সূরাঃ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء - আয়াতঃ ৯৫
৪:৯৫ لَا یَسۡتَوِی الۡقٰعِدُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ غَیۡرُ اُولِی الضَّرَرِ وَ الۡمُجٰهِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِاَمۡوَالِهِمۡ وَ اَنۡفُسِهِمۡ ؕ فَضَّلَ اللّٰهُ الۡمُجٰهِدِیۡنَ بِاَمۡوَالِهِمۡ وَ اَنۡفُسِهِمۡ عَلَی الۡقٰعِدِیۡنَ دَرَجَۃً ؕ وَ کُلًّا وَّعَدَ اللّٰهُ الۡحُسۡنٰی ؕ وَ فَضَّلَ اللّٰهُ الۡمُجٰهِدِیۡنَ عَلَی الۡقٰعِدِیۡنَ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿ۙ۹۵﴾
لا یستوی القعدون من المومنین غیر اولی الضرر و المجهدون فی سبیل الله باموالهم و انفسهم فضل الله المجهدین باموالهم و انفسهم علی القعدین درجۃ و کلا وعد الله الحسنی و فضل الله المجهدین علی القعدین اجرا عظیما ۙ۹۵

বসে থাকা মুমিনগণ, যারা ওযরগ্রস্ত নয় এবং নিজদের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীগণ এক সমান নয়। নিজদের জান ও মাল দ্বারা জিহাদকারীদের মর্যাদা আল্লাহ বসে থাকাদের উপর অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ প্রত্যেককেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং আল্লাহ জিহাদকারীদেরকে বসে থাকাদের উপর মহা পুরস্কার দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আল-বায়ান

অক্ষম নয় এমন বসে-থাকা মু’মিনরা আর জান-মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীগণ সমান নয়; নিজেদের ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদকারীদেরকে বসে-থাকা লোকেদের উপর আল্লাহ মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহ সকলের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন এবং মুজাহিদদেরকে বসে-থাকা লোকেদের তুলনায় আল্লাহ মহাপুরস্কার দিয়ে মর্যাদা দান করেছেন। তাইসিরুল

মু’মিনদের মধ্যে যারা কোন দুঃখ পীড়া ব্যতীতই গৃহে বসে থাকে, আর যারা স্বীয় ধন ও প্রাণ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা সমান নয়; যারা ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে গৃহে অবস্থানকারীদের উপর উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন; এবং সকলকেই আল্লাহ কল্যাণপ্রদ প্রতিশ্রুতি দান করেছেন। এবং উপবিষ্টদের উপর ধর্মযোদ্ধাগণকে মহান প্রতিদানে গৌরবান্বিত করেছেন। মুজিবুর রহমান

Not equal are those believers remaining [at home] - other than the disabled - and the mujahideen, [who strive and fight] in the cause of Allah with their wealth and their lives. Allah has preferred the mujahideen through their wealth and their lives over those who remain [behind], by degrees. And to both Allah has promised the best [reward]. But Allah has preferred the mujahideen over those who remain [behind] with a great reward - Sahih International

৯৫. মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয়।(১) যারা স্বীয় ধন-প্ৰাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে, যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন(২); তাদের প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।

(১) বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ যখন নাযিল হল “মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয়” তখন আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি তো অন্ধ। তখন নাযিল হল “যারা অক্ষম নয়”-এ অংশটুকু। [বুখারীঃ ২৮৩১, ৪৫৯৩, মুসলিমঃ ১৮৯৮]

(২) আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আবু সাঈদ! যে আল্লাহকে রব হিসাবে মেনে সন্তুষ্ট, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসাবে মেনে নিয়ে সন্তুষ্ট তার জন্য জান্নাত অবধারিত। আবু সাঈদ এটা শুনে আশ্চর্য হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে আবার বলুন। রাসূল তাই করলেন। তারপর বললেনঃ “আরো কিছু কাজ রয়েছে, যার দ্বারা জান্নাতে বান্দার মর্যাদা উন্নত করা হয়, দু’স্তরের মাঝখানের দূরত্ব আসমান ও যমীনের মাঝখানের দূরত্বের মত। তিনি বললেন, সেটা কি? হে আল্লাহর রাসূল! রাসূল বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। [মুসলিমঃ ১৮৮৪] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 'জান্নাতের একশত স্তর রয়েছে, দু’স্তরের মাঝখানের দূরত্ব শত বৎসরের। [তিরমিযীঃ ২৫২৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯৫) বিশ্বাসীদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে তারা এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। [1] যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, আল্লাহ তাদেরকে যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।[2] আর যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর, যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ মহা পুরস্কার দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

[1] যখন এই আয়াত নাযিল হল যে, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে তারা এবং যারা বাড়ীতে অবস্থান করে তারা পরস্পর সমান নয়’, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) (অন্ধ সাহাবী) প্রভৃতিরা অভিযোগ করলেন যে, আমরা তো অক্ষম, যার কারণে আমরা জিহাদে অংশ গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত। উদ্দেশ্য ছিল, ঘরে অবস্থান করার কারণে জিহাদে অংশ গ্রহণকারীদের সমান আমরা নেকী ও সওয়াব অর্জন করতে পারব না, অথচ আমাদের ঘরে অবস্থান স্বেচ্ছায় এবং জান বাঁচানোর জন্য নয়, বরং শরয়ী কারণেই। তাই মহান আল্লাহ [غَيْرُ اُولى الضَّرَرِ] (যারা অক্ষম নয়) কথাটি নাযিল করলেন। অর্থাৎ, যারা সঙ্গত ওজরের কারণে বাড়ীতে অবস্থান করে, তারাও মুজাহিদদের মত নেকীতে সমান সমান শরীক থাকবে। কারণ, (حَبَسَهُمُ العُذْرُ) ‘‘ওজরই তাদের পথে বাধা হয়েছে।’’ (সহীহ বুখারী, জিহাদ অধ্যায়ঃ)

[2] অর্থাৎ, জান ও মাল সহ জিহাদে অংশ গ্রহণকারীরা বৈশিষ্ট্য লাভের অধিকারী হবে। আর জিহাদে যারা অংশগ্রহণ করতে পারে না, তারা এই বৈশিষ্ট্য লাভ থেকে বঞ্চিত হলেও মহান আল্লাহ উভয়কেই উত্তম প্রতিদান দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এটাকেই দলীল হিসাবে গ্রহণ করে উলামারা বলেছেন যে, সাধারণ অবস্থায় জিহাদ ‘ফারযে আ’ইন’(যা করা সকলের উপর ফরয) নয়, বরং ‘ফারযে কিফায়াহ’ (যা উম্মতের যথেষ্ট পরিমাণ লোক করলেই হয়)। অর্থাৎ, যে পরিমাণ লোকের প্রয়োজন সে পরিমাণ লোক জিহাদে অংশ গ্রহণ করলেই মনে করে নেওয়া হবে যে, সেই অঞ্চলের অন্য লোকদের পক্ষ হতে এই ফরয আদায় হয়ে গেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান