স্ত্রীদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তার পালা তুমি পিছিয়ে দিতে পার, যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পার; যাকে তুমি সরিয়ে রেখেছ তাকে যদি কামনা কর তাতে তোমার কোন অপরাধ নেই; এটা নিকটতর যে, তাদের চক্ষু শীতল হবে, তারা কষ্ট পাবে না এবং তুমি তাদের যা দিয়েছ তাতে তারা সবাই সন্তুষ্ট হবে। আর তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, পরম সহনশীল। আল-বায়ান
তুমি তাদের যাকে ইচ্ছে সরিয়ে রাখতে পার, আর যাকে ইচ্ছে তোমার কাছে আশ্রয় দিতে পার। আর তুমি যাকে আলাদা ক’রে রেখেছ তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। এতে অধিক সম্ভাবনা আছে যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে, তারা দুঃখ পাবে না, আর তুমি তাদের সকলকে যা দাও তাতে তারা সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। তাইসিরুল
তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তোমার নিকট হতে দূরে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা তোমার নিকট স্থান দিতে পার এবং তুমি যাকে দূরে রেখেছ তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। এই বিধান এ জন্য যে, এতে তোমাদের তুষ্টি সহজতর হবে এবং তারা দুঃখ পাবেনা, আর তাদেরকে তুমি যা দিবে তাতে তাদের প্রত্যেকেই প্রীত থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। মুজিবুর রহমান
You, [O Muhammad], may put aside whom you will of them or take to yourself whom you will. And any that you desire of those [wives] from whom you had [temporarily] separated - there is no blame upon you [in returning her]. That is more suitable that they should be content and not grieve and that they should be satisfied with what you have given them - all of them. And Allah knows what is in your hearts. And ever is Allah Knowing and Forbearing. Sahih International
৫১. আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে আপনার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছে আপনার কাছে স্থান দিতে পারেন।(১) আর আপনি যাকে দূরে রেখেছেন তাকে কামনা করলে আপনার কোন অপরাধ নেই।(২) এ বিধান এ জন্যে যে, এটা তাদের চোখ জুড়ানোর অধিক নিকটবর্তী এবং তারা দুঃখ পাবে না। আর তাদেরকে আপনি যা দেবেন তাতে তাদের প্রত্যেকেই খুশী থাকবে।(৩) আর তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ্ তা জানেন এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
(১) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, যে সমস্ত নারীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজেদেরকে দান করত এবং বিয়ে করত, আমি তাদের প্রতি ঈর্ষাণ্বিত হতাম। আমি বলতাম, একজন মহিলা কি করে নিজেকে দান করতে পারে? কিন্তু যখন এ আয়াত নাযিল হল, তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, আমি দেখছি আপনার রব আপনার ইচ্ছা অনুসারেই তা করেছেন ৷ [বুখারী: ৫১১৩; মুসলিম: ১৪৬৪]
(২) মুজাহিদ ও কাতাদাহ বলেন, এর অর্থ আপনার স্ত্রীদের কাউকে যদি তালাক ব্যতীতই আপনি দূরে রাখতে চান, অথবা যাদেরকে দূরে রেখেছেন তাদের কাউকে কাছে রাখতে চান, তবে সেটা আপনি করতে পারেন। এতে কোন অপরাধ নেই। [তাবারী; আত-তাফসীরুস সহীহ]
(৩) অর্থাৎ কাতাদাহ বলেন, তারা যখন জানতে পারবে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলের জন্য বিশেষ ছাড়, তখন তাদের অন্তরের পেরেশানী ও দুঃখ কমে যাবে এবং তাদের অন্তর পবিত্র হয়ে যাবে। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫১) তুমি ওদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তোমার নিকট হতে দূরে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা কাছে স্থান দিতে পার[1] এবং তুমি যাকে দূরে রেখেছ, তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই।[2] এ বিধান এ কথার অধিক নিকটতর যে, ওদের চক্ষু শীতল হবে এবং ওরা দুঃখ পাবে না এবং তুমি যা দেবে তাতে ওদের সকলেই সন্তুষ্ট থাকবে।[3] তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন।[4] আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল ।
[1] এখানে নবী (সাঃ)-এর আরো একটি বিশেষত্বের কথা বর্ণনা হয়েছে, আর তা হল এই যে, স্ত্রীদের মাঝে পালা নির্ধারণ করাতে তাঁকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তিনি যার পালা চাইবেন বন্ধ রাখতে পারবেন, অর্থাৎ তাকে বিবাহ বন্ধনে রেখে তার সাথে রাত্রিযাপন না করে অন্য যে কোন স্ত্রীর সাথে চাইবেন রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
[2] অর্থাৎ, যে সকল স্ত্রীদের পালা বন্ধ রেখেছিলেন, যদি তিনি তাদের সাথে সঙ্গমের সম্পর্ক রাখতে চান, তবে পুনরায় এ সম্পর্ক কায়েম করতে পারেন -- তার অনুমতি আছে।
[3] অর্থাৎ, নবী (সাঃ) পালা বন্ধ করলে এবং একজনকে অপর জনের উপর প্রাধান্য দিলেও স্ত্রীরা সন্তুষ্ট থাকবেন; দুঃখিত হবেন না। তাঁরা তাঁর নিকট থেকে যা পাবেন তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবেন। কারণ তাঁরা জানেন যে, নবী (সাঃ) যা কিছু করছেন আল্লাহ তাআলার আদেশেই করছেন সুতরাং সকল স্ত্রীগণ আল্লাহর ফায়সালার উপর সর্বদা সন্তুষ্ট ও খুশি থাকবেন। কেউ কেউ বলেন যে, নবী (সাঃ) এই এখতিয়ার পাওয়ার পরেও তিনি তা ব্যবহার করেননি এবং সওদা (রাঃ) ছাড়া (যেহেতু তিনি আপন পালা নিজেই আয়েশাকে দান করে দিয়েছিলেন) তিনি সকল স্ত্রীদের পালা সমানভাবে নির্ধারিত করে রেখেছিলেন। যার ফলে তিনি মৃত্যু শয্যায় অন্যান্য স্ত্রীগণ থেকে অনুমতি নিয়ে অসুস্থাবস্থার (পবিত্র জীবনের শেষ) দিনগুলি আয়েশা (রাঃ) -এর নিকট অতিবাহিত করেছিলেন। ‘أَنْ تَقَرَّ اَعْيُنُهُنَّ’ (ওদের চক্ষু শীতল হবে) এ কথা নবী (সাঃ)-এর উক্ত আমলের সাথে সম্পৃক্ত যে, নবী (সাঃ)-এর জন্য পালা ভাগ করা যদিও অন্যান্য মানুষের মত আবশ্যিক ছিল না, তবুও তিনি পালা ভাগ করাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। যাতে নবী (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের চক্ষু শীতল থাকে এবং তাঁর সদ্ব্যবহারে এবং সমতা ও ইনসাফে সন্তুষ্ট হয়ে যান। এই কারণে তিনি নিজের বিশেষত্বকে ব্যবহার না করে তাঁদের মন জয় করাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
[4] অর্থাৎ, তোমাদের হৃদয়ে যে গুপ্ত প্রেম আছে তা আল্লাহ জানেন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মনে সকল স্ত্রীর মহববত এক রকম হয় না। কারণ মন মানুষের ইচ্ছার উপর থাকে না। যার ফলে স্ত্রীদের মাঝে পালা, খরচ-খরচা ও জীবনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তুতে সমতা বজায় রাখা আবশ্যিক, যাতে মানুষ ইনসাফ করতে সচেষ্ট হতে পারে। কিন্তু হৃদয়স্থ ভালোবাসার সমতা বজায় রাখা যেহেতু মানুষের ইচ্ছা ও সাধ্যের বাইরে, তাই আল্লাহ তাআলা তা ধরবেন না। তবে আন্তরিক ভালবাসা যেন কোন একজন স্ত্রীর সাথে বিশেষ ভাল ব্যবহারের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণে তিনি ইনসাফের সাথে পালা নির্ধারণ করে বলতেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমি পালা ভাগ করার মালিক, পালা ভাগ করলাম। কিন্তু আমি যার মালিক নই; বরং তুমি যার মালিক তার ব্যাপারে তুমি আমাকে দোষ দিয়ো না।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ আহমাদ ৬/১৪৪) (অর্থাৎ হৃদয় ও তার প্রেম ভাগ করার ক্ষমতা আমার নেই। হৃদয়ের মালিক তো তুমি। কারো প্রতি হৃদয়ের আকর্ষণ বেশী থাকলে তার জন্য আমি দায়ী নই।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানএরপর তোমার জন্য (এদের অতিরিক্ত) অন্য স্ত্রী গ্রহণ হালাল নয় এবং তোমার স্ত্রীদের (তালাক দিয়ে) পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয়, যদিও অন্যদের সৌন্দর্য তোমাকে বিমোহিত করে; তবে তোমার মালিকানাধীন দাসী ছাড়া। আর আল্লাহ সকল কিছুর উপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন। আল-বায়ান
অতঃপর আর কোন নারী তোমার জন্য বৈধ নয়। আর তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে চমৎকৃত করে। তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সব বিষয়ের উপর দৃষ্টি রাখেন। তাইসিরুল
এরপর, তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরির্বতে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয় যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে, তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই বিধান প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সব কিছুর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। মুজিবুর রহমান
Not lawful to you, [O Muhammad], are [any additional] women after [this], nor [is it] for you to exchange them for [other] wives, even if their beauty were to please you, except what your right hand possesses. And ever is Allah, over all things, an Observer. Sahih International
৫২. এরপর আপনার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং আপনার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহনও বৈধ নয়, যদিও তাদের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে(১); তবে আপনার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপার ভিন্ন। আর আল্লাহ্ সবকিছুর উপর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণকারী।
(১) ইবন আব্বাস, মুজাহিদ, দাহহাক, কাতাদাহ সহ অনেক আলেমের নিকট এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের পুরষ্কারস্বরূপ নাযিল হয়েছিল। তারা যখন দুনিয়ার সামগ্ৰীর উপর আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কষ্টকর জীবন বেছে নিয়েছিলেন, তখন আল্লাহ তাদেরকে এ আয়াত নাযিল করে তাদের অন্তরে খুশীর প্রবেশ ঘটালেন। [ইবন কাসীর] তবে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর আগেই আল্লাহ তার জন্য বিয়ে করা হালাল করে দিয়েছেন। এ হিসেবে এ আয়াতটি পূর্বের ৫১ নং আয়াত দ্বারা রহিত। এটি মৃত্যু জনিত ইদ্দতের আয়াতের মতই হবে, যেখানে তেলাওয়াতের দিক থেকে আগে হলেও সেটি পরবর্তী আয়াতকে রহিত করেছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫২) এরপর তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয়; যদিও ওদের রূপ-সৌন্দর্য তোমাকে মোহিত করে।[1] তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এ বিধান প্রযোজ্য নয়।[2] আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন।
[1] এখতিয়ারের আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী পত্নীগণ দুনিয়ার আয়েশ-আরামের সামগ্রীর পরিবর্তে সানন্দ চিত্তে নবী (সাঃ)-এর সাথে বসবাস করাকে পছন্দ করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তার বদলা এই দিলেন যে, নবী (সাঃ)-কে সেই স্ত্রীগণ ছাড়া (সে সময় তাঁরা নয় জন ছিলেন) অন্য কোন মহিলাকে বিবাহ করা বা তাঁদের কাউকে তালাক দিয়ে তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে বিবাহ করতে নিষেধ করে দিলেন। অনেকে বলেন, পরে নবী (সাঃ)-কে তার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি আর কোন বিবাহ করেননি। (ইবনে কাসীর)
[2] অর্থাৎ, ক্রীতদাসী রাখার ব্যাপারে কোন বাধা নেই। অনেকে আয়াতের ব্যাপক নির্দেশ থেকে দলীল নিয়ে বলেন যে, নবী (সাঃ)-কে কাফের ক্রীতদাসী রাখারও অনুমতি দেওয়া ছিল। আবার অনেকে (ولاَ تُمْسِكُوا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ) ‘‘তোমরা অবিশ্বাসী নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না’’ (মুমতাহিনা ১০) আয়াতের ভিত্তিতে বলেন, নবী (সাঃ)-এর জন্য কাফের ক্রীতদাসী হালাল ছিল না। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মুমিনগণ, তোমরা নবীর ঘরসমূহে প্রবেশ করো না; অবশ্য যদি তোমাদেরকে খাবারের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে (প্রবেশ কর) খাবারের প্রস্ত্ততির জন্য অপেক্ষা না করে। আর যখন তোমাদেরকে ডাকা হবে তখন তোমরা প্রবেশ কর এবং খাবার শেষ হলে চলে যাও আর কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ো না; কারণ তা নবীকে কষ্ট দেয়, সে তোমাদের বিষয়ে সঙ্কোচ বোধ করে; কিন্তু আল্লাহ সত্য প্রকাশে সঙ্কোচ বোধ করেন না। আর যখন নবীপত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আর আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ। আল-বায়ান
তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোন! নবীগৃহে প্রবেশ কর না যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয় খাদ্য গ্রহণের জন্য, (আগেভাগেই এসে পড় না) খাদ্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা করে যেন বসে থাকতে না হয়। তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ কর। অতঃপর তোমাদের খাওয়া হলে তোমরা চলে যাও। কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। তোমাদের এ কাজ নবীকে কষ্ট দেয়। সে তোমাদেরকে (উঠে যাওয়ার জন্য বলতে) লজ্জাবোধ করে, আল্লাহ সত্য কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। তোমরা যখন তার স্ত্রীগণের নিকট কোন কিছু চাও, তখন পর্দার আড়াল হতে তাদের কাছে চাও। এটাই তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য পবিত্রতর। তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া সঙ্গত নয়। আর তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীগণকে বিয়ে করাও তোমাদের জন্য কক্ষনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা মহা অপরাধ। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাদ্য প্রস্তুত হওয়ার আগেই আহারের জন্য নাবী-গৃহে প্রবেশ করনা। তবে তোমাদেরকে আহবান করলে তোমরা প্রবেশ কর এবং আহার শেষে তোমরা চলে যেও; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়না। কারণ তোমাদের এই আচরণ নাবীকে পীড়া দেয়, সে তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করে। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেননা। তোমরা তার স্ত্রীদের নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাইবে। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র। তোমাদের কারও পক্ষে আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া অথবা তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা সংগত নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, do not enter the houses of the Prophet except when you are permitted for a meal, without awaiting its readiness. But when you are invited, then enter; and when you have eaten, disperse without seeking to remain for conversation. Indeed, that [behavior] was troubling the Prophet, and he is shy of [dismissing] you. But Allah is not shy of the truth. And when you ask [his wives] for something, ask them from behind a partition. That is purer for your hearts and their hearts. And it is not [conceivable or lawful] for you to harm the Messenger of Allah or to marry his wives after him, ever. Indeed, that would be in the sight of Allah an enormity. Sahih International
৫৩. হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাবার-দাবার তৈরীর জন্য অপেক্ষা না করে খাওয়ার জন্য নবীর ঘরে প্রবেশ করো না। তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্ৰবেশ করো তারপর খাওয়া শেষে তোমরা চলে যেও; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না। নিশ্চয় তোমাদের এ আচরণ নবীকে কষ্ট দেয়, কারণ তিনি তোমাদের ব্যাপারে (উঠিয়ে দিতে) সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না।(১) তোমরা তার পত্নীদের কাছ থেকে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য বেশী পবিত্ৰ।(২) আর তোমাদের কারো পক্ষে আল্লাহ্র রাসূলকে কষ্ট দেয়া সংগত নয় এবং তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করাও তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।
(১) কোন কোন লোক খাওয়ার দাওয়াতে এসে খাওয়া দাওয়া সেরে এমনভাবে ধর্ণা দিয়ে বসে চুটিয়ে আলাপ জুড়ে দেয় যে, আর উঠবার নামটি নেয় না, মনে হয় এ আলাপ আর শেষ হবে না। গৃহকর্তা ও গৃহবাসীদের এতে কি অসুবিধা হচ্ছে তার কোন পরোয়াই তারা করে না। ভদ্রতাজ্ঞান বিবর্জিত লোকেরা তাদের এ আচরণের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও কষ্ট দিতে থাকতো এবং তিনি নিজের ভদ্র ও উদার স্বভাবের কারণে এসব বরদাশত করতেন। শেষে যয়নবের ওলিমার দিন এ কষ্টদায়ক আচরণ সীমা ছাড়িয়ে যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ খাদেম আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাতের বেলা ছিল ওলিমার দাওয়াত৷
সাধারণ লোকেরা খাওয়া শেষ করে বিদায় নিয়েছিল। কিন্তু দু'তিনজন লোক বসে কথাবার্তায় মশগুল হয়ে গিয়েছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরক্ত হয়ে উঠলেন এবং পবিত্ৰ স্ত্রীদের ওখান থেকে এক চক্কর দিয়ে এলেন। ফিরে এসে দেখলেন তারা যথারীতি বসেই আছেন। তিনি আবার ফিরে গেলেন এবং আয়েশার কামরায় বসলেন। অনেকটা রাত অতিবাহিত হয়ে যাবার পর যখন তিনি জানলেন তারা চলে গেছেন। তখন তিনি যায়নবের কক্ষে গেলেন। এরপর এ বদ অভ্যাসগুলো সম্পর্কে লোকদেরকে সতর্ক করে দেয়ার ব্যাপারটি স্বয়ং আল্লাহ নিজেই গ্ৰহণ করলেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা অনুযায়ী এ আয়াত সে সময়ই নাযিল হয়৷ [বুখারী: ৫১৬৩, মুসলিম: ১৪২৮] [দেখুন, তাবারী, ফাতহুল কাদীর]
(২) এ আয়াতে বর্ণিত পর্দার হুকুমটি শুধু নবী-স্ত্রীদের সাথে নির্দিষ্ট নয়। বরং প্রতিটি ঈমানদার নারীই পর্দার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। [আদওয়াউল-বায়ান; কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৩) হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের অনুমতি না দেওয়া হলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে ভোজনের জন্য নবী-গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমাদেরকে আহবান করা হলে তোমরা প্রবেশ কর এবং ভোজন-শেষে তোমরা চলে যাও; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না। কারণ এ নবীর জন্য কষ্টদায়ক; সে তোমাদেরকে উঠে যাবার জন্য বলতে সংকোচ বোধ করে। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না।[1] তোমরা তার পত্নীদের নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাও।[2] এ বিধান তোমাদের এবং তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।[3] তোমাদের কারও পক্ষে আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেওয়া[4] অথবা তার মৃত্যুর পর তার পত্নীদেরকে বিবাহ করা কখনও সংগত নয়। নিশ্চয় আল্লাহর দৃষ্টিতে এ ঘোরতর অপরাধ। [5]
[1] এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ এই যে, নবী (সাঃ) যয়নাবের ওলীমাতে সাহাবায়ে কিরামগণকে দাওয়াত করেছিলেন। খাওয়ার পরেও কিছু লোক সেখানেই বসে আপোসে কথাবার্তায় লিপ্ত ছিল। যাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিশেষ কষ্ট অনুভব হচ্ছিল। তিনি লজ্জা-সংকোচবশতঃ তাদেরকে চলে যাওয়ার জন্য কিছুই বলতে পারেননি। (বুখারীঃ তাফসীর সূরা আহযাব) এই আয়াতে দাওয়াতের কিছু রীতি-নীতি বর্ণনা করা হয়েছে; প্রথম রীতি এই যে, আহার্য প্রস্তুত হওয়ার পর দাওয়াতে যাবে, সময়ের পূর্বে উপস্থিত হয়ে ধরনা দিয়ে বসে থাকবে না। দ্বিতীয় রীতি এই যে, খাওয়া শেষ হওয়া মাত্র নিজ নিজ গৃহে ফিরে যাবে। সেখানে বসে বসে পরস্পর কথাবার্তা বলতে থাকবে না। খাওয়ার উল্লেখ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসাবে করা হয়েছে। নচেৎ আসল উদ্দেশ্য এই যে, তোমাদেরকে যখনই ডাকা হবে -- খাওয়ার জন্য হোক বা অন্য কোন কাজের জন্য -- অনুমতি ছাড়া গৃহে প্রবেশ করবে না।
[2] এই বিধান উমার (রাঃ)-এর বাসনার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার নিকট সৎ-অসৎ হরেক রকমের লোক আসা যাওয়া করে, আপনি আপনার পত্নীগণকে পর্দা করার আদেশ দিলে খুবই ভাল হত। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা এই পর্দার হুকুম নাযিল করেন।
(বুখারীঃ কিতাবুস স্বালাহ ও তাফসীর সুরা বাক্বারাহ, মুসলিমঃ বাবু ফাযায়েলে ওমর বিন খাত্তাব)
[3] পর্দা বিধিবদ্ধ হওয়ার হিকমত, যুক্তি ও কারণ এই যে, তার মাধ্যমে পুরুষ ও নারী উভয়েই আন্তরিক কুবাসনা থেকে এবং একে অপরের দ্বারা ফিতনাতে পড়া থেকে পবিত্র থাকবে ও রক্ষা পাবে।
[4] তা যে কোন প্রকারে হতে পারে। নবী (সাঃ)-এর গৃহে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া তাঁর ঘরে বসে থাকা এবং পর্দা ছাড়া সরাসরি পবিত্র নবী-পত্নীগণের সঙ্গে কথা বলা, এ সকল কর্মও তাঁর কষ্টের কারণ। তাই এ সব থেকে দূরে থাকবে।
[5] এই নির্দেশ ঐ সকল পবিত্র নবী-পত্নীগণের জন্য যাঁরা নবী (সাঃ)-এর মৃত্যুর সময় তাঁর বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। পক্ষান্তরে নবী (সাঃ) যে স্ত্রীকে সঙ্গমের পর তালাক দিয়ে বিদায় করে দিয়েছেন, তিনি এই সাধারণ নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত হবেন কি না? উক্ত বিষয়ে দ্বিমত আছে। অনেকে তাঁকেও আদেশের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন। আবার অনেকে অন্তর্ভুক্ত মনে করেন না। কিন্তু নবী (সাঃ)-এর এই রকম কোন স্ত্রীই ছিলেন না। অতএব এটা একটা শুধু কল্পিত মাসআলা মাত্র। পক্ষান্তরে ঐ সকল নারীদের এক তৃতীয় শ্রেণী; যাদের সাথে নবী (সাঃ)-এর বিবাহ হয়েছিল; কিন্তু সঙ্গমের পূর্বে তালাক দিয়ে দিয়েছেন, তাদেরকে অন্য লোক বিবাহ করতে পারে -- এতে কোন মতভেদ নেই। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযদি তোমরা কোন কিছু প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর তবে নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর অথবা তা গোপন কর- আল্লাহ তো সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল
তোমরা কোন বিষয় প্রকাশই কর অথবা গোপনই রাখ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। মুজিবুর রহমান
Whether you reveal a thing or conceal it, indeed Allah is ever, of all things, Knowing. Sahih International
৫৪. যদি তোমরা কোন কিছু প্রকাশ কর অথবা তা গোপন রাখ (তবে জেনে রাখ) নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৪) তোমরা কোন বিষয় প্রকাশই কর অথবা গোপনই রাখ --আল্লাহ অবশ্যই সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়াননবীর স্ত্রীদের জন্য তাদের পিতাদের, তাদের পুত্রদের, তাদের ভাইদের, তাদের ভাইয়ের ছেলেদের, তাদের বোনের ছেলেদের, তাদের নারীদের ও তাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের বেলায় (হিজাব না করায়) কোন অপরাধ নেই। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সকল কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী। আল-বায়ান
কোন অপরাধ নেই (যদি নবীর স্ত্রীগণ সামনে যায়) তাদের পিতৃদের, তাদের পুত্রদের, তাদের ভ্রাতৃদের, তাদের ভ্রাতুষ্পুত্রদের, তাদের ভগ্নীপুত্রদের, তাদের নারীদের ও তাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের। আর (হে নবীর স্ত্রীগণ!) তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সকল জিনিসেরই প্রত্যক্ষদর্শী। তাইসিরুল
নাবী-পত্নীদের জন্য তাদের পিতৃগণ, পুত্রগণ, ভ্রাতৃগণ, ভ্রাতুস্পুত্রগণ, ভগ্নীপুত্রগণ, সেবিকাগণ এবং তাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ায় কোন অপরাধ নেই। হে নাবীর পত্নিগণ! আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সবকিছু অবলোকন করেন। মুজিবুর রহমান
There is no blame upon women concerning their fathers or their sons or their brothers or their brothers' sons or their sisters' sons or their women or those their right hands possess. And fear Allah. Indeed Allah is ever, over all things, Witness. Sahih International
৫৫. নবী-স্ত্রীদের জন্য তাদের পিতাগণ, পুত্ৰগণ, ভাইগণ, ভাইয়ের ছেলেরা, বোনের ছেলেরা, আপন নারীগণ এবং তাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীগণের ব্যাপারে তা(১) পালন না করা অপরাধ নয়। আর হে নবী-স্ত্রীগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ সবকিছুর সম্যক প্ৰত্যক্ষদর্শী।
(১) অর্থাৎ তাদের সাথে পর্দা করা বাধ্যতামূলক নয়। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৫) নবী-পত্নীদের জন্য তাদের পিতৃগণ, পুত্রগণ, ভ্রাতৃগণ, ভ্রাতুষ্পুত্রগণ, ভগিনীপুত্রগণ, (বিশ্বাসী) নারীগণ এবং তাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসিগণের ব্যাপারে এ (পর্দা) পালন না করা অপরাধ নয়।[1] (হে নবীপত্নীগণ!) তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত কিছু প্রত্যক্ষ করেন।[2]
[1] যখন নারীদের পর্দার আয়াত নাযিল হল, তখন গৃহে থাকা আত্মীয় বা যে সকল আত্মীয়রা সর্বদা গৃহে আসা-যাওয়া করে, তাদের বিষয়ে প্রশ্ন হল যে, তাদের থেকে পর্দা করতে হবে কি না? সুতরাং এই আয়াতে সেই সকল আত্মীয়ের কথা উল্লেখ করে দেওয়া হল, যাদের থেকে পর্দা করা জরুরী নয়। এ মাসআলার বিস্তারিত আলোচনা সূরা নূরের ৩১ নং (وَلاَ يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ) আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, সেখানে তা দ্রষ্টব্য।
[2] এই স্থানে নারীদেরকে আল্লাহভীতির আদেশ দিয়ে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, যদি তোমাদের অন্তরে আল্লাহভীতি থাকে, তবে পর্দার যে আসল উদ্দেশ্য, (অন্তর ও চক্ষুর পবিত্রতা এবং ইজ্জতের হিফাযত) তা অবশ্যই সাধন হবে। এ ছাড়া শুধু বাহ্যিক পর্দা (যেমন লোক প্রদর্শনী পর্দা, সুনাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে, কাউকে ভয় বা লজ্জা করে, ফ্যাশন মনে করে, পরিবেশ ও পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে পর্দা) তোমাদেরকে পাপে লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবে না। (যেহেতুঃ সংযমশীলতার লেবাসই সর্বোৎকৃষ্ট। -আ’রাফ ২৬ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দো‘আ করে*। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। আল-বায়ান
আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন, তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মু’মিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং যথাযথ শ্রদ্ধাভরে সালাম জানাও। তাইসিরুল
আল্লাহ নাবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর মালাইকারাও নাবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মু’মিনগণ! তোমরাও নাবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। মুজিবুর রহমান
Indeed, Allah confers blessing upon the Prophet, and His angels [ask Him to do so]. O you who have believed, ask [Allah to confer] blessing upon him and ask [Allah to grant him] peace. Sahih International
* ইমাম বুখারী আবুল ‘আলিয়া থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আল্লাহর সালাত’ বলতে বুঝানো হয়েছে ফেরেশতাদের কাছে নবীর প্রশংসা এবং ফেরেশতাদের সালাত হলো দো‘আ। আর ইমাম তিরমিযী সুফিয়ান সওরী থেকে বর্ণনা করেন যে, এখানে আল্লাহর সালাত বলতে রহমত এবং ফেরেশতাদের সালাত বলতে ইস্তেগফার বুঝানো হয়েছে (তাফসীর ইবন কাসীর)।
৫৬. নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোআ-ইসতেগফার করেন।(১) হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর উপর সালাত(২) পাঠ কর এবং তাকে যথাযথ ভাবে সালাম(৩) জানাও।
(১) আরবী ভাষায় সালাত শব্দের অর্থ রহমত, দো'আ প্রশংসা। অধিকাংশ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁর নবীর প্রতি যে সালাত সম্পৃক্ত করা হয়েছে এর অর্থ, আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন। তার কাজে বরকত দেন। তার নাম বুলন্দ করেন। তার প্রতি নিজের রহমতের বারি বর্ষণ করেন। ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তার উপর সালাত প্রেরণের অর্থ হচ্ছে, তারা তাকে চরমভাবে ভালোবাসেন এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে দো'আ করেন, আল্লাহ যেন তাকে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা দান করেন, তার শরীয়াতকে প্রসার ও বিস্তৃতি দান করেন এবং তাকে সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দেন। তার উপর রহমত নাযিল করেন। আর সাধারণ মুমিনদের তরফ থেকে সালাতের অর্থ দো'আ ও প্রশংসার সমষ্টি। এ আয়াতের তাফসীরে আবুল আলিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার সালাতের অর্থ আল্লাহ কর্তৃক ফিরিশতাদের সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মান ও প্রশংসা করা। [সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাফসীর]
আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান দুনিয়াতে এই যে, তিনি ফিরিশতাদের কাছে তার কথা আলোচনা করেন। তাছাড়া তার নামকে সমুন্নত করেন। তিনি পূর্ব থেকেই তার নাম সমুন্নত করেছেন। ফলে আযান, ইকামত ইত্যাদিতে আল্লাহর নামের সাথে সাথে তার নামও শামিল করে দিয়েছেন, তার দ্বীন পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, প্ৰবল করেছেন; তার শরীয়তের কাজ কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছেন এবং তার শরীয়তের হেফাযতের দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করেছেন। পক্ষান্তরে আখেরাতে তার সম্মান এই যে, তার স্থান সমগ্র সৃষ্টির ঊর্ধ্বে রেখেছেন এবং যে সময় কোন নবী ও ফেরেশতার সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না, তখনও তাকে সুপারিশের ক্ষমতা দিয়েছেন, যাকে “মাকামে-মাহমুদ” বলা হয়। মনে রাখা প্রয়োজন যে, রাসূলের উপর সালাত প্রেরণের ক্ষেত্রে সালাত শব্দ দ্বারা একই সময়ে একাধিক অর্থ (রহমত, দো'আ ও প্রশংসা) নেয়ার পরিবর্তে সালাত শব্দের এক অর্থ নেয়াই সঙ্গত অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান, প্রশংসা ও শুভেচ্ছা। [দেখুন: ইবনুল কাইয়্যেম, জালাউল আফহাম]
(২) আয়াতের আসল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করার আদেশ দান করা। কিন্তু তা এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, প্রথমে আল্লাহ স্বয়ং নিজের ও তার ফেরেশতাগণের দরূদ পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন। অতঃপর সাধারণ মুমিনগণকে দরূদ প্রেরণ করার আদেশ দিয়েছেন।
অধিকাংশ ইমাম এ বিষয়ে একমত যে, কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম উল্লেখ করলে অথবা শুনলে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। [দেখুন: কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর] কেননা, হাদীসে এরূপ ক্ষেত্রে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হওয়া বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “সেই ব্যক্তি অপমানিত হোক যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে সালাত পাঠ করে না।” [তিরমিযী: ৩৫৪৫] অন্য এক হাদীসে আছে- “সেই ব্যক্তি কৃপণ, যার কাছে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে দরূদ পাঠ করে না।” [তিরমিযী: ৩৫৪৬]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্যের জন্য ‘সালাত’ পেশ করা জায়েয কিনা, এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একটি দল, কাযী ঈয়াদের নাম এ দলের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, একে সাধারণভাবে জায়েয মনে করে। এদের যুক্তি হচ্ছে, কুরআনে আল্লাহ নিজেই অ-নবীদের ওপর একাধিক জায়গায় সালাতের কথা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। এভাবে নবী সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লামও একাধিকবার অ-নবীদের জন্য সালাত শব্দ সহকারে দোআ করেন। যেমন একজন সাহাবীর জন্য তিনি দো'আ করেন, হে আল্লাহ! আবু আওফার পরিজনদের ওপর সালাত পাঠাও। জাবের ইবনে আবদুল্লাহর স্বামীর ওপর সালাত পাঠান। যারা যাকাত নিয়ে আসতেন তাদের পক্ষে তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! ওদের উপর সালাত পাঠাও। সা'দ ইবনে উবাদার পক্ষে তিনি বলেন, হে আল্লাহ! সা'দ ইবন উবাদার পরিজনদের ওপর তোমার সালাত ও রহমত পাঠাও। আবার মুমিনের রূহ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর দিয়েছেন যে, ফেরেশতারা তার জন্য সালাত পাঠ করে।
কিন্তু মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশের মতে এমনটি করা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য তো সঠিক ছিল। কিন্তু আমাদের জন্য সঠিক নয়। তারা বলেন, সালাত ও সালামকে মুসলিমরা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। এটি বর্তমানে তাদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তাই নবীদের ছাড়া অন্যদের জন্য এগুলো ব্যবহার না করা উচিত। এ জন্যই উমর ইবনে আবদুল আযীয একবার নিজের একজন শাসনকর্তাকে লিখেছিলেন, “আমি শুনেছি কিছু বক্তা এ নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে শুরু করেছেন যে, তারা ‘আস-সালাতু আলান নাবী’-এর মতো নিজেদের পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারীদের জন্যও “সালাত” শব্দ ব্যবহার করেছেন। আমার এ পত্র পৌছে যাবার পরপরই তাদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখো এবং সালাতকে একমাত্র নবীদের জন্য নির্দিষ্ট করে অন্য মুসলিমদের জন্য দো'আ করেই ক্ষান্ত হবার নির্দেশ দাও।” [রূহুল মা'আনী]
(৩) এ হুকুমটি নাযিল হবার পর বহু সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালামের পদ্ধতি তো আপনি আমাদের বলে দিয়েছেন। (অর্থাৎ নামাযে “আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবীয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” এবং দেখা সাক্ষাত হলে “আসসালামুআলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ” বলা।) কিন্তু আপনার প্রতি সালাত পাঠাবার পদ্ধতিটা কি? [দেখুন, তাবারী, কুরতুবী, তাহরীর ওয়া তানওয়ীর] এর জবাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন লোককে বিভিন্ন সময় যেসব সালাত বা দরূদ শিখিয়েছেন তা বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন,
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
[বুখারীঃ ৩৩৬৯, ৬৩৬০, ৯৭৯]
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
[বুখারী ৩৩৭০]
اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ
[বুখারীঃ ৪৭৯৮]
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
[মুসনাদে আহমাদঃ ৪/১১৯]
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়ার ফযীলত সংক্রান্ত অনেক হাদীস রয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে ফেরেশতারা তার প্রতি দরূদ পাঠ করে যতক্ষণ সে দরূদ পাঠ করতে থাকে।” [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪৪৫, ইবনে মাজাহ: ৯০৭] আরো বলেছেন, “যে আমার ওপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ পড়েন।” [মুসলিম: ৩৮৪] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার সাথে থাকার সবচেয়ে বেশী হকদার হবে সেই ব্যক্তি যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশী দরূদ পড়বে।” [তিরমিযী: ৪৮৪] আরো বলেছেন, আমার কথা যে ব্যক্তির সামনে আলোচনা করা হয় এবং সে আমার ওপর দরূদ পাঠ করে না সে কৃপণ। [তিরমিযী: ৩৫৪৬]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৬) নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর। (দরূদ ও সালাম পেশ কর।) [1]
[1] এই আয়াতে নবী (সাঃ)-এর ঐ সম্মান ও মর্যাদার কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যা আসমানে উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ফিরিশতাগণের নিকট বিদ্যমান। তা এই যে আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাগণের নিকট নবী (সাঃ)-এর সুনাম ও প্রশংসা করেন এবং তাঁর উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতাগণও নবী (সাঃ) এর উচ্চমর্যাদার জন্য দু’আ করেন। তার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীদেরকেও আদেশ করেছেন, যেন তারাও নবী (সাঃ)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করে। যাতে নবী (সাঃ)-এর প্রশংসায় ঊর্ধ্ব ও নিম্ন দুই বিশ্ব একত্রিত হয়ে যায়। হাদীসে বর্ণনা হয়েছে যে, সাহাবায়ে কিরামগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সালামের নিয়ম তো আমাদের জানা আছে (অর্থাৎ তাশাহহুদে ‘আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু’ পড়ি) কিন্তু আমরা দরূদ কিভাবে পড়ব? এর উত্তরে তিনি দরূদে ইবরাহিমী -- যা নামাযে পাঠ করা হয় তা বর্ণনা করলেন। (বুখারীঃ তাফসীর সূরা আহ্যাব)
এ ছাড়া হাদীসে দরূদের আরো অন্য শব্দ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলিও পাঠ করা চলবে। সংক্ষেপে (صَلَّى اللهُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ وَسَلَّم) পাঠ করা যাবে। পক্ষান্তরে (اَلصَّلَوةُ وَالسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ) পাঠ করা এই জন্য ঠিক নয় যে, এতে নবী (সাঃ)-কে সরাসরি সম্বোধন করা হয় এবং এই শব্দগুচ্ছ সাধারণ দরূদে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়নি। আর যেহেতু তাশাহহুদে ‘اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِيُّ’ শব্দ নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে সেহেতু (তাশাহহুদে তা পাঠ করাতে কোন দোষ নেই। তা ছাড়া (اَلصَّلَوةُ وَالسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ) পাঠকারী এই বাতিল বিশ্বাস নিয়ে পাঠ করে যে, নবী (সাঃ) তা সরাসরি শ্রবণ করেন। এই বাতিল বিশ্বাস কুরআন ও হাদীসের পরিপন্থী। সুতরাং এই আকীদা নিয়েও নিজেদের মনগড়া দরূদ পাঠ করা ঠিক নয়। অনুরূপ আযানের পূর্বে তা পাঠ করাও বিদআত, যাতে সওয়াব নয়; বরং গুনাহ হয়। হাদীসে দরূদের বড় গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। নামাযে তা পাঠ করা ওয়াজেব না সুন্নত? অধিকাংশ উলামাগণ বলেছেন সুন্নত এবং ইমাম শাফেয়ী ও আরো অনেকে তা ওয়াজেব বলেছেন। তবে একাধিক হাদীসে তার ওয়াজেব হওয়ারই সমর্থন পাওয়া যায়। অনুরূপ হাদীস দ্বারা এটাও বোঝা যায় যে, যেমন শেষ তাশাহহুদে দরূদ পড়া ওয়াজেব তেমনই প্রথম তাশাহহুদেও দরূদ পাঠ করা ওয়াজেব।
নিম্নে তার কতিপয় দলীল দেওয়া হলঃ-
প্রথম প্রমাণ এই যে, মুসনাদে আহমাদে সহীহ সানাদে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সালামের নিয়ম তো আমাদের জানা আছে (অর্থাৎ তাশাহহুদে ‘আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু’ পড়ি) কিন্তু আমরা নামাযে দরূদ কিভাবে পড়ব? এর উত্তরে তিনি দরূদে ইবরাহিমী শিক্ষা দিলেন (আল ফাতহুর রাববানী ৪/২০-২১)
মুসনাদে আহমাদ ছাড়াও উক্ত হাদীস সহীহ ইবনে হিববান, সুনানে কুবরা বায়হাকী, মুস্তাদরাক হাকেম এবং ইবনে খুযায়মাতে বর্ণিত হয়েছে। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, যেমন তাশাহহুদে সালাম পড়া হয় অনুরূপ উক্ত প্রশ্নও নামাযের ভিতরে দরূদ পাঠ সম্পর্কে ছিল, উত্তরে নবী (সাঃ) দরূদে ইবরাহিমী পড়ার আদেশ দিয়েছিলেন। যাতে বোঝা যাচ্ছে যে, সালামের সাথে দরূদও পড়া দরকার এবং তা পড়ার স্থান হল তাশাহহুদ। আর হাদীসে তা সাধারণভাবে বর্ণনা হয়েছে। প্রথম বা দ্বিতীয় তাশাহহুদের সাথে নির্দিষ্ট করা হয়নি। যার ফলে বলা যায় যে, প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় তাশাহহুদেই সালাম ও দরূদ পড়তে হবে।
যে বর্ণনাগুলিতে প্রথম তাশাহহুদ দরূদ ছাড়া উল্লেখ হয়েছে সেগুলিকে সূরা আহযাবের আয়াত ‘صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا’ অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের ধরা হবে। কিন্তু উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর অর্থাৎ পঞ্চম হিজরীর পর যখন নবী (সাঃ) সাহাবায়ে কিরামগণের প্রশ্নের উত্তরে দরূদের শব্দও বর্ণনা করে দিলেন, তখন নামাযে সালামের সাথে দরূদ পড়াও জরুরী হয়ে গেল, চাহে তা প্রথম তাশাহহুদ হোক বা দ্বিতীয়।
আরো একটি প্রমাণ হল, আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, ‘‘নবী (সাঃ) কখনো কখনো রাত্রে নয় রাকআত নামায পড়তেন, আট রাকআতে যখন তাশাহহুদে বসতেন, তখন তাতে তাঁর প্রভুর নিকট দু’আ করতেন এবং তাঁর পয়গম্বরের উপর দরূদ পড়তেন তারপর সালাম না ফিরে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং নয় রাকআত পূর্ণ করে পুনরায় তাশাহহুদে বসতেন, তাঁর প্রভুর নিকট দু’আ করতেন এবং তাঁর পয়গম্বরের উপর দরূদ পড়তেন এবং পুনরায় দু’আ করতেন, তারপর সালাম ফিরতেন। (বায়হাকী ২/৭০৪, নাসাঈ ১/২০২, বিস্তারিত দেখুনঃ আল্লামা আলবানীর সিফাতু সালাতিন্নাবী ১৪৫ পৃষ্ঠা) উক্ত বর্ণনায় পরিষ্কার উল্লেখ আছে যে, নবী (সাঃ) তাঁর রাত্রের নামাযে প্রথম ও শেষ উভয় তাশাহহুদে দরূদ পড়েছেন। এটা যদিও নফল নামাযের কথা ছিল; তবুও নবী (সাঃ)-এর উক্ত আমল দ্বারা উল্লিখিত ব্যাপক দলীলসমূহের সমর্থন হয়। যার ফলে তা শুধু নফল নামাযের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লানত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অপমানজনক আযাব। আল-বায়ান
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেছেন আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অপমানজনক শাস্তি। তাইসিরুল
যারা আল্লাহ ও রাসূলকে পীড়া দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। মুজিবুর রহমান
Indeed, those who abuse Allah and His Messenger - Allah has cursed them in this world and the Hereafter and prepared for them a humiliating punishment. Sahih International
৫৭. নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লা’নত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্ৰস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।(১)
(১) যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কোন প্রকার কষ্ট দেয়, তার সত্তা অথবা গুণাবলীতে প্রকাশ্য অথবা ইঙ্গিতে কোন দোষ বের করে, সে কাফের হয়ে যায়। [দেখুন: আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর; মুয়াসসার]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৭) যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তো তাদেরকে ইহলোকে ও পরলোকে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। [1]
[1] আল্লাহ তাআলাকে কষ্ট দেওয়ার অর্থ হল ঐ সকল কাজ করা, যা তিনি অপছন্দ করেন। তাছাড়া আল্লাহকে কষ্ট দেওয়ার ক্ষমতা কে রাখে? যেমন মুশরিক, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায় আল্লাহর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে। অথবা যেমন হাদীসে কুদসীতে আছে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়, তারা যুগকে গালি দেয়, অথচ আমিই যুগ। দিবারাত্রির আবর্তন আমিই করে থাকি।’’ (বুখারী, মুসলিম) সুতরাং ‘যুগ বড় খারাপ, টেরা রাশিচক্র’ ইত্যাদি অনুরূপ কোন কথা বলা ঠিক নয়। কারণ প্রাকৃতিক কর্ম আল্লাহর হাতে, কোন যুগ বা রাশিচক্রের নয়। আর আল্লাহর রসূল (সাঃ)-কে কষ্ট দেওয়ার অর্থ হল, তাঁকে মিথ্যা মনে করা, তাঁকে কবি, মিথ্যুক, যাদুগর ইত্যাদি বলা। এ ছাড়া হাদীসে সাহাবায়ে কিরামগণকে কষ্ট দেওয়া এবং তাঁদের অমর্যাদা করা ও তুচ্ছ ভাবাকেও নবী (সাঃ) নিজের জন্য কষ্ট দেওয়া বলেছেন। অভিশপ্তের অর্থ, আল্লাহর রহমত থেকে দূরীভূত ও বঞ্চিত হওয়া।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে তাদের কৃত কোন অন্যায় ছাড়াই কষ্ট দেয়, নিশ্চয় তারা বহন করবে অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপ। আল-বায়ান
আর যারা মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদেরকে কষ্ট দেয় তাদের কোন অপরাধ ছাড়াই, তারা অপবাদের ও সুস্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে। তাইসিরুল
মু’মিন পুরুষ ও মু’মিনা নারী কোন অপরাধ না করলেও যারা তাদেরকে পীড়া দেয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে। মুজিবুর রহমান
And those who harm believing men and believing women for [something] other than what they have earned have certainly born upon themselves a slander and manifest sin. Sahih International
৫৮. আর যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয় যা তারা করেনি তার জন্য; নিশ্চয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করলো।(১)
(১) এ আয়াত দ্বারা কোন মুসলিমকে শরীয়তসম্মত কারণ ব্যতিরেকে কষ্টদানের অবৈধতা প্রমাণিত হয়েছে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর; মুয়াসসার] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “কেবল সে-ই মুসলিম, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে, কেউ কষ্ট পায় না আর কেবল সে-ই মুমিন, যার কাছ থেকে মানুষ তাদের রক্ত ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে নিরুদ্বেগ থাকে। [তিরমিযী: ২৬২৭] তাছাড়া এ আয়াতটি অপবাদেরও সংজ্ঞা নিরূপণ করে। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যে দোষ নেই অথবা যে অপরাধ মানুষ করেনি তা তার ওপর আরোপ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এটি সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়, গীবত কি? জবাবে বলেন, “তোমার নিজের ভাইয়ের আলোচনা এমনভাবে করা যা সে অপছন্দ করে।” জিজ্ঞেস করা হয়, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সেই দোষ সত্যিই থেকে থাকে? জবাব দেন, “তুমি যে দোষের কথা বলছে তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে তুমি তার গীবত করলে আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তাহলে তার ওপর অপবাদ দিলে।” [মুসলিম: ২৫৮৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৮) যারা বিনা অপরাধে বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।[1]
[1] অর্থাৎ তাঁদের বদনাম করার জন্য তাঁদের উপর অপবাদ দেওয়া, অবৈধ ভাবে তাঁদের অমর্যাদা ও তাচ্ছিল্য করা, যেমন রাফেযা (শিয়া)রা সাহাবায়ে-কিরামগণকে গালি দেয় এবং তাঁদের সাথে এমন কিছু কথা ও কর্ম সম্পৃক্ত করে, যা তাঁরা আদৌও বলেননি বা করেননি। ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন, ‘রাফেযারা হল উল্টা অন্তরের; এরা প্রশংসিত মানুষের বদনাম করে, আর বদ লোকের প্রশংসা করে।’’
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবে*র কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান
হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, তোমার কন্যাদেরকে আর মু’মিনদের নারীদেরকে বলে দাও- তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয় (যখন তারা বাড়ীর বাইরে যায়), এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে এবং তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তাইসিরুল
হে নাবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মু’মিনা নারীদেরকে বলঃ তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান
O Prophet, tell your wives and your daughters and the women of the believers to bring down over themselves [part] of their outer garments. That is more suitable that they will be known and not be abused. And ever is Allah Forgiving and Merciful. Sahih International
* জিলবাব হচ্ছে এমন পোশাক যা পুরো শরীরকে আচ্ছাদিত করে।
৫৯. হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়(১)। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।(২) আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(১) উল্লেখিত আয়াতের جلابيب শব্দটি جلباب এর বহুবচন। ‘জিলবাব’ অর্থ বিশেষ ধরনের লম্বা চাদর। [দেখুন: কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর] এই চাদরের আকার-আকৃতি সম্পর্কে ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ এই চাদর ওড়নার উপরে পরিধান করা হয়। [ইবনে কাসীর] ইমাম মুহাম্মদ ইবন সিরীন বলেনঃ আমি আবীদা আস-সালমানীকে এই আয়াতের উদ্দেশ্য এবং জিলবাবের আকার-আকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি মস্তকের উপর দিক থেকে চাদর মুখমণ্ডলের উপর লটকিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে ফেললেন এবং কেবল বামচক্ষু খোলা রেখে إدناء ও جلباب এর তাফসীর কার্যত: দেখিয়ে দিলেন। আর নিজের উপর চাদরকে নিকটবর্তী করার অর্থ চাদরকে মস্তকের উপরদিক থেকে লটকানো। সুতরাং চেহারা, মাথা ও বুক ঢেকে রাখা যায় এমন চাদর পরিধান করা উচিত।
এ আয়াতে পরিষ্কারভাবে মুখমণ্ডল আবৃত করার আদেশ ব্যক্ত করেছে। ফলে উপরে বর্ণিত পর্দার প্রথম আয়াতের বিষয়বস্তুর সমর্থন হয়ে গেছে। (এই আবীদা আস-সালমানী নবী সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে মুসলিম হন কিন্তু তাঁর খিদমতে হাযির হতে পারেননি। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে তিনি মদীনা আসেন এবং সেখানেই থেকে যান। তাকে ফিকহ ও বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে কাযী শুরাইহ-এর সমকক্ষ মনে করা হতো) ইবন আব্বাসও প্রায় এই একই ব্যাখ্যা করেন। তার যেসব উক্তি ইবনে জরীর, ইবনে আবি হাতেম ও ইবনে মারদুওইয়া উদ্ধৃত করেছেন তা থেকে তার যে বক্তব্য পাওয়া যায় তা হচ্ছে এই যে, “আল্লাহ মহিলাদেরকে হুকুম দিয়েছেন যে, যখন তারা কোন কাজে ঘরের বাইরে বের হবে। তখন নিজেদের চাদরের পাল্লা ওপর দিয়ে লটকে দিয়ে যেন নিজেদের মুখ ঢেকে নেয় এবং শুধুমাত্র চোখ খোলা রাখে।” কাতাদাহ ও সুদ্দীও এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই করেছেন।
সাহাবা ও তাবেঈদের যুগের পর ইসলামের ইতিহাসে যত বড় বড় মুফাসসির অতিক্রান্ত হয়েছেন তারা সবাই একযোগে এ আয়াতের এ অর্থই বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনে জারীর তাবারী বলেন, ভদ্র ঘরের মেয়েরা যেন নিজেদের পোশাক আশাকে বাদীদের মতো সেজে ঘর থেকে বের না হয়। তাদের চেহারা ও কেশদাম যেন খোলা না থাকে। বরং তাদের নিজেদের ওপর চাদরের একটি অংশ লটকে দেয়া উচিত। ফলে কোন ফাসেক তাদেরকে উত্যক্ত করার দুঃসাহস করবে না।” [জামে উল বায়ান ২২/৩৩]
আল্লামা আবু বকর জাস্সাস বলেন, “এ আয়াতটি প্রমাণ করে, যুবতী মেয়েদের চেহারা অপরিচিত পুরুষদের থেকে লুকিয়ে রাখার হুকুম দেয়া হয়েছে। এই সাথে ঘর থেকে বের হবার সময় তাদের ‘পবিত্রতাসম্পন্না’ হবার কথা প্ৰকাশ করা উচিত। এর ফলে সন্দেহযুক্ত চরিত্র ও কর্মের অধিকারী লোকেরা তাদেরকে দেখে কোন প্রকার লোভ ও লালসার শিকার হবে না।” [আহকামুল কুরআন ৩/৪৫৮]
যামাখশারী বলেন, “তারা যেন নিজেদের ওপর নিজেদের চাদরের একটি অংশ লটকে নেয় এবং তার সাহায্যে নিজেদের চেহারা ও প্রান্তভাগগুলো ভালোভাবে ঢেকে নেয়।” [আল-কাশশাফ ২/২২১]
আল্লামা নিযামুদ্দীন নিশাপুরী বলেন, “নিজেদের ওপর চাদরের একটি অংশ লটকে দেয়। এভাবে মেয়েদেরকে মাথা ও চেহারা ঢাকার হুকুম দেয়া হয়েছে।” [গারায়েবুল কুরআন ২২/৩২]
ইমাম রাযী বলেন, ‘এর উদ্দেশ্য হচ্ছে লোকেরা যেন জানতে পারে এরা দুশ্চরিত্রা মেয়ে নয়। কারণ যে মেয়েটি নিজের চেহারা ঢাকবে, অথচ চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, তার কাছে কেউ আশা করতে পারে না যে, সে নিজের সতর অন্যের সামনে খুলতে রাজী হবে। এভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে, এ মেয়েটি পর্দানশীন, একে যিানার কাজে লিপ্ত করার আশা করা যেতে পারে না।” [তাফসীরে কবীর ২/৫৯১]
(২) “চেনা সহজতর হবে” এর অর্থ হচ্ছে, তাদেরকে এ ধরনের অনাড়ম্বর লজ্জা নিবারণকারী পোশাকে সজ্জিত দেখে প্রত্যেক প্রত্যক্ষকারী জানবে তারা অভিজাত ও সম্রান্ত পরিবারের পবিত্র মেয়ে, এমন ভবঘুরে অসতী ও পেশাদার মেয়ে নয়, কোন অসদাচারী মানুষ যার কাছে নিজের কামনা পূর্ণ করার আশা করতে পারে। “না কষ্ট দেয়া হয়” এর অর্থ হচ্ছে এই যে, তাদেরকে যেন উত্যক্ত ও জ্বালাতন না করা হয়। [দেখুন: তাবারী, কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৯) হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও বিশ্বাসীদের রমণীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখমন্ডলের) উপর টেনে দেয়।[1] এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।[2] আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[1] جَلاَبِيْبُ শব্দটি جِلْبَابٌ এর বহুবচন। তা এমন বড় চাদরকে বলা হয়, যাতে পুরো শরীর ঢেকে যায়। নিজের উপর চাদর টেনে নেওয়ার অর্থ চেহারার উপর এমন ভাবে ঘোমটা নেওয়া যাতে চেহারার অধিকাংশ ঢেকে যায় এবং চক্ষু নিচু করে চলাতে রাস্তাও দেখা যায়। ভারত, পাকিস্তান বা অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে যে বিভিন্ন ধরনের বোরকা প্রচলিত, নবী (সাঃ)-এর যুগে এই ধরনের বোরকা প্রচলিত ছিল না। নবী (সাঃ) ও সাহাবায়ে-কিরাম (রাঃ) ও তাবেয়ীগণের সময়কালে যে আড়ম্বরহীনতা ছিল, পরবর্তী কালের মুসলিম সমাজে সেই আড়ম্বরহীনতা অবশিষ্ট থাকল না। সে যুগের মহিলারা অতি সাদাসিধা লেবাস পরিধান করত। তাদের মাঝে সাজসজ্জা করে বাইরে নিজ সৌন্দর্য প্রকাশ করার মন-মানসিকতা ছিল না। যার ফলে একটি বড় চাদরেই পর্দার আসল উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু পরে উক্ত সাদাসিধা বেশভূষা আর থাকল না। বরং সৌন্দর্যময় (দৃষ্টি-আকর্ষী আড়ম্বরপূর্ণ বেশভূষা) তার স্থান দখল করে নিল এবং মহিলাদের মাঝে নানা ফ্যাশন ও মডেলের লেবাস ও অলংকার ব্যাপক হয়ে গেল। যার ফলে চাদর দ্বারা সৌন্দর্য গোপন করে পর্দা করার কাজ বড় মুশকিল হয়ে পড়ল এবং সেই মুশকিল আসান করার মানসে বিভিন্ন রকমের বোরকা ব্যাপকভাবে চালু হয়ে পড়ল।
যদিও তাতে অনেক সময় মহিলাদেরকে কষ্ট ভোগ করতে হয়; বিশেষ করে প্রচন্ড গ্রীষেমর সময়ে। কিন্তু এই সামান্য কষ্ট শরীয়তের দাবীর মোকাবেলায় কোন গুরুত্বই রাখে না। এর পরেও যে মহিলা বোরকার পরিবর্তে পর্দার জন্য বড় আকারের (সাদামাঠা) চাদর ব্যবহার করে পুরো শরীর ঢাকে এবং চেহারার উপর ঠিকভাবে ঘোমটা টেনে নেয় সে অবশ্য পর্দার আদেশ মেনে চলে। কারণ বোরকা এমন কোন জরুরী বস্তু নয়, যা পর্দার জন্য শরীয়ত জরুরী করেছে। কিন্তু বর্তমানে মহিলারা চাদরকে বেপর্দা হওয়ার একটা অসীলা বানিয়ে নিয়েছে। প্রথমে তারা বোরকার স্থানে চাদর ঢাকা নেওয়া আরম্ভ করে, পরে সেই চাদরও থাকে না, শুধু ওড়না থেকে যায়। আবার অনেক মহিলার জন্য ওড়না ব্যবহার করাও দুষ্কর মনে হয়। (অনেকে তা থাক করে বুকে-কাঁধে চাপিয়ে রাখে। অনেকে তা জড়িয়েও গলা ও তার নিচের অংশ বের করে রাখে।) এই অবস্থা দেখে বলতে হয় যে, বর্তমানে বোরকা ব্যবহার করাই সঠিক। কারণ যখন থেকে বোরকার স্থান চাদরে দখল করেছে, তখন থেকে বেপর্দা আরো ব্যাপক হয়ে গেছে। বরং মহিলারা অর্ধনগ্ন থাকাকে (সভ্যতা, আধুনিকতা ও প্রগতি ভেবে তা নিয়ে) গর্ব করতে আরম্ভ করেছে! إنا لله وإنا إليه راجعون যাই হোক, এই আয়াতে নবী (সাঃ)-এর স্ত্রী, কন্যা এবং সাধারণ মু’মিন নারীদেরকে গৃহ থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় পর্দার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
যাতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, পর্দার আদেশ উলামাদের নিজসব মনগড়া কিছু নয়; যেমন কিছু মানুষ বলে থাকে অথবা তার কোন গুরুত্বই দেয় না। বরং এটা আল্লাহর আদেশ যা কুরআন কারীমের স্পষ্ট উক্তি দ্বারা প্রমাণিত। তা থেকে বিমুখ থাকা, তা অস্বীকার করা এবং বেপর্দার উপর অটল থাকা কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে। উক্ত আয়াতে দ্বিতীয় বিষয় এই জানা যায় যে, নবী (সাঃ)-এর মাত্র একটি কন্যা ছিলেন না; যেমন শিয়াদের বিশ্বাস। বরং নবী (সাঃ)-এর একের অধিক কন্যা ছিলেন; যেমন কুরআনের স্পষ্ট উক্তি দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। আসলে তাঁর চার কন্যা ছিলেন; যেমন তারীখ, সীরাত (ইতিহাস) এবং হাদীস গ্রন্থ দ্বারা প্রমাণিত।
[2] এটা পর্দার হিকমত, যৌক্তিকতা ও উপকারিতার বর্ণনা যে, তার দ্বারা একজন ভদ্র ও লজ্জাশীলা মহিলা এবং নির্লজ্জ ও অসতী মহিলার পরিচয় লাভ হয়। পর্দা করা দেখে বোঝা যাবে যে, এটা ভাল ঘরের মহিলা; যাকে টিপ্পনি কাটার ক্ষমতা কারোর হবে না। আর তার বিপরীত বেপর্দা মহিলা লম্পটদের চোখের তৃপ্তিকর খোরাক এবং কামুক যুবকদের যৌনবাসনার কেন্দ্রস্থল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযদি মুনাফিকগণ এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা ও শহরে মিথ্যা সংবাদ প্রচারকারীরা বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে ক্ষমতাবান করে দেব। অতঃপর তারা সেখানে তোমার প্রতিবেশী হয়ে অল্প সময়ই থাকবে, আল-বায়ান
মুনাফিকরা আর যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা আর শহরে গুজব রটনাকারীরা যদি বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে তেজোদীপ্ত করব, অতঃপর তারা তোমার প্রতিবেশী হিসেবে এ শহরে থাকতে পারবে না। তবে অল্পদিনের জন্য থাকবে তাইসিরুল
মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা নগরে গুজব রটনা করে, তারা বিরত না হলে আমি নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্রবল করব; এরপর এই নগরীতে তোমার প্রতিবেশী রূপে তারা স্বল্প সময়ই থাকবে – মুজিবুর রহমান
If the hypocrites and those in whose hearts is disease and those who spread rumors in al-Madinah do not cease, We will surely incite you against them; then they will not remain your neighbors therein except for a little. Sahih International
৬০. মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে আর যারা নগরে গুজব রটনা করে, তারা বিরত না হলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আপনাকে প্ৰবল করব; এরপর এ নগরীতে আপনার প্রতিবেশীরূপে তারা স্বল্প সময়ই থাকবে—
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬০) মুনাফিক (কপটাচারি)গণ এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা নগরে গুজব রটনা করে[1] তারা বিরত না হলে আমি নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্রবল করব, এরপর তারা এ নগরীতে অল্প দিনই তোমার প্রতিবেশীরূপে থাকবে।
[1] মুসলমানদেরকে নিরুৎসাহ করার জন্য মুনাফিকরা বিভিন্ন গুজব রটাতো যে, অমুক এলাকায় মুসলমানরা পরাজিত হয়েছে বা বড় শক্র দল হামলা করার জন্য আসছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান