بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৪/ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء আয়াতঃ ১৭৬ মাদানী
৪:১ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّكُمُ الَّذِیۡ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ وَّ خَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَ بَثَّ مِنۡهُمَا رِجَالًا كَثِیۡرًا وَّ نِسَآءً ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ الَّذِیۡ تَسَآءَلُوۡنَ بِهٖ وَ الۡاَرۡحَامَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلَیۡكُمۡ رَقِیۡبًا ﴿۱﴾
یایها الناس اتقوا ربكم الذی خلقكم من نفس واحدۃ و خلق منها زوجها و بث منهما رجالا كثیرا و نسآء و اتقوا الله الذی تسآءلون بهٖ و الارحام ان الله كان علیكم رقیبا ﴿۱﴾

হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফ্স থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। আল-বায়ান

হে মনুষ্য সমাজ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র ব্যক্তি হতে পয়দা করেছেন এবং তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর সেই দু’জন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা পরস্পর পরস্পরের নিকট (হাক্ব) চেয়ে থাক এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতি-বন্ধন সম্পর্কে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। তাইসিরুল

হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের রাব্বকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তদীয় সহধর্মিনী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয় হতে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং সেই আল্লাহকে ভয় কর যাঁর নামের দোহাই দিয়ে তোমরা একে অপরকে যাঞ্চা কর, এবং আত্মীয়-জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহই তত্ত্বাবধানকারী। মুজিবুর রহমান

O mankind, fear your Lord, who created you from one soul and created from it its mate and dispersed from both of them many men and women. And fear Allah, through whom you ask one another, and the wombs. Indeed Allah is ever, over you, an Observer. Sahih International

১. হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর(১) যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন(২) এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক দাবী কর(৩) এবং তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারেও(৪)। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।(৫)

(১) সূরার শুরুতে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং অন্যের অধিকার সংক্রান্ত বিধান জারি করা হয়েছে। যেমন- অনাথ ইয়াতীমের অধিকার, আত্মীয়-স্বজনের অধিকার ও স্ত্রীদের অধিকার প্রভৃতির কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, হক্কুল-ইবাদ বা অন্যের অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট এমন কতকগুলো অধিকার রয়েছে, যেগুলো সাধারণতঃ দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় পড়ে এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে তা কার্যকর করা যেতে পারে। সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয়, ভাড়া ও শ্রমের মজুরী প্রভৃতি এ জাতীয় অধিকার যা মূলতঃ দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে কার্যকর হয়ে থাকে। এসব অধিকার যদি কোন এক পক্ষ আদায় করতে ব্যর্থ হয় অথবা সেক্ষেত্রে কোন প্রকার ক্রটি-বিচ্যুতি হয়, তাহলে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে তার সুরাহা করা যেতে পারে। কিন্তু সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, কারো নিজ বংশের ইয়াতীম ছেলে-মেয়ে এবং আত্মীয়-স্বজনের পারস্পরিক অধিকার আদায় হওয়া নির্ভর করে সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার উপর। এসব অধিকার তুলাদণ্ডে পরিমাপ করা যায় না। কোন চুক্তির মাধ্যমেও তা নির্ধারণ করা দুষ্কর। সুতরাং এসব অধিকার আদায়ের জন্য আল্লাহ-ভীতি এবং আখেরাতের ভয় ছাড়া দ্বিতীয় আর কোন উত্তম উপায় নেই। আর একেই বলা হয়েছে তাকওয়া।

বস্তুতঃ এই তাকওয়া দেশের প্রচলিত আইন ও প্রশাসনিক শক্তির চেয়ে অনেক বড়। তাই আলোচ্য সূরাটিও তাকওয়ার বিধান দিয়ে শুরু হয়েছে। সম্ভবতঃ এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ের খোতবায় এ আয়াতটি পাঠ করতেন। বিয়ের খোতবায় এ আয়াতটি পাঠ করা সুন্নাত। তাকওয়ার হুকুমের সাথে সাথে আল্লাহর অসংখ্য নামের মধ্যে এখানে ‘রব’ শব্দটি ব্যবহার করার মধ্যেও একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। অর্থাৎ এমন এক সত্তার বিরুদ্ধাচারণ করা কি করে সম্ভব হতে পারে, যিনি সমগ্র সৃষ্টিলোকের লালন-পালনের যিম্মাদার এবং যার রুবুবিয়্যাত বা পালন-নীতির দৃষ্টান্ত সৃষ্টির প্রতিটি স্তরে স্তরে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত।

(২) এখানে দুটি মত রয়েছে, (এক) তার থেকে অর্থাৎ তারই সমপর্যায়ের করে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন। (দুই) তার শরীর থেকেই তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন। এ মতের সপক্ষে হাদীসের কিছু উক্তি পাওয়া যায়, যাতে বুঝা যায় যে, মহিলাদেরকে বাকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। [দেখুন- বুখারীঃ ৩৩৩১, মুসলিমঃ ১৪৬৮]

(৩) বলা হয়েছে যে, যার নাম উচ্চারণ করে তোমরা অন্যের থেকে অধিকার দাবী কর এবং যার নামে শপথ করে অন্যের কাছ থেকে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে থাক সে মহান সত্ত্বার তাকওয়া অবলম্বন কর। আরও বলা হয়েছে যে, আত্মীয়তার সম্পর্কে - তা পিতার দিক থেকেই হোক, অথবা মায়ের দিক থেকেই হোক - তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাক এবং তা আদায়ের যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন কর।

(৪) আলোচ্য আয়াতের দুটি অর্থ হতে পারে। একটি যা ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থাৎ তোমরা আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। সুতরাং তোমরা আতীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখ। এ অর্থটি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে। [তাবারী] আয়াতের দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমরা যে আল্লাহ ও আত্মীয়তার সম্পর্কের খাতিরে পরস্পর কোন কিছু চেয়ে থাক। অর্থাৎ তোমরা সাধারণত বলে থাক যে, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের খাতিরে কোন কিছু তোমার কাছে চাই। সুতরাং দু কারণেই তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। এ অর্থটি মুজাহিদ থেকে বর্ণিত হয়েছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] পবিত্র কুরআনের আত্মীয়তার সম্পর্ক বুঝানোর জন্য ‘আরহাম’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা মূলতঃ একটি বহুবচনবোধক শব্দ। এর একবচন হচ্ছে রাহেম। যার অর্থ জরায়ু বা গর্ভাশয়। অর্থাৎ জন্মের প্রাক্কালে মায়ের উদরে যে স্থানে সন্তান অবস্থান করে। জন্মসূত্রেই মূলতঃ মানুষ পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বুনিয়াদকে ইসলামী পরিভাষায় ‘সেলায়ে-রাহমী’ বলা হয়। আর এতে কোন রকম বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হলে তাকে বলা হয় ‘কেত্বয়ে-রাহমী’। হাদীসে আত্মীয়তার সম্পর্কের উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার রিযিকের প্রাচুর্য এবং দীর্ঘ জীবনের প্রত্যাশা করে, তার উচিত আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। [বুখারীঃ ২০৬৭; মুসলিমঃ ২৫৫৭]

অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের প্রায় সাথে সাথেই আমিও তার দরবারে গিয়ে হাজির হলাম। সর্বপ্রথম আমার কানে তার যে কথাটি প্রবেশ করল, তা হল এইঃ হে লোক সকল! তোমরা পরস্পর পরস্পরকে বেশী বেশী সালাম দাও। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানুষকে খাদ্য দান কর। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোল এবং রাতের বেলায় সালাতে মনোনিবেশ কর, যখন সাধারণ লোকেরা নিদ্রামগ্ন থাকে। স্মরণ রেখো, এ কথাগুলো পালন করলে তোমরা পরম সুখ ও শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। [মুসনাদে আহমাদ: ৫৪৫১ ইবন মাজাহ ৩২৫১] অন্য হাদীসে এসেছে, উম্মুল-মুমিনীন মায়মুনা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার এক বাদিকে মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যখন এ খবর পৌছালেন, তখন তিনি বললেন, তুমি যদি বাদিটি তোমার মামাকে দিয়ে দিতে, তাহলে অধিক পূণ্য লাভ করতে পারতে। [বুখারীঃ ২৫৯৪] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করলে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু কোন নিকট আত্মীয়কে সাহায্য করলে একই সঙ্গে সদকা এবং আত্মীয়তার হক আদায়ের দ্বৈত পূণ্য লাভ করা যায় ৷ [বুখারীঃ ১৪৬৬, মুসলিমঃ ১০০০]

(৫)  এখানে মানুষের অন্তরকে আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আদায়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে খুবই সচেতন ও পর্যবেক্ষণকারী। আল্লাহ তোমাদের অন্তরের ইচ্ছার কথাও ভালভাবে অবগত রয়েছেন। কিন্তু যদি লোক লজ্জার ভয়ে অথবা সমাজ ও পরিবেশের চাপে পড়ে আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সুব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহর কাছে এর কোন মূল্য নেই।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) হে মানবসম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ হতে সৃষ্টি করেছেন[1] ও তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নরনারী (পৃথিবীতে) বিস্তার করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা কর এবং জ্ঞাতি-বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর।[2] নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন।

 [1] ‘একটি প্রাণ’ বলতে মানবকুলের পিতা আদম (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। আর خَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا এতে مِنْهَا থেকে উক্ত প্রাণ অর্থাৎ, আদম (আঃ)-কেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আদম (আঃ) থেকেই তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন। আদম (আঃ) থেকে হাওয়াকে কিভাবে সৃষ্টি করা হয়, এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হাওয়া পুরুষ অর্থাৎ, আদম (আঃ) থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁর পাঁজরের হাড় থেকে। অপর একটি হাদীসে বলা হয়েছে যে, ‘‘নারীদেরকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তুমি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তবে তার মধ্যে বক্রতা অবশিষ্ট থাকা অবস্থাতেই উপকৃত হতে পারবে।’’ (বুখারী ৩৩৩১, মুসলিম ১৪৬৮নং) উলামাদের কেউ কেউ এই হাদীসের ভিত্তিতে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত উক্তিকেই সমর্থন করেছেন। কুরআনের শব্দ خَلَقَ مِنْهَا থেকেও এই মতের সমর্থন হয়। অর্থাৎ, মা হাওয়ার সৃষ্টি সেই একটি প্রাণ থেকেই হয়েছে, যাকে ‘আদম’ বলা হয়।

[2] وَالأَرْحَامَ এর সংযোগ اللَّهَ এর সাথে। অর্থাৎ, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাকেও ভয় কর। أَرْحَامٌ  হলো, رِحِمٌ এর বহুবচন। যার অর্থ হল গর্ভাশয়, যেহেতু আত্মীয়তার সম্পর্ক মাতৃগর্ভের ভিত্তিতেই কায়েম হয়। এতে মাহরাম (যার সাথে চিরতরের জন্য বিবাহ হারাম, অগম্য বা এগানা) এবং গায়র মাহরাম (গম্য বা বেগানা) সকল আত্মীয়ই শামিল। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা অতি বড় গোনাহ। হাদীসসমূহে সর্বাবস্থায় আত্মীয়তার সম্পর্ক কায়েম রাখার এবং তাদের অধিকার আদায় করার প্রতি বড়ই তাকীদ করা হয়েছে এবং এ কাজের অনেক ফযীলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪:২ وَ اٰتُوا الۡیَتٰمٰۤی اَمۡوَالَهُمۡ وَ لَا تَتَبَدَّلُوا الۡخَبِیۡثَ بِالطَّیِّبِ ۪ وَ لَا تَاۡكُلُوۡۤا اَمۡوَالَهُمۡ اِلٰۤی اَمۡوَالِكُمۡ ؕ اِنَّهٗ كَانَ حُوۡبًا كَبِیۡرًا ﴿۲﴾
و اتوا الیتمی اموالهم و لا تتبدلوا الخبیث بالطیب و لا تاكلوا اموالهم الی اموالكم انهٗ كان حوبا كبیرا ﴿۲﴾

আর তোমরা ইয়াতীমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ দিয়ে দাও এবং তোমরা অপবিত্র বস্ত্তকে পবিত্র বস্ত্ত দ্বারা পরিবর্তন করো না এবং তাদের ধন-সম্পদকে তোমাদের ধন-সম্পদের সাথে খেয়ো না। নিশ্চয় তা বড় পাপ। আল-বায়ান

এবং ইয়াতীমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ প্রদান কর এবং ভালোর সাথে মন্দের বদল করো না এবং তাদের মাল নিজেদের মালের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রাস করো না, নিশ্চয় এটা মহাপাপ। তাইসিরুল

আর ইয়াতীমদেরকে তাদের ধন সম্পত্তি বুঝিয়ে দাও এবং পবিত্রতার সাথে অপবিত্রতার বিনিময় করনা ও তোমাদের ধন সম্পত্তির সাথে তাদের ধন সম্পত্তি মিশ্রিত করে ভোগ করনা; নিশ্চয়ই এটা গুরুতর অপরাধ। মুজিবুর রহমান

And give to the orphans their properties and do not substitute the defective [of your own] for the good [of theirs]. And do not consume their properties into your own. Indeed, that is ever a great sin. Sahih International

২. আর ইয়াতীমদেরকে তোমরা তাদের ধন-সম্পদ সমর্পণ করো(১) এবং ভালোর সাথে মন্দ বদল করো না(২) আর তোমাদের সম্পদের সাথে তাদের সম্পদ মিশিয়ে গ্রাস করো না; নিশ্চয় এটা মহাপাপ(৩)।

(১) আয়াতে বলা হয়েছে, ইয়াতীমের সম্পদ তাদেরকে যথার্থভাবে বুঝিয়ে দাও। আরবী ‘ইয়াতীম’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে- নিঃসঙ্গ। একটি ঝিনুকের মধ্যে যদি একটিমাত্র মুক্তা জন্ম নেয়, তখন একে ‘দুররাতুন-ইয়াতীমাতুন’ বা ‘নিঃসঙ্গ মুক্তা’ বলা হয়ে থাকে। ইসলামী পরিভাষায় যে শিশু-সন্তানের পিতা ইন্তেকাল করে, তাকে ইয়াতীম বলা হয়। ছেলে-মেয়ে বালেগ হয়ে গেলে তাদেরকে ইসলামী পরিভাষায় ইয়াতীম বলা হয় না। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বালেগ হওয়ার পর আর কেউ ইয়াতীম থাকে না। [আবু দাউদঃ ২৮৭৩]

ইয়াতীম যদি পারিতোষিক অথবা উপঢৌকন হিসেবে কিছু সম্পদপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ইয়াতীমের অভিভাবকের দায়িত্ব হচ্ছে সেসব মালেরও হেফাজত করা। ইয়াতীমের মৃত পিতা অথবা দেশের সরকার যে-ই উক্ত অভিভাবককে মনোনীত করুক না কেন; তার উপরই ইয়াতীমের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বর্তায়। উক্ত অভিভাবকের উচিত, ইয়াতীমের যাবতীয় প্রয়োজন তার গচ্ছিত ধন-সম্পদ থেকে নির্বাহ করা। এ আয়াতে ইয়াতিমের সম্পদ তার হাতে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোন শর্তারোপ করা হয়নি। পক্ষান্তরে পরবর্তী ৬ নং আয়াতে এ সম্পদ তাদের কাছে প্রত্যার্পণ করার জন্য দুটি শর্ত দিয়েছে। এক, ইয়াতীম বালেগ হতে হবে, দুই ভাল-মন্দ বিবেচনা করার ক্ষমতা থাকতে হবে। কারণ, বালেগ হওয়ার পূর্বে তার জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনা সম্পত্তি সংরক্ষণের মত না হওয়াই স্বাভাবিক। দুটো বিষয় তাদের মধ্যে পাওয়া গেলে তাদের সম্পদ তাদের কাছে ফেরৎ দেয়া উচিত। [আদওয়াউল বায়ান]

(২) মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ তোমরা হালালকে হারামের সাথে মিশিয়ে ফেলো না। [তাবারী]

(৩) এ আয়াতে ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস করাকে বড় গুনাহ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু গোনাহের পরিণাম সম্পর্কে এখানে কিছু বলা হয়নি। এ সূরারই ১০ নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সেটা ঘোষণা করে বলেছেন, “যারা ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে তারা তো তাদের পেটে আগুনই খাচ্ছে, তারা অচিরেই জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে।” [আদওয়াউল বায়ান]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) আর পিতৃহীনদেরকে তাদের ধন-সম্পদ সমর্পণ কর এবং উৎকৃষ্টের সাথে নিকৃষ্ট বদল করো না, এবং তোমাদের সম্পদের সাথে তাদের সম্পদকে মিশ্রিত করে গ্রাস করো না; নিশ্চয় তা মহাপাপ।[1]

[1] পিতৃহীন, অনাথ বা ইয়াতীম যখন সাবালক হয়ে যাবে এবং ভাল-মন্দ বুঝতে শিখবে, তখন তাকে তার ধন-সম্পদ বুঝিয়ে (ফিরিয়ে) দাও। ‘খাবীস’ বলতে নিকৃষ্ট জিনিস এবং ‘ত্বাইয়্যিব’ বলতে উৎকৃষ্ট জিনিসকে বুঝানো  হয়েছে। অর্থাৎ, এমন করো না যে, তাদের মাল থেকে উৎকৃষ্ট জিনিসগুলো নিয়ে তার পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিস দিয়ে গুনতি পূরণ করে দেবে। এই নিকৃষ্ট জিনিসগুলোকে খাবীস (নাপাক) এবং উৎকৃষ্ট জিনিসগুলোকে ত্বাইয়্যিব (পবিত্র) আখ্যা দিয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এইভাবে পরিবর্তন করা মাল যদিও প্রকৃতপক্ষে ত্বাইয়্যিব (পবিত্র ও হালাল), তবুও তোমাদের বিশ্বাসঘাতকতা তাকে অপবিত্র করে দিয়েছে। কাজেই এখন তা আর পবিত্র নেই, বরং তোমাদের জন্য তা অপবিত্র ও হারাম হয়ে গেছে। অনুরূপ বেঈমানী করে তাদের মালকে নিজের মালের সাথে মিশ্রিত করে খাওয়াও নিষেধ। তবে যদি তাদের কল্যাণ উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তাদের মালকে নিজের মালের সাথে মিশ্রিত করা জায়েয।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪:৩ وَ اِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تُقۡسِطُوۡا فِی الۡیَتٰمٰی فَانۡكِحُوۡا مَا طَابَ لَكُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ مَثۡنٰی وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ ۚ فَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تَعۡدِلُوۡا فَوَاحِدَۃً اَوۡ مَا مَلَكَتۡ اَیۡمَانُكُمۡ ؕ ذٰلِكَ اَدۡنٰۤی اَلَّا تَعُوۡلُوۡا ؕ﴿۳﴾
و ان خفتم الا تقسطوا فی الیتمی فانكحوا ما طاب لكم من النسآء مثنی و ثلث و ربع فان خفتم الا تعدلوا فواحدۃ او ما ملكت ایمانكم ذلك ادنی الا تعولوا ﴿۳﴾

আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীমদের ব্যাপারে তোমরা ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দু’টি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি ভয় কর যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি অথবা তোমাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে। এটা অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা যুলম করবে না। আল-বায়ান

যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, (নারী) ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিবাহ কর, কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি। তাইসিরুল

আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবেনা তাহলে নারীদের মধ্য হতে তোমাদের পছন্দ মত দু’টি, তিনটি কিংবা চারটিকে বিয়ে করে নাও; কিন্তু যদি তোমরা আশংকা কর যে, তাদের সাথে ন্যায় সঙ্গত আচরণ করতে পারবেনা তাহলে মাত্র একটি অথবা তোমাদের ডান হাত যার অধিকারী (ক্রীতদাসী); এটা আরও উত্তম; এটা অবিচার না করার নিকটবর্তী। মুজিবুর রহমান

And if you fear that you will not deal justly with the orphan girls, then marry those that please you of [other] women, two or three or four. But if you fear that you will not be just, then [marry only] one or those your right hand possesses. That is more suitable that you may not incline [to injustice]. Sahih International

৩. আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি(১) সুবিচার করতে পারবে না(২), তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন বা চার(৩); আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না(৪) তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর। এতে পক্ষপাতিত্ব(৫) না করার সম্ভাবনা বেশী।

(১) এ আয়াতে ইয়াতীম মেয়েদের বৈবাহিক জীবনের যাবতীয় অধিকার সংরক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সাধারণ আইন-কানুনের মত তা শুধু প্রশাসনের উপর ন্যস্ত করার পরিবর্তে জনসাধারণের মধ্যে আল্লাহ-ভীতির অনুভূতি জাগ্রত করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, যদি ইনসাফ করতে পারবে না বলে মনে কর, তাহলে ইয়াতীম মেয়েদেরকে বিয়ে করবে না; বরং সে ক্ষেত্রে অন্য মেয়েদেরকেই বিয়ে করে নেবে। এ কথা বলার সাথে সাথে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে ইয়াতীম ছেলে-মেয়েদের কোন প্রকার অধিকার ক্ষুন্ন না হয় সে ব্যাপারে পুরোপুরি সচেতন থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(২) জাহেলিয়াত যুগে ইয়াতীম মেয়েদের অধিকার চরমভাবে ক্ষুন্ন করা হত। যদি কোন অভিভাবকের অধিনে কোন ইয়াতীম মেয়ে থাকত আর তারা যদি সুন্দর হত এবং তাদের কিছু সম্পদ-সম্পত্তিও থাকত, তাহলে তাদের অভিভাবকরা নামমাত্র মাহর দিয়ে তাদেরকে বিয়ে করে নিত অথবা তাদের সন্তানদের সাথে বিয়ে দিয়ে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার চক্রান্ত করত। এসব অসহায় মেয়েদের পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থার কথা তারা চিন্তাও করত না। আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ঠিক এ ধরণের একটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। জনৈক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে একটি ইয়াতীম মেয়ে ছিল। সে ব্যক্তির একটি বাগান ছিল, যার মধ্যে উক্ত ইয়াতীম বালিকাটিরও অংশ ছিল। সে ব্যক্তি উক্ত মেয়েটিকে বিয়ে করে নিল এবং নিজের পক্ষ থেকে দেন-মাহর আদায় তো করলই না, বরং বাগানে মেয়েটির যে অংশ ছিল তাও সে আত্মসাৎ করে নিল। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়। [বুখারীঃ ৪৫৭৩]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তখনকার দিনে কারও কাছে কোন ইয়াতীম থাকলে এবং তার সম্পদ ও সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করলে সে তাকে বিয়ে করতে চাইত। তবে তাকে অন্যদের সমান মাহর দিতে চাইত না। তাই তাদের মাহর পূর্ণ ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের না দিয়ে বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে কোন প্রকার ক্রটি করার ইচ্ছা থাকলে তাদের বাদ দিয়ে অন্যান্য মহিলাদের বিয়ে করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [বুখারী ৪৫৭৪] তবে এর অর্থ এই নয় যে, অন্যান্য নারীদের বেলায় ইনসাফ বিধান করা লাগবে না। বরং অন্যান্য নারীদের বেলায়ও তা করতে হবে। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

(৩) বহু-বিবাহ প্রথাটি ইসলামপূর্ব যুগেও দুনিয়ার প্রায় সকল ধর্মমতেই বৈধ বলে বিবেচিত হত। আরব, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইরান, মিশর, ব্যাবিলন প্রভৃতি দেশেই এই প্রথার প্রচলন ছিল। বহু-বিবাহের প্রয়োজনীয়তার কথা বর্তমান যুগেও স্বীকৃত। বর্তমান যুগে ইউরোপের এক শ্রেণীর চিন্তাবিদ বহু-বিবাহ রহিত করার জন্য তাদের অনুসারীদেরকে উদ্ভুদ্ধ করে আসছেন বটে, কিন্তু তাতে কোন সুফল হয়নি। বরং তাতে সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ফল রক্ষিতার রূপে প্রকাশ পেয়েছে। অবশেষে প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক ব্যবস্থারই বিজয় হয়েছে। তাই আজকে ইউরোপের দূরদর্শী চিন্তাশীল ব্যক্তিরা বহু-বিবাহ পুনঃপ্রচলন করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করছেন। ইসলাম একই সময়ে চারের অধিক স্ত্রী রাখাকে হারাম ঘোষণা করেছে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে ইনসাফ কায়েমের জন্য বিশেষ তাকিদ দিয়েছে এবং ইনসাফের পরিবর্তে যুলুম করা হলে তার জন্য শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে।

আলোচ্য আয়াতে একাধিক অর্থাৎ চারজন স্ত্রী গ্রহণ করার সুযোগ অবশ্য দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে এই চার পর্যন্ত কথাটি আরোপ করে তার উর্ধ্ব সংখ্যক কোন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না বরং তা হবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ- তাও ব্যক্ত করে দিয়েছে। ইসলাম পূর্ব যুগে কারও কারও দশটি পর্যন্ত স্ত্রী থাকত। ইসলাম এটাকে চারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। কায়েস ইবন হারেস বলেন, ‘আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার স্ত্রী সংখ্যা ছিল আট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলে তিনি আমাকে বললেন, ‘এর মধ্য থেকে চারটি গ্রহণ করে নাও। [ইবন মাজাহ: ১৯৫২, ১৯৫৩]

(৪) পবিত্র কুরআনে চারজন স্ত্রীর কথা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সাথে সাথে এও বলে দেয়া হয়েছে যে, যদি তোমরা তাদের মধ্যে সমতা বিধান তথা ন্যায় বিচার করতে না পার, তাহলে এক স্ত্রীর উপরই নির্ভর কর। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, একাধিক বিয়ে ঠিক তখনই বৈধ হতে পারে, যখন শরীআত মোতাবেক সবার সাথে সমান আচরণ করা হবে; তাদের সবার অধিকার সমভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এ ব্যাপারে অপারগ হলে এক স্ত্রীর উপরই নির্ভর করতে হবে এবং এটাই ইসলামের নির্দেশ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক স্ত্রীর বেলায় সবার সাথে পরিপূর্ণ সমতার ব্যবহার করার ব্যাপারে বিশেষ তাকিদ দিয়েছেন এবং যারা এর খেলাফ করবে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তির খবর দিয়েছেন। নিজের ব্যবহারিক জীবনেও তিনি এ ব্যাপারে সর্বোত্তম আদর্শ স্থাপন করে দেখিয়েছেন। এমনকি তিনি এমন বিষয়েও সমতাপূর্ণ আদর্শ স্থাপন করেছেন যে ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন ছিল না। এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তির দুই স্ত্রী রয়েছে, সে যদি এদের মধ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ করতে না পারে, তবে কিয়ামতের ময়দানে সে এমনভাবে উঠবে যে, তার শরীরের এক পার্শ্ব অবশ হয়ে থাকবে। [আবু দাউদঃ ২১৩৩, তিরমিযীঃ ১১৪১, ইবন মাজাহঃ ১৯৬৯, আহমাদঃ ২/৪৭১]

এ সূরার ১২৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, কোন এক স্ত্রীর প্রতি যদি তোমার আন্তরিক আকর্ষণ বেশী হয়ে যায়, তবে সেটা তোমার সাধ্যায়ত্ব ব্যাপার নয় বটে, কিন্তু এ ক্ষেত্রেও অন্যজনের প্রতি পরিপূর্ণ উপেক্ষা প্রদর্শন করা জায়েয হবে না। সূরা আন-নিসার এ আয়াতে ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে না পারার আশংকার ক্ষেত্রে এক বিয়েতেই তৃপ্ত থাকার নির্দেশ এবং পরবর্তী আয়াতে “তোমরা কোন অবস্থাতেই একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না” এ দু'আয়াতের মধ্যে সমস্বয় হচ্ছে, এখানে মানুষের সাধ্যায়ত্ব ব্যাপারে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় আয়াতে যা মানুষের সাধ্যের বাইরে অর্থাৎ আন্তরিক আকর্ষণের ব্যাপারে সমতা রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে। সুতরাং দুটি আয়াতের মর্মে যেমন কোন বৈপরীত্ব নেই, তেমনি এ আয়াতের দ্বারা একাধিক বিবাহের অবৈধতাও প্রমাণিত হয় না। যদি আমরা এ আয়াতের শানে-নুযুলের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলছেন, একটি ইয়াতীম মেয়ে এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে ছিল। লোকটি সে ইয়াতীম মেয়েটির সাথে সম্পদে অংশীদারও ছিল। সে তাকে তার সৌন্দর্য ও সম্পদের জন্য ভালবাসত। কিন্তু সে তাকে ইনসাফপূর্ণ মাহর দিতে রাযী হচ্ছিল না। তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করে মাহর দানের ক্ষেত্রে ইনসাফপূর্ণ ব্যবস্থা কায়েম করার নির্দেশ দেন। ইয়াতীম হলেই তার মাহর কম হয়ে যাবে, এমনটি যেন না হয় সেদিকে গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দান করা হয়। [বুখারীঃ ২৪৯৪, ৪৫৭৪, ৫০৯২, মুসলিমঃ ৩০১৮]

(৫) এতে দুটি শব্দ রয়েছে। একটি أَدْنَىٰ এটি دُنُوٌ ধাতু থেকে উৎপন্ন, যার অর্থ হয় নিকটতর। দ্বিতীয় শব্দটি হচ্ছেঃ لَا تَعُولُوا যা عال শব্দ হতে উৎপন্ন, অর্থ ঝুঁকে পড়া। এখানে শব্দটি অসংগতভাবে ঝুঁকে পড়া এবং দাম্পত্য জীবনে নির্যাতনের পথ অবলম্বন করা অর্থে ব্যবহৃত করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, এ আয়াতে তোমাদের যা বলা হল যে, সমতা বজায় রাখতে না পারার আশংকা থাকলে এক স্ত্রী নিয়েই সংসারযাত্রা নির্বাহ কর কিংবা শরীআতসম্মত ক্রীতদাসী নিয়ে সংসার কর; এটা এমন এক পথ যা অবলম্বন করলে তোমরা যুলুম থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। বাড়াবাড়ি বা সীমালংঘনের সম্ভাবনাও দূর হবে। تَعُولُوا শব্দের দ্বিতীয় আরেকটি অর্থ হতে পারে মিসকীন হয়ে যাওয়া। এর সপক্ষে সূরা আত-তাওবার ২৮ নং আয়াতে عَيْلَةً শব্দটি এসেছে। সেখানে শব্দটির অর্থ করা হয়েছে দারিদ্রতা। ইমাম শাফেয়ী বলেন, এর অর্থ, যাতে তোমাদের পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি না পায়। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) আর তোমরা যদি আশংকা কর যে, পিতৃহীনাদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিবাহ কর (স্বাধীন) নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশংকা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে (বিবাহ কর) অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত (ক্রীত অথবা যুদ্ধবন্দিনী) দাসীকে (স্ত্রীরূপে ব্যবহার কর)।[1] এটাই তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর নিকটবর্তী। [2]

[1] এই আয়াতের তাফসীর আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এইভাবে বর্ণনা করেছেন যে, বিত্তশালিনী এবং রূপ-সৌন্দর্যের অধিকারিণী ইয়াতীম কন্যা কোন তত্ত্বাবধায়কের তত্ত্বাবধানে থাকলে, সে তার মাল ও সৌন্দর্য দেখে তাকে বিবাহ করে নিত, কিন্তু তাকে অন্য নারীদের ন্যায় সম্পূর্ণ মোহর দিত না। মহান আল্লাহ এ রকম অবিচার করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, যদি তোমরা ঘরের ইয়াতীম মেয়েদের সাথে সুবিচার করতে না পার, তাহলে তাদেরকে বিবাহই করবে না। অন্য মেয়েদেরকে বিবাহ করার পথ তোমাদের জন্য খোলা আছে। (বুখারী ২৪৯৪নং) এমন কি একের পরিবর্তে দু’জন, তিনজন এবং চারজন পর্যন্ত মেয়েকে তোমরা বিবাহ করতে পার। তবে শর্ত হল, তাদের মধ্যে সুবিচারের দাবী যেন পূরণ করতে পার। সুবিচার করতে না পারলে, একজনকেই বিয়ে কর অথবা অধিকারভুক্ত ক্রীতদাসী নিয়েই তুষ্ট থাক। এই আয়াত থেকে জানা গেল যে, একজন মুসলিম পুরুষ (সে প্রয়োজন বোধ করলে) একই সময়ে চারজন মহিলাকে বিবাহ করে নিজের কাছে রাখতে পারে; এর বেশী রাখতে পারে না। অনেক সহীহ হাদীসেও এ বিষয়কে আরো পরিষ্কার করে বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে এবং চার সংখ্যা পর্যন্ত তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আর নবী করীম (সাঃ) যে চারের অধিক নারীকে বিবাহ করেছিলেন, সেটা ছিল তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। উম্মতের কারো জন্য তার উপর আমল করা জায়েয নয়। (ইবনে কাসীর)

[2] অর্থাৎ, একজন মহিলাকেই বিবাহ করা যথেষ্ট হতে পারে। কেননা, একাধিক স্ত্রী রাখলে সুবিচারের যত্ন নেওয়া বড়ই কষ্টকর হয়। যার প্রতি আন্তরিক টান থাকবে, তার জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থাপনার প্রতিই বেশী খেয়াল থাকবে। এইভাবে সে স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার বজায় রাখতে অক্ষম হবে এবং আল্লাহর কাছে অপরাধী গণ্য হবে। কুরআন এই বাস্তব সত্যকে অন্যত্র অতি সুন্দররূপে এইভাবে বর্ণনা করেছে, [وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ] অর্থাৎ ‘‘তোমরা যতই সাগ্রহে চেষ্টা কর না কেন, স্ত্রীদের মাঝে ন্যায়পরায়ণতা কখনই বজায় রাখতে পারবে না। তবে তোমরা কোন এক জনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না এবং অপরকে ঝোলানো অবস্থায় ছেড়ে দিও না।’’ (সূরা নিসাঃ ১২৯) এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, একাধিক বিবাহ করে স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা বজায় না রাখা বড়ই অনুচিত ও বিপজ্জনক ব্যাপার। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তির দু’টি স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তন্মধ্যে একটির দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তার অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে।’’ (আহমাদ ২/৩৪৭, আসহাবে সুনান, হাকেম ২/১৮৬, ইবনে হিব্বান ৪১৯৪নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪:৪ وَ اٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِهِنَّ نِحۡلَۃً ؕ فَاِنۡ طِبۡنَ لَكُمۡ عَنۡ شَیۡءٍ مِّنۡهُ نَفۡسًا فَكُلُوۡهُ هَنِیۡٓــًٔا مَّرِیۡٓــًٔا ﴿۴﴾
و اتوا النسآء صدقتهن نحلۃ فان طبن لكم عن شیء منه نفسا فكلوه هنیٓــٔا مریٓــٔا ﴿۴﴾

আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও। আল-বায়ান

নারীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে দেবে, অতঃপর তারা যদি সন্তোষের সঙ্গে তাথেকে তোমাদের জন্য কিছু ছেড়ে দেয়, তবে তা তৃপ্তির সঙ্গে ভোগ কর। তাইসিরুল

আর সন্তুষ্ট চিত্তে নারীদেরকে তাদের দেয় মোহর প্রদান কর, কিন্তু যদি তারা স্বেচ্ছায় কিয়দংশ প্রদান করে তাহলে সঠিক বিবেচনা মত তৃপ্তির সাথে ভোগ কর। মুজিবুর রহমান

And give the women [upon marriage] their [bridal] gifts graciously. But if they give up willingly to you anything of it, then take it in satisfaction and ease. Sahih International

৪. আর তোমরা নারীদেরকে তাদের মাহর(১) মনের সন্তোষের সাথে(২) প্রদান কর; অতঃপর সস্তুষ্ট চিত্তে তারা মাহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে(৩) ভোগ কর।

(১) ইসলামপূর্ব যুগে স্ত্রীর প্রাপ্য মাহর তার হাতে পৌছতো না; মেয়ের অভিভাবকগণই তা আদায় করে আত্মসাৎ করত। যা ছিল নিতান্তই একটা নির্যাতনমূলক রেওয়াজ। এ প্রথা উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে কুরআন নির্দেশ দিয়েছেঃ (وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ) এতে স্বামীর প্রতি নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, স্ত্রীর মাহর তাকেই পরিশোধ কর; অন্যকে নয়। অন্যদিকে অভিভাবকগণকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, মাহর আদায় হলে যার প্রাপ্য তার হাতেই যেন অৰ্পণ করে। তাদের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ যেন তা খরচ না করে।

(২) স্ত্রীর মাহর পরিশোধ করার ক্ষেত্রে নানা রকম তিক্ততার সৃষ্টি হত। প্রথমতঃ মাহর পরিশোধ করতে হলে মনে করা হত যেন জরিমানার অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। এ অনাচার রোধ করার লক্ষেই نِحْلَةً শব্দটি ব্যবহার করে অত্যন্ত হৃষ্টমনে তা পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেননা, অভিধানে نِحْلَةً বলা হয় সে দানকে, যা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে প্রদান করা হয়। মোটকথা, আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে যে, স্ত্রীদের মাহর অবশ্য পরিশোধ্য একটা ঋণ বিশেষ। এটা পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরী। পরন্তু অন্যান্য ওয়াজিব ঋণ যেমন সন্তুষ্ট চিত্তে পরিশোধ করা হয়, স্ত্রীর মাহরের ঋণও তেমনি হৃষ্টচিত্তে, উদার মনে পরিশোধ করা কর্তব্য। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আব্দুর রহমান ইবন আউফ কোন এক মহিলাকে এক 'নাওয়া' (পাঁচ দিরহাম পরিমাণ) মাহর দিয়ে বিয়ে করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে খুশী দেখতে পেয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এক মহিলাকে এক নাওয়া পরিমাণ মাহর দিয়ে বিয়ে করেছি। [বুখারী ৫১৪৮]

(৩) অনেক স্বামীই তার বিবাহিত স্ত্রীকে অসহায় মনে করে নানাভাবে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে মাহর মাফ করিয়ে নিত। এভাবে মাফ করিয়ে নিলে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা মাফ হয় না। অথচ স্বামী মনে করত যে, মৌখিকভাবে যখন স্বীকার করিয়ে নেয়া গেছে, সুতরাং মাহরের ঋণ মাফ হয়ে গেছে। এ ধরণের যুলুম প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, “যদি স্ত্রী নিজের পক্ষ থেকে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে মাহরের কোন অংশ ক্ষমা করে দেয়, তবেই তোমরা তা হৃষ্টমনে ভোগ করতে পার।” অর্থ হচ্ছে, চাপ প্রয়োগ কিংবা কোন প্রকার জোর-জবরদস্তি করে ক্ষমা করিয়ে নেয়ার অর্থ কোন অবস্থাতেই ক্ষমা নয়। তবে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায়, খুশী মনে মাহরের অংশবিশেষ মাফ করে দেয় কিংবা পুরোপুরিভাবে বুঝে নিয়ে কোন অংশ তোমাদের ফিরিয়ে দেয়, তবেই কেবল তোমাদের পক্ষে তা ভোগ করা জায়েয হবে। এ ধরণের বহু নির্যাতনমূলক পন্থা জাহেলিয়াত যুগে প্রচলিত ছিল। কুরআন এসব যুলুমের উচ্ছেদ করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজো মুসলিম সমাজে মাহর সম্পর্কিত এ ধরণের নানা নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা প্রচলিত দেখা যায়। কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী এরূপ নির্যাতনমূলক পথ পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। আয়াতে ‘হষ্টচিত্তে’ প্রদানের শর্ত আরোপ করার পেছনে গভীর তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। কেননা, মাহর স্ত্রীর অধিকার এবং তার নিজস্ব সম্পদ হৃষ্টচিত্তে যদি সে তা কাউকে না দেয় বা দাবী ত্যাগ না করে, তবে স্বামী বা অভিভাবকের পক্ষে সে সম্পদ কোন অবস্থাতেই হালাল হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে শরীয়তের মূলনীতিরূপে এরশাদ করেছেনঃ “কারো পক্ষে অন্যের সম্পদ তার আন্তরিক তুষ্টি ব্যতীত গ্রহণ করা হালাল হবে না।” [মুসনাদে আহমাদঃ ৩/৪২৩] এ হাদীসটি এমন একটা মূলনীতির নির্দেশ দেয়, যা সর্বপ্রকার প্রাপ্য ও লেন-দেনের ব্যাপারে হালাল এবং হারামের সীমারেখা নির্দেশ করে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর সন্তুষ্ট মনে দিয়ে দাও, পরে তারা খুশী মনে ওর (মোহরের) কিয়দংশ ছেড়ে দিলে, তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪:৫ وَ لَا تُؤۡتُوا السُّفَهَآءَ اَمۡوَالَكُمُ الَّتِیۡ جَعَلَ اللّٰهُ لَكُمۡ قِیٰمًا وَّ ارۡزُقُوۡهُمۡ فِیۡهَا وَ اكۡسُوۡهُمۡ وَ قُوۡلُوۡا لَهُمۡ قَوۡلًا مَّعۡرُوۡفًا ﴿۵﴾
و لا تؤتوا السفهآء اموالكم التی جعل الله لكم قیما و ارزقوهم فیها و اكسوهم و قولوا لهم قولا معروفا ﴿۵﴾

আর তোমরা নির্বোধদের হাতে তোমাদের ধন-সম্পদ দিও না, যাকে আল্লাহ তোমাদের জন্য করেছেন জীবিকার মাধ্যম এবং তোমরা তা থেকে তাদেরকে আহার দাও, তাদেরকে পরিধান করাও এবং তাদের সাথে উত্তম কথা বল। আল-বায়ান

এবং তোমরা অল্প-বুদ্ধিসম্পন্নদেরকে নিজেদের মাল প্রদান করো না, যা আল্লাহ তোমাদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত থাকার উপকরণ করেছেন এবং সে মাল হতে তাদের অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে এবং তাদের সঙ্গে দয়ার্দ্র ন্যায়ানুগ কথা বলবে। তাইসিরুল

আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ধন-সম্পত্তি নির্ধারণ করেছেন তা অবোধদেরকে প্রদান করনা; বরং তা হতে তাদেরকে ভক্ষণ করাতে থাক, পরিধান করাতে থাক এবং তাদের সাথে সদ্ভাবে কথা বল। মুজিবুর রহমান

And do not give the weak-minded your property, which Allah has made a means of sustenance for you, but provide for them with it and clothe them and speak to them words of appropriate kindness. Sahih International

৫. আর তোমরা অল্প বুদ্ধিমানদেরকে তাদের ধন-সম্পদ অৰ্পণ করে না(১), যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের জীবন চালানোর ব্যবস্থা করেছেন এবং তা থেকে তাদের আহার-বিহার ও ভরণপোষনের ব্যবস্থা কর। আর তোমরা তাদের সাথে সদালাপ কর।

(১) এ আয়াতে ধন-সম্পদের গুরুত্ব এবং মানুষের জীবন ধারণের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং সম্পদের হেফাযতের ক্ষেত্রে একটা সাধারণ ক্রটির সংশোধন নির্দেশ করা হয়েছে। তা হচ্ছে, অনেকেই স্নেহান্ধ হয়ে অল্পবয়স্ক, অনভিজ্ঞ ছেলে-মেয়ে অথবা স্ত্রীলোকদের হাতে ধন-সম্পদের দায়-দায়িত্ব তুলে দেয়। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি সম্পদের অপচয় এবং যা দারিদ্র ঘনিয়ে আসার আকারে দেখা দেয়। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন যে, কুরআনুল কারীমের এ আয়াতে নির্দেশ করা হচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান-সন্ততি কিংবা অনভিজ্ঞ স্ত্রীলোকদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থেকো না, বরং আল্লাহ্ তা'আলা যেহেতু তোমাকে অভিভাবক এবং দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন, সেজন্য তুমি সম্পদ তোমার নিজের হাতে রেখে তাদের খাওয়া-পরার দায়-দায়িত্ব পালন করতে থাক। যদি তারা অর্থ-সম্পদের দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়ে নেয়ার আব্দার করে, তবে তাদেরকে ভালভাবে বুঝিয়ে দাও যে, এসব তোমাদের জন্যই সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে তাদের মনোকষ্টের কারণ না হয়, আবার সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা না দেয়। [তাবারী]

উপরোক্ত ব্যাখ্যা মতে, এমন সবার হাতেই সম্পদ অৰ্পন করা যাবে না যাদের হাতে পড়ে ধন-সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। এতে ইয়াতীম শিশু বা নিজের সন্তানের কোন পার্থক্য নেই। আবু মূসা আশ'আরী রাদিয়াল্লাহু আনহুও এ আয়াতের এরূপ তাফসীরই বর্ণনা করেছেন। [তাবারী] মোটকথা, মালের হেফাজত অত্যন্ত জরুরী এবং অপচয় করা গোনাহের কাজ। নিজের সম্পদের হেফাজত করতে গিয়ে যদি কেউ নিহত হয়, তবে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নিজের মালের হেফাজত করতে গিয়ে যদি কেউ নিহত হয়, তবে সে শহীদ’। [বুখারীঃ ২৪৮০, মুসলিমঃ ১৪১] অর্থাৎ সওয়াবের দিক দিয়ে শহীদের মর্যাদা পাবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) আর আল্লাহ তোমাদের সম্পদকে-- যা তোমাদের উপজীবিকা (জীবনযাত্রার অবলম্বন) করেছেন --তা নির্বোধদের (হাতে) অর্পণ করো না। তা হতে তাদের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা কর এবং তাদের সাথে মিষ্ট কথা বল।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪:৬ وَ ابۡتَلُوا الۡیَتٰمٰی حَتّٰۤی اِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ ۚ فَاِنۡ اٰنَسۡتُمۡ مِّنۡهُمۡ رُشۡدًا فَادۡفَعُوۡۤا اِلَیۡهِمۡ اَمۡوَالَهُمۡ ۚ وَ لَا تَاۡكُلُوۡهَاۤ اِسۡرَافًا وَّ بِدَارًا اَنۡ یَّكۡبَرُوۡا ؕ وَ مَنۡ كَانَ غَنِیًّا فَلۡیَسۡتَعۡفِفۡ ۚ وَ مَنۡ كَانَ فَقِیۡرًا فَلۡیَاۡكُلۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ فَاِذَا دَفَعۡتُمۡ اِلَیۡهِمۡ اَمۡوَالَهُمۡ فَاَشۡهِدُوۡا عَلَیۡهِمۡ ؕ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ حَسِیۡبًا ﴿۶﴾
و ابتلوا الیتمی حتی اذا بلغوا النكاح فان انستم منهم رشدا فادفعوا الیهم اموالهم و لا تاكلوها اسرافا و بدارا ان یكبروا و من كان غنیا فلیستعفف و من كان فقیرا فلیاكل بالمعروف فاذا دفعتم الیهم اموالهم فاشهدوا علیهم و كفی بالله حسیبا ﴿۶﴾

আর তোমরা ইয়াতীমদেরকে পরীক্ষা কর যতক্ষণ না তারা বিবাহের বয়সে পৌঁছে। সুতরাং যদি তোমরা তাদের মধ্যে বিবেকের পরিপক্কতা দেখতে পাও, তবে তাদের ধন-সম্পদ তাদেরকে দিয়ে দাও। আর তোমরা তাদের সম্পদ খেয়ো না অপচয় করে এবং তারা বড় হওয়ার আগে তাড়াহুড়া করে। আর যে ধনী সে যেন সংযত থাকে, আর যে দরিদ্র সে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে খায়। অতঃপর যখন তোমরা তাদের ধন-সম্পদ তাদের নিকট সোপর্দ করবে তখন তাদের উপর তোমরা সাক্ষী রাখবে। আর হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট। আল-বায়ান

ইয়াতীমদেরকে পরখ কর যে পর্যন্ত না তারা বিবাহযোগ্য হয়, যদি তাদের মধ্যে বিচারবোধ লক্ষ্য কর, তবে তাদেরকে তাদের মাল ফিরিয়ে দেবে। তাদের বয়ঃপ্রাপ্তির ভয়ে অপব্যয় করে এবং তাড়াতাড়ি করে তাদের মাল খেয়ে ফেলো না। আর যে অভাবমুক্ত, সে যেন নিবৃত্ত থাকে এবং যে অভাবগ্রস্ত সে ন্যায়সঙ্গতভাবে ভোগ করবে এবং যখন তাদের মাল তাদেরকে সমর্পণ করবে, তাদের সামনে সাক্ষী রাখবে; হিসাব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট। তাইসিরুল

আর ইয়াতীমরা বিয়ের যোগ্য না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে পরীক্ষা করে নাও; অতঃপর যদি তাদের মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি পরিদৃষ্ট হয় তাহলে তাদের ধন-সম্পত্তি তাদেরকে সমর্পণ কর; ইয়াতীমের ধন-সম্পদ অপব্যয় করনা অথবা তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হবে বলে ওটা সত্ত্বরতা সহকারে আত্মসাৎ করনা; এবং দেখাশোনাকারী যদি অভাবমুক্ত হয় তাহলে ইয়াতীমের মাল খরচ করা হতে সে নিজকে সম্পূর্ণ বিরত রাখবে, আর যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত সে সঙ্গত পরিমাণ ভোগ করবে, অনন্তর যখন তাদের সম্পত্তি তাদেরকে সমর্পণ করতে চাও তখন তাদের জন্য সাক্ষী রেখ এবং আল্লাহই হিসাব গ্রহণে যথেষ্ট। মুজিবুর রহমান

And test the orphans [in their abilities] until they reach marriageable age. Then if you perceive in them sound judgement, release their property to them. And do not consume it excessively and quickly, [anticipating] that they will grow up. And whoever, [when acting as guardian], is self-sufficient should refrain [from taking a fee]; and whoever is poor - let him take according to what is acceptable. Then when you release their property to them, bring witnesses upon them. And sufficient is Allah as Accountant. Sahih International

৬. আর ইয়াতিমদেরকে যাচাই করবে(১) যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের যোগ্য হয়; অতঃপর তাদের মধ্যে ভাল–মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখতে পেলে(২) তাদের সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দাও(৩)। তারা বড় হয়ে যাবে বলে অপচয় করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেল না। যে অভাবমুক্ত সে যেন নিবৃত্ত থাকে এবং যে বিত্তহীন সে যেন সংযত পরিমাণে ভোগ করে(৪) অতঃপর তোমরা যখন তাদেরকে সম্পদ ফিরিয়ে দিবে তখন সাক্ষী রেখো। আর হিসেব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট।

(১) আয়াতে শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষা ও যোগ্যতা যাচাই করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ বালেগ হওয়ার আগেই ছোট ছোট দায়িত্ব দিয়ে তাদের যোগ্যতা যাচাই করতে থাক, যে পর্যন্ত না তারা বিবাহের পর্যায়ে পৌছে অর্থাৎ বালেগ হয়। মোটকথা, বিষয় সম্পত্তির ব্যাপারে তাদের যোগ্যতা যাচাই করতে থাক এবং যখন দেখ যে, তারা দায়িত্ব বহন করার যোগ্য হয়ে উঠেছে, তখন তাদের সম্পদ তাদের হাতে বুঝিয়ে দাও। সারকথা হচ্ছে, শিশুরা বিশেষ প্রকৃতি ও জ্ঞানবুদ্ধির বিকাশের মাপকাঠিতে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। (এক) বলেগ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়, (দুই) বালেগ হওয়ার পরবর্তী সময়, (তিন) বালেগ হওয়ার আগেই জ্ঞান-বুদ্ধির যথেষ্ট বিকাশ। ইয়াতীম শিশুর অভিভাবকগণকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেন তারা শিশুর লেখাপড়া ও জীবন গঠনের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অতঃপর বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিষয়বুদ্ধির বিকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে ছোট ছোট কাজ কারবার ও লেন-দেনের দায়িত্ব অর্পণ করে তাদের পরীক্ষা করতে থাকেন।

(২) এ বাক্য দ্বারা কুরআনের এ নির্দেশ পাওয়া যাচ্ছে যে, ইয়াতীম শিশুর মধ্যে যে পর্যন্ত বুদ্ধি-বিবেচনার বিকাশ লক্ষ্য না কর, সে পর্যন্ত তাদের বিষয়-সম্পত্তি তাদের হাতে তুলে দিও না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ বুদ্ধি-বিবেচনা'র সময়সীমা কি? কুরআনের অন্য কোন আয়াতেও এর কোন শেষ সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। এ জন্য কোন কোন ফিকহবিদ মত প্রকাশ করেছেন যে, যদি কোন ইয়াতীমের মধ্যে যথেষ্ট বয়স হওয়ার পরও বুদ্ধি-বিবেচনার লক্ষণাদি দেখা না যায়, তবে অভিভাবক তার হাতে বিষয়সম্পত্তি তুলে দিতে পারবে না। সমগ্র জীবন এ সম্পত্তি তার তত্ত্বাবধানে রাখতে হলেও না।

(৩) অর্থাৎ শিশু যখন বালেগ এবং বিয়ের যোগ্য হয়ে যায়, তখন তার অভিজ্ঞতা ও বিষয়বুদ্ধি পরিমাপ করতে হবে। যদি দেখা যায়, সে তার ভালমন্দ বুঝবার মত যথেষ্ট অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে, তখন তার বিষয়-সম্পত্তি তার হাতে তুলে দাও।

(৪) আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, আমার কোন সম্পদ নেই। আমার তত্ত্বাবধানে ইয়াতীম আছে, তার সম্পদ রয়েছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তোমার ইয়াতীমের মাল থেকে তুমি খেতে পার, অপব্যয় ও অপচয় না করে, তার সম্পদকে তোমার সাথে না মিশিয়ে এবং তার সম্পদের বিনিময়ে তোমার সম্পদের হেফাজত না করে। [মুসনাদে আহমাদঃ ২/১৮৬, ২১৫, ২১৬, আবু দাউদঃ ২৮৭২] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, এ আয়াত ইয়াতীমের সম্পদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যদি কেউ ফকীর হয়, সে ইয়াতীমের সঠিক তত্ত্বাবধানের কারণে তা থেকে খেতে পারবে। [বুখারী: ৪৫৭৫; মুসলিম: ৩০১৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) পিতৃহীনদেরকে পরীক্ষা করতে থাকো, যে পর্যন্ত না তারা বিবাহযোগ্য হয়। অতঃপর তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখলে, তাদের সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তারা বড় হয়ে যাবে বলে অপচয় করে ও তাড়াতাড়ি করে তা খেয়ে ফেল না। যে অভাবমুক্ত, সে যেন যা অবৈধ তা থেকে নিবৃত্ত থাকে এবং যে বিত্তহীন, সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে। আর তোমরা যখন তাদেরকে তাদের সম্পদ সমর্পণ করবে, তখন তাদের উপর সাক্ষী রেখো। হিসাব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট। [1]

[1] ইয়াতীমদের মালের ব্যাপারে অত্যাবশ্যকীয় নির্দেশাদি দেওয়ার পর এ কথা বলার অর্থ হল, যতদিন পর্যন্ত ইয়াতীমের মাল তোমার কাছে ছিল, তার তুমি কিভাবে হিফাযত করেছ এবং যখন তার মাল তাকে বুঝিয়ে দিয়েছ, তখন তার মালে কোন কম-বেশী বা কোন প্রকার হেরফের করেছ কি না? সাধারণ মানুষ তোমার বিশ্বস্ততা ও বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে জানতে না পারলেও মহান আল্লাহর নিকট তো কিছু গোপন নেই। যখন তোমরা তাঁর কাছে যাবে, তখন তিনি অবশ্যই তোমাদের হিসাব নিবেন। এই জন্যই হাদীসে এসেছে যে, এটা বড়ই দায়িত্বের কাজ। নবী করীম (সাঃ) আবূ যার (রাঃ)-কে বললেন, ‘‘হে আবূ যার! আমি দেখছি তুমি বড়ই দুর্বল। আর আমি তোমার জন্য তা-ই পছন্দ করি, যা নিজের জন্য করি। কোন দু’জন মানুষের তুমি আমীর হয়ো না এবং ইয়াতীমের মালের দায়িত্ব গ্রহণ করো না।’’ (মুসলিম ১৮২৬নং)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪:৭ لِلرِّجَالِ نَصِیۡبٌ مِّمَّا تَرَكَ الۡوَالِدٰنِ وَ الۡاَقۡرَبُوۡنَ ۪ وَ لِلنِّسَآءِ نَصِیۡبٌ مِّمَّا تَرَكَ الۡوَالِدٰنِ وَ الۡاَقۡرَبُوۡنَ مِمَّا قَلَّ مِنۡهُ اَوۡ كَثُرَ ؕ نَصِیۡبًا مَّفۡرُوۡضًا ﴿۷﴾
للرجال نصیب مما ترك الوالدن و الاقربون و للنسآء نصیب مما ترك الوالدن و الاقربون مما قل منه او كثر نصیبا مفروضا ﴿۷﴾

পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ- তা থেকে কম হোক বা বেশি হোক- নির্ধারিত হারে। আল-বায়ান

মাতা-পিতা এবং আত্মীয়দের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ রয়েছে; আর মাতা-পিতা এবং আত্মীয়দের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে, তা অল্পই হোক আর বেশিই হোক, এক নির্ধারিত অংশ। তাইসিরুল

পুরুষদের জন্য মাতা-পিতা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যক্ত বিষয়ে অংশ রয়েছে- অল্প বা অধিক, তা নির্দিষ্ট পরিমাণ। মুজিবুর রহমান

For men is a share of what the parents and close relatives leave, and for women is a share of what the parents and close relatives leave, be it little or much - an obligatory share. Sahih International

৭. পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, সেটা অল্পই হোক বা বেশীই হোক, এক নির্ধারিত অংশ।(১)

(১) এ আয়াতে কি পরিমাণ অংশ তারা পাবে তা বর্ণনা করা হয়নি। পক্ষান্তরে পরবর্তী ১১নং আয়াত থেকে কয়েকটি আয়াত এবং এ সূরারই সর্বশেষ আয়াতে তা সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) মাতা-পিতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে; তা অল্পই হোক অথবা বেশীই হোক, (প্রত্যেকের জন্য) নির্ধারিত অংশ (রয়েছে)। [1]

[1] ইসলাম আসার পূর্বে একটি যুলুম এও ছিল যে, মহিলা ও ছোট শিশুদেরকে মীরাস থেকে বঞ্চিত করা হত। বড় ছেলে যে যুদ্ধের উপযুক্ত হত, কেবল সেই সমস্ত মালের অধিকারী হত। এই আয়াতে মহান আল্লাহ বলে দিলেন যে, পুরুষদের মত মহিলা ও ছোট ছেলে-মেয়েরাও তাদের পিতা-মাতার এবং আত্মীয়দের মালের অংশীদার হবে; তাদেরকে বঞ্চিত করা যাবে না। তবে এটা পৃথক ব্যাপার যে, মেয়ের অংশ ছেলের অর্ধেক। (যেমন, তিনটি আয়াতের পর উল্লেখ করা হয়েছে।) এতে না মহিলার উপর যুলুম করা হয়েছে, আর না তার মর্যাদা খাটো করা হয়েছে, বরং ইসলামের এই উত্তরাধিকার নিয়ম ন্যায় ও সুবিচারের দাবীসমূহের সাথে একেবারে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, মহিলাদেরকে ইসলাম জীবিকা উপার্জনের দায়িত্ব থেকে মুক্ত রেখেছে এবং পুরুষদের উপরেই চাপিয়েছে এই দায়িত্ব। এ ছাড়াও মোহর বাবদ কিছু মাল মহিলার কাছে আসে। একজন পুরুষই এই মাল তাকে দেয়। এই দিক দিয়ে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের উপর অনেক বেশী আর্থিক দায়িত্ব আরোপিত হয়। সুতরাং মহিলার অংশ যদি অর্ধেকের পরিবর্তে পুরুষের সমান হত, তাহলে পুরুষের উপর যুলুম করা হত। বলাই বাহুল্য যে, আল্লাহ তাআলা কারো উপর যুলুম করেননি। কেননা, তিনি সুবিচারক এবং সুকৌশলী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪:৮ وَ اِذَا حَضَرَ الۡقِسۡمَۃَ اُولُوا الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰكِیۡنُ فَارۡزُقُوۡهُمۡ مِّنۡهُ وَ قُوۡلُوۡا لَهُمۡ قَوۡلًا مَّعۡرُوۡفًا ﴿۸﴾
و اذا حضر القسمۃ اولوا القربی و الیتمی و المسكین فارزقوهم منه و قولوا لهم قولا معروفا ﴿۸﴾

আর যদি বণ্টনে নিকটাত্মীয় এবং ইয়াতীম ও মিসকীনরা উপস্থিত হয়, তাহলে তোমরা তাদেরকে তা থেকে আহার দেবে এবং তাদের সাথে তোমরা উত্তম কথা বলবে। আল-বায়ান

(সম্পত্তি) বণ্টনকালে স্বজন, ইয়াতীম এবং মিসকীন উপস্থিত থাকলে তাদেরকেও তাত্থেকে কিছু দিয়ে দেবে, তাদের সঙ্গে দয়ার্দ্র ন্যায়ানুগ কথা বলবে। তাইসিরুল

বন্টনের সময়ে যখন স্বজনগণ, ইয়াতীমগণ এবং দরিদ্রগণ উপস্থিত হয় তখন তা হতে তাদেরকেও জীবিকা দান কর এবং তাদের সাথে সদ্ভাবে কথা বল। মুজিবুর রহমান

And when [other] relatives and orphans and the needy are present at the [time of] division, then provide for them [something] out of the estate and speak to them words of appropriate kindness. Sahih International

৮. আর সম্পত্তি বন্টনকালে আত্মীয়, ইয়াতীম এবং অভাবগ্রস্ত লোক উপস্থিত থাকলে তাদেরকে তা থেকে কিছু দিবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে(১)।

(১) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াত মুহকাম, এ আয়াত রহিত হয়নি। অর্থাৎ এর উপর আমল করতে হবে। [বুখারী ৪৫৭৬] অন্য বর্ণনায় ইবন আব্বাস বলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা মুমিনগণকে তাদের মীরাস বন্টনের সময় আত্মীয়তার সম্পর্কে প্রতিষ্ঠা, ইয়াতীমদের তত্ত্বাবধান এবং মিসকীনদের জন্য যদি মৃত ব্যক্তির কোন অসীয়ত থেকে থাকে, তবে সে অসীয়ত থেকে প্রদান করতে হবে। আর যদি অসীয়ত না থাকে, তবে তাদেরকে মীরাস থেকে কিছু পৌছাতে হবে। [তাবারী]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবদুর রহমান ইবন আবী বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মীরাস বন্টনের সময় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখনও জীবিত- আব্দুর রহমানের সন্তান আবদুল্লাহ ঘরে ইয়াতীম, মিসকীন, আত্মীয়স্বজন সবাইকে তার পিতার মীরাস থেকে কিছু কিছু প্রদান করেন, এ হিসেবে যে, এখানে (الْقِسْمَةَ) শব্দের অর্থ, বন্টন। তারপর সেটা ইবন আব্বাসকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন, ঠিক করে নি। কারণ এটা অসীয়ত করার প্রতি নির্দেশ। এ আয়াতটিতে অসীয়তের কথাই বলা হয়েছে। যখন মাইয়্যেত তার সম্পদের ব্যাপারে অসীয়ত করতে চাইবে সে যেন নিঃস্ব, ইয়াতীম স্বজনদের না ভুলে সে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] সে হিসেবে এটি মৃত্যুর আগেই সম্পদের মালিকের করণীয় নির্দেশ করছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) আর সম্পত্তি বণ্টনকালে আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন এবং অভাবগ্রস্ত লোক উপস্থিত থাকলে, তাদেরকে তা হতে কিছু দান কর এবং তাদের সাথে সদালাপ কর। [1]

[1] এ নির্দেশকে উলামাদের কেউ কেউ মীরাসের আয়াত দ্বারা রহিত বলে গণ্য করেছেন। কিন্তু সঠিক হল তা রহিত নয়। বরং এতে রয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ এক নৈতিক কর্তব্যের উপর তাকীদ। আর তা হল, সাহায্যের অধিকারী আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যারা মীরাসের অংশীদার নয়, তাদেরকেও বণ্টনের সময় কিছু দিয়ে দিও। আর তাদের সাথে কথা বল স্নেহ ও ভালবাসাজড়িত কণ্ঠে। ধন-সম্পদ আসতে দেখে ক্বারুন ও ফিরাউন হয়ে যেও না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪:৯ وَ لۡیَخۡشَ الَّذِیۡنَ لَوۡ تَرَكُوۡا مِنۡ خَلۡفِهِمۡ ذُرِّیَّۃً ضِعٰفًا خَافُوۡا عَلَیۡهِمۡ ۪ فَلۡیَتَّقُوا اللّٰهَ وَ لۡیَقُوۡلُوۡا قَوۡلًا سَدِیۡدًا ﴿۹﴾
و لیخش الذین لو تركوا من خلفهم ذریۃ ضعفا خافوا علیهم فلیتقوا الله و لیقولوا قولا سدیدا ﴿۹﴾

আর তাদের ভয় করা উচিৎ যে, যদি তারা তাদের পেছনে অসহায় সন্তান রেখে যেত, তাহলে তারা তাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হত। সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং যেন সঠিক কথা বলে। আল-বায়ান

তারা যেন ভয় করে যে, অসহায় সন্তান পেছনে ছেড়ে গেলে তারাও তাদের জন্য চিন্তিত হত, সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং সঙ্গত কথা বলে। তাইসিরুল

তাদের মনে এই ভেবে শংকা থাকা উচিৎ যে, যদি তারা মৃত্যুকালে তাদের পশ্চাতে অসহায় পরিবার রেখে যায় তাহলে তাদেরও একই অবস্থা ঘটতে পারে। সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং সঙ্গত কথা বলে। মুজিবুর রহমান

And let those [executors and guardians] fear [injustice] as if they [themselves] had left weak offspring behind and feared for them. So let them fear Allah and speak words of appropriate justice. Sahih International

৯. আর তারা যেন ভয় করে যে, অসহায় সন্তান পিছনে ছেড়ে গেলে তারাও তাদের সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন হত। কাজেই তারা যেন আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সঙ্গত কথা বলে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) আর (পিতৃহীনদের সম্পর্কে) মানুষের ভয় করা উচিত, যদি তারা পিছনে অসহায় সন্তান ছেড়ে যেত, (তাহলে) তারাও তাদের সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন হত। অতএব লোকের উচিত, (এতীম-অনাথ সম্পর্কে) আল্লাহকে ভয় করা এবং ন্যায়-সঙ্গত কথা বলা। [1]

[1] কোন কোন মুফাসসিরের নিকট এই আয়াতে ‘অসী’দেরকে (যাদেরকে অসিয়ত করা হয় তাদেরকে) সম্বোধন করা হয়েছে। তাদেরকে নসীহত করা হচ্ছে যে, তাদের তত্ত্বাবধানে যে ইয়াতীমরা রয়েছে, তাদের সাথে যেন তারা ঐরূপ সুন্দর ব্যবহার করে, যেরূপ সে পছন্দ করে তার মৃত্যুর পর তার সন্তানদের সাথে করা হোক। আবার কোন কোন মুফাসসের বলেছেন, এতে সাধারণ লোকদের সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, তারা যেন ইয়াতীম এবং অন্য ছোট ছোট শিশুদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে; চাহে তারা তার তত্ত্বাবধানে হোক বা না হোক। কেউ বলেছেন, এখানে সেই ব্যক্তিকে সম্বোধন করা হয়েছে, যে মৃত্যুর নিকটবর্তী ব্যক্তির পাশে বসে আছে। তার দায়িত্ব হল মরণোম্মুখ ব্যক্তিকে উত্তম কথা শিক্ষা দেওয়া, যাতে সে আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের অধিকারের ব্যাপারে যেন কোন অবহেলা না করে এবং অসিয়ত করার সময় যেন এই উভয় অধিকারের খেয়াল রাখে। সে যদি বড় বিত্তশালী হয়, তাহলে তার অভাবী ও সাহায্যের প্রত্যাশী নিকটাত্মীয়ের জন্য নিজের মালের এক তৃতীয়াংশের অসিয়ত যেন অবশ্যই করে অথবা কোন দ্বীনী কাজে বা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করার জন্য যেন অসিয়ত করে। কারণ, এই মালই হবে তার আখেরাতের সম্বল। আর সে যদি বিত্তশালী না হয়, তাহলে তার মালের এক তৃতীয়াংশেও অসিয়ত করতে তাকে বাধা দিতে হবে। যাতে তার পরিবারের লোকরা যেন নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত না হয়ে পড়ে। অনুরূপ কেউ যদি তার কোন উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করতে চায়, তাহলে তাকে এ কাজে বাধা দিতে হবে এবং তার উত্তরাধিকারীদের জন্য সেটাই করা পছন্দ করবে, যা করা সে পছন্দ করে নিজের সন্তানাদির উপর অভাব-অনটনের আশঙ্কা বোধ করলে। এই ব্যাখ্যায় উল্লিখিত সকলেই আয়াতের সম্বোধনের আওতায় এসে যায়। (তাফসীর ক্বুরত্ববী-ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪:১০ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَاۡكُلُوۡنَ اَمۡوَالَ الۡیَتٰمٰی ظُلۡمًا اِنَّمَا یَاۡكُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِهِمۡ نَارًا ؕ وَ سَیَصۡلَوۡنَ سَعِیۡرًا ﴿۱۰﴾
ان الذین یاكلون اموال الیتمی ظلما انما یاكلون فی بطونهم نارا و سیصلون سعیرا ﴿۱۰﴾

নিশ্চয় যারা ইয়াতীমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা তো তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে; আর অচিরেই তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। আল-বায়ান

যারা ইয়াতীমদের মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা তো নিজেদের পেটে কেবল অগ্নিই ভক্ষণ করে, তারা শীঘ্রই জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে। তাইসিরুল

যারা অন্যায়ভাবে পিতৃহীনদের ধন সম্পত্তি গ্রাস করে, নিশ্চয়ই তা স্বীয় উদরে অগ্নি ব্যতীত কিছুই ভক্ষণ করেনা এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নি শিখায় প্রবেশ করবে। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who devour the property of orphans unjustly are only consuming into their bellies fire. And they will be burned in a Blaze. Sahih International

১০. নিশ্চয় যারা ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে তারা তো তাদের পেটে আগুনই খাচ্ছে; তারা অচিরেই জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে।(১)

(১) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ পরিহার কর। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কি? রাসূল বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, জাদু, অন্যায়ভাবে কোন প্রাণ সংহার করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস করা, যুদ্ধের মাঠ থেকে পলায়ন করা এবং মুমিনা পবিত্ৰা নারীকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া। [বুখারী: ২৭৬৬] সুতরাং ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস করার শাস্তি কুরআন ও হাদীস উভয়ের দ্বারাই প্রমাণিত।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) নিশ্চয় যারা পিতৃহীনদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা আসলে নিজেদের উদরে অগ্নি ভক্ষণ করে। আর অচিরেই তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৭৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 15 16 17 18 পরের পাতা »