লগইন করুন
৭ সূরাঃ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف - আয়াত নং - ১৭ - মাক্কী
‘তারপর অবশ্যই তাদের নিকট উপস্থিত হব, তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে এবং তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’। আল-বায়ান
তারপর আমি তাদের সামনে দিয়ে, তাদের পেছন দিয়ে, তাদের ডান দিয়ে, তাদের বাম দিয়ে, তাদের কাছে অবশ্যই আসব, তুমি তাদের অধিকাংশকেই শোকর আদায়কারী পাবে না। তাইসিরুল
অতঃপর আমি তাদের সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে তাদের কাছে আসব, আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেননা। মুজিবুর রহমান
Then I will come to them from before them and from behind them and on their right and on their left, and You will not find most of them grateful [to You]." Sahih International
১৭. তারপর অবশ্যই আমি তাদের কাছে আসব তাদের সামনে থেকে ও তাদের পিছন থেকে, তাদের ডানদিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে(১) এবং আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।(২)
(১) মানুষের উপর শয়তানের হামলা শুধু চতুর্দিকেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং আরো ব্যাপক। আলোচ্য আয়াতে ইবলীস আদম সন্তানদের উপর আক্রমণ করার জন্য চারটি দিক বর্ণনা করেছে- অগ্র, পশ্চাৎ, ডান ও বাম। এখানে প্রকৃতপক্ষে কোন সীমাবদ্ধতা উদ্দেশ্য নয়; বরং এর অর্থ হল প্রত্যেক দিক ও প্রত্যেক কোণ থেকে। এভাবে হাদীসের এ বর্ণনাও এর পরিপন্থী নয় যে, শয়তান মানবদেহে প্রবেশ করে রক্তবাহী রগের মাধ্যমে। তারপর সমগ্র দেহে হস্তক্ষেপ করে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে সামনে থেকে আসার অর্থ, দুনিয়ায়। পশ্চাৎ দিক থেকে আসার অর্থ আখেরাতে। ডানদিক থেকে আসার অর্থ, নেককাজের মাধ্যমে আসা। আর বামদিক থেকে আসার অর্থ, গুনাহের দিক থেকে আসা। [তাবারী; আত-তাফসীরুস সহীহ]
কাতাদাহ বলেন, ইবলীস মানুষের সামনে থেকে এসে বলে, পুনরুত্থান নেই, জান্নাত নেই, জাহান্নাম নেই। মানুষের পিছন দিক থেকে দুনিয়াকে তার কাছে চাকচিক্যময় করে তোলে এবং দুনিয়ার প্রতি লোভ লাগিয়ে সেদিক আহবান করতে থাকে। তার ডানদিক থেকে আসার অর্থ নেক কাজ করার সময় সেটা করতে দেরী করায়, আর বাম দিক থেকে আসার অর্থ, গোনাহ ও অপরাধমূলক কাজকে সুশোভিত করে দেয়, সেদিকে আহবান করে, সেটার প্রতি নির্দেশ দেয়। হে বনী আদম! শয়তান তোমার সবদিক থেকেই আসছে, তবে সে তোমার উপর দিক থেকে আসে না, কারণ, সে তোমার ও আল্লাহর রহমতের মধ্যে বাধা হতে পারে না। [তাবারী]
(২) শয়তান এটা বলেছিল তার ধারণা অনুসারে। সে মনে করেছিল যে, তারা তার আহবানে সাড়া দিবে, তার অনুসরণ করবে। যাতে সে তাদেরকে ধ্বংস করতে পারে। আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র শয়তানের এ ধারণার কথা স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আর অবশ্যই তাদের সম্বন্ধে ইবলীস তার ধারণা সত্য প্রমাণ করল, ফলে তাদের মধ্যে একটি মুমিন দল ছাড়া সবাই তার অনুসরণ করল।” [সূরা সাবা: ২০] [আদওয়াউল বায়ান] ইবন আব্বাস বলেন, এখানে মানুষদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ না থাকার কথা বলে, তাওহীদের কথা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আপনি তাদেরকে তাওহীদবাদী পাবেন না। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭) অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক হতে তাদের নিকট আসব[1] এবং তুমি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না।’ [2]
[1] অর্থ হল, প্রত্যেক ভালো ও মন্দের পথে আমি বসে থাকব। ভালো থেকে তাদেরকে বাধা দেব এবং মন্দকে তাদের নজরে সুন্দরভাবে তুলে ধরে তা অবলম্বন করার উপর তাদেরকে প্রলুব্ধ করব।
[2] شَاكِرِيْنَ এর দ্বিতীয় অর্থ مُوْحِّدِيْنَ করা হয়েছে। অর্থাৎ, অধিকাংশ লোককে আমি শির্কে পতিত করব। শয়তান তার এই ধারণাকে বাস্তবে সত্য করেই দেখাল। মহান আল্লাহ বলেন, {وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ إِبْلِيسُ ظَنَّهُ فَاتَّبَعُوهُ إِلَّا فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ} অর্থাৎ, তাদের উপর ইবলীস তার অনুমান সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করল। ফলে তাদের মধ্যে মু’মিনদের একটি দল ব্যতীত সকলেই তার অনুসরণ করল। (সূরা সাবা’ ২০) এই জন্য কুরআন ও হাদীসে শয়তান থেকে পানাহ চাওয়ার এবং তার চক্রান্ত থেকে বেঁচে থাকার প্রতি বড়ই তাকীদ করা হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান