লগইন করুন
জবাইয়ের শির্ক বলতে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর নৈকট্য লাভের জন্য যে কোন পশু জবাই করাকে বুঝানো হয়। চাই তা আল্লাহ্ তা’আলা’র নামেই জবাই করা হোক বা অন্য কারোর নামে। চাই তা নবী, ওলী, বুযুর্গ বা জিনের নামেই হোক বা অন্য কারোর নামে।
সাওয়াবের আশায় কোন পশু জবাই করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত যা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْـمُسْلِمِيْنَ»
‘‘আপনি বলে দিন: আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মরণকালের সকল নেক আমল সারা জাহানের প্রভু একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই, আমি এরই জন্যে আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই আমার উম্মতের সর্বপ্রথম মুসলমান’’।
(আন্’আম : ১৬২-১৬৩)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ»
‘‘সুতরাং আপনার প্রতিপালকের জন্য নামায পড়ুন ও কুরবানি করুন’’। (কাউসার : ২)
’আলী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لَعَنَ اللهُ لِـمَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা লা’নত (নিজ রহমত হতে বঞ্চিত) করেন সে ব্যক্তিকে যে তিনি ব্যতীত অন্য কারোর জন্য পশু জবেহ্ করে’’।
(মুসলিম, হাদীস ১৯৭৮)
সালমান ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
دَخَلَ الْـجَنَّةَ رَجُلٌ فِيْ ذُبَابٍ وَدَخَلَ النَّارَ رَجُلٌ فِيْ ذُبَابٍ، قَالُوْا: وَكَيْفَ ذَلِكَ؟ قَالَ: مَرَّ رَجُلاَنِ عَلَى قَوْمٍ لَـهُمْ صَنَمٌ لاَ يُجَاوِزُهُ أَحَدٌ حَتَّى يُقَرِّبَ لَهُ شَيْئًا، فَقَالُوْا لِأَحَدِهِمَا: قَرِّبْ، قَالَ: مَا عِنْدِيْ شَيْءٌ، قَالُوْا: قَرِّبْ وَلَوْ ذُبَابًا، فَقَرَّبَ ذُبَابًا فَخَلُّوْا سَبِيْلَهُ فَدَخَلَ النَّارَ، وَقَالُوْا لِلآخَرِ: قَرِّبْ، قَالَ: مَا كُنْتُ لِأُقَرِّبَ لِأَحَدٍ شَيْئًا دُوْنَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَضَرَبُوْا عُنُقَهُ، فَدَخَلَ الْـجَنَّةَ
‘‘জনৈক ব্যক্তি জান্নাতে গিয়েছে একটি মাছির জন্যে। আর অন্য জন জাহান্নামে। শ্রোতারা বললো: তা কিভাবে? তিনি বললেন: একদা দু’ ব্যক্তি কোন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের ছিলো একটি মূর্তি। যাকে কিছু না দিয়ে তথা দিয়ে অতিক্রম করা ছিলো যে কোন ব্যক্তির জন্য দুষ্কর। অতএব তারা এদের একজনকে বললো: মূর্তির জন্য কিছু পেশ করো। সে বললো: আমার কাছে দেয়ার মতো কিছুই নেই। তারা বললো: একটি মাছি হলেও পেশ করো। অতএব সে একটি মাছি পেশ করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাতে করে শির্ক করার দরুন সে জাহান্নামী হয়ে গেলো। তেমনিভাবে তারা অন্য জনকে বললো: মূর্তির জন্য কিছু পেশ করো। সে বললো: আমি আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর জন্য কোন নজরানা পেশ করতে পারবোনা। তাতে করে তারা ওকে হত্যা করলো এবং সে জান্নাতী হলো’’। (আহমাদ/যুহদ : ১৫)
এ জাতীয় কুরবানির গোস্ত খাওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْـمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَـحْمَ الْـخِنْزِيْرِ وَمَآ أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللهِ»
‘‘নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছেন মৃত পশু, প্রবাহিত রক্ত ও শূকরের গোস্ত এবং যা আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর নামে জবেহ্ করা হয়েছে’’। (বাকারাহ্ : ১৭৩)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَلاَ تَأْكُلُوْا مِمَّا لَـمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ، وَإِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ إِلَى أَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْ، وَإِنْ أَطَعْتُمُوْهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ»
‘‘যে পশু আল্লাহ্ তা’আলার নামে জবাই করা হয়নি (বরং তা জবাই করা হয়েছে অন্য কারোর নামে অথবা এমনিতেই মরে গেছে) তা হতে তোমরা এতটুকুও খেয়োনা। কারণ, তা আল্লাহ্ তা’আলার অবাধ্যতার শামিল। শয়তানরা নিশ্চয়ই তাদের অনুগতদের পরামর্শ দিয়ে থাকে তোমাদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্যে। তোমরা তাদের আনুগত্য করলে নিঃসন্দেহে মুশরিক হয়ে যাবে’’। (আন্’আম : ১২১)
যেখানে বিদ্আত বা শির্কের চর্চা হয় যেমন: বর্তমান যুগের মাযারসমূহ সেখানে কোন পশু জবাই করা এমনকি তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার নাম উচ্চারণ করে জবাই করা হলেও তা করা বৈধ নয়। বরং তা মারাত্মক একটি গুনাহ্’র কাজ।
সাবিত বিন্ যাহ্হাক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
نَذَرَ رَجُلٌ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَّنْحَرَ إِبِلًا بِبُوَانَةَ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّيْ نَذَرْتُ أَنْ أَنْحَرَ إِبِلًا بِبُوَانَةَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ كَانَ فِيْهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْـجَاهِلِيَّةِ يُعْبَدُ؟ قَالُوْا: لاَ، قَالَ: هَلْ كَانَ فِيْهَا عِيْدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ؟ قَالُوْا: لاَ، قَالَ: أَوْفِ بِنَذْرِكَ ؛ فَإِنَّهُ لاَ وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِيْ مَعْصِيَةِ اللهِ، وَلاَ فِيْمَا لاَ يَمْلِكُ اِبْنُ آدَمَ
‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর যুগে বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট কুরবানি করবে বলে মানত করেছে। রাসূল (সা.) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন: ওখানে কোন মূর্তি পূজা করা হতো কি? সাহাবারা বললেন: না। তিনি বললেন: সেখানে কোন মেলা জমতো কি? সাহাবারা বললেন: না। রাসূল (সা.) মানতকারীকে বললেন: তুমি মানত পুরা করে নাও। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলার অবাধ্যতা বা মানুষের মালিকানা বহির্ভূত বস্ত্তর মানত পুরা করতে হয় না’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩৩১৩ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২১৬১)
তবে এ সকল স্থানে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন কিছু মানত করে থাকলে মানত পুরা না করে শুধুমাত্র কসমের কাফ্ফারা আদায় করবে।
’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ نَذَرَ أَنْ يُّطِيْعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَ اللهَ فَلاَ يَعْصِهِ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার আনুগত্য (ইবাদাত) করবে বলে মানত করেছে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে তথা মানত পুরা করে নেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার অবাধ্যতা তথা গুনাহ্’র কাজ করবে বলে মানত করেছে সে যেন তাঁর অবাধ্য না হয় তথা মানত পুরা না করে’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩২৮৯ তিরমিযী, হাদীস ১৫২৬ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২১৫৬)
’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) আরো বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ نَذْرَ فِيْ مَعْصِيَةٍ ؛ وَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِيْنٍ
‘‘কোন গুনাহ্’র ব্যাপারে মানত করা চলবেনা। তবে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ এ জাতীয় মানত করে ফেললে উহার কাফ্ফারা কসমের কাফ্ফারা হিসেবে দিতে হবে’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩২৯০, ৩২৯২ তিরমিযী, হাদীস ১৫২৪, ১৫২৫ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২১৫৫)