তাযকীর - আল্লাহর স্মরণ বিষয়ক আয়াতসমূহ ১৯ টি
আল-বাকারা
২:১৫২ فَاذۡكُرُوۡنِیۡۤ اَذۡكُرۡكُمۡ وَ اشۡكُرُوۡا لِیۡ وَ لَا تَكۡفُرُوۡنِ ﴿۱۵۲﴾

অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় কর, আমার সাথে কুফরী করো না। আল-বায়ান

কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং আমার শোকর করতে থাক, না-শোকরী করো না। তাইসিরুল

অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকেই স্মরণ করব এবং তোমরা আমারই নিকট কৃতজ্ঞ হও এবং অবিশ্বাসী হয়োনা। মুজিবুর রহমান

So remember Me; I will remember you. And be grateful to Me and do not deny Me. Sahih International

১৫২. কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ কর(১), আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ে না।

(১) যিকর আরবী শব্দ। এর বেশ কয়েকটি অর্থ হতে পারে-

(ক) মুখ থেকে যা উচ্চারণ করা হয়।

(খ) অন্তরে কোন কিছু স্মরণ করা।

(গ) কোন জিনিস সম্পর্কে সতর্ক করা।

শরী'ঈ পরিভাষায় যিকর হচ্ছে, বান্দা তার রবকে স্মরণ করা। হোক তা তার নাম নিয়ে, গুণ নিয়ে, তার কাজ নিয়ে, প্রশংসা করে, তার কিতাব তিলাওয়াত করে, তার একত্ববাদ ঘোষণা করে, তার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে অথবা তার কাছে কিছু চেয়ে।

যিকর দুই প্রকার। যথা - কওলী বা কথার মাধ্যমে যিকর ও আমলী বা কাজের মাধ্যমে যিকর। প্রথম প্রকার যিকরের মধ্যে রয়েছে - কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম ও সিফাতসমূহের আলোচনা ও স্মরণ, তার একত্ববাদ ঘোষণা ইত্যাদি। আর দ্বিতীয় প্রকারে রয়েছে - ইলম অর্জন করা ও শিক্ষা দেয়া, আল্লাহর হুকুম-আহকাম ও আদেশ-নিষেধ মেনে চলা ইত্যাদি। প্রথম প্রকার যিকরের মধ্যে কিছু যিকর আছে যা সময়, অবস্থা এবং সংখ্যার সাথে সম্পৃক্ত। যেমন, সকাল ও সন্ধ্যার যিকর, সালাতের পরের যিকর, খাওয়ার শুরু-শেষ, কাপড় পরিধান, মসজিদে প্রবেশ-বাহির ইত্যাদি সহ দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ-কর্মের দোআ বা যিকরসমূহ। যে সকল যিকর অবস্থা, সময় ও সংখ্যার সাথে সম্পৃক্ত সেগুলোর সংখ্যা, সময় অথবা অবস্থা কোনটিরই পরিবর্তন করা জায়েয নেই। যে সকল যিকর এ তিনটির সাথে সম্পৃক্ত নয় অর্থাৎ সাধারণ যিকর, সেগুলো সময়, সংখ্যা অথবা অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করাও জায়েয নেই। ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ‘মৌখিক যিকরের জন্য কোন নির্দিষ্ট স্থানে একত্রিত হওয়া এবং নির্দিষ্ট শব্দ নির্ধারণ করা বিদ'আত’। [ইবনুল হুমাম, শরহে ফাতহুল কাদীরঃ ২/৭২]

যিকর এর ফযীলত অসংখ্য। তন্মধ্যে এটাও কম ফযীলত নয় যে, বান্দা যদি আল্লাহকে স্মরণ করে, তাহলে আল্লাহও তাকে স্মরণ করেন। আবু উসমান নাহদী রাহেমাহুল্লাহ বলেন, আমি সে সময়টির কথা জানি, যখন আল্লাহ তা'আলা আমাদিগকে স্মরণ করেন। উপস্থিত লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আপনি তা কেমন করে জানতে পারেন? বললেন, তা এজন্য যে, কুরআনুল কারীমের ওয়াদা অনুসারে যখন কোন মুমিন বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন আল্লাহ নিজেও তাকে স্মরণ করেন। কাজেই বিষয়টি জানা সবার জন্যই সহজ যে, আমরা যখন আল্লাহর স্মরণে আত্মনিয়োগ করব, আল্লাহ্ তা'আলাও আমাদের স্মরণ করবেন।

সাঈদ ইবনে যুবায়ের রাহিমাহুল্লাহ যিকরুল্লাহ'র তাফসীর প্রসঙ্গে বলেছেন যে, যিকরের অর্থই হচ্ছে আনুগত্য এবং নির্দেশ মান্য করা। তার বক্তব্য হচ্ছেঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য করে না, সে আল্লাহর যিকরই করে না; প্রকাশ্যে যতবেশী সালাত এবং তাসবীহই সে পাঠ করুক না কেন। মূলত: যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা'আলার আনুগত্য করে অর্থাৎ তার হালাল ও হারাম সম্পর্কিত নির্দেশগুলোর অনুসরণ করে, সেই আল্লাহকে স্মরণ করে, যদি তার নফল সালাত ও সিয়াম কিছু কমও হয়। অন্যদিকে যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশাবলীর বিরুদ্ধাচরণ করে সে সালাত-সিয়াম, তাসবীহ-তাহলীল প্রভৃতি বেশী করে করলেও প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহকে স্মরণ করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেনঃ যে ব্যক্তি যিকর করে এবং যে ব্যক্তি যিকর করেনা তাদের উপমা হচ্ছে জীবিত ও মৃতের ন্যায়। [বুখারীঃ ২০৮]

অপর এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদেরকে কি এমন একটি উত্তম আমলের সংবাদ দেব যা তোমাদের মালিকের নিকট অধিকতর পবিত্র, তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অধিকতর সহায়ক, স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যয় করা থেকেও তোমাদের জন্য উত্তম, শক্রর সাথে মোকাবেলা করে গর্দান দেয়া-নেয়া থেকে উত্তম? তারা বলল, হ্যাঁ অবশ্যই বলবেন। তিনি বললেন, যিকরুল্লাহ। [তিরমিযীঃ ৫/৪৫৯]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এক হাদীসে-কুদসীতে আছে, আল্লাহ্ তাআলা বলেন, বান্দা যে পর্যন্ত আমাকে স্মরণ করতে থাকে বা আমার স্মরণে যে পর্যন্ত তার ঠোট নড়তে থাকে, সে পর্যন্ত আমি তার সাথে থাকি। [বুখারীঃ ৭৪০৫] মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আল্লাহর আযাব থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে মানুষের কোন আমলই যিকরুল্লাহর সমান নয়।” যুন্নুন মিসর বলেনঃ ‘যে ব্যক্তি প্রকৃতই আল্লাহকে স্মরণ করে সে অন্যান্য সবকিছুই ভুলে যায়। এর বদলায় স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলাই সবদিক দিয়ে তাকে হেফাজত করেন এবং সবকিছুর বদলা তাকে দিয়ে দেন’।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫২) অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর কৃতঘ্ন হয়ো না।[1]

[1] অতএব এই অনুগ্রহ ও নিয়ামতের দরুন তোমরা আমার যিকর ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। অকৃতজ্ঞ হয়ে নিয়ামতকে অস্বীকার করো না। আর যিকর (স্মরণ) করার অর্থ হল, সদা-সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করা। অর্থাৎ, ‘তাসবীহ’ (সুবহানাল্লাহ), ‘তাহলীল’ (লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ) এবং ‘তাকবীর’ (আল্লাহু আকবার) পাঠ করতে থাকো। আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অর্থ হল, আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও সামর্থ্যকে তাঁর (পক্ষ থেকেই আগত মনে করে তাঁরই সন্তুষ্টি ও) আনুগত্যের পথে ব্যয় করা। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তিকে তাঁর অবাধ্যতায় ব্যয় না করা। (এবং মুখে আল্লাহর প্রশংসার সাথে তা বয়ান করা।) এ রকম করলে আল্লাহর অকৃতজ্ঞ তথা নিয়ামতের কুফরী করা হয়। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলে আরো অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ এবং অকৃতজ্ঞ হলে কঠিন শাস্তি পাওয়ার কথা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দান করব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর। (সূরা ইবরাহীম ৭ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-বাকারা
২:১৯৮ لَیۡسَ عَلَیۡكُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَبۡتَغُوۡا فَضۡلًا مِّنۡ رَّبِّكُمۡ ؕ فَاِذَاۤ اَفَضۡتُمۡ مِّنۡ عَرَفٰتٍ فَاذۡكُرُوا اللّٰهَ عِنۡدَ الۡمَشۡعَرِ الۡحَرَامِ ۪ وَ اذۡكُرُوۡهُ كَمَا هَدٰىكُمۡ ۚ وَ اِنۡ كُنۡتُمۡ مِّنۡ قَبۡلِهٖ لَمِنَ الضَّآلِّیۡنَ ﴿۱۹۸﴾

তোমাদের উপর কোন পাপ নেই যে, তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে। সুতরাং যখন তোমরা আরাফা থেকে বের হয়ে আসবে, তখন মাশআরে হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তাকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি তোমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও তোমরা এর পূর্বে অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। আল-বায়ান

তোমাদের প্রতি কোন গুনাহ নেই যদি তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ খোঁজ কর এবং যখন তোমরা আরাফাত হতে ফিরবে তখন মাশ‘আরুল হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং তাঁকে স্মরণ করবে যেরূপ তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, বস্তুতঃ তোমরা এর আগে ছিলে পথভ্রষ্টদের অন্তর্গত। তাইসিরুল

তোমরা স্বীয় রবের অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করলে তাতে তোমাদের পক্ষে কোন অপরাধ নেই; অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে প্রত্যাবর্তিত হও তখন পবিত্র স্মৃতি-স্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর; এবং তিনি তোমাদেরকে যেরূপ নির্দেশ দিয়েছেন তদ্রুপ তাঁকে স্মরণ কর; এবং নিশ্চয়ই তোমরা এর পূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। মুজিবুর রহমান

There is no blame upon you for seeking bounty from your Lord [during Hajj]. But when you depart from 'Arafat, remember Allah at al- Mash'ar al-Haram. And remember Him, as He has guided you, for indeed, you were before that among those astray. Sahih International

১৯৮. তোমাদের রব-এর অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোন পাপ নেই(১)। সুতরাং যখন তোমরা আরাফাত(২) হতে ফিরে আসবে(৩) তখন মাশ'আরুল হারামের(৪) কাছে পৌছে আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন - ঠিক সেভাবে তাকে স্মরণ করবে। যদিও এর আগে(৫) তোমরা বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।

(১) বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, জাহেলিয়াতের যুগে ওকায, মাজান্নাহ ও যুল মাজায নামে তিনটি বাজার ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর হজের সময় সাহাবীরা সেই বাজারগুলোতে ব্যবসা করা গুনাহ বলে মনে করতে থাকলে আল্লাহ তা'আলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন। অর্থাৎ হজের মৌসুমে সেসব স্থানগুলোতে ব্যবসা করা কোনো দোষের কাজ নয়। [বুখারী: ১৭৭০, ২০৯৮]

(২) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা জিবরীলকে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে প্রেরণ করে তাকে হজ করান। তারা আরাফাতে পৌঁছলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, عَرَفْتُ বা আমি চিনতে পেরেছি। কারণ, জিবরীল আলাইহিস সালাম ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে এর পূর্বেই সেখানে একবার নিয়ে এসেছিলেন। আর সে জন্যই সেটার নাম হয় আরাফাত। [ইবনে কাসীর]

(৩) আদুর রহমান ইবনে ইয়ামুর আদ-দীলী বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, হজ হচ্ছে আরাফাত। তিনি এ কথা তিনবার বললেন। তারপর বললেন, যে ব্যক্তি সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পূর্বেই আরাফায় আসতে সক্ষম হবে সে হজ পেল। আর মিনা হচ্ছে তিন দিন। সুতরাং যদি কেউ দুইদিনে তাড়াতাড়ি করলো তার কোন পাপ নেই এবং যে ব্যক্তি বিলম্ব করলো তারও কোনো পাপ নেই। [আবু দাউদ: ১৯৪৯, তিরমিযী: ৮৮৯, ইবনে মাজাহ: ৩০১৫, মুসনাদে আহমাদ: ৪/৩০৯, ৩১০]

(৪) এখানে মাশ'আরুল হারাম বলে মুযদালিফা বোঝানো হয়েছে। কারণ, এ অংশ হারাম এলাকার ভিতরে। [ইবনে কাসীর]

(৫) এখানে ‘এর আগে’ বলে হেদায়াত আসার পূর্বে বা কুরআনের পূর্বে অথবা রাসূল আসার পূর্বে এ তিনটি অর্থই হতে পারে। অর্থগুলো পরস্পর কাছাকাছি। [ইবনে কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯৮) (হজ্জের সময়) তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ কামনায় (ব্যবসা-বাণিজ্যে) কোন দোষ নেই।[1] যখন তোমরা আরাফাত (প্রান্তর) হতে প্রত্যাবর্তন করবে, তখন (মুযদালিফায়) মাশআরুল হারামের নিকটে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তিনি যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, ঠিক সেইভাবে তাঁকে স্মরণ কর; যদিও পূর্বে তোমরা বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।[2]

[1] فَضل (অনুগ্রহ)এর অর্থ ব্যবসা-বাণিজ্য। অর্থাৎ, হজ্জের সফরে ব্যবসা-বাণিজ্য করাতে কোন দোষ নেই। (অবশ্য আসল উদ্দেশ্য হজ্জই হতে হবে; ব্যবসা যেন আসল উদ্দেশ্য না হয়; তাহলে হজ্জ হবে না।)

[2] ৯ই যুলহজ্জ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা হজ্জের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ রুকন (অঙ্গ)। এ সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে যে, আরাফায় অবস্থানই হল হজ্জ। এখানে মাগরিবের নামায পড়া হবে না, বরং মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিবের তিন রাকআত এবং এশার দু’ রাকআত (কসর করে) এক সাথে জমা করে একবার আযান ও দু’বার ইক্বামত দিয়ে পড়তে হবে। মুযদালিফাকেই ‘মাশআরে হারাম’ বলা হয়। কেননা, এটা হারামেরই অন্তর্ভুক্ত। এখানে হাজীদেরকে আল্লাহর যিকরের প্রতি যত্ন নিতে বলা হয়েছে। এখানে রাত্রিবাস করতে হয়। ফজরের নামায ‘গালাস’ (অন্ধকারে) অর্থাৎ, প্রথম অক্তে পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত যিকরে ব্যস্ত থাকতে হয় এবং সূর্যোদয়ের পর মিনা অভিমুখে যাত্রা করতে হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-বাকারা
২:২০০ فَاِذَا قَضَیۡتُمۡ مَّنَاسِكَكُمۡ فَاذۡكُرُوا اللّٰهَ كَذِكۡرِكُمۡ اٰبَآءَكُمۡ اَوۡ اَشَدَّ ذِكۡرًا ؕ فَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّقُوۡلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا وَ مَا لَهٗ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنۡ خَلَاقٍ ﴿۲۰۰﴾

তারপর যখন তোমরা তোমাদের হজের কাজসমূহ শেষ করবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তোমরা স্মরণ করতে তোমাদের বাপ-দাদাদেরকে, এমনকি তার চেয়ে অধিক স্মরণ। আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। বস্তুত আখিরাতে তার জন্য কোন অংশ নেই। আল-বায়ান

অতঃপর মহান হাজ্জের করণীয় কার্যাবলী সমাপ্ত করবে, তখন আল্লাহর স্মরণে মশগুল হও, যেমন তোমরা নিজেদের বাপ-দাদাদের স্মরণে মশগুল থাক, বরং তার চেয়েও বেশি স্মরণ কর। লোকেদের কেউ কেউ বলে থাকে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ দুনিয়াতেই প্রদান কর, বস্তুতঃ সে আখেরাতে কিছুই পাবে না। তাইসিরুল

অনন্তর যখন তোমরা তোমাদের (হাজ্জের) অনুষ্ঠানগুলি সম্পন্ন করে ফেল তখন যেরূপ তোমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে স্মরণ করতে তদ্রুপ আল্লাহকে স্মরণ কর, বরং তদপেক্ষা দৃঢ়তরভাবে স্মরণ কর; কিন্তু মানবমন্ডলীর মধ্যে কেহ কেহ এরূপ আছে যারা বলেঃ হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে ইহকালেই দান কর এবং তাদের জন্য আখিরাতে কোনই অংশ নেই। মুজিবুর রহমান

And when you have completed your rites, remember Allah like your [previous] remembrance of your fathers or with [much] greater remembrance. And among the people is he who says, "Our Lord, give us in this world," and he will have in the Hereafter no share. Sahih International

২০০. অতঃপর যখন তোমরা হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করবে তখন আল্লাহকে এভাবে স্মরণ করবে। যেভাবে তোমরা তোমাদের পিতৃ পুরুষদের স্মরণ করে থাক, অথবা তার চেয়েও অধিক(১)। মানুষের মধ্যে যারা বলে, “হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতেই দিন”। আখেরাতে তার জন্য কোনও অংশ নেই।

(১) আতা রহিমাহুল্লাহ বলেন, এর অর্থ হলো, শিশুরা যেমন পিতা মাতাকে সব সময় স্মরণ করে, তোমরাও হজ শেষ করার পর আল্লাহ তা'আলাকে তেমনি স্মরণ কর। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, জাহেলিয়াতে হজের সময় একত্রে বসে পরস্পরে বলাবলি করত যে, আমার পিতা একজন অতিথিপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সাধারণের ভালো কাজ করে দিতেন। তিনি মানুষের দিয়াত বা রক্তপণ আদায় করে দিতেন। তাই আল্লাহ তা'আলা এখানে আল্লাহর যিকরকে তাদের পিতৃপুরুষের স্মরণের সাথে তুলনা করে বেশী বেশী করে যিকর করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। [ইবনে কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০০) অতঃপর যখন তোমরা (হজ্জের) যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করে নেবে, তখন (মিনায়) আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ করবে, যেমন (জাহেলী যুগে) তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষগণকে স্মরণ করতে, অথবা তদপেক্ষা গভীরভাবে।[1] এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে পৃথিবীতে (সওয়াব) দান কর।’ বস্তুতঃ তাদের জন্য পরকালে কোন অংশ নেই।

[1] আরবের লোক হজ্জ সমাপ্ত করে মিনায় মেলা বসাতো এবং পূর্বপুরুষদের কৃতিত্ব স্মরণ করত। মুসলিমদেরকে বলা হচ্ছে যে, ১০ই যুলহজ্জ কাঁকর মেরে, মাথা নেড়া করে এবং কাবার তাওয়াফ ও স্বাফা-মারওয়ার সাঈ করে হজ্জ সমাপ্ত করে নেওয়ার পর তোমরা যে তিনদিন মিনায় অবস্থান করবে, সে দিনগুলিতে সেখানে খুব বেশী বেশী আল্লাহর যিকর কর। যেমন, জাহেলী যুগে তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আলে-ইমরান
৩:৪১ قَالَ رَبِّ اجۡعَلۡ لِّیۡۤ اٰیَۃً ؕ قَالَ اٰیَتُكَ اَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلٰثَۃَ اَیَّامٍ اِلَّا رَمۡزًا ؕ وَ اذۡكُرۡ رَّبَّكَ كَثِیۡرًا وَّ سَبِّحۡ بِالۡعَشِیِّ وَ الۡاِبۡكَارِ ﴿۴۱﴾

সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে দেন একটি নিদর্শন’। তিনি বললেন, ‘তোমার নিদর্শন হল, তুমি তিন দিন পর্যন্ত মানুষের সাথে ইশারা ছাড়া কথা বলবে না। আর তোমার রবকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যা তার তাসবীহ পাঠ কর’। আল-বায়ান

সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য কোন নিদর্শন দাও’। তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য নিদর্শন এই যে, তিনদিন তুমি ইশারা ছাড়া লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না এবং তোমার প্রতিপালককে অধিক স্মরণ করবে এবং সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে’। তাইসিরুল

সে বলেছিলঃ হে আমার রাব্ব! আমার জন্য কোন নিদর্শন নির্দিষ্ট করুন; তিনি বললেনঃ তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি তিন দিন ইঙ্গিত ব্যতীত লোকের সাথে কথা বলতে পারবেনা; এবং স্বীয় রাব্বকে বেশী বেশী স্মরণ কর এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। মুজিবুর রহমান

He said, "My Lord, make for me a sign." He Said, "Your sign is that you will not [be able to] speak to the people for three days except by gesture. And remember your Lord much and exalt [Him with praise] in the evening and the morning." Sahih International

৪১. তিনি বললেন, হে আমার রব! আমাকে একটি নিদর্শন দিন(১)। তিনি বললেন, আপনার নিদর্শন এই যে, তিন দিন আপনি ইঙ্গিত ছাড়া কথা বলবেন না(২) আর আপনার রবকে অধিক স্মরণ করুন এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তার পবিত্রতা-মহিমা ঘোষণা করুন।

(১) প্রতিশ্রুত সেই সুসংবাদটি সম্পর্কে বিস্তারিত অবগতি এবং পুত্র জন্মগ্রহণের পূর্বেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশে মশগুল হওয়ার উদ্দেশ্যে যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম নিদর্শন জানতে চেয়েছিলেন। [কাশশাফ; ফাতহুল কাদীর] আল্লাহ তা'আলা তাকে এ নিদর্শন দিলেন যে, তিন দিন পর্যন্ত তুমি মানুষের সাথে ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কথা বলতে সমর্থ হবে না। এ নিদর্শনের মধ্যে সূক্ষ্মতা এই যে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে নিদর্শন চাওয়া হয়েছিল। আল্লাহ্ তা'আলা এমন নিদর্শন দিলেন যে, তাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়া যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম অন্য কোন কাজের যোগ্যই থাকবেন না। [ফাতহুল কাদীর]

(২) এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, কথা বলতে অক্ষম হলে ইশারা-ইঙ্গিত কথার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। এক হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দাসীকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আল্লাহ কোথায়? উত্তরে সে আকাশের দিকে ইশারা করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দাসী মুসলিম। তাকে আযাদ করে দাও। [মুসলিমঃ ৫৩৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪১) সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি নিদর্শন দাও।’ তিনি বললেন, ‘তোমার নিদর্শন এই যে, তিনদিন তুমি ইঙ্গিতে ব্যতীত লোকেদের সাথে কথা বলতে পারবে না। আর তুমি তোমার প্রতিপালককে অত্যধিক স্মরণ কর এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।’[1]

