বরং তারা যে ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করেনি, তা তারা অস্বীকার করেছে এবং এখনও তার পরিণতি তাদের কাছে আসেনি। এভাবেই তারা অস্বীকার করেছিল, যারা ছিল তাদের পূর্বে। সুতরাং তুমি লক্ষ্য কর, কেমন ছিল যালিমদের পরিণাম। আল-বায়ান
বরং যে বিষয় তাদের জ্ঞানের সীমার মধ্যে আসে না, আর যার পরিণাম ফল এখনও উপস্থিত হয়নি তা তারা অস্বীকার করে। এভাবে তাদের পূর্ববর্তী লোকেরাও মিথ্যা মনে ক’রে অমান্য করেছিল। এখন দেখ, এই যালিমদের পরিণতি কী হয়েছে! তাইসিরুল
বরং তারা এমন বিষয়কে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে, যাকে নিজ জ্ঞানের পরিধিতে আনয়ন করেনি, আর এখনো তাদের প্রতি ওর পরিণাম (আযাব) পৌঁছেনি; এরূপভাবে তারাও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল, যারা তাদের পূর্বে গত হয়েছে। অতএব দেখ সেই অত্যাচারীদের পরিণাম কি হল? মুজিবুর রহমান
Rather, they have denied that which they encompass not in knowledge and whose interpretation has not yet come to them. Thus did those before them deny. Then observe how was the end of the wrongdoers. Sahih International
৩৯. বরং তারা যে বিষয়ের জ্ঞান আয়ত্ত করেনি তাতে মিথ্যারোপ করেছে(১), আর যার প্রকৃত পরিণতি এখনো তাদের কাছে আসে নি।(২) এভাবেই তাদের পূর্ববতীরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল, কাজেই দেখুন, যালিমদের পরিণাম কি হয়েছে!
(১) অর্থাৎ তারা কুরআনকে এ জন্যই মিথ্যা সাব্যস্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছে যে, তারা এটাকে বুঝতে পারেনি, চিনতে পারেনি। [কুরতুবী] তাদের অজ্ঞতাই কুরআনকে মানতে নিষেধ করছে। অন্য আয়াতেও আল্লাহ এ রকম কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আর যখন তারা এটা দ্বারা হেদায়াত পায়নি তখন তারা অচিরেই বলবে, এ এক পুরোনো মিথ্যা।” [সূরা আল-আহকাফ: ১১]
(২) এখানে تَأْوِيلُهُ এর মর্মার্থ হলো প্রতিফল ও শেষ পরিণতি। অর্থাৎ এরা নিজেদের গাফলতী ও নির্লিপ্ততার দরুন কুরআন সম্পর্কে কোন চিন্তা-ভাবনা করেনি। তারা একটু চিন্তা করতে পারত যে পূর্ববর্তী যে সমস্ত সংবাদ এ কুরআন দিয়েছে তা সত্য কি না? বা ভবিষ্যতের যে সমস্ত সংবাদ দিচ্ছে তা সঠিকভাবে ঘটে কি না? কিন্তু তারা কোন কিছু ভাল করে বুঝার আগে তা অস্বীকার করে বসেছে। ফলে এর প্রতি মিথ্যারোপে লিপ্ত রয়েছে। যদি তারা সত্যিকারভাবে এটা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করত তাহলে অবশ্যই কুরআনকে বুঝতে পারত। আর এটাও বুঝত যে, এটা আল্লাহর বাণী। [ফাতহুল কাদীর]
আর যে বিষয়ে তাদের জ্ঞান কাজ করে না যেমন পুনরুত্থান, জান্নাত, জাহান্নাম, ইত্যাদি সেগুলোকে তারা অস্বীকার করে বসেছে, সেগুলোর সাথে কুফরি করেছে, অথচ এখনও কিতাবে তাদের উপর যা আপতিত হওয়ার ওয়াদা করা হচ্ছে তার প্রকৃত অবস্থা আসেনি। আর এ মুশরিকরা যেভাবে আল্লাহর ভীতি প্রদর্শনে মিথ্যারোপ করেছে তাদের পূর্বেকার উম্মতরাও তা অস্বীকার করেছিল। [মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৯) বরং তারা এমন বিষয়কে মিথ্যা মনে করেছে, যাকে নিজ জ্ঞানের পরিধিতে আনয়ন করেনি[1] এবং এখনো তাদের নিকট ওর পরিণাম (আযাব বা ব্যাখ্যা) এসে পৌঁছেনি।[2] এরূপভাবে তারাও মিথ্যা মনে করেছিল, যারা তাদের পূর্বে গত হয়েছে; অতএব দেখ সেই অত্যাচারীদের পরিণাম কি হয়েছিল? [3]
[1] অর্থাৎ কুরআন ও তার অর্থ নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা ছাড়াই, তাকে মিথ্যাজ্ঞান করেছে।
[2] অর্থাৎ কুরআন যে সকল পূর্বঘটিত এবং ভবিষ্যতে ঘটিতব্য ঘটনাবলী বর্ণনা করেছে, তার পূর্ণ সত্যতা ও তার প্রকৃততত্ত্ব তাদের নিকট পরিস্ফুটিত হয়নি। তার পরেও মিথ্যাজ্ঞান করতে আরম্ভ করে দিয়েছে। অথবা এর দ্বিতীয় অর্থ এই যে, তারা কুরআনের যথাযথ অধ্যয়ন না করেই মিথ্যাজ্ঞান করতে আরম্ভ করেছে। অথচ যদি তারা সঠিকভাবে তা নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করত এবং সেই সকল বিষয়ের প্রতি মনোনিবেশ করত, যা কুরআন আল্লাহর বাণী হওয়ার কথা প্রমাণ করে, তাহলে অবশ্যই তার অর্থ ও তাৎপর্য বুঝার পথ তাদের জন্য খুলে যেত। এই ব্যাখ্যায় تأويل (পরিণাম)এর অর্থ হবে, কুরআন কারীমের রহস্য, নিগূঢ় তত্ত্ব, ব্যঞ্জনা ও তাৎপর্য।
[3] এটা সেই কাফের ও মুশরিকদের জন্য হুঁশিয়ারি ও ধমক যে, তোমাদের মত তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিরাও আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা মনে করেছিল, তাদের পরিণতি কি হয়েছে তোমরা দেখে নাও? যদি তোমরা মিথ্যাজ্ঞান করা থেকে বিরত না হও, তাহলে তোমাদের পরিণতিও তাদের থেকে স্বতন্ত্র হবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান