সূরাঃ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف - আয়াত নং - ২০৬ - মাক্কী

৭ : ২০৬ اِنَّ الَّذِیۡنَ عِنۡدَ رَبِّکَ لَا یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِهٖ وَ یُسَبِّحُوۡنَهٗ وَ لَهٗ یَسۡجُدُوۡنَ ﴿۲۰۶﴾۩ (سُجود‎‎)

নিশ্চয় যারা তোমার রবের নিকট আছে তারা তাঁর ইবাদাতের ব্যাপারে অহঙ্কার করে না এবং তার তাসবীহ পাঠ করে, আর তাঁর জন্যই সিজদা করে। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান

যারা তোমার প্রতিপালকের নিকট আছে তারা তাঁর ‘ইবাদাত করার ব্যাপারে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে না, তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে আর তাঁর জন্য সাজদাহয় অবনত হয়। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল

যারা (অর্থাৎ ফেরেশতা) তোমাদের রবের সান্নিধ্যে থাকে তারা তাঁরই গুণগান ও মহিমা প্রকাশ করে এবং তাঁরই সম্মুখে সাজদাহবনত হয়। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান

Indeed, those who are near your Lord are not prevented by arrogance from His worship, and they exalt Him, and to Him they prostrate. Sahih International

২০৬. নিশ্চয় যারা আপনার রবের সন্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর ইবাদাতের ব্যাপারে অহঙ্কার(১) করে না। আর তারা তাঁরই তাসবীহ পাঠ করে(২) এবং তারই জন্য সিজদা(৩) করে। [সাজদাহ] ۩

(১) যারা আল্লাহর কাছে রয়েছেন তারা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ। সে হিসেবে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করা ও রবের বন্দেগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া শয়তানের কাজ। এর ফল হয় অধঃপতন ও অবনতি। পক্ষান্তরে আল্লাহর সামনে ঝুঁকে পড়া এবং তাঁর বন্দেগীতে অবিচল থাকা একটি ফেরেশতাসুলভ কাজ। এর ফল হয় উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ। যদি তোমরা এ উন্নতি চাও তাহলে নিজেদের কর্মনীতিকে শয়তানের পরিবর্তে ফেরেশতাদের কর্মনীতির অনুরূপ করে গড়ে তোল।

(২) আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করে অর্থাৎ আল্লাহ যে ক্রটিমুক্ত, দোষমুক্ত, ভুলমুক্ত সব ধরনের দুর্বলতা থেকে তিনি যে একেবারেই পাক-পবিত্র এবং তিনি যে লা-শরীক, তুলনাহীন ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী, এ বিষয়টি সর্বন্তিকরণে মেনে নেয়। মুখে তার স্বীকৃতি দেয় ও অঙ্গীকার করে এবং স্থায়ীভাবে সবসময় এর প্রচার ও ঘোষণায় সোচ্চার থাকে।

(৩) এখানে সালাত সংক্রান্ত ইবাদাতের মধ্য থেকে শুধু সিজদার কথা উল্লেখ করার কারণ এই যে, সালাতের সমগ্র আরকানের মধ্যে সিজদার একটি বিশেষ ফযীলত রয়েছে। হাদীসে রয়েছে যে, কোন এক লোক সওবান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট নিবেদন করলেন যে, আমাকে এমন একটা আমল বাতলে দিন যাতে আমি জান্নাতে যেতে পারি। সওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু নীরব রইলেন; কিছু বললেন না। লোকটি আবার নিবেদন করলেন, তখনও তিনি চুপ করে রইলেন।

এভাবে তৃতীয়বার যখন বললেন, তখন তিনি বললেনঃ আমি এ প্রশ্নটিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে করেছিলাম। তিনি আমাকে ওসীয়ত করেছিলেন যে, অধিক পরিমাণে সিজদা করতে থাক। কারণ, তোমরা যখন একটি সিজদা কর তখন তার ফলে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের মর্যাদা এক ডিগ্রি বাড়িয়ে দেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেন। লোকটি বললেনঃ সওবান রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে আলাপ করার পর আমি আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করে তার কাছেও একই নিবেদন করলাম এবং তিনিও একই উত্তর দিলেন। মুসলিমঃ ৪৮৮]

অন্য এক হাদীসে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা স্বীয় রবের সর্বাধিক নিকটবর্তী তখনই হয়, যখন সে বান্দা সিজদায় অবনত থাকে। কাজেই তোমরা সিজদারত অবস্থায় খুব বেশী করে দোআ-প্রার্থনা করবে। তাতে তা কবুল হওয়ার যথেষ্ট আশা রয়েছে। [মুসলিমঃ ৪৭৯, ৪৮২]

সুরা আল-আ’রাফের শেষ আয়াতটি হল আয়াতে সিজদা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘কোন আদম সন্তান যখন কোন সিজদার আয়াত পাঠ করে অতঃপর সিজদায়ে তেলাওয়াতে সম্পন্ন করে, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে পালিয়ে যায় এবং বলে যে, আফসোস, মানুষের প্রতি সিজদার হুকুম হল আর সে তা আদায়ও করল, ফলে তার ঠিকানা হল জান্নাত, আর আমার প্রতিও সিজদার হুকুম হয়েছিল, কিন্তু আমি তার না-ফরমানী করেছি বলে আমার ঠিকানা হল জাহান্নাম’। [মুসলিমঃ ১৩৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০৬) নিশ্চয়ই যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে, তারা অহংকারে তাঁর উপাসনায় বিমুখ হয় না। তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে এবং তাঁরই নিকট তারা সিজদাবনত হয়। [1] [সাজদাহ] ۩

[1] এটি কুরআন মাজীদের প্রথম তিলাঅতের সিজদার স্থান। কুরআন মাজীদের সিজদার আয়াত তিলাঅত করলে অথবা শুনলে তকবীর দিয়ে একটি সিজদাহ করা এবং তকবীর দিয়ে মাথা তোলা মুস্তাহাব। এই সিজদার পর কোন তাশাহহুদ বা সালাম নেই। তকবীরের ব্যাপারে মুসলিম বিন য়্যাসার, আবূ কিলাবাহ ও ইবনে সীরীন কর্তৃক আষার বর্ণিত হয়েছে। (তামামুল মিন্নাহ ২৬৯পৃঃ) এই সিজদাহ করার বড় ফযীলত ও মাহাত্ম্য রয়েছে। মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত পাঠ করে সিজদাহ করে, তখন শয়তান দূরে সরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে, ‘হায় ধ্বংস আমার! ও সিজদাহ করতে আদেশ পেয়ে সিজদাহ করে, ফলে ওর জন্য রয়েছে জান্নাত। আর আমি সিজদার আদেশ পেয়ে তা অমান্য করেছি, ফলে আমার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।’’ (আহমাদ, মুসলিম ৮৯৫নং, ইবনে মাজাহ) তিলাঅতের সিজদার জন্য ওযূ শর্ত নয়। লজ্জাস্থান ঢাকা থাকলে ক্বিবলামুখে এই সিজদাহ করা যায়। যেহেতু ওযূ শর্ত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। (নাইলুল আউত্বার, আল-মুমতে’ ৪/১২৬, ফিকহুস সুন্নাহ আরবী ১/১৯৬) তিলাঅতের সিজদায় একাধিকবার পঠনীয় সুন্নতী দু’আ হল, سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِيْ خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ অর্থাৎ, আমার মুখমন্ডল তাঁর জন্য সিজদাবনত হল যিনি ওকে সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় শক্তি ও ক্ষমতায় ওর চক্ষু ও কর্ণকে উদগত করেছেন। (আহমদ ৬/৩০, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী) বাইহাকীর বর্ণনায় (وَصَوَّرَه) হাকেমের বর্ণনায় এই শব্দগুলিও বাড়তি এসেছে فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ। (আওনুল মাবূদ ১/৫৩৩) -সম্পাদক

তাফসীরে আহসানুল বায়ান