتَمَعُوْا عَلَى أَنْ يَّضُرُّوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوْكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ
‘‘কিছু চাইলে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার নিকটই চাইবে। কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার নিকটই কামনা করবে। জেনে রেখো, পুরো বিশ্ববাসী একত্রিত হয়েও যদি তোমার কোন কল্যাণ করতে চায় তাহলে তারা ততটুকুই কল্যাণ করতে পারবে যা তোমার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। আর তারা সকল একত্রিত হয়েও যদি তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় তাহলে তারা ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যা তোমার জন্য বরাদ্দ রয়েছে’’। (তিরমিযী, হাদীস ২৫১৬)
এ হচ্ছে মানব সাধ্যাধীন কল্যাণাকল্যাণ সম্পর্কে। তাহলে যা মানব সাধ্যাতীত তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছা ছাড়া কখনো ঘটবে কি? কখনোই নয়।
আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকা বা তাঁর নিকট দো’আ করা যে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত তা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) অসংখ্য হাদীসে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে এসে সকল মানুষকে দো’আর জন্য আহবান করে থাকেন।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُوْلُ: مَنْ يَّدْعُوْنِيْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، مَنْ يَّسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَّسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهُ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেন, কে আছে যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছে যে আমার কাছে কিছু চাবে আমি তাকে তা দান করবো। কে আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো’’। (বুখারী, হাদীস ১১৪৫ মুসলিম, হাদীস ৭৫৮ আবু দাউদ, হাদীস ১৩১৫ তির্মিযী, হাদীস ৩৪৯৮ মালিক, হাদীস ৩০)
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللهِ تَعَالىَ مِنَ الدُّعَاءِ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলার নিকট দো’আর চাইতেও সম্মানিত কোন বস্ত্ত নেই’’। (তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭০ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৮৯৭ ইবনু হিব্বান/ইহসান, হাদীস ৮৬৭)
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ لَمْ يَدْعُ اللهَ سُبْحَانَهُ غَضِبَ عَلَيْهِ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকে না তার উপর তিনি রাগান্বিত হন’’। (আদাবুল্ মুফ্রাদ, হাদীস ৬৫৮ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৮৯৫)
নু’মান বিন্ বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ
‘‘দো’আই হচ্ছে ইবাদাত’’। (তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭২ আবু দাউদ, হাদীস ১৪৭৯ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৮৯৬ ইবনু হিব্বান/ইহ্সান, হাদীস ৮৮৭)
সুতরাং এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক বৈ কি।
এমন তো নয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা কোন মাধ্যম ছাড়া কারোর ডাকে সাড়া দেন না। বরং তিনি যখনই কোন বান্দাহ্ তাঁকে একান্তভাবে ডাকে, সাথে সাথেই তিনি তার ডাকে সাড়া দেন।
তিনি বলেন:
«وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ، أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَـانِ، فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ»
‘‘যখন আমার বান্দাহরা আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তখন আপনি তাদেরকে বলুনঃ নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ্ তা’আলা) অতি সন্নিকটে। কোন আহবানকারী যখনই আমাকে আহবান করে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দেই। অতএব তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার উপর ঈমান আনে। তাহলেই তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে’’। (বাক্বারাহ্ : ১৮৬)
কবরবাসী কোন ওলী বা বুযুর্গ কারোর কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারে এমন বিশ্বাস করে তাদেরকে ডাকাও কিন্তু এ জাতীয় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। এমন ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের গন্ডী থেকে বের হয়ে যাবে। যদিও সে আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত ইবাদাতগুযার বান্দাহ্ হোক না কেন। কারণ, মক্কার কাফিররাও তো আল্লাহ্ তা’আলাকে স্বীকার করতো এবং তাঁর ইবাদাত করতো। কিন্তু শির্কের কারণেই তাদের এ ইবাদাত কোন কাজে আসেনি। তাই তারা অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে।
আল্লাহ্ তা’আলা মক্কার কাফিরদের সম্পর্কে বলেন:
«وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ لَيَقُوْلُنَّ اللهُ، قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنَ اللهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِيْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ، قُلْ حَسْبِيَ اللهُ، عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْـمُتَوَكِّلُوْنَ»
‘‘আপনি যদি কাফিরদেরকে জিজ্ঞাসা করেন: আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবেঃ আল্লাহ্ তা’আলাই সৃষ্টি করেছেন। আপনি বলুন: তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো যে, আল্লাহ্ তা’আলা আমার কোন অনিষ্ট করতে চাইলে তোমাদের উপাস্যরা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? বা আল্লাহ্ তা’আলা আমার প্রতি কোন অনুগ্রহ করতে চাইলে ওরা কি সে অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে? আপনি বলুন: আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। ভরসাকারীদেরকে তাঁর উপরই ভরসা করতে হবে’’। (যুমার : ৩৮)
মক্কার কাফিররা আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদাতকে মৌলিক মনে করতো। তবে তারা মূর্তিপূজা করতো একমাত্র তাঁরই নৈকট্য লাভের জন্য।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«أَلاَ لِلهِ الدِّيْنُ الْـخَالِصُ، وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَآءَ، مَا نَعْبُدُهُمْ إِلاَّ لِيُقَرِّبُوْنَا إِلَى اللهِ زُلْفَى، إِنَّ اللهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِيْ مَا هُمْ فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ، إِنَّ اللهَ لاَ يَهْدِيْ مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ»
‘‘জেনে রেখো, অবিমিশ্র আনুগত্য একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য। আর যারা আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবক বা সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করেছে তারা বলে: আমরা তো এদের পূজা এ জন্যই করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলার সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে। তারা যে বিষয় নিয়ে এখন নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন সে বিষয়ের সঠিক ফায়সালা দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা কাফির ও মিথ্যাবাদীকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না’’। (যুমার : ৩)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنْفَعُهُمْ وَيَقُوْلُوْنَ هَؤُلآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنْدَ اللهِ، قُلْ أَتُنَبِّئُوْنَ اللهَ بِمَا لاَ يَعْلَمُ فِيْ السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِيْ الأَرْضِ، سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ»
‘‘তারা আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত এমন ব্যক্তি বা বস্ত্তসমূহের ইবাদাত করে যা তাদের কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারে না। তারা বলে: এরা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করবে। আপনি বলে দিন: তোমরা কি আল্লাহ্ তা’আলাকে ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলে তাঁর অজানা কোন কিছু জানিয়ে দিচ্ছো? তিনি পবিত্র এবং তিনি তাদের শির্ক হতে অনেক ঊর্ধ্বে’’। (ইউনুস : ১৮)
তিনি আরো বলেন:
«أَمِ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ شُفَعَآءَ، قُلْ أَوَلَوْ كَانُوْا لاَ يَمْلِكُوْنَ شَيْئًا وَّلاَ يَعْقِلُوْنَ، قُلْ للهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيْعًا ، لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ»
‘‘তারা কি আল্লাহ্ তা’আলার অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে সুপারিশকারী বানিয়ে নিয়েছে? আপনি বলে দিন: তোমরা কি কাউকে সুপারিশকারী বানিয়ে নিয়েছো? অথচ তারা এ ব্যাপারে কোন ক্ষমতাই রাখে না এবং কিছুই বুঝে না। আপনি বলে দিন: যাবতীয় সুপারিশ একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য তথা তাঁরই ইখতিয়ারে। অন্য কারোর ইখতিয়ারে নয়। আকাশ ও ভূমন্ডলের সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। পরিশেষে তাঁর নিকটই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’’। (যুমার : ৪৩-৪৪)
কবর পূজারীদের অনেকেই মনে মনে এমন ধারণা পোষণ করে থাকবেন যে, মক্কার কাফির ও মুশ্রিকরা নিজ মূর্তিদের ব্যাপারে এমন মনে করতো যে, তাদের মূর্তিরা স্পেশালভাবে এমন কিছু ক্ষমতার মালিক যা আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে কখনোই দেননি। বরং তাদের এ সকল ক্ষমতা একান্তভাবেই তাদের নিজস্ব। আর আমরা আমাদের পীর-বুযুর্গদের সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করছি তা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা মনে করছি যে, আমাদের পীর-বুযুর্গদের সকল ক্ষমতা একান্ত আল্লাহ্ প্রদত্ত। আল্লাহ্ তা’আলা নিজ দয়ায় তাঁর ওলীদেরকে এ সকল ক্ষমতা দিয়েছেন। তা সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব নয়।
মূলতঃ তাদের এ ধারণা একেবারেই বাস্তববর্জিত। কারণ, মক্কার কাফির- মুশ্রিকদের ধারণাও হুবহু এমন ছিলো। বিন্দুমাত্রও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। তারাও তাদের মূর্তিদের ক্ষমতাগুলোকে একান্তভাবেই আল্লাহ্ প্রদত্ত বলে মনে করতো। একেবারেই তাদের নিজস্ব ক্ষমতা বলে কখনোই মনে করতো না।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَ الْـمُشْرِكُوْنَ يَقُوْلُوْنَ: لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ، قَالَ: فَيَقُوْلُ رَسُوْلُ اللهِ : وَيْلَكُمْ! قَدْ قَدْ، فَيَقُوْلُوْنَ: إِلاَّ شَرِيْكًا هُوَ لَكَ، تَمْلِكُهُ وَمَا مَلَكَ، يَقُوْلُوْنَ هَذَا وَهُمْ يَطُوْفُوْنَ بِالْبَيْتِ
‘‘মুশরিকরা বলতো: (হে প্রভু!) আপনার ডাকে আমি সর্বদা উপস্থিত এবং আপনার আনুগত্যে আমি একান্তভাবেই বাধ্য। আপনার কোন শরীক নেই। তখন রাসূল (সা.) বলতেন: হায়! তোমাদের কপাল পোড়া। এতটুকুই যথেষ্ট। এতটুকুই যথেষ্ট। আর একটুও বাড়িয়ে বলো না। তারপরও তারা বলতো: তবে হে আল্লাহ্! আপনার এমন শরীক রয়েছে যার মালিক আপনি এবং সে যা কিছুর মালিক সেগুলোও আপনার। তার নিজস্ব কিছুই নেই। তারা এ বাক্যগুলো বলতো এবং ক্বাবা শরীফ তাওয়াফ করতো’’। (মুসলিম, হাদীস ১১৮৫)
ফরিয়াদের শির্ক বলতে নিতান্ত অসহায় অবস্থায় আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কাউকে সাহায্যের জন্য আহবান করাকে বুঝানো হয়। যে ধরনের সাহায্য সাধারণত একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কেউ করতে সক্ষম নয়। যেমন: রোগ নিরাময় বা নৌকোডুবি থেকে উদ্ধার ইত্যাদি।
এ জাতীয় ফরিয়াদ গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত যা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক।
যে কোন সঙ্কট মুহূর্তে সাহায্যের জন্য ফরিয়াদ করা হলে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই সে ফরিয়াদ শুনে থাকেন এবং তদনুযায়ী বান্দাহ্কে তিনি সাহায্য করেন। অন্য কেউ নয়।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«إِذْ تَسْتَغِيْثُوْنَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ»
‘‘স্মরণ করো সেই সংকট মুহূর্তের কথা যখন তোমরা নিজ প্রভুর নিকট কাতর স্বরে প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তোমাদের সেই প্রার্থনা কবুল করেছিলেন’’। (আনফাল্ : ৯)
মক্কার কাফিররা সংকট মুহূর্তে নিজ মূর্তিদের কথা ভুলে গিয়ে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার নিকটই ফরিয়াদ করতো। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে সেই সংকট থেকে উদ্ধার করতেন। এরপর তারা আবারো আল্লাহ্ তা’আলাকে ভুলে গিয়ে তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বর্তমান যুগের কবর বা পীর পূজারীরা আরো অধঃপতনে পৌঁছেছে। তারা সংকট মুহূর্তেও আল্লাহ্ তা’আলাকে ভুলে গিয়ে নিজ পীরদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকে।
আল্লাহ্ তা’আলা মক্কার কাফিরদের সম্পর্কে বলেন:
«فَإِذَا رَكِبُوْا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ، فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُوْنَ»
‘‘তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন তারা একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকে। অন্য কাউকে নয়। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে পানি থেকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছে দেন তখন তারা আবারো তাঁর সাথে শির্কে লিপ্ত হয়’’। (আনকাবূত: ৬৫)
তিনি আরো বলেন:
«قُلْ أَرَأَيْتَكُمْ إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُ اللهِ أَوْ أَتَتْكُمُ السَّاعَةُ أَغَيْرَ اللهِ تَدْعُوْنَ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ، بَلْ إِيَّاهُ تَدْعُوْنَ فَيَكْشِفُ مَا تَدْعُوْنَ إِلَيْهِ إِنْ شَآءَ وَتَنْسَوْنَ مَا تُشْرِكُوْنَ»
‘‘আপনি ওদেরকে বলুন: তোমরাই বলো! আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে কোন শাস্তি অথবা কিয়ামত এসে গেলে তোমরা কি তখন আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবে? তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে অবশ্যই সঠিক উত্তর দিবে। সত্যিই তোমরা তখন অন্য কাউকে ডাকবেনা। বরং তখন তোমরা ডাকবে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাকে। তখন তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। আর তখন তোমরা অন্যকে আল্লাহ্ তা’আলার সাথে শরীক করা ভুলে যাবে’’। (আন্’আম : ৪০-৪১)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَإِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِيْ الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ إِلاَّ إِيَّاهُ فَلَمَّا نَجَّاكُمْ إِلَى الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ، وَكَانَ الإِنْسَانُ كَفُوْرًا»
‘‘সমুদ্রে থাকাকালীন যখন তোমরা কোন বিপদে পড়ো তখন আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য সকল শরীক তোমাদের মন থেকে উধাও হয়ে যায়। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছে দেন তখন তোমরা আবারো তাঁর প্রতি বিমুখ হয়ে যাও। সত্যিই মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ’’। (ইস্রা/বানী ইস্রাঈল : ৬৭)
তিনি আরো বলেন:
«وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُوْنَ، ثُمَّ إِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنْكُمْ إِذَا فَرِيْقٌ مِّنْكُمْ بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُوْنَ»
‘‘তোমরা যে সকল নিয়ামত ভোগ করছো তা সবই আল্লাহ্ তা’আলার নিকট হতে। অতঃপর যখন তোমরা দুঃখ দীনতার সম্মুখীন হও তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে ডাকো। অতঃপর যখন তিনি তোমাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করে দেন তখন আবারো তোমাদের একদল নিজ প্রতিপালকের সঙ্গে শির্কে লিপ্ত হয়ে যায়’’। (নাহ্ল : ৫৩-৫৪)
আল্লাহ্ তা’আলা এ জাতীয় শির্কে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে জাহান্নামী বলেছেন। তিনি বলেন:
«وَإِذَا مَسَّ الإِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهُ مُنِيْبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَهُ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُوْ إِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ وَجَعَلَ للهِ أَنْدَادًا لِّيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِهِ، قُلْ تَمَتَّعْ بِكُفْرِكَ قَلِيْلًا، إِنَّكَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ»
‘‘মানুষকে যখন দুঃখ দুর্দশা পেয়ে বসে তখন সে একনিষ্ঠভাবে তার প্রভুকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি ওর প্রতি কোন অনুগ্রহ করেন তখন সে ইতিপূর্বে আল্লাহ্ তা’আলাকে স্মরণ করার কথা ভুলে গিয়ে তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে অন্যদেরকে তাঁর পথ থেকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে। (হে রাসূল!) তুমি বলে দাও: আরো কিছু দিন কুফরীর মজা ভোগ করো। নিশ্চয়ই তুমি জাহান্নামীদের অন্যতম’’। (যুমার : ৮)
পীর বা কবর পূজারীরা যতই নিজ ওলী বা বুযুর্গদের নিকট ফরিয়াদ করুকনা কেন, যতই তাদের পূজা অর্চনা করুকনা কেন তারা এতটুকুও নিজ ভক্তদের দুর্দশা ঘুচাতে পারবে না।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«قُلِ ادْعُوْا الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُوْنِهِ فَلاَ يَمْلِكُوْنَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلاَ تَحْوِيْلًا»
‘‘আপনি বলে দিন: তোমরা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া যাদেরকে পূজ্য বানিয়েছো তাদেরকে ডাকো। দেখবে, তারা তোমাদের কোন দুঃখ দুর্দশা দূর করতে পারবে না। এমনকি সামান্যটুকু পরিবর্তনও নয়’’।
(ইস্রা/বানী ইস্রাঈল : ৫৬)
তিনি আরো বলেন:
«أَمَّنْ يُّجِيْبُ الْـمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الأَرْضِ، أَإِلَهٌ مَّعَ اللهِ، قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ»
‘‘মূর্তীদের উপাসনা করাই উত্তম না সেই সত্তার উপাসনা যিনি আর্তের ডাকে সাড়া দেন, বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন এবং যিনি পৃথিবীতে তোমাদেরকে প্রতিনিধি বানিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’আলার সমকক্ষ অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো’’। (নাম্ল : ৬২)
একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই সকল সমস্যা সমাধান করতে পারেন। তা যাই হোকনা কেন এবং যে পর্যায়েরই হোকনা কেন।
আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
يَا عِبَادِيْ! كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلاَّ مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُوْنِيْ أَهْدِكُمْ، يَا عِبَادِيْ! كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلاَّ مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُوْنِيْ أُطْعِمْكُمْ، يَا عِبَادِيْ! كُلُّكُمْ عَارٍ إِلاَّ مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُوْنِيْ أَكْسُكُمْ، يَا عِبَادِيْ! إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا فَاسْتَغْفِرُوْنِيْ أَغْفِرْ لَكُمْ
‘‘(আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বান্দাহ্দেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন) হে আমার বান্দাহরা! তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট। শুধু সেই ব্যক্তিই হিদায়াতপ্রাপ্ত যাকে আমি হিদায়াত দেবো। অতএব তোমরা আমার নিকটই হিদায়াত চাও। আমি তোমাদেরকে হিদায়াত দেবো। হে আমার বান্দাহ্রা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত। শুধু সেই ব্যক্তিই আহারকারী যাকে আমি আহার দেবো। অতএব তোমরা আমার নিকটই আহার চাও। আমি তোমাদেরকে আহার দেবো। হে আমার বান্দাহ্রা! তোমরা সবাই বিবস্ত্র। শুধু সেই ব্যক্তিই আবৃত যাকে আমি আবরণ দেবো। অতএব তোমরা আমার নিকটই আবরণ চাও। আমি তোমাদেরকে আবরণ দেবো। হে আমার বান্দাহ্রা! তোমরা সবাই রাতদিন গুনাহ্ করছো। আর আমি সকল গুনাহ্ ক্ষমাকারী। অতএব তোমরা আমার নিকটই ক্ষমা চাও। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবো’’। (মুসলিম, হাদীস ২৫৭৭)
আশ্রয়ের শির্ক বলতে যে কোন অনিষ্টকর বস্ত্ত বা ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর শরণাপন্ন হওয়াকেই বুঝানো হয়।
আল্লাহ্ তা’আলার নিকট এ জাতীয় কোন আশ্রয় কামনা করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত যা তিনি ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক। তবে যে আশ্রয় মানব সাধ্যাধীন তা সক্ষম যে কারোর নিকট চাওয়া যেতে পারে। তবুও এ ব্যাপারে কারোর উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়া ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নিকটই আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন:
«وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ، إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ»
‘‘যদি শয়তান তোমাকে কুমন্ত্রণা দিয়ে প্ররোচিত করতে চায় তাহলে তুমি একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই আশ্রয় চাবে। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ’’। (ফুস্সিলাত/হা-মীম আসসাজদাহ্ : ৩৬)
তিনি আরো বলেন:
«وَقُلْ رَّبِّ أَعُوْذُبِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَعُوْذُبِكَ رَبِّ أَنْ يَّحْضُرُوْنَ»
‘‘আর আপনি বলুন: হে আমার প্রভু! আমি শয়তানের প্ররোচনা হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আপনার নিকটই আশ্রয় প্রার্থনা করি তাদের উপস্থিতি হতে’’। (মু’মিনূন : ৯৭-৯৮)
মানব শত্রুর অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যও একমাত্র তাঁরই নিকট আশ্রয় প্রার্থনার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নবীকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন:
«فَاسْتَعِذْ بِاللهِ، إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ»
‘‘অতএব আপনি (ওদের শত্রুতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য) একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই শরণাপন্ন হোন। তিনিই তো সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’’। (গাফির/মু’মিন : ৫৬)
আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর প্রিয় নবীকে আরো ব্যাপকভাবে তাঁর আশ্রয় চাওয়া শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন:
«قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ، مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، وَمِنْ شَـرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ، وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِيْ الْعُقَدِ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ»
‘‘আপনি বলুন: আমি আশ্রয় চাচ্ছি প্রভাতের প্রভুর তাঁর সকল সৃষ্টি, অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত, গ্রন্থিতে ফুৎকারকারিনী নারী এবং হিংসুকের হিংসার অনিষ্ট থেকে’’। (ফালাক্ব : ১-৫)
তিনি আরো বলেন:
«قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ، مَلِكِ النَّاسِ، إِلَهِ النَّاسِ، مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْـخَنَّاسِ، الَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ، مِنَ الْـجِنَّةِ وَالنَّاسِ»
‘‘আপনি বলুন: আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানবের প্রভু, মালিক ও উপাস্যের আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানব অন্তরে। চাই সে জিন হোক অথবা মানুষ’’। (নাস : ১-৬)
আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর আশ্রয় চাইলে তাতে তারা তাদের অনিষ্ট কখনো বন্ধ করেনা বরং তারা আরো হঠকারী, অনিষ্টকারী ও গুনাহ্গার হয় এবং আশ্রয় অনুসন্ধানীরা আরো বিপথগামী ও পথভ্রান্ত হয়।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الإِنْسِ يَعُوْذُوْنَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْـجِنِّ فَزَادُوْهُمْ رَهَقًا»
‘‘আর কিছু সংখ্যক মানুষ কতক জিনের আশ্রয় প্রার্থনা করতো। তাতে করে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা আরো বাড়িয়ে দেয়’’। (জিন : ৬)
জিনদের আশ্রয় কামনাকারী মুশ্রিক বা জাহান্নামী হলেও তারা আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছায় মানুষের কিছুনা কিছু উপকার করতে অবশ্যই সক্ষম। সুতরাং তাদের থেকে উপকার পাওয়া যাচ্ছে বলে তাদের আশ্রয় কামনা করা কখনোই জায়েয হবেনা। শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তি কর্তৃক উপকৃত হওয়া তা জায়েয বা হালাল হওয়া প্রমাণ করেনা। এমনও অনেক বস্ত্ত বা কর্ম রয়েছে যা হারাম বা না জায়েয হওয়া সত্ত্বেও তা কর্তৃক মানুষ কিছু না কিছু উপকৃত হয়ে থাকে। যেমন: ব্যভিচার, সুদ, ঘুষ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে, কোর’আন ও হাদীসে অজ্ঞ বা অপরিপক্ব পীর ফকিররা যে কোন সমস্যার সমাধানে সাধারণত জিনদের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে।
মানুষরা যে জিন জাতি কর্তৃক কখনো কখনো উপকৃত হতে পারে তা আল্লাহ্ তা’আলা কোর’আন মাজীদের মধ্যে সুন্দরভাবে বর্ণনা করেন।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ قَدِ اسْتَكْثَرْتُمْ مِنَ الإِنْسِ، وَقَالَ أَوْلِيَآؤُهُمْ مِّنَ الإِنْسِ رَبَّنَا اسْتَمْتَعَ بَعْضُنَا بِبَعْضٍ وَبَلَغْنَآ أَجَلَنَا الَّذِيْ أَجَّلْتَ لَنَا، قَالَ النَّارُ مَثْوَاكُمْ خَالِدِيْنَ فِيْهَآ إِلاَّ مَا شَآءَ اللهُ، إِنَّ رَبَّكَ حَكِيْمٌ عَلِيْمٌ»
