আযানের ফযীলত ও আহকাম সম্পর্কে অনেক যঈফ হাদীছ ও বানোয়াট কথাবার্তা সমাজে চালু আছে। সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা পেশ করা হল।-
(১) আযানের ফযীলত :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ مَنْ أَذَّنَ سَبْعَ سِنِيْنَ مُحْتَسِبًا كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছওয়াবের নিয়তে সাত বছর আযান দিবে, সে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি লাভ করবে।[1]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে জাবের ইবনু ইয়াযীদ আল-জু‘ফী নামে একজন রাবী আছে। সে দুর্বল। কোন কোন মুহাদ্দিছ তাকে মিথ্যুক বলেছেন। সে ছিল রাফেযী।[2] তবে নিম্নের হাদীছটি ছহীহ-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَنْ أَذَّنَ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَكُتِبَ لَهُ بِتَأْذِيْنِهِ فِىْ كُلِّ يَوْمٍ سِتُّوْنَ حَسَنَةً وَلِكُلِّ إِقَامَةٍ ثَلاَثُوْنَ حَسَنَةً.
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ১২ বছর আযান দিবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। তার আযানের কারণে প্রত্যেক দিন ৬০ টি এবং প্রত্যেক ইক্বামতের জন্য ৩০ টি নেকী লেখা হবে।[3]
[2]. যঈফ তিরমিযী হা/২০৬; যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৭২৭; সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৫০।
[3]. ইবনু মাজাহ হা/৭২৮, পৃঃ ৫৩, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৬৭৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬২৭, ২/২০৬ পৃঃ।
(২) মসজিদের বাম পার্শ্ব থেকে আযান দেয়া আর ডান পার্শ্ব থেকে ইক্বামত দেয়া :
সমাজে উক্ত প্রথা চালু থাকলেও শরী‘আতে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং সুবিধা অনুযায়ী যে কোন পার্শ্ব থেকে আযান ও ইক্বামত দেওয়া যাবে।
(৩) আযানের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, কুরআনের আয়াত পড়া, ইসলামী গযল বলা, বিভিন্ন দু‘আ পড়া, মানুষকে ডাকাডাকি করা, ফজরের আযানের পূর্বে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান্নাঊম’ বলা :
আযানের পূর্বে উপরিউক্ত কাজগুলো করা সম্পূর্ণ শরী‘আত বিরোধী। অনুরূপ রামাযান মাসে সাহারীর সময় আযান না দিয়ে সাইরেন বাজানো, ডাকাডাকি করা, ঢাক পেটানো, দলধরে চিৎকার করা ইত্যাদি জাহেলী রীতি।[1] বরং সুন্নাত অনুযায়ী সাহারীর জন্য আযান দিতে হবে।[2] আযান দেওয়ার পূর্বে কোনকিছু বলা বা দু‘আ পড়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। আযানের পর মাইকে উচ্চকণ্ঠে দু‘আ পড়াও ঠিক নয়।[3] অনুরূপ আযানের পর মসজিদে আসার জন্য পুনরায় ডাকা যাবে না। যেমন বহু মসজিদে চালু আছে। এটা স্পষ্ট বিদ‘আত।[4]
[2]. বুখারী হা/১৯১৯, ১/২৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৭৯৭, ৩/২৪৯ পৃঃ), ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৭; মুসলিম হা/২৫৮৮; মিশকাত হা/৬৮০, পৃঃ ৬৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬২৯, ২/২০৭ পৃঃ।
[3]. বুখারী হা/২৯৯২, ১/৪২০ পৃঃ, (ইফাবা হা/২৭৮৪, ৫/২২২ পৃঃ), ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩১; মুসলিম হা/৭০৭৩; মিশকাত হা/২৩০৩, পৃঃ ২০১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২১৯৫, ৫/৮৭ পৃঃ, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, ‘সুবহা-নাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ’ বলার ছওয়াব’ অনুচ্ছেদ।
[4]. আবুদাঊদ হা/৫৩৮, ১/৭৯ পৃঃ, সনদ হাসান।
(৪) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’-এর জবাবে ‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা :
রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ করেছেন যে, মুয়াযযিন যা বলবেন, উত্তরে তাই বলতে হবে। শুধু ‘হায়্যইয়া আলাছ ছালাহ’ ও ‘হায়্যইয়া আলাল ফালাহ’ ব্যতীত।[1] তাই আযান ও ইক্বামতের সময় ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’-এর জবাবে ‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা যাবে না। বরং ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’-ই বলতে হবে। তবে অন্য সময়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নাম শুনলে বা পড়লে সংক্ষিপ্ত দরূদ হিসাবে ‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলবে।[2]
[2]. তিরমিযী হা/৩৫৪৫ ও ৩৫৪৬; মিশকাত হা/৯২৭ ও ৯৩৩, পৃঃ ৮৭ সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৬৬, ২/৩১২ পৃঃ ও হা/৮৭২, ২/৩১৪ পৃঃ; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭২৫৬, সনদ ছহীহ; ছহীহ তারগীব হা/৯৯৫।
(৫) ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাঊম’-এর জবাবে ‘ছাদাক্বতা ওয়া বারারতা’ বলা :
উক্ত বাক্যের জবাবে ‘ছাদ্দাক্বতা ওয়া বারারতা’ বলার কোন দলীল নেই। বরং উত্তরে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাউম’-ই বলতে হবে। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘উক্ত কথার জবাবে ‘ছাদাক্বতা ওয়া বারারতা’ বলার শারঈ কোন ভিত্তি নেই’।[1]
(৬) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ শুনে শাহাদাত আঙ্গুলে চুম্বন করা ও চোখে মাসাহ করা :
উক্ত আমল শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ এর পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। যে বর্ণনাগুলো এসেছে, তা জাল বা মিথ্যা। যেমন-
عَنِ الْخِضْرِ عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ أَنَّهُ قَالَ مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ يَقُوْلُ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ مَرْحَبًا بِحَبِيْبىْ وَقُرَّةُ عَيْنِىْ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ ثُمَّ يُقَبِّلُ إِبْهَامَيْهِ وَيَجْعَلُهُمَا عَلَى عَيْنَيْهِ لَمْ يَعْمَ وَلَمْ يَرْمَدْ أَبَدًا.
খিযির (আঃ) বলেন, মুয়াযযিন যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলবে, তখন যে ব্যক্তি বলবে, আমার প্রিয় ব্যক্তিকে স্বাগত, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহর কারণে আমার চক্ষু শীতল হয়েছে, অতঃপর তার দুই হাতের বৃদ্ধা আংগুলে চুম্বন করবে ও দুই চোখ মাসাহ করবে, সে কখনো অন্ধ হবে না এবং তার চোখও ওঠবে না।[1]
তাহক্বীক্ব : বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বর্ণনা। এর কোন সনদই নেই।[2]
عَنْ أَبِىْ بَكْرِ الصِّدِيْقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قَوْلَ الْمُؤَذِّنِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ قَالَ مِثْلَهُ وَقَبَّلَ بِبَاطِنِ الْأَنْمِلَتَيْنِ السَّبَّابَةِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ فَقَالَ مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيْلِىْ فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِىْ.
আবুবকর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি যখন মুয়াযযিনের ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলা শুনতেন, তখন তিনি অনুরূপ বলতেন। অতঃপর দুই শাহাদাত আঙ্গুলের পেটে চুম্বন করতেন এবং দুই চোখ মাসাহ করতেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার বন্ধু যা করল তা যদি কেউ করে, তবে আমার শাফা‘আত তার জন্য ওয়াজিব হয়ে যাবে।[3]
তাহক্বীক্ব : এটি ডাহা মিথ্যা বর্ণনা। এর কোন সনদ নেই।[4]
[2]. আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ, পৃঃ ৬০৫; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ২০।
[3]. তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৪।
[4]. আব্দুর রহমান আস-সাখাবী, আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ ফী বায়ানি কাছীরিন মিনাল আহাদীছিল মুশ্তাহারা আলাল আলসিনাহ, পৃঃ ৬০৫; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ২০।
(৭) হাত তুলে আযানের দু‘আ পাঠ করা এবং শেষে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলা :
আযান শেষ হওয়ার পর দুই হাত তুলে দু‘আ করা ও উক্ত বাক্য বলার যে প্রচলন রয়েছে, শরী‘আতে তার কোন ভিত্তি নেই। রাসূল (ছাঃ) কিংবা ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত আমল করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এই আমল সত্বর পরিত্যাজ্য। উল্লেখ্য যে, আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু‘আ করলে আল্লাহ সেই দু‘আ ফেরত দেন না মর্মে ছহীহ হাদীছ রয়েছে। তাই আযান ও ইক্বামতের মাঝে সাধারণভাবে দু‘আ করা যাবে।[1]
(৮) আযানের দু‘আয় বাড়তি অংশ যোগ করা :
দু‘আ নির্দিষ্ট ইবাদত। এর সাথে বাড়তি অংশ যোগ করার অধিকার কারো নেই। মানব রচিত কথা রাসূল (ছাঃ)-এর নামে চালিয়ে দিলে এর পরিণাম হবে জাহান্নাম।[1] অথচ সর্বত্র রাসূল (ছাঃ)-এর দু‘আর সাথে মানুষের তৈরি করা শব্দ যোগ করে আযানের দু‘আ পাঠ করা হচ্ছে। যেমন-
(ক) বায়হাক্বীতে বর্ণিত একটি হাদীছের শেষে ‘ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিয়াদ’ কথাটি এসেছে। কিন্তু হাদীছটি ছহীহ নয়। আলবানী (রহঃ) বলেন, وَهِىَ شَاذَّةٌ لِأَنَّهَا لَمْ تَرِدْ فِىْ جَمِيْعِ طُرُقِ الْحَدِيْثِ عَنْ عَلِىِّ بْنِ عَيَّاشٍ ‘এটা অপরিচিত হিসাবে যঈফ। কারণ আলী ইবনু আইয়াশ থেকে কোন সূত্রেই বর্ণিত হয়নি।[2]
(খ) উক্ত বাক্যের পূর্বে ‘ওয়ারযুক্বনা শাফা‘আতাহু ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ’ যোগ করার কোন প্রমাণ নেই। এই বানোয়াট কথা ধর্মের নামে চলছে।
(গ) অনুরূপভাবে ইবনুস সুন্নীর বর্ণিত ‘ওয়াদ দারাজাতার রাফি‘আহ’ বাক্যটিও প্রমাণিত নয়। এটাও বানোয়াট ও অতিরিক্ত সংযোজিত।[3] ইবনু হাজার আসক্বালানী ও আল্লামা সাখাভী বলেন, উক্ত অংশ কোন হাদীছে বর্ণিত হয়নি।[4]
(ঘ) কোন কোন গ্রন্থে ‘ইয়া আরহামার রাহিমীন’ যোগ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ কথারও কোন ত্তিতি নেই। ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, فِىْ آخِرِهِ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ وَلَيْسَتْ أَيْضًا فِىْ شَئْ ٍمِنْ طُرُقِهِ ‘শেষে ‘ইয়া আরহামুর রাহিমীন’ যোগ করারও কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি’।[5]
জ্ঞাতব্য : আযান হওয়ার পর দরূদে ইবরাহীম পড়বে।[6] অতঃপর নিম্নের দু‘আ পাঠ করবে। অতিরিক্ত কোন শব্দ যোগ করবে না।
اللهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا الَّذِىْ وَعَدْتَهُ.
উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াছ ছলা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদ্তাহ’।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনিই এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত ছালাতের প্রভু। আপনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে দান করুন ‘অসীলা’ (নামক জান্নাতের সম্মানিত স্থান) ও মর্যাদা এবং তাঁকে পৌঁছে দিন প্রশংসিত স্থান ‘মাক্বামে মাহমূদে’ যার ওয়াদা আপনি করেছেন’। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে উক্ত দু‘আ পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে’।[7]
[2]. ইরওয়াউল গালীল হা/২৪৩-এর আলোচনা দ্রঃ ১/২৬১ পৃঃ।
[3]. ইরওয়াউল গালীল ১/২৬১ পৃঃ-وهي مدرجة أيضا من بعض النساخ ; আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব, পৃঃ ১৮৯।
[4]. আল্লামা সাখাভী, আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ, পৃঃ ২১২; তালখীছুল হাবীর ১/৫১৮ পৃঃ; ইরওয়াউল গালীল ১/২৬১ পৃঃ-أنها ليست في شئ من طرق الحديث ।
[5]. তালখীছুল হাবীর ১/৫১৮ পৃঃ।
[6]. ছহীহ মুসলিম হা/৮৭৫, ১/১৬৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৩৩), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭; মিশকাত হা/৬৫৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬০৬, ২/১৯৯ পৃঃ।
[7]. বুখারী হা/৬১৪, (ইফাবা হা/৫৮৭, ২/৪৬ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮; মিশকাত হা/৬৫৯।
(৯) কাতার সোজা হওয়ার পর ইক্বামত দেওয়া :
‘ইক্বামত’ অর্থ দাঁড়ানো। তাই ইক্বামত হল, জামা‘আতে দাঁড়ানো ও কাতার সোজা করার ঘোষণা। কিন্তু বর্তমানে চালু হয়েছে কাতার সোজা করার পর ইক্বামত দেওয়া। এই আমল থেকে বিরত থাকা যরূরী।
(১০) ইক্বামতের বাক্যগুলো জোড়া জোড়া দেয়ার পক্ষে গোঁড়ামী করা :
ইক্বামতের শব্দগুলো জোড়া জোড়া বলা জায়েয। এর পক্ষে দু’একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[1] কিন্তু এর উপর যিদ ও গোঁড়ামী করার কোন সুযোগ নেই। কারণ ইক্বামত একবার করে বলাই উত্তম এবং এর প্রতি আমল করাই উচিৎ। এর পক্ষেই বেশী হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। বরং আবু মাহযূরা (রাঃ) ছাড়া যে সমস্ত ছাহাবী উক্ত মর্মে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তারা সকলেই একবারের কথা উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া অনুধাবন করার বিষয় হল, রাসূল (ছাঃ)-এর নিযুক্ত মুয়াযযিন ছিলেন বেলাল (রাঃ)। আর তিনি তাকে একবার করে ইক্বামত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাহলে কোন্ আমলটি গ্রহণ করা উত্তম?
عَنْ أَنَسٍ قَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ أَمَرَ بِلاَلاً أَنْ يَشْفَعَ الأَذَانَ وَأَنْ يُوْتِرَ الإِقَامَةَ.
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বেলাল (রাঃ)-কে আযান দুইবার করে আর ইক্বামত একবার করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[2]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ إِنَّمَا كَانَ الأَذَانُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ وَالإِقَامَةُ مَرَّةً مَرَّةً غَيْرَ أَنَّهُ يَقُوْلُ قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে আযান ছিল দুই বার দুইবার করে এবং ইক্বামত ছিল একবার একবার করে। তবে ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ দুইবার ছিল।[3]
জ্ঞাতব্য : ইক্বামতের শব্দগুলো একবার করে বলা যাবে না বলে যে বর্ণনা প্রচলিত আছে, তা জাল। যেমন-
(أ) مَنْ أَفْرَدَ الْإِقَامَةَ فَلَيْسَ مِنَّا
(ক) ‘যে ব্যক্তি একবার করে ইক্বামত দিবে সে আমার উম্মত নয়’।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর কোন সনদ নেই।[5]
(ب) عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِىْ جُحَيْفَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ أَذَّنَ بِلاَلٌ لِرَسُوْلِ اللهِ مَثْنىَ مَثْنىَ وَأَقَامَ مِثْلَ ذَلِكَ.
(খ) আওউন বিন আবী জুহায়ফাহ তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, বেলাল (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর সময় আযান দিতেন জোড়া জোড়া করে। আর ইক্বামতও দিতেন অনুরূপভাবে।[6]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[7]
[2]. নাসাঈ হা/৬২৭, ১/৭৩ পৃঃ; ছহীহ বুখারী হা/৬০৫, ৬০৬, ৬০৭, ১/৮৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৭৮-৫৮০, ২/৪২-৪৩ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২ ও ৩; ছহীহ মুসলিম হা/৮৬৪, ৮৬৫, ৮৬৭, ১/৬৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭২২, ৭২৩ ও ৭২৫), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২; মিশকাত হা/৬৪১, পৃঃ ৬৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৯০, ২/১৯০ পৃঃ, ‘আযান’ অনুচ্ছেদ।
[3]. আবুদাঊদ হা/৫১০, ১/৭৬ পৃঃ; মিশকাত হা/৬৪৩, পৃঃ ৬৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৯২, ২/১৯২ পৃঃ।
[4]. তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৫।
[5]. তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৫।
[6]. ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব হা/৭৮২০।
[7]. তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৫; ইবনুল জাওযী (৫১০-৫৯৭ হিঃ), আল-মাওযূ‘আত ২/৯২ পৃঃ; আল-আওসাত্ব হা/৭৮২০।