অন্তর দ্বারা খারাপ কাজকে জানবে এবং তার কাজীদের সাথে বসবে না। যেহেতু বিনা আপত্তিতে তাদের সাথে বসা সেই অভিশপ্ত বানী ইসরাইলের মতো কাজ হবে, যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন,
“বনী ইসরাইলের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল, তারা দাউদ ও মারয়্যাম তনয় কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল। কেননা, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী। তারা যে সব খারাপ কাজ করত, তা থেকে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত, নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট। (মায়িদাহঃ ৭৮-৭৯)
যার ক্ষমতা আছে, সে তার হাত বা ক্ষমতা দ্বারা মন্দকাজে বাধা দেবে। যেমন সরকার ও প্রশাসন এ কাজ করবে। জামাআতের আমীর এ কাজ পারবে। ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে বাপ মা এ কাজ পারবে। স্ত্রীর ক্ষেত্রে স্বামী এ কাজ পারবে। অবশ্য শর্ত হল, ক্ষমতা প্রয়োগ করে নোংরা কাজ বন্ধ করতে গিয়ে তার থেকে বড় নোংরা বা খারাপ কাজ না হয়ে বসে। তাহলে সে ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রয়োগ করা বৈধ নয়। (ইবনে বাজ)
এই শ্রেণীর লোকেরা আল্লাহ ও তার রাসুল (সঃ) এর অবাধ্য। এদের ইমান সবচেয়ে দুর্বল। তাদের হৃদয়ে আছে বিপদজনক ব্যাধি। তারা বিলম্বে অথবা অবিলম্বে আল্লাহর শাস্তি বা আজাবের উপযুক্ত। মহান আল্লাহ বলেছেন, "আর তিনি কিতাবে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর কোন আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিদ্রূপ করা হচ্ছে, তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে আলোচনায় লিপ্ত না হয় তোমরা তাদের সাথে বসো না; নচেৎ তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ কপট ও অবিশ্বাসী সকলকেই জাহান্নামে একত্র করবেন। (নিসাঃ ১৪০)
তুমি যখন দেখ, তারা আমার নিদর্শন সম্বন্ধে ব্যাঙ্গ আলোচনায় মগ্ন হয়, তখন তুমি দুরে সরে পড়, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে আলোচনায় প্রবৃত্ত হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে, তাহলে স্মরণ হওয়ার পরে তুমি অত্যাচারী সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। (আনআমঃ ৬৮)
বনী ইসরাইলের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল, তারা দাউদ ও মারয়্যাম তনয় কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল। কেননা, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী। তারা যেসব খারাপ কাজ করত, তা থেকে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত, নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট। (মায়িদাহঃ ৭৮-৭৯)
আল্লাহর রাসুল (সঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি (তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা। যদি (তাতেও) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ইমাম।” (মুসলিম)
“আমার পূর্বে যে উম্মতের মাঝেই আল্লাহ নবী প্রেরণ করেছেন সেই নবীরই তার উম্মতের মধ্য হতে খাস ভক্ত ও সহচর ছিল, যারা তার তরীকার অনুগামী ও প্রত্যেক কর্মের অনুসারী ছিল। অতঃপর তাদের পর এমন অসৎ উত্তরসূরিদের আবির্ভাব হয়, যারা তা বলে নিজে করে না এবং তা করে যা করতে তারা আদিষ্ট নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হস্ত দ্বারা জিহাদ (সংগ্রাম) করে, সে মুমিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিহবা দ্বারা জিহাদ করে, সে মুমিন। আর এর পশ্চাতে (অর্থাৎ ঘৃণা না করলে কারো হৃদয়) সরিষা দানা পরিমাণও ঈমান থাকতে পারে না।” (মুসলিম ৫০ নং)
“লোকেরা যখন কোন খারাপ (শরিয়ত পরিপন্থী) কাজ দেখেও তার পরিবর্তন সাধনে যত্নবান হয় না, তখন অনতিবিলম্বে আল্লাহ তাদের জন্য তাঁর কোন শাস্তিকে ব্যাপক করে দেন।” ( আহমাদ, আবু দাউদ ৪৩৩৮, তিরমিজি ৩০৫৭, ইবনে হিব্বান, সহিহ ইবনে মাজাহ ৩২৩৬ নং)
যে ব্যক্তি রোজাদার ব্যক্তিকে পানাহার করতে দেখবে, তাঁর জন্য ওয়াজেব তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। যেহেতু সে ভুলে পানাহার করেছে। আর রোজা অবস্থায় পানাহার হারাম। অনুরূপ রোজাদারের উচিৎ, স্মরণ হওয়া মাত্র সাথে সাথে মুখ থেকে খাবার ফেলে দেওয়া। (ইবনে উসাইমিন)
অবশ্যই না। তবে বড়দের সঙ্গে আদব বজায় রেখে হিকমতের সাথে অসৎ কর্মে বাধা দিতে হবে। আর কেউ রাগলে তাঁর রাগের উপর ধৈর্য ধারণ করতে হবে। লুকমান হাকিম তাঁর ছেলেকে বলেছিলেন, ‘হে বৎস ! যথারীতি নামায পড়, সৎ কাজের নির্দেশ দাও, অসৎ কাজে বাধা দান কর এবং আপদে বিপদে ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এটিই দৃঢ় সংকল্প কাজ। (লুকমানঃ ১৭)
আপনার জন্য ওয়াজেব এই যে, আপনি উত্তম কথা ও ভঙ্গিমার মাধ্যমে নম্রতা ও ভদ্রতার সাথে গোনাহর কাজে আপত্তি জানাবেন। পারলে দলীল উল্লেখ করে উপদেশ দেবেন। তাঁরা গ্রহণ করুক চাই না করুক, আপনি তাঁদের গোনাহে শরিক হবেন না। তাঁদের গীবত ও গান বাজনার মজলিসে বসবেন না। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“তুমি যখন দেখ, তাঁরা আমার নিদর্শন সম্বন্ধে ব্যঙ্গ আলোচনায় মগ্ন হয়, তখন তুমি দুরে সরে পর, যে পর্যন্ত না তাঁরা অন্য প্রসঙ্গে আলোচনায় প্রবৃত্ত হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে, তাহলে স্মরণ হওয়ার পরে তুমি অত্যাচারী সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। (আনআমঃ ৬৮)
যখন আপনি আপনার সাধ্যমতো পাপ কাজে মুখ দ্বারা আপত্তি জানাবেন এবং তাঁদের ঐ কাজ থেকে দুরে থাকবেন , তখন আপনি ক্ষতির হাত থেকে বেচে যাবেন। আপনার দায়িত্ব পালন হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের আত্মরক্ষা করাই কর্তব্য। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথ ভ্রষ্ট হয়েছে, সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহরই দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা যা করতে, তিনি তোমাদের সে সম্পর্কে অবহিত করবেন। (মাহিদাহঃ ১০৫)
আপনি হক পথে অবিচল থাকুন, আল্লাহর পথে মানুষকে আহবান করতে থাকুন, ইন শা আল্লাহ আপনার জন্য পথ সহজ হয়ে যাবে। ধৈর্যের সাথে সওয়াবের আশা রাখলে আপনি মহা কল্যাণের আশা করতে পারেন। যেহেতু শুভ পরিণাম মুত্তাকিনদের জন্য। মহান আল্লাহ বলেন,
“সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয় শুভ পরিণাম সংযম শীলদের জন্যই।” (হুদঃ ৪৯)
“যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথ সমূহে পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎ কর্ম পরায়ণদের সঙ্গেই থাকেন। (আনকাবুতঃ ৬৯)
মহান আল্লাহ বলেন,
“কি আশ্চর্য! তোমরা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দাও, অথচ তোমরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যায়ন কর, তবে কি তোমরা বুঝ না?” (বাকারাহঃ ৪৪)
রাসুল (সঃ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তাঁর নাড়িভুঁড়ি বের হওয়ে যাবে এবং সে তাঁর চারপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তাঁর চাকির চারপাশে ঘুরতে থাকবে। তখন জাহান্নামীরা তাঁর কাছে একত্রিত হওয়ে তাকে বলবে, ‘ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধাদান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম, কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম, অথচ আমি নিজেই তা করতাম!” (বুখারি ও মুসলিম )
কিন্তু আপনি যদি কোন বাধার কারণে কোন ভাল কাজ করতে এবং খারাপ কাজ ছাড়তে না পারেন, তাহলে তাঁর আদেশ করতে কোন দোষ নেই। আপনার উপর দুটি কাজ ওয়াজিব। একঃ মন্দ কাজ বর্জন করা। দুইঃ কাউকে মন্দ কাজ করতে দেখলে তাতে বাধা দেওয়া। এখন যদি প্রথম ওয়াজিবটি কোন বাধার কারণে পালন করতে না পারেন এবং দ্বিতীয় ওয়াজিবটি পালন করতে কোন বাধা না থাকে, তাহলে তা পালন করা জরুরী।
জাহান্নামে নাড়িভুঁড়ি বের হওয়া এবং তাঁর চারপাশে ঘুরতে থাকার আজাব ঐ ব্যক্তির হবে, যার ভাল কাজ করতে ও খারাপ কাজ ছাড়তে কোন বাধা নেই। কেবল সে খেয়াল খুশীর বশীভূত হয়ে নিজেকে ভুলে অপরকে আদেশ করে।
কিন্তু এমনও হতে পারে যে, যে ব্যক্তি নিজে ভাল কাজ করে না এবং অপরকে তা করতে আদেশও দেয় না আর মন্দ কাজ বর্জন করে না এবং তা বর্জন করতেও অপরকে আদেশ দেয় না, তাঁর আজাব হয়তো আরও কঠিন। (ইবনে উসাইমিন)
সে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা সেই কাজকে ঘৃণা করবে এবং সেই সাথে তাঁর কাজীর সংস্রব বর্জন করবে। যেহেতু আপত্তি না জানিয়ে তাঁর সাথে স্বাভাবিক ভাবে উঠা বসা করা বনী ইসরাইল দের কর্মের শামিল হয়ে যাবে। যাদের মহান আল্লাহ বলেছেন,
“ বনী ইসরাইলের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল, তারা দাউদ ও মারয়্যাম তনয় কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল। কেননা, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী। তারা যেসব খারাপ কাজ করত, তা থেকে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত, নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।” (মায়িদাহঃ ৭৮-৭৯)
যার ক্ষমতা আছে তাঁর। যেমন শাসন কর্তৃপক্ষ, বাড়ির মুরব্বী, স্বামী, বাপ প্রভৃতি।
সুতরাং যার ক্ষমতা নেই অথবা ক্ষমতা আছে, কিন্তু তা প্রয়োগ করলে ফিতনা বা মারামারি হওয়ার আশঙ্কা আছে অথবা অপেক্ষাকৃত বড় নোংরা সংঘটিত হওয়ার ভয় আছে, তাহলে তা প্রয়োগ করা যাবে না। (ইবনে বাজ)
যে কাজে বিতর্ক ও উলামাদের মতভেদ আছে, সে কাজে বাধা দেওয়া বা আপত্তি করার ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে, তা ইজতিহাদি কি না? অর্থাৎ তাতে মতভেদ স্বাভাবিক কি না? উভয় পক্ষের দলীল সমপর্যায়ের কি না? তা হলে আপত্তি করা যাবে না। যেমনঃ যদি কেউ ডবল শব্দে ইকামত দেয়, রুকু থেকে দাঁড়িয়ে বুকে হাত না বাঁধে, সিজদায় হাঁটু আগে বাড়ায়, রুকু পেলে রাকআত গণ্য না করে, তাহলে তাতে আপত্তি করা ঠিক নয়। অবশ্য এই শ্রেণীর আপত্তির ক্ষেত্রে ‘এটা করা উত্তম’ বলা যায়। চাপ দেয়া যায় না। পক্ষান্তরে যেখানে সহিহ ও স্পষ্ট বিরোধিতা হয়, সেখানে আপত্তি করতে হলে দলীলের সাথে করা কর্তব্য। যেমনঃ ইমামের পশ্চাতে সূরা ফাতিহা না পড়া, সশব্দে ‘আমিন’ না বলা, রুকুর আগে পরে রফয়ে য়্যাদাইন ত্যাগ করা ইত্যাদি।
কিন্তু মতভেদ আকিদাগত বিষয়ে হলে আপত্তি জরুরি। যেহেতু তাতে বিদআত ছাড়া আহলে সুন্নাহ ভিন্নমত পোষণ করে না। যেমনঃ মহান আল্লাহর আরসে থাকার কথা অস্বীকার করা, কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি মনে করা, বান্দার কর্ম আল্লাহর সৃষ্টি নয় মনে করা, কবিরা গোনাহ করলে মুসলিম কাফের হয়ে যায় ধারনা করা, রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ইত্যাদি বিষয়। (ইবনে জিবরীন)