আর অবশ্যই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদের আকৃতি দিয়েছি। তারপর ফেরেশতাদেরকে বলেছি, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। অতঃপর তারা সিজদা করেছে, ইবলীস ছাড়া। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আল-বায়ান
আমি তো তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তোমাদের আকৃতি দিয়েছি, অতঃপর ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলাম আদামকে সাজদাহ করার জন্য। তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল না। তাইসিরুল
আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে রূপ দান করেছি, তারপর আমি মালাইকাদেরকে/ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি - তোমরা আদমকে সাজদাহ কর। তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সাজদাহ করল, যারা সাজদাহ করল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হলনা। মুজিবুর রহমান
And We have certainly created you, [O Mankind], and given you [human] form. Then We said to the angels, "Prostrate to Adam"; so they prostrated, except for Iblees. He was not of those who prostrated. Sahih International
১১. আর অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তারপর আমরা তোমাদের আকৃতি প্রদান করেছি(১), তারপর আমরা ফিরিশতাদেরকে বললাম, আদমকে সিজদা কর। অতঃপর ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল না।
(১) এ আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস বলেন, এখানে সৃষ্টি করার অর্থ প্রথমে আদমকে সৃষ্টি করা। আর আকৃতি প্রদানের কথা বলে তার সন্তানদেরকে বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] মুজাহিদ বলেন, এখানে সৃষ্টি করার কথা বলে আদম এবং আকৃতি প্রদানের কথা বলে, আদমের সন্তানদেরকে আদমের পৃষ্ঠে আকৃতি প্রদানের কথা বোঝানো হয়েছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে জাকারিয়া(১১) আমিই তোমাদেরকে[1] সৃষ্টি করি, অতঃপর তোমাদেরকে (মানবাকারে) রূপদান করি এবং তারপর ফিরিশতাদেরকে বলি, ‘তোমরা আদমকে সিজদাহ কর।’ তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদাহ করল। সে সিজদাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল না।
[1] خَلَقْنَاكُمْ তে সর্বনাম বহুবচন এলেও, তার দ্বারা বুঝানো হয়েছে আবুল বাশার আদম (আঃ)-কে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, সিজদা করছ না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে’। আল-বায়ান
(আল্লাহ) বললেন, ‘আমি নির্দেশ দেয়ার পরেও কিসে তোকে সাজদাহ থেকে নিবৃত্ত রাখল?’ সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম, আমাকে সৃষ্টি করেছ আগুন থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছ কাদা থেকে।’ তাইসিরুল
তিনি (আল্লাহ) তাকে (ইবলীসকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি যখন তোকে সাজদাহ (আদমকে) করতে আদেশ করলাম তখন কোন বস্তু তোকে নত শির হতে নিবৃত্ত করল? সে উত্তরে বললঃ আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি দ্বারা। মুজিবুর রহমান
[Allah] said, "What prevented you from prostrating when I commanded you?" [Satan] said, "I am better than him. You created me from fire and created him from clay." Sahih International
১২. তিনি বললেন, আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কি তোমাকে নিবৃত্ত করল যে, তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে শ্ৰেষ্ঠ; আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।(১)
(১) এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ইবলীসকে আল্লাহ্ তা'আলা আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর যদি ইবলীসকে সমস্ত জিন জাতির পিতা বলা হয়, তখন তো এ ব্যাপারে আর কোন কথাই থাকে না। কারণ অন্যান্য আয়াতেও জিন জাতিকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “আর এর আগে আমরা সৃষ্টি করেছি জিনদেরকে অতি উষ্ণ নিধুম আগুন থেকে।” [সূরা আল-হিজর: ২৭] তাছাড়া অন্যত্র আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, জিন জাতিকে ‘মারেজ’ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর ‘মারেজ’ হচ্ছে, নিধুম অগ্নিশিখা। আল্লাহ বলেন, “এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন নিধুম আগুনের শিখা হতে।” [সূরা আর-রহমানঃ ১৫] [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) তিনি বললেন, ‘আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম, তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল যে, তুমি সিজদাহ করলে না?’[1] সে বলল, ‘আমি ওর (আদম) চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছ এবং ওকে সৃষ্টি করেছ কাদামাটি দ্বারা।’ [2]
[1] أَلاَّ تَسْجُدَ তে لا অতিরিক্ত। অর্থাৎ, أَنْ تَسْجُدَ (সিজদা করতে তোমাকে বাধা কে দিল?) অথবা কিছু শব্দ ঊহ্য আছে। অর্থাৎ, ‘‘কোন্ জিনিস তোমাকে বাধ্য করল সিজদা না করতে?’’ (ইবনে কাসীর, ফাতহুল ক্বাদীর) শয়তান ফিরিশতাদের জাতিভুক্ত ছিল না। বরং স্বয়ং কুরআনের বিবৃতি অনুযায়ী সে ছিল জ্বিন জাতির একজন। (সূরা কাহা্ফ ৫০) তবে আসমানে ফিরিশতাদের সাথে থাকার কারণে সেও আল্লাহর সিজদা করতে বলার সেই আদেশের আওতাভুক্ত ছিল, যা তিনি ফিরিশতাদেরকে করেছিলেন। আর এই কারণেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তিরস্কারও করা হয়েছে। যদি সে এই আদেশে শামিল না থাকত, তাহলে না তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত, আর না সে (আল্লাহর দরবার থেকে) বিতাড়িত হত।
[2] শয়তানের এই ওজর আরো অপরাধমূলক। যেমন, বলা হয় যে, পাপের জন্য ওজর পেশ করা আরো বড় পাপ। প্রথমতঃ তার এই ধারণাই ভুল যে, অধিক শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারীকে তার থেকে কম শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ব্যক্তির সম্মান প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে না। কারণ, প্রকৃত জিনিস হল আল্লাহর নির্দেশ পালন। তাঁর নির্দেশের সামনে কে শ্রেষ্ঠ আর কে শ্রেষ্ঠ নয় এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করাই হল তাঁর অবাধ্যতা। দ্বিতীয়তঃ সে উত্তম হওয়ার দলীল এটাই দিল যে, আমি আগুন থেকে সৃষ্ট, আর সে মাটি থেকে। কিন্তু সে এই মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি ভ্রূক্ষেপও করল না যে, তাঁকে আল্লাহ তাঁর নিজ হাত দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং নিজের পক্ষ থেকে তাঁর মধ্যে আত্মা দান করেছেন। দুনিয়ার কোন জিনিস কি এই সম্মানের মোকাবেলা করতে পারে? তৃতীয়তঃ স্পষ্ট উক্তির মোকাবেলায় সে কিয়াস (অনুমিতি) করল, যা কোন আল্লাহভীরু বান্দার কাজ হতে পারে না। এ ছাড়াও তার কিয়াস (অনুমিতি)ও বাতিল। আগুন মাটি থেকে কিভাবে উত্তম? আগুনের মধ্যে তেজি, উত্তাপ এবং দহন ক্ষমতা ছাড়া আর কি আছে? পক্ষান্তরে মাটির মধ্যে আছে স্থিরতা, দৃঢ়তা। এর মধ্যে আছে উদ্ভিদ-বৃদ্ধি, উৎপাদন এবং বস্তু পরিশুদ্ধ করণের যোগ্যতা। আর এ গুণগুলো আগুনের চেয়ে অবশ্যই উত্তম এবং বেশী উপকারীও। এই আয়াত থেকে জানা গেল যে, শয়তান সৃষ্টি হয়েছে আগুন থেকে। যেমন, হাদীসেও এসেছে যে, ‘‘ফেরেশতাকুল নূর থেকে, ইবলীস অগ্নিশিখা থেকে এবং আদম (আঃ)-কে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ (সহীহ মুসলিম, যুহ্দ অধ্যায়)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি বললেন, ‘সুতরাং তুমি এখান থেকে নেমে যাও। তোমার এ অধিকার নেই যে, এখানে তুমি অহঙ্কার করবে। সুতরাং বের হও। নিশ্চয় তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত’। আল-বায়ান
তিনি বললেন, ‘নেমে যা এখান থেকে, এর ভিতরে থেকে অহঙ্কার করবে তা হতে পারে না, অতএব বেরিয়ে যা, অধমদের মাঝে তোর স্থান।’ তাইসিরুল
আল্লাহ বললেনঃ এই স্থান থেকে নেমে যা, এখানে থেকে অহংকার করা যেতে পারেনা; সুতরাং বের হয়ে যা, নিশ্চয়ই তুই ইতরদের অন্তর্ভুক্ত। মুজিবুর রহমান
[Allah] said, "Descend from Paradise, for it is not for you to be arrogant therein. So get out; indeed, you are of the debased. Sahih International
১৩. তিনি বললেন, তাহলে তুমি এখান থেকে নেমে যাও, এখানে থেকে অহংকার করবে, এটা হতে পারে না। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও, নিশ্চয় তুমি অধমদের(১) অন্তর্ভুক্ত।
(১) ‘সাগেরীন’ শব্দটি বহুবচন। এক বচন হলো ‘সাগের’। অর্থ লাঞ্ছনা ও অবমাননার মধ্যে নিজেকে নিয়ে রাখা। শব্দটি মূল হচ্ছে, ‘সাগার’ যার অর্থ, সবচেয়ে কঠিন লাঞ্ছনা ও অবমাননার শিকার হওয়া। [আদওয়াউল বায়ান] অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেই লাঞ্ছনা, অবমাননা ও নিকৃষ্টতর অবস্থা অবলম্বন করে। সুতরাং আল্লাহর বাণীর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর বান্দা ও সৃষ্টি হয়েও তোমার অহংকারে মত্ত হওয়া এবং তুমি নিজের মর্যাদা ও শ্রেষ্টত্বের যে ধারণা নিজেই তৈরী করে নিয়েছ তার দৃষ্টিতে তোমার রবের হুকুম তোমার জন্য অবমাননাকর মনে হওয়া ও সে জন্য তা অমান্য করার অর্থ নিজেই নিজেকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করতে দেয়া।
শ্রেষ্ঠত্বের মিথ্যা অহমিকা, মর্যাদার ভিত্তিহীন দাবী এবং কোন জন্মগত স্বতঃসিদ্ধ অধিকার ছাড়াই নিজেকে অযথা শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন মনে করা তোমাকে বড়, শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাশীল করতে পারে না। বরং এর ফলে তুমি মিথুক, লাঞ্ছিত ও অপমানিতই হবে এবং তোমার এ লাঞ্ছনা ও অবমাননার কারণ হবে তুমি নিজেই। কুরআনের অন্যত্র মিথ্যা অহঙ্কারের পরিণাম বর্ণিত হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে যে, অহঙ্কারী আল্লাহর আয়াতসমূহ ও তার নিদর্শনাবলী বুঝতে অক্ষম হয়ে যায়। সে তা থেকে হিদায়াত পায় না।
আল্লাহ বলেন, “যমীনে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার করে বেড়ায় আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব। আর তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না এবং তারা সৎপথ দেখলেও সেটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভুল পথ দেখলে সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে।” [সূরা আল-আরাফ: ১৪৬] আবার কোথাও বলা হয়েছে যে, অহঙ্কারীর ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন, “কাজেই তোমরা দরজাগুলো দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, তাতে স্থায়ী হয়ে। অতঃপর অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্টা।” [সূরা আন-নাহ্ল: ২৯]
আরও বলেন, “অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?” [সূরা আয-যুমার: ৬০] আরও বলেন, “বলা হবে, জাহান্নামের দরজাসমূহে প্রবেশ কর তাতে স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য। অতএব অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট।” [সূরা আয-যুমার: ৭২] “নিশ্চয় যারা অহংকারবশে আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।” [সূরা গাফির: ৬০] আবার বলা হয়েছে যে, অহঙ্কারীদের ঈমান নসীব হয় না। আল্লাহ বলেন, “শুধু তারাই আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, যারা সেটার দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, আর তারা অহংকার করে না।” [সূরা আস-সাজদাহ: ১৫]
আরও বলেন, “তাদেরকে -অপরাধীদেরকে- ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই’ বলা হলে তারা অহংকার করত।” [সূরা আস-সাফফাত: ৩৫] আবার কোথাও এসেছে যে, আল্লাহ অহঙ্কারীকে ভালবাসেন না। “নিশ্চয় তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।” [সূরা আন-নাহ্ল: ২৩] [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩) তিনি বললেন, ‘এ স্থান হতে নেমে যাও।[1] এখানে থেকে অহংকার করবে, এ হতে পারে না। সুতরাং বের হয়ে যাও। তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।’ [2]
[1] مِنْهَا সর্বনামের পূর্বপদ (এ বা এখান থেকে) অধিকাংশ মুফাসসিরগণ জান্নাতকে গণ্য করেছেন। আবার কেউ কেউ সেই সম্মান ও মর্যাদাকে গণ্য করেছেন, যা ঊর্ধ্ব জগতে ইবলীস প্রাপ্ত হয়েছিল।
[2] আল্লাহর নির্দেশের মোকাবেলায় যে অহংকার প্রদর্শন করে, সে ইজ্জত-সম্মান পাওয়ার অধিকারী হয় না, বরং সে অপমান ও লাঞ্ছনার উপযুক্ত হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে বলল, ‘সেদিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন, যেদিন তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে’। আল-বায়ান
সে বলল, ‘তাহলে যেদিন সবাই (দুনিয়া ছেড়ে) উঠবে সেদিন পর্যন্ত আমাকে সময় দাও।’ তাইসিরুল
সে বললঃ আমাকে পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন! মুজিবুর রহমান
[Satan] said, "Reprieve me until the Day they are resurrected." Sahih International
১৪. সে বলল, আমাকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দিন, যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪) সে বলল, ‘পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’। আল-বায়ান
তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তুই নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত তাইসিরুল
আল্লাহ বললেনঃ তোকে অবকাশ দেয়া হল। মুজিবুর রহমান
[Allah] said, "Indeed, you are of those reprieved." Sahih International
১৫. তিনি বললেন, নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।(১)
(১) এ আয়াতে ইবলীসকে দেয়া সময় সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। শুধু এটুকু বলা হয়েছে যে, তোমাকে অবকাশ দেয়া হল। কিন্তু অন্যান্য সূরায় এ অবকাশ নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, (إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ) [সূরা আল-হিজরঃ ৩৮, সোয়াদঃ ৮১] এ থেকে বাহ্যতঃ বোঝা যায় যে, ইবলীসের প্রার্থিত অবকাশ কেয়ামত পর্যন্ত দেয়া হয়নি, বরং একটি বিশেষ মেয়াদ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ আলেমদের নিকট তার অবকাশের মেয়াদ হচ্ছে শিঙ্গায় প্রথম ফুঁক দেয়া পর্যন্ত। [আদওয়াউল বায়ান] সুদ্দি বলেন, তাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দেয়া হয়নি। কারণ, যখন শিঙ্গায় প্রথম ফুঁক দেয়া হবে, তখন (فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ) বা আসমান ও যমীনের সবাই মারা পড়বে, আর তখন ইবলীসও মারা যাবে। [তাবারী]
আলোচ্য ইবলিসের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত আয়াতসমূহ থেকে বুঝাযায় যে, কাফেরদের দোআ কবুল করা হয়। অথচ অন্যত্র আল্লাহর বাণী (وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ) “কাফেরদের দোআ তো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবেই।” [সূরা আর-রাদঃ ১৪] এ আয়াত থেকে বাহ্যতঃ বুঝা যায় যে, কাফেরের দোআ কবুল হয় না। এর উত্তর এই যে, দুনিয়াতে কাফেরের দোআও কবুল হতে পারে। ফলে ইবলীসের মত মহা কাফেরের দোআও কবুল হয়ে গেছে। কিন্তু আখেরাতে কাফেরের দোআ কবুল হবে না। উল্লেখিত আয়াত আখেরাতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। দুনিয়ার সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। আর কাফেরের কোন কোন দোআ কবুল হয় বলে হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা মাযলুমের দোআ থেকে বেঁচে থাক, যদিও সে কাফের হয়; কেননা তার দোআ কবুলের ব্যাপারে কোন পর্দা নেই। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৫৩; দিয়া আল-মাকদেসী, হাদীস নং ২৭৪৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) তিনি বললেন, ‘যাদের অবকাশ দেওয়া হয়েছে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলে।’ [1]
[1] মহান আল্লাহ তাকে তার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী অবকাশ দিলেন, যা তাঁর সেই কৌশল এবং ইচ্ছা-ইরাদার অনুবর্তী ছিল, যার সম্পূর্ণ জ্ঞান তাঁরই নিকট আছে। তবে এর একটি হিকমত এটাও হতে পারে যে, এর মাধ্যমে তিনি তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করতে পারবেন যে, কে রহমানের বান্দা, আর কে শয়তানের গোলাম?
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে বলল, ‘আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব। আল-বায়ান
সে বলল, যেহেতু তার কারণেই (পথ থেকে) আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছ, কাজেই আমি অবশ্যই তোমার সরল পথে মানুষদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকব। তাইসিরুল
(ইবলীস) বললঃ আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন এ কারণে আমিও শপথ করে বলছি - আমি আপনার সরল পথে অবশ্যই ওৎ পেতে বসে থাকব। মুজিবুর রহমান
[Satan] said, "Because You have put me in error, I will surely sit in wait for them on Your straight path. Sahih International
১৬. সে বলল, আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, সে কারণে অবশ্যই অবশ্যই আমি আপনার সরল পথে মানুষের জন্য বসে থাকব।(১)
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান আদম সন্তানের যাবতীয় পথে বসে পড়ে। তার ইসলামের পথে বসে পড়ে তাকে বলেঃ তুমি কি ইসলাম গ্রহণ করবে এবং আপন দ্বীন ও বাপ-দাদার দ্বীন ত্যাগ করবে? তারপর সে নাফরমানী করে ইসলাম গ্রহণ করে। তারপর শয়তান তার হিজরতের পথে বসে পড়ে তাকে বলতে থাকেঃ তুমি হিজরত করে তোমার ভূমি ও আকাশ ত্যাগ করবে? লম্বা পথে মুহাজিরের উদাহরণ তো হলো ঘোড়ার মত। কিন্তু সে তার নাফরমানী করে হিজরত করে। তারপর শয়তান তার জেহাদের পথে বসে বলতে থাকেঃ তুমি কি জিহাদ করবে এতে নিজের জান ও মালের ক্ষতির আশংকা, যুদ্ধ করবে এতে তুমি মারা পড়বে, তারপর তোমার স্ত্রীর বিয়ে হয়ে যাবে, সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাবে।
তাতেও সে শয়তানের নাফরমানী করে জিহাদ করে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি এতটুকু করতে পারবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো মহান আল্লাহর জন্য যথাযথ হয়ে পড়ে, যদি কাউকে হত্যা করা হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর উপর যথাযথ হয়ে পড়ে। আর যদি ডুবেও যায় তবুও আল্লাহর জন্য যথাযথ হয়ে পড়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো অথবা যদি তার সফর করার জন্তু থেকে পড়ে সে মারা যায় তবুও আল্লাহর উপর যথাযথ হয়ে পড়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো [মুসনাদে আহমাদঃ ৩/৪৮৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬) সে বলল, ‘যাদের কারণে তুমি আমাকে ভ্রষ্ট করলে[1] আমিও তাদের জন্য তোমার সরল পথে নিশ্চয় ওঁৎ পেতে থাকব;
[1] ভ্রষ্ট তো সে আল্লাহর সৃষ্টিগত ইচ্ছার ভিত্তিতে হয়েছিল। কিন্তু মুশরিকদের মত সেও তাঁর প্রতি এই দোষ আরোপ করল। যেমন, মুশরিকরা বলত যে, যদি আল্লাহ চাইতেন, তাহলে আমরা শিরক করতাম না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান‘তারপর অবশ্যই তাদের নিকট উপস্থিত হব, তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে এবং তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’। আল-বায়ান
তারপর আমি তাদের সামনে দিয়ে, তাদের পেছন দিয়ে, তাদের ডান দিয়ে, তাদের বাম দিয়ে, তাদের কাছে অবশ্যই আসব, তুমি তাদের অধিকাংশকেই শোকর আদায়কারী পাবে না। তাইসিরুল
অতঃপর আমি তাদের সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে তাদের কাছে আসব, আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেননা। মুজিবুর রহমান
Then I will come to them from before them and from behind them and on their right and on their left, and You will not find most of them grateful [to You]." Sahih International
১৭. তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে আসব তাদের সামনে থেকে ও তাদের পিছন থেকে, তাদের ডানদিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে(১) এবং আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।(২)
(১) মানুষের উপর শয়তানের হামলা শুধু চতুর্দিকেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং আরো ব্যাপক। আলোচ্য আয়াতে ইবলীস আদম সন্তানদের উপর আক্রমণ করার জন্য চারটি দিক বর্ণনা করেছে- অগ্র, পশ্চাৎ, ডান ও বাম। এখানে প্রকৃতপক্ষে কোন সীমাবদ্ধতা উদ্দেশ্য নয়; বরং এর অর্থ হল প্রত্যেক দিক ও প্রত্যেক কোণ থেকে। এভাবে হাদীসের এ বর্ণনাও এর পরিপন্থী নয় যে, শয়তান মানবদেহে প্রবেশ করে রক্তবাহী রগের মাধ্যমে। তারপর সমগ্র দেহে হস্তক্ষেপ করে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে সামনে থেকে আসার অর্থ, দুনিয়ায়। পশ্চাৎ দিক থেকে আসার অর্থ আখেরাতে। ডানদিক থেকে আসার অর্থ, নেককাজের মাধ্যমে আসা। আর বামদিক থেকে আসার অর্থ, গুনাহের দিক থেকে আসা। [তাবারী; আত-তাফসীরুস সহীহ]
কাতাদাহ বলেন, ইবলীস মানুষের সামনে থেকে এসে বলে, পুনরুত্থান নেই, জান্নাত নেই, জাহান্নাম নেই। মানুষের পিছন দিক থেকে দুনিয়াকে তার কাছে চাকচিক্যময় করে তোলে এবং দুনিয়ার প্রতি লোভ লাগিয়ে সেদিক আহবান করতে থাকে। তার ডানদিক থেকে আসার অর্থ নেক কাজ করার সময় সেটা করতে দেরী করায়, আর বাম দিক থেকে আসার অর্থ, গোনাহ ও অপরাধমূলক কাজকে সুশোভিত করে দেয়, সেদিকে আহবান করে, সেটার প্রতি নির্দেশ দেয়। হে বনী আদম! শয়তান তোমার সবদিক থেকেই আসছে, তবে সে তোমার উপর দিক থেকে আসে না, কারণ, সে তোমার ও আল্লাহর রহমতের মধ্যে বাধা হতে পারে না। [তাবারী]
(২) শয়তান এটা বলেছিল তার ধারণা অনুসারে। সে মনে করেছিল যে, তারা তার আহবানে সাড়া দিবে, তার অনুসরণ করবে। যাতে সে তাদেরকে ধ্বংস করতে পারে। আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র শয়তানের এ ধারণার কথা স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আর অবশ্যই তাদের সম্বন্ধে ইবলীস তার ধারণা সত্য প্রমাণ করল, ফলে তাদের মধ্যে একটি মুমিন দল ছাড়া সবাই তার অনুসরণ করল।” [সূরা সাবা: ২০] [আদওয়াউল বায়ান] ইবন আব্বাস বলেন, এখানে মানুষদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ না থাকার কথা বলে, তাওহীদের কথা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আপনি তাদেরকে তাওহীদবাদী পাবেন না। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭) অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক হতে তাদের নিকট আসব[1] এবং তুমি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না।’ [2]
[1] অর্থ হল, প্রত্যেক ভালো ও মন্দের পথে আমি বসে থাকব। ভালো থেকে তাদেরকে বাধা দেব এবং মন্দকে তাদের নজরে সুন্দরভাবে তুলে ধরে তা অবলম্বন করার উপর তাদেরকে প্রলুব্ধ করব।
[2] شَاكِرِيْنَ এর দ্বিতীয় অর্থ مُوْحِّدِيْنَ করা হয়েছে। অর্থাৎ, অধিকাংশ লোককে আমি শির্কে পতিত করব। শয়তান তার এই ধারণাকে বাস্তবে সত্য করেই দেখাল। মহান আল্লাহ বলেন, {وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ إِبْلِيسُ ظَنَّهُ فَاتَّبَعُوهُ إِلَّا فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ} অর্থাৎ, তাদের উপর ইবলীস তার অনুমান সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করল। ফলে তাদের মধ্যে মু’মিনদের একটি দল ব্যতীত সকলেই তার অনুসরণ করল। (সূরা সাবা’ ২০) এই জন্য কুরআন ও হাদীসে শয়তান থেকে পানাহ চাওয়ার এবং তার চক্রান্ত থেকে বেঁচে থাকার প্রতি বড়ই তাকীদ করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি বললেন, ‘তুমি এখান থেকে বের হও লাঞ্ছিত বিতাড়িত অবস্থায়। অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে যে তোমার অনুসরণ করবে, আমি তোমাদের সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম ভরে দেবই’। আল-বায়ান
তিনি বললেন, ধিকৃত আর বিতাড়িত হয়ে এখান থেকে বেরিয়ে যা, তাদের মধ্যে যারা তোকে মান্য করবে তোমাদের সবাইকে দিয়ে আমি অবশ্যই জাহান্নাম ভর্তি করব। তাইসিরুল
তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তুই এখান থেকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায় বের হয়ে যা, তাদের (বানী আদমের) মধ্যে যারা তোর অনুসরণ করবে, নিশ্চয়ই আমি তোদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব। মুজিবুর রহমান
[Allah] said, "Get out of Paradise, reproached and expelled. Whoever follows you among them - I will surely fill Hell with you, all together." Sahih International
১৮. তিনি বললেন, এখান থেকে বের হয়ে যাও ধিকৃত, বিতাড়িত অবস্থায়। মানুষের মধ্যে যারাই তোমার অনুসরণ করবে, অবশ্যই অবশ্যই আমি তোমাদের সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করব।(১)
(১) আয়াতে শয়তান ও শয়তানের অনুসারীদের দিয়ে জাহান্নাম ভর্তি করার কথা বলা হয়েছে। এ কথা অন্য আয়াতেও এসেছে, যেমন, “তিনি বললেন, তবে এটাই সত্য, আর আমি সত্যই বলি— অবশ্যই তোমার দ্বারা ও তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের সবার দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব।” [সূরা ছোয়াদ ৮৪–৮৫] আরও এসেছে, “আল্লাহ বললেন, যাও, অতঃপর তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয় জাহান্নামই হবে তোমাদের সবার প্রতিদান, পূর্ণ প্রতিদান হিসেবে। আর তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পার পদস্থলিত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদেরকে আক্রমণ কর এবং তাদের ধনে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যাও, আর তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। আর শয়তান ছলনা ছাড়া তাদেরকে কোন প্রতিশ্রুতিই দেয় না।” [সূরা আল-ইসরা ৬৩–৬৪] আরও বলেন, “তারপর তাদেরকে এবং পথভ্রষ্টকারীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে অধোমুখী করে এবং ইবলীসের বাহিনীর সকলকেও।” [সূরা আশ-শু'আরা: ৯৪–৯৫] অনুরূপ অন্যান্য আয়াত। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৮) তিনি বললেন, ‘এ স্থান হতে নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায় বের হয়ে যাও, মানুষের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবই।’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান‘আর হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বাস কর। অতঃপর তোমরা আহার কর যেখান থেকে চাও এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না। তাহলে তোমরা উভয়ে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। আল-বায়ান
‘আর, হে আদাম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বাস করতে থাক, দু’জনে যা পছন্দ হয় খাও আর এই গাছের কাছে যেও না, তাহলে যালিমদের দলে শামিল হয়ে যাবে।’ তাইসিরুল
আর হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং এখানে তোমাদের মনে যা চায় তাই খাও, কিন্তু এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়োনা, তাহলে অত্যাচারীদের মধ্যে গণ্য হবে। মুজিবুর রহমান
And "O Adam, dwell, you and your wife, in Paradise and eat from wherever you will but do not approach this tree, lest you be among the wrongdoers." Sahih International
১৯. আর হে আদম! আপনি ও আপনার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করুন, অতঃপর যেথা হতে ইচ্ছা খান, কিন্তু এ গাছের ধারে-কাছেও যাবেন না, তাহলে আপনারা যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৯) আর বললাম, ‘হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর এবং যথা ও যেথা ইচ্ছা আহার কর। কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না,[1] হলে তোমরা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’
[1] অর্থাৎ, কেবল এই একটি গাছ বাদ দিয়ে যেখান থেকে এবং যেভাবে চাও খাও। একটি গাছের ফল খাওয়ার প্রতিবন্ধকতা পরীক্ষা স্বরূপ আরোপ করেছিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর শয়তান তাদেরকে প্ররোচনা দিল, যাতে সে তাদের জন্য প্রকাশ করে দেয় তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের থেকে গোপন করা হয়েছিল এবং সে বলল, ‘তোমাদের রব তোমাদেরকে কেবল এ জন্য এ গাছ থেকে নিষেধ করেছেন যে, (খেলে) তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে অথবা তোমরা চিরস্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’। আল-বায়ান
অতঃপর শয়ত্বান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ করার জন্য যা তাদের পরস্পরের নিকট গোপন রাখা হয়েছিল; আর বলল, ‘তোমাদেরকে তোমাদের রবব এ গাছের নিকটবর্তী হতে যে নিষেধ করেছেন তার কারণ এছাড়া আর কিছুই নয় যে (নিকটবর্তী হলে) তোমরা দু’জন ফেরেশতা হয়ে যাবে কিংবা (জান্নাতে) স্থায়ী হয়ে যাবে।’ তাইসিরুল
অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান যা পরস্পরের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল তা প্রকাশ করার জন্য শাইতান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল, সে বললঃ তোমাদের রাব্ব এই বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন, এর কারণ এ ছাড়া কিছুই নয় যে, তোমরা যেন মালাইকা/ফেরেশতা হয়ে না যাও, অথবা এখানে (এই জান্নাতে) চিরন্তন জীবন লাভ করতে না পার। মুজিবুর রহমান
But Satan whispered to them to make apparent to them that which was concealed from them of their private parts. He said, "Your Lord did not forbid you this tree except that you become angels or become of the immortal." Sahih International
২০. তারপর তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল তা তাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল এবং বলল, পাছে তোমরা উভয়ে ফিরিশতা হয়ে যাও কিংবা তোমরা স্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হও, এ জন্যেই তোমাদের রব এ গাছ থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২০) অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান, যা গোপন রাখা হয়েছিল তা প্রকাশ করার জন্য[1] শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিল[2] এবং বলল, ‘পাছে তোমরা উভয়ে ফিরিশতা হয়ে যাও কিংবা তোমরা (জান্নাতে) চিরস্থায়ী হও, এ জন্যই তোমাদের প্রতিপালক এ বৃক্ষ সম্বন্ধে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন।’
[1] আদম ও হাওয়া (আলাইহিমাস সালাম)-কে এই ভ্রষ্ট করার পিছনে শয়তানের উদ্দেশ্য ছিল, তাদেরকে সেই জান্নাতী পোশাক থেকে বঞ্চিত করে লজ্জিত করা, যা তাদেরকে জান্নাতে পরার জন্য দেওয়া হয়েছিল। سَوْآتٌ হল سَوْءَةٌ (লজ্জাস্থান)এর বহুবচন। লজ্জাস্থানকে سَوْءَةٌ বলে এই জন্য আখ্যায়িত করা হয়েছে যে, তা প্রকাশ হয়ে পড়াকে খারাপ মনে করা হয়।
[2] وَسْوَسَةٌ এবং وِسْوَاسٌ হল, زَلْزَلَةٌ এবং زِلْزَالٌ এর ওজনে। অস্পষ্ট শব্দ এবং মনের কথাকে অসঅসা বলে। শয়তান অন্তরে যে নোংরা কথা ভরে (কুমন্ত্রণা দেয়) তাকেই ‘অসঅসা’ বলা হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান