৮৩ : ১
وَیۡلٌ لِّلۡمُطَفِّفِیۡنَ ۙ﴿۱﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়(১),
(১) تَطْفِيْفٌ এর অর্থ মাপে কম করা। যে এরূপ করে তাকে বলা হয় مُطَفَّف [কুরতুবী] কুরআনের এই আয়াত ও বিভিন্ন হাদীসে মাপ ও ওজনে কম করাকে হারাম করা হয়েছে এবং সঠিকভাবে ওজন ও পরিমাপ করার জন্য কড়া তাগিদ করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছেঃ “ইনসাফ সহকারে পুরো ওজন ও পরিমাপ করো। আমি কাউকে তার সামর্থের চাইতে বেশীর জন্য দায়িত্বশীল করি না।” [সূরা আল-আনআমঃ ১৫২] আরও বলা হয়েছেঃ “মাপার সময় পুরো মাপবে এবং সঠিক পাল্লা দিয়ে ওজন করবে।” [সূরা আল-ইসরা: ৩৫] অন্যত্র তাকীদ করা হয়েছেঃ “ওজনে বাড়াবাড়ি করো না, ঠিক ঠিকভাবে ইনসাফের সাথে ওজন করো এবং পাল্লায় কম করে দিয়ো না। [সূরা আর-রহমান: ৮–৯]। শু'আইব আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের ওপর এ অপরাধের কারণে আযাব নাযিল হয় যে, তাদের মধ্যে ওজনে ও মাপে কম দেওয়ার রোগ সাধারণভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং শু'আইব আলাইহিস সালাম এর বারবার নসীহত করা সত্বেও এ সম্প্রদায়টি এ অপরাধমূলক কাজটি থেকে বিরত থাকেনি।
তবে আয়াতে উল্লেখিত تَطْفِيْفٌ শুধু মাপ ও ওজনের মধ্যেই সীমিত থাকবে না; বরং মাপ ও ওজনের মাধ্যমে হোক, গণনার মাধ্যমে হোক অথবা অন্য কোন পন্থায় প্রাপককে তার প্রাপ্য কম দিলে তা تَطْفِيْفٌ এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে হারাম হবে। সুতরাং প্রত্যেক প্রাপকের প্রাপ্য পূর্ণমাত্রায় দেয়াই যে আয়াতের উদ্দেশ্য এ কথা বলাই বাহুল্য। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জনৈক ব্যক্তিকে আসরের সালাতে না দেখে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। সে একটি ওজর পেশ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, طفَّفت অর্থাৎ “তুমি আল্লাহর প্রাপ্য আদায়ে কমতি করেছ।” এই উক্তি উদ্ধৃত করে ইমাম মালেক রাহেমাহুল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় দেয়া ও কম করা আছে। [মুয়াত্তা মালেক: ১/১২, নং ২২]। তাছাড়া ঝগড়া-বিবাদের সময় নিজের দলীল-প্রমাণাদি পেশ করার পর প্রতিপক্ষের দলীল-প্রমাণাদি পেশ করার সুযোগ দেয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া১। ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়,
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৩ : ২
الَّذِیۡنَ اِذَا اكۡتَالُوۡا عَلَی النَّاسِ یَسۡتَوۡفُوۡنَ ۫﴿ۖ۲﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া২। যারা লোকের নিকট হতে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৩ : ৩
وَ اِذَا كَالُوۡهُمۡ اَوۡ وَّزَنُوۡهُمۡ یُخۡسِرُوۡنَ ﴿ؕ۳﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় তথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৩। এবং যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। [1]
[1] নেওয়া-দেওয়ার জন্য পৃথক পৃথক মাপার পাত্র রাখা এবং দাঁড়ি মেরে ওজনে কম করা হল বড় জঘন্য একটি চারিত্রিক ব্যাধি। যার পরিণাম দ্বীনে এবং আখেরাতে বরবাদী ছাড়া কিছু নয়। একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, যে জাতিই মাপ ও ওজনে কম দেবে, সে জাতিই দুর্ভিক্ষ, কঠিন খাদ্য-সংকট এবং শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হবে। (ইবনে মাজাহ ৫০১৯নং, সিলসিলাহ সহীহাহ ১০৬নং)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৩ : ৪
اَلَا یَظُنُّ اُولٰٓئِكَ اَنَّهُمۡ مَّبۡعُوۡثُوۡنَ ۙ﴿۴﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. তারা কি বিশ্বাস করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৪। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৩ : ৬
یَّوۡمَ یَقُوۡمُ النَّاسُ لِرَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ؕ﴿۶﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ সৃষ্টিকুলের রবের সামনে!(১)
(১) ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যেদিন সমস্ত মানুষ জগতসমূহের রবের সামনে দাঁড়াবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের কানের মধ্যভাগ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। [বুখারী: ৬৫৩১, মুসলিম: ২৮৬২] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টির এত নিকটে আনা হবে যে, তাদের মধ্যে দুরত্ব হবে এক ‘মাইল’৷ বৰ্ণনাকারী বলেনঃ আমি জানি না এখানে মাইল বলে পরিচিত এক মাইল না সুরমাদানি (যা আরবিতে মাইল বলা হয় তা) বুঝানো হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মানুষ তাদের স্বীয় আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে নিমজ্জিত থাকবে। কারও ঘাম হবে গোড়ালি পর্যন্ত, কারও হবে হাঁটু পর্যন্ত। আবার কারও ঘাম হবে কোমর পর্যন্ত; কারও ঘাম মুখের লাগামের মত হবে। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মুখের দিকে ইশারা করেন। [মুসলিম: ২৮৬৪]
তাফসীরে জাকারিয়া৬। যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ বিশ্ব-জাহানের প্রতিপালকের সম্মুখে।[1]
[1] যারা দাঁড়ি মারে তারা কি ভয় করে না যে, একদিন ভয়ঙ্কর দিন আপতিত হবে। যেদিন সমস্ত মানুষ সারা জাহানের প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হবে; যিনি সমস্ত গোপন কথা সম্পর্কে অবগত আছেন? অর্থ এই দাঁড়াল যে, এ কর্ম সেই লোকেরাই করে থাকে, যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় ও কিয়ামতের শঙ্কা নেই। একাধিক হাদীসে এসেছে যে, যখন মানুষ প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হবে, তখন তাদের ঘাম অর্ধেক কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। (সহীহ বুখারী মুত্বাফফিফীনের তাফসীর পরিচ্ছেদ) এক অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, কিয়ামতের দিন সূর্য সৃষ্টির এত নিকটবর্তী হবে যে, মাত্র এক মীল দূরত্বে থাকবে। হাদীসের বর্ণনাকারী সুলাইম বিন আমের (রাঃ) বলেন, ‘আমি জানি না যে, নবী (সাঃ) ‘মীল’ বলে রাস্তার পরিমাপ বুঝিয়েছেন, নাকি সুর্মাকাঠি, যার দ্বারা চোখে সুরমা লাগানো হয় তা বুঝিয়েছেন।’ মোট কথা, মানুষ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামে ডুবে থাকবে। এই ঘাম কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত পৌঁছবে। আবার কারো জন্য তা লাগাম হবে; অর্থাৎ, তার মুখমন্ডল পর্যন্ত ঘাম পৌঁছে যাবে। (সহীহ মুসলিম কিয়ামত ও জান্নাতের বিবরণ অধ্যায় কিয়ামতের বিবরণ পরিচ্ছেদ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৩ : ৭
كَلَّاۤ اِنَّ كِتٰبَ الۡفُجَّارِ لَفِیۡ سِجِّیۡنٍ ؕ﴿۷﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
*সপ্তযমীনের নীচে অবস্থিত একটি স্থান। পাপীদের আমলনামা সেখানে রাখা হয়।
৭. কখনো না, পাপাচারীদের আমলনামা তো সিজ্জীনে(১) আছে।
(১) سِجِّين শব্দটি سجن থেকে গৃহীত। سجن এর অর্থ সংকীর্ণ জায়গায় বন্দী করা। [ইবন কাসীর] আর سِجِّين এর অর্থ চিরস্থায়ী কয়েদ। [মুয়াস্সার] এটি একটি বিশেষ স্থানের নাম। যেখানে কাফেরদের রূহ অবস্থান করে। অথবা এখানেই তাদের আমলনামা থাকে। [জালালাইন]
তাফসীরে জাকারিয়া৭। না, কখনই না, পাপাচারীদের আমলনামা নিশ্চয়ই সিজ্জীনে থাকবে। [1]
[1] سجين (সিজ্জীন): কেউ কেউ বলেন, এর উৎপত্তি سجن শব্দ থেকে; যার মানে জেলখানা। উদ্দেশ্য হল, জেলখানার মত একটি অতি সংকীর্ণ জায়গা। আর কেউ কেউ বলেন, এটি ভূগর্ভের সব থেকে নিচের অংশে একটি জায়গার নাম; যেখানে কাফের, অত্যাচারী এবং মুশরিকদের আত্মা এবং তাদের আমল-নামা জমা ও সংরক্ষিত থাকে। এই জন্য তাকে ‘লিপিবদ্ধ পুস্তক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৩ : ৮
وَ مَاۤ اَدۡرٰىكَ مَا سِجِّیۡنٌ ؕ﴿۸﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. আর কিসে আপনাকে জানাবে সিজ্জীন কী?
-
তাফসীরে জাকারিয়া৮। কিসে তোমাকে জানাল, সিজ্জীন কি?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৩ : ৯
كِتٰبٌ مَّرۡقُوۡمٌ ؕ﴿۹﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. চিহ্নিত আমলনামা।(১)
(১) مَرْقُومٌ শব্দের কয়েকটি অর্থ আছে, লিখিত, চিহ্নিত এবং মোহরাঙ্কিত। [কুরতুবী] অর্থাৎ কিতাবটি লিখা শেষ হওয়ার পর তাতে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। ফলে তাতে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটবে না। আর কিতাব বলতে, আমলনামা বোঝানো হয়েছে। ইবনে কাসীর বলেন, এটা সিজীনের তাফসীর নয়; বরং পূর্ববর্তী (كِتَابَ الْفُجَّارِ) এর বর্ণনা। অৰ্থ এই যে, কাফের ও পাপাচারীদের আমলনামা মোহর লাগিয়ে সংরক্ষিত করা হবে। ফলে এতে হ্রাস-বৃদ্ধি ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকবে না। এই সংরক্ষণের স্থান হবে সিজ্জীন৷ এর প্রমাণ আমরা বারা ইবনে আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বৰ্ণিত হাদীসে দেখতে পাই। সেখানে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ্ কাফেরদের রূহ হরণ হওয়ার পর বলবেন, اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي سِجِّينٍ فِي الأَرْضِ السُّفْلَى “তার কিতাবকে সর্বনিম্ন যমীনে সিজ্জীনে লিখে রাখ”। [মুসনাদে আহমাদ ৪/২৮৭]
তাফসীরে জাকারিয়া৯। ওটা হচ্ছে লিপিবদ্ধ পুস্তক।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান৮৩ : ১০
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُكَذِّبِیۡنَ ﴿ۙ۱۰﴾
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. সেদিন দুর্ভোগ হবে মিথ্যারোপকারীদের,
-
তাফসীরে জাকারিয়া১০। সেদিন দুর্ভোগ হবে মিথ্যাচারীদের।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান