নিশ্চয় যারা তোমার রবের নিকট আছে তারা তাঁর ইবাদাতের ব্যাপারে অহঙ্কার করে না এবং তার তাসবীহ পাঠ করে, আর তাঁর জন্যই সিজদা করে। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
যারা তোমার প্রতিপালকের নিকট আছে তারা তাঁর ‘ইবাদাত করার ব্যাপারে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে না, তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে আর তাঁর জন্য সাজদাহয় অবনত হয়। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
যারা (অর্থাৎ ফেরেশতা) তোমাদের রবের সান্নিধ্যে থাকে তারা তাঁরই গুণগান ও মহিমা প্রকাশ করে এবং তাঁরই সম্মুখে সাজদাহবনত হয়। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
Indeed, those who are near your Lord are not prevented by arrogance from His worship, and they exalt Him, and to Him they prostrate. Sahih International
২০৬. নিশ্চয় যারা আপনার রবের সন্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর ইবাদাতের ব্যাপারে অহঙ্কার(১) করে না। আর তারা তাঁরই তাসবীহ পাঠ করে(২) এবং তারই জন্য সিজদা(৩) করে। [সাজদাহ] ۩
(১) যারা আল্লাহর কাছে রয়েছেন তারা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ। সে হিসেবে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করা ও রবের বন্দেগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া শয়তানের কাজ। এর ফল হয় অধঃপতন ও অবনতি। পক্ষান্তরে আল্লাহর সামনে ঝুঁকে পড়া এবং তাঁর বন্দেগীতে অবিচল থাকা একটি ফেরেশতাসুলভ কাজ। এর ফল হয় উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ। যদি তোমরা এ উন্নতি চাও তাহলে নিজেদের কর্মনীতিকে শয়তানের পরিবর্তে ফেরেশতাদের কর্মনীতির অনুরূপ করে গড়ে তোল।
(২) আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করে অর্থাৎ আল্লাহ যে ক্রটিমুক্ত, দোষমুক্ত, ভুলমুক্ত সব ধরনের দুর্বলতা থেকে তিনি যে একেবারেই পাক-পবিত্র এবং তিনি যে লা-শরীক, তুলনাহীন ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী, এ বিষয়টি সর্বন্তিকরণে মেনে নেয়। মুখে তার স্বীকৃতি দেয় ও অঙ্গীকার করে এবং স্থায়ীভাবে সবসময় এর প্রচার ও ঘোষণায় সোচ্চার থাকে।
(৩) এখানে সালাত সংক্রান্ত ইবাদাতের মধ্য থেকে শুধু সিজদার কথা উল্লেখ করার কারণ এই যে, সালাতের সমগ্র আরকানের মধ্যে সিজদার একটি বিশেষ ফযীলত রয়েছে। হাদীসে রয়েছে যে, কোন এক লোক সওবান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট নিবেদন করলেন যে, আমাকে এমন একটা আমল বাতলে দিন যাতে আমি জান্নাতে যেতে পারি। সওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু নীরব রইলেন; কিছু বললেন না। লোকটি আবার নিবেদন করলেন, তখনও তিনি চুপ করে রইলেন।
এভাবে তৃতীয়বার যখন বললেন, তখন তিনি বললেনঃ আমি এ প্রশ্নটিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে করেছিলাম। তিনি আমাকে ওসীয়ত করেছিলেন যে, অধিক পরিমাণে সিজদা করতে থাক। কারণ, তোমরা যখন একটি সিজদা কর তখন তার ফলে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের মর্যাদা এক ডিগ্রি বাড়িয়ে দেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেন। লোকটি বললেনঃ সওবান রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে আলাপ করার পর আমি আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করে তার কাছেও একই নিবেদন করলাম এবং তিনিও একই উত্তর দিলেন। মুসলিমঃ ৪৮৮]
অন্য এক হাদীসে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা স্বীয় রবের সর্বাধিক নিকটবর্তী তখনই হয়, যখন সে বান্দা সিজদায় অবনত থাকে। কাজেই তোমরা সিজদারত অবস্থায় খুব বেশী করে দোআ-প্রার্থনা করবে। তাতে তা কবুল হওয়ার যথেষ্ট আশা রয়েছে। [মুসলিমঃ ৪৭৯, ৪৮২]
সুরা আল-আ’রাফের শেষ আয়াতটি হল আয়াতে সিজদা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘কোন আদম সন্তান যখন কোন সিজদার আয়াত পাঠ করে অতঃপর সিজদায়ে তেলাওয়াতে সম্পন্ন করে, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে পালিয়ে যায় এবং বলে যে, আফসোস, মানুষের প্রতি সিজদার হুকুম হল আর সে তা আদায়ও করল, ফলে তার ঠিকানা হল জান্নাত, আর আমার প্রতিও সিজদার হুকুম হয়েছিল, কিন্তু আমি তার না-ফরমানী করেছি বলে আমার ঠিকানা হল জাহান্নাম’। [মুসলিমঃ ১৩৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(২০৬) নিশ্চয়ই যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে, তারা অহংকারে তাঁর উপাসনায় বিমুখ হয় না। তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে এবং তাঁরই নিকট তারা সিজদাবনত হয়। [1] [সাজদাহ] ۩
[1] এটি কুরআন মাজীদের প্রথম তিলাঅতের সিজদার স্থান। কুরআন মাজীদের সিজদার আয়াত তিলাঅত করলে অথবা শুনলে তকবীর দিয়ে একটি সিজদাহ করা এবং তকবীর দিয়ে মাথা তোলা মুস্তাহাব। এই সিজদার পর কোন তাশাহহুদ বা সালাম নেই। তকবীরের ব্যাপারে মুসলিম বিন য়্যাসার, আবূ কিলাবাহ ও ইবনে সীরীন কর্তৃক আষার বর্ণিত হয়েছে। (তামামুল মিন্নাহ ২৬৯পৃঃ) এই সিজদাহ করার বড় ফযীলত ও মাহাত্ম্য রয়েছে। মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত পাঠ করে সিজদাহ করে, তখন শয়তান দূরে সরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে, ‘হায় ধ্বংস আমার! ও সিজদাহ করতে আদেশ পেয়ে সিজদাহ করে, ফলে ওর জন্য রয়েছে জান্নাত। আর আমি সিজদার আদেশ পেয়ে তা অমান্য করেছি, ফলে আমার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।’’ (আহমাদ, মুসলিম ৮৯৫নং, ইবনে মাজাহ) তিলাঅতের সিজদার জন্য ওযূ শর্ত নয়। লজ্জাস্থান ঢাকা থাকলে ক্বিবলামুখে এই সিজদাহ করা যায়। যেহেতু ওযূ শর্ত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। (নাইলুল আউত্বার, আল-মুমতে’ ৪/১২৬, ফিকহুস সুন্নাহ আরবী ১/১৯৬) তিলাঅতের সিজদায় একাধিকবার পঠনীয় সুন্নতী দু’আ হল, سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِيْ خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ অর্থাৎ, আমার মুখমন্ডল তাঁর জন্য সিজদাবনত হল যিনি ওকে সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় শক্তি ও ক্ষমতায় ওর চক্ষু ও কর্ণকে উদগত করেছেন। (আহমদ ৬/৩০, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী) বাইহাকীর বর্ণনায় (وَصَوَّرَه) হাকেমের বর্ণনায় এই শব্দগুলিও বাড়তি এসেছে فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ। (আওনুল মাবূদ ১/৫৩৩) -সম্পাদক
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আল্লাহর জন্যই আসমানসমূহ ও যমীনের সবকিছু অনুগত ও বাধ্য হয়ে সিজদা করে এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের ছায়াগুলোও। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
আসমানে আর যমীনে যা কিছু আছে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর প্রতি সাজদাহয় অবনত হয় আর তাদের ছায়াগুলোও। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
আল্লাহর প্রতি সাজদাহবনত হয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলিও সকাল-সন্ধ্যায়। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
And to Allah prostrates whoever is within the heavens and the earth, willingly or by compulsion, and their shadows [as well] in the mornings and the afternoons. Sahih International
১৫. আর আল্লাহর প্রতিই সিজদাবনত হয় আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায়(১) এবং তাদের ছায়াগুলোও সকাল ও সন্ধ্যায়(২)। [সাজদাহ] ۩
(১) সিজদা মানে আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা এবং পুরোপুরি মেনে নিয়ে মাথা নত করা। পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি সৃষ্টি আল্লাহর আইনের অনুগত এবং তাঁর ইচ্ছার চুল পরিমাণও বিরোধিতা করতে পারে না -এ অর্থে তারা প্রত্যেকেই আল্লাহকে সিজদা করছে। মুমিন স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে তাঁর সামনে নত হয় কিন্তু কাফেরকে বাধ্য হয়ে নত হতে হয়। কারণ আল্লাহর প্রাকৃতিক আইনের বাইরে চলে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। আর তারা নিজেরা স্রষ্টার মুখাপেক্ষী এটা প্রমাণ করছে। [কুরতুবী]
(২) তাদের ছায়াগুলো নত হওয়া ও সিজদা করার মানে হচ্ছে, ছায়ার সকাল-সাঁঝে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে সিজদা করা। এ এমন একটি আলামত যা থেকে বুঝা যায় যে, এসব জিনিস কারো হুকুমের অনুগত এবং কারোর নিয়ন্ত্রণাধীন। [কুরতুবী] মুফাসসিরগণ বলেন, সিজদাকারীদের কেউ ইচ্ছাকৃত আল্লাহর সিজদা করে আবার কেউ করে অনিচ্ছাকৃত কিন্তু তাদের ছায়াগুলো ঠিকই ইচ্ছাকৃতভাবে সিজদা করে। [বাগভী] মুজাহিদ বলেন, ঈমানদারের ছায়া ইচ্ছাকৃত সিজদা করে, আর সেও তা মেনে নিয়েছে। পক্ষান্তরে কাফেরের ছায়া ইচ্ছাকৃতভাবে সিজদা করে অথচ সে অপছন্দ করছে। [তাবারী] এ আয়াতের সমার্থে আরো এসেছে, “তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যার ছায়া ডানে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয়? [সূরা আন-নাহলঃ ৪৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলিও সকাল ও সন্ধ্যায়।[1] [সাজদাহ] ۩
[1] এতে আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার কথা উল্লেখ হয়েছে যে, প্রত্যেক বস্তুর উপর তাঁর আধিপত্য রয়েছে এবং প্রত্যেক বস্তু তাঁর অধীন ও তাঁর সামনে সিজদাবনত। চাহে মুমিনদের ন্যায় স্বেচ্ছায় করুক বা মুশরিকদের ন্যায় অনিচ্ছায়। তাদের ছায়াও সকাল-সন্ধ্যায় সিজদা করে। যেমন তিনি অন্যত্র বলেন, ﴿أَوَ لَمْ يَرَوْاْ إِلَى مَا خَلَقَ اللهُ مِن شَيْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلاَلُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالْشَّمَآئِلِ سُجَّدًا لِله وَهُمْ دَاخِرُونَ﴾ অর্থাৎ, তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি যার ছায়া বিনীতভাবে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয়ে ডানে ও বামে ঢলে পড়ে? (সূরা নাহল ৪৮) উক্ত সিজদার স্বরূপ কি? এটা মহান আল্লাহই ভাল জানেন। অথবা দ্বিতীয় অর্থ এর এই যে, কাফের সমেত সকল সৃষ্টি আল্লাহর আদেশাধীন, কারো তা লঙ্ঘন করার শক্তি নেই। আল্লাহ কাউকে সুস্থ করুন অথবা অসুস্থ, ধনী করুন অথবা কাঙ্গাল, জীবন দান করুন অথবা মৃত্যু। উক্ত সৃষ্টিমূলক নিয়মকে অমান্য করার শক্তি কোন কাফেরেরও নেই।
(এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে এবং তাদেরকে যা নির্দেশ দেয়া হয়, তারা তা করে। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
তারা তাদের উপরে আল্লাহকে ভয় করে আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
তারা ভয় করে, তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের রাব্বকে এবং তাদেরকে যা আদেশ করা হয় তারা তা পালন করে। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
They fear their Lord above them, and they do what they are commanded. Sahih International
৫০. তারা ভয় করে তাদের উপরস্থ(১) তাদের রবকে এবং তাদেরকে যা আদেশ করা হয় তারা তা করে। [সাজদাহ] ۩
(১) এ আয়াত এবং এ ধরণের অসংখ্য আয়াত ও হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা'আলা উপরে সুউচ্চে অবস্থান করছেন। তিনি তার আরশের উপর আছেন। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা। এর বাইরের যাবতীয় আকীদা বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা।
তাফসীরে জাকারিয়া(৫০) তারা ভয় করে তাদের উপরে তাদের প্রতিপালককে[1] এবং তারা তা করে, যা তাদেরকে আদেশ করা হয়। [2] [সাজদাহ] ۩
[1] আল্লাহর ভয়ে ভীত ও সন্ত্রস্ত থাকে।
[2] আল্লাহর আদেশের অন্যথা করে না বরং যা আদেশ করা হয়, তারা তাই করে। আর যা থেকে নিষেধ করা হয়, তা থেকে তারা দূরে থাকে। (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে’। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
তারা কাঁদতে কাঁদতে অধোমুখে সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ে আর তা তাদের বিনয় ও নম্রতা বাড়িয়ে দেয়। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
এবং কাঁদতে কাঁদতে তাদের মুখমণ্ডল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এতে তাদের বিনয়ই বৃদ্ধি পায়। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
And they fall upon their faces weeping, and the Qur'an increases them in humble submission. Sahih International
১০৯. আর তারা কাঁদতে কাঁদতে নতমস্তকে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। [সাজদাহ] ۩
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০৯) আর তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে চেহারা লুটিয়ে (সিজদা) দেয় এবং এ (কুরআন) তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’ [1] [সাজদাহ] ۩
[1] চেহারা লুটিয়ে সিজদায় পড়ে যাওয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কারণ, প্রথম সিজদা ছিল আল্লাহর মাহাত্ম্য, তাঁর পবিত্রতার বর্ণনা এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এবং কুরআন শুনে যে ভীতি ও বিনয়ভাব তাদের মধ্যে জন্ম নেয় এবং কুরআনের আকর্ষণ ও চমৎকারিত্বে এত বেশী তারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে যে, তা পুনরায় তাদেরকে সিজদায় পতিত করে। (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানএরাই সে সব নবী, আদম সন্তানের মধ্য থেকে যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং যাদের আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশোদ্ভূত এবং যাদেরকে আমি পথ প্রদর্শন করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম। যখন তাদের কাছে পরম করুণাময়ের আয়াতসমূহ পাঠ করা হত, তারা কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
এরাই হল তারা আদাম বংশের নবীগণের মধ্য হতে, আর নূহের সঙ্গে যাদেরকে (নৌকায়) আরোহণ করিয়েছিলাম তাদের মধ্য হতে, আর ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশধরদের মধ্য হতে যাদেরকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম, এরা তাদেরই মধ্য হতে, যাদেরকে আমি পথনির্দেশ দিয়েছিলাম আর বেছে নিয়েছিলাম, এদের নিকট দয়াময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হলে তারা সাজদায় অবনত হয়ে কান্নাভরে লুটিয়ে পড়ত। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
নাবীদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এরাই তারা, আদমের এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম তাদের বংশদ্ভুত, ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশদ্ভুত ও যাদেরকে আমি পথ নির্দেশ করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম তাদের অন্তর্ভুক্ত; তাদের নিকট দয়াময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হলে তারা সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ত ক্রন্দন করতে করতে। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
Those were the ones upon whom Allah bestowed favor from among the prophets of the descendants of Adam and of those We carried [in the ship] with Noah, and of the descendants of Abraham and Israel, and of those whom We guided and chose. When the verses of the Most Merciful were recited to them, they fell in prostration and weeping. Sahih International
৫৮. এরাই তারা, নবীদের মধ্যে আল্লাহ যাদেরকে অনুগ্রহ করেছেন, আদমের বংশ থেকে এবং যাদেরকে আমরা নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশোদ্ভূত, আর যাদেরকে আমরা হেদায়াত দিয়েছিলাম এবং মনোনীত করেছিলাম; তাদের কাছে দয়াময়ের আয়াত তিলাওয়াত করা হলে তারা লুটিয়ে পড়ত সিজদায়(১) এবং কান্নায়।(২) [সাজদাহ] ۩
(১) অন্য আয়াতেও বলা হয়েছে, “বলুন, তোমরা কুরআনে বিশ্বাস কর বা বিশ্বাস না কর, যাদেরকে এর আগে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের কাছে যখন এটা পড়া হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে। এবং তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।” [সূরা আল-ইসরা: ১০৭–১০৯]
(২) এ আয়াত থেকে জানা গেল যে, কুরআনের আয়াত তেলাওয়াতের সময় কান্নার অবস্থা সৃষ্টি হওয়া প্রশংসনীয় এবং নবীদের সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও সৎকর্মশীলদের থেকে এ ধরনের বহু ঘটনা বর্ণিত আছে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার এ সূরা পড়ে সিজদা করলেন এবং বললেন, সিজদা তো হলো, কিন্তু ক্ৰন্দন কোথায়! [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৮) নবীদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এরাই তারা, আদমের ও যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম তাদের বংশোদ্ভূত, ইব্রাহীম ও ইস্রাঈলের বংশোদ্ভূত ও যাদেরকে আমি পথ নির্দেশ করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম তাদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের নিকট পরম করুণাময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হলে, তারা ক্রন্দন করতে করতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। [1] [সাজদাহ] ۩
[1] আল্লাহর আয়াত শ্রবণ করে নম্রতা ও কান্নাভাব সৃষ্টি হওয়া ও আল্লাহর মহত্ত্বের সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়া আল্লাহর বান্দাদের বিশেষ লক্ষণ। (এই আয়াত পাঠ শেষে তিলাঅতের সিজদাহ করা সুন্নত। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতুমি কি দেখ না যে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করে যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু রয়েছে যমীনে, সূর্য, চাঁদ, তারকারাজী, পর্বতমালা, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে। আবার অনেকের উপর শাস্তি অবধারিত হয়ে আছে। আল্লাহ যাকে অপমানিত করেন তার সম্মানদাতা কেউ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
তুমি কি দেখ না যে আল্লাহকে সেজদা করে যারা আকাশে আছে, আর যারা পৃথিবীতে আছে আর সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পর্বতসমূহ, বৃক্ষরাজি, জীবজন্তু এবং মানুষের মধ্যে অনেকে? আর অনেকের প্রতি শাস্তি সাব্যস্ত হয়ে গেছে। আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করতে চান, তাকে সম্মানিত করার কেউ নেই। আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তাই করেন। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহকে সাজদাহ করে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে - সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্রমন্ডলী, পবর্তরাজি, বৃক্ষলতা, জীব-জন্তু এবং সাজদাহ করে মানুষের মধ্যে অনেকে? আবার অনেকের প্রতি অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে হেয় করেন তার সম্মানদাতা কেহই নেই; আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
Do you not see that to Allah prostrates whoever is in the heavens and whoever is on the earth and the sun, the moon, the stars, the mountains, the trees, the moving creatures and many of the people? But upon many the punishment has been justified. And he whom Allah humiliates - for him there is no bestower of honor. Indeed, Allah does what He wills. Sahih International
১৮. আপনি কি দেখেন না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যারা আছে আসমানসমূহে ও যারা আছে যমীনে, আর সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু(১) এবং সিজদা করে মানুষের মধ্যে অনেকে(২), আবার অনেকের প্রতি অবধারিত হয়েছে শাস্তি।(৩) আল্লাহ যাকে হেয় করেন(৪) তার সম্মানদাতা কেউই নেই; নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছে তা করেন। [সাজদাহ] ۩
(১) সমগ্র সৃষ্টজগত স্রষ্টার আজ্ঞাধীন ও ইচ্ছাধীন। কারো কারো মতে এখানে সিজদা করার দ্বারা আনুগত্য করা বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] সৃষ্টজগতের এই আজ্ঞানুবর্তিত দুই প্রকার- (এক) সৃষ্টিগত ব্যবস্থাপনার অধীনে বাধ্যতামূলক আনুগত্য। মুমিন, কাফের, জীবিত, মৃত, জড়পদার্থ ইত্যাদি কেউ এই আনুগত্যের আওতা বহির্ভূত নয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সবাই সমভাবে আল্লাহ্ তা'আলার আজ্ঞাধীন ও ইচ্ছাধীন। বিশ্ব-চরাচরের কোন কণা অথবা পাহাড় আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিরেকে এতটুকুও নড়াচড়া করতে পারে না। (দুই) সৃষ্টজগতের ইচ্ছাধীন আনুগত্য। অর্থাৎ স্ব-ইচ্ছায় আল্লাহ তা'আলার বিধানাবলী মেনে চলা। আয়াতে এ প্রকার আনুগত্যই বোঝানো হয়েছে। আসমান যমীনে যত কিছু আছে যেমন ফেরেশতা, যাবতীয় জীবজন্তু সবাই আল্লাহকে সিজদা করে বা তাঁর আনুগত্য করে। অনুরূপভাবে সূর্য, চন্দ্র ও তারকাসমূহও আল্লাহর আনুগত্য ও সিজদা করে। সূর্য, চন্দ্র ও তারকাসমূহকে আলাদাভাবে বর্ণনা করার কারণ হচ্ছে, আল্লাহ ব্যতীত এগুলোর ইবাদাত করা হয়েছিল, তাই জানিয়ে দেয়া হলো যে, তোমরা এদের পূজা কর, অথচ এরা আল্লাহর জন্য সিজদা করে। অন্য আয়াতে সেটা স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, “তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চাঁদকেও নয় ; আর সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদাত কর।” [সূরা ফুসসিলাত: ৩৭] [ইবন কাসীর]
যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ইচ্ছাধীন আনুগত্য তো শুধু বিবেকবান মানুষ, জিন ইত্যাদির মধ্যে হতে পারে। জীবজন্তু, উদ্ভিদ ও জড়পদার্থের মধ্যে তো বিবেক ও চেতনাই নেই। এমতাবস্থায় এগুলোর মধ্যে ইচ্ছাধীন আনুগত্য কিভাবে হবে? এর উত্তর এই যে, কুরআনুল করীমের বহু আয়াত ও বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, বিবেক, চেতনা ও ইচ্ছা থেকে কোন সৃষ্টবস্তুই মুক্ত নয়। সবার মধ্যেই কম-বেশী এগুলো বিদ্যমান আছে। জন্তু-জানোয়ারের বিবেক ও চেতনা সাধারণতঃ অনুভব করা হয়। উদ্ভিদের বিবেক ও চেতনাও সামান্য চিন্তা ও গবেষণা দ্বারা চেনা যায়, কিন্তু জড় পদার্থের বিবেক ও চেতনা এতই অল্প ও লুক্কায়িত যে, সাধারণ মানুষ তা বুঝতেই পারে না। কিন্তু তাদের স্রষ্টা ও মালিক বলেছেন যে, তারাও বিবেক ও চেতনার অধিকারী। যেমন আল্লাহ বলেন, “এমন কিছু নেই। যা তাঁর সপ্ৰশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না” [সূরা আল-ইসরা: ৪৪]
তাছাড়া সূর্য আরশের নিচে সিজদা করার কথা হাদীসে এসেছে। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জান, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বেশী জানেন। তিনি বললেন, এটা যায় তারপর আরশের নিচে সিজদা করে। অতঃপর অনুমতি গ্ৰহণ করে। অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন তাকে বলা হবে, যেখান থেকে এসেছি সেখানেই ফিরে যাও।” [বুখারী: ৩১৯৯]
আবুল আলীয়া বলেন, আকাশের যত তারকা আছে, সূর্য ও চাঁদ সবই যখন ডুবে তখন আল্লাহর জন্য সিজদা করে, যতক্ষণ সেগুলোকে অনুমতি না দেয়া হয়, ততক্ষণ সেগুলো ফিরে আসে না। তারপর তাদের উদিত হওয়ার স্থানে উদিত হয়। আর পাহাড় ও গাছের সিজদা হচ্ছে ডানে ও বামে তাদের ছায়া পড়া। [ইবন কাসীর] কাজেই আলোচ্য আয়াতে সে আনুগত্যকে সিজদা শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে, তা ইচ্ছাধীন আনুগত্য। আয়াতের অর্থ এই যে, মানব জাতি ছাড়াও (জিনসহ) সব সৃষ্টবস্তু স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে সিজদা করে অর্থাৎ আজ্ঞা পালন করে।
তবে মানব ও জিন জাতিকে আল্লাহ্ তা'আলা বিবেক ও চেতনার একটি পূর্ণস্তর দান করেছেন। এ কারণেই তাদেরকে আদেশ ও নিষেধের অধীন করা হয়েছে। মানব জাতিই সর্বাধিক বিবেক ও চেতনা লাভ করেছে। এ জন্য তারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে- (এক) মুমিন, অনুগত ও সিজদাকারী এবং (দুই) কাফের, অবাধ্য ও সিজদার প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী। সিজদার তাওফীক না দিয়ে আল্লাহ তা'আলা শেষোক্ত দলকে হেয় করেছেন। [সাদী] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন আদম সন্তান সিজদার আয়াত পড়ে (এবং সিজদা করে), শয়তান তখন দূরে গিয়ে কাঁদতে থাকে। সে বলতে থাকে, আদম সন্তানকে সিজদা করতে বলা হয়েছে সে সিজদা করেছে, তার জন্য নির্ধারিত হলো জান্নাত। আর আমাকে সিজদা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আর আমি তা করতে অস্বীকার করেছি, ফলে আমার জন্য নির্ধারিত হলো জাহান্নাম।” [মুসলিম: ৮১] এ আয়াতটি সিজদার আয়াত। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘সুরা আল-হজে দু'টি সাজদাহ রয়েছে।' [মুস্তাদরাকে হাকিম: ৩৪৭২]
(২) অর্থাৎ এমন বহু মানুষ রয়েছে যারা নিছক বাধ্য হয়েই নয় বরং ইচ্ছাকৃতভাবে, সানন্দে ও আনুগত্যশীলতা সহকারেও তাঁকে সিজদা করে। [ইবন কাসীর] পরবর্তী বাক্যে তাদের মোকাবিলায় মানব সম্প্রদায়ের অন্য যে দলের কথা বলা হচ্ছে তারা স্বেচ্ছায় আল্লাহর সামনে মাথা নত হতে অস্বীকার করে এবং অহংকার করে। [ইবন কাসীর] কিন্তু অন্যান্য স্বাধীন ক্ষমতাহীন সৃষ্টির মতো তারাও প্রাকৃতিক আইনের বাঁধন মুক্ত নয়। কিন্তু তারাও ইচ্ছে করলেই যা ইচ্ছে তা করে বেড়াতে পারে না। তাদেরকেও জন্ম, মৃত্যু, জ্বর, রোগ-শোক ইত্যাদিতে আল্লাহ্র নিয়মনীতির বাইরে চলার সুযোগ দেয়া হয়নি। সে হিসেবে আনুগত্যের ব্যাপকতা ও বাধ্যতামূলক সিজদার মধ্যে তারাও শামিল রয়েছে। নিজেদের ক্ষমতার পরিসরে বিদ্রোহের নীতি অবলম্বনের কারণে তারা আযাবের অধিকারী হয়।
(৩) তাদের অনেকের উপর আযাব অবধারিত হওয়ার কারণ হচ্ছে, তারা আনুগত্য করেনি। তারা সিজদা করেনি। [কুরতুবী]
(৪) অর্থাৎ তাকে আল্লাহ কাফের ও দূর্ভাগা বানিয়ে অপমানিত করেছেন। সুতরাং তাকে সম্মান দেয়ার আর কেউ নেই যে সে তার দ্বারা সৌভাগ্যশালী ও সম্মানিত হতে পারে। আল্লাহ যা ইচ্ছে তা করতে পারেন। দূর্ভাগা হওয়া, সৌভাগ্যশালী হওয়া, সম্মানিত বা অপমানিত হওয়া এ সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। [ফাতহুল কাদীর] যে ব্যক্তি চোখ মেলে প্রকাশ্য ও উজ্জ্বল সত্য দেখে না এবং যে তাকে বুঝায় তার কথাও শোনে না সে নিজেই নিজের জন্য লাঞ্ছনা ও অবমাননার ডাক দেয়। সে নিজে যা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তার ভাগ্যে তাই লিখে দেন। তারপর আল্লাহই যখন তাকে সত্য অনুসরণ করার মর্যাদা দান করেননি তখন তাকে এ মর্যাদায় অভিষিক্ত করার ক্ষমতা আর কার আছে?
তাফসীরে জাকারিয়া(১৮) তুমি কি দেখো না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যারা আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে; সিজদা করে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমন্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু,[1] এবং সিজদা করে মানুষের মধ্যে অনেকে; [2] আর অনেকের প্রতি অবধারিত হয়েছে শাস্তি।[3] আল্লাহ যাকে হেয় করেন তার সম্মানদাতা কেউই নেই; [4] নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।[5] [সাজদাহ] ۩
[1] কিছু ব্যাখ্যাকারী বলেছেন, এই সিজদার অর্থ ঐ সমস্ত জিনিসের আল্লাহর নিয়ম-বিধির অনুগত হওয়া। কারো এ শক্তি নেই যে, সে বিধির অন্যথা করে। তাঁদের নিকট সিজদা বলতে আনুগত্য ও ইবাদতের সিজদা নয়; যা একমাত্র জ্ঞানসম্পন্ন জীবের সাথে সম্পৃক্ত। তবে কিছু কিছু ব্যাখ্যাকারিগণ তা মূল অর্থেই ব্যবহার হয়েছে বলে মনে করেন। তাঁরা বলেন, প্রতিটি সৃষ্টি নিজ নিজ পদ্ধতিতে সিজদা করে থাকে। যেমনঃ ‘যারা আকাশমন্ডলীতে আছে’ বলতে ফিরিশতাগণ, ‘যারা পৃথিবীতে আছে’ বলতে প্রত্যেক মানুষ, জীন ও পশুপক্ষী এবং অন্যান্য সব কিছুকে বুঝানো হয়েছে। এরা সবাই নিজ নিজ ভঙ্গিমায় আল্লাহকে সিজদা করে এবং তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। মহান আল্লাহ বলেন, সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু ওদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। (সূরা ইসরাঃ ৪৪)
এখানে চন্দ্র সূর্য্য নক্ষত্রমন্ডলীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু মুশরিকরা এদের ইবাদত করত তাই। আল্লাহ বললেন, তোমরা এদেরকে সিজদা কর, অথচ এরা আল্লাহকে সিজদা করে ও তাঁর আজ্ঞা পালন করে। অতএব তোমরা এদেরকে সিজদা করো না, বরং সিজদা তাঁকে কর, যিনি এদের সৃষ্টিকর্তা। (দেখুন, ফুসসিলাতঃ ৩৭) সহীহ হাদীসে এসেছে, আবু যার (রাঃ) বলেন, একদা নবী (সাঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তুমি কি জানো, সূর্য কোথায় যায়?’’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন।’ তিনি বললেন, ‘‘সূর্য যখন ডুবে যায় তখন আরশের নীচে গিয়ে আল্লাহকে সিজদা করে। তারপর তাকে পূর্বাকাশে উদিত হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু একদিন এমন আসবে, যেদিন বলা হবে, তুমি ফিরে যাও; অর্থাৎ যেখান হতে এসেছ, ওখানেই ফিরে যাও।’’ (বুখারী, মুসলিম) এভাবেই একজন সাহাবীর কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি স্বপ্নে গাছকে নিজের সাথে সিজদা করতে দেখেছেন। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ১০৫৩নং) পাহাড় ও গাছের সিজদায় তাদের ছায়া পূর্ব-পশ্চিমে ঝুঁকে পড়াও শামিল। এ ব্যাপারে সূরা রা’দের ১৫ আয়াতে ও নাহলের ৪৮-৪৯ আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
[2] এখানে সিজদা বলতে আনুগত্য ও ইবাদতের সিজদা, যা বহু সংখ্যক মানুষ করে থাকে এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অধিকারী হয়।
[3] এরা ওরাই যারা ইবাদতের সিজদাকে অস্বীকার করে কুফরীর পথ অবলম্বন করে। অন্যথায় সৃষ্টিগতভাবে প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন হয়ে সিজদাকে অস্বীকার করার উপায় তাদেরও নেই।
[4] কুফরী অবলম্বন করার পরিণতি অসম্মান ও লাঞ্ছনা এবং আখেরাতের চিরস্থায়ী আযাব। যা থেকে রক্ষা করে কাফেরদেরকে সম্মান দেওয়ার মত কেউই থাকবে না।
[5] এই আয়াত শেষে তিলাঅতের সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মুমিনগণ, তোমরা রুকূ‘ কর, সিজদা কর, তোমাদের রবের ইবাদাত কর এবং ভাল কাজ কর, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
হে মু’মিনগণ! তোমরা রুকূ‘ কর, সেজদা কর আর তোমাদের প্রতিপালকের ‘ইবাদাত কর ও সৎকাজ কর যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! তোমরা রুকু কর, সাজদাহ কর এবং তোমাদের রবের ইবাদাত কর ও সৎ কাজ কর যাতে সফলকাম হতে পার। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
O you who have believed, bow and prostrate and worship your Lord and do good - that you may succeed. Sahih International
৭৭. হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ’ কর, সিজদা কর এবং তোমাদের রব-এর ইবাদাত কর ও সৎকাজ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।(১) [সাজদাহ] ۩
(১) অর্থাৎ সফল হতে হলে এ কাজগুলো করতে হবে। সালাত কায়েম করতে হবে, রুকু ও সিজদার মাধ্যমে, এ দু'টি সালাতেরই গুরুত্বপূর্ণ রুকন। আর এ ইবাদতই হচ্ছে চক্ষু শীতলকারী, চিন্তান্বিত অন্তরের জন্য সান্ত্বনা। আর আল্লাহর রুকুবিয়াতে বিশ্বাসের এটাই দাবী যে, বান্দা একমাত্র তারই ইবাদাত করবে এবং যাবতীয় কল্যাণের কাজ করবে। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৭) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা রুকূ কর, সিজদা কর[1] এবং তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত কর ও সৎকর্ম কর; যাতে তোমরা সফলকাম[2] হতে পার। [3] ( [সাজদাহ] ۩ ইমাম শাফেয়ীর মতে)
[1] অর্থাৎ, নামাযের প্রতি যত্নবান হও যা শরীয়তে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে ইবাদতের আদেশও করা হয়েছে, যার মধ্যে নামাযও শামিল। কিন্তু নামাযের বিশেষ গুরুতত্ত্ব ও মর্যাদার দিক দিয়ে লক্ষ্য রেখে তার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ হয়েছে।
[2] অর্থাৎ, সফলতা আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর আনুগত্যে; অর্থাৎ সৎকর্ম সম্পাদনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য হতে মুখ ফিরিয়ে শুধু দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও বিলাস-সামগ্রীর আধিক্যে সফলতা নেই; যেমন অধিকাংশ মানুষের ধারণা।
[3] এই আয়াত শেষে তিলাঅতের সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা ‘রহমান’ কে সিজদা কর, তখন তারা বলে, রহমান কী আবার? তুমি আমাদেরকে আদেশ করলেই কি আমরা সিজদা করব? আর এটা তাদের পলায়নপরতাই বৃদ্ধি করে। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
তাদেরকে যখন বলা হয় ‘রহমান’-এর উদ্দেশে সাজদায় অবনত হও, তারা বলে- ‘রহমান আবার কী? আমাদেরকে তুমি যাকেই সেজদা করতে বলবে আমরা তাকেই সেজদা করব নাকি?’ এতে তাদের অবাধ্যতাই বেড়ে যায়। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
যখন তাদেরকে বল হয়ঃ সাজদাহবনত হও ‘রাহমান’ এর প্রতি তখন তারা বলেঃ রাহমান আবার কে? তুমি কেহকে সাজদাহ করতে বললেই কি আমরা তাকে সাজদাহ করব? এতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
And when it is said to them, "Prostrate to the Most Merciful," they say, "And what is the Most Merciful? Should we prostrate to that which you order us?" And it increases them in aversion. Sahih International
৬০. আর যখন তাদেরকে বলা হয়, সিজদাবনত হও রাহমান এর প্রতি, তখন তারা বলে রাহমান আবার কি?(১) তুমি কাউকে সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব? আর এতে তাদের পলায়নপরতাই বৃদ্ধি পায়। [সাজদাহ] ۩
(১) মক্কার কাফেররা এ নামটি যে জানত না তা নয়। তারা এ নামটি জানত। তবে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করতে দ্বিধা করত। তারা এ নামটিকে কোন কোন মানুষকেও প্রদান করত। অথচ এ নামটি এমন এক নাম যা শুধুমাত্র মহান রাব্বুল আলমীনের জন্যই নির্দিষ্ট। কোন ক্রমেই অন্য কারো জন্য এ নামটিকে নাম হিসেবে বা গুণ হিসেবে ব্যবহার করা জায়েয নেই। কিন্তু তারা হঠকারিতাবশতঃ প্রশ্ন করল যে, রহমান কে এবং কি? হুদায়বিয়ার সন্ধির দিনও তারা এমনটি অস্বীকার করে বলেছিলঃ “আমরা রহমান বা রহীম কি জিনিস তা জানিনা; বরং যেভাবে তুমি আগে লিখতে, সেভাবে ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’ লিখা।” [মুসলিমঃ ১৭৮৪] সূরা আল-ইসরার ১১০ নং আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা কাফেরদেরকে উদ্দেশ্য করে তার এ নামের তাৎপর্য বর্ণনা করে বলেছেন যে, “আল্লাহকে ডাক বা রহমানকে ডাক, যেভাবেই ডাক এগুলো তার সুন্দর নামসমূহের অন্তর্গত”।
তাফসীরে জাকারিয়া(৬০) যখন ওদেরকে বলা হয়, ‘পরম দয়াময়ের প্রতি তোমরা সিজদাবনত হও।’ তখন ওরা বলে, ‘পরম দয়াময় আবার কে? তুমি কাউকেও সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব?’ আর এতে ওদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়। [1] [সাজদাহ] ۩
[1] رحمن و رحيم (রাহমান ও রাহীম) আল্লাহর সুন্দর গুণ ও নামাবলীর মধ্যে দু’টি গুণবাচক নাম। কিন্তু জাহেলী যুগের লোকেরা আল্লাহকে উক্ত নামে চিনত না। যেমন হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্র লেখার সময় শুরুতে بسم الله الرحمن الرحيم লেখা হলে মক্কার মুশরিকরা বলেছিল, আমরা রাহমান ও রাহীমকে জানি না। باسمك اللّهم লেখ। (সীরাতে ইবনে হিশাম ২/৩১৭) আরো দেখুন সূরা বানী ইস্রাঈল ১১০ এবং সূরা রা’দ ৩০নং আয়াত; এখানেও কাফেরদের ‘রাহমান’ নাম শুনে চমকে যাওয়া ও সিজদা করতে অস্বীকার করার কথা বর্ণিত হয়েছে। (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন। -সম্পাদক)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই। তিনি মহা আরশের রব। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ্ নেই, (তিনি) মহান ‘আরশের অধিপতি।’[সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। তিনি মহাআরশের অধিপতি। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
Allah - there is no deity except Him, Lord of the Great Throne." Sahih International
২৬. আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই, তিনি মহা আরশের রব।(১) [সাজদাহ] ۩
(১) অর্থাৎ তিনি সবচেয়ে প্রকাণ্ড সৃষ্টি আরশের রব। আর যেহেতু হুদহুদ কল্যাণের প্রতি আহবানকারী, এক আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত প্রদানকারী, একমাত্র তাঁর জন্যই সিজদা করার আহবান করে থাকে, তাই হাদীসে তাকে হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। [দেখুন: আবু দাউদ ৫২৬৭; ইবন মাজাহ ৩২২৪]
এ আয়াত পড়ার পর সিজদা করা ওয়াজিব। [দেখুন: কুরতুবী; আদওয়াউল বায়ান] এখানে সিজদা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন মুমিনের সূর্যপূজারীদের থেকে নিজেকে সচেতনভাবে পৃথক করা এবং নিজের কর্মের মাধ্যমে একথার স্বীকৃতি দেয়া ও একথা প্রকাশ করা উচিত যে, সে সূর্যকে নয় বরং একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকেই নিজের সিজদার ও ইবাদাতের উপযোগী এবং যোগ্য মনে করে।
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি মহা আরশের অধিপতি। [1] [সাজদাহ] ۩
[1] মহান আল্লাহ এ বিশ্বের সকল জিনিসের মালিক। কিন্তু এখানে কেবলমাত্র মহা আরশের মালিক হওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথমতঃ আরশ বিশ্ব-জাহানের সব থেকে বড় ও শ্রেষ্ঠ জিনিস। দ্বিতীয়তঃ এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য যে, সাবা’র রাণীর সিংহাসন ছিল বিশাল। কিন্তু আল্লাহর মহাসনের তুলনায় তা নিতান্ত নগণ্য। যার উপর আল্লাহ তাঁর মহিমানুসারে সমাসীন আছেন। হুদহুদ যেহেতু একত্ববাদের উপদেশ দিয়েছে, শিরক খন্ডন করেছে এবং আল্লাহর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছে, সেহেতু হাদীসে এসেছে যে, চার শ্রেণীর জীবকে হত্যা করবে না; পিঁপড়ে, মৌমাছি, হুদহুদ ও শ্রাইক (শিকারী পাখি বিশেষ)। (আহমাদ ১/৩৩২, আবু দাঊদঃ আদব অধ্যায়, ইবনে মাজাহঃ শিকার অধ্যায়) শ্রাইক পাখী, যার মাথা বড়, পেট সাদা, পিঠ সবুজ ও ছোট ছোট পাখী শিকার করে খায়। (টীকা ইবনে কাসীর)
* (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআমার আয়াতসমূহ কেবল তারাই বিশ্বাস করে, যারা এর দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ করে। আর তারা অহঙ্কার করে না। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
আমার নিদর্শনাবলীতে কেবল তারাই বিশ্বাস করে যাদেরকে এর দ্বারা উপদেশ দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে আর তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে আর তারা অহংকার করে না। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
শুধু তারাই আমার নিদর্শনাবলী বিশ্বাস করে যারা ওর দ্বারা উপদিষ্ট হলে সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং অহংকার করেনা। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
Only those believe in Our verses who, when they are reminded by them, fall down in prostration and exalt [Allah] with praise of their Lord, and they are not arrogant. Sahih International
১৫. শুধু তারাই আমাদের আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, যারা সেটার দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের সপ্ৰশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, আর তারা অহংকার করে না। [সাজদাহ] ۩
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) কেবল তারাই আমার আয়াতসমূহ বিশ্বাস করে,[1] যাদেরকে ওর দ্বারা উপদেশ দেওয়া হলে তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে[2] এবং তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে[3] এবং অহংকার করে না। [4] [সাজদাহ] ۩
[1] অর্থাৎ, তা সত্য বলে মানে ও তার দ্বারা উপকৃত হয়।
[2] অর্থাৎ আল্লাহর আয়াতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং তাঁর প্রতাপ ও শাস্তিকে ভয় করে।
[3] অর্থাৎ, প্রতিপালককে ঐ সকল জিনিস থেকে পবিত্র ঘোষণা করে, যা তাঁর সত্তার জন্য শোভনীয় নয় এবং তার সাথে সাথে তাঁর নিয়ামতের উপর তাঁর প্রশংসা বর্ণনা করে থাকে; যার মধ্যে সর্ববৃহৎ ও পূর্ণাঙ্গ নিয়ামত হল ঈমানের প্রতি হিদায়াত। অর্থাৎ তারা সিজদাতে (سُبحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه) (سُبحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى وَبِحَمْدِه) ইত্যাদি পড়ে।
[4] অর্থাৎ, আনুগত্য ও মান্য করার পথ অবলম্বন করে; মূর্খ ও কাফেরদের মত অহংকার করে না। কারণ আল্লাহর ইবাদত থেকে অহংকারবশতঃ বিরত থাকা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ) অর্থাৎ, যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মু’মিন ৬০ আয়াত) যার ফলে ঈমানদারগণের অবস্থা তাদের বিপরীত হয়ে থাকে; তাঁরা আল্লাহর সামনে সর্বাবস্থায় নিজেকে নগণ্য, ছোট, মিসকীন ও বিনয়ী প্রকাশ করে। ---- (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানদাঊদ বলল, ‘তোমার ভেড়ীকে তার ভেড়ীর পালের সাথে যুক্ত করার দাবী করে সে তোমার প্রতি যুলম করেছে। আর শরীকদের অনেকেই একে অন্যের উপর সীমলঙ্ঘন করে থাকে। তবে কেবল তারাই এরূপ করে না যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে’। আর এরা সংখ্যায় খুবই কম। আর দাঊদ জানতে পারল যে, আমি তাকে পরীক্ষা করেছি। তারপর সে তার রবের কাছে ক্ষমা চাইল, সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং তাঁর অভিমুখী হল। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
দাঊদ বলল- তোমার (মাত্র) একটি দুম্বীকে তার দুম্বীর পালে যুক্ত করার দাবী করে (সে) তোমার প্রতি যুলম করেছে। শরীকদের অধিকাংশই সত্যিই পরস্পরের প্রতি বাড়াবাড়ি করে, কিন্তু যারা ঈমান আনে আর সৎ ‘আমাল করে তারা ব্যতীত, এদের সংখ্যা খুবই কম। দাঊদ বুঝতে পারল আমি তাকে পরীক্ষা করেছি। তখন সে তার প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল, সাজদায় লুটিয়ে পড়ল ও তাঁর পানে ফিরে আসল। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
দাউদ বললঃ তোমার দুম্বাটিকে তার দুম্বাগুলির সাথে যুক্ত করার দাবী করে সে তোমার প্রতি যুল্ম করেছে। শরীকদের অনেকে একে অন্যের উপর অবিচার করে থাকে, করেনা শুধু মু’মিন ও সৎ কর্মশীল ব্যক্তিরা এবং তারা সংখ্যায় স্বল্প। দাউদ বুঝতে পারল যে, আমি তাকে পরীক্ষা করলাম। অতঃপর সে তার রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং নত হয়ে লুটিয়ে পড়ল ও তাঁর অভিমুখী হল। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
[David] said, "He has certainly wronged you in demanding your ewe [in addition] to his ewes. And indeed, many associates oppress one another, except for those who believe and do righteous deeds - and few are they." And David became certain that We had tried him, and he asked forgiveness of his Lord and fell down bowing [in prostration] and turned in repentance [to Allah]. Sahih International
২৪. দাউদ বললেন, তোমার ভেড়ীটিকে তার ভেড়ীগুলোর সঙ্গে যুক্ত করার দাবী করে সে তোমার প্রতি যুলুম করেছে। আর শরীকদের অনেকে একে অন্যের উপর তো সীমালঙ্ঘন করে থাকে—করে না শুধু যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, আর তারা সংখ্যায় স্বল্প। আর দাউদ বুঝতে পারলেন, আমরা তো তাকে পরীক্ষা করলাম। অতঃপর তিনি তার রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং নত হয়ে লুটিয়ে পড়লেন(১), আর তাঁর অভিমুখী হলেন। [সাজদাহ] ۩
(১) এখানে “রুকু” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ নত হওয়া। অধিকাংশ তফসীরবিদের মতে, এখানে সাজদাহ বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর, বাগভী] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “সোয়াদ” এর সাজদাহ বাধ্যতামূলক নয়। তবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাজদাহ করতে দেখেছি। [বুখারী: ১০৬৯] অপর বর্ণনায় ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, দাউদকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, দাউদ যেহেতু সাজদাহ করেছেন সেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সাজদাহ করেছেন। বুখারী: ৪৮০৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৪) দাঊদ বলল, ‘তোমার দুম্বাটিকে তার দুম্বাগুলির সঙ্গে যুক্ত করার দাবী করে সে তোমার প্রতি অন্যায় করেছে। যৌথ বিষয়ে অংশীদারগণ অনেকে একে অন্যের ওপর অবিচার করে থাকে;[1] করে না কেবল বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ এবং তারা সংখ্যায় স্বল্প।’[2] দাঊদ বুঝতে পারল, আমি তাকে পরীক্ষা করলাম। অতঃপর সে তার প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়ল[3] ও তাঁর অভিমুখী হল। [4] [সাজদাহ] ۩
[1] অর্থাৎ মানুষের মধ্যে এটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে যে, শরীকদের অনেকেই একে অপরের প্রতি যুলুম করে থাকে এবং অন্য শরীকের অংশ আত্মসাৎ করার প্রচেষ্টা করে থাকে।
[2] বস্তুতঃ এরূপ চারিত্রিক ত্রুটি থেকে মু’মিনগণ সুরক্ষিত আছে। কারণ তাদের অন্তরে আল্লাহ-ভীতি আছে এবং তারা যথাযথ নেক আমল করে। ফলে কোন ব্যক্তির উপর যুলুম করা এবং অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করা তাদের বিবেকে গ্রাহ্য নয়। তারা প্রদান করে, গ্রহণ করে না। আর এরূপ উচ্চ চরিত্রের মানুষ খুব কমই হয়।
[3] وَخَرَّ رَاكِعًا - এর অর্থ সিজদায় লুটিয়ে পড়ল।
[4] (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর যদি এরা অহঙ্কার করেও তবে যারা তোমার রবের নিকটে রয়েছে তারা দিন-রাত তাঁরই তাসবীহ পাঠ করছে এবং তারা ক্লান্তি বোধ করে না। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
অতঃপর তারা যদি অহংকার করে তবে (তারা জেনে নিক যে), তোমার প্রতিপালকের নিকটে যারা রয়েছে তারা দিন-রাত তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনায় লিপ্ত আছে, আর তারা কখনও ক্লান্তিবোধ করে না। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
তারা অহংকার করলেও যারা তোমার রবের সান্নিধ্যে রয়েছে তারাতো দিন ও রাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্তিও বোধ করেনা। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
But if they are arrogant - then those who are near your Lord exalt Him by night and by day, and they do not become weary. Sahih International
৩৮. অতঃপর যদি তারা অহংকার করে, তবে যারা আপনার রবের নিকটে রয়েছে তারা তো দিন ও রাতে তাঁর পবিত্ৰতা, মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্তি বোধ করে না। [সাজদাহ] ۩
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৮) ওরা অহংকার করলেও যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তো দিন-রাত তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্তিবোধ করে না। [1] [সাজদাহ] ۩
[1] (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসুতরাং তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা কর এবং ইবাদাত কর। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
তাই, আল্লাহর উদ্দেশে সাজদায় পতিত হও আর তাঁর বন্দেগী কর। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
অতএব আল্লাহকে সাজদাহ কর এবং তাঁর ইবাদাত কর। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
So prostrate to Allah and worship [Him]. Sahih International
৬২. অতএব আল্লাহকে সিজদা কর এবং ইবাদাত কর।(১) [সাজদাহ] ۩
(১) এসব আয়াতের দাবি এই যে, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে বিনয় ও নম্রতা সহকারে নত হও এবং সেজদা কর ও একমাত্র তারই ইবাদত কর। [মুয়াসসার] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, সূরা নাজমের এই আয়াত পাঠ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদা করলেন এবং তার সাথে সব মুসলিম, মুশরিক, জিন ও মানব সেজদা করল। [বুখারী: ৪৮৬২] অপর এক হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা নজম পাঠ করত তেলাওয়াতের সেজদা আদায় করলে তার সাথে উপস্থিত সকল মুমিন ও মুশরিক সেজদা করল, একজন কোরাইশী বৃদ্ধ ব্যতীত। সে একমুষ্টি মাটি তুলে নিয়ে কপালে স্পর্শ করে বললঃ আমার জন্য এটাই যথেষ্ট। [বুখারী: ১০৬৭, ১০৭০, মুসলিম: ৫৭৬] আবদুল্লাহ ইবনে-মসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ এই ঘটনার পর আমি বৃদ্ধকে কাফের অবস্থায় নিহত হতে দেখেছি। সে ছিল উমাইয়া ইবনে খালাফ৷ [বুখারী: ৪৮৬৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬২) অতএব তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর এবং তাঁর ইবাদত কর। [1] [সাজদাহ] ۩
[1] মুশরিক ও (কুরআনকে) মিথ্যাজ্ঞানকারীদেরকে তিরস্কার করার জন্য এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তাদের আচরণ যখন এই যে, তারা কুরআনকে সত্য মানার পরিবর্তে তার মান খাটো ও তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছে এবং আমার নবীর উপদেশ ও নসীহতের কোন প্রভাব তাদের উপর পড়ছে না, তখন তোমরা হে মুসলিমগণ! আল্লাহর সমীপে নত হয়ে ও তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্য প্রদর্শন করে পবিত্র কুরআনের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা কর। সুতরাং এই আদেশ পালন করার জন্য নবী করীম (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) সিজদা করেন। এমনকি সেখানে সভায় উপস্থিত কাফেররাও সিজদা করে। যে কথা বহু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যখন তাদের কাছে কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা সিজদা করে না। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
আর তাদের কাছে যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন সাজদাহ করে না? [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
এবং তাদের নিকট কুরআন পঠিত হলে তারা সাজদাহ করেনা? [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
And when the Qur'an is recited to them, they do not prostrate [to Allah]? Sahih International
২১. আর যখন তাদের কাছে কুরআন পাঠ করা হলে তখন তারা সিজদা করে না?(১) [সাজদাহ] ۩
(১) অর্থাৎ যখন তাদের সামনে সুস্পষ্ট হেদায়েত পরিপূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয়, তখনও তারা আল্লাহর দিকে নত হয় না। سجود এর আভিধানিক অর্থ নত হওয়া, আনুগত্য করা। বলাবাহুল্য, এখানে পারিভাষিক সাজদার পাশাপাশি আল্লাহর সামনে আনুগত্য সহকারে নত হওয়া তথা বিনীত হওয়াও উদ্দেশ্য। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সূরা পড়ে সাজদাহ করলেন, তারপর লোকদের দিকে ফিরে জানালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং এ সূরা পড়ার পরে সাজদাহ করেছেন। [মুসলিম: ৫৭৮]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি এশার সালাতে এ সূরা পাঠের পর সাজদাহ করলেন, এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হওয়ার পর বললেন, আমি আবুল কাসেম (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে সাজদাহ করেছি, সুতরাং তার সাথে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সাজদাহ করবই।” [বুখারী: ১০৭৮, মুসলিম: ৫৭৮]
তাফসীরে জাকারিয়া২১। এবং তাদের নিকট কুরআন পঠিত হলে তারা সিজদাহ করে না? [1] [সাজদাহ] ۩
[1] হাদীসসমূহ থেকে এখানে নবী (সাঃ) এবং সাহাবীগণের সিজদা করার কথা প্রমাণিত আছে। (অতএব এ আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ‘রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানকখনো নয়, তুমি তার আনুগত্য করবে না। আর সিজদা কর এবং নৈকট্য লাভ কর। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান
না, তুমি কক্ষনো তার অনুসরণ করো না, তুমি সাজদাহ কর আর (আল্লাহর) নৈকট্য লাভ কর। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল
সাবধান! তুমি তার অনুসরণ করনা। সাজদাহ কর ও আমার নিকটবর্তী হও। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান
No! Do not obey him. But prostrate and draw near [to Allah]. Sahih International
১৯. কখনো নয়! আপনি তার অনুসরণ করবেন না। আর আপনি সিজদা করুন এবং নিকটবর্তী হোন।(১) [সাজদাহ] ۩
(১) এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদেশ করা হয়েছে যে, আবু জাহলের কথায় কর্ণপাত করবেন না এবং সেজদা ও সালাতে মশগুল থাকুন। সিজদা করা মানে সালাত আদায় করা। অর্থাৎ হে নবী! আপনি নিৰ্ভয়ে আগের মতো সালাত আদায় করতে থাকুন। এর মাধ্যমে নিজের রবের নৈকট্য লাভ করুন। কারণ, এটাই আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জনের উপায়। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বান্দা যখন সেজদায় থাকে, তখন তার পালনকর্তার অধিক নিকটবর্তী হয়। তাই তোমরা সেজদায় বেশী পরিমাণে দোআ কর।” [মুসলিম: ৪৮২, আবু দাউদ: ৮৭৫, নাসায়ী: ২/২২৬, মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৭০] অন্য এক হাদীসে আরও বলা হয়েছে, “সাজ্দার অবস্থায় কৃত দো'আ কবুল হওয়ার যোগ্য”। [মুসলিম: ৪৭৯. আবু দাউদ: ৮৭৬, নাসায়ী: ২/১৮৯, মুসনাদে আহমাদ: ১/২১৯]
তাফসীরে জাকারিয়া১৯। সাবধান! তুমি তার অনুসরণ করো না। তুমি সিজদা কর ও আমার নিকটবর্তী হও। [1] [সাজদাহ] ۩
[1] (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান