(১) জায়নামাযের দু‘আ পাঠ করা ও মুখে নিয়ত বলা :
‘জায়নামাযের দু‘আ’ বলে শরী‘আতে কোন দু‘আ নেই। যদিও উক্ত দু‘আ সমাজে খুব প্রচলিত। মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খানও ‘জায়নামাযে দাঁড়িয়ে পড়বার দো’আ’ শিরোনামে ‘ইন্নী ওয়াজ্জাহতু... দু‘আ লিখেছেন। কিন্তু কোন প্রমাণ পেশ করেননি।[1] যেহেতু এর শারঈ কোন ভিত্তি নেই, সেহেতু তা পরিত্যাগ করা অপরিহার্য।
যেকোন ছালাতের জন্য মনে মনে নিয়ত করবে।[2] নিয়ত শব্দের অর্থ মনে মনে সংকল্প করা।[3] মুখে নিয়ত বলা একটি বিদ‘আতী প্রথা। রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করেছেন মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। অথচ বাজারে প্রচলিত ‘নামায শিক্ষা’ বইগুলোতে ফরয এবং সুন্নাত মিলে যত ছালাত রয়েছে সমস্ত ছালাতের জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত উল্লেখ করে মুছল্লীদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) তার ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা’ বইয়ে ১০১-১০৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত সকল ছালাতের নিয়ত আরবীতে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য উক্ত বইয়ের টীকা লিখতে গিয়ে মাওলানা আজিজুল হক লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজে নিয়ত মুখে উচ্চারণের বাধ্যবাধকতা স্বরূপ যে কিছু গৎবাঁধা শব্দের প্রচলন আছে, তা নিষ্প্রয়োজন। নিয়ত পড়ার বিষয় নয়; বরং তা করার বিষয় এবং এর সম্পর্ক অন্তরের সাথে। মুখে গৎবাঁধা কিছু শব্দোচ্চারণের সঙ্গে নিয়তের কোন সম্পর্ক নেই’।[4] অতএব মুখে নিয়ত পাঠের অভ্যাস ছাড়তে হবে।
[2]. বুখারী হা/১; মিশকাত হা/১।
[3]. ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ৮৫।
[4]. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ১৪৩।
(২) ফযীলতের আশায় মাথায় পাগড়ী বাঁধা :
ফযীলত মনে করে ছালাতের সময় পাগড়ী বাঁধার কোন ছহীহ হাদীছ নেই। এর পক্ষে যে সমস্ত বর্ণনা প্রচলিত আছে, সেগুলো সবই জাল।
(أ) عَنْ جَابِرٍ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ رَكْعَتَانِ بِعِمَامَةٍ خَيْرٌ مِنْ سَبْعِيْنَ رَكْعَةً بِغَيْرِ عِمَامَةٍ.
(ক) জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেন, পাগড়ী পরে দুই রাক‘আত ছালাত পড়া পাগড়ী বিহীন সত্তর রাক‘আত ছালাত পড়ার চেয়েও উত্তম।[1]
তাহকবীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আহমাদ ইবনু ছালেহ নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। সে হাদীছ জাল করত।[2]
(ب) عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الصَّلاَةُ فِى الْعِمَامَةِ تَعْدِلُ بِعَشْرَةِ آلاَفِ حَسَنَةٍ.
(খ) আনাস (রাঃ) বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাগড়ী পরে ছালাত আদায় করা দশ হাযার নেকীর সমপরিমাণ।[3]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে আবান ও ইবনু আর্রাক নামে দুইজন মিথ্যুক রাবী আছে।[4]
(ج) عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلاَةٌ بِعِمَامَةٍ تَعْدِلُ خَمْسًا وَّعِشْرِيْنَ صَلاَةً بِغَيْرِ عِمَامَةٍ وَجُمُعُةً بِعِمَامَةٍ تَعْدِلُ سَبْعِيْنَ جُمُعَةً بِغَيْرِ عِمَامَةٍ إِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَيَشْهَدُوْنَ الْجُمُعَةَ مُعْتَمِّيْنَ وَلاَ يَزَالُوْنَ يُصَلُّوْنَ عَلَى أَصْحَابِِ الْعَمَائِمِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ.
(গ) ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাগড়ী পরে ছালাত আদায় করা পাগড়ী বিহীন পঁচিশ ওয়াক্ত ছালাত আদায়ের সমান, পাগড়ী পরে এক জুম‘আ আদায় করা সত্তর জুম‘আ আদায়ের সমান। জুম‘আর দিনে ফেরেশতাগণ পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিদের নিকট উপস্থিত হন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাদের জন্য দু‘আ করেন।[5]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আব্বাস ইবনু কাছীর নামে মিথ্যুক রাবী আছে।[6] ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, বর্ণনাটি জাল।[7]
(د) عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِنَّ ِللهِ مَلاَئِكَةً مُوَكِّلِيْنَ بِأَبْوَابِ الْجَوَامِعِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ يَسْتَغْفِرُوْنَ لِأَصْحَابِ الْعَمَائِمِ الْبِيْضِ.
(ঘ) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর এমন কিছু ফেরেশতা আছেন, যারা জুম‘আর দিনে জামে মসজিদের দরজায় নিযুক্ত থাকেন। তারা সাদা পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।[8]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[9] এর সনদে ইয়াহ্ইয়া বিন শাবীব নামে মিথ্যুক রাবী আছে।
(ه) عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى أَصْحَابِ الْعَمَائِمِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ.
(ঙ) আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ও ফেরেশতামন্ডলী জুম‘আর দিনে পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিদের উপর রহমত বর্ষণ করেন।[10]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। উক্ত বর্ণনার সনদে আইয়ূব ইবনু মুদরাক নামে মিথ্যুক রাবী রয়েছে।[11]
(و) عَنْ طَلْحَةَ بْنِ يَزِيْدَ بْنِ رُكاَنَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله لاَ تَزَالُ أُمَّتِىْ عَلَى الْفِطْرَةِ مَا لَبِسُوا الْعَمَائِمَ عَلَى الْقَلاَنِسِ.
(চ) তবালহা বিন ইয়াযীদ বিন রুকানা তার পিতা হতে দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার উম্মত ততদিন ফিৎরাতের উপর থাকবে, যত দিন তারা টুপির উপর পাগড়ী পরবে।[12]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি জাল। এর সনদে মুহাম্মাদ বিন ইউনুস আল-কুদাইমী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। এছাড়া আরো দুইজন রাবী দুর্বল রয়েছে।[13]
(ز) عَنْ رُكَانَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله اَلْعِمَامَةُ عَلَى الْقَلَنْسُوَةِ فَصْلُ مَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْمُشْرِكِِيْنَ يُعْطَى يَوَمَ الْقِيَامَةِ بِكُلِّ كَوْرَةٍ يَدُوْرُهَا عَلَى رَأْسِهِ نُوْرًا.
(ছ) রুকানা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, টুপির উপর পাগড়ী পরিধান করা মুসলিম ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য। ক্বিয়ামতের দিন পাগড়ীর প্রত্যেক পাক তার মাথার উপর জ্যোতি স্বরূপ ঘুরবে।[14]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি বাতিল।[15]
(ح) عَنْ رُكَانَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ إِنَّ فَرْقَ مَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْمُشْرِكِيْنَ الْعَمَائِمُ عَلَى الْقَلَانِسِ.
(জ) রুকানা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমাদের ও মুশরিকদের মাঝের পার্থক্য হল- টুপির উপর পাগড়ী পরিধান করা।[16]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী বলেন, حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ وَإِسْنَادُهُ لَيْسَ بِالْقَائِمِ وَلاَ نَعْرِفُ أَبَا الْحَسَنِ الْعَسْقَلاَنِىَّ وَلاَ ابْنَ رُكَانَةَ ‘এই হাদীছ দুর্বল। এর সনদ ভিত্তিশীল নয়। আমরা আবুল হাসান আসক্বালানীকেও চিনি না এবং ইবনু রুকানাকেও চিনি না। ইমাম মিযযী বলেন, এর সনদে আবু জা‘ফর নামে একজন অপরিচিত রাবী আছে।[17]
(ط) عَنْ عَلِىٍّ عَنِ النّبِىِّ قَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ أَمَدَّنِىْ يَوْمَ بَدْرٍ وَحُنَيْنٍ بِمَلاَئِكَةٍ يَعْتَمُّوْنَ هَذِهِ الِعَمَّةِ إِنَّ الْعِمَامَةَ حَاجِزَةٌ بَيْنَ الْكُفْرِ وَالْإِيْمَانِ.
(ঝ) আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয় মহান আল্লাহ আমাকে বদর ও হুনাইনের যুদ্ধের দিন ঐ সমস্ত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করেছেন, যারা পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। নিশ্চয় এই পাগড়ী কুফর ও ঈমানের মাঝের প্রাচীর।[18]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। এর সনদে আশ‘আছ বিন সাঈদ এবং আব্দুল্লাহ বিন বুসর নামে দুইজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।[19]
(ى) مَنِ اعْتَمَّ فَلَهُ بِكُلِّ كَوْرَةٍ حَسَنَةٌ فَإِذَا حَطَّ فَلَهُ بِكُلِّ حِطَّةٍ حِطَّةٌ خَطِيْئَةٌ.
(ঞ) যে ব্যক্তি পাগড়ী পরিধান করবে, তার প্রত্যেক পাকে একটি করে নেকী হবে। আর যে পাক কম করে দিবে তার জন্য কমিয়ে দেয়া প্রত্যেক পাকে পাপ হবে।[20]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[21] উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে আরো অনেক জাল হাদীছ প্রচলিত আছে।[22]
সুধী পাঠক! উক্ত জাল বর্ণনাগুলোর কারণেই আজ সমাজে পাগড়ী প্রথা চালু আছে। মিথ্যা ফযীলতের ধোঁকায় পড়ে অসংখ্য মানুষ লম্বা লম্বা পাগড়ী পরাকে অধিক গুরুত্ব দেয়। সচেতন ব্যক্তিদেরকে এই প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে। উল্লেখ যে, উক্ত ফযীলতের আশা না করে কেউ চাইলে মাথায় পাগড়ী বা রূমাল ব্যবহার করতে পারে।[23] তবে তা শুধু ছালাতের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৯৯, ১২/৪৪৬ পৃঃ ।
[3]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৯।
[4]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৯।
[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৭, ১/২৪৯ পৃঃ।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৭-এর আলোচনা দ্রঃ।
[7]. লিসানুল মীযান ৩/২৪৪ পৃঃ- هذا حديث موضوع।
[8]. সুয়ূত্বী, আল-ফাতাওয়া ১/৫৮ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৯৫।
[9]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৯৫-এর আলোচনা দ্রঃ।
[10]. আবু নু‘আইম, আল-হিলইয়া ৫/১৮৯-১৯০ পৃঃ; ত্বাবারাণী, আল-কাবীর, সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯।
[11]. ইবনুল জাওযী, কিতাবুল মাওযূ‘আত ২/১০৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯।
[12]. দায়লামী ৩/১৭৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২।
[13]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২-এর আলোচনা দ্রঃ।
[14]. বাওয়ারদী, সিলসিলা যঈফাহ হা/১২১৭।
[15]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২১৭, ৩/৩৬২ পৃঃ।
[16]. তিরমিযী হা/১৭৮৪, ১/৩০৮ পৃঃ, ‘পোশাক’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৪৩৪০; সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২।
[17]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২।
[18]. মুসনাদে ত্বায়ালিসী হা/১৫৪; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩০৫২।
[19]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩০৫২-এর আলোচনা দ্রঃ।
[20]. ইমাম হায়ছামী, আহকামুল লিবাস ২/৯ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৭১৮।
[21]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৭১৮।
[22]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৩৪৭, ১৫৯৩, ১২৯৬; সাখাবী, আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯৩।
[23]. ছহীহ মুসলিম হা/৩৩৭৫-৩৩৭৮; মিশকাত হা/১৪১০।
(৩) ছালাতের সময় টুপি না পরা :
অনেক মুছল্লীকে দেখা যায় গোঁড়ামী করে টুপি পরে না। এমনকি উন্মুক্ত মাথায় ছালাত আদায় করে। এটা নিঃন্দেহে সৌন্দর্যের খেলাপ। রাসূল (ছাঃ) টুপি পরেছেন মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না। কারণ তিনি পাগড়ী পরতেন। ওযূ করার সময় রাসূল (ছাঃ) পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন এবং তাতে ছালাত আদায় করেছেন বলে প্রমাণিত হয়।[1] তিনি খালি মাথায় ছালাত আদায় করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, ছাহাবীগণ প্রচন্ড গরমে পাগড়ী ও টুপির উপর সিজদা করতেন।[2] এতে বুঝা যায় যে তারা ছালাতে টুপি বা পাগড়ী পরে ছালাত আদায় করতেন। খালি মাথায় ছালাত আদায়কে অপছন্দ করতেন। যেমন-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا رَأَى مَوْلاَهُ نَافِعاً يُصَلِّىْ حَاسِرَ الرَّأْسِ فَقَالَ لَهُ أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّكَ ذَهَبْتَ لِمُقَابَلَةِ أَحَدِ هَؤُلاَءِ الْأُمَرَاءِ أَكُنْتَ تُقَابِلُهُ وَأَنْتَ حَاسِرُ الرَّأْسِ؟ قَالَ لاَ قَالَ فَاللهُ أَحَقُّ أَنْ يَّتَزَيَّنَ لَهُ.
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, একাদা তিনি তার গোলাম নাফে‘ (রাঃ)-কে খালি মাথায় ছালাত আদায় করতে দেখলেন। অতঃপর তাকে বললেন, তুমি যদি কোন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করতে যাও তাহলে কি তুমি খালি মাথায় তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে? তিনি বললেন, না। তখন ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ অধিক হক্বদার- তাঁর জন্য সৌন্দর্য বর্ধন করা’।[3] খালি মাথায় ছালাত আদায় করা একদিকে অপছন্দনীয় কাজ, অন্যদিকে খালি মাথায় থাকা খৃস্টানদের নিদর্শন।[4]
তাছাড়া ছালাত হোক বা ছালাতের বাইরে হোক মাথা ঢেকে রাখা মুসলিমদের জন্য সৌন্দর্যের প্রতীক।[5] টুপি, পাগড়ী, রুমাল যা দিয়েই হোক। আর ছালাতের মধ্যে মাথা ঢাকা সৌন্দর্যের অন্যতম। আল্লাহ বলেন, خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ ‘তোমরা ছালাতের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ ৩১)।[6] রাসূল (ছাঃ) কখনো মাথায় বড় রুমালও ব্যবহার করেছেন।[7] অবশ্য ছাহাবায়ে কেরাম অনেক সময় জুতা, মোজা, টুপি, জামা ছাড়াও চলেছেন।[8]
[2]. বুখারী হা/৩৮৫, ১/৫৬ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৩-এর আলোচনা, (ইফাবা হা/৩৭৮-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ, ১/২১৯ পৃঃ); এবং হা/১১৯৮, ১/১৫৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১২৪-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ, ২/৩৩০ পৃৃৃঃ), ‘ছালাতের মধ্যে বিভিন্ন কাজ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১-এর আলোচনা দ্রঃ।
[3]. ইবনু তায়মিয়াহ, হিজাবুল মারআহ ওয়া লিবাসুহা ফিছ ছালাহ, পৃঃ ৩; দুরূসুন লিশ শায়খিল আলবানী, পৃঃ ২৫; তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ১৬৪।
[4]. আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১/১৬৬ পৃঃ- كل ذلك يقتضي كراهة الصلاة حاسر الرأس لأن ذلك من التشبّه بالنصارى حينما يقومون في عبادتهم حاسرين كما هو مشهور عنهم।
[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫৩৮-এর শেষ আলোচনা দ্রঃ-فإن ستر الرأس من الزينة عند المسلمين।
[6]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৬৯।
[7]. বুখারী হা/৫৮০৭, ২/৮৬৪ পৃঃ, ‘পোষাক’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৬, (ইফাবা হা/৫৩৯১, ৯/৩২২ পৃঃ)।
[8]. মুসলিম হা/২১৭৭, ১/৩০১ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘রোগীর সেবা’ অনুচ্ছেদ-৭, (ইফাবা হা/২০০৭)।
(৪) ছালাতের সময় লুঙ্গি, প্যান্ট গুটিয়ে নিয়ে ছালাত আদায় করা :
সমাজের অধিকাংশ মানুষই টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে থাকে। এই নোংরা স্বভাবের বিরুদ্ধে হাদীছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোন গুরুত্ব নেই। যারা মুছল্লী তারা শুধু ছালাতের সময় টাখনুর উপরে কাপড় রাখার চেষ্টা করে। অথচ এটা এক ধরনের প্রতারণা। কারণ সর্বাবস্থায় টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। এটি গর্হিত অন্যায়। অন্যত্র এসেছে, যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড় পরবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন না, তার দিকে তাকাবেন না এবং তাকে পবিত্র করবেন না; বরং তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি।[1] বিশেষ করে ছালাত সম্পর্কে অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ مَنْ أَسْبَلَ إِزَارَهُ فِىْ صَلاَتِهِ خُيَلاَءَ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ فِىْ حِلٍّ وَلاَ حَرَامٍ.
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ছালাতের মধ্যে টাখনুর নীচে কাপড় পরে, সে হালালের মধ্যে আছে, না হারামের মধ্যে আছে তা আল্লাহর যায় আসে না’।[2] উক্ত হাদীছে টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে ছালাত আদায়কারী মুছল্লীর জন্য সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, জামা বা জামার হাতা গুটিয়ে ও বোতাম খুলে ছালাত আদায় করা উচিৎ নয়; বরং স্বাভাবিক রাখতে হবে।[3]
[2]. আবুদাঊদ হা/৬৩৭, ১/৯৩ পৃঃ, সনদ ছহীহ; আওনুল মা‘বূদ ২/৩৪০।
[3]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/৮০৯, ১/১১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৭২, ২/১৩৬ পৃঃ); মুসলিম হা/১১২৩; মিশকাত হা/৮৮৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮২৭, ২/২৯৭ পৃঃ।
(৫) কাতারের মধ্যে পরস্পরের মাঝে ফাঁক রেখে দাঁড়ানো :
জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করার সময় কাতারের মাঝে পরস্পরের মধ্যে ফাঁক রাখা সুন্নাতের বরখেলাফ। উক্ত মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। পরস্পরের পায়ের মাঝে ‘চার আঙ্গুল’ পরিমাণ ফাঁক রাখতে হবে এবং পায়ে পা মিলালে অন্যকে অপমান করা হয় মর্মে সমাজে যে কথা প্রচলিত আছে, তা এক প্রকার জাহেলিয়াত। এটি সুন্নাতকে অবজ্ঞা করার অপকৌশল এবং চূড়ান্ত মিথ্যাচার। কারণ যারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, তারা যদি পরস্পরে দাঁড়িয়ে পায়ে পা মিলিয়ে ছালাত পড়তে পারেন, তাহলে আমাদের সম্মানের হানি হবে কেন? আমাদেরকেও তাঁদের পদাংক অনুসরণ করতে হবে। কারণ পায়ে পা, টাখনুর সাথে টাখনু ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছালাতে দাঁড়াতে হবে মর্মে রাসূল (ছাঃ) বহু হাদীছে নির্দেশ করেছেন।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ سَدَّ فُرْجَةً فِىْ صَفَّ رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَبَنَى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়াবে, এর বিনিময়ে আললাহ তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।[1]
সুধী পাঠক! মুরববীরা বলে থাকেন, পায়ের সাথে পা মিলালে সম্মান নষ্ট হয়। আর রাসূল (ছাঃ) বলছেন, আল্লাহ সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। আমি তাহলে কার কথা গ্রহণ করব? অতএব সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরুন। রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত লাভে ধন্য হৌন!
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى الَّذِينَ يَصِلُوْنَ الصُّفُوْفَ وَمَنْ سَدَّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ এবং ফেরেশতগণ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যারা কাতারবন্দী হয়ে ছালাত আদায় করেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়ায়, আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।[2]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ أَقِيْمُوا الصُّفُوْفَ وَحَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِيْنُوْا بِأَيْدِىْ إِخْوَانِكُمْ وَلاَ تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ وَمَنْ وَصَلَ صَفًّا وَصَلَهُ اللهُ وَمَنْ قَطَعَ صَفًّا قَطَعَهُ اللهُ.
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা কাতার সোজা করবে, বাহুসমূহকে বরাবর রাখবে, ফাঁক সমূহ বন্ধ করবে এবং তোমাদের ভাইদের হাতের সাথে নম্রতা বজায় রেখে মিলিয়ে দিবে; মধ্যখানে শয়তানের জন্য ফাঁক রাখবে না। যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে মিলিয়ে দাঁড়ায়, আল্লাহ তাকে তাঁর নিকটবর্তী করে নেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে পৃথক করে দেয় আল্লাহও তাকে পৃথক করে দেন।[3]
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ أَقْبَلَ رَسُوْلُ اللهِ عَلَى النَّاسِ بِوَجْهِهِ فَقَالَ أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ ثَلاَثًا وَاللهِ لَتُقِيْمُنَّ صُفُوْفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ قَالَ فَرَأَيْتُ الرَّجُلَ يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَرُكْبَتَهُ بِرُكْبَةِ صَاحِبِهِ وَكَعْبَهُ بِكَعْبِهِ.
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) মুছল্লীদের দিকে মুখ করতেন অতঃপর বলতেন, তোমরা কাতার সোজ কর। এভাবে তিনি তিনবার বলতেন। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করবে অথবা আল্লাহ তোমাদের অন্তরের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করে দিবেন। রাবী বলেন, অতঃপর আমি দেখতাম, মুছল্লী তার সাথী ভাইয়ের কাঁধে কাঁধ, হাঁটুর পার্শ্বের সাথে হাঁটুর পার্শ্ব এবং টাখনুর সাথে টাখনু ভিড়িয়ে দিত।[4]
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَتَخَلَّلُ الصَّفَّ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلَى نَاحِيَةٍ يَمْسَحُ صُدُوْرَنَا وَمَنَاكِبَنَا وَيَقُوْلُ لاَ تَخْتَلِفُوْا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ يَقُوْلُ إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى الصُّفُوْفِ الأُوَلِ.
বারা ইবনু আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত বরাবর করতেন। তিনি আমাদের বুক ও কাঁধ স্পর্শ করতেন এবং বলতেন, তোমরা পৃথক পৃথক হয়ে দাঁড়াইয়ো না। অন্যথা তোমাদের অন্তরসমূহ পৃথক হয়ে যাবে। তিনি আরো বলতেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ প্রথম কাতারের মুছল্লীদের উপর রহমত নাযিল করেন।[5]
عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ فَإِنِّيْ أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِىْ وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَقَدَمَهُ بِقَدَمِهِ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আমার পিছন থেকে দেখতে পাই। আনাস (রাঃ) বলেন, আমাদের একজন অপরজনের কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পায়ে মিলিয়ে দাঁড়াতেন।[6] ইমাম বুখারী (রহঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করার পূর্বে নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন,
بَابُ إِلْزَاقِ الْمَنْكِبِ بِالْمَنْكِبِ وَالْقَدَمِ بِالْقَدَمِ فِي الصَّفِّ وَقَالَ النُّعْمَانُ بْنُ بَشِيْرٍ رَأَيْتُ الرَّجُلَ مِنَّا يُلْزِقُ كَعْبَهُ بِكَعْبِ صَاحِبِهِ.
‘ছালাতে কাতারের মধ্যে কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলানো অনুচ্ছেদ’। নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, আমি মুছল্লীকে দেখতাম, সে তার টাখনুকে তার পার্শ্বের ভাইয়ের টাখনুর সাথে মিলিয়ে দিত।[7] শায়খ আলবানী (রহঃ) দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,
وَ مِنَ الْمُؤّسِّفِ أَنَّ هَذِهِ السُّنَّةُ مِنَ التَّسْوِيَّةِ قَدْ تَهَاوَنَ بِهَا الْمُسْلِمُوْنَ بَلْ أَضَاعُوْهَا إِلاَّ الْقَلِيْلَ مِنْهُمْ فَإِنِّىْ لَمْ أَرَهَا عِنْدَ طَائِفَةٍ مِنْهُمْ إِلاَّ أَهْلَ الْحَدِيْثِ فَإِنِّىْ رَأَيْتُهُمْ فِىْ مَكَّةَ سَنَةَ ( 1368 ) حِرِّيْصِيْنَ عَلَى التَّمَسُّكِ بِهَا كَغَيْرِهَا مِنْ سُنَنِ الْمُصْطَفَى عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَ السَّلاَمُ بِخِلاَفِ غَيْرِهِمْ مِنْ أَتَبْاعِ الْمَذَاهِبِ الْأَرْبَعَةِ لاَ أَسْتَثْنِىْ مِنْهُمْ حَتَّى الْحَنَابِلَةِ فَقَدْ صَارَتْ هَذِهِ السُّنَّةُ عِنْدَهُمْ نَسْيًا مَنْسِيًّا بَلْ إِنَّهُمْ تَتَابَعُوْا عَلَى هُجْرِهَا وَ الْإِعْرَاضِ عَنْهَا ذَلِكَ لِأَنَّ أَكْثَرَ مَذَاهِبِهِمْ نَصَّتْ عَلَى أَنَّ السُّنُّةَ فِى الْقِيَامِ التَّفْرِيْجُ بِيْنَ الْقَدَمَيْنِ بِقَدْرِ أَرْبَعِ أَصَابِعَ فَإِنْ زَادَ كَرِهَ كَمَا جَاءَ مُفَصِّلاً في " الفقه على المذاهب الأربعة " ( 1 / 207 ) ، وَ التَّقْدِيْرُ الْمَذْكُوْرُ لاَ أَصْلَ لَهُ فِى السُّنَّةِ وَ إِنَّمَا هُوَ مُجَرَّدٌ رَأْيٌ.
‘দুঃখজনক বিষয় হল, কাতার সোজা করার সুন্নাতকে মুসলিমরা অবজ্ঞা করে চলেছে; বরং কিছু সংখ্যক মানুষ ব্যতীত অন্যরা সবাই এই সুন্নাতকে নষ্ট করেছে। নিশ্চয় আমি সেই দলগুলোর মধ্যে ‘আহলেহাদীছ’ ব্যতীত অন্য কারো মধ্যে উক্ত সুন্নাত দেখিনি। আমি মক্কায় (১৩৬৮ হিঃ) তাদেরকে দেখেছি, তারা রাসূল (ছাঃ)-এর অন্যান্য সুন্নাতকে যেমন অাঁকড়ে ধরে আছে, তেমনি এই সুন্নাতকেও অাঁকড়ে ধরার প্রতি অতীব অনুরাগী। চার মাযহাবের অনুসারীদের বিপরীতে তারাই একে অাঁকড়ে ধরে আছে। হাম্বলীদেরকেও আমি এদের মধ্য থেকে পৃথক করি না। কারণ তাদের মধ্য হতে এটা সম্পূর্ণই উঠে গেছে। বরং তারা এই সুন্নাতকে পরিত্যাগ করা এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পথ অবলম্বন করছে। অধিকাংশ মাযহাব এই সুন্নাহর বিরুদ্ধে দলীল পেশ করছে যে, কাতারে দাঁড়ানোর সময় উভয় মুছল্লীর পায়ের মাঝে ‘চার আঙ্গুল’ ফাঁক রাখতে হবে। যদি এর অতিরিক্ত ফাঁক হয় তবে অপছন্দনীয়। যেমন ‘আল-ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ’ (১/২০৭ পৃঃ) গ্রন্থের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা এসেছে। অথচ সুন্নাহর মধ্যে উক্ত পরিমাণের কোন ভিত্তি নেই; স্রেফ কল্পনা মাত্র’। [8]
عَنْ أَبِىْ مَسْعُوْدٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا فِى الصَّلاَةِ وَيَقُوْلُ اسْتَوُوْا وَلاَ تَخْتَلِفُوْا فَتَخْتَلِفَ قُلُوْبُكُمْ لِيَلِنِىْ مِنْكُمْ أُولُو الأَحْلاَمِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ قَالَ أَبُوْ مَسْعُوْدٍ فَأَنْتُمُ الْيَوْمَ أَشَدُّ اخْتِلاَفًا.
আবু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতে আমাদের বাহুগুলোকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন, সোজা হয়ে দাঁড়াও; পৃথক পৃথক হয়ে দাঁড়াইয়ো না। অন্যথা তোমাদের অন্তরসমূহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও বুদ্ধিমান তারাই যেন আমার নিকটে থাকে। অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের ন্যায়, তারা যেন থাকে। অতঃপর যারা উভয় দিক থেকে নিকটবর্তী তারা যেন থাকে। আবু মাসঊদ বলেন, তোমরা আজ অত্যধিক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছ।[9]
عَنْ أَنَسٍ قَالَ أُقِيْمَتِ الصَّلَاةُ فَأَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ بِوَجْهِهِ فَقَالَ أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَتَرَاصُّوْا فَإِنِّىْ أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِىْ.
আনাস (রাঃ) বলেন, একদা ছালাতের ইক্বামত দেওয়া হল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং পরস্পরে মিলে দাঁড়াও। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আমার পিছন থেকেও দেখতে পাই।[10]
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْأَعْنَاقِ فَوَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ إِنِّىْ لَأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ.
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা কাতার সমূহে পরস্পরে মিলে দাঁড়াবে এবং পরস্পরকে কাছে টেনে নিবে। আর তোমাদের ঘাড় সমূহকে সমপর্যায়ে সোজা রাখবে। আমি ঐ সত্তার কসম করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, নিশ্চয়ই আমি শয়তানকে দেখি সে কাতারের ফাঁক সমূহে প্রবেশ করে, কাল ভেড়ার বাচ্চা ন্যায়।[11]
সুধী পাঠক! কাতারে দাঁড়ানোর সময় পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। উক্ত হাদীছ সমূহ জানার পরও কেউ যদি এই সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করে, তবে সে সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ লংঘন করবে। হাদীছে সীসা ঢালা প্রাচীরের মত দাঁড়াতে বলা হয়েছে, যেমন একটি ইট আরেকটি ইটের উপর রেখে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। সুতরাং পরস্পরের পায়ের মাঝে কোন ফাঁক থাকবে না। উল্লেখ্য, অনেক মসজিদে শুধু কনিষ্ঠা আঙ্গুলের সাথে মিলানো হয়। উক্ত মর্মেও কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/৯৯৫; মুসনাদে আহমাদ হা/২৪৬৩১; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫৩২।
[3]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৬৬৬, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১১০২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৩৪, ৩/৬১ পৃঃ।
[4]. আবুদাঊদ হা/৬৬২, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ।
[5]. আবুদাঊদ হা/৬৬৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ।
[6]. ছহীহ বুখারী হা/৭২৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা হা/৬৮৯, ২/৯৫ পৃঃ)।
[7]. ছহীহ বুখারী ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৭, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা অনুচ্ছেদ-৪৬৮, ২/৯৫ পৃঃ)।
[8]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২-এর আলোচনা দ্রঃ।
[9]. ছহীহ মুসলিম হা/১০০০, ১/১৮১ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৫৪), ‘ছালাত’ অধ্যায়-৫, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৮; মিশকাত হা/১০৮৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০২০, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৫৭, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ।
[10]. ছহীহ বুখারী হা/৭১৯, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা হা/৬৮৪, ২/৯৩ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনচ্ছেদ-৪৩; মিশকাত হা/১০৮৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০১৮, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৫৬।
[11]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৬৬৭, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ ; মিশকাত হা/১০৯৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০২৫, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৫৮, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ।
(৬) জামা‘আত আরম্ভ করার সময় মুক্তাদীদেরকে কাতার সোজা করার কথা না বলা :
অনেক মসজিদে ইক্বামত শেষ না হতেই ইমাম ছালাত শুরু করেন। অথচ ইক্বামতের জবাব দেওয়া সুন্নাত[1], তেমনি মুক্তাদীদেরকে কাতার সোজা করতে বলা অপরিহার্য। ইমামের উক্ত আচরণ রাসূল (ছাঃ)-কে হেয় প্রতিপন্ন করার শামিল। কারণ ইমামের উপর গুরু দায়িত্ব হল, ইক্বামত শেষ হওয়ার পর মুছল্লীদেরকে কাতার সোজা করার জন্য হুঁশিয়ার করা। তারপর ছালাত শুরু করা।
عَن أَنَسٍ قَالَ أُقِيْمَتِ الصَّلَاةُ فَأَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ بِوَجْهِهِ فَقَالَ أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَتَرَاصُّوْا فَإِنِّىْ أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِىْ.
আনাস (রাঃ) বলেন, যখন ইক্বামত দেয়া হত, তখন রাসূল (ছাঃ) আমাদের দিকে মুখ করতেন। অতঃপর বলতেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় দাঁড়াও। নিশ্চয় আমি আমার পিছন থেকে তোমাদেরকে দেখতে পাই।[2]
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَتَخَلَّلُ الصَّفَّ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلَى نَاحِيَةٍ يَمْسَحُ صُدُوْرَنَا وَمَنَاكِبَنَا وَيَقُوْلُ لاَ تَخْتَلِفُوْا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ يَقُوْلُ إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى الصُّفُوْفِ الأُوَلِ.
বারা ইবনু আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত বরাবর করতেন। তিনি আমাদের বুক ও কাঁধ স্পর্শ করতেন এবং বলতেন, তোমরা পৃথক পৃথক হয়ে দাঁড়াইয়ো না। অন্যথা তোমাদের অন্তরসমূহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তিনি আরো বলতেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ প্রথম কাতারের মুছল্লীদের উপর রহমত নাযিল করেন।[3]
সুধী পাঠক! রাসূল (ছাঃ) যদি উক্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তবে কি বর্তমান যুগের ইমামগণ পারবেন না? এই সমস্ত ইমামগণ কি রাসূল (ছাঃ)-এর চেয়ে বেশী মর্যাদাবান? (নাঊযুবিল্লাহ)। বর্তমানে ইমামগণ প্রত্যেক ওয়াক্তে মোবাইল সম্পর্কে সতর্ক করতে পারেন, কিন্তু কাতার সোজা করতে বলতে পারেন না।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৭১৯, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা হা/৬৮৪, ২/৯৩ পৃঃ); মিশকাত হা/১০৮৬।
[3]. আবুদাঊদ হা/৬৬৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ।
(৭) ডান দিক থেকে কাতার পূরণ করা :
সুন্নাত হল ইমামের পিছন থেকে কাতার সোজা করা। ডান দিক থেকে কাতার পূরণ করার কোন শারঈ ভিত্তি নেই। প্রত্যেকটি কাতার ইমামের পিছন থেকে পূরণ করতে হবে।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ صَلَّى النَّبِىُّ فِىْ بَيْتِ أُمِّ سُلَيْمٍ فَقُمْتُ وَيَتِيْمٌ خَلْفَهُ وَأُمُّ سُلَيْمٍ خَلْفَنَا.
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ছাঃ) উম্মু সুলাইমের বাড়ীতে ছালাত আদায় করলেন। আমি এবং একজন ইয়াতীম তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। আর উম্মু সুলাইম আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন।[1] উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে ডান দিক থেকে কাতার সোজা না করে ইমামের পিছন থেকেই কাতার করতে হবে।
(৮) সামনের কাতার পূরণ না করে পিছনের কাতারে দাঁড়ানো :
অলসতার কারণে এই ত্রুটি অনেকের মাঝে লক্ষ্য করা যায়। সামনের কাতার পূরণ না করেই পিছনে আরেকটি কাতার করে দাঁড়িয়ে যায়। অথচ তাদের জানা নেই যে, এমনটি করলে ছালাত হবে না। উক্ত ছালাত পুনরায় ফিরিয়ে পড়তে হবে।
عَنْ وَابِصَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ رَأَى رَجُلاً يُصَلِّى خَلْفَ الصَّفِّ وَحْدَهُ فَأَمَرَهُ أَنْ يُعِيْدَ.
ওয়াবেছা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূল (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে কাতারের পিছনে একাকী ছালাত আদায় করতে দেখলেন। অতঃপর তাকে পুনরায় ছালাত ফিরিয়ে পড়ার নির্দেশ দিলেন।[1]
(৯) কাতার পূরণ হওয়ার পর সামনের কাতার থেকে একজনকে টেনে নিয়ে দাঁড়ানো :
কোন মুছল্লী জামা‘আত চলাকালীন এসে যদি কাতার পূর্ণ হওয়া দেখে, তাহলে সে একাকী কাতারের পিছনে দাঁড়িয়ে যাবে। কাতারের মাঝ থেকে টেনে নিবে না এবং কাতারের মাঝে ঢুকে যাবে না। তবে দুইজন ব্যক্তির জামা‘আত চলাকালীন যদি তৃতীয় ব্যক্তি আসে, তাহলে ইমামকে পৃথক করার জন্য মুক্তাদীকে পিছনে টেনে নিয়ে দাঁড়াবে অথবা ইমাম নিজেই পৃথক হয়ে যাবেন।[1] উল্লেখ্য যে, পূর্ণ কাতার থেকে টেনে নেওয়ার যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা দুর্বল।
عَنْ وَابِصَةَ بْنِ مَعْبَدٍ قَالَ انْصَرَفَ رَسُوْلُ اللهِ وَرَجُلٌ يُصَلِّي خَلْفَ الْقَوْمِ فَقَالَ يَا أَيُّهَا الْمُصَلِّي وَحْدَهُ أَلاَ تَكُوْنُ وَصَلْتَهُ صَفًّا فَدَخَلْتَ مَعَهُمْ أَوِ اجْتَرَرْتَ رَجُلاً إِلَيْكَ أنْ ضَاقَ بِكُمُ الْمَكَانُ أَعِدْ صَلاَتَكَ فَإِنَّهُ لاَ صَلاَةَ لَكَ.
ওয়াবেছাহ বিন মা‘বাদ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) ছালাতের সালাম ফিরিয়ে দেখেন জনৈক ব্যক্তি কাতারের পিছনে ছালাত আদায় করছে। তখন তিনি বললেন, হে একাকী ছালাত আদায়কারী মুছল্লী! তুমি কি কাতারের মধ্যে ঢুকে মুছল্লীদের সাথে মিলিত হতে পারনি? অথবা তুমি কি একজনকে তোমার দিকে টেনে নিতে পারনি। যাতে তোমাদের স্থান সংকীর্ণ হয়ে যায়? তুমি ছালাত পুনরায় আদায় কর। কারণ তোমার এই ছালাত হয়নি। [2]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে সারী ইবনু ইসমাঈল নামে একজন দুর্বল রাবী আছে। ইমাম বায়হাক্বী উক্ত হাদীছ বর্ণনা করে তাকে যঈফ বলেছেন।[3]
জ্ঞতব্য : কাতারে একাকী দাঁড়ালে ছালাত হবে না মর্মে তিরমিযীতে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার অর্থ হল, সামনের কাতারে জায়গা থাকা অবস্থায় কেউ যদি একাকী দাঁড়ায়, তাহলে তার ছালাত হবে না।[4]
[2]. ত্বাবারাণী হা/৩৯৪; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৪৯৯২; বুলূগুল মারাম হা/৪১০।
[3]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৪৯৯২; ইরওয়াউল গালীল হা/৫৪১-এর আলোচনা দ্রঃ, ২/৩২৫ পৃঃ।
[4]. বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ ইরওয়া হা/৫৪১।
(১০) ছালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল নড়াচড়া করা যাবে না বলে ধারণা করা :
উক্ত ধারণা সম্পূর্ণ বানোয়াট। এর পক্ষে কোন দলীল নেই। একশ্রেণীর মুরববী উক্ত প্রথার আমদানী করেছেন। অথচ ছালাতের মধ্যে প্রয়োজনে মুছল্লী তার স্থান থেকে সামনে বা পিছনে, ডানে বা বামে সরে যেতে পারে।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَامَ رَسُوْلُ اللهِ لِيُصَلِّيَ فَجِئْتُ حَتَّى قُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِيَدِىْ فَأَدَارَنِىْ حَتَّى أَقَامَنِىْ عَن يَمِيْنه ثُمَّ جَاءَ جَبَّارُ بْنُ صَخْرٍ فَقَامَ عَنْ يَسَارِ رَسُوْلِ اللهِ فَأَخَذَ بِيَدِيْنَا جَمِيْعًا فَدَفَعَنَا حَتَّى أَقَمْنَا خَلْفَهُ.
জাবের (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) ছালাতে দাঁড়ালেন আর আমি তাঁর বাম পার্শ্বে দাঁড়ালাম। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে ঘুরিয়ে তার ডান দিকে করে নিলেন। অতঃপর জাববার ইবনু ছাখর এসে রাসূল (ছাঃ)-এর বাম দিকে দাঁড়ালেন। তখন রাসূল (ছাঃ) আমাদের উভয়ের হাত ধরে তাঁর পিছনে ঠেলে দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন।[1]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ بِتُّ فِىْ بَيْتِ خَالَتِىْ مَيْمُوْنَةَ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ يُصَلِّىْ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِيَدِىْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ فَعَدَلَنِىْ كَذَلِكَ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ إِلَى الشِّقِّ الْأَيْمَنِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি একদা আমার খালা মায়মূনা (রাঃ)-এর কাছে রাত্রে ছিলাম। রাসূল (ছাঃ) ছালাতের জন্য দাঁড়ালেন। অতঃপর আমি তাঁর বামে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরলেন এবং তাঁর পিঠের পিছন দিয়ে আমাকে ডান পার্শ্বে নিয়ে আসলেন।[2]
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৬৯৯, ১/৯৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৬৫, ২/৮৪ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১৮৩৭; মিশকাত হা/১১০৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৩৮, ৩/৬৩ পৃঃ।