‘‘হে মোহাম্মাদ! স্মরণ করুন সে দিনকে যে দিন আল্লাহ্ তা’আলা কাফির ও জিন শয়তানদেরকে একত্রিত করে বলবেন: হে জিন সম্প্রদায়! তোমরা বহু মানুষকে গুমরাহ্ করেছো। তখন তাদের কাফির অনুসারীরা বলবে: হে আমাদের প্রভু! আমরা একে অপরের মাধ্যমে প্রচুর লাভবান হয়েছি। এভাবেই আমরা আমাদের নির্ধারিত জীবন অতিবাহিত করেছি। আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন: জাহান্নামই হচ্ছে তোমাদের বাসস্থান। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। তবে আল্লাহ্ তা’আলা যাকে মুক্তি দিতে চাইবেন সেই একমাত্র মুক্তি পাবে। অন্যরা নয়। নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু সুকৌশলী এবং অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়’’। (আন্’আম : ১২৮)
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) বিশেষ প্রয়োজনে সকলকে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার আশ্রয় চাওয়া শিখিয়েছেন। অন্য কারোর নয়।
খাওলা বিন্তে হাকীম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ نَزَلَ مَنْزِلًا ثُمَّ قَالَ: أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، لَمْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ حَتَّى يَرْتَحِلَ مِنْ مَنْزِلِهِ ذَلِكَ
‘‘যে ব্যক্তি কোন জায়গায় অবস্থান করে বলবেঃ আল্লাহ্ তা’আলার পরিপূর্ণ বাণীর আশ্রয় চাচ্ছি তাঁর সকল সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে। তাহলে উক্ত স্থান ত্যাগ করা পর্যন্ত কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তি তার এতটুকুও ক্ষতি করতে পারবে না’’। (মুসলিম, হাদীস ২৭০৮ তিরমিযী, হাদীস ৩৪৩৭)
আশা বা বাসনার শির্ক বলতে মানুষের অসাধ্য এমন কোন বস্তত একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর নিকট কামনা করাকে বুঝানো হয়। যেমন: কবরে শায়িত পীর-বুযুর্গের নিকট স্বামী বা সন্তান কামনা করা।
এ জাতীয় বাসনা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত যা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক।
তবে কোন পুণ্যকর্ম সম্পাদন না করে আল্লাহ্ তা’আলার রহমত ও জান্নাতের আশা করাও কিন্তু অমূলক।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«إِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، أُوْلآئِكَ يَرْجُوْنَ رَحْمَةَ اللهِ، وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ»
‘‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ তা’আলার উপর ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত ও আল্লাহ্’র পথে জিহাদ করেছে সত্যিকারার্থে তারাই একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার অনুগ্রহের প্রত্যাশী। তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়’’। (বাক্বারাহ্ : ২১৮)
’আলী (রা.) বলেন:
لاَ يَرْجُوْ عَبْدٌ إِلاَّ رَبَّهُ
‘‘বান্দাহ্’র নিশ্চিত কর্তব্য হলো এইযে, সে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার নিকটই কোন কিছু কামনা করবে। অন্য কারোর নিকট নয়’’।
রুকু, সিজ্দাহ্, সাওয়াবের আশায় কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সামনে বিনম্রভাবে দাঁড়ানো বা নামাযের শির্ক বলতে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য এ সকল গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতগুলো ব্যয় করাকে বুঝানো হয়।
এ ইবাদাতগুলো একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্যই করতে হয়। অন্য কারোর জন্য নয়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا ارْكَعُوْا وَاسْجُدُوْا وَاعْبُدُوْا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوْا الْـخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ»
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমারা রুকূ, সিজ্দাহ্, তোমাদের প্রভুর ইবাদাত এবং সৎকর্ম সম্পাদন করো। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’’। (হাজ্জ: ৭৭)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«لاَ تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلاَ لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ، إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ»
‘‘তোমরা সিজদাহ্ করোনা সূর্য বা চন্দ্রকে। বরং সিজদাহ্ করো সে আল্লাহ্ তা’আলাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন ওগুলোকে। যদি তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করতে চাও’’। (ফুসসিলাত/হা-মীম আস্ সাজদাহ্ : ৩৭)
কাইস্ বিন্ সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি ইয়েমেনের ‘‘হীরা’’ নামক এলাকায় গিয়ে দেখতে পেলাম, সে এলাকার লোকেরা নিজ প্রশাসককে সিজ্দা করে। তখন আমি মনে মনে ভাবলাম, এ জাতীয় সিজ্দাহ্’র উপযুক্ত একমাত্র রাসূলই (সা.) হতে পারে। অন্য কেউ নয়। তাই আমি মদীনায় এসে রাসূল (সা.) কে ঘটনাটি এবং আমার মনের ভাবটুকু জানালে তিনি বললেন:
لاَ تَفْعَلُوْا، لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَّسْجُدَ لِأَحَدٍ لأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَّسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ ؛ لِـمَا جَعَلَ اللهُ لَـهُمْ عَلَيْهِنَّ مِنَ الْـحَقِّ
‘‘বলো! তুমি আমার ইন্তিকালের পর আমার কবরের পাশ দিয়ে গেলে আমার কবরটিকে সিজ্দাহ্ করবে কি? আমি বললাম: না, তিনি বললেন: তাহলে এখনও করোনা। আমি যদি কাউকে কারোর জন্য সিজ্দাহ্ করতে আদেশ করতাম তাহলে মহিলাদেরকে নিজ স্বামীদের জন্য সিজ্দাহ্ করতে আদেশ করতাম। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা পুরুষদেরকে নিজ স্ত্রীদের উপর প্রচুর অধিকার দিয়েছেন’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২১৪০)
আল্লাহ্ তা’আলা নামায ও সুদীর্ঘ বিনম্রভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সম্পর্কে বলেন:
«حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاَةِ الْوُسْطَى وَقُوْمُوْا لِلهِ قَانِتِيْنَ»
‘‘তোমরা নামাযসমূহ বিশেষভাবে মধ্যবর্তী নামায (’আসর) সময় মতো আদায় করো এবং বিনীতভাবে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার উদ্দেশ্যেই দাঁড়াও। অন্য কারোর উদ্দেশ্যে নয়’’। (বাক্বারাহ্ : ২৩৮)
মু’আবিয়াহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি:
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّتَمَثَّلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
‘‘যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট যে, মানুষ তার জন্য মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকুক তাহলে সে যেন নিজ বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়’’।
(তিরমিযী, হাদীস ২৭৫৫)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ»
‘‘আপনি বলে দিন: আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মরণকালের সকল নেক আমল সারা জাহানের প্রভু একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই, আমি এরই জন্যে আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই আমার উম্মতের সর্বপ্রথম মুসলমান’’। (আন্’আম : ১৬২-১৬৩)
তিনি আরো বলেন:
«فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ»
‘‘অতএব তোমার প্রভুর জন্য নামায পড়ো এবং কুরবানী করো’’। (কাউসার : ২)
তাওয়াফের শির্ক বলতে একমাত্র কা’বা শরীফ ব্যতীত অন্য কোন বস্ত্তর তাওয়াফ করাকে বুঝানো হয়।
সাওয়াবের আশায় কোন বস্ত্তর চতুষ্পার্শ্বে তাওয়াফ করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত যা আল্লাহ্ তা’আলার মর্জি ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক। অতএব তা শরীয়ত সমর্থিত হতে হবে। ইচ্ছে করলেই কোন মাজার তাওয়াফ করা যাবেনা।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَلْيَطَّوَّفُوْا بِالْبَيْتِ الْعَتِيْقِ»
‘‘তারা যেন প্রাচীন গৃহ (কা’বা শরীফ) তাওয়াফ করে’’। (হাজ্জ : ২৯)
তিনি আরো বলেন:
«وَعَهِدْنَآ إِلَى إِبْراهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ أَنْ طَهِّرا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِيْنَ وَالْعَاكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ»
‘‘আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আলাইহিমাস্ সালাম) থেকে এ বলে অঙ্গীকার নিয়েছি যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই’তিকাফকারী এবং রুকু ও সিজ্দাহ্কারীদের জন্যে সর্বদা পবিত্র রাখো’’। (বাক্বারাহ্ : ১২৫)
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ حَوْلَ ذِيْ الْـخَلَصَةِ
‘‘কিয়ামত সংঘটিত হবেনা যতক্ষণ না দাউস্ গোত্রের মহিলারা পাছা নাচিয়ে যুল্খালাসা নামক মূর্তির তাওয়াফ করবে’’।
(বুখারী, হাদীস ৭১১৬ মুসলিম, হাদীস ২৯০৬ বাগাওয়ী, হাদীস ৪২৮৫ ইবনু হিব্বান, হাদীস ৬৭১৪ আব্দুর রাযযাক, হাদীস ২০৭৯৫)
তাওবার শির্ক বলতে আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর নিকট তাওবা করাকে বুঝানো হয়।
কোন অপকর্ম বা গুনাহ্ থেকে খাঁটি তাওবা করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত যা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعًا أَيُّهَ الْـمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ»
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্ তা’আলার নিকটই তাওবা করো। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’’। (নূর : ৩১)
সকল গুনাহ্ ক্ষমা করার মালিক একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা। অন্য কেউ নয়। সুতরাং একমাত্র তাঁর কাছেই কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। অন্য কারোর নিকট নয়।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَمَنْ يَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ اللهُ»
‘‘কমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই গুনাহ্ মাফ করতে পারেন’’। (আ’লে-ইমরান : ১৩৫)
জবাইয়ের শির্ক বলতে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর নৈকট্য লাভের জন্য যে কোন পশু জবাই করাকে বুঝানো হয়। চাই তা আল্লাহ্ তা’আলা’র নামেই জবাই করা হোক বা অন্য কারোর নামে। চাই তা নবী, ওলী, বুযুর্গ বা জিনের নামেই হোক বা অন্য কারোর নামে।
সাওয়াবের আশায় কোন পশু জবাই করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত যা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْـمُسْلِمِيْنَ»
‘‘আপনি বলে দিন: আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মরণকালের সকল নেক আমল সারা জাহানের প্রভু একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই, আমি এরই জন্যে আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই আমার উম্মতের সর্বপ্রথম মুসলমান’’।
(আন্’আম : ১৬২-১৬৩)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ»
‘‘সুতরাং আপনার প্রতিপালকের জন্য নামায পড়ুন ও কুরবানি করুন’’। (কাউসার : ২)
’আলী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لَعَنَ اللهُ لِـمَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা লা’নত (নিজ রহমত হতে বঞ্চিত) করেন সে ব্যক্তিকে যে তিনি ব্যতীত অন্য কারোর জন্য পশু জবেহ্ করে’’।
(মুসলিম, হাদীস ১৯৭৮)
সালমান ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
دَخَلَ الْـجَنَّةَ رَجُلٌ فِيْ ذُبَابٍ وَدَخَلَ النَّارَ رَجُلٌ فِيْ ذُبَابٍ، قَالُوْا: وَكَيْفَ ذَلِكَ؟ قَالَ: مَرَّ رَجُلاَنِ عَلَى قَوْمٍ لَـهُمْ صَنَمٌ لاَ يُجَاوِزُهُ أَحَدٌ حَتَّى يُقَرِّبَ لَهُ شَيْئًا، فَقَالُوْا لِأَحَدِهِمَا: قَرِّبْ، قَالَ: مَا عِنْدِيْ شَيْءٌ، قَالُوْا: قَرِّبْ وَلَوْ ذُبَابًا، فَقَرَّبَ ذُبَابًا فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُ فَدَخَلَ النَّارَ، وَقَالُوْا لِلآخَرِ: قَرِّبْ، قَالَ: مَا كُنْتُ لِأُقَرِّبَ لِأَحَدٍ شَيْئًا دُوْنَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَضَرَبُوْا عُنُقَهُ، فَدَخَلَ الْـجَنَّةَ
‘‘জনৈক ব্যক্তি জান্নাতে গিয়েছে একটি মাছির জন্যে। আর অন্য জন জাহান্নামে। শ্রোতারা বললো: তা কিভাবে? তিনি বললেন: একদা দু’ ব্যক্তি কোন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের ছিলো একটি মূর্তি। যাকে কিছু না দিয়ে তথা দিয়ে অতিক্রম করা ছিলো যে কোন ব্যক্তির জন্য দুষ্কর। অতএব তারা এদের একজনকে বললো: মূর্তির জন্য কিছু পেশ করো। সে বললো: আমার কাছে দেয়ার মতো কিছুই নেই। তারা বললো: একটি মাছি হলেও পেশ করো। অতএব সে একটি মাছি পেশ করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাতে করে শির্ক করার দরুন সে জাহান্নামী হয়ে গেলো। তেমনিভাবে তারা অন্য জনকে বললো: মূর্তির জন্য কিছু পেশ করো। সে বললো: আমি আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর জন্য কোন নজরানা পেশ করতে পারবোনা। তাতে করে তারা ওকে হত্যা করলো এবং সে জান্নাতী হলো’’। (আহমাদ/যুহদ : ১৫)
এ জাতীয় কুরবানির গোস্ত খাওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْـمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَـحْمَ الْـخِنْزِيْرِ وَمَآ أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللهِ»
‘‘নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছেন মৃত পশু, প্রবাহিত রক্ত ও শূকরের গোস্ত এবং যা আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর নামে জবেহ্ করা হয়েছে’’। (বাকারাহ্ : ১৭৩)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَلاَ تَأْكُلُوْا مِمَّا لَـمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ، وَإِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ إِلَى أَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْ، وَإِنْ أَطَعْتُمُوْهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ»
‘‘যে পশু আল্লাহ্ তা’আলার নামে জবাই করা হয়নি (বরং তা জবাই করা হয়েছে অন্য কারোর নামে অথবা এমনিতেই মরে গেছে) তা হতে তোমরা এতটুকুও খেয়োনা। কারণ, তা আল্লাহ্ তা’আলার অবাধ্যতার শামিল। শয়তানরা নিশ্চয়ই তাদের অনুগতদের পরামর্শ দিয়ে থাকে তোমাদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্যে। তোমরা তাদের আনুগত্য করলে নিঃসন্দেহে মুশরিক হয়ে যাবে’’। (আন্’আম : ১২১)
যেখানে বিদ্আত বা শির্কের চর্চা হয় যেমন: বর্তমান যুগের মাযারসমূহ সেখানে কোন পশু জবাই করা এমনকি তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার নাম উচ্চারণ করে জবাই করা হলেও তা করা বৈধ নয়। বরং তা মারাত্মক একটি গুনাহ্’র কাজ।
সাবিত বিন্ যাহ্হাক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
نَذَرَ رَجُلٌ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَّنْحَرَ إِبِلًا بِبُوَانَةَ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّيْ نَذَرْتُ أَنْ أَنْحَرَ إِبِلًا بِبُوَانَةَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ كَانَ فِيْهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْـجَاهِلِيَّةِ يُعْبَدُ؟ قَالُوْا: لاَ، قَالَ: هَلْ كَانَ فِيْهَا عِيْدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ؟ قَالُوْا: لاَ، قَالَ: أَوْفِ بِنَذْرِكَ ؛ فَإِنَّهُ لاَ وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِيْ مَعْصِيَةِ اللهِ، وَلاَ فِيْمَا لاَ يَمْلِكُ اِبْنُ آدَمَ
‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর যুগে বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট কুরবানি করবে বলে মানত করেছে। রাসূল (সা.) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন: ওখানে কোন মূর্তি পূজা করা হতো কি? সাহাবারা বললেন: না। তিনি বললেন: সেখানে কোন মেলা জমতো কি? সাহাবারা বললেন: না। রাসূল (সা.) মানতকারীকে বললেন: তুমি মানত পুরা করে নাও। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলার অবাধ্যতা বা মানুষের মালিকানা বহির্ভূত বস্ত্তর মানত পুরা করতে হয় না’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩৩১৩ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২১৬১)
তবে এ সকল স্থানে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন কিছু মানত করে থাকলে মানত পুরা না করে শুধুমাত্র কসমের কাফ্ফারা আদায় করবে।
’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ نَذَرَ أَنْ يُّطِيْعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَ اللهَ فَلاَ يَعْصِهِ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার আনুগত্য (ইবাদাত) করবে বলে মানত করেছে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে তথা মানত পুরা করে নেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার অবাধ্যতা তথা গুনাহ্’র কাজ করবে বলে মানত করেছে সে যেন তাঁর অবাধ্য না হয় তথা মানত পুরা না করে’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩২৮৯ তিরমিযী, হাদীস ১৫২৬ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২১৫৬)
’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) আরো বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ نَذْرَ فِيْ مَعْصِيَةٍ ؛ وَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِيْنٍ
‘‘কোন গুনাহ্’র ব্যাপারে মানত করা চলবেনা। তবে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ এ জাতীয় মানত করে ফেললে উহার কাফ্ফারা কসমের কাফ্ফারা হিসেবে দিতে হবে’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩২৯০, ৩২৯২ তিরমিযী, হাদীস ১৫২৪, ১৫২৫ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২১৫৫)
মানতের শির্ক বলতে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য কোন কিছু মানত করাকে বুঝানো হয়।
যে কোন উদ্দেশ্য সফলের জন্য কোন কিছু মানত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। যা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক।
আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নেক বান্দাহদের গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
«يُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ»
‘‘তাদের বৈশিষ্ট্য হলো: তারা তাদের মানত পূরা করে’’। (ইন্সান/দাহর : ৭)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَلْيُوْفُوْا نُذُوْرَهُمْ»
‘‘তারা যেন তাদের মানত পুরা করে নেয়’’। (হাজ্জ : ২৯)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَمَآ أَنْفَقْتُمْ مِنْ نَّفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُمْ مِنْ نَذْرٍ فَإِنَّ اللهَ يَعْلَمُهُ»
‘‘তোমরা যা ব্যয় করো বা মানত করো তা অবশ্যই আল্লাহ্ তা’আলা জানেন’’। (বাক্বারাহ্ : ২৭০)
উক্ত আয়াতসমূহের প্রথম আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা মানত পুরা করার কারণে তাঁর নেক বান্দাহ্দের প্রশংসা করেছেন। আর কারোর প্রশংসা শুধুমাত্র আবশ্যকীয় বা পছন্দনীয় কাজ সম্পাদন অথবা নিষিদ্ধ কাজ বর্জনের কারণেই হয়ে থাকে। দ্বিতীয় আয়াতে মানত পুরা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। আর আল্লাহ্ তা’আলা বা তদীয় রাসূল (সা.) এর আদেশ মান্য করার নামই তো হচ্ছে ইবাদাত। তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা মানত সম্পর্কে অবগত আছেন এবং উহার প্রতিদান দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন। ইহা যে কোন মানত ইবাদাত হওয়াই প্রমাণ করে। আর এ কথা সবারই জানা যে, ইবাদাত বলতেই তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্যই হতে হবে। অন্য কারোর জন্য নয়। অন্য কারোর জন্য সামান্যটুকু ইবাদাত ব্যয় করার নামই তো শির্ক। অতএব কারোর জন্য কোন কিছু মানত করা সত্যিই শির্ক। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
বর্তমান যুগে যারা ওলী-বুযুর্গদের কবরের জন্য নিয়ত বা মানত করে যাচ্ছে তাদের ও মক্কার মুশ্রিকদের মধ্যে সামান্যটুকুও ব্যবধান নেই।
আল্লাহ্ তা’আলা মক্কার মুশরিকদের সম্পর্কে বলেন:
«وَجَعَلُوْا لِلهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ الْـحَرْثِ وَالأَنْعَامِ نَصِيْبًا فَقَالُوْا هَذَا لِلهِ بِزَعْمِهِمْ وَهَذَا لِشُرَكَآئِنَا، فَمَا كَانَ لِشُرَكَآئِهِمْ فَلاَ يَصِلُ إِلَى اللهِ وَمَا كَانَ لِلهِ فَهُوَ يَصِلُ إِلَى شُرَكَآئِهِمْ، سَآءَ مَا يَحْكُمُوْنَ»
‘‘মুশ্রিকরা আল্লাহ্ তা’আলার দেয়া শস্য ও পশু সম্পদের একাংশ তাঁর জন্যই নির্ধারিত করছে এবং তাদের ধারণানুযায়ী বলছে: এ অংশ আল্লাহ্ তা’আলার জন্য আর এ অংশ আমাদের শরীকদের। তবে তাদের শরীকদের অংশ কখনো আল্লাহ্ তা’আলার নিকট পৌঁছেনা। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ তা’আলার অংশ তাদের শরীকদের নিকট পৌঁছে যায়। এদের ফায়সালা কতোই না নিকৃষ্ট’’। (আন্’আম : ১৩৬)
মূলতঃ মানত দু’ প্রকার: কোন উদ্দেশ্য হাসিলের শর্ত ছাড়াই এমনিতেই আল্লাহ্ তা’আলার জন্য কোন ইবাদাত মানত করা। আর অন্যটি হচ্ছে কোন উদ্দেশ্য হাসিলের শর্তে আল্লাহ্ তা’আলার জন্য কোন কিছু মানত করা। এ দু’য়ের মধ্যে প্রথমটিই প্রশংসনীয়। আর এ ধরনের মানত পুরা করাই নেককারদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। দ্বিতীয়টি নয়। বরং তা খুবই নিন্দনীয়। তাই তো রাসূল (সা.) এ জাতীয় মানত করতে নিষেধ করেছেন। তবে এরপরও কেউ এ ধরনের মানত করে ফেললে সে তা পুরা করতে অবশ্যই বাধ্য।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ تَنْذُرُوْا، فَإِنَّ النَّذْرَ لاَ يُغْنِيْ مِنَ الْقَدْرِ شَيْئًا، وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيْلِ
‘‘তোমরা মানত করো না। কারণ, মানত কারোর ভাগ্যলিপিকে এতটুকুও পরিবর্তন করতে পারে না। বরং মানতের মাধ্যমে কৃপণের পকেট থেকে কিছু বের করে নেয়া হয়। (যা সে এমনিতেই আদায় করতো না’’।) (মুসলিম, হাদীস ১৬৪০)
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: لاَ يَأْتِيْ النَّذْرُ عَلَى ابْنِ آدَمَ بِشَيْءٍ لَمْ أُقَدِّرْهُ عَلَيْهِ، وَلَكِنَّهُ شَيْءٌ أَسْتَخْرِجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيْلِ، يُؤْتِيْنِيْ عَلَيْهِ مَا لاَ يُؤْتِيْنِيْ عَلَى الْبُخْلِ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: মানতের মাধ্যমে আদম সন্তান এমন কিছু অর্জন করতে পারে না যা আমি তার জন্য ইতিপূর্বে বরাদ্দ করিনি। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণের পকেট থেকে কিছু বের করে আনা হয়। কারণ, সে মানতের মাধ্যমেই আমাকে এমন কিছু দেয় যা সে কার্পণ্যের কারণে ইতিপূর্বে আমাকে দেয়নি’’। (আহমাদ্ ২/২৪২)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
النَّذْرُ نَذْرَانِ: فَمَا كَانَ لِلهِ فَكَفَّارَتُهُ الْوَفَاءُ، وَمَا كَانَ لِلشَّيْطَانِ فَلاَ وَفَاءَ فِيْهِ، وَعَلَيْهِ كَفَّارَةُ يَمِيْنٍ
‘‘মানত দু’ প্রকার। তার মধ্যে যা হবে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য তার কাফ্ফারা হবে শুধু তা পুরা করা। আর যা হবে শয়তানের জন্য তথা শরীয়ত বিরোধী তা কখনোই পুরা করতে হবে না। তবে সে জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কসমের কাফফারা দিতে হবে’’।
(ইবনুল জারূদ্/মুন্তাক্বা, হাদীস ৯৩৫ বায়হাক্বী ১০/৭২)
আনুগত্যের শির্ক বলতে বিনা ভাবনায় তথা শরীয়তের গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ ছাড়াই হালাল, হারাম, জায়েয, নাজায়েযের ব্যাপারে আলেম, বুযুর্গ বা উপরস্থ কারোর সিদ্ধান্ত অন্ধভাবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়াকে বুঝানো হয়।
এ জাতীয় আনুগত্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত যা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«اِتَّخَذُوْا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَالْـمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوْا إِلاَّ لِيَعْبُدُوْا إِلَـهًا وَّاحِدًا، لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ»
‘‘তারা আল্লাহ্ তা’আলাকে ছেড়ে নিজেদের আলিম, ধর্ম যাজক ও মার্ইয়ামের পুত্র মাসীহ্ (’ঈসা) (আ.) কে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। অথচ তাদেরকে শুধু এতটুকুই আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই ইবাদাত করবে। তিনি ব্যতীত সত্যিকার কোন মা’বূদ নেই। তিনি তাদের শির্ক হতে একেবারেই পূতপবিত্র’’। (তাওবাহ্: ৩১)
’আদি’ বিন্ হাতিম (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
أَتَيْتُ النَّبِيَّصَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِيْ عُنُقِيْ صَلِيْبٌ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ: يَا عَدِيُّ! اِطْرَحْ عَنْكَ هَذَا الْوَثَنَ، وَسَمِعْتُهُ يَقْرَأُ فِيْ سُوْرَةِ بَرَاءَةٍ:
«اِتَّخَذُوْا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ»
قَالَ: أَمَا إِنَّهُمْ لَمْ يَكُوْنُوْا يَعْبُدُوْنَهُمْ وَلَكِنَّهُمْ كَانُوْا إِذَا أَحَلُّوْا لَـهُمْ شَيْئًا اِسْتَحَلُّوْهُ وَإِذَا حَرَّمُوْا عَلَيْهِمْ شَيْئًا حَرَّمُوْهُ
‘‘আমি নবী (সা.) এর দরবারে গলায় স্বর্ণের ক্রুশ ঝুলিয়ে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে ডেকে বলেন: হে ’আদি’! এ মূর্তিটি (ক্রুশ) গলা থেকে ফেলে দাও। তখন আমি তাঁকে উক্ত আয়াতটি পড়তে শুনেছি। ’আদি’ বলেন: মূলতঃ খ্রিষ্টানরা কখনো তাদের আলিমদের উপাসনা করতো না। তবে তারা হালাল ও হারামের ব্যাপারে বিনা প্রমাণে আলিমদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতো। আর এটিই হচ্ছে আলিমদেরকে প্রভু মানার অর্থ তথা আনুগত্যের শির্ক’’। (তিরমিযী, হাদীস ৩০৯৫)
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَلاَ تَأْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوْهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ»
‘‘যে পশু একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার নামে জবাই করা হয়নি (বরং তা জবাই করা হয়েছে অন্য কারোর নামে অথবা এমনিতেই মরে গেছে) তা হতে তোমরা এতটুকুও খেয়ো না। কারণ, তা আল্লাহ্ তা’আলার অবাধ্যতার শামিল। শয়তানরা নিশ্চয়ই তাদের অনুগতদের কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে তোমাদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্যে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো তাহলে তোমরা নিশ্চিতভাবে মুশ্রিক হয়ে যাবে। (আন’আম : ১২১)
ইসলাম বিরোধী কালা কানুনের আলোকে রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রশাসকদের বিচার-মীমাংসা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া এ শির্কের অন্তর্ভুক্ত। যেমন: সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার বা মদ জাতীয় হারাম বস্ত্তকে হালাল করার নীতি। পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ওয়ারিসি সম্পত্তির সমবন্টন বা পর্দাহীনতার নীতি। বহুবিবাহের মতো হালাল বস্ত্তকে হারাম করার নীতি। এ সকল ব্যাপারে প্রশাসকদের অকুন্ঠ আনুগত্য সম্পূর্ণরূপে হারাম ও একান্ত শির্ক। কারণ, মানব জীবনের প্রতিটি শাখায় তথা যে কোন সমস্যায় কোর’আন ও হাদীসের সঠিক সিদ্ধান্ত সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়াই সকল মোসলমানের একান্ত কর্তব্য। আর এটিই হচ্ছে আল্লাহ্ তা’আলার গোলামী ও একত্ববাদের একান্ত দাবি। কেননা, আইন রচনার সার্বিক অধিকার একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«أَلاَ لَهُ الْـخَلْقُ وَالأَمْرُ»
‘‘জেনে রাখো, সকল সৃষ্টি তাঁরই এবং হুকুমের অধিকারীও একমাত্র তিনি। তিনিই হুকুম দাতা এবং তাঁর হুকুমই একান্তভাবে প্রযোজ্য’’। (আ’রাফ : ৫৪)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيْهِ مِنْ شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللهِ»
‘‘তোমরা যে কোন বিষয়েই মতভেদ করো না কেন উহার মীমাংসা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই দিবেন’’। (শূরা : ১০)
তিনি আরো বলেন:
«فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ، ذَلِكَ خَيْرٌ وَّأَحْسَنُ تَأْوِيْلًا»
‘‘তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে উহার মীমাংসার জন্য একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ও তদীয় রাসূলের দিকেই প্রত্যাবর্তন করো। যদি তোমরা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ও পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে থাকো। এটিই হচ্ছে তোমাদের জন্য কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর পরিসমাপ্তি’’। (নিসা’ : ৫৯)
উক্ত আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে অনুধাবিত হয় যে, আল্লাহ্ তা’আলার আইনানুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করা শুধু ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্যই নয় বরং তা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত এবং তা সত্যিকারার্থে আল্লাহ্ তা’আলার অধিকার বাস্তবায়ন ও নিজ আক্বীদা-বিশ্বাস সুরক্ষণের শামিল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মানব রচিত বিধি-বিধানের আলোকে সকল বিচার-ফায়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিচ্ছে পরোক্ষভাবে সে যেন এ বিধান রচয়িতাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলার অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করছে।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«أَمْ لَـهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوْا لَـهُمْ مِنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللهُ»
‘‘তাদের কি এমন কোন (আল্লাহ্’র অংশীদার) দেবতাও রয়েছে যারা আল্লাহ্ তা’আলার অনুমোদন ছাড়া তাদের জন্য বিধি-বিধান রচনা করে’’। (শূরা : ২১)
তিনি আরো বলেন:
«وَإِنْ أَطَعْتُمُوْهُمْ إِنَّكُمْ لَـمُشْرِكُوْنَ»
‘‘তোমরা যদি তাদের আনুগত্য করো তাহলে তোমরা নিশ্চিতভাবে মুশরিক হয়ে যাবে’’। (আন’আম : ১২১)
আল্লাহ্ তা’আলা কোর’আন মাজীদের মধ্যে মানব রচিত আইন গ্রহণকারীদেরকে ঈমানশূন্য তথা কাফির বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ أَنَّهُمْ آمَنُوْا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَّتَحَاكَمُوْا إِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ أُمِرُوْا أَنْ يَّكْفُرُوْا بِهِ، وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلاَلًا بَعِيْدًا، ... فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ حَتَّى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُوْا فِيْ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا»
‘‘আপনি কি ওদের ব্যাপারে অবগত নন? যারা আপনার প্রতি অবতীর্ণ কিতাব ও পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের উপর ঈমান এনেছে বলে ধারণা পোষণ করছে। অথচ তারা তাগূতের (আল্লাহ্ বিরোধী যে কোন শক্তি) ফায়সালা কামনা করে। বস্ত্ততঃ তাদেরকে ওদের বিরুদ্ধাচরণের আদেশ দেয়া হয়েছে। শয়তান চায় ওদেরকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করতে। ... অতএব আপনার প্রতিপালকের কসম! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারে না যতক্ষণ না তারা আপনাকে নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিরোধের বিচারক বানিয়ে নেয় এবং আপনার সকল ফায়সালা নিঃসঙ্কোচে তথা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়’’। (নিসা’ : ৬০-৬৫)
অতএব যারা নিয়ত মানব রচিত বিধি-বিধান বাস্তবায়নের আহবান করছে পরোক্ষভাবে তারা বিধি-বিধান রচনা ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে অন্যকে আল্লাহ্ তা’আলার অংশীদার বানাচ্ছে। আর যারা আল্লাহ্ তা’আলার বিধান ছাড়া অন্য বিধানের আলোকে বিচারকার্য পরিচালনা করছে তারা নিশ্চিতভাবেই কাফির। চাই তারা উক্ত বিধানকে আল্লাহ্ তা’আলার বিধান চাইতে উত্তম, সম পর্যায়ের বা আল্লাহ্ তা’আলার বিধান এর পাশাপাশি এটাও চলবে বলে ধারণা করুকনা কেন। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা কোর’আন মাজীদের উক্ত আয়াতে বলেছেন: তারা ঈমান আছে বলে ধারণা পোষণ করে। বাস্তবে তারা ঈমানদার নয়। দ্বিতীয়তঃ তারা তাগূতকে বিচারক মানে ; অথচ তার বিরুদ্ধাচরণ ঈমানের অঙ্গ।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ بِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى»
‘‘অতএব যে ব্যক্তি তাগূতকে অবিশ্বাস এবং আল্লাহ্ তা’আলাকে বিশ্বাস করে সেই প্রকৃতপক্ষে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরলো। অর্থাৎ ঈমানদার হলো’’। (বাক্বারাহ্ : ২৫৬)
আল্লাহ্ তা’আলা কোর’আন মাজীদের মধ্যে তাঁর বিধান বিমুখতাকে মুনাফিকের আচরণ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেন:
«وَإِذَا قِيْلَ لَـهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللهُ وَإِلَى الرَّسُوْلِ رَأَيْتَ الْـمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًا»
‘‘যখন তাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলার বিধান ও রাসূল (সা.) এর প্রতি আহবান করা হয় তখন আপনি মুনাফিকদেরকে আপনার প্রতি বিমুখ হতে দেখবেন’’। (নিসা’ : ৬১)
আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বিধান ছাড়া অন্য বিধানকে জাহিলী (বর্বর) যুগের বিধান বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন:
«أَفَحُكْمَ الْـجَاهِلِيَّةِ يَبْغُوْنَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُّوْقِنُوْنَ»
‘‘তারা কি জাহিলী যুগের বিধান চাচ্ছে? দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার বিধান চাইতে সুন্দর বিধান আর কে দিতে পারে?’’ (মা’য়িদাহ্ : ৫০)
ইব্নে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহু) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:
يُنْكِرُ تَعَالَى عَلَى مَنْ خَرَجَ عَنْ حُكْمِ اللهِ تَعَالَى الـْمُشْتَمِلِ عَلَى كُلِّ خَيْرٍ النَّاهِيْ عَنْ كُلِّ شَرٍّ، وَعَدَلَ إِلَى مَا سِوَاهُ مِنَ الآرَاءِ وَالأَهْوَاءِ وَ الاِصْطِلاَحَاتِ الَّتِيْ وَضَعَهَا الرِّجَالُ بِلاَ مُسْتَنَدٍ مِنْ شَرِيْعَةِ اللهِ كَمَا كَانَ أَهْلُ الْـجَاهِلِيَّةِ يَحْكُمُوْنَ بِهِ مِنَ الْـجَهَالاَتِ وَالضَّلاَلاَتِ، وَكَمَا تَحْكُمُ بِهِ التَّتَارُ مِنَ السِّيَاسَاتِ الْـمَأْخُوْذِ عَنْ جَنْكِيْزْخَانْ الَّذِيْ وَضَعَ لَهُمُ ‘‘الْيَاسِقَ‘‘ وَهُوَ عِبَارَةٌ عَنْ كِتَابِ أَحْكَامٍ اقْتَبَسَهَا مِنْ شَرَائِعَ شَتَّى مِنَ الْيَهُوْدِيَّةِ وَالنَّصْرَانِيَّةِ وَالْمِلَّةِ الإِسْلاَمِيَّةِ ، وَفِيْهَا كَثِيْرٌ مِّنَ الأَحْكَامِ أَخَذَهَا عَنْ مُجَرَّدِ نَظْرِهِ وَهَوَاهُ، فَصَارَتْ فِيْ بَنِيْهِ شَرْعًا يُقَدِّمُوْنَهَا عَلَى الْـحُكْمِ بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَهُوَ كَافِرٌ يَجِبُ قِتَالُهُ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَى حُكْمِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ، فَلاَ يُحْكَمُ بِسِوَاهُ فِيْ قَلِيْلٍ أَوْ كَثِيْرٍ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা উক্ত আয়াতে সে ব্যক্তিকে দোষারোপ করছেন যে ব্যক্তি সার্বিক কল্যাণময় আললাহ্ তা’আলার বিধান ছেড়ে মানব রচিত বিধি-বিধানের পেছনে পড়েছে। যেমনিভাবে জাহিলী যুগের লোকেরা ভ্রষ্টতা ও মূর্খতার মাধ্যমে এবং তাতার্রা চেঙ্গিজ খান রচিত ‘‘ইয়াসিক’’ নামক সংবিধানের মাধ্যমে বিচারকার্য পরিচালনা করতো। যা ছিলো ইহুদী, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের সংবিধানসমূহ থেকে বিশেষভাবে চয়িত। তাতে চেঙ্গিজ খানের ব্যক্তিগত মতামতও ছিল। ধীরে ধীরে তার সন্তানরা এ সংবিধানকে জীবন বিধান হিসেবে মেনে নিয়েছে। যার গুরুত্ব তাদের নিকট কোর’আন ও হাদীসের চাইতেও বেশি। যে এমন করলো সে কাফির হয়ে গেলো। তার সাথে যুদ্ধ করা সবার উপর ওয়াজিব যতক্ষণনা সে আল্লাহ্ তা’আলা ও তদীয় রাসূল (সা.) এর বিধানের দিকে ফিরে আসে। বর্তমান যুগে অধিকাংশ রাষ্ট্রে মানব রচিত যে সংবিধান চলছে তা অনেকাংশে তাতারদের সংবিধানেরই সমতুল্য’’। (আল্ ইরশাদ্ : ১০২-১০৩)
যে কোন মুফতি সাহেবের ফতোয়া কোর’আন ও হাদীসের বিপরীত জেনেও নিজের মন মতো হওয়ার দরুন তা মেনে নেয়া এ শির্কের অন্তর্ভুক্ত। সঠিক নিয়ম হচ্ছে, কোন গবেষকের কথা কোর’আন ও হাদীসের সঠিক প্রমাণভিত্তিক হলে তা মেনে নেয়া। নতুবা নয়।
ইমামগণ এ ব্যাপারে একমত যে, রাসূল (সা.) ছাড়া সবার কথাই গ্রাহ্য বা অগ্রাহ্য হতে পারে। এ জন্য তাঁরা সবাইকে কোর’আন ও হাদীসের সঠিক প্রমাণ ছাড়া কারোর কথা অন্ধভাবে মেনে নিতে নিষেধ করেছেন।
ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:
حَرَامٌ عَلَى مَنْ لـَمْ يَعْرِفْ دَلِيْلِيْ أَنْ يُفْتِيَ بِكَلاَمِيْ
‘‘যে ব্যক্তি (কোর’আন ও হাদীসের) দলীল সম্পর্কে অবগত নয় (যে কোর’আন ও হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমি ফতোয়া দিয়েছি) তার জন্য আমার কথানুযায়ী ফতোয়া দেয়া হারাম’’। (শা’রানী/মীযান, ফুতূহাতি মাক্কিয়্যাহ্, দিরাসাতুল্ লাবীব : ৯০ সাবীলুর্ রাসূল : ৯৭)
তিনি আরো বলেন:
إِذَا رَأَيْتُمْ كَلاَمَنَا يُخَالِفُ ظَاهِرَ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ فَاعْمَلُوْا بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ، وَاضْرِبُوْا بِكَلاَمِنَا الْحَائِطَ
‘‘যখন তোমরা দেখবে আমার কথা কোর’আন ও হাদীসের প্রকাশ্য বিরোধী তখন তোমরা কোর’আন ও হাদীসের উপর আমল করবে এবং আমার কথা দেয়ালে ছুঁড়ে মারবে’’।
(শা’রানী/মীযান ১/৫৭ সাবীলুর্ রাসূল : ৯৭-৯৮)
জনৈক ব্যক্তি ‘‘দানিয়াল’’ (কেউ কেউ তাঁকে নবী মনে করেন) এর কিতাব নিয়ে কূফায় প্রবেশ করলে ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ্) তাকে হত্যা করতে চেয়েছেন এবং তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
أَكِتَابٌ سِوَى الْقُرْآنِ وَالْـحَدِيْثِ
‘‘কোর’আন ও হাদীস ছাড়া অন্য কিতাব গ্রহণযোগ্য হতে পারে কি?’’ (শা’রানী/মীযান, হাক্বীক্বাতুল্ ফিক্বহ্, সাবীলুর্ রাসূল : ৯৯)
তিনি আরো বলেন:
إِذَا جَاءَ الْـحَدِيْثُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَى الرَّأْسِ وَالْعَيْنِ، وَإِذَا جَاءَ عَنِ الصَّحَابَةِ فَعَلَى الرَّأْسِ وَالْعَيْنِ، وَإِذَا جَاءَ عَنِ التَّابِعِيْنَ فَهُمْ رِجَالٌ وَنَحْنُ رِجَالٌ
‘‘রাসূল (সা.) ও সাহাবাদের বাণী সদা শিরোধার্য। তবে তাবেয়ীনদের বাণী তেমন নয়। কারণ, তারাও পুরুষ আমরাও পুরুষ। অর্থাৎ আমরা সবাই একই পর্যায়ের। সুতরাং প্রত্যেকেরই গবেষণার অধিকার রয়েছে’’। (যাফারুল্ আমানী : ১৮২ আল্ ইর্শাদ্ : ৯৬ সাবীলুর্ রাসূল : ৯৮)
ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) সম্পর্কে আরো বলা হয়:
سُئِلَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالَى: إِذَا قُلْتَ قَوْلًا وَكِتَابُ اللهِ يُخَالِفُهُ؟ قَالَ: اتْرُكُوْا قَوْلِيْ لِكِتَابِ اللهِ، قِيْلَ: إِذَا كَانَ قَوْلُ الرَّسُوْلِ يُخَالِفُهُ؟ قَالَ: اتْرُكُوْا قَوْلِيْ لِخَبْرِ الرَّسُوْلِ ، قِيْلَ: إِذَا كَانَ قَوْلُ الصَّحَابَةِ يُخَالِفُهُ؟ قَالَ: اتْرُكُوْا قَوْلِيْ لِقَوْلِ الصَّحَابَةِ
’’ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো: আপনার ফতোয়া যদি কোর’আনের বিপরীত বলে সাব্যস্ত হয় তখন আমাদের কি করতে হবে? তিনি বললেন: আমার ফতোয়া ছেড়ে দিয়ে তখন কোর’আনকে মানবে। বলা হলো: আপনার ফতোয়া যদি হাদীসের বিপরীত সাব্যস্ত হয়? তিনি বললেন: আমার ফতোয়া ছেড়ে দিয়ে তখন হাদীসকে মানবে। বলা হলো: আপনার ফতোয়া যদি সাহাবাদের বাণীর বিপরীত সাব্যস্ত হয়? তিনি বললেন: আমার ফতোয়া ছেড়ে দিয়ে তখন সাহাবাদের বাণী অনুসরণ করবে’’। (রাওযাতুল্ ’উলামা, ’ইক্ব্দুল্ জীদ্ : ৫৪ সাবীলুর্ রাসূল : ৯৭)
ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ্) আরো বলেন:
لاَ تُقَلِّدْنِيْ وَلاَ تُقَلِّدَنَّ مَالِكًا وَلاَ غَيْرَهُ، وَخُذِ الْأَحْكَامَ مِنْ حَيْثُ أَخَذُوْا مِنَ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ
‘‘তুমি আমি আবু হানীফা এবং মালিক এমনকি অন্য যে কারোর অন্ধ অনুসরণ করোনা। বরং তারা যেভাবে হুকুম-আহ্কাম সরাসরি কোর’আন ও হাদীস থেকে সংগ্রহ করেছে তোমরাও সেভাবে সংগ্রহ করো’’।
(শা’রানী/মীযান, ’হাক্বীক্বাতুল্ ফিক্বহ্, ত’ুহ্ফাতুল্ আখ্ইয়ার্ : ৪ সাবীলুর্ রাসূল : ৯৯)
ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
كُلُّنَا رَادٌّ وَمَرْدُوْدٌ عَلَيْهِ إِلاَّ صَاحِبَ هَذَا الْقَبْرِ
‘‘আমাদের সকলের মত গ্রাহ্য বা অগ্রাহ্য হতে পারে তবে রাসূল (সা.) এর মত অনুরূপ নয়। বরং তা সদা গ্রাহ্য। কারণ, তা ওহি তথা ঐশী বাণী’’। (ইক্ব্দুল্ জীদ্, আল্ ইয়াওয়াক্বীতু ওয়াল্ জাওয়াহির ২/৯৬ ইর্শাদুস্ সালিক ১/২২৭ আল্ ইর্শাদ্ : ৯৬ সাবীলুর্ রাসূল : ১০১)
তিনি আরো বলেন:
إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ، أُخْطِئُ وَأُصِيْبُ، فَانْظُرُوْا فِيْ رَأْيِيْ، فَكُلُّ مَا وَافَقَ الْكِتَابَ وَالسُّنَّةَ فَخُذُوْهُ، وَكُلُّ مَا لَمْ يُوَافِقْ فَاتْرُكُوْهُ
‘‘আমি মানুষ। সুতরাং আমার কথা কখনো শুদ্ধ হবে। আবার কখনো অশুদ্ধ হবে। তাই তোমরা আমার কথায় গবেষণা করে যা কোর’আন ও হাদীসের অনুরূপ পাবে তাই মেনে নিবে। অন্যথায় তা প্রত্যাখ্যান করবে’’।
(জাল্বুল্ মান্ফা’আহ্, ’হাক্বীক্বাতুল্ ফিক্বহ্, জামি’উ বায়ানিল্ ’ইল্মি ওয়া ফায্লিহী ২/৩৩ আল্ ইহ্কাম ফী উসূলিল্ আহ্কাম ৬/১৪৯ ঈক্বাযুল্ হিমাম ৭২ আল্ ইয়াওয়াক্বীতু ওয়াল্ জাওয়াহির ২/৯৬ সাবীলুর্ রাসূল : ১০১-১০২)
ইমাম শাফি’য়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
مَثَلُ الَّذِيْ يَطْلُبُ الْعِلْمَ بِلاَ حُجَّةٍ كَمَثَلِ حَاطِبِ لَيْلٍ يَحْمِلُ حُزْمَةَ حَطَبٍ، وَفِيْهِ أَفْعَى تَلْدَغُهُ وَهُوَ لاَ يَدْرِيْ
‘‘যে ব্যক্তি কোর’আন ও হাদীসের কোন প্রমাণ ছাড়া জ্ঞানার্জন করে সে ওব্যক্তির ন্যায় যে রাত্রি বেলায় কাঠ কেটে বোঝা বেঁধে বাড়ি রওয়ানা করলো অথচ তাতে সাপ রয়েছে যা তাকে দংশন করছে। কিন্তু তার তাতে কোন খবরই নেই’’। (ই’লামুল্ মুওয়াক্বক্বি’য়ীন, সাবীলুর্ রাসূল : ১০১)
ইমাম আবু হানীফা এবং শাফি’য়ী (রাহিমাহুমাল্লাহ) আরো বলেন:
إِذَا صَحَّ الْـحَدِيثُ فَهُوَ مَذْهَبِيْ، إِذَا رَأَيْتُمْ كَلاَمِيْ يُخَالِفُ الْـحَدِيْثَ فَاعْمَلُوْا بِالْـحَدِيْثِ وَاضْرِبُوْا بِكَلاَمِيَ الْـحَائِطَ
‘‘কোন হাদীস বিশুদ্ধ প্রমাণিত হলে তা আমার মায্হাব বলে মনে করবে। জেনে রাখো, আমার কোন সিদ্ধান্ত হাদীসের বিপরীত প্রমাণিত হলে তখন হাদীস অনুযায়ী আমল করবে এবং আমার কথা দেয়ালে ছুঁড়ে মারবে’’।
(ইক্ব্দুল্ জীদ্, আল্ ইয়াওয়াক্বীতু ওয়াল্ জাওয়াহির ২/৯৬ রাদ্দুল্ মুহ্তার ১/৪৬ রাস্মুল্ মুফ্তী : ১/৪ ঈক্বাযুল্ হিমাম : ৫২, ১০৭ দিরাসাতুল্ লাবীব : ৯১ সাবীলুর্ রাসূল : ১০১)
ইমাম শাফি’য়ী (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন:
إِذَا قُلْتُ قَوْلًا وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خِلاَفَ قَوْلِيْ فَمَا يَصِحُّ مِنْ حَدِيْثِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْلَى، فَلاَ تُقَلِّدُوْنِيْ
‘‘আমি যদি এমন কোন কথা বলে থাকি যা নবী (সা.) এর কথার বিপরীত তখন নবী (সা.) এর বিশুদ্ধ হাদীস অনুসরণ করাই সর্বোত্তম। অতএব তখন আমার অন্ধ অনুসরণ করবে না’’। (ইক্ব্দুল্ জীদ্, ই’লামুল্ মুওয়াক্বক্বি’য়ীন ২/২৬১ ঈক্বাযুল্ হিমাম ১০০, ১০৩ সাবীলুর্ রাসূল : ১০০)
তিনি আরো বলেন:
أَجْمَعَ الْعُلَمَآءُ عَلَى أَنَّ مَنِ اسْتَبَانَتْ لَهُ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ لَهُ أَنْ يَّدَعَهَا لِقَوْلِ أَحَدٍ
‘‘সকল আলিমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, রাসূল (সা.) এর হাদীস যখন কারোর নিকট সুস্পষ্ট হয়ে যায় তখন অন্য কারোর কথার কারণে তা প্রত্যাখ্যান করার কোন অধিকার সে ব্যক্তির আর থাকে না’’। (হাক্বীক্বাতুল্ ফিক্বহ্, শা’রানী/মীযান, তাইসীর : ৪৬১)