[1] বার্ধক্যে মু’জিযা স্বরূপ সন্তান লাভের সুসংবাদ শুনে তাঁর ব্যাকুলতা বৃদ্ধি পেল এবং তিনি আল্লাহর কাছে নিদর্শন জানতে চাইলেন। মহান আল্লাহ বললেন, ‘তিন দিনের জন্য তোমার জবান বন্ধ হয়ে যাবে। আর এটাই হবে আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য নির্দশন। তবে তুমি এই নীরবতায় সকাল ও সন্ধ্যায় অধিকমাত্রায় আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করো। যাতে যে নিয়ামত তুমি লাভ করতে যাচ্ছ, তার শুকর আদায় হয়ে যায়।’ অর্থাৎ, তাঁকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ তোমার চাওয়া অনুপাতে বহু নিয়ামত দানে তোমাকে ধন্য করেছেন, অতএব সেই হিসাবে তাঁর শুকরিয়াও বেশী বেশী কর।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আলে-ইমরান
৩:১৯০ اِنَّ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافِ الَّیۡلِ وَ النَّهَارِ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی الۡاَلۡبَابِ ﴿۱۹۰﴾ۚۙ

নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নির্দশন। আল-বায়ান

নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য বহু নিদর্শন আছে। তাইসিরুল

নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে। মুজিবুর রহমান

Indeed, in the creation of the heavens and the earth and the alternation of the night and the day are signs for those of understanding. Sahih International

১৯০. আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে(১), রাত ও দিনের পরিবর্তনে(২) নিদর্শনাবলী রয়েছে(৩) বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য।

(১) অর্থাৎ আসমান এবং যমীন সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ্ তা'আলার এক বিরাট নিদর্শন বিদ্যমান। এ দুয়ের মধ্যে অবস্থিত আল্লাহ তা'আলার অসংখ্য সৃষ্টিরাজিকেও এ আয়াত দ্বারা বুঝানো হয়েছে। এ বিরাট সৃষ্টজগতের মধ্যে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত প্রতিটি সৃষ্ট বস্তুই স্ব স্ব সৃষ্টিকর্তার নিদর্শনরূপে দাঁড়িয়ে আছে।

(২) চিন্তা-ভাবনার দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, দিন-রাত্রির আবর্তন। আয়াতে উল্লেখিত اختلاف শব্দটি আরবী পরিভাষায়, ‘পরে আসা’ এর অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেমতে বাক্যের অর্থ হবে, রাত্রির গমন এবং দিবসের আগমন। আবার اختلاف শব্দ দ্বারা কম-বেশীও বুঝায়। যেমন, শীতকালে রাত্রি হয় দীর্ঘ এবং দিন হয় খাটো, গরমকালে দিন বড় এবং রাত্রি হয় ছোট। অনুরূপভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে দিবস এবং রাত্রির দৈর্ঘ্যেও তারতম্য হয়ে থাকে। যেমন, উত্তর মেরুর সন্নিকটবর্তী দেশগুলোতে দিবাভাগ উত্তর মেরু থেকে দুরবর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশী দীর্ঘ হয়। এসব বিষয়ই আল্লাহ্ তা'আলার অপার কুদরাতের অতি উজ্জ্বল নিদর্শন।

(৩) آية এর বহুবচন হল آيات। শব্দটি কয়েকটি অর্থেই ব্যবহৃত হয়। যথা- মু'জিযাকে ‘আয়াত’ বলা হয়। অনুরূপভাবে, কুরআনের বাক্যকেও ‘আয়াত’ বলা হয়। তৃতীয় অর্থে দলীল-প্রমাণ ও নিদর্শনাবলীকে বুঝানো হয়ে থাকে। এখানে তৃতীয় অর্থেই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ এসব বিষয়ের মধ্যে আল্লাহ্ তা'আলার বিরাট নিদর্শনাবলী রয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯০) নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকেদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। [1]

[1] অর্থাৎ, যাঁরা আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং বিশ্ব-জাহানের অন্যান্য রহস্য এবং গুপ্তবিষয় সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করেন, তাঁরা বিশ্বের স্রষ্টা এবং তার পরিচালকের পরিচয় অর্জন করতে সক্ষম হন এবং তাঁরা জেনে যান যে, বিশাল এই পৃথিবীর সুনিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খলা ও সুব্যবস্থা --যাতে সামান্য পরিমাণও কোন বিশৃঙ্খলা দেখা যায় না-- অবশ্যই তার পিছনে এমন কোন সত্তা আছে যে তা সূক্ষ্ণভাবে পরিচালনা করছে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করছে। আর সে সত্তা হল আল্লাহর সত্তা। পরের আয়াতে এই জ্ঞানীজনদের গুণাবলী উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তাঁরা দাঁড়িয়ে-বসে এবং শয়ন অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করেন।---হাদীসে বর্ণিত যে, ১৯০নং আয়াত থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত আয়াতগুলো নবী করীম (সাঃ) যখন রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য উঠতেন, তখন পড়তেন এবং তারপর ওযূ করতেন। (বুখারী ৪৫৬৯-মুসলিম ২৫৬নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আলে-ইমরান
৩:১৯১ الَّذِیۡنَ یَذۡكُرُوۡنَ اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِهِمۡ وَ یَتَفَكَّرُوۡنَ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هٰذَا بَاطِلًا ۚ سُبۡحٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ﴿۱۹۱﴾

যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর’। আল-বায়ান

যারা আল্লাহকে দন্ডায়মান, উপবিষ্ট এবং শায়িত অবস্থায় স্মরণ করে থাকে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তা করে (ও বলে) : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সুতরাং আমাদেরকে অগ্নির শাস্তি হতে রক্ষা কর। তাইসিরুল

যারা দন্ডায়মান, উপবেশন ও এলায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-গবেষনা করে এবং বলেঃ হে আমাদের রাব্ব! আপনি এসব বৃথা সৃষ্টি করেননি; আপনিই পবিত্রতম! অতএব আমাদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করুন! মুজিবুর রহমান

Who remember Allah while standing or sitting or [lying] on their sides and give thought to the creation of the heavens and the earth, [saying], "Our Lord, You did not create this aimlessly; exalted are You [above such a thing]; then protect us from the punishment of the Fire. Sahih International

১৯১. যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে, আর বলে ‘হে আমাদের রব! আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি(১), আপনি অত্যন্ত পবিত্র, অতএব আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি হতে রক্ষা করুন

(১) সারকথা, আল্লাহ্ তা'আলার সৃষ্টি ও সৃষ্টজগতের উপর চিন্তা-গবেষণা করে তার মাহাত্ম্য ও কুদরাত সম্পর্কে অবগত হওয়া একটি মহৎ ও উচ্চ পর্যায়ের ইবাদাত। সেগুলোর মধ্যে গভীর মনোনিবেশ করে তা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ না করা একান্তই নির্বুদ্ধিতা। উল্লেখিত আয়াতের শেষ বাক্যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহে চিন্তা গবেষণা করার ফলাফল বাতলে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে (رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَاطِلًا) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলার সীমাহীন সৃষ্টির উপর যে লোক চিন্তা-ভাবনা করে সে লোক সহজেই বুঝে যে, এসব বস্তু-সামগ্রীকে আল্লাহ নিরর্থক সৃষ্টি করেননি; বরং এসবের সৃষ্টির পেছনে হাজারো তাৎপর্য নিহিত রয়েছে।

সে সমস্তকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করে দিয়ে মানুষকে এ চিন্তা-ভাবনা করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যে, সমগ্র পৃথিবী তাদের কল্যাণের জন্য তৈরী করা হয়েছে এবং তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র আল্লাহ তা'আলার ইবাদাতের উদ্দেশ্যে। এটাই হল তাদের জীবনের লক্ষ্য। সুতরাং গোটা বিশ্ব-সৃষ্টি নিরর্থক নয় বরং এগুলো সবই বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলমীনের অসীম কুদরাত ও হেকমতেরই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

উবাইদ ইবনে উমাইর বলেনঃ আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললাম, রাসূলের সবচেয়ে আশ্চর্য কি কাজ আপনি দেখেছেন, তা আমাদেরকে জানান। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আয়েশা, আমাকে আমার রবের ইবাদাত করতে দাও। আমি বললাম, হে রাসূল, আমি আপনার পাশে থাকতে ভালবাসি এবং যা আপনাকে খুশি করে তা করতে ভালবাসি। তারপর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং সালাত আদায়ে নিবিষ্ট হলেন ও কাঁদতে থাকলেন।

আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কাঁদছেন অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? এ রাতে আমার উপর একটি আয়াত নাযিল হয়েছে, যে ব্যক্তি তা তেলাওয়াত করল এবং চিন্তা-গবেষণা করল না, তার ধ্বংস অনিবার্য। তারপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। সহীহ [ইবনে হিব্বানঃ ৬২০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯১) যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে,) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এ নিরর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর। [1]

[1] এই দশটি আয়াতের মধ্যে প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর শক্তি-সামর্থ্যের কিছু নিদর্শন বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, এগুলো নির্দশন অবশ্যই, তবে কার জন্যে? জ্ঞানীদের জন্যে। এর অর্থ হল, বিস্ময়কর এই সৃষ্টি এবং আল্লাহর মহা কুদরত দেখেও যে ব্যক্তি মহান স্রষ্টার পরিচয় লাভ করতে পারে না, সে প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানীই নয়। কিন্তু বড় আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল যে, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বেও ‘জ্ঞানী’ (বিজ্ঞানী) তাকেই মনে করা হয়, যে মহান আল্লাহর ব্যাপারে সন্দেহের শিকার।

فإِنَّا للهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ-

দ্বিতীয় আয়াতে জ্ঞানীদের আল্লাহর যিকর করার স্পৃহা এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে তাঁদের চিন্তা ও গবেষণা করার কথা বর্ণিত হয়েছে। হাদীসেও রসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘দাঁড়িয়ে নামায পড়। যদি দাঁড়িয়ে পড়তে না পার, তাহলে বসে বসে পড়। আর যদি বসে বসে পড়তে না পার, তবে পার্শ্বদেশে শুয়ে শুয়ে পড়।’’ (বুখারী১১১৭নং) এই ধরনের লোক যাঁরা সব সময় আল্লাহর যিকর করেন ও তাঁকে স্মরণে রাখেন এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি ও তার রহস্য ও যুক্তিসমূহ সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করেন, তাঁরা বিশ্বস্রষ্টার মহত্ত্ব ও মহাশক্তি, তাঁর জ্ঞান ও এখতিয়ার এবং তাঁর রহমত ও প্রতিপালকত্ব সম্পর্কে সঠিক পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হন। ফলে আপনা-আপনিই তাঁদের মুখ ফুটে বেড়িয়ে আসে যে, বিশ্বের প্রতিপালক এই বিশাল পৃথিবীকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি; বরং এর উদ্দেশ্য হল বান্দাদেরকে পরীক্ষা করা। যে বান্দা পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করতে পারবে, সে লাভ করবে চিরস্থায়ী জান্নাতের নিয়ামত। আর যে পরীক্ষায় ব্যর্থ হবে, তার জন্য হবে জাহান্নামের আযাব। এই জন্যই তাঁরা (জ্ঞানীজন) জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার দু’আও করে থাকেন। পরের তিনটি আয়াতে ক্ষমা প্রার্থনা এবং কিয়ামতের দিনের লাঞ্ছনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার দু’আ রয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আন-নিসা
৪:১০৩ فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡكُرُوا اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِكُمۡ ۚ فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ۚ اِنَّ الصَّلٰوۃَ كَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ كِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا ﴿۱۰۳﴾

অতঃপর যখন তোমরা সালাত পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করবে। অতঃপর যখন নিশ্চিন্ত হবে তখন সালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয। আল-বায়ান

যখন তোমরা নামায আদায় করে নেবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে, অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন (যথানিয়মে) নামায কায়িম করবে। নির্দিষ্ট সময়ে নামায কায়িম করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। তাইসিরুল

অতঃপর যখন তোমরা সালাত সম্পন্ন কর তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট এবং শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর; অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হও তখন সালাত প্রতিষ্ঠিত কর; নিশ্চয়ই সালাত বিশ্বাসীগণের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত। মুজিবুর রহমান

And when you have completed the prayer, remember Allah standing, sitting, or [lying] on your sides. But when you become secure, re-establish [regular] prayer. Indeed, prayer has been decreed upon the believers a decree of specified times. Sahih International

১০৩. অতঃপর যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে(১), অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যথাযথ সালাত কায়েম করবে(২); নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য(৩)।

(১) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা যখনই কোন ফরয তার বান্দাদের উপর অবধারিত করে দিয়েছেন তখনই সেটার একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারপর যারা সেটা করতে সক্ষম হবে না তাদেরকে ভিন্ন পথ বাতলে দিয়েছেন। এর ব্যতিক্রম হচ্ছে, আল্লাহর যিকর। এই যিকর এর ব্যাপারে যতক্ষণ কেউ সুস্থ বিবেকসম্পন্ন থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ্ তা'আলা কাউকে ওযর আপত্তি পেশ করার সুযোগ দেন নি। সর্বাবস্থায় তাকে যিকর করতে হবে। রাত-দিন, জল-স্থল, চালিয়ে যেতে হবে। এ আয়াতের এটাই ভাষ্য। [তাবারী, আত-তাফসীরুস সহীহ]

(২) মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ যখন তোমরা নিরাপদ হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করবে, তখন পূর্ণরূপ সালাত আদায় করবে। [তাবারী] অর্থাৎ কেউ যেন মনে না করে বসে যে, তাদের সালাত কমে গেছে বা কম পড়লেও চলবে।

(৩) এখানে নির্ধারিত সময় বলে, সালাতের জন্য আল্লাহ কর্তৃক প্রত্যেক সালাতের জন্য নির্ধারিত ওয়াক্তসমূহকে বোঝানো হয়েছে। এখানে সে ওয়াক্তসমূহ বলে দেয়া হয়নি। পক্ষান্তরে অন্য আয়াতে সেগুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করুন এবং ফজরের সালাত নিশ্চয়ই ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়।” [সূরা আল-ইসরা: ৭৮] পাশাপাশি হাদীসে সালাতের ওয়াক্তের বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সালাতের প্রথম ও শেষ সময় রয়েছে। যোহরের সালাতের প্রথম সময় হচ্ছে যখন সূর্য হেলে যাবে। আর শেষ সময় হচ্ছে, আসরের ওয়াক্ত প্রবেশ করা পর্যন্ত। অনুরূপভাবে আসরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন এর ওয়াক্ত হবে। আর তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত। তদ্রুপ মাগরিবের প্রথম সময় হচ্ছে যখন সূর্য ডুবে যায়। তার শেষ সময় হচ্ছে, যখন দিগন্ত রেখা চলে যায়। আর এশার প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন দিগন্ত রেখা চলে যায়। আর শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে, মধ্য রাত পর্যন্ত। ফজরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন সুবহে সাদিক উদিত হয়। আর শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন সূর্য উদিত হয়। [তিরমিযী ১৫১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৩) তারপর যখন তোমরা নামায শেষ করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ কর।[1] অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে, তখন যথাযথভাবে নামায পড়। [2] নিশ্চয় নামাযকে বিশ্বাসীদের জন্য নির্ধারিত সময়ে অবশ্য কর্তব্য করা হয়েছে। [3]

[1] উক্ত ভয়ের নামাযকেই বুঝানো হয়েছে। এ নামাযকে যেহেতু কমিয়ে হালকা করে দেওয়া হয়েছে তাই এই ঘাটতি পূরণের জন্য বলা হচ্ছে যে, দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকর করতে থেকো।

[2] অর্থাৎ, ভয় ও যুদ্ধ-অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটলে, নামাযকে তার পূর্বের নিয়মে পড়বে যেভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় পড়া হয়।

[3] এতে নামাযকে তার যথানির্ধারিত সময়ে পড়ার তাকীদ করা হয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কোন শরয়ী ওজর ছাড়া দুই নামাযকে একত্রে (জমা করে) পড়া শুদ্ধ নয়। কেননা, (একত্রে পড়লে) কম-সে কম একটি নামাযকে তার সময় ছাড়াই পড়া হবে যা এই আয়াতের পরিপন্থী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-আ'রাফ
৭:২০৫ وَ اذۡكُرۡ رَّبَّكَ فِیۡ نَفۡسِكَ تَضَرُّعًا وَّ خِیۡفَۃً وَّ دُوۡنَ الۡجَهۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَالِ وَ لَا تَكُنۡ مِّنَ الۡغٰفِلِیۡنَ ﴿۲۰۵﴾

আর তুমি নিজ মনে আপন রবকে স্মরণ কর সকাল-সন্ধ্যায় অনুনয়-বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে। আর গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। আল-বায়ান

তোমার প্রতিপালককে মনে মনে বিনয়ের সঙ্গে ভয়-ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকাল-সন্ধ্যায় স্মরণ কর আর উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না। তাইসিরুল

তোমার রাব্বকে মনে মনে সবিনয় ও সশংক চিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে, আর (হে নাবী!) তুমি এ ব্যাপারে গাফিল ও উদাসীন হয়ো না । মুজিবুর রহমান

And remember your Lord within yourself in humility and in fear without being apparent in speech - in the mornings and the evenings. And do not be among the heedless. Sahih International

২০৫. আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন(১) সবিনয়ে, সশংকচিত্তে ও অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়। আর উদাসীনদের অন্তভুক্ত হবেন না।

(১) স্মরণ করা অর্থ নামাযও এবং অন্যান্য ধরনের স্মরণ করাও। চাই মুখে মুখে বা মনে মনে যে কোনভাবেই তা হোক না কেন। সকাল-সাঁঝ বলতে সুনির্দিষ্টভাবে এ দুটি সময়ও বুঝানো হয়ে থাকতে পারে। আর এ দু' সময়ে আল্লাহর স্মরণ বলতে বুঝানো হয়েছে সকালের ও বিকালের নামাযকে। [তাবারী] অনুরূপ অর্থে অপর সূরায় এসেছে, “এবং আপনার রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে।” [সূরা কাফ: ৩৯] পক্ষান্তরে সকাল-সাঁঝ কথাটা “সর্বক্ষণ” অর্থেও ব্যবহৃত হয়। [কাশশাফ] এবং তখন এর অর্থ হয় সবসময় আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা। এর উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসংগে বলা হয়েছে, তোমাদের অবস্থা যেন গাফেলদের মত না হয়ে যায়। দুনিয়ায় যা কিছু গোমরাহী ছড়িয়েছে এবং মানুষের নৈতিক চরিত্রে ও কর্মকাণ্ডে যে বিপর্যয়ই সৃষ্টি হয়েছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে, মানুষ ভুলে যায়, আল্লাহ তার রব, সে আল্লাহর বান্দা, দুনিয়ার জীবন শেষ হবার পর তাকে তার রবের কাছে হিসাব দিতে হবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০৫) তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চসবরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর এবং তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-আনফাল
৮:৪৫ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا لَقِیۡتُمۡ فِئَۃً فَاثۡبُتُوۡا وَ اذۡكُرُوا اللّٰهَ كَثِیۡرًا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿ۚ۴۵﴾

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা কোন দলের মুখোমুখি হও, তখন অবিচল থাক, আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হও। আল-বায়ান

হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কোন বাহিনীর সম্মুখীন হবে তখন অবিচল থাকবে আর আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার। তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং অবিচল থাকবে যখন কোন দলের সম্মুখীন হও, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। মুজিবুর রহমান

O you who have believed, when you encounter a company [from the enemy forces], stand firm and remember Allah much that you may be successful. Sahih International

৪৫. হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কোন দলের সম্মুখীন হবে তখন অবিচলিত থাক(১) এবং আল্লাহকে বেশী পরিমাণ স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।(২)

(১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক যুদ্ধে তিনি এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবন আবি আওফা বলেনঃ এক যুদ্ধে রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূৰ্য্য পশ্চিমাকাশে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন, তারপর ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ হে মানুষগণ! তোমরা শক্রর সাথে সাক্ষাতের আকাংখায় থেকে না। আল্লাহর কাছে এর থেকে বিমুক্তি চাও। তারপরও যদি সাক্ষাত হয়ে যায় তখন ধৈর্যের সাথে টিকে থাক এবং মনে রেখ যে, তরবারীর ছায়ার নীচে জান্নাত। [বুখারীঃ ২৯৬৫, ২৯৬৬]

(২) এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা মুসলিমগণকে যুদ্ধক্ষেত্র এবং শক্রর মোকাবেলার জন্য এক বিশেষ হেদায়াত দান করেছেন। তন্মধ্যে প্রথম হচ্ছে, দৃঢ়তা অবলম্বন করা ও স্থির-অটল থাকা। মনের দৃঢ়তা ও সংকল্পের অটলতা উভয়টিই এর অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় হচ্ছে, আল্লাহর যিকর। আল্লাহর যিকর-এ নিজস্বভাবে যে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে, তা তো যথাস্থানে আছেই, তদুপরি এটাও একটি বাস্তব সত্য যে, দৃঢ়তার জন্যও এর চেয়ে পরীক্ষিত কোন ব্যবস্থা নেই। সুতরাং দৃঢ়পদ থাকা ও আল্লাহর যিকর এ দুটি বিজয়ের প্রধান কারণ। [সা’দী; আইসারুত তাফসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৫) হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা যখন কোন দলের সম্মুখীন হবে, তখন অবিচল থাক এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [1]

[1] এবার এখানে মুসলিমদেরকে সেই আদবসমূহ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, যা কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় পালন করা জরুরী। (ক) দৃঢ়পদ ও অবিচলিত থাকবে। কারণ এ ছাড়া যুদ্ধের ময়দানে টিঁকে থাকা সম্ভব নয়। তবে কিন্তু এ থেকে যুদ্ধকৌশল পরিবর্তন কিংবা স্বীয় দলে স্থান নেওয়ার দুই অবস্থা স্বতন্ত্র; যা পূর্বে (সূরা আনফাল ১৬ আয়াতে) স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। কেননা, কোন কোন ক্ষেত্রে দৃঢ়পদ থাকার জন্যেও যুদ্ধকৌশল পরিবর্তন কিংবা স্বীয় দলে স্থান নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। (খ) যুদ্ধের সময় আল্লাহকে অধিকাধিক স্মরণ করবে। মুসলিম যোদ্ধা যদি সংখ্যায় কম থাকে, তাহলে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে। অধিক যিকর করার ফলে আল্লাহও তাদের খেয়াল রাখবেন। আর যদি মুসলিমরা সংখ্যায় বেশী হয়, তাহলে আধিক্যের কারণে যেন তোমাদের অন্তরে গর্ব ও অহংকার সৃষ্টি না হয়। বরং আসল নির্ভর যেন আল্লাহর সাহায্যের উপরই থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৩ আর-রাদ
১৩:২৮ اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ تَطۡمَئِنُّ قُلُوۡبُهُمۡ بِذِكۡرِ اللّٰهِ ؕ اَلَا بِذِكۡرِ اللّٰهِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ ﴿ؕ۲۸﴾

‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়’। আল-বায়ান

তারাই ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমেই দিলের সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়। তাইসিরুল

যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়; জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়। মুজিবুর রহমান

Those who have believed and whose hearts are assured by the remembrance of Allah. Unquestionably, by the remembrance of Allah hearts are assured." Sahih International

২৮. যারা ঈমান আনে(১) এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের মন প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়(২);

(১) অর্থাৎ তারা যে নিদর্শন চাচ্ছে তেমনি কোন নিদর্শন ছাড়াই যারা ঈমান আনে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে।

(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার প্রভুর স্মরণ অর্থাৎ যিকির করে আর যে করে না তাদের উদাহরণ হলো জীবিত এবং মৃত ব্যক্তির ন্যায়। [বুখারীঃ ৬৪০৭] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ “যে ব্যক্তি প্রতিদিন একশতবার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী পাঠ করবে, তার গুনাহ যদি সমুদ্রের ফেনাতুল্যও হয় তবুও আল্লাহ দয়া করে তা ক্ষমা করে দিবেন।” [বুখারীঃ ৬৪০৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যে ব্যক্তি দিনে একশতবার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া 'আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর’ পড়ে সে ব্যক্তি দশটি দাস স্বাধীন করার সওয়াব পাবে, তার জন্য একশটি নেকী লিখা হবে এবং তার একশটি গুণাহ মিটিয়ে দেয়া হবে। ওই দিন সন্ধা পর্যন্ত শয়তান থেকে তার রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা হবে এবং তার চেয়ে উত্তম আর কেউ হবে না। তবে যে ব্যক্তি এটা তার চেয়ে বেশী পড়ে সে ব্যতিত”। [বুখারীঃ ৬৪০৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) যারা বিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়। জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়। [1]

[1] আল্লাহর স্মরণ বা যিকরের অর্থ তাঁর তওহীদের (একত্ববাদের) বর্ণনা, যার দ্বারা মুশরিকদের অন্তর সঙ্কুচিত হয়ে যায়। অথবা যিকর অর্থঃ তাঁর ইবাদত, কুরআন তিলাঅত, নফল ইবাদত এবং দু‘আ ও মুনাজাত; যা ঈমানদারদের মনের খোরাক। অথবা তাঁর আদেশ-নির্দেশ পালন করা; যা ব্যতিরেকে ঈমানদার ও পরহেযগারগণ অস্থির থাকেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:২৩ وَ لَا تَقُوۡلَنَّ لِشَایۡءٍ اِنِّیۡ فَاعِلٌ ذٰلِكَ غَدًا ﴿ۙ۲۳﴾

আর কোন কিছুর ব্যাপারে তুমি মোটেই বলবে না যে, ‘নিশ্চয় আমি তা আগামী কাল করব’, আল-বায়ান

কোন বিষয় সম্পর্কে কক্ষনো বল না যে, ‘ওটা আমি আগামীকাল করব।’ তাইসিরুল

কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলনা - আমি ওটা আগামীকাল করব – মুজিবুর রহমান

And never say of anything, "Indeed, I will do that tomorrow," Sahih International

২৩. আর কখনই আপনি কোন বিষয়ে বলবেন না, আমি তা আগামীকাল করব,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলো না যে, ‘আমি ওটা আগামীকাল করব’--

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৮ আল-কাহফ
১৮:২৪ اِلَّاۤ اَنۡ یَّشَآءَ اللّٰهُ ۫ وَ اذۡكُرۡ رَّبَّكَ اِذَا نَسِیۡتَ وَ قُلۡ عَسٰۤی اَنۡ یَّهۡدِیَنِ رَبِّیۡ لِاَقۡرَبَ مِنۡ هٰذَا رَشَدًا ﴿۲۴﴾

তবে ‘আল্লাহ যদি চান’। আর যখন ভুলে যাও, তখন তুমি তোমার রবের যিকির কর এবং বল, আশা করি, আল্লাহ আমাকে এর চেয়েও নিকটবর্তী সত্য পথের হিদায়াত দেবেন। আল-বায়ান

‘আল্লাহ ইচ্ছে করলে’ বলা ছাড়া। যদি ভুলে যাও (তবে মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে) তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর আর বল, ‘আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে এর চেয়েও সত্যের নিকটবর্তী পথে পরিচালিত করবেন। (কেননা এক ব্যক্তি যেভাবেই সঠিক পথে চলুক না কেন, তার চেয়েও উত্তমভাবে পথ চলা যেতে পারে)। তাইসিরুল

‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ - এই কথা না বলে; যদি ভুলে যাও তাহলে তোমার রাব্বকে স্মরণ কর ও বলঃ সম্ভবতঃ আমার রাব্ব আমাকে গুহাবাসীর বিবরণ অপেক্ষা সত্যের নিকটতর পথ নির্দেশ করবেন। মুজিবুর রহমান

Except [when adding], "If Allah wills." And remember your Lord when you forget [it] and say, "Perhaps my Lord will guide me to what is nearer than this to right conduct." Sahih International

২৪. ‘আল্লাহ ইচ্ছে করলে’ এ কথা না বলে(১) আর যদি ভুলে যান তবে আপনার রবকে স্মরণ করবেন(২) এবং বলবেন, সম্ভবত আমার রব আমাকে এটার চেয়ে সত্যের কাছাকাছি পথ নির্দেশ করবেন।

(১) এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার উম্মতকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতকালে কোন কাজ করার ওয়াদা বা স্বীকারোক্তি করলে এর সাথে “ইনশাআল্লাহ” বাক্যটি যুক্ত করতে হবে। কেননা, ভবিষ্যতে জীবিত থাকবে কিনা তা কারো জানা নেই। জীবিত থাকলেও কাজটি করতে পারবে কিনা, তারও নিশ্চয়তা নেই। কাজেই মুমিনের উচিত মনে মনে এবং মুখে স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আল্লাহর উপর ভরসা করা। ভবিষ্যতে কোন কাজ করার কথা বললে এভাবে বলা দরকারঃ যদি আল্লাহ চান, তবে আমি এ কাজটি আগামী কাল করব। ইনশাআল্লাহ বাক্যের অর্থ তাই।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “সুলাইমান ইবনে দাউদ ‘আলাইহিমোস সালাম বললেনঃ আমি আজ রাতে আমার সত্তর জন স্ত্রীর উপর উপগত হব। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে- নব্বই জন স্ত্রীর উপগত হব, তাদের প্রত্যেকেই একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেবে যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তাকে ফিরিশতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন যে, বলুনঃ ইনশাআল্লাহ। কিন্তু তিনি বললেন না। ফলে তিনি সমস্ত স্ত্রীর উপর উপনীত হলেও তাদের কেউই কোন সন্তান জন্ম দিল না। শুধু একজন স্ত্রী একটি অপরিণত সন্তান প্রসব করল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ, সে যদি বলত ইনশাআল্লাহ, তবে অবশ্যই তার ওয়াদা ভঙ্গ হত না। আর তা তার ওয়াদা পূর্ণতায় সহযোগী হত’৷ [বুখারীঃ ৩৪২৪, ৫২৪২,৬৬৩৯, ৭৪৬৯, মুসলিমঃ ১৬৫৪, আহমাদঃ ২/২২৯, ৫০৬]

(২) কোন কোন মুফাসসির বলেন, আয়াতের অর্থ হলো, যখনি আপনি কোন কিছু ভুলে যাবেন তখনই আল্লাহকে স্মরণ করবেন। কারণ, ভুলে যাওয়াটা শয়তানের কারসাজির ফলে ঘটে। আর মহান আল্লাহর স্মরণ শয়তানকে দূরে তাড়িয়ে দেয় যা পুনরায় স্মরণ করতে সাহায্য করবে। এ অর্থটির সাথে পরবর্তী বাক্যের মিল বেশী। অপর কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ আয়াতটি পূর্বের আয়াতের সাথে মিলিয়ে অর্থ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ইনশাল্লাহ ভুলে যান তবে যখনই মনে হবে তখনই ইনশাআল্লাহ বলে নেবেন। [দেখুন, ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) ইন শাআল্লাহ (আল্লাহ ইচ্ছা করলে) এই কথা না বলে;[1] যদি ভুলে যাও, তবে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ করো[2] ও বলো, ‘সম্ভবতঃ আমার প্রতিপালক আমাকে এ অপেক্ষা সত্যের নিকটতম পথ নির্দেশ করবেন।’[3]

[1] মুফাসসিরগণ বলেন যে, ইয়াহুদীরা নবী (সাঃ)-কে তিনটি কথা জিজ্ঞাসা করেছিল। আত্মার স্বরূপ কি এবং গুহার অধিবাসী ও যুল-কারনাইন কে ছিল? তাঁরা বলেন যে, এই প্রশ্নগুলোই ছিল এই সূরা অবতীর্ণ হওয়ার কারণ। নবী (সাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে আগামী কাল উত্তর দেব। কিন্তু এর পর ১৫ দিন পর্যন্ত জিবরীল (আঃ) অহী নিয়ে এলেন না। অতঃপর যখন এলেন, তখন মহান আল্লাহ ‘ইন শা-আল্লাহ’ বলার নির্দেশ দিলেন। আয়াতে غَدًا (আগামী কাল) বলতে ভবিষ্যৎ বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, অদূর ভবিষ্যতে বা দূর ভবিষ্যতে কোন কাজ করার সংকল্প করলে, ‘ইন শা-আল্লাহ’ অবশ্যই বলে নিও। কেননা, মানুষ তো জানেই না যে, যা করার সে সংকল্প করে, তা করার তাওফীক সে আল্লাহর ইচ্ছা থেকে পাবে, না পাবে না?

[2] অর্থাৎ, বাক্যালাপ অথবা অঙ্গীকার করার সময় যদি ‘ইনশা-আল্লাহ’ বলতে ভুলে যাও, তবে যখনই স্মরণ হবে তখনই তা বলে নাও। অথবা প্রতিপালককে স্মরণ করার অর্থ, তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা কর, তাঁর প্রশংসা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও।

[3] অর্থাৎ, আমি যা করার সংকল্প করছি, হতে পারে মহান আল্লাহর তার থেকেও উত্তম এবং ফলপ্রসূ কাজের প্রতি আমার দিক নির্দেশনা করবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ ত্ব-হা
২০:১৪ اِنَّنِیۡۤ اَنَا اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدۡنِیۡ ۙ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِذِكۡرِیۡ ﴿۱۴﴾

‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’। আল-বায়ান

প্রকৃতই আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, কাজেই আমার ‘ইবাদাত কর, আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে নামায কায়িম কর।’ তাইসিরুল

আমি আল্লাহ! আমি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই; অতএব আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। মুজিবুর রহমান

Indeed, I am Allah. There is no deity except Me, so worship Me and establish prayer for My remembrance. Sahih International

১৪. আমিই আল্লাহ্‌, আমি ছাড়া অন্য কোন হক্ব ইলাহ নেই। অতএব আমারই ইবাদাত করুন(১) এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করুন।(২)

(১) লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে যে, এটা ছিল প্রথম নির্দেশ, যা একজন নবীর প্রতি আল্লাহ জারি করেছেন। সে হিসেবে প্রত্যেক মানুষের উপর প্রথম ওয়াজিব ও কর্তব্য হল এ কালেমার সাক্ষ্য দেয়া। [ইবন কাসীর]

(২) এখানে সালাতের মূল উদ্দেশ্যের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। সালাত কায়েম করুন, যাতে আমাকে স্মরণ করতে পারেন। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ মানুষ যেন আল্লাহ থেকে গাফেল না হয়ে যায়। আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক জড়িত করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সালাত৷ সালাত প্রতিদিন কয়েকবার মানুষকে দুনিয়ার কাজকারবার থেকে সরিয়ে আল্লাহর দিকে নিয়ে যায়। কোন কোন মুফাসসির এ অর্থও নিয়েছেন যে, সালাত কায়েম করো, যাতে আমি তোমাকে স্মরণ করতে পারি, যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “আমাকে স্মরণ করে আমি তোমাকে স্মরণ রাখবো।” [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৫২] [ফাতহুল কাদীর] কোন কোন মুফাসসির এ আয়াতের অর্থ করেছেন, যদি কোন সালাত ভুলে যায় যখনই মনে পড়বে তখনই সালাত পড়ে নেয়া উচিত। [ফাতহুল কাদীর] এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “কোন ব্যক্তি কোন সময় সালাত পড়তে ভুলে গিয়ে থাকলে যখন তার মনে পড়ে যায় তখনই সালাত পড়ে নেয়া উচিত। এছাড়া এর আর কোন কাফফারা নেই।” [বুখারীঃ ৫৭২ মুসলিমঃ ৬৮০, ৬৮৪]

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “ঘুমানোর কারণে কারও সালাত ছুটে গেলে অথবা সালাত আদায় করতে বেখবর হয়ে গেলে যখনই তা স্মরণ হয় তখনই তা আদায় করা উচিত; কেননা মহান আল্লাহ বলেনঃ “আর আমার স্মরনার্থে সালাত কায়েম করুন”। [মুসলিম: ৩১৬] এ সমস্ত হাদীসে এ আয়াতটিকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা এ তাফসীরের যথার্থতার উপর প্রমাণবিহ। অন্য এক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়, যদি আমরা সালাতের সময় ঘুমিয়ে থাকি তাহলে কি করবো? জবাবে তিনি বলেন, “ঘুমের মধ্যে কোন দোষ নেই। দোষের সম্পর্ক তো জেগে থাকা অবস্থার সাথে। কাজেই যখন তোমাদের মধ্যে কেউ ভুলে যাবে অথবা ঘুমিয়ে পড়বে তখন জেগে উঠলে বা মনে পড়লে তৎক্ষণাৎ সালাত পড়ে নেবে।” [তিরমিযীঃ ১৭৭. আবু দাউদঃ ৪৪১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) নিশ্চয় আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই; অতএব আমারই উপাসনা কর[1] এবং আমাকে স্মরণের জন্য নামায কায়েম কর।[2]

[1] এটি শরীয়তের ভারসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম ও সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভার, যে ব্যাপারে প্রত্যেক ব্যক্তি ভারপ্রাপ্ত। এ ছাড়া তিনিই যখন একমাত্র উপাস্য হওয়ার যোগ্য, তখন তিনিই সমস্ত ইবাদতের একমাত্র অধিকারী।

[2] ব্যাপকভাবে ইবাদতের নির্দেশ দেওয়ার পর বিশেষভাবে নামায পড়তে আদেশ করা হয়েছে; যদিও ইবাদতের মধ্যে নামাযও শামিল। যাতে তার যে বিশেষ গুরুত্ব আছে তা প্রকাশ পায়। لِذِكرِي এর একটি অর্থ হল যে, তুমি আমাকে স্মরণ কর। কারণ আমাকে স্মরণ করার মাধ্যম হল ইবাদত। আর ইবাদতের মধ্যে নামায এক বিশেষ গুরুতত্ত্বপূর্ণ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। দ্বিতীয় অর্থ হল, যখনই তোমার আমাকে স্মরণ হবে, তখনই তুমি নামায পড়। অর্থাৎ যদি কোন সময় ঔদাস্য, ভুল বা ঘুমের প্রভাবে আমাকে স্মরণ করতে না পার, তাহলে উক্ত অবস্থা পার হয়ে আমাকে স্মরণ হতেই তুমি নামায পড়। যেমন নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘নিদ্রা অবস্থায় কোন শৈথিল্য নেই। শৈথিল্য তো জাগ্রত অবস্থায় হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার উচিত, স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে তুমি নামায কায়েম কর।’’ (মুসলিম, মিশকাত ৬০৪নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২০ ত্ব-হা
২০:১২৪ وَ مَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِكۡرِیۡ فَاِنَّ لَهٗ مَعِیۡشَۃً ضَنۡكًا وَّ نَحۡشُرُهٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اَعۡمٰی ﴿۱۲۴﴾

‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। আল-বায়ান

আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ আর তাকে কিয়ামাতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়।’ তাইসিরুল

যে আমার স্মরণে বিমুখ তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামাত দিবসে উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়। মুজিবুর রহমান

And whoever turns away from My remembrance - indeed, he will have a depressed life, and We will gather him on the Day of Resurrection blind." Sahih International

১২৪. আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত(১) এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন জমায়েত করব অন্ধ অবস্থায়।(২)

(১) এখানে যিকর-এর অর্থ কুরআনও হতে পারে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও হতে পারে, যেমন- অন্য আয়াতে ذِكْرًا رَّسُولًا বলা হয়েছে। [কুরতুবী] তবে অধিকাংশের নিকট এখানে কুরআন বোঝানো হয়েছে। সারমর্ম এই যে, যে ব্যক্তি কুরআনের বিধি-বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে, কুরআনের নির্দেশের আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়; অন্যদের থেকে হিদায়াত গ্ৰহণ করে, তার পরিণাম এই যে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে। [ইবন কাসীর] কুরআনের ভাষ্যে ঐ সমস্ত লোকদের জন্য সংকীর্ণ ও তিক্ত জীবনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যারা আল্লাহর কুরআন ও তাঁর রাসূলের প্রদর্শিত পথে চলতে বিমুখ হয়। কিন্তু কোথায় তাদের সে সংকীর্ণ ও তিক্ত জীবন হবে তা নির্ধারণে বেশ কয়েকটি মত রয়েছেঃ

এক) তাদের দুনিয়ার জীবন সংকীর্ণ হবে। তাদের কাছ থেকে অল্পে তুষ্টির গুণ ছিনিয়ে নেয়া হবে এবং সাংসারিক লোভ-লালসা বাড়িয়ে দেয়া হবে। যা তাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলবে। ফলে তাদের কাছে যত অর্থ-সম্পদই সঞ্চিত হোক না কেন, আন্তরিক শান্তি তাদের ভাগ্যে জুটবে না। সদা-সর্বদা সম্পদ বৃদ্ধি করার চিন্তা এবং ক্ষতির আশঙ্কা তাদেরকে অস্থির করে তুলবে। কেননা, সুখ-শান্তি অন্তরের স্থিরতা ও নিশ্চিন্ততার মাধ্যমেই অর্জিত হয়; শুধু প্রাচুর্য্যে নয়। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

দুই) অনেক মুফাসসিরের মতে এখানে সংকীর্ণ জীবন বলতে কবরের জীবনকে বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ তাদের কবর তাদের উপর সংকীর্ণ হয়ে যাবে বিভিন্ন প্রকার শাস্তির মাধ্যমে। এতে করে কবরে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে দেয়া হবে। তাদের বাসস্থান কবর তাদেরকে এমনভাবে চাপ দেবে যে, তাদের পাঁজর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং (مَعِيشَةً ضَنْكًا) এর তাফসীরে বলেছেন যে, এখানে কবর জগত ও সেখানকার আযাব বোঝানো হয়েছে। [মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ২/৩৮১ নং ৩৪৩৯, ইবনে হিব্বানঃ ৭/৩৮৮, ৩৮৯ নং ৩১১৯]

তাছাড়া বিভিন্ন সহীহ হাদীসে কবরের যিন্দেগীর বিভিন্ন শাস্তির যে বর্ণনা এসেছে, তা থেকে বুঝা যায় যে, যারা আল্লাহ, কুরআন ও রাসূলের প্রদর্শিত দ্বীন থেকে বিমুখ হবে, কবরে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “মুমিন তার কবরে সবুজ প্রশস্ত উদ্যানে অবস্থান করবে। আর তার কবরকে ৭০ গজ প্রশস্ত করা হবে। পূর্নিমার চাঁদের আলোর মত তার কবরকে আলোকিত করা হবে। তোমরা কি জান আল্লাহর আয়াত (তাদের জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন) কাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে? তোমরা কি জানো সংকীর্ণ জীবন কি? সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তা হল কবরে কাফেরের শাস্তি। যার হাতে আমার জীবন, তার শপথ করে বলছি- তাকে ন্যস্ত করা হবে ৯৯টি বিষাক্ত তিন্নিন সাপের কাছে। তোমরা কি জানো তিন্নিন কি? তিন্নিন হল ৯৯টি সাপ। প্ৰত্যেকটি সাপের রয়েছে ৭টি মাথা। যেগুলো দিয়ে সে কাফেরের শরীরে ছোবল মারতে থাকবে, কামড়াতে ও ছিড়তে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। [ইবনে হিব্বানঃ ৩১২২, দারেমীঃ ২৭১১, আহমাদঃ ৩/৩৮, আবু ইয়া'লাঃ ৬৬৪৪, আব্‌দ ইবনে হুমাইদঃ ৯২৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ৩/৫৫]

(২) অর্থাৎ তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় হাশার করা হবে। এখানে অন্ধ অবস্থার কয়েকটি অর্থ হতে পারে- (এক) বাস্তবিকই সে অন্ধ হয়ে উঠবে। (দুই) সে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। (তিন) সে তার পক্ষে পেশ করার মত কোন যুক্তি থেকে অন্ধ হয়ে যাবে। কোন প্রকার প্রমাণাদি পেশ করা থেকে অন্ধ হয়ে থাকবে। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] তখন তার পরবর্তী আয়াতের অর্থ হবে- সে বলবেঃ হে আমার রব! আমাকে কেন আমার যাবতীয় যুক্তিহীন অবস্থায় হাশর করেছেন? আল্লাহ উত্তরে বলবেনঃ অনুরূপভাবে তোমার কাছে আমার নিদর্শনসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি সেগুলো ত্যাগ করে ভুলে বসেছিলে, তাই আজকের দিনেও তোমাকে যুক্তি-প্রমাণহীন অবস্থায় অন্ধ করে ত্যাগ করা হবে, ভুলে যাওয়া হবে। কারণ এটা তো তোমারই কাজের যথোপযুক্ত ফল। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২৪) যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে, অবশ্যই তার হবে সংকীর্ণতাময় জীবন[1] এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।’ [2]

[1] এই ‘সংকীর্ণতাময় জীবন’ বলতে কেউ কেউ কবরের আযাব মনে করেন। আবার কেউ মনে করেন, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা ও ব্যাকুলতাময় জীবন যা আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন বড় বড় ধনবান ব্যক্তিরা প্রাপ্ত হয়ে থাকে।

[2] এর অর্থ সত্যিকার চোখের অন্ধ অবস্থায়। অথবা জ্ঞান হতে বঞ্চিত অবস্থায়। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন এমন কোন প্রমাণ তার মাথায় আসবে না, যা পেশ করে সে আযাব হতে নিজেকে বাঁচাতে পারে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৪ আন-নূর
২৪:৩৬ فِیۡ بُیُوۡتٍ اَذِنَ اللّٰهُ اَنۡ تُرۡفَعَ وَ یُذۡكَرَ فِیۡهَا اسۡمُهٗ ۙ یُسَبِّحُ لَهٗ فِیۡهَا بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَالِ ﴿ۙ۳۶﴾

সেসব ঘরে যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম যিক্র করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে- আল-বায়ান

(এ রকম আলো জ্বালানো হয়) সে সব গৃহে (অর্থাৎ মাসজিদে ও উপাসনালয়ে) যেগুলোকে সমুন্নত রাখতে আর তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ওগুলোতে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করা হয় সকাল ও সন্ধ্যায় (বার বার) তাইসিরুল

সেই সব গৃহ, যাকে মর্যাদায় সমুন্নত করতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। মুজিবুর রহমান

[Such niches are] in mosques which Allah has ordered to be raised and that His name be mentioned therein; exalting Him within them in the morning and the evenings Sahih International

৩৬. সে সব ঘরে(১) যাকে সমুন্নত করতে(২) এবং যাতে তার নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন(৩), সকাল ও সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে(৪),

(১) পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’আলা মানুষের অন্তরে নিজের হেদায়াতের আলো রাখার একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এবং শেষে বলেছেনঃ এই নূর দ্বারা সে-ই উপকার লাভ করে, যাকে আল্লাহ চান ও তাওফীক দেন। [ইবন কাসীর] আলোচ্য আয়াতে এমন মুমিনদের আবাসস্থল ও স্থান বর্ণনা করা হয়েছে যে, এরূপ মুমিনদের আসল আবাসস্থল, যেখানে তারা প্রায়ই বিশেষতঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় দৃষ্টিগোচর হয়- সেসব গৃহ, যেগুলোকে উচ্চ রাখার জন্য এবং যেগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার জন্য আল্লাহ্ তা'আলা আদেশ করেছেন। এসব গৃহে সকালসন্ধ্যায় অর্থাৎ সর্বদা এমন লোকেরা আল্লাহ্ তা'আলার পবিত্ৰতা বর্ণনা করে, যাদের বিশেষ গুণাবলী পরবর্তী আয়াতে বর্ণিত হচ্ছে। অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে এসব গৃহ হচ্ছে মসজিদ। অধিকাংশ মুফাসসিরগণ এ তাফসীরকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। [দেখুন: কুরতুবী, বাগভী]

(২) কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ নিয়েছেন মু'মিনদের ঘর এবং সেগুলোকে উন্নত করার অর্থ সেগুলোকে নৈতিক দিক দিয়ে উন্নত করা, নৈতিক মান রক্ষার জন্য তাতে মসজিদের ব্যবস্থা করা। এ অর্থের সমর্থনে আমরা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে একটি হাদীস পাই যাতে তিনি বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাসগৃহের মধ্যেও মসজিদ অর্থাৎ সালাত আদায় করার বিশেষ জায়গা তৈরী করার এবং তাকে পবিত্র রাখার জন্য আদেশ করেছেন। [ইবনে মাজাহঃ ৭৫৮, ৭৫৯]

তবে অধিকাংশ মুফাস্‌সির এ “ঘরগুলো”কে মসজিদ অর্থে গ্ৰহণ করেছেন এবং এগুলোকে উন্নত করার অর্থ নিয়েছেন এগুলো নির্মাণ ও এগুলোকে মর্যাদা প্ৰদান করা। “সেগুলোর মধ্যে নিজের নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।” এ শব্দগুলো বাহ্যত মসজিদ সংক্রান্ত ব্যাখ্যার বেশী সমর্থক দেখা যায়। তখন আয়াতের অর্থ হবে, আল্লাহ্ তা'আলা মসজিদসমূহকে সমুন্নত করার অনুমতি দিয়েছেন। অনুমতি দেয়ার মানে আদেশ করা এবং উচ্চ করা মানে সম্মান করা। উচ্চ করার দু'টি অর্থ করা হয়ে থাকে-

(১) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ উচ্চ করার অর্থ আল্লাহ্ তাআলা মসজিদসমূহে অনৰ্থক কাজ ও কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন। হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ رَفْعُ مَسَاجِدَ বলে মসজিদসমূহের সম্মান, ইযযত ও সেগুলোকে নাপাকী ও নোংরা বস্তু থেকে পবিত্র রাখা বুঝানো হয়েছে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “মসজিদে থুথু ফেলা গোনাহ আর তার কাফফারা হলো তা দাফন করা, মিটিয়ে দেয়া”। [বুখারীঃ ৪১৫, মুসলিমঃ ৫৫২]

(২) ইকরিমা ও মুজাহিদ বলেনঃ رفع বলে মসজিদ নির্মাণ বুঝানো হয়েছে; যেমন কা'বা নির্মাণ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছেঃ (وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ) এখানে رفع قواعد বলে ভিত্তি নির্মাণ বুঝানো হয়েছে। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যে আল্লাহর জন্য মসজিদ বানায়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন”। [বুখারীঃ ৪৫০, মুসলিমঃ ৫৩৩]

প্রকৃত কথা এই যে, تُرْفَعَ শব্দের অর্থ মসজিদ নির্মাণ করা, পাক-পবিত্র রাখা এবং মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। [দেখুন-তাবারী, ইবন কাসীর কুরতুবী] এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসুন ও পেঁয়াজ খেয়ে মুখ না ধুয়ে মসজিদে গমন করতে নিষেধ করেছেন। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ “আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ব্যক্তির মুখে রসুন বা পেয়াজের দুৰ্গন্ধ অনুভব করতেন, তাকে মসজিদ থেকে বের করে ‘বাকী’ নামক স্থানে পাঠিয়ে দিতেন এবং বলতেনঃ যে ব্যক্তি রসুন-পেঁয়াজ খেতে চায়, সে যেন উত্তম রূপে পাকিয়ে খায় যাতে দুৰ্গন্ধ নষ্ট হয়ে যায়।” [মুসলিমঃ ৫৬৭]

(৩) আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি গৃহে অযু করে ফরয সালাত আদায়ের জন্য মসজিদের দিকে যায়, তার সওয়াব সেই ব্যক্তির সমান, যে ইহরাম বেঁধে গৃহ থেকে হজ্জের জন্য যায়। যে ব্যক্তি এশরাকের সালাত আদায়ের জন্য গৃহ থেকে অযু করে মসজিদের দিকে যায়, তার সওয়াব উমরাকারীর অনুরূপ। এক সালাতের পর অন্য সালাত ইল্লিয়্যীনে লিখিত হয় যদি উভয়ের মাঝখানে কোন অপ্রয়োজনীয় কাজ না করে।” [আবু দাউদঃ ৫৫৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ “যারা অন্ধকারে মসজিদে গমন করে, তাদেরকে কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।” [আবু দাউদঃ ৫৬১, তিরমিযীঃ ২২৩]

(৪) আল্লাহর নাম স্মরণ করা দ্বারা এখানে তাসবীহ (পবিত্রতা বর্ণনা), তাহমীদ (প্ৰশংসা বর্ণনা), নফল সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ-নসীহত, দ্বীনী শিক্ষা ইত্যাদি সর্বপ্রকার যিকর বুঝানো হয়েছে। [তাবারী, সা’দী, মুয়াস্‌সার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৬) সে সব গৃহে -- যাকে আল্লাহ সমুন্নত করতে এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন--[1] সকাল ও সন্ধ্যায় তাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে,[2]

[1] (فِي এর সম্পর্ক يُسَبِّحُ এর সাথে, যেমন অনুবাদে প্রকাশ। অথবা তার সম্পর্ক পূর্বোক্ত উপমার সাথে।) যখন মহান আল্লাহ মু’মিনের অন্তরকে এবং তার মধ্যে যে ঈমান, হিদায়াত ও জ্ঞান রয়েছে, তাকে এমন একটি প্রদীপের সাথে তুলনা করেছেন, যা কাঁচের আবরণে অবস্থিত এবং তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তেল দ্বারা প্রদীপ্ত। এখানে তার স্থান কোথায়, তা বলা হচ্ছে। যে এই দীপাধার এমন গৃহে অবস্থান করছে, যার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তাকে উচ্চ ও সমুন্নত করা হোক, তার মধ্যে আল্লাহর যিকর ও স্মরণ করা হোক। উদ্দেশ্য, মসজিদ; যা পৃথিবীর বুকে আল্লাহর নিকট সব থেকে বেশী পছন্দনীয় জায়গা। উচ্চ করার অর্থ, শুধু ইঁট-পাথর দিয়ে উচ্চ করা নয়। বরং মসজিদকে অপবিত্রতা, অসার ও অবৈধ কথা ও কর্ম হতে পবিত্র রাখাও এর মধ্যে গণ্য। শুধু মসজিদের বিল্ডিংকে আকাশ ছোঁয়া উঁচু করে বানানো উদ্দেশ্য নয়। বরং হাদীসে মসজিদকে সৌন্দর্য ও কারুকার্য-খচিত করতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্য এক হাদীসে এমন কাজকে কিয়ামতের নিদর্শন বলে অভিহিত করা হয়েছে। (আবু দাউদ নামায অধ্যায় মসজিদ নির্মাণ পরিচ্ছেদ) এ ছাড়া যেমন মসজিদে ব্যবসা-বণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয়, হৈ-হট্টগোল নিষিদ্ধ। কারণ, এসব মসজিদের আসল লক্ষ্য ইবাদতে বাধা সৃষ্টিকারী। অনুরূপ আল্লাহর যিকর করার মধ্যে এ কথাও শামিল যে, কেবলমাত্র এক আল্লাহর যিকর, কেবল তাঁরই ইবাদত এবং তাকেই সাহায্যের জন্য আহবান করতে হবে। আল্লাহ বলেছেন, {وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا} ‘‘নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য। অতএব তোমরা আল্লাহর সাথে অন্যকে আহবান করো না।’’ (সূরা জীন ১৮ আয়াত)

[2] তাসবীহ (পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা) বলতে নামাযকে বুঝানো হয়েছে। آصَال শব্দটি أَصِيل শব্দের বহুবচন। যার অর্থ সন্ধ্যা। অর্থাৎ, ঈমানদার ব্যক্তিবর্গ; যাদের অন্তর ঈমান ও হিদায়াতের আলোকে উদ্ভাসিত, তারা সকাল-সন্ধ্যায় মসজিদে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নামায আদায় করে এবং তাঁর ইবাদত করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২৪ আন-নূর
২৪:৩৭ رِجَالٌ ۙ لَّا تُلۡهِیۡهِمۡ تِجَارَۃٌ وَّ لَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِكۡرِ اللّٰهِ وَ اِقَامِ الصَّلٰوۃِ وَ اِیۡتَآءِ الزَّكٰوۃِ ۪ۙ یَخَافُوۡنَ یَوۡمًا تَتَقَلَّبُ فِیۡهِ الۡقُلُوۡبُ وَ الۡاَبۡصَارُ ﴿٭ۙ۳۷﴾

সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর যিক্র, সালাত কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। আল-বায়ান

ঐ সব লোকের দ্বারা ব্যবসায় ও ক্রয়-বিক্রয় যাদেরকে তাঁর স্মরণ হতে বিচ্যুত করতে পারে না, আর নামায প্রতিষ্ঠা ও যাকাত প্রদান থেকেও না। তাদের ভয় করে (কেবল) সেদিনের যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। তাইসিরুল

সেই সব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখেনা, তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে – মুজিবুর রহমান

[Are] men whom neither commerce nor sale distracts from the remembrance of Allah and performance of prayer and giving of zakah. They fear a Day in which the hearts and eyes will [fearfully] turn about - Sahih International

৩৭. সেসব লোক(১), যাদেরকে ব্যবসা-বানিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় কোনটিই আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সে দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে।

(১) এখানে رجال শব্দের মধ্যে ইঙ্গিত আছে যে, মসজিদে উপস্থিত হওয়ার বিধান আসলে পুরুষদের জন্য, নারীদের জন্য গৃহে সালাত আদায় করা উত্তম। [বাগভী, কুরতুবী] মুসনাদে আহমাদে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “নারীদের উত্তম মসজিদ তাদের গৃহের সংকীর্ণ ও অন্ধকার প্রকোষ্ঠ”। [মুসনাদে আহমাদঃ ৬/২৯৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৭) এমন সব (পুরুষ) লোক[1] যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং নামায কায়েম ও যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি ভীতি-বিহব্বল হয়ে পড়বে। [2]

[1] এ থেকে দলিল গ্রহন করে বলা হয়েছে যে, যদিও সাধারন পোশাককে বিনা সুগন্ধি মেখে, পর্দা সহকারে মেয়েরা  মসজিদে যেতে পারে; যেমন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর যুগে মেয়েরা মসজিদে নববীতে গিয়ে নামায আদায় করত, তবুও ওদের জন্য নিজ নিজ ঘরে নামায আদায় করাই অধিক উত্তম। হাদিসেও এ কথাকে স্পষ্ট করা হয়েছে। (আবু দাউদঃ নামায অধ্যায়, আহমাদ ৬/২৯৭, ৩০১)

[2] অর্থাৎ, অত্যন্ত ভয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার কারণে। যেমন অন্যত্রে বলা হয়েছে, {وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْآزِفَةِ إِذِ الْقُلُوبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِينَ} অর্থাৎ, ওদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করে দাও, যখন দুঃখে-কষ্টে ওদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। ’’ (সূরা মু’মিন ১৮ আয়াত) প্রাথমিকভাবে সকলের অন্তরের অবস্থা এ রকম হবে; চাহে মু’মিন হোক বা কাফের।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭২ আল-জ্বিন
৭২:১৭ لِّنَفۡتِنَهُمۡ فِیۡهِ ؕ وَ مَنۡ یُّعۡرِضۡ عَنۡ ذِكۡرِ رَبِّهٖ یَسۡلُكۡهُ عَذَابًا صَعَدًا ﴿ۙ۱۷﴾

যাতে আমি তা দিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি। আর যে তার রবের স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাকে তিনি কঠিন আযাবে প্রবেশ করাবেন। আল-বায়ান

যেন আমি তা দিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি (যে নি‘মাত পাওয়ার পর তারা শুকর-গুজার হয়, না না-ফরমান হয়)। যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তিনি তাকে কঠিন ‘আযাবে প্রবেশ করাবেন। তাইসিরুল

যদ্বারা আমি তাদেরকে পরীক্ষা করতাম। যে ব্যক্তি তার রবের স্মরণ হতে বিমুখ হয় তিনি তাকে দুঃসহ শাস্তিতে প্রবেশ করাবেন। মুজিবুর রহমান

So We might test them therein. And whoever turns away from the remembrance of his Lord He will put into arduous punishment. Sahih International

১৭. যা দ্বারা আমরা তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি। আর যে ব্যক্তি তার রবের স্মরণ হতে বিমুখ হয় তিনি তাকে দুঃসহ শাস্তিতে প্রবেশ করাবেন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) যার মাধ্যমে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করব। [1] আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের স্মরণ হতে বিমুখ হয়, তিনি তাকে কঠিন শাস্তিতে প্রবেশ করাবেন। [2]

[1]أَنْ لَّوِ اسْتَقَامُوْا (আর এই যে---) আয়াতটির সংযোগ হল أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ (আমার প্রতি অহী প্রেরিত হয়েছে যে---) আয়াতের সাথে। অর্থাৎ, আর এ কথাও আমার প্রতি অহী করা হয়েছে যে,---। الطَّرِيْقَةِ অর্থ, সত্য-সরল পথ। অর্থাৎ, ইসলাম। غَدَقٌ অর্থ, প্রচুর। প্রচুর পানি বলতে পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, পৃথিবীতে মাল-ধন এবং বহু উপায়-উপকরণ দিয়ে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করব। যেমন, অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, {وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ} অর্থাৎ, আর যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নিয়ামতসমূহের (দ্বার) উন্মুক্ত করে দিতাম।’’ (সূরা আ’রাফ ৯৬ আয়াত) আহলে কিতাবদের আলোচনায়ও এই কথাই বলা হয়েছে। (সূরা মায়িদাহ ৬৬ আয়াত) আবার কেউ কেউ বলেন, এই আয়াত সেই সময় অবতীর্ণ হয়, যখন কাফের কুরাইশদের উপর দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছিল। الطَّرِيْقَةِ এর দ্বিতীয় অর্থ করা হয়েছে, ভ্রান্ত পথ। এই অর্থের দিক দিয়ে পার্থিব বরকত বা প্রাচুর্যের কথা ‘ইস্তিদরাজ’ (ক্রমান্বয়ে কিছু দিয়ে আবার কেড়ে নেওয়ার) অর্থে ব্যবহার হয়েছে। যেমন, অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, {فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ} অর্থাৎ, তাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা যখন তা বিস্মৃত হল, তখন তাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম। (সূরা আনআম ৪৪ আয়াত) {أَيَحْسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهِ مِنْ مَالٍ وَبَنِينَ، نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ অর্থাৎ, তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্য স্বরূপ যে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দান করি তার দ্বারা তাদের জন্যে সর্বপ্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? (সূরা মু’মিনূন ৫৫-৫৬ আয়াত) ইমাম ইবনে কাসীরের নিকট لِنَفْتِنَهُمْ (যাতে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করি) এর দিকে লক্ষ্য করে এই দ্বিতীয় অর্থটাই বেশী সঙ্গতিপূর্ণ। পক্ষান্তরে ঈমাম শাওকানীর নিকট প্রথম অর্থটাই অধিক সঠিক।

[2] صَعَدًا، أي: عَذَابًا شَاقًّا شَدِيْدًا مُوْجِعًا مُؤْلِمًا অর্থাৎ, অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টদায়ক আযাব বা শাস্তি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৩ আল-মুযযাম্মিল
৭৩:৮ وَ اذۡكُرِ اسۡمَ رَبِّكَ وَ تَبَتَّلۡ اِلَیۡهِ تَبۡتِیۡلًا ؕ﴿۸﴾

আর তুমি তোমার রবের নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিমগ্ন হও। আল-বায়ান

কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি মগ্ন হও। তাইসিরুল

সুতরাং তুমি তোমার রবের নাম স্মরণ কর এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হও। মুজিবুর রহমান

And remember the name of your Lord and devote yourself to Him with [complete] devotion. Sahih International

৮. আর আপনি আপনার রবের নাম স্মরণ করুন এবং তার প্রতি মগ্ন হোন একনিষ্ঠভাবে।(১)

(১) অর্থাৎ আপনি সমগ্র সৃষ্টি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টিবিধানে ও ইবাদতে মগ্ন হোন। এর সাধারণ অর্থে ইবাদতে শির্ক না করাও দাখিল এবং নিজের সমস্ত কর্মকাণ্ডে তথা উঠাবসায়, চলাফেরায় দৃষ্টি ও ভরসা আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ রাখা এবং অপরকে লাভ-লোকসান ও বিপদাপদ থেকে উদ্ধারকারী মনে না করাও দাখিল। দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছুকে পরিত্যাগ করে আল্লাহর কাছে যা আছে তৎপ্রতি মনোনিবেশ করাও এর অর্থের অন্তর্গত। কিন্তু এই تَبْتِيل তথা দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ সেই رهبانية তথা বৈরাগ্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কুরআনে যার নিন্দা করা হয়েছে এবং হাদীসে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কেননা, শরীয়াতের পরিভাষায় رهبانية বা বৈরাগ্য এর অর্থ দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা এবং ভোগ সামগ্ৰী ও হালাল বস্তুসমুহকে ইবাদতের নিয়তে পরিত্যাগ করা।

পক্ষান্তরে এখানে যে সম্পর্কচ্ছেদের আদেশ করা হয়েছে, তা এই যে, বিশ্বাসগতভাবে অথবা কাৰ্যগতভাবে আল্লাহর সম্পর্কের উপর কোন সৃষ্টির সম্পর্ককে প্রবল হতে না দেয়া। এ ধরণের সম্পর্কচ্ছেদ বিবাহ, আত্মীয়তার সম্পর্ক ইত্যাদি যাবতীয় সাংসারিক কাজ-কারবারের পরিপন্থী নয়; বরং এগুলোর সাথে জড়িত থেকেও এটা সম্ভবপর। রাসূলগণের সুন্নত; বিশেষতঃ রাসূলকুল শিরোমণি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সমগ্র জীবন ও আচারাদি এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। আয়াতে تَبْتِيل শব্দ দ্বারা যে অর্থ ব্যক্ত করা হয়েছে, মূলত তা হলো সকল ইবাদত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য করা এবং এর মাধ্যমে একমাত্র তাঁরই মুখাপেক্ষী হওয়া। [দেখুন: কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর[1] এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হও। [2]

[1] অর্থাৎ, তা অব্যাহতভাবে পালন কর। দিন হোক বা রাত, সব সময় আল্লাহর তাসবীহ, তাহমীদ এবং তাকবীর ও তাহলীল পড়তে থাক।

[2] تَبَتُّلٌ এর অর্থ পৃথক ও আলাদা হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ, আল্লাহর ইবাদত এবং তাঁর কাছে দু’আ ও মুনাজাতের জন্য সব কিছু থেকে পৃথক হয়ে একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি মনোযোগী হওয়া। তবে এটা বৈরাগ্য থেকে ভিন্ন জিনিস। বৈরাগ্য তো সংসার ত্যাগের নাম, যা ইসলামে অপছন্দনীয় জিনিস। পক্ষান্তরে تَبَتُّلٌ এর অর্থ হল, পার্থিব কার্যাদি সম্পাদনের সাথে সাথে একাগ্রচিত্তে নম্র ও বিনয়ী হয়ে আল্লাহর ইবাদতের প্রতিও মনোযোগী হওয়া। আর এটা প্রশংসনীয় জিনিস।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭৬ আল-ইনসান (আদ-দাহর)
৭৬:২৫ وَ اذۡكُرِ اسۡمَ رَبِّكَ بُكۡرَۃً وَّ اَصِیۡلًا ﴿ۖۚ۲۵﴾

আর সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রবের নাম স্মরণ কর, আল-বায়ান

আর সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রব্ব এর নাম স্মরণ কর। তাইসিরুল

এবং তোমার রবের নাম স্মরণ কর সকাল সন্ধ্যায়। মুজিবুর রহমান

And mention the name of your Lord [in prayer] morning and evening Sahih International

২৫. আর আপনার রবের নাম স্মরণ করুন সকালে ও সন্ধ্যায়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) এবং তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর সকাল ও সন্ধ্যায়। [1]

[1] সকাল-সন্ধ্যায় অর্থাৎ, সব সময় আল্লাহর যিকর কর। অথবা সকাল বলতে ফজরের নামাযকে এবং সন্ধ্যা বলতে আসরের নামাযকে বুঝানো হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে