৩৩ সূরাঃ আল-আহযাব | Al-Ahzab | سورة الأحزاب - আয়াতঃ ৫৬
৩৩:৫৬ اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِكَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا ﴿۵۶﴾
ان الله و ملٓئكتهٗ یصلون علی النبی یایها الذین امنوا صلوا علیه و سلموا تسلیما ﴿۵۶﴾

নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দো‘আ করে*। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। আল-বায়ান

আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন, তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মু’মিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং যথাযথ শ্রদ্ধাভরে সালাম জানাও। তাইসিরুল

আল্লাহ নাবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর মালাইকারাও নাবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মু’মিনগণ! তোমরাও নাবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। মুজিবুর রহমান

Indeed, Allah confers blessing upon the Prophet, and His angels [ask Him to do so]. O you who have believed, ask [Allah to confer] blessing upon him and ask [Allah to grant him] peace. Sahih International

* ইমাম বুখারী আবুল ‘আলিয়া থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আল্লাহর সালাত’ বলতে বুঝানো হয়েছে ফেরেশতাদের কাছে নবীর প্রশংসা এবং ফেরেশতাদের সালাত হলো দো‘আ। আর ইমাম তিরমিযী সুফিয়ান সওরী থেকে বর্ণনা করেন যে, এখানে আল্লাহর সালাত বলতে রহমত এবং ফেরেশতাদের সালাত বলতে ইস্তেগফার বুঝানো হয়েছে (তাফসীর ইবন কাসীর)।

৫৬. নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোআ-ইসতেগফার করেন।(১) হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর উপর সালাত(২) পাঠ কর এবং তাকে যথাযথ ভাবে সালাম(৩) জানাও।

(১) আরবী ভাষায় সালাত শব্দের অর্থ রহমত, দো'আ প্রশংসা। অধিকাংশ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁর নবীর প্রতি যে সালাত সম্পৃক্ত করা হয়েছে এর অর্থ, আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন। তার কাজে বরকত দেন। তার নাম বুলন্দ করেন। তার প্রতি নিজের রহমতের বারি বর্ষণ করেন। ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তার উপর সালাত প্রেরণের অর্থ হচ্ছে, তারা তাকে চরমভাবে ভালোবাসেন এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে দো'আ করেন, আল্লাহ যেন তাকে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা দান করেন, তার শরীয়াতকে প্রসার ও বিস্তৃতি দান করেন এবং তাকে সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দেন। তার উপর রহমত নাযিল করেন। আর সাধারণ মুমিনদের তরফ থেকে সালাতের অর্থ দো'আ ও প্রশংসার সমষ্টি। এ আয়াতের তাফসীরে আবুল আলিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার সালাতের অর্থ আল্লাহ কর্তৃক ফিরিশতাদের সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মান ও প্রশংসা করা। [সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাফসীর]

আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান দুনিয়াতে এই যে, তিনি ফিরিশতাদের কাছে তার কথা আলোচনা করেন। তাছাড়া তার নামকে সমুন্নত করেন। তিনি পূর্ব থেকেই তার নাম সমুন্নত করেছেন। ফলে আযান, ইকামত ইত্যাদিতে আল্লাহর নামের সাথে সাথে তার নামও শামিল করে দিয়েছেন, তার দ্বীন পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, প্ৰবল করেছেন; তার শরীয়তের কাজ কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছেন এবং তার শরীয়তের হেফাযতের দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করেছেন। পক্ষান্তরে আখেরাতে তার সম্মান এই যে, তার স্থান সমগ্র সৃষ্টির ঊর্ধ্বে রেখেছেন এবং যে সময় কোন নবী ও ফেরেশতার সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না, তখনও তাকে সুপারিশের ক্ষমতা দিয়েছেন, যাকে “মাকামে-মাহমুদ” বলা হয়। মনে রাখা প্রয়োজন যে, রাসূলের উপর সালাত প্রেরণের ক্ষেত্রে সালাত শব্দ দ্বারা একই সময়ে একাধিক অর্থ (রহমত, দো'আ ও প্রশংসা) নেয়ার পরিবর্তে সালাত শব্দের এক অর্থ নেয়াই সঙ্গত অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান, প্রশংসা ও শুভেচ্ছা। [দেখুন: ইবনুল কাইয়্যেম, জালাউল আফহাম]

(২) আয়াতের আসল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করার আদেশ দান করা। কিন্তু তা এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, প্রথমে আল্লাহ স্বয়ং নিজের ও তার ফেরেশতাগণের দরূদ পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন। অতঃপর সাধারণ মুমিনগণকে দরূদ প্রেরণ করার আদেশ দিয়েছেন।

অধিকাংশ ইমাম এ বিষয়ে একমত যে, কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম উল্লেখ করলে অথবা শুনলে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। [দেখুন: কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর] কেননা, হাদীসে এরূপ ক্ষেত্রে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হওয়া বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “সেই ব্যক্তি অপমানিত হোক যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে সালাত পাঠ করে না।” [তিরমিযী: ৩৫৪৫] অন্য এক হাদীসে আছে- “সেই ব্যক্তি কৃপণ, যার কাছে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে দরূদ পাঠ করে না।” [তিরমিযী: ৩৫৪৬]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্যের জন্য ‘সালাত’ পেশ করা জায়েয কিনা, এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একটি দল, কাযী ঈয়াদের নাম এ দলের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, একে সাধারণভাবে জায়েয মনে করে। এদের যুক্তি হচ্ছে, কুরআনে আল্লাহ নিজেই অ-নবীদের ওপর একাধিক জায়গায় সালাতের কথা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। এভাবে নবী সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লামও একাধিকবার অ-নবীদের জন্য সালাত শব্দ সহকারে দোআ করেন। যেমন একজন সাহাবীর জন্য তিনি দো'আ করেন, হে আল্লাহ! আবু আওফার পরিজনদের ওপর সালাত পাঠাও। জাবের ইবনে আবদুল্লাহর স্বামীর ওপর সালাত পাঠান। যারা যাকাত নিয়ে আসতেন তাদের পক্ষে তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! ওদের উপর সালাত পাঠাও। সা'দ ইবনে উবাদার পক্ষে তিনি বলেন, হে আল্লাহ! সা'দ ইবন উবাদার পরিজনদের ওপর তোমার সালাত ও রহমত পাঠাও। আবার মুমিনের রূহ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর দিয়েছেন যে, ফেরেশতারা তার জন্য সালাত পাঠ করে।

কিন্তু মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশের মতে এমনটি করা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য তো সঠিক ছিল। কিন্তু আমাদের জন্য সঠিক নয়। তারা বলেন, সালাত ও সালামকে মুসলিমরা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। এটি বর্তমানে তাদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তাই নবীদের ছাড়া অন্যদের জন্য এগুলো ব্যবহার না করা উচিত। এ জন্যই উমর ইবনে আবদুল আযীয একবার নিজের একজন শাসনকর্তাকে লিখেছিলেন, “আমি শুনেছি কিছু বক্তা এ নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে শুরু করেছেন যে, তারা ‘আস-সালাতু আলান নাবী’-এর মতো নিজেদের পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারীদের জন্যও “সালাত” শব্দ ব্যবহার করেছেন। আমার এ পত্র পৌছে যাবার পরপরই তাদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখো এবং সালাতকে একমাত্র নবীদের জন্য নির্দিষ্ট করে অন্য মুসলিমদের জন্য দো'আ করেই ক্ষান্ত হবার নির্দেশ দাও।” [রূহুল মা'আনী]

(৩) এ হুকুমটি নাযিল হবার পর বহু সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালামের পদ্ধতি তো আপনি আমাদের বলে দিয়েছেন। (অর্থাৎ নামাযে “আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবীয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” এবং দেখা সাক্ষাত হলে “আসসালামুআলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ” বলা।) কিন্তু আপনার প্রতি সালাত পাঠাবার পদ্ধতিটা কি? [দেখুন, তাবারী, কুরতুবী, তাহরীর ওয়া তানওয়ীর] এর জবাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন লোককে বিভিন্ন সময় যেসব সালাত বা দরূদ শিখিয়েছেন তা বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন,


اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ


[বুখারীঃ ৩৩৬৯, ৬৩৬০, ৯৭৯]


اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ

[বুখারী ৩৩৭০]


اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ


[বুখারীঃ ৪৭৯৮]


اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

[মুসনাদে আহমাদঃ ৪/১১৯]

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়ার ফযীলত সংক্রান্ত অনেক হাদীস রয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে ফেরেশতারা তার প্রতি দরূদ পাঠ করে যতক্ষণ সে দরূদ পাঠ করতে থাকে।” [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪৪৫, ইবনে মাজাহ: ৯০৭] আরো বলেছেন, “যে আমার ওপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ পড়েন।” [মুসলিম: ৩৮৪] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার সাথে থাকার সবচেয়ে বেশী হকদার হবে সেই ব্যক্তি যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশী দরূদ পড়বে।” [তিরমিযী: ৪৮৪] আরো বলেছেন, আমার কথা যে ব্যক্তির সামনে আলোচনা করা হয় এবং সে আমার ওপর দরূদ পাঠ করে না সে কৃপণ। [তিরমিযী: ৩৫৪৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৬) নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর। (দরূদ ও সালাম পেশ কর।) [1]

[1] এই আয়াতে নবী (সাঃ)-এর ঐ সম্মান ও মর্যাদার কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যা আসমানে উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ফিরিশতাগণের নিকট বিদ্যমান। তা এই যে আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাগণের নিকট নবী (সাঃ)-এর সুনাম ও প্রশংসা করেন এবং তাঁর উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতাগণও নবী (সাঃ) এর উচ্চমর্যাদার জন্য দু’আ করেন। তার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীদেরকেও আদেশ করেছেন, যেন তারাও নবী (সাঃ)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করে। যাতে নবী (সাঃ)-এর প্রশংসায় ঊর্ধ্ব ও নিম্ন দুই বিশ্ব একত্রিত হয়ে যায়। হাদীসে বর্ণনা হয়েছে যে, সাহাবায়ে কিরামগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সালামের নিয়ম তো আমাদের জানা আছে (অর্থাৎ তাশাহহুদে ‘আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু’ পড়ি) কিন্তু আমরা দরূদ কিভাবে পড়ব? এর উত্তরে তিনি দরূদে ইবরাহিমী -- যা নামাযে পাঠ করা হয় তা বর্ণনা করলেন। (বুখারীঃ তাফসীর সূরা আহ্যাব)

এ ছাড়া হাদীসে দরূদের আরো অন্য শব্দ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলিও পাঠ করা চলবে। সংক্ষেপে (صَلَّى اللهُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ وَسَلَّم) পাঠ করা যাবে। পক্ষান্তরে (اَلصَّلَوةُ وَالسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ) পাঠ করা এই জন্য ঠিক নয় যে, এতে নবী (সাঃ)-কে সরাসরি সম্বোধন করা হয় এবং এই শব্দগুচ্ছ সাধারণ দরূদে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়নি। আর যেহেতু তাশাহহুদে ‘اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِيُّ’ শব্দ নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে সেহেতু (তাশাহহুদে তা পাঠ করাতে কোন দোষ নেই। তা ছাড়া (اَلصَّلَوةُ وَالسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ) পাঠকারী এই বাতিল বিশ্বাস নিয়ে পাঠ করে যে, নবী (সাঃ) তা সরাসরি শ্রবণ করেন। এই বাতিল বিশ্বাস কুরআন ও হাদীসের পরিপন্থী। সুতরাং এই আকীদা নিয়েও নিজেদের মনগড়া দরূদ পাঠ করা ঠিক নয়। অনুরূপ আযানের পূর্বে তা পাঠ করাও বিদআত, যাতে সওয়াব নয়; বরং গুনাহ হয়। হাদীসে দরূদের বড় গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। নামাযে তা পাঠ করা ওয়াজেব না সুন্নত? অধিকাংশ উলামাগণ বলেছেন সুন্নত এবং ইমাম শাফেয়ী ও আরো অনেকে তা ওয়াজেব বলেছেন। তবে একাধিক হাদীসে তার ওয়াজেব হওয়ারই সমর্থন পাওয়া যায়। অনুরূপ হাদীস দ্বারা এটাও বোঝা যায় যে, যেমন শেষ তাশাহহুদে দরূদ পড়া ওয়াজেব তেমনই প্রথম তাশাহহুদেও দরূদ পাঠ করা ওয়াজেব।

নিম্নে তার কতিপয় দলীল দেওয়া হলঃ-

প্রথম প্রমাণ এই যে, মুসনাদে আহমাদে সহীহ সানাদে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সালামের নিয়ম তো আমাদের জানা আছে (অর্থাৎ তাশাহহুদে ‘আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু’ পড়ি) কিন্তু আমরা নামাযে দরূদ কিভাবে পড়ব? এর উত্তরে তিনি দরূদে ইবরাহিমী শিক্ষা দিলেন (আল ফাতহুর রাববানী ৪/২০-২১)

মুসনাদে আহমাদ ছাড়াও উক্ত হাদীস সহীহ ইবনে হিববান, সুনানে কুবরা বায়হাকী, মুস্তাদরাক হাকেম এবং ইবনে খুযায়মাতে বর্ণিত হয়েছে। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, যেমন তাশাহহুদে সালাম পড়া হয় অনুরূপ উক্ত প্রশ্নও নামাযের ভিতরে দরূদ পাঠ সম্পর্কে ছিল, উত্তরে নবী (সাঃ) দরূদে ইবরাহিমী পড়ার আদেশ দিয়েছিলেন। যাতে বোঝা যাচ্ছে যে, সালামের সাথে দরূদও পড়া দরকার এবং তা পড়ার স্থান হল তাশাহহুদ। আর হাদীসে তা সাধারণভাবে বর্ণনা হয়েছে। প্রথম বা দ্বিতীয় তাশাহহুদের সাথে নির্দিষ্ট করা হয়নি। যার ফলে বলা যায় যে, প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় তাশাহহুদেই সালাম ও দরূদ পড়তে হবে।

যে বর্ণনাগুলিতে প্রথম তাশাহহুদ দরূদ ছাড়া উল্লেখ হয়েছে সেগুলিকে সূরা আহযাবের আয়াত ‘صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا’ অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের ধরা হবে। কিন্তু উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর অর্থাৎ পঞ্চম হিজরীর পর যখন নবী (সাঃ) সাহাবায়ে কিরামগণের প্রশ্নের উত্তরে দরূদের শব্দও বর্ণনা করে দিলেন, তখন নামাযে সালামের সাথে দরূদ পড়াও জরুরী হয়ে গেল, চাহে তা প্রথম তাশাহহুদ হোক বা দ্বিতীয়।

আরো একটি প্রমাণ হল, আয়েশা (রাঃ)  বর্ণনা করেন যে, ‘‘নবী (সাঃ) কখনো কখনো রাত্রে নয় রাকআত নামায পড়তেন, আট রাকআতে যখন তাশাহহুদে বসতেন, তখন তাতে তাঁর প্রভুর নিকট দু’আ করতেন এবং তাঁর পয়গম্বরের উপর দরূদ পড়তেন তারপর সালাম না ফিরে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং নয় রাকআত পূর্ণ করে পুনরায় তাশাহহুদে বসতেন, তাঁর প্রভুর নিকট দু’আ করতেন এবং তাঁর পয়গম্বরের উপর দরূদ পড়তেন এবং পুনরায় দু’আ করতেন, তারপর সালাম ফিরতেন। (বায়হাকী ২/৭০৪, নাসাঈ ১/২০২, বিস্তারিত দেখুনঃ আল্লামা আলবানীর সিফাতু সালাতিন্নাবী ১৪৫ পৃষ্ঠা) উক্ত বর্ণনায় পরিষ্কার উল্লেখ আছে যে, নবী (সাঃ) তাঁর রাত্রের নামাযে প্রথম ও শেষ উভয় তাশাহহুদে দরূদ পড়েছেন। এটা যদিও নফল নামাযের কথা ছিল; তবুও নবী (সাঃ)-এর উক্ত আমল দ্বারা উল্লিখিত ব্যাপক দলীলসমূহের সমর্থন হয়। যার ফলে তা শুধু নফল নামাযের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান