হে নবী, আল্লাহকে ভয় কর এবং কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সম্যক জ্ঞানী, মহাপ্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
হে নবী (সা)! আল্লাহকে ভয় কর, আর কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য কর না, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা, মহাপ্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল
হে নাবী! আল্লাহকে ভয় কর এবং কাফিরদের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করনা। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান
O Prophet, fear Allah and do not obey the disbelievers and the hypocrites. Indeed, Allah is ever Knowing and Wise. Sahih International
১. হে নবী! আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করুন এবং কাফিরদের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না। আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, হিকমতওয়ালা।(১)
(১) এ আয়াতের উপসংহার (إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا) বলে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করার এবং কাফের ও মুনাফেকদের অনুসরণ না করার পূর্ব বর্ণিত যে হুকুম তার তাৎপর্য ও যৌক্তিকতা বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা, যে আল্লাহ যাবতীয় কর্মের পরিণতি ও ফলাফল সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত, তিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়। মানুষের যাবতীয় কল্যাণ ও মঙ্গল তাঁর পরিজ্ঞাত। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) হে নবী! আল্লাহকে ভয় কর[1] এবং অবিশ্বাসী ও কপটাচারীদের আনুগত্য করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।[2]
[1] এই আয়াতে সর্বাবস্থায় আল্লাহভীতি এবং দাওয়াত ও তবলীগের কাজে অটল থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ত্বালক্ব বিন হাবীব বলেন, ‘তাকওয়া হল এই যে, তুমি আল্লাহর আনুগত্য আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী করবে ও আল্লাহর কাছে নেকীর আশা রাখবে এবং আল্লাহর অবাধ্যতা আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী বর্জন করবে ও আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করবে। (ইবনে কাসীর)
[2] সুতরাং তিনিই আনুগত্য পাওয়ার অধিকারী। যেহেতু তিনি পরিণাম সম্বন্ধে অবগত আছেন এবং তিনি নিজ কথা ও কাজে হিকমত-ওয়ালা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমার রবের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা ওহী করা হয় তুমি তার অনুসরণ কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আল-বায়ান
তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে যা ওয়াহী করা হয় তুমি তার অনুসরণ কর। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণরূপে অবহিত। তাইসিরুল
তোমার রবের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অহী হয় উহার অনুসরণ কর; তোমরা যা কর আল্লাহ সেই বিষয়ে সম্যক অবহিত। মুজিবুর রহমান
And follow that which is revealed to you from your Lord. Indeed Allah is ever, with what you do, Acquainted. Sahih International
২. আর আপনার রবের কাছ থেকে আপনার প্রতি যা ওহী হয় তার অনুসরণ করুন(১); নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্বন্ধে সম্যক অবহিত।
(১) এটা পূর্ববর্তী হুকুমেরই অবশিষ্টাংশ-যেন আপনি কাফের ও মুনাফেকদের কথায় পড়ে তাদের অনুসরণ না করেন, বরং ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু পৌছেছে, আপনি কেবল তাই অনুসরণ করুন। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা অহী (প্রত্যাদেশ) করা হচ্ছে তার অনুসরণ কর;[1] নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমরা যা কর, সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। [2]
[1] অর্থাৎ, কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ কর। কারণ হাদীসের শব্দ যদিও নবী (সাঃ)-এর বরকতময় মুখনিঃসৃত বাণী, কিন্তু তার অর্থ ও ভাব আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে। এই জন্য হাদীসকে ‘অহী খাফী’ বা ‘অহী গায়র মাতলু’ বলা হয়েছে।
[2] সুতরাং তাঁর নিকটে তোমাদের কোন কথাই গোপন থাকবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তুমি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল কর এবং কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। আল-বায়ান
আর তুমি নির্ভর কর আল্লাহর উপর, কর্ম সম্পাদনে আল্লাহই যথেষ্ট। তাইসিরুল
আর তুমি নির্ভর কর আল্লাহর উপর এবং কর্মবিধায়ক হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। মুজিবুর রহমান
And rely upon Allah; and sufficient is Allah as Disposer of affairs. Sahih International
৩. এবং আপনি নির্ভর করুন আল্লাহর উপর। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) তুমি আল্লাহর ওপর নির্ভর কর,[1] কর্মবিধানে আল্লাহই যথেষ্ট।[2]
[1] সকল ব্যাপারে ও সকল অবস্থাতে।
[2] ঐ সকল মানুষের জন্য যারা তাঁর উপর ভরসা রাখে এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ কোন মানুষের অভ্যন্তরে দু’টি হৃদয় সৃষ্টি করেননি। তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা যিহার* কর, তিনি তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি। আর তিনি তোমাদের পোষ্যদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা। আর আল্লাহই সত্য কথা বলেন। আর তিনিই সঠিক পথ দেখান। আল-বায়ান
আল্লাহ কোন মানুষের বুকে দু’টি অন্তর সৃষ্টি করেননি। তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের সঙ্গে তোমরা জিহার কর, তিনি তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি, আর তিনি তোমাদের পোষ্য পুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি, এগুলো তোমাদের মুখের বুলি, আল্লাহই বলেন সত্য কথা, আর তিনিই দেখান (সঠিক) পথ। তাইসিরুল
আল্লাহ কোন মানুষের অভ্যন্তরে দু’টি হৃদয় সৃষ্টি করেননি; তোমাদের স্ত্রীরা, যাদের সাথে তোমরা যিহার করে থাক, তাদেরকে আল্লাহ তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রকে তিনি (আল্লাহ) তোমাদের প্রকৃত পুত্র করেননি; ঐগুলি তোমাদের মুখের কথা। আল্লাহ সত্য কথাই বলেন এবং তিনিই সরল পথ নির্দেশ করেন। মুজিবুর রহমান
Allah has not made for a man two hearts in his interior. And He has not made your wives whom you declare unlawful your mothers. And he has not made your adopted sons your [true] sons. That is [merely] your saying by your mouths, but Allah says the truth, and He guides to the [right] way. Sahih International
* স্ত্রীকে মায়ের পিঠের সাথে তুলনা করা, ‘তুমি আমার কাছে আমার মায়ের পিঠের ন্যায়’ বলাকেই যিহার বলে।
৪. আল্লাহ কোন মানুষের জন্য তার অভ্যন্তরে দুটি হৃদয় সৃষ্টি করেননি। আর তোমাদের স্ত্রীগণ, যাদের সাথে তোমরা যিহার করে থাক, তিনি তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি(১) এবং তোমাদের পোষ্য পুত্রদেরকে তিনি তোমাদের পুত্র করেননি(২); এগুলো তোমাদের মুখের কথা। আর আল্লাহ সত্য কথাই বলেন এবং তিনিই সরল পথ নির্দেশ করেন।
(১) এ আয়াতে 'যিহার'-এর দরুন স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যাওয়ার জাহেলিয়াত যুগের ভ্রান্ত ধারণা সম্পূর্ণ বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর এরূপ বলার ফলে শরীয়তের কোন প্রতিক্রিয়া হয় কিনা, এ সম্পর্কে ‘সূরা মুজাদালায়’ এরূপ বলাকে পাপ বলে আখ্যায়িত করে এ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এরূপ বলার পর যদি যিহারের কাফফারা আদায় করে; তবে স্ত্রী তার জন্যে হালাল হয়ে যাবে। ‘সূরা আল-মুজাদালায়’ আল্লাহ্ তা'আলা স্বয়ং যিহারের কাফফারার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। [দেখুন: মুয়াস্সার; বাগভী; ফাতহুল কাদীর]
(২) দ্বিতীয় বিষয় পালক পুত্র সংশ্লিষ্ট। আয়াতের মর্ম এই, যেমন কোন মানুষের দুটি অন্ত:করণ থাকে না এবং যেমন স্ত্রীকে মা বলে সম্বোধন করলে সে প্রকৃত মা হয়ে যায় না; অনুরূপভাবে তোমাদের পোষ্য ছেলেও প্রকৃত ছেলেতে পরিণত হয় না। [দেখুন: মুয়াস্সার, সা’দী] অর্থাৎ, অন্যান্য সন্তানদের ন্যায় সে মীরাসেরও অংশীদার হবে না এবং বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ হওয়া সংশ্লিষ্ট মাসআলাসমূহও তার প্রতি প্রযোজ্য হবে না। সুতরাং সন্তানের তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী যেমন পিতার জন্য চিরতরে হারাম, কিন্তু পোষ্যপুত্রের স্ত্রী পালক পিতার তরে তেমনভাবে হারাম হবে না।
যেহেতু এই শেষোক্ত বিষয়ের প্রতিক্রিয়া বহু ক্ষেত্রে পড়ে থাকে; সুতরাং এ নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে, যখন পালক ছেলেকে ডাকবে বা তার উল্লেখ করবে, তখন তা তার প্রকৃত পিতার নামেই করবে। পালক পিতার পুত্র বলে সম্বোধন করবে না। কেননা, এর ফলে বিভিন্ন ব্যাপারে নানাবিধ সন্দেহ ও জটিলতা উদ্ভবের আশংকা রয়েছে। হাদীসে এসেছে, সাহাবায়ে কেরাম বলেন, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে আমরা যায়েদ ইবনে হারেসাকে যায়েদ ইবন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে সম্বোধন করতাম। [বুখারী: ৪৭৮২, মুসলিম: ২৪২৫] কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে পালক ছেলেরূপে গ্ৰহণ করেছিলেন।
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর আমরা এ অভ্যাস পরিত্যাগ করি। এ আয়াতটি নাযিল হবার পর কোন ব্যক্তির নিজের আসল বাপ ছাড়া অন্য কারো সাথে পিতৃ সম্পর্ক স্থাপন করাকে হারাম গণ্য করা হয়। হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি নিজেকে আপনি পিতা ছাড়া অন্য কারো পুত্র বলে দাবী করে, অথচ সে জানে ঐ ব্যক্তি তাঁর পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।” [বুখারী: ৪৩২৬, মুসলিম: ৬৩] অন্য হাদীসে এসেছে, “তোমরা তোমাদের পিতাদের সাথে সম্পর্কিত হওয়া থেকে বিমুখ হয়োনা, যে তার পিতা থেকে বিমুখ হয় সে কুফরী করল।’ [মুসলিম: ৬২] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন মানুষ যখন না জেনে কোন নসব প্রমান করতে যায় বা অস্বীকার করতে যায় তখন সে কুফরী করে, যদিও তা সামান্য হোক।” [ইবনে মাজাহ: ২৭88]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) আল্লাহ কোন মানুষের অভ্যন্তরে দু’টি হৃদয় সৃষ্টি করেননি;[1] তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা ‘যিহার’ করেছ তাদেরকে তোমাদের মা করেননি[2] এবং পোষ্যপুত্র -- যাদেরকে তোমরা পুত্র বল, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি।[3] এগুলি তোমাদের মুখের কথা।[4] আল্লাহই সত্য কথা বলেন[5] এবং তিনিই পথনির্দেশ করেন।
[1] কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, একজন মুনাফিক দাবী করত যে, তার দু’টি অন্তর আছে। একটি মুসলিমদের সাথে ও অপরটি কুফর ও কাফেরেদের সাথে। (আহমাদ ১/২৬৭) উক্ত আয়াত তার কথা খন্ডন করার জন্যই অবতীর্ণ হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, একই অন্তরে আল্লাহর মহববত ও তাঁর শত্রুর আনুগত্য একত্রিত হওয়া অসম্ভব। কেউ কেউ বলেন যে, মক্কার মুশরিকদের মধ্যে জামীল বিন মা’মার ফিহরী নামক এক ব্যক্তি ছিল, সে বড় হুঁশিয়ার, চতুর ও ধোঁকাবাজ ছিল। তার দাবী ছিল যে, আমার দু’টি অন্তর আছে যার দ্বারা আমি চিন্তা ভাবনা করি ও বুঝি। আর মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অন্তর একটি। এই আয়াত তারই রদ স্বরূপ অবতীর্ণ হয়েছে। (আইসারুত তাফাসীর) পক্ষান্তরে কিছু তফসীরবিদগণ বলেন যে, সামনে যে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এটা তারই ভূমিকা। অর্থাৎ, যেরূপ এক ব্যক্তির দুই অন্তর হয় না, অনুরূপ যদি কোন ব্যক্তি নিজ স্ত্রীর সাথে ‘যিহার’ করে ফেলে; অর্থাৎ বলে ফেলে যে, ‘তোমার পিঠ আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মত’ তাহলে এ কথা বলাতে তার স্ত্রী তার মা হয়ে যাবে না। কারণ একজনের দুই মা হয় না। অনুরূপ কোন ব্যক্তি কাউকে পোষ্যপুত্র বানিয়ে নিলে সে তার প্রকৃত পুত্র হয়ে যায় না। বরং সে যার পুত্র তারই থাকে, তার দুই বাপ হতে পারে না। (ইবনে কাসীর)
[2] একে ‘যিহার’ বলা হয়। এর বিস্তারিত বর্ণনা সূরা মুজাদালাহ ২-৪নং আয়াতে আসবে।
[3] এর বিস্তারিত বর্ণনা এই সূরাতেই একটু পরে আসবে ـ أَدْعِيَاءُ دَعِيٌ -এর বহুবচন যার অর্থ পালিত সন্তান, পোষ্যপুত্র, পাতানো ছেলে বা মৌখিক সূত্রে বেটা।
[4] অর্থাৎ, মুখে কাউকে মা বলে সম্বোধন করলে সে প্রকৃত মা হয়ে যাবে না এবং কাউকে বেটা বললে সে আপন বেটা হয়ে যাবে না। অর্থাৎ তাদের উপর মা ও বেটা সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধান প্রযোজ্য হবে না।
[5] সুতরাং তাঁরই অনুসরণ কর এবং যিহারকৃত স্ত্রীকে মা এবং পোষ্যপুত্রকে আপন পুত্র বলো না। প্রকাশ থাকে যে, কোন স্নেহভাজনকে আদর করে ‘বেটা’ বলা এবং পোষ্যপুত্রকে আপন পুত্র মনে করে ‘বেটা’ বলা একই পর্যায়ের নয়। প্রথমটি বৈধ। এখানে উদ্দেশ্য দ্বিতীয় বিষয়টিকে অবৈধ ঘোষণা করা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাক; আল্লাহর কাছে এটাই অধিক ইনসাফপূর্ণ। অতঃপর যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তাহলে তারা তোমাদের দীনি ভাই এবং তোমাদের বন্ধু। আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান
তাদেরকে তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাক, আল্লাহর কাছে এটাই অধিক ইনসাফপূর্ণ। আর যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই এবং তোমাদের বন্ধু। এ ব্যাপারে তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তোমাদের কোন গুনাহ্ নেই, কিন্তু (ধর্তব্য হল) তোমাদের অন্তরের সংকল্প। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তাইসিরুল
তোমরা তাদেরকে ডাক তাদের পিতৃ পরিচয়ে; আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা অধিক ন্যায় সঙ্গত, যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান তাহলে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই অথবা বন্ধু; এ ব্যাপারে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই, কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান
Call them by [the names of] their fathers; it is more just in the sight of Allah. But if you do not know their fathers - then they are [still] your brothers in religion and those entrusted to you. And there is no blame upon you for that in which you have erred but [only for] what your hearts intended. And ever is Allah Forgiving and Merciful. Sahih International
৫. ডাকো তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে; আল্লাহ্র নিকট এটাই বেশী ন্যায়সংগত। অতঃপর যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই এবং বন্ধু। আর এ ব্যাপারে তোমরা কোন অনিচ্ছাকৃত ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তর যা স্বেচ্ছায় করেছে (তা অপরাধ), আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) তোমরা ওদেরকে পিতৃপরিচয়ে ডাক; আল্লাহর দৃষ্টিতে এটিই ন্যায়সঙ্গত,[1] যদি তোমরা ওদের পিতৃপরিচয় না জান, তবে ওদেরকে তোমরা ধর্মীয় ভাই এবং বন্ধুরূপে গণ্য কর।[2] যে বিষয়ে তোমরা ভুল কর, সে বিষয়ে তোমাদের কোন অপরাধ নেই,[3] কিন্তু তোমাদের আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে (তাতে অপরাধ আছে)।[4] আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[1] এই আদেশ দ্বারা সেই প্রচলিত প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যা জাহেলী যুগ থেকে চলে আসছিল এবং ইসলামের প্রারম্ভিক যুগেও প্রচলিত ছিল। আর তা হল পোষ্যপুত্রকে আপন পুত্র ভাবা। সাহাবায়ে কিরামগণ বলেন, আমরা (اُدْعُوْهُمْ لِآبَآئِهِمْ) আয়াত অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত যায়েদ বিন হারেসাহ (রাঃ)-কে (যাঁকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুক্ত করে বেটা বানিয়ে নিয়েছিলেন) যায়েদ বিন মুহাম্মাদ বলে ডাকতাম। (বুখারীঃ সূরা আহযাবের তফসীর) উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর আবু হুযাইফা (রাঃ) যিনি সালেমকে পোষ্যপুত্র বানিয়ে রেখেছিলেন, তাঁর ঘরে এক সমস্যা দেখা দিল যে, যখন পোষ্যপুত্রকে আপন সন্তান ভাবতে নিষেধ করে দেওয়া হল, তখন তার স্ত্রীর জন্য তার থেকে পর্দা করা অপরিহার্য হয়ে গেল। নবী (সাঃ) আবু হুযাইফার স্ত্রীকে বললেন, ‘‘তুমি তাকে দুধ পান করিয়ে দুধ-বেটা বানিয়ে নাও। কারণ এতে তুমি তার জন্য মাহরাম হয়ে যাবে।’’ সুতরাং তাঁরা তাই করলেন। (মুসলিমঃ শিশুদের দুধপান অধ্যায়, আবূ দাঊদঃ বিবাহ অধ্যায়) অনেকের মতে, এ সমাধান তাঁর জন্যই খাস।
[2] অর্থাৎ, যাদের আসল পিতার খবর জানো, তাদেরকে অন্যের দিকে সম্বদ্ধ না করে তাদের আসল পিতার দিকে সম্বদ্ধ কর। তবে যাদের পিতার পরিচয় জানা নেই, তোমরা তাদেরকে বেটা নয়; বরং ভাই বা বন্ধু মনে কর।
[3] কারণ ভুলে গিয়ে বা ভুল করে কৃত অপরাধ ক্ষমার্হ; যেমন হাদীসেও বলা হয়েছে।
[4] অর্থাৎ, যে ব্যক্তি জেনেশুনে (পিতা-পুত্রের) সম্পর্ক অন্যের দিকে জুড়বে, সে বড় পাপী হবে। হাদীসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজেকে অন্য পিতার দিকে সম্পৃক্ত করে, সে কুফরী করে।’’ (বুখারীঃ মানাক্বিব অধ্যায়)
তাফসীরে আহসানুল বায়াননবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতাস্বরূপ। আর আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজিরদের তুলনায় আত্নীয় স্বজনরা একে অপরের নিকটতর। তবে তোমরা যদি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভাল কিছু করতে চাও (তা করতে পার)। এটা কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। আল-বায়ান
নবী (সাঃ) মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের চেয়ে ঘনিষ্ঠ, আর তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা। আল্লাহর বিধানে মু’মিন ও মুহাজিরদের (দ্বীনী সম্পর্ক) অপেক্ষা আত্মীয়-স্বজনগণ পরস্পর পরস্পরের নিকট ঘনিষ্ঠতর। তবে তোমরা তোমাদের বন্ধু বান্ধবদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করতে চাইলে, করতে পার। (আল্লাহর) কিতাবে এটাই লিখিত। তাইসিরুল
নাবী মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্টতর এবং তার স্ত্রীরা তাদের মা। আল্লাহর বিধান অনুসারে মু’মিন মুহাজির অপেক্ষা যারা আত্মীয় তারা পরস্পরের নিকটতম। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করতে চাও তাহলে করতে পার। এটা কিতাবে লিপিবদ্ধ। মুজিবুর রহমান
The Prophet is more worthy of the believers than themselves, and his wives are [in the position of] their mothers. And those of [blood] relationship are more entitled [to inheritance] in the decree of Allah than the [other] believers and the emigrants, except that you may do to your close associates a kindness [through bequest]. That was in the Book inscribed. Sahih International
৬. নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও ঘনিষ্টতর(১) এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মা।(২) আর আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজিরগণের চেয়ে—যারা আত্মীয় তারা পরস্পর কাছাকাছি।(৩) তবে তোমরা তোমাদের বন্ধু-বান্ধবের প্রতি কল্যাণকর কিছু করার কথা আলাদা।(৪) এটা কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
(১) অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মুসলিমদের এবং মুসলিমদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে সম্পর্ক তা অন্যান্য সমস্ত মানবিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বের এক বিশেষ ধরনের সম্পর্ক। নবী ও মুমিনদের মধ্যে যে সম্পর্ক বিরাজিত, অন্য কোন আত্মীয়তা ও সম্পর্ক তার সাথে কোন দিক দিয়ে সামান্যতমও তুলনীয় নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিমদের জন্য তাদের বাপমায়ের চাইতেও বেশী স্নেহশীল ও দয়ার্দ্র হৃদয় এবং তাদের নিজেদের চাইতেও কল্যাণকামী। তাদের বাপ-মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা তাদের ক্ষতি করতে পারে, তাদের সাথে স্বার্থপরের মতো ব্যবহার করতে পারে, তাদেরকে জাহান্নামে ঠেলে দিতে পারে, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের পক্ষে কেবলমাত্র এমন কাজই করতে পারেন যাতে তাদের সত্যিকার সাফল্য অর্জিত হয়। তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করতে পারে।
কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য তাই করবেন যা তাদের জন্য লাভজনক হয়। আসল ব্যাপার যখন এই মুসলিমদের ওপরও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ অধিকার আছে তখন তারা তাকে নিজেদের বাপ-মা ও সন্তানদের এবং নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশী প্রিয় মনে করবে। দুনিয়ার সকল জিনিসের চেয়ে তাকে বেশী ভালোবাসবে। নিজেদের মতামতের ওপর তার মতামতকে এবং নিজেদের ফায়সালার ওপর তার ফায়সালাকে প্রাধান্য দেবে। তার প্রত্যেকটি হুকুমের সামনে মাথা নত করে দেবে। তাই হাদীসে এসেছে, “তোমাদের কোন ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তানসন্ততি ও সমস্ত মানুষের চাইতে বেশী প্রিয় হই।” [বুখারী: ১৪, মুসলিম: ৪৪]
সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের পক্ষে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ পালন করা স্বীয় পিতা-মাতার নির্দেশের চাইতেও অধিক আবশ্যকীয়। যদি পিতা-মাতার হুকুম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুমের পরিপন্থী হয়, তবে তা পালন করা জায়েয নয়। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশকে নিজের সকল আশা-আকাংক্ষার চাইতেও অগ্ৰাধিকার দিতে হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “এমন কোন মুমিনই নেই যার পক্ষে আমি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া ও আখেরাতে সমস্ত মানবকুলের চাইতে অধিক হিতাকাঙ্ক্ষী ও আপনজন নই। যদি তোমাদের মন চায়, তবে এর সমর্থন ও সত্যতা প্রমাণের জন্য কুরআনের আয়াত পাঠ করতে পার।” [বুখারী: ২৩৯৯]
(২) রাসূলের পূণ্যবতী স্ত্রীগণকে সকল মুসলিমের মা বলে আখ্যায়িত করার অর্থ-সম্মান ও শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে মায়ের পর্যায়ভুক্ত হওয়া। মা-ছেলের সম্পর্ক-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আহকাম, যথা-পরস্পর বিয়ে-শাদী হারাম হওয়া, মুহরিম হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরস্পর পর্দা না করা এবং মীরাসে অংশীদারিত্ব প্রভৃতি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যেমন, আয়াতের শেষে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। আর রাসূলের পত্নীগণের সাথে উম্মতের বিয়ে অনুষ্ঠান হারাম হওয়ার কথা অন্য এক আয়াতে ভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রে বিয়ে অনুষ্ঠান হারাম মা হওয়ার কারণেই ছিল, এমনটি হওয়া জরুরী নয়। মোটকথা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ শুধুমাত্র এ অর্থে মুমিনদের মাতা যে, তাদেরকে সম্মান করা মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব। বাদবাকি অন্যান্য বিষয়ে তারা মায়ের মতো নন। যেমন তাদের প্রকৃত আত্মীয়গণ ছাড়া বাকি সমস্ত মুসলিম তাদের জন্য গায়ের মাহরাম ছিল এবং তাদের থেকে পর্দা করা ছিল ওয়াজিব। তাদের মেয়েরা মুসলিমদের জন্য বৈপিত্ৰেয় বোন ছিলেন না, যার ফলে তাদের সাথে মুসলিমদের বিয়ে নিষিদ্ধ হতে পারে। তাদের ভাই ও বোনেরা মুসলিমদের জন্য মামা ও খালার পর্যায়ভুক্ত ছিলেন না। কোন ব্যক্তি নিজের মায়ের তরফ থেকে যে মীরাস লাভ করে তাদের তরফ থেকে কোন অনাত্মীয় মুসলিম সে ধরনের কোন মীরাস লাভ করে না। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর; মুয়াস্সার, বাগভী]
(৩) এ আয়াতের মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক চুক্তির বিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। হিজরতের পর পরই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিন মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন। যার কারণে তাদের একজন অপরজনের ওয়ারিশ হতো। এটা ছিল ঐতিহাসিক প্রয়োজনে। তারপর যখন প্রত্যেকের অবস্থারই পরিবর্তন হলো তখন এ নীতির কার্যকারিতা রহিত করে যাবিল আরহামদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হলো। [তাবারী, ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী, মুয়াস্সার]
(৪) এ আয়াতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি চাইলে হাদীয়া, তোহফা, উপঢৌকন বা আসিয়াতের মাধ্যমে নিজের কোন দ্বীনী ভাইকে সাহায্য করতে পারে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) নবী, বিশ্বাসীদের নিকট তাদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়[1] এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মা-স্বরূপ।[2] আল্লাহর বিধান অনুসারে বিশ্বাসী ও মুহাজিরগণ অপেক্ষা যারা আত্মীয় তারাই পরস্পরের নিকটতর।[3] তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করতে চাও (তাহলে তা করতে পার)। [4] এ কথা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।[5]
[1] নবী (সাঃ) নিজ উম্মতের জন্য যত মঙ্গলকামী ও দয়ালু ছিলেন, তা বর্ণনার মুখাপেক্ষী নয়। আল্লাহ তাআলা নবী (সাঃ)-এর দয়া ও হিতাকাঙ্ক্ষা দেখে এই আয়াতে নবী (সাঃ)-কে মু’মিনদের প্রাণ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়, নবী (সাঃ)-এর ভালোবাসাকে অন্য সকলের ভালোবাসা অপেক্ষা উচ্চতর এবং নবী (সাঃ)-এর আদেশকে তাদের সকল ইচ্ছা ও এখতিয়ার অপেক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছেন। এই জন্য মু’মিনদের জরুরী কর্তব্য যে, নবী (সাঃ) আল্লাহর জন্য তাদের নিকট যে মাল-ধন চাইবেন তারা তাঁকে তা সত্বর প্রদান করবে; যদিও তাদের ঐ মালের আশু প্রয়োজন থাকে। নিজেদের জীবন থেকেও নবী (সাঃ)-এর মহববত অধিক রাখতে হবে। (যেমন উমার (রাঃ)-এর ঘটনা) নবী (সাঃ)-এর আদেশকে অন্য সবার আদেশের উপর প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যকে অন্য সবার আনুগত্য অপেক্ষা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত (فلا وربك لا يؤمنون...) (সূরা নিসাঃ ৬৫ আয়াত)এর নির্দেশ মত নিজেকে গড়ে না তুলতে পারবে, ততক্ষণ কোন মুসলিম প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে না। অনুরূপ যতক্ষণ তাঁর মহব্বত অন্য সকল মহব্বতের উপর বিজয়ী না হবে, ততক্ষণ (لاََيؤُمِنُ أَحْدُكُمْ حُتىَّ أُكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِن وَّالِدِهِ وَوَلَِدِهِ...) এর নির্দেশ অনুযায়ী কেউ প্রকৃত মু’মিন হবে না। ঠিক অনুরূপ রসূল (সাঃ)-এর আনুগত্যে আলস্য, অবজ্ঞা, অবহেলা বা ত্রুটি প্রদর্শন করলেও সঠিক অর্থে মুসলিম হওয়া যায় না।
[2] অর্থাৎ, শ্রদ্ধা ও সম্মানে এবং তাঁদেরকে বিবাহ না করার ব্যাপারে তাঁরা ‘উম্মুল মু’মিনীন’ বা মু’মিন নারী-পুরুষদের মাতা।
[3] অর্থাৎ, এখন হিজরত, ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনের কারণে একে অন্যের ওয়ারেস হবে না; শুধু নিকট আত্মীয়তার কারণেই ওয়ারেস হবে।
[4] অর্থাৎ, আত্মীয় ছাড়া অন্যদের সাথে সদ্ব্যবহার ও সৌজন্য প্রদর্শন করতে পারো। তাছাড়া তাদের জন্য নিজ সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ অসিয়ত করতে পারো।
[5] অর্থাৎ, লাওহে মাহফূযে আসল হুকুম এটাই লিপিবদ্ধ আছে; যদিও কারণবশতঃ সাময়িকভাবে অন্যদেরকেও ওয়ারিস করা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলার ইলমে ছিল যে, তা তিনি মনসূখ (রহিত) করে দেবেন। সুতরাং তা মনসূখ করে দিয়ে পূর্ব আদেশ চালু রাখা হল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর স্মরণ কর, যখন আমি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম নবীদের থেকে এবং তোমার থেকে, নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারইয়াম পুত্র ঈসা থেকে। আর আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। আল-বায়ান
স্মরণ কর, আমি যখন নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম আর তোমার কাছ থেকেও; আর নূহ্, ইব্রাহীম, মূসা আর মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা থেকেও। আমি তাদের কাছ থেকে নিয়েছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার তাইসিরুল
স্মরণ কর, যখন আমি নাবীদের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমার নিকট হতেও এবং নূহ, ইবরাহীম, মূসা, মারইয়াম তনয় ঈসার নিকট হতে, তাদের নিকট হতে গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার – মুজিবুর রহমান
And [mention, O Muhammad], when We took from the prophets their covenant and from you and from Noah and Abraham and Moses and Jesus, the son of Mary; and We took from them a solemn covenant. Sahih International
৭. আর স্মরণ করুন, যখন আমরা নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম(১) এবং আপনার কাছ থেকেও, আর নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারইয়াম পুত্ৰ ঈসার কাছ থেকেও৷ আর আমরা তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার—
(১) উল্লেখিত আয়াতে নবীগণ থেকে যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি গ্রহণের কথা আলোচিত হয়েছে তা সমস্ত মানবকুল থেকে গৃহীত সাধারণ অঙ্গীকার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেমন উবাই ইবন কা'ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে সহীহ সনদে এসেছে, ‘রেসালত ও নবুওয়ত সংক্রান্ত অঙ্গীকার নবী ও রাসূলগণ থেকে স্বতন্ত্ররূপে বিশেষভাবে গ্ৰহণ করা হয়েছে। [আহমাদ: ৫/১৩৫, মিশকাতুল মাসাবীহ: ১/৪৪, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৩২৪, আল-লালকায়ী: আস-সুন্নাহ: ৯৯১, ইবন বাত্তাহ: আল-ইবানাহ ২/৬৯, ৭১, ২১৫, ২১৭] নবী আলাইহিস সালামগণ থেকে গৃহীত এ অঙ্গীকার ছিল নবুওয়ত ও রেসালাত বিষয়ক দায়িত্বসমূহ পালন এবং পরস্পর সত্যতা প্রকাশ ও সাহায্য-সহযোগিতা প্ৰদান সম্পর্কিত।
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) স্মরণ কর, আমি নবীদের নিকট হতে, তোমার নিকট হতে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, মারয়্যাম-তনয় ঈসার নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম; গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার;[1]
[1] এই দৃঢ় অঙ্গীকার বলতে কি বুঝানো হয়েছে? অনেকের নিকট এ হল সেই অঙ্গীকার, যা একে অপরের সাহায্যের জন্য আম্বিয়াগণের (‘আলাইহিমুস সালাম) নিকট থেকে নেওয়া হয়েছিল। যেমন সূরা আলে ইমরানের ৮১নং আয়াতে তার বর্ণনা রয়েছে। আবার অনেকের নিকট এ হল ঐ অঙ্গীকার, যার বর্ণনা সূরা শূরার ১৩নং আয়াতে রয়েছে এবং তা এই যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে বিভক্ত হয়ো না। উক্ত অঙ্গীকার যদিও সকল আম্বিয়া (‘আলাইহিমুস সালাম) থেকে নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু এখানে বিশেষভাবে পাঁচজন আম্বিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে তাঁদের গুরুত্ব ও মর্যাদা সুস্পষ্ট হয়। পরন্তু এতে নবী (সাঃ)-এর উল্লেখ সর্বপ্রথম করা হয়েছে অথচ নবুঅত প্রাপ্তির দিক দিয়ে তিনি সর্বশেষ নবী। সুতরাং এতে যে মহানবী (সাঃ)-এর মহত্ত্ব ও মর্যাদা সবার চেয়ে অধিকরূপে প্রকাশ পাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য। আর তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন কাফিরদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আল-বায়ান
সত্যবাদীদেরকে (অর্থাৎ নবীদেরকে) তাদের সত্যবাদিতা (অর্থাৎ আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়ার কাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য। তিনি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন ভয়াবহ শাস্তি। তাইসিরুল
সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করার জন্য। তিনি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন মর্মন্তদ শাস্তি! মুজিবুর রহমান
That He may question the truthful about their truth. And He has prepared for the disbelievers a painful punishment. Sahih International
৮. সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করার জন্য। আর তিনি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।(১)
(১) অর্থাৎ আল্লাহ কেবলমাত্ৰ অঙ্গীকার নিয়েই ক্ষান্ত হননি। বরং এ অঙ্গীকার কতটুকু পালন করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি প্রশ্ন করবেন। [কুরতুবী, মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) যাতে তিনি সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেন।[1] আর তিনি অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
[1] ليسأل তে لام كي ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, এই অঙ্গীকার নেওয়ার কারণ হল, আল্লাহ তাআলা সত্যবাদী নবীগণকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, তাঁরা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের নিকট আল্লাহর বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছে দিয়েছিলেন কি? দ্বিতীয় অর্থ এই যে, আল্লাহ আম্বিয়াগণকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, তোমাদের সম্প্রদায় তোমাদের দাওয়াত গ্রহণ করেছিল কি না? যেমন অন্যত্র তিনি বলেছেন, ‘‘অতঃপর যাদের নিকট রসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে আমি অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব এবং অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব রসূলগণকেও।’’ (সূরা আ’রাফ ৬ আয়াত) এতে সত্যের আহবায়কদের জন্য সতর্কবাণী হল যে, তাঁরা যেন দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ পরিপূর্ণভাবে ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে করেন, যাতে আল্লাহর নিকট তাঁদের মুখ উজ্জ্বল হয়। আর ঐ সকল মানুষদের জন্য শাস্তির ধমক রয়েছে, যাদের নিকট দাওয়াত পৌঁছানো হয়, অথচ তারা তা গ্রহণ করে না; তারা আল্লাহর নিকট গুনাহগার এবং শাস্তির উপযুক্ত হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিআমতকে স্মরণ কর, যখন সেনাবাহিনী তোমাদের কাছে এসে গিয়েছিল, তখন আমি তাদের উপর প্রবল বায়ু ও সেনাদল প্রেরণ করলাম যা তোমরা দেখনি। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান
হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর যখন সৈন্যবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে নিকটবর্তী হয়েছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম ঝড়ো হাওয়া এবং এক (ফেরেশতারূপী) সৈন্যবাহিনী যা তোমরা দেখনি। তোমরা যা কর আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী। তাইসিরুল
হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম ঝঞ্ঝাবায়ু এবং এক বাহিনী যা তোমরা দেখনি। তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান
O you who have believed, remember the favor of Allah upon you when armies came to [attack] you and We sent upon them a wind and armies [of angels] you did not see. And ever is Allah, of what you do, Seeing. Sahih International
৯. হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রু বাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল। অতঃপর আমরা তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম ঘূর্ণিবায়ু(১) এবং এমন বাহিনী যা তোমরা দেখনি।(২) আর তোমরা যা কর আল্লাহ্ তার সম্যক দ্রষ্টা।
(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাকে মৃদৃ বাতাস দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। আর আদ সম্প্রদায়কে ঝঞ্ঝা বাতাসে ধ্বংস করা হয়েছে” [বুখারী: ১০৩৫]
(২) এমন বাহিনী বলে ফেরেশতাদের বুঝানো হয়েছে। [তাবারী, ইবন কাসীর, বাগভী, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি ওদের বিরুদ্ধে ঝড় এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম, যা তোমরা দেখতে পাওনি।[1] আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার দ্রষ্টা।
[1] উক্ত আয়াতসমূহে পঞ্চম হিজরীতে সংঘটিত আহযাব যুদ্ধের কিছু বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এই যুদ্ধকে ‘আহযাব’ এই জন্য বলা হয় যে, এই সময় ইসলামের সকল শত্রুবাহিনী একত্রিত হয়ে মুসলিমদের ঘাঁটি ‘মদীনার’ উপর আক্রমণ করেছিল। ‘আহযাব’ ‘হিযব’ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ বাহিনী বা দল। একে খন্দকের যুদ্ধও বলা হয়, কারণ মুসলিমগণ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মদীনার একপাশে খাল খনন করেন। যাতে শত্রুবাহিনী মদীনা শহরের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। (খন্দক মানে খাল বা পরিখা।) উক্ত যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এইরূপ যে, ইয়াহুদী গোত্র বানু নায্বীর; যাদেরকে বার বার অঙ্গীকার ভঙ্গ করার ফলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তারা খায়বারে গিয়ে বসবাস শুরু করে। তারা মক্কার কাফেরদেরকে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করার জন্য তৈরী করল। অনুরূপ গাত্বফান ইত্যাদি গোত্র নাজ্দের গোত্রগুলোকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে লড়াইয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করল।
সুতরাং ইয়াহুদীরা অনায়াসে ইসলাম ও মুসলিমদের সকল শত্রুদেরকে একত্রিত করে মদীনার উপর আক্রমণ করতে সফল হল। মক্কার মুশরিকদের কমান্ডার ছিল আবু সুফিয়ান। সে উহুদ পর্বতের আশেপাশে শিবির স্থাপন করে প্রায় পুরো মদীনাকে পরিবেষ্টন করে নিল। তাদের সম্মিলিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার। আর মুসলিমগণ ছিলেন মাত্র তিন হাজার। এ ছাড়াও মদীনার দক্ষিণ দিকে ইয়াহুদীদের তৃতীয় গোত্র বানু কুরাইযা বাস করত; যাদের সাথে সেই সময় পর্যন্ত মুসলিমদের চুক্তি ছিল এবং তারা মুসলিমদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু বানী নাযবীরের ইয়াহুদী সর্দার হুয়াই বিন আখত্বাব মুসলিমদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে ফুসলিয়ে নিজেদের সাথে করে নিল। এদিকে মুসলিমগণ সর্বদিক দিয়ে শত্রুবাহিনীর পরিবেষ্টনে পড়ে গেলেন। সেই সংকটাবস্থায় সালমান ফারেসী (রাঃ)-এর পরামর্শে পরিখা খনন করা হল। যার ফলে শত্রু বাহিনী মদীনার ভিতর প্রবেশ করতে সক্ষম হল না; বরং মদীনার বাইরেই থাকতে বাধ্য হল। তারপরেও মুসলিমগণ সেই পরিবেষ্টন ও সম্মিলিত শত্রুবাহিনীর আক্রমণের ভয়ে ভীত ছিলেন।
প্রায় এক মাস যাবৎ এই পরিবেষ্টনে মুসলিমগণ কঠিন ভয় ও দুশ্চিন্তায় কালাতিপাত করেন। পরিশেষে মহান আল্লাহ মুসলিমদেরকে গায়বী সাহায্য করলেন। উক্ত আয়াতগুলিতে সেই কঠিন অবস্থা ও গায়বী সাহায্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম جنود থেকে উদ্দেশ্য হল কাফেরদের শত্রুবাহিনী যারা সম্মিলিত হয়ে এসেছিল। ‘ঝড়’ বলতে ঐ প্রবল হাওয়াকে বুঝানো হয়েছে, যা তুফানরূপে এসে তাদের তাঁবু উড়িয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল, পশুর দল রশি ছিঁড়ে পালিয়েছিল, ডেগগুলি উল্টে গিয়েছিল এবং তারা সকলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এই ঝড় সম্পর্কে হাদীসে বর্ণনা পাওয়া যায় যে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আমাকে পুবালী হাওয়া দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে এবং আদ সম্প্রদায়কে পশ্চিমী হাওয়া দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে।’’ (বুখারীঃ ইস্তিস্কা অধ্যায়) (وَجُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا) এর অর্থ হল ফিরিশতা; যারা মুসলিমদের সাহায্যের জন্য এসেছিলেন। তাঁরা শত্রুবাহিনীর মনে এমন ভয় ও ত্রাস সঞ্চার করেন যে, তারা সেখান থেকে অবিলম্বে পালিয়ে যাওয়াকেই নিজেদের কল্যাণ মনে করেছিল।
যখন তারা তোমাদের কাছে এসেছিল তোমাদের উপরের দিক থেকে এবং তোমাদের নিচের দিক থেকে আর যখন চোখগুলো বাঁকা হয়ে পড়েছিল এবং প্রাণ কন্ঠ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকম ধারণা পোষণ করছিলে। আল-বায়ান
তারা যখন তোমাদের কাছে এসেছিল তোমাদের উপর থেকে আর তোমাদের নীচের দিক থেকে, তখন তোমাদের চক্ষু হয়েছিল বিস্ফোরিত আর প্রাণ হয়েছিল কণ্ঠাগত; আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকম (খারাপ) ধারণা পোষণ করতে শুরু করেছিলে। তাইসিরুল
যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল উচ্চ অঞ্চল ও নিম্ন অঞ্চল হতে, তোমাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়েছিল; তোমাদের প্রাণ হয়ে পড়েছিল কন্ঠাগত এবং তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে নানাবিধ ধারণা পোষণ করছিলে। মুজিবুর রহমান
[Remember] when they came at you from above you and from below you, and when eyes shifted [in fear], and hearts reached the throats and you assumed about Allah [various] assumptions. Sahih International
১০. যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল তোমাদের উপরের দিক ও নীচের দিক হতে(১), তোমাদের চোখ বিস্ফোরিত হয়েছিল এবং তোমাদের প্রাণ হয়ে পড়েছিল কণ্ঠাগত(২), আর তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে নানাবিধ ধারণা পোষণ করছিলে;
(১) এর একটি অর্থ হতে পারে, সবদিক থেকে চড়াও হয়ে এলো। দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে, নাজদ ও খায়বারের দিক থেকে আক্রমণকারীরা ওপরের দিক থেকে এবং মক্কা মো’আযযামার দিক থেকে আক্রমণকারীরা নিচের দিক থেকে আক্রমণ করলো। [ফাতহুল কাদীর]
(২) হাদীসে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা খন্দকের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! অন্তরসমূহ কণ্ঠাগত হয়েছে, আমরা কি কিছু বলব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, বল, اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوَرَاتِنَا وَآمِنْ رَوَعَاتِنَا ‘হে আল্লাহ! আমাদের গোপনীয়তা রক্ষা করা এবং আমাদেরকে ভীতি থেকে নিরাপত্তা দাও’। আবু সাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ফলে আল্লাহ শক্ৰদের মুখে ঝঞ্ঝা বায়ু প্রবাহিত করলেন, এভাবেই আল্লাহ তাদেরকে বাতাস দিয়ে পরাজিত করলেন। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) যখন ওরা তোমাদের বিরুদ্ধে উচ্চ অঞ্চল ও নিমন অঞ্চল হতে সমাগত হয়েছিল,[1] তোমাদের চক্ষু স্থির হয়ে গিয়েছিল, তোমাদের প্রাণ হয়ে পড়েছিল কণ্ঠাগত এবং তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে নানাবিধ ধারণা পোষণ করেছিলে।[2]
[1] এর অর্থ এই যে, সর্বদিক থেকে শত্রু এসে পড়েছিল অথবা উচ্চ অঞ্চল থেকে উদ্দেশ্য হল, গাত্বফান, হাওয়াযিন এবং নাজদের অন্যান্য মুশরিকরা এবং নিম্ন অঞ্চল থেকে উদ্দেশ্য কুরাইশ এবং তাদের সাহায্যকারীরা।
[2] এটা মুসলিমদের ঐ অবস্থার বিবরণ, যে অবস্থার সম্মুখীন তাঁরা ঐ সময় হয়েছিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান