এক প্রশ্নকারী জিজ্ঞাসা করল এমন আযাব সম্পর্কে, যা আপতিত হবে-* আল-বায়ান
এক ব্যক্তি চাইল সে ‘আযাব যা অবশ্যই সংঘটিত হবে। তাইসিরুল
এক ব্যক্তি চাইল সংঘটিত হোক শাস্তি যা অবধারিত – মুজিবুর রহমান
A supplicant asked for a punishment bound to happen Sahih International
*আয়াতটির আরেক অর্থ হল, ‘একজন প্রার্থনাকারী এমন আযাবের দো‘আ করল যা আপতিত হবে’।
১. এক ব্যক্তি চাইল, সংঘটিত হোক শাস্তি যা অবধারিত(১)—
(১) سأل শব্দটি কখনও তথ্যানুসন্ধান ও জিজ্ঞেস করার অর্থে আসে। তখন আরবী ভাষায় এর সাথে عن অব্যয় ব্যবহৃত হয়। সে অনুসারে আয়াতের অর্থ হলো একজন জিজ্ঞেসকারী জানতে চেয়েছে যে, তাদেরকে যে আযাব সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে তা কার ওপর আপতিত হবে? আল্লাহ তা'আলা এ প্রশ্নের জওয়াব দিয়েছেন এই বলে যে, তা কাফেরদের ওপর পতিত হবেই। আবার কখনও এ শব্দটি আবেদন ও কোন কিছু চাওয়া বা দাবী করার অর্থে আসে। আয়াতে এই অর্থে আসার কারণে এর সাথে باء অব্যয় ব্যবহৃত হয়েছে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর] অধিকাংশ মুফাসসির এ অর্থই গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন বর্ণনায় ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এসেছে, নদর ইবনে হারেস এই আযাব চেয়েছিল। [নাসায়ী; তাফসীর ২/৪৬৩, নং ৬৪০, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৫০২]
সে কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি মিথ্যারোপ করতে গিয়ে ধৃষ্টতাসহকারে আল্লাহ তা'আলার কাছে আযাব চেয়েছিল। এটি ছাড়াও কুরআন মজীদের আরো অনেক স্থানে মক্কার কাফেরদের এ চ্যালেঞ্জেরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আপনি আমাদের যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছেন তা নিয়ে আসছেন না কেন? যেমন, সূরা ইউনুস: ৪৬–৪৮; সূরা আল আম্বিয়া: ৩৬–৪১; সূরা আন-নামল: ৬৭–৭২; সূরা সাবা: ২৬–৩০; ইয়াসীন: ৪৫–৫২ এবং সূরা আল-মূলক: ২৪–২৭৷
তাফসীরে জাকারিয়া(১) এক ব্যক্তি[1] চাইল, সংঘটিত হোক অবধারিত শাস্তি।
[1] বলা হয় যে, এই ব্যক্তি ছিল নাযর বিন হারেস অথবা আবূ জাহল যে বলেছিল, {اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ هَذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِنْدِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِنَ السَّمَاءِ} অর্থাৎ, হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ থেকে (আগত) সত্য দ্বীন হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের উপর আকাশ থেকে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদের উপর বেদনাদায়ক শাস্তি অবতীর্ণ কর।’’ (সূরা আনফাল ৩২ আয়াত) সুতরাং এই লোকটি বদরের যুদ্ধে মারা পড়ল। কেউ কেউ বলেন, এ থেকে রসূল (সাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। যিনি স্বীয় গোত্রের জন্য বদ্দুআ করেছিলেন। যার ফলে মক্কাবাসীর উপর দুর্ভিক্ষ এসেছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানকাফিরদের উপর, যার কোন প্রতিরোধকারী নেই। আল-বায়ান
কাফিরদের জন্য তা প্রতিরোধ করার কেউ নেই তাইসিরুল
কাফিরদের জন্য, ইহা প্রতিরোধ করার কেহ নেই। মুজিবুর রহমান
To the disbelievers; of it there is no preventer. Sahih International
২. কাফিরদের জন্য, এটাকে প্রতিরোধ করার কেউ নেই।(১)
(১) এখানে কাফেরদের উপর আযাব আসার কিছু স্বরূপ বৰ্ণিত হয়েছে যে, এই আযাব কাফেরদের জন্যে দুনিয়াতে কিংবা আখেরাতে কিংবা উভয় জাহানে অবধারিত। একে প্রতিহত করার সাধ্য কারও নেই। এ আযাব আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে আসবে যিনি অবস্থান, সম্মান ও ক্ষমতা সর্বদিক থেকেই সবার উপরে। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) অবিশ্বাসীদের জন্য, এটা প্রতিরোধ করবার কেউ নেই।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঊর্ধ্বারোহণের সোপানসমূহের অধিকারী আল্লাহর পক্ষ থেকে, আল-বায়ান
(যে শাস্তি আসবে) আল্লাহর নিকট হতে যিনি আসমানে উঠার সিঁড়িগুলোর মালিক, তাইসিরুল
ইহা আসবে আল্লাহর নিকট হতে যিনি সমুচ্চ মর্যাদার অধিকারী। মুজিবুর রহমান
[It is] from Allah, owner of the ways of ascent. Sahih International
৩. এটা আসবে আল্লাহর কাছ থেকে, যিনি উর্ধ্বারোহনের সোপানসমূহের অধিকারী।(১)
(১) আয়াতে আল্লাহ তা'আলার বিশেষণ (ذِي الْمَعَارِجِ) অর্থ যিনি সুউচ্চ স্থানে আরশের উপর আছেন; উচ্চতার অধিকারী, আবার ক্ষমতা, সম্মতি প্রতিপত্তির দিক দিয়েও তিনি সবার উপরে। তার কাছে কোন কিছু পৌঁছার জন্য উপরের দিকেই যায়। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) এটা আসবে আল্লাহর নিকট হতে যিনি সোপান-শ্রেণীর অধিকারী। [1]
[1] (সোপান বা সিড়িসমূহ বলতে সাত আসমানকে বুঝানো হয়েছে।) অথবা আয়াতের অর্থঃ বহু মর্যাদা ও মহত্ত্বের অধিকারী, যাঁর দিকে ফিরিশতাগণ আরোহণ করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানফেরেশতাগণ ও রূহ এমন এক দিনে আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয়, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। আল-বায়ান
ফেরেশতা এবং রূহ (অর্থাৎ জিবরীল) আল্লাহর দিকে আরোহণ করে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। তাইসিরুল
মালাইকা/ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যা পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সমান। মুজিবুর রহমান
The angels and the Spirit will ascend to Him during a Day the extent of which is fifty thousand years. Sahih International
৪. ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহ্র দিকে উর্ধ্বগামী হয়(১) এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।(২)
(১) অর্থাৎ উপরে নীচে স্তরে স্তরে সাজানো এই ঊর্ধ্বারোহনের সোপানসমূহের মধ্যে ফেরেশতাগণ ও রুহুল আমীন অর্থাৎ জিবরীল আরোহন করেন। [মুয়াস্সার]
(২) আয়াতের অর্থ নির্ধারণে কয়েকটি মত রয়েছে। এক. মুজাহিদ বলেন, এখানে পঞ্চাশ হাজার বছর বলে আরশ থেকে সর্বনিম্ন যমীনের দূরত্ব বোঝানো হয়েছে, কিয়ামতের দিনের পরিমাণ বোঝানো হয়নি। দুই. ইকরিমা বলেন, এখানে দুনিয়ার জীবনের পরিমাণ বোঝানো উদ্দেশ্য। তিন. মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব বলেন, এখানে দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যবর্তী সময় বোঝানো উদ্দেশ্য। চার. অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, এখানে কিয়ামত দিবসের পরিমাণই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ উল্লেখিত আযাব সেই দিন সংঘটিত হবে, যে দিনের পরিমান পঞ্চাশ হাজার বছর। আর এ মতটির পক্ষে বিভিন্ন হাদীসও প্রমাণবহ। বিভিন্ন হাদীসেও কিয়ামত দিবসের পরিমাণকে পঞ্চাশ হাজার বছর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, যাকাত না প্রদানকারীকে শাস্তির মেয়াদ বর্ণনার হাদীসে বলা হয়েছে যে, “তার এ শাস্তি চলতে থাকবে এমন এক দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর, তারপর তার ভাগ্য নির্ধারণ হবে হয়। জান্নাতের দিকে না হয় জাহান্নামের দিকে”। [মুসলিম: ৯৮৭, আবু দাউদ: ১৬৫৮, নাসায়ী: ২৪৪২, মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৮৩] [কুরতুবী]
তাছাড়া অন্য হাদীসে (يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ) “যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ সৃষ্টিকুলের রবের সামনে!” [সূরা আল-মুতাফফিফীন: ৬] এ আয়াতের তাফসীরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তা হবে এমন একদিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর, তারা তাদের কান পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে”। [মুসনাদে আহমাদ: ২/১১২] সুতরাং এখানে কিয়ামত দিবসের পরিমাণই বর্ণনা করা হয়েছে। তবে তা লোকভেদে ভিন্ন ভিন্ন বোধ হবে। কাফেরদের নিকট পঞ্চাশ হাজার বছর বলে মনে হবে। কিন্তু ঈমানদারের জন্য তা এত দীর্ঘ হবে না। হাদীসে এসেছে, সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই দিনের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ “আমার প্রান যে সত্তার হাতে, তার শপথ করে বলছি। এই দিনটি মুমিনের জন্য একটি ফরয সালাত আদায়ের সময়ের চেয়েও কম হবে।” [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৭৫] অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, “এই দিনটি মুমিনদের জন্যে যোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময়ের মত হবে।” [মুস্তাদরাকে হাকিম: ১/১৫৮, নং ২৮৩]
কেয়ামত দিবসের দৈর্ঘ্য এক হাজার বছর, না পঞ্চাশ হাজার বছর? আলোচ্য আয়াতে কেয়ামত দিবসের পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর অথচ অন্য আয়াতে এক হাজার বছর বলা হয়েছে। আয়াতটি এই (يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ) “আল্লাহ্ তা’আলা কাজ-কর্ম করে আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত অতঃপর তাঁর দিকে উর্ধ্বগমন করেন এমন এক দিনে যা তোমাদের হিসাব অনুযায়ী এক হাজার বছরের সমান।” [সূরা আস-সাজদাহ: ৫]
বাহ্যত উভয় আয়াতের মধ্যে বৈপরিত্য আছে। উপরোক্ত হাদীস দৃষ্ট এর জওয়াব হয়ে গেছে যে, সেই দিনের দৈর্ঘ্য বিভিন্ন দলের দিক দিয়ে বিভিন্ন রূপ হবে। কাফেরদের জন্যে পঞ্চাশ হাজার বছর এবং মুমিনদের জন্যে এক সালাতের ওয়াক্তের সমান হবে। তাদের মাঝখানে কাফেরদের বিভিন্ন দল থাকবে। অস্থিরতা ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে সময় দীর্ঘ ও খাট হওয়া প্ৰসিদ্ধ ও সুবিধিত। অস্থিরতা ও কষ্টের এক ঘন্টা মাঝে মাঝে মানুষের কাছে এক দিন বরং এক সপ্তাহের চেয়েও বেশী মনে হয় এবং সুখ ও আরামের দীর্ঘতর সময়ও সংক্ষিপ্ত অনুভূত হয়। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]
তাছাড়া যে আয়াতে এক হাজার বছরের কথা আছে, সেই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কোন কোন মুফাসসির বলেন, সেই আয়াতে পার্থিব একদিন বোঝানো হয়েছে। এই দিনে জিবরীল ও ফেরেশতাগণ আকাশ থেকে পৃথিবীতে এবং পৃথিবী থেকে আকাশে যাতায়াত করে এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেন যা মানুষ অতিক্রম করলে এক হাজার বছর লাগত। ফেরেশতাগণ এই দূরত্ব খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ে অতিক্রম করেন। সে হিসেবে বলা যায় যে, সূরা আল-মা'আরিজে বর্ণিত পঞ্চাশ হাজার বছর সময় কিয়ামতের দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট, যা পার্থিব দিন অপেক্ষা অনেক বড়। এর দৈর্ঘ্য ও সংক্ষিপ্ততা বিভিন্ন লোকের জন্যে তাদের অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্নরূপ অনুভূত হবে। আর সূরা আস-সাজদাহ বর্ণিত এক হাজার বছর সময় আসমান ও যমীনের মধ্যকার চলাচলের সময় বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং আয়াতদ্বয়ে কোন বৈপরিত্ব নেই। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর, সূরা আস-সাজদা, আয়াত নং ৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) ফিরিশতা এবং রূহ তাঁর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়[1] এক দিনে যা (পার্থিব) পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। [2]
[1] ‘রূহ’ বলতে জিবরীল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। তাঁর মর্যাদা অতীব মহান বিধায় পৃথকভাবে বিশেষ করে তাঁর উল্লেখ করা হয়েছে। নচেৎ তিনিও ফিরিশতাদেরই অন্তর্ভুক্ত। অথবা ‘রূহ’ বলতে মানুষের আত্মাসমূহকে বুঝানো হয়েছে, যা মৃত্যুর পর আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, যেমন হাদীসের কোন কোন বর্ণনায় এসেছে।
[2] এই দিনের সংখ্যা নির্দিষ্টীকরণের ব্যাপারে বহু মতভেদ রয়েছে; যেমন সূরা সিজদার শুরুতে আলোচনা করেছি। এখানে ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) চারটি উক্তি উল্লেখ করেছেন। প্রথম উক্তি হল, এ থেকে মহা আরশ থেকে সপ্ত যমীন (সর্বনিম্ন পাতাল) পর্যন্ত যে দূরত্ব ও ব্যবধান তার পরিমাপ বুঝানো হয়েছে। আর তা হল ৫০ হাজার বছরের পথ। দ্বিতীয় উক্তি হল, পৃথিবীর সর্বমোট বয়স। অর্থাৎ, পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত মোট সময় হল ৫০ হাজার বছর। এর মধ্য হতে কতকাল অতিবাহিত হয়েছে এবং কতকাল অবশিষ্ট আছে, তা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন। তৃতীয় উক্তি হল, এটা হল দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যেকার পার্থক্যসূচক একটি দিনের পরিমাণ। চতুর্থ উক্তি হল, এটা হল কিয়ামতের দিনের পরিমাণ। অর্থাৎ, কাফেরদের উপর হিসাবের এই দিনটি ৫০ হাজার বছরের মত ভারী হবে। কিন্তু মু’মিনদের জন্য দুনিয়ায় এক ওয়াক্ত ফরয নামায আদায় করার থেকেও সংক্ষিপ্ত মনে হবে। (আহমদ ৩/৭৫, হাদীসটি সহীহ নয়। সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, মুমিনদের জন্য কিয়ামতের দিন যোহর থেকে আসর পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ লম্বা হবে। দেখুনঃ সহীহুল জামে’ ৮১৯৩নং -সম্পাদক) ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) এই উক্তিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কেননা, হাদীসসমূহ থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন একটি হাদীসে এসেছে যে, যারা যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তাদেরকে যে শাস্তি দেওয়া হবে, তার বিস্তারিত আলোচনা করে নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করবেন এমন দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনানুযায়ী ৫০ হাজার বছরের হবে।’’ (মুসলিমঃ যাকাত অধ্যায়) এই ব্যাখ্যানুযায়ী في يومٍ ‘ফী ইয়াওমিন’ এর সম্পর্ক হবে عَذَاب এর সাথে। অর্থাৎ, সংঘটনশীল সেই আযাব কিয়ামতের দিন হবে, যা কাফেরদের উপর ৫০ হাজার বছরের মত ভারী হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতএব তুমি উত্তমরূপে ধৈর্যধারণ কর। আল-বায়ান
সুতরাং (হে নবী!) ধৈর্য ধর- সুন্দর সৌজন্যমূলক ধৈর্য। তাইসিরুল
সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর, পরম ধৈর্য। মুজিবুর রহমান
So be patient with gracious patience. Sahih International
৫. কাজেই আপনি ধৈর্য ধারণ করুন পরম ধৈৰ্য।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) সুতরাং তুমি ধৈর্যধারণ কর পরম ধৈর্য।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা তো এটিকে সুদূরপরাহত মনে করে। আল-বায়ান
তারা ঐ দিনটিকে সুদূর মনে করছে, তাইসিরুল
তারা ঐ দিনকে মনে করে সুদূর। মুজিবুর রহমান
Indeed, they see it [as] distant, Sahih International
৬. তারা ঐ দিনকে মনে করে সুদূর,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) নিশ্চয় তারা এ (শাস্তি)কে সুদূর মনে করছে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি দেখছি তা আসন্ন। আল-বায়ান
কিন্তু আমি তা নিকটে দেখতে পাচ্ছি। তাইসিরুল
কিন্তু আমি দেখছি ইহা আসন্ন। মুজিবুর রহমান
But We see it [as] near. Sahih International
৭. কিন্তু আমরা দেখছি তা আসন্ন।(১)
(১) কারও কারও মতে এখানে স্থান ও কালের দিক দিয়ে দূর ও নিকট বোঝানো হয়নি; সম্ভাব্যতার ও বাস্তবতার দূরবর্তীতা বোঝানো হয়েছে। আয়াতের অর্থ এই যে তারা কেয়ামতের বাস্তবতা বরং সম্ভাব্যতাকেও সুদূর পরাহত মনে করে আর আমি দেখছি যে, এটা নিশ্চিত। [দেখুন: কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) কিন্তু আমি এটাকে আসন্ন দেখছি।[1]
[1] ‘সুদূর’ অর্থ, অসম্ভব। আর ‘আসন্ন’ বা ‘নিকট’ অর্থ, সুনিশ্চিত। অর্থাৎ, কাফেররা কিয়ামতকে অসম্ভব মনে করে থাকে। আর মুসলিমদের বিশ্বাস হল যে, তা অবশ্যই ঘটবে। যেহেতু, كُلُّ مَا هُوَ آتٍ فَهُوَ قَرِيْبٌ অর্থাৎ, প্রতিটি জিনিস যা আসবে তা অতি নিকটেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসেদিন আসমান হয়ে যাবে গলিত ধাতুর ন্যায়। আল-বায়ান
সেদিন আকাশ হবে গলিত রূপার মত, তাইসিরুল
সেদিন আকাশ হবে গলিত ধাতুর মত। মুজিবুর রহমান
On the Day the sky will be like murky oil, Sahih International
৮. সেদিন আকাশ হবে গলিত ধাতুর মত,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) সেদিন আকাশ হবে গলিত ধাতুর মত।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানএবং পর্বতসমূহ হয়ে যাবে রঙিন পশমের ন্যায়। আল-বায়ান
আর পাহাড়গুলো হবে রঙ্গীণ পশমের মত, তাইসিরুল
এবং পর্বতসমূহ হবে রঙ্গীন পশমের মত। মুজিবুর রহমান
And the mountains will be like wool, Sahih International
৯. এবং পর্বতসমূহ হবে রঙ্গীন পশমের মত,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) এবং পর্বতসমূহ হবে রঙ্গীন পশমের মত। [1]
[1] অর্থাৎ, ধূনিত রঙিন তুলোর মত। যেমন, সূরা ক্বারিআহতে আছে। {كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْش}
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর অন্তরঙ্গ বন্ধু অন্তরঙ্গ বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করবে না। আল-বায়ান
বন্ধু বন্ধুর খবর নিবে না, তাইসিরুল
এবং সুহৃদ সুহৃদের খোঁজ খবর নিবেনা। মুজিবুর রহমান
And no friend will ask [anything of] a friend, Sahih International
১০. এবং সুহৃদ সুহৃদের খোঁজ নেবে না,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) আর সুহৃদ সুহৃদের খবর নেবে না।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান