আলিফ্-লাম-রা। এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত। আল-বায়ান
আলিফ-লাম-র, এগুলো মহা বিজ্ঞানময় গ্রন্থের আয়াতসমূহ। তাইসিরুল
আলিফ লাম রা, এটা হচ্ছে অতি সূক্ষ্ম তত্ত্বপূর্ণ কিতাবের আয়াত। মুজিবুর রহমান
Alif, Lam, Ra. These are the verses of the wise Book Sahih International
১. আলিফ-লাম-রা(১)। এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত।
(১) এগুলোকে হরফে মোকাত্তা'আত’ বলা হয়। এগুলোর আলোচনা পূর্বে সূরা আল-বাকারায় করা হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(১) আলিফ লা-ম রা। এ হল বিজ্ঞানময় গ্রন্থের আয়াত। [1]
[1] الحَكِيْمِ (বিজ্ঞানময়) কিতাব অর্থাৎ, কুরআন কারীমের বিশেষণ। এর একটি অর্থ তাই যা অনুবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। তার আরো কয়েকটি অর্থ করা হয়েছে। যেমন الْمُحْكَمِ - অর্থাৎ, হালাল ও হারাম এবং দন্ডবিধি ও যাবতীয় বিধান দানে মযবুত। حَكِيْمٌ -حَاكِمٌ এর অর্থে। অর্থাৎ, মতভেদ ইত্যাদিতে মানুষের মাঝে ফায়সালা বা সমাধান দাতা গ্রন্থ। (সূরা বাক্বারাহঃ ২৩) حكيم - محكوم فيه এর অর্থে। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা এই কুরআনে ন্যায় ও ইনসাফের সাথে ফায়সালা দিয়েছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানএটা কি মানুষের জন্য আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যে, তুমি মানুষকে সতর্ক কর এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের রবের নিকট তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা। কাফিররা বলে, ‘এ তো স্পষ্ট যাদুকর’। আল-বায়ান
মানুষের কাছে কি এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি তাদেরই মধ্যেকার একজন লোকের কাছে ওয়াহী পাঠিয়েছি যে, লোকদের সতর্ক করে দাও, আর যারা ঈমান আনে তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে মহা মর্যাদা, (কিন্তু) কাফিররা বলে, ‘এ ব্যক্তি তো প্রকাশ্য যাদুকর’। তাইসিরুল
লোকদের জন্য এটা কি বিস্ময়কর মনে হয়েছে যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি সকলকে ভয় প্রদর্শন কর এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে এই সুসংবাদ দাও যে, তারা তাদের রবের নিকট পূর্ণ মর্যাদা লাভ করবে। কাফিরেরা বলতে লাগল যে, এ ব্যক্তিতো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর। মুজিবুর রহমান
Have the people been amazed that We revealed [revelation] to a man from among them, [saying], "Warn mankind and give good tidings to those who believe that they will have a [firm] precedence of honor with their Lord"? [But] the disbelievers say, "Indeed, this is an obvious magician." Sahih International
২. মানুষের জন্য এটা কি আশ্চর্যের বিষয় যে, আমরা তাদেরই একজনের কাছে ওহী পাঠিয়েছি এ মর্মে যে, আপনি মানুষকে সতর্ক করুন(১) এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য তাদের রবের কাছে আছে উচ্চ মর্যাদা।(২) কাফিররা বলে, এ তো এক সুস্পষ্ট জাদুকর।
(১) এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা কাফের মুশরিকদের একটি সন্দেহ ও তার উত্তর তুলে ধরেছেন। সন্দেহটি ছিল এই যে, কাফেররা তাদের মূর্খতার দরুন সাব্যস্ত করে রেখেছিল যে, আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে যে নবী বা রাসূল আসবেন তিনি মানুষ হবেন না। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাদের এ সন্দেহকে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এটা যে শুধু কুরাইশ কাফেরদের সন্দেহ তা নয়। পূর্ববর্তী উম্মতরাও তা বলেছিল। তারা বলেছিল “মানুষই কি আমাদেরকে পথের সন্ধান দেবে?” [সূরা আত-তাগাবুনঃ ৬]
নূহ ও হুদ এর কাওমও এ রকম বিস্মিত হয়েছিল। তখন নবীগণ তার জবাবে বলেছেন, “তোমরা কি বিস্মিত হচ্ছ যে, তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের কাছে উপদেশ এসেছে?” [সূরা আল-আরাফঃ ৬৩; ৬৯] অনুরূপভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাওমও বলেছে, “সে কি বহু ইলাহকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? এটা তো এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার! [সূরা সোয়াদঃ ৫] ইবন আব্বাস বলেন, যখন আল্লাহ্ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল হিসেবে পাঠালেন তখন আরবরা সেটা মানতে অস্বীকার করেছিল। অথবা তাদের মধ্যে অনেকেই এ জন্য অস্বীকার করেছিল যে, আল্লাহ মহান যে তিনি তাঁর রাসূল বানাবেন মুহাম্মাদের মত একজন মানুষকে। তিনি এটা করতেই পারেন না। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [ইবন কাসীর]
আল্লাহ তা'আলা তাদের এই ভ্রান্ত ধারণার উত্তর কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রকারে দিয়েছেন। এক আয়াতে বলেছেনঃ “যমীনের উপর যদি ফিরিশতারা বাস করত, তাহলে আমি তাদের জন্য কোন ফিরিশতাকেই রাসূল বানিয়ে পাঠাতাম।” [আল-ইসরাঃ ৯৫] যার মূল কথা হল এই যে, রিসালাতের উদ্দেশ্য ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না রাসূল এবং যাদের মধ্যে রাসূল পাঠানো হচ্ছে এ দুয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে। বস্তুতঃ ফিরিশতার সম্পর্ক থাকে ফিরিশতাদের সাথে আর মানুষের সম্পর্ক থাকে মানুষের সাথে। যখন মানুষের জন্য রাসূল পাঠানোই উদ্দেশ্য, তখন কোন মানুষকেই রাসূল বানানো উচিত।
(২) এ বাক্যের দ্বারা সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। ইবনে আব্বাস বলেন, এর অর্থ ‘যিকরুল আউয়াল’ তথা লাওহে মাহফুযে তাদের তাকদীরে সৌভাগ্যবান লিখা হয়েছে। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, তারা যে উত্তম আমল পেশ করেছে সে জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে। [ইবন কাসীর; সাদী] অতএব, বাক্যের অর্থ দাঁড়ালো এই যে, ঈমানদারদেরকে এ সুসংবাদ দিয়ে দিন যে, তাদের জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে অনেক বড় সম্মানিত মর্যাদা রয়েছে যা তারা নিশ্চিতই পাবে এবং পাওয়ার পর কখনো তা শেষ হয়ে যাবে না। চিরকালই তারা সে সম্মানিত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত থাকবেন। এ আয়াতের তাফসীর যদি আমরা কুরআনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে, এর সমার্থে সূরা আল-কাহফের ২-৩ নং আয়াতে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে, তারা সেখানে সর্বদা অবস্থান করবে। মুজাহিদ বলেন, এর দ্বারা পূর্বে তারা যে আমল করেছে যেমন, তাদের সালাত, সাওম, সাদকা, তাসবীহ ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর]
কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, এক্ষেত্রে صدق শব্দ প্রয়োগের মাঝে এমন ইশারা করাও উদ্দেশ্য যে, জান্নাতের এসব উচ্চমর্যাদা একমাত্র সত্যনিষ্ঠা ও ইখলাসের কারণেই পাওয়া যাবে। কোন কোন মুফাসসির বলেন এখানে যাবতীয় কল্যাণ উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ এখানে (قَدَمَ صِدْقٍ) বলে তাদের সৎকর্মকাণ্ডসমূহকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন, তাদের সালাত, সাওম, সাদকা, তাসবীহ ইত্যাদি। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) লোকদের জন্য এটা কি বিস্ময়কর[1] যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি লোকদেরকে সতর্ক কর এবং বিশ্বাসীদেরকে এই সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট উচ্চ মর্যাদা। [2] অবিশ্বাসীরা বলে, ‘এ ব্যক্তি তো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর।’[3]
[1] এটি বিস্ময়ের জন্য অস্বীকৃতিমূলক জিজ্ঞাসা, যাতে তিরস্কার বা ধমকও শামিল আছে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা মানব জাতির মধ্য হতে একজনকে রসূল করে প্রেরণ করেছেন; এতে আশ্চর্য হওয়া উচিত নয়। কারণ, রসূল তাদের স্বজাতি হওয়ার কারণে তিনি সঠিকভাবে তাদেরকে পথপ্রদর্শন করতে সক্ষম হবেন। যদি তিনি স্বজাতি না হয়ে ফিরিশতা বা জীন হতেন, তাহলে উভয় অবস্থাতেই রিসালাতের আসল উদ্দেশ্য সাধন হত না। কারণ মানুষ তাঁর সাথে একাত্মতাবোধ না করে ভিন্নতাবোধ করত। দ্বিতীয়ত তারা তাঁকে দেখতেও পেত না। আর যদি কোন জীন অথবা ফিরিশতাকে মানুষরূপে প্রেরণ করতাম, তবে ঐ একই প্রশ্ন আসত যে, এরাও তো আমাদের মতই মানুষ। ফলে তাদের উক্ত বিস্ময়ের কোন অর্থই থাকত না।
[2] قَدَمَ صِدْقٍ এর অর্থ ‘উচ্চ মর্যাদা’ উত্তম প্রতিদান ও ঐ সকল নেক আমল যা একজন মু’মিন তার জীবনে করে থাকে।
[3] কাফেররা মহানবী (সাঃ)-কে অস্বীকার করার যখন কোন পথ পেত না, তখন তারা এই বলে নিজেদেরকে বাঁচাতে চাইত যে, এ তো একজন যাদুকর। (নাউযু বিল্লাহ)
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ। যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, তারপর আরশে উঠেছেন। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন। তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত কর। তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? আল-বায়ান
নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হলেন আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী আর পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হয়েছেন। তিনি যাবতীয় বিষয়াদি পরিচালনা করেন। তাঁর অনুমতি প্রাপ্তি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। ইনিই হলেন আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। কাজেই তোমরা তাঁরই ‘ইবাদাত কর, তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না? তাইসিরুল
নিশ্চয়ই আল্লাহই হচ্ছেন তোমাদের রাব্ব, যিনি আসমানসমূহকে এবং যমীনকে সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন, তিনি প্রত্যেক কাজ পরিচালনা করে থাকেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেহ নেই; এমন আল্লাহ হচ্ছেন তোমাদের রাব্ব। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদাত কর; তবুও কি তোমরা বুঝছনা? মুজিবুর রহমান
Indeed, your Lord is Allah, who created the heavens and the earth in six days and then established Himself above the Throne, arranging the matter [of His creation]. There is no intercessor except after His permission. That is Allah, your Lord, so worship Him. Then will you not remember? Sahih International
৩. তোমাদের রব তো আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন(১), তারপর তিনি আরশের উপর উঠলেন(২)। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন।(৩) তার অনুমতি লাভ না করে সুপারিশ করার কেউ নেই(৪)। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব; কাজেই তোমরা তারই ইবাদাত কর(৫)। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?(৬)
(১) এ আয়াতে তাওহীদকে এমন অনস্বীকার্য বাস্তবতার দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে যে, আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করার মধ্যে অতঃপর সমস্ত কাজকর্ম পরিচালনার মধ্যে যখন আল্লাহ তা'আলার কোন শরীক-অংশীদার নেই, তখন ইবাদাত-বন্দেগী এবং হুকুম পালনের ক্ষেত্রে অন্য কেউ কি করে শরীক হতে পারে? বরং এতে (ইবাদাতে) অন্য কাউকে শরীক করা একান্তই অবিচার এবং সীমালঙ্ঘনের শামিল। এ আয়াতে এরশাদ হয়েছে যে, আসমান ও যমীনকে আল্লাহ তা'আলা মাত্র ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এখানে কি পরিমাণ সময় উদ্দেশ্য তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। যদিও কোন কোন মুফাসসির এ দিনগুলোকে আমাদের বর্তমান দিন এর মত মনে করেছেন। কোন কোন মুফাসসির মত প্রকাশ করেছেন যে, এ দিনগুলো অন্য আয়াতে বর্ণিত, একদিন সমান একহাজার বছরের মত। [ইবন কাসীর]
(২) তারপর বলেছেন (ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ) অর্থাৎ আরশের উপর উঠেছেন। কুরআন এবং হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, আল্লাহ্ তা'আলার আরশ এক প্রকাণ্ড সৃষ্টি আর তা সমস্ত সৃষ্টিজগতের ছাদস্বরূপ। আল্লাহ্ তা'আলা তার আরশের উপর উঠা বাস্তব বিষয়। এটা আল্লাহর একটি মহান কার্যগত গুণ। তিনি যে রকম তার আরশের উপর উঠাও সেরকম। আমরা তার আরশের উপর উঠা কথাটা বুঝি তবে সে উঠার ধরণ আমরা জানিনা। আল্লাহর আরশের উপর উঠা সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা সূরা আল-বাকারায় করা হয়েছে।
(৩) সৃষ্টিজগতের যাবতীয় কর্মকাণ্ড তিনিই পরিচালনা করেন। “আসমানও যমীনের অণু পরিমান বস্তুও তাঁর জ্ঞানের বাইরে নেই।” [সাবাঃ ৩] কোন ব্যাপারে মনযোগ দিতে গিয়ে অন্য ব্যাপার তাঁর বাধা হয় না। [বুখারী] অগণিত আবেদনকারীর আবেদন তাঁর জন্য কোন সমস্যা সৃষ্টি করে না। চাওয়ার প্রচণ্ডতায় তিনি বিরক্ত হোন না। বৃহৎ কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে ছোট ছোট বস্তুগুলো তার খেয়ালচ্যুত হয়না। চাই তা সমুদ্রে বা পাহাড়ে বা জনবসতিপূর্ণ এলাকা যেখানেই হোক না কেন। [এ ব্যাপারে আরো দেখুনঃ সূরা হুদঃ ৬, সূরা আল-আনআমঃ ৫৯]
(৪) অর্থাৎ দুনিয়ার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় অন্য কারোর হস্তক্ষেপ করা তো দূরের কথা, কারো আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে তাঁর কোন ফায়সালা পরিবর্তন করার অথবা করো ভাগ্য ভাঙা-গড়ার ইখতিয়ারও নেই। বড়জোর সে আল্লাহর কাছে দোআ করতে পারে। কিন্তু তার দোআ কবুল হওয়া না হওয়া পুরোপুরি আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। আল্লাহর এ একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার রাজ্যে নিজের কথা নিশ্চিতভাবে কার্যকর করিয়ে নেবার মতো শক্তিধর কেউ নেই। এমন শক্তি কারোর নেই যে, তার সুপারিশকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। এ সুপারিশের বিষয়টি আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করেছেন। [দেখুনঃ সূরা আল-বাকারাহঃ ২৫৫, সূরা আন-নাজমঃ ২৬, সূরা সাবাঃ ২৩]
(৫) উপরের তিনটি বাক্যে প্রকৃত সত্য বর্ণনা করা হয়েছিল, অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই তোমাদের রব। এখন বলা হচ্ছে, এ প্রকৃত সত্যের উপস্থিতিতে তোমাদের কোন ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। মূলত রবুবীয়াত তথা বিশ্ব-জাহানের সার্বভৌম ক্ষমতা, নিরংকুশ কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব যখন পরোপুরি আল্লাহর আয়ত্বাধীন তখন এর অনিবার্য দাবী স্বরুপ মানুষকে তাঁরই বন্দেগী করতে হবে। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা সেটা বলেছেন, তিনি বলেন, “আর যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ। অতঃপর তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে? [সূরা আয-যুখরুফঃ ৮৭) আরও বলেন, “বলুন, সাত আসমান ও মহা-আরশের রব কে? অবশ্যই তারা বলবে, ‘আল্লাহ। বলুন, ‘তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না? [সূরা আল-মুমিনুন: ৮৬-৮৭] তাছাড়া সূরা ইউনুসের এ আয়াতের আগের ও পরের আয়াতেও একই বক্তব্য এসেছে।
(৬) অর্থাৎ যখন এ সত্য তোমাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে এবং তোমাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ সত্যের উপস্থিতিতে তোমাদের কি কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তখন এরপরও কি তোমাদের চোখ খুলবে না এবং তোমরা এমন বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে থাকবে? তোমরা কি তোমাদের অস্বীকার ও গোড়ামীতেই রত থাকবে যে তোমরা মোটেই উপদেশ গ্রহণ করবে না? [আইসারুত তাফাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন,[1] তিনি প্রত্যেক কাজ পরিচালনা করে থাকেন।[2] তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশকারী কেউ নেই।[3] ঐ (স্রষ্টা ও পরিচালক) আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত কর।[4] তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?
[1] বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা আ’রাফের ৫৪নং আয়াতের টীকা।
[2] অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করে তিনি এমনিই ছেড়ে দেননি, বরং সারা বিশ্ব-জাহানকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন যে, কখনো পরস্পরের মাঝে কোন সংঘর্ষ হয় না। সকল বস্তু তাঁরই নির্দেশে নিজ নিজ কর্মে রত আছে।
[3] মুশরিক ও কাফের - যারা এখানে সম্বোধিত - তাদের বিশ্বাস ছিল যে, যে সকল মূর্তির তারা উপাসনা করে, তারা আল্লাহর নিকট তাদের জন্য সুপারিশ করবে এবং তাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, সেখানে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। আর এই অনুমতিও একমাত্র তাদের জন্য দেওয়া হবে, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করবেন। الأنبياء-২৮ (وَلاَ يَشفَعُونَ إِلاَّ لِمَن ارتَضَى)
النجم-২৬) (لا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى)
[4] অর্থাৎ এমন আল্লাহ যিনি বিশ্ব-জগতের স্রষ্টা এবং তার পরিচালক ও ব্যবস্থাপক। এ ছাড়া সমস্ত এখতিয়ারের পরিপূর্ণ মালিক একমাত্র তিনিই। ফলে একমাত্র তিনিই উপাসনা পাওয়ার যোগ্য।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতাঁরই কাছে তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। নিশ্চয় তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন। তারপর তার পুনরাবর্তন ঘটান। যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে ইনসাফপূর্ণ প্রতিদান দেয়ার জন্য। আর যারা কুফরী করেছে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানীয় এবং বেদনাদায়ক আযাব। এ কারণে যে তারা কুফরী করত। আল-বায়ান
তাঁর কাছেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন। আল্লাহর ওয়া‘দা নিশ্চিত সত্য। তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, পরে তিনিই আবার সৃষ্টি করবেন যাতে তিনি- যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে- তাদেরকে পূর্ণ ইনসাফের সাথে প্রতিদান দিতে পারেন। আর যারা কুফুরী করেছে তাদের জন্য আছে অতি উত্তপ্তপানীয় ও বেদনা দায়ক শাস্তি, যেহেতু তারা সত্য প্রত্যাখ্যান করত। তাইসিরুল
তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে, আল্লাহর ও‘য়াদা সত্য; নিশ্চয়ই তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বার সৃষ্টি করবেন, যাতে এরূপ লোকদের যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে তাদেরকে ইনসাফ মত প্রতিফল প্রদান করেন; আর যারা অবিশ্বাসী তারা পান করার জন্য পাবে উত্তপ্ত পানি এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদের কুফরীর কারণে। মুজিবুর রহমান
To Him is your return all together. [It is] the promise of Allah [which is] truth. Indeed, He begins the [process of] creation and then repeats it that He may reward those who have believed and done righteous deeds, in justice. But those who disbelieved will have a drink of scalding water and a painful punishment for what they used to deny. Sahih International
৪. তারই কাছে তোমাদের সকলের ফিরে যাওয়া(১); আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য।(২) সৃষ্টিকে তিনিই প্রথম অস্তিত্বে আনেন, তারপর সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন(৩) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে ইনসাফপূর্ণ প্রতিফল প্রদানের জন্য। আর যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত গরম পানীয়(৪) ও অতীব কষ্টদায়ক শাস্তি; কারণ তারা কুফরী করত।
(১) অর্থাৎ তোমাদের এ দুনিয়া থেকে ফিরে গিয়ে নিজেদের রবের কাছে হিসেব দিতে হবে। সে সুনির্দিষ্ট সময়ে তিনি তোমাদের সবাইকে একত্রিত কববেন। [ইবন কাসীর; সা’দী]
(২) এ আয়াতে সমগ্র সৃষ্টিজগতের বহু নিদর্শন উল্লেখিত হয়েছে, যা আল্লাহ তা'আলার পূর্ণ কুদরত ও পরিপূর্ণ হেকমতের স্বাক্ষর বহন করে এবং এ দাবী প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা সৃষ্টিকে ধ্বংস করে গুড়িয়ে দিতে সক্ষম এবং পরে পুনরায় সেই কণাসমূহকে একত্রিত করে একেবারে নতুন অবস্থায় জীবিত করে হিসাব-নিকাশের পর পুরস্কার কিংবা শাস্তির আইন জারি করবেন। কুরাইশ কাফেরদের অধিকাংশই আল্লাহকে তাদের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানত। তাই আল্লাহ তা'আলা এর দ্বারাই তাদের উপর দলীল নিচ্ছেন যে, যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করতে পারেন তিনি অবশ্যই ধ্বংসের পর দ্বিতীয়বার সেটাকে অস্তিত্বে আনতে সক্ষম। [কুরতুবী] আর এটা তার ওয়াদা। এ ওয়াদা তিনি অবশ্যই পূরণ করবেন। কারণ, এর মাধ্যমে তিনি যারা হৃদয় দিয়ে ঈমান এনেছে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে ওয়াজিব ও মুস্তাহাব পালন করে নেক আমল করেছে, তাদেরকে প্রতিফল দিবেন। [সা'দী]। আর যারা কুফরী করবে তাদেরকেও তাদের কুফরীর কারণে তিনি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।
(৩) এ বাক্যটির মধ্যে দাবী ও প্রমাণ উভয়েরই সমাবেশ ঘটেছে। দাবী হচ্ছে, আল্লাহ পুনর্বার মানুষকে সৃষ্টি করবেন। এর প্রমাণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনিই প্রথমবার মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আর যে ব্যক্তি একথা স্বীকার করে যে, আল্লাহই সৃষ্টির সূচনা করেছেন। সে কখনো আল্লাহর পক্ষে এ সৃষ্টির পুনরাবৃত্তিকে অসম্ভব বা দুর্বোধ্য মনে করতে পারে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “যেভাবে আমরা প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব; এটা আমার কৃত প্রতিশ্রুতি, আর আমরা তা পালন করবই।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৪]
(৪) এ অত্যন্ত গরম পানীয় কাফেরদের জন্য শাস্তি স্বরূপ থাকবে। এ প্রচণ্ড গরম পানীয়ের বিভিন্ন গুণাগুণ অন্যান্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। সূরা আর-রাহমানের ৪৪ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ “তারা জাহান্নামের আগুন ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটোছুটি করবে” আবার কোথাও বলা হয়েছেঃ “এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়ীভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?”। [সূরা মুহাম্মাদঃ ১৫] আরো বলা হয়েছে “তাদের মাথার উপর ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা দ্বারা তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত করা হবে।” [সূরা আল-হাজ্জঃ ১৯–২০]
অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ “তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে।” [সূরা আল-কাহফঃ ২৯] আরো বলা হয়েছেঃ “তারপর তোমরা পান করবে তার উপর অতি উষ্ণ পানি, ফলে তারা পান করবে তৃষ্ণার্ত উটের ন্যায়।” [সূরা আল-ওয়াকি'আহঃ ৫৪–৫৫] কুরআনের কোন কোন আয়াতে এ গরম পানিকে পুঁজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, বলা হয়েছেঃ “এবং পান করানো হবে গলিত পুঁজ; যা সে অতি কষ্টে একেক ঢোক করে গিলবে এবং তা গিলা প্রায় সহজ হবে না।” [সূরা ইবরাহীমঃ ১৬–১৭] আবার কোন কোন স্থানে বলা হয়েছে যে, তাদের জন্য সমভাবে গরম পানীয় ও পুঁজ উভয়টিই থাকবে, “কাজেই তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ”। [সূরা সোয়াদঃ ৫৭] আরো এসেছেঃ “সেখানে তারা আস্বাদন করবে না শীত, না কোন পানীয়, ফুটন্ত পানি ও পুজ ছাড়া।” [সূরা আন-নাবা ২৪–২৫]।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য; নিশ্চয় তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বারও সৃষ্টি করবেন, যাতে তাদেরকে ইনসাফ মত প্রতিফল প্রদান করেন যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে। আর যারা কুফরী করেছে তারা তাদের আচরিত কুফরীর ফলে পান করার জন্য পাবে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [1]
[1] এই আয়াতে কিয়ামত সংঘটন, আল্লাহর নিকট সকলের উপস্থিতি এবং উত্তম প্রতিদান ও শাস্তির বর্ণনা আছে। উক্ত বিষয় কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভাবে বর্ণিত হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোময় আর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মনযিল, যাতে তোমরা জানতে পার বছরের গণনা এবং (সময়ের) হিসাব। আল্লাহ এগুলো অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। আল-বায়ান
তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদীপ্ত, আর চন্দ্রকে করেছেন আলোকময় আর তার (হ্রাস বৃদ্ধির) মানযিলসমূহ সঠিকভাবে নির্ধারণ করেছেন যাতে তোমরা বৎসর গুণে (সময়ের) হিসাব রাখতে পার। আল্লাহ এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি, তিনি নিদর্শনগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করেন জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য। তাইসিরুল
আল্লাহ এমন, যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চাঁদকে আলোকময় বানিয়েছেন এবং ওর (গতির) জন্য মানযিলসমূহ নির্ধারিত করেছেন যাতে তোমরা বছরসমূহের সংখ্যা ও হিসাব জানতে পার; আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি এই প্রমাণসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন ঐসব লোকের জন্য যারা জ্ঞানবান। মুজিবুর রহমান
It is He who made the sun a shining light and the moon a derived light and determined for it phases - that you may know the number of years and account [of time]. Allah has not created this except in truth. He details the signs for a people who know Sahih International
৫. তিনিই সূর্যকে দীপ্তিময় ও চাঁদকে আলোকময় করেছেন এবং তার জন্য মনযিল নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পার। আল্লাহ এগুলোকে যথাযথ ভাবেই সৃষ্টি করেছেন।(১) তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে।
(১) অর্থাৎ তিনি এগুলো অনাহুত সৃষ্টি করেননি বরং তিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়, তাঁর প্রত্যেকটি কাজই প্রজ্ঞায় পূর্ণ। আসমান ও যমীন সৃষ্টির মাঝে কোন হেকমত নেই এমন কথা শুধুমাত্র কাফেররাই বলতে পারে। [এ ব্যাপারে আরো দেখুন, সূরা সোয়াদঃ ২৭, সূরা আল-মূমিনূনঃ ১১৫–১১৬]।
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) তিনিই সেই সত্তা যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান ও চন্দ্রকে আলোকময় বানিয়েছেন[1] এবং ওর (গতির) জন্যে কক্ষসমূহ নির্ধারিত করেছেন, যাতে তোমরা বছরসমূহের সংখ্যা ও (সময়ের) হিসাব জানতে পার।[2] আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্য এই সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন।
[1] ضِيَآءٌ , ضُوْءٌ সমার্থবোধক শব্দ। এখানে ‘মুযাফ’ (সম্বন্ধপদের প্রথমাংশ) উহ্য আছে; অর্থাৎ, ذات ضياء والقمر ذا نور ‘‘সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চন্দ্রকে আলোময় বানিয়েছেন।’’ অথবা তাকে অতিশয়োক্তি বলে ধরা হবে; অর্থাৎ ঠিক যেন তা নিজেই প্রদীপ্ত ও আলো। আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তার পরিচালনার কথা বর্ণনার পর উদাহরণ স্বরূপ আরো কিছু বস্তুর বর্ণনা করা হচ্ছে, যা বিশ্ব-পরিচালনার অন্তর্ভুক্ত। তার মধ্যে সূর্য ও চন্দ্র অধিক গুরুতত্ত্বপূর্ণ। সূর্যের তাপ ও তার আলোর প্রয়োজনীয়তা প্রত্যেকেই জানে। অনুরূপ চন্দ্রের মৃদু জ্যোৎস্নালোকের যে মধুরতা ও উপকারিতা আছে, তাও বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। বৈজ্ঞানিকদের মতে সূর্যের নিজস্ব আলো আছে আর চন্দ্রের নিজস্ব আলো নেই বরং সূর্যের আলো থেকে আলো গ্রহণ করে থাকে। (ফাতহুল কাদীর) والله أعلم بالصواب
[2] অর্থাৎ আমি চন্দ্র পরিভ্রমণের কক্ষপথ নির্ধারণ করে দিয়েছি। কক্ষপথ বলতে তার ঐ পরিভ্রমণপথকে বুঝায়, যা চাঁদ এক দিন ও এক রাত্রে তার বিশেষ পরিক্রমণ দ্বারা অতিক্রম করে। উক্ত কক্ষ হল আটাশটি। প্রত্যেক রাত্রে একটি কক্ষ সমাপ্ত করে, তাতে কখনো কোন ব্যতিক্রম হয় না। প্রথম কক্ষগুলিতে চাঁদকে ছোট ও সরু দেখা যায়। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এমন কি চৌদ্দ রাত্রি বা চৌদ্দতম কক্ষে গিয়ে তা পূর্ণ (পূর্ণিমার) চন্দ্র রূপে প্রকাশ হয়। তার পর পুনরায় ছোট ও সরু হতে আরম্ভ করে, এমনকি শেষে এক বা দুই রাত্রি লুক্কায়িত থাকে এবং পরে প্রথম দিনের ক্ষীণচন্দ্র রূপে উদিত হয়। চন্দ্রের উপকারিতা এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, ‘‘যাতে তোমরা বছরের গণনা ও সময়ের হিসাব করতে পার।’’ অর্থাৎ চন্দ্রের সেই কক্ষপথ ও গতি দ্বারাই মাস ও বছর গণনা হয়, যার দ্বারা তোমাদের সকল বস্তুর হিসাব রাখা সহজ হয়। অর্থাৎ বছর বার মাসের, মাস উনত্রিশ বা ত্রিশ দিনের, দিবারাত্রি চবিবশ ঘণ্টার, সমান সমান দিন হলে বার ঘণ্টা করে এবং শীত ও গ্রীষ্মকালে কমবেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া পার্থিব উপকার ও কাজ-কারবার শুধু সেই চন্দ্রের কক্ষপথের সাথে সম্পৃক্ত নয়; বরং তাতে দ্বীনী লাভও অর্জন হয়। নতুন চাঁদ দ্বারা হজ্জ, রমযানের রোযা, নিষিদ্ধ মাস এবং অন্যান্য ইবাদতের সময়কাল নির্দিষ্ট করা হয়, প্রত্যেক মু’মিন তার গুরুতত্ত্ব দিয়ে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় রাত ও দিবসের বিবর্তনে এবং আসমানসমূহ ও যমীনে যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাতে বহু নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে। আল-বায়ান
নিশ্চয়ই রাত ও দিনের আবর্তনে, আর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মাঝে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তাতে মুত্তাকী সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। তাইসিরুল
নিঃসন্দেহে রাত ও দিনের পরিবর্তনের মধ্যে এবং আল্লাহ যা কিছু আসমানসমূহে ও যমীনে সৃষ্টি করেছেন তৎসমুদয়ের মধ্যে প্রমাণসমূহ রয়েছে ঐ লোকদের জন্য যারা আল্লাহর ভয় পোষণ করে। মুজিবুর রহমান
Indeed, in the alternation of the night and the day and [in] what Allah has created in the heavens and the earth are signs for a people who fear Allah Sahih International
৬. নিশ্চয় দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনে যা সৃষ্টি করেছেন(১) তাতে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।
(১) আসমান ও যমীনে আল্লাহ্ তা'আলা যা সৃষ্টি করেছেন তাতে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, সেগুলো আল্লাহরই মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করছে। কুরআনের অন্যান্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা'আলা এ বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। যেমন, সূরা ইউসুফঃ ১০৫, সূরা ইউনুসঃ ১০১, সূরা সাবাঃ ৯, সূরা আলে ইমরানঃ ১৯০। এগুলোর পরিবর্তনের অর্থ, একটির পর অপরটি এমনভাবে আসা তাদের সুনির্দিষ্ট নিয়মের কোন ব্যঘাত ঘটে না। [ইবন কাসীর] এ ব্যাপারে সূরা আল-আরাফ এর ৫৪, সূরা ইয়াসীন এর ৪০ নং এবং সূরা আল-আন’আমের ৯৬ নং আয়াতেও চাঁদ ও সূর্যের নিয়মানুবর্তিতার কথা বর্ণিত হয়েছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) নিঃসন্দেহে রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনের মধ্যে এবং আল্লাহ যা কিছু আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে সাবধানী সম্প্রদায়ের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না এবং দুনিয়ার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট আছে ও তা নিয়ে পরিতৃপ্ত রয়েছে। আর যারা আমার নিদর্শনাবলী হতে গাফেল । আল-বায়ান
যারা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে না, এবং দুনিয়ার জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে আর তাতেই নিশ্চিন্ত হয় এবং যারা আমার নিদর্শনগুলো হতে একেবারে উদাসীন, তাইসিরুল
যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করেনা এবং পার্থিব জীবনেই পরিতৃপ্ত এবং এতেই নিশ্চিন্ত থাকে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলী সম্বন্ধে গাফিল । মুজিবুর রহমান
Indeed, those who do not expect the meeting with Us and are satisfied with the life of this world and feel secure therein and those who are heedless of Our signs Sahih International
৭. নিশ্চয় যারা আমাদের সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, দুনিয়ার জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট হয়েছে এবং এতেই পরিতৃপ্ত থাকে(১), আর যারা আমাদের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে গাফিল,
(১) কাতাদা বলেন, দুনিয়াদারদের তুমি দেখবে যে, তারা দুনিয়ার জন্যই খুশী হয়, দুনিয়ার জন্যই চিন্তিত হয়, দুনিয়ার জন্যই চিন্তিত হয়, দুনিয়ার জন্যই অসন্তুষ্ট হয় আর দুনিয়ার জন্যই সন্তুষ্ট হয়। [তাবারী] এ আয়াতে জাহান্নামের অধিবাসীদের বিশেষ লক্ষণসমূহ বর্ণনা করা হচ্ছে। প্রথমতঃ তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা করে না, বিশ্বাসও করে না। দ্বিতীয়তঃ তারা আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবন ও তার অনন্ত-অসীম সুখ-দুঃখের কথা ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। তৃতীয়তঃ পৃথিবীতে তারা এমন নিশ্চিত হয়ে বসেছে যেন এখান থেকে আর কোথাও তাদের যেতেই হবে না; চিরকালই যেন এখানে থাকবে। কখনো তাদের একথা মনে হয় না যে, এ পৃথিবী থেকে প্রত্যেকটি লোকের বিদায় নেয়া এমন বাস্তব বিষয় যে, এতে কখনো কোন সন্দেহ হতে পারে না।
তাছাড়া এখান থেকে নিশ্চিতই যখন যেতে হবে, তখন যেখানে যেতে হবে, সেখানকার জন্যও তো খানিকটা প্রস্তুতি নেয়া কর্তব্য ছিল। চতুর্থতঃ এসব লোক আমার নিদর্শনাবলী ও আয়াতসমূহের প্রতি ক্রমাগত গাফিলতী করে চলেছে। সুতরাং এরা না আল্লাহর কুরআনের আয়াত দ্বারা উপকৃত হয়, না আসমান-যমীন কিংবা এ দুয়ের মধ্যবর্তী কোন সাধারণ সৃষ্টি অথবা নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে একটুও চিন্তা-ভাবনা করে। তাই তাদের ঠিকানা, অবস্থান ও বাসস্থান হবে জাহান্নাম যেখান থেকে তারা আর কোথাও যেতে বা পালাতে পারবে না। কারণ তারা কুফরী, শির্ক ও বিভিন্ন প্রকার পাপের মাধ্যমে তাই অর্জন করেছে। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই পরিতৃপ্ত থাকে এবং এতেই যারা নিশ্চিন্ত থাকে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলী সম্বন্ধে উদাসীন;
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা যা উপার্জন করত, তার কারণে আগুনই হবে তাদের ঠিকানা। আল-বায়ান
তাদের আবাস হল জাহান্নাম তাদের কৃতকর্মের কারণে। তাইসিরুল
এইরূপ লোকদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম, তাদের কার্যকলাপের কারণে। মুজিবুর রহমান
For those their refuge will be the Fire because of what they used to earn. Sahih International
৮. তাদেরই আবাস আগুন; তাদের কৃতকর্মের জন্য।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) এই লোকদের নিজেদের কৃতকর্মের ফলে ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, তাদের রব ঈমানের কারণে তাদেরকে পথ দেখাবেন, আরামদায়ক জান্নাতসমূহে যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। আল-বায়ান
যারা ঈমান আনে আর সৎ ‘আমাল করে, তাদের প্রতিপালক তাদের ঈমানের বদৌলতে তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। নি‘মাতরাজি দ্বারা পরিপূর্ণ জান্নাতে, তাদের পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে। তাইসিরুল
নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে, তাদের রাব্ব তাদেরকে লক্ষ্য স্থলে (জান্নাতে) পৌঁছে দিবেন তাদের ঈমানের কারণে, শান্তির উদ্যানসমূহে, তাদের (বাসস্থানের) তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ বইতে থাকবে। মুজিবুর রহমান
Indeed, those who have believed and done righteous deeds - their Lord will guide them because of their faith. Beneath them rivers will flow in the Gardens of Pleasure Sahih International
৯. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের রব তাদের ঈমান আনার কারণে তাদেরকে পথ নির্দেশ করবেন(১); নিয়ামতে ভরপুর জান্নাতে তাদের পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে।(২)
(১) আয়াতে (بِإِيمَانِهِمْ) শব্দের সাথে যে ب হরফটি ব্যবহৃত হয়েছে, তার দুটি অর্থ হতে পারে- (এক) কারণে। তখন আয়াতের অর্থ হবে- যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তাদের প্রভু ঈমানের কারণে মহাপুরষ্কারের ব্যবস্থা করবেন। তিনি তাদেরকে হিদায়াত দিবেন। তিনি তাদেরকে তাদের জন্য যা উপকারী তা শিক্ষা দিবেন। হিদায়াতের কারণে তারা ভালো আমল করার তৌফিক লাভ করবেন, তারা আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহে দৃষ্টি দিতে পারবেন। এ দুনিয়াতে সৎপথে পরিচালিত করবেন। হিদায়াতুল মুস্তাকীম নসীব করবেন আর আখেরাতে পুল-সিরাতের পথে তাদের পরিচালিত করবেন যাতে তারা জান্নাতে পৌছতে পারে। [সা’দী] (দুই) সাহায্যে বা দ্বারা। [কাশশাফ; ইবন কাসীর] মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ তাদের জন্য আলোর ব্যবস্থা করবেন ফলে তারা সে আলোকে আলোকিত হয়ে পথ চলতে পারবে। [তাবারী] অর্থাৎ দুনিয়ার জীবনও তাদের আলোকিত হবে। তারা তাদের জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে জানা থাকার কারণে অন্ধকারে হাতিয়ে বেড়াবে না। তাদের জীবন হবে আলোকিত জীবন। [দেখুনঃ সূরা আল-আনআমঃ ১২২, সূরা আশ-শুরাঃ ৫২, সূরা আল হাদীদঃ ২৮]
আর আখেরাতের জীবনেও তারা তাদের প্রভুর যাবতীয় কল্যাণ লাভে সামর্থ হবেন। পুলসিরাতেও তাদের আলোর ব্যবস্থা থাকবে। যাবতীয় সংকটময় মুহুর্তে তাদের প্রভু তাদের পথ দেখানোর ব্যবস্থা করবেন। [দেখুনঃ সূরা আল-হাদীদঃ ১৩] কাতাদা ও ইবন জুরাইজ বলেন, তার আমল তার জন্য সুন্দর সূরত ও সুগন্ধিযুক্ত বাতাসের রূপ ধারণ করে যখন সে কবর থেকে উঠবে তখন তার সম্মুখীন হয়ে তাকে যাবতীয় কল্যাণের সুসংবাদ জানাবে। সে তখন তাকে বলবে, তুমি কে? সে বলবে, আমি তোমার আমল। তখন তার সামনে আলোর ব্যবস্থা করবে যতক্ষণ না সে জান্নাতে প্রবেশ করায়। আর এটাই এ আয়াতের অর্থ। পক্ষান্তরে কাফেরের জন্য তার আমল কুৎসিত সূরত ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে আসবে এবং তার সার্বক্ষণিক সাথী হবে যতক্ষণ না সে তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাচ্ছে। [তাবারী; ইবন কাসীর]
(২) যদি কেউ প্রশ্ন করে, কিভাবে বলা হল যে, তাদের নিচ দিয়ে নালাসমূহ প্রবাহিত হবে, আর আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের সবখানেই জান্নাতের এ নালাসমূহকে বাগানের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কথা জানিয়েছে, এটা তো সম্ভব শুধু এক অবস্থায়, সেটা হচ্ছে, তারা যমীনের উপরে থাকবে, আর নালাসমূহ থাকবে যমীনের নীচ দিয়ে? এটা তো জান্নাতের নালাসমূহের বৈশিষ্ট্য নয়। কারণ, সেগুলো প্রবাহিত হবে যমীনের মধ্যে কোন প্রকার গর্ত না করে? উত্তর হচ্ছে, এ অর্থ নেয়াটা শুদ্ধ নয়। বরং নিচে দিয়ে নালা প্রবাহিত হওয়ার অর্থ তাদের নিকট দিয়ে প্রবাহিত হওয়া। তাদের সামনে দিয়ে নে'আমতপূর্ণ বাগানসমূহে।
এর অনুরূপ কথা আল্লাহ্ তা'আলা মারইয়ামকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, “অবশ্যই তোমার রব তোমার নিচ দিয়ে প্রস্রবণ প্রবাহিত করেছেন।” [সূরা মারইয়াম: ২৪] আর এটা জানা কথা যে, সে প্রস্রবণটি মারইয়ামের বসার নিচে ছিল না। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে যে, তার নিকটে। তার সামনে। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা'আলা ফিরআউনের ভাষণ সম্পর্কে বলেছেন, সে বলেছিল: “মিসরের রাজত্ব কি আমার নয়? আর এ নালাসমূহ কি আমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত নয়?” [সূরা আয-যুখরুফ ৫১] এখানে নিচ দিয়ে অর্থ, কাছে বা সামনে। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস করেছে এবং ভাল কাজ করেছে, তাদের প্রতিপালক তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন,[1] শান্তির উদ্যানসমূহে তাদের (বাসস্থানের) তলদেশ দিয়ে নদীমালা প্রবাহিত থাকবে।
[1] এর দ্বিতীয় অর্থ এই করা হয়েছে যে, পৃথিবীতে ঈমান আনার কারণে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা মু’মিনদের জন্য পুলস্বিরাত পার হওয়া সহজ করে দেবেন। এই অর্থে بإيمانهم এ بـ (সাবাবিয়্যাহ) কারণ বর্ণনার জন্য ব্যবহার হয়েছে। কোন কোন তফসীরবিদের মতে তা ‘ইস্তিআনাহ’ (সাহায্যের) অর্থে ব্যবহার হয়েছে। আর তার অর্থ হবে যে, তাদের প্রতিপালক তাদের বিশ্বাস ও ঈমানের সাহায্যে তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাদের জন্য এমন আলোর ব্যবস্থা করবেন, যার সাহায্যে তারা চলাফেরা করবে; যেমন সূরা হাদীদে (১২নং আয়াতে) এর বর্ণনা এসেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসেখানে তাদের কথা হবে, ‘হে আল্লাহ, তুমি পবিত্র মহান’ এবং তাদের অভিবাদন হবে, ‘সালাম’। আর তাদের শেষ কথা হবে যে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল সৃষ্টির রব’। আল-বায়ান
তার ভিতরে তাদের দু’আ হবে, ‘‘পবিত্র তুমি হে আল্লাহ’’। আর সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘‘শান্তি’’, আর তাদের দু‘আর সর্বশেষ কথা হবে ‘‘সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য’’। তাইসিরুল
সেখানে তাদের বাক্য হবেঃ হে আল্লাহ! তুমি মহান, পবিত্র! এবং পরস্পরের অভিবাদন হবে সালাম (আসসালামু ‘আলাইকুম), আর তাদের দু‘আর শেষ বাক্য হবে ‘আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল ‘আলামীন’ (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের রাব্ব মহান আল্লাহর জন্য)। মুজিবুর রহমান
Their call therein will be, "Exalted are You, O Allah," and their greeting therein will be, "Peace." And the last of their call will be, "Praise to Allah, Lord of the worlds!" Sahih International
১০. সেখানে তাদের ধ্বনি হবেঃ হে আল্লাহ! আপনি মহান, পবিত্র(১)! এবং সেখানে তাদের অভিবাদন হবে, ‘সালাম’(২) আর তাদের শেষ ধ্বনি হবেঃ ‘সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর প্রাপ্য!(৩)
(১) এ আয়াতে জান্নাতবাসীদের প্রথম ও প্রধান অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। [সা’দী] বলা হয়েছে যে, জান্নাতবাসীদের دعوى হবে (سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ)। এখানে دعوى শব্দটির অর্থ কি, এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত রয়েছে। কারণ, دعوى শব্দটির কয়েকটি অর্থ রয়েছে-
(এক) দাবী করা। তখন আয়াতের অর্থ হবে, দুনিয়ায় ও আখেরাতে সবসময়ই জান্নাতবাসীগণের দাবী ছিল আল্লাহ্ তা'আলাকে যাবতীয় দোষ-ত্রুটিমুক্ত ঘোষণা করা, তার জন্য উলুহিয়াত তথা যাবতীয় ইবাদাত সাব্যস্ত করা। তাই তারা জান্নাতেও এটার দাবী করবে। [তাবারী] কোন কোন মুফাসসির আবার এ অর্থ করেছেন যে, এখানে দাবী করার অর্থ সার্বক্ষণিক এ কাজে লেগে থাকা। ছুটতে থাকে। [ফাতহুল কাদীর]
(দুই) দো'আ করা। [তাবারী] আর দোআ করার অর্থ নির্ধারণে আলেমগণ বেশকিছু মতামত ব্যক্ত করেছেন- (ক) তাদের আহবান ও সম্বোধন হবে তাসবীহ ও তাহমীদের মাধ্যমে। (খ) তাদের ইবাদত হবে সুবাহানাকাল্লাহুম্মা এ কালেমার মাধ্যমে। [বাগভী] (গ) তাদের কথা ও কাজও হবে উক্ত কালেমার মাধ্যমে। [বাগভী] এসবগুলোই অর্থ হতে পারে। কারণ, আমরা জানি যে, দুআ দু'প্রকার। (এক) চাওয়ার মাধ্যমে দু’আ। যেমন আল্লাহ আমাকে অমুক বস্তু দান করুন। এ ধরণের দোআ অনেক পরিচিত। (দুই) ইবাদাত ও প্রশংসার মাধ্যমে দোআ যাতে আল্লাহর প্রশংসা এবং শুকরিয়া থাকে। এ হিসাবে কুরআন ও সুন্নায় বহু দোআ এসেছে। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সবচেয়ে উত্তম দোআ হলো আলহামদুলিল্লাহ। [তিরমিযীঃ ৩৩০৫, ইবনে মাজাহঃ ৩৭৯০] অনুরূপভাবে অন্য হাদীসে বলা হয়েছেঃ মুসীবতের দো’আ হচ্ছে- لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ، وَرَبُّ الْأَرْضِ، وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য কোন মা’বুদ নেই, তিনি মহান, সহিষ্ণু। আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই, তিনি আরশের মহান রব। আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য কোন মা’বুদ নেই, তিনি আসমানযমীনের রব এবং আরশের মহান রব। [বুখারীঃ ৬৩৪৫, মুসলিমঃ ২৭৩০]
অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ যিননূন (ইউনুস) 'আলাইহিস সালাম যখন মাছের পেটে ছিলেন তখন তার দোআ (লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনায যোয়ালিমীন) এ দোআ দ্বারা যখনই কোন মুসলিম কিছুর জন্য দোআ করবে, আল্লাহ তার দোআ কবুল করবেন। [তিরমিযীঃ ৩৫০০]
এ সমস্ত হাদীস এবং এ জাতীয় অন্যান্য অনেক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহর প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে দোআ করার নির্দেশ শরীআতে এসেছে। তাই অনেক আলেম এ ধরণের প্রশংসাসূচক দোআকে চাওয়াসূচক দোআ হতে শ্রেষ্ঠ বলে মত প্রকাশ করেছেন। এসব কিছু থেকে একথা স্পষ্ট হচ্ছে যে, জান্নাতের অধিবাসীগণের আল্লাহর প্রশংসা, পবিত্রতা ঘোষণা করা মূলতঃ আল্লাহর কাছে দো'আ করা।
কোন কোন মুফাসসির বলেন, যেহেতু তাদের উপর থেকে ইবাদতের যাবতীয় বোঝা নামিয়ে দেয়া হয়েছে, তখন তাদের কাছে শুধু বাকী থাকবে সবচেয়ে বড় স্বাদের বিষয়। আর তা হচ্ছে আল্লাহর যিকর করা। যা অন্যান্য যাবতীয় নে’আমতের চেয়ে তাদের কাছে বেশী মজাদায়ক হবে। যাতে থাকবে না কোন কষ্ট। [সা'দী]
(তিন) আশা-আকাঙ্খা করা, [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ জান্নাতে তাদের সবধরণের নেয়ামত লাভের পর তাদের আর কোন চাহিদা বাকী থাকবে না। তাই তারা শুধু ‘সুবাহানাকাল্লাহুম্মা’ বা হে আল্লাহ! আপনি কতই না পবিত্র এ প্রশংসামূলক বাক্যই তাদের দ্বারা সর্বক্ষণ ঘোষিত হোক এমনটি আশা করবে এবং বলতে চাইবে। [ইবন কাসীর]
মোটকথা, জান্নাতবাসীদের যাবতীয় দোআ, কাজ, কথা, দাবী, আশা-আকাঙ্খা সবকিছুই হবে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ ও তার তাহমীদ বা প্রশংসায় নিয়োজিত থাকা। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে খাবে এবং পান করবে, কিন্তু কোন থুথু, পায়খানা-পেশাব, সর্দি-কাশির সম্মুখীন হবে না। শুধুমাত্র ঢেকুর আসবে যাতে মিস্কের সুঘ্ৰাণ থাকবে। তাদের মনে শ্বাস-প্রশ্বাসের মতই আল্লাহর তাসবীহতাহমীদ (সুবাহানাল্লাহ-আলহামদুলিল্লাহ) পাঠ করতে ইলহাম (মনে উদিত করে দেয়া) হবে। [মুসলিমঃ ২৮৩৫]
(২) জন্নাতবাসীদের দ্বিতীয় অবস্থা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে (وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ) প্রচলিত অর্থে تَحِيَّةٌ বলা হয় এমন শব্দ বা বাক্যকে যার মাধ্যমে কোন আগন্তুক কিংবা অভ্যাগতকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। যেমন, সালাম, স্বাগতম, খোশ আমদেদ, কিংবা আহলান ওয়া সাহলান প্রভৃতি। সুতরাং আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা অথবা ফিরিশতাদের পক্ষ থেকে জান্নাতবাসীদেরকে سلام এর মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানানো হবে। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ এ সুসংবাদ দেয়া হবে যে, তোমরা যে কোন রকম কষ্ট ও অপছন্দনীয় বিষয় থেকে হেফাযতে থাকবে। এ সালাম স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকেও হতে পারে। যেমন, সূরা ইয়াসীনে রয়েছে (سَلَامٌ قَوْلًا مِنْ رَبٍّ رَحِيمٍ) আবার ফিরিশতাদের পক্ষ থেকেও হতে পারে। আবার ফিরিশতা কর্তৃক তাদের রবের পক্ষ থেকেও হতে পারে। [বাগভী] যেমন, অন্যত্র এরশাদ হয়েছে (وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِنْ كُلِّ بَابٍ ٭ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ) অর্থাৎ ফিরিশতাগণ প্রতিটি দরজা দিয়ে সালামুন আলাইকুম বলতে বলতে জান্নাতবাসীদের কাছে আসতে থাকবেন। [সূরা আর-রাদঃ ২৩–২৪]
আর এ দুটি বিষয়ে বিরোধ-বৈপরীত্ব নেই যে, কখনো সরাসরি স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে এবং কখনো ফিরিশতাদের পক্ষ থেকে সালাম আসবে। আবার জান্নাতীগণ পরস্পরকে এ সালামের মাধ্যমে সাদর সম্ভাষণ জানাবেন। [ফাতহুল কাদীর; সাদী] আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ (تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهُ سَلَامٌ) অর্থাৎ “যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের পরস্পর সম্ভাষণ হবে সালামের মাধ্যমে।” [সূরা আহযাবঃ ৪৪, অনুরূপ আয়াত আরো দেখুন, ওয়াকি'আঃ ২৫–২৬] অর্থাৎ সালাম শব্দটি তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে, ফিরিশতাদের পক্ষ থেকে এবং মুমিনগণ পরস্পর নিজেদের মধ্যে বিনিময় করবে। সালাম শব্দের আরেক অর্থ দোআ বা যাবতীয় আপদ থেকে নিরাপত্তা। তখন অর্থ হবে, জাহান্নামবাসীরা যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছে তা থেকে তোমাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করা হচ্ছে। [তাবারী]
(৩) জান্নাতবাসীদের তৃতীয় অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, জান্নাতবাসীদের সর্বশেষ দোআ হবে (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) অর্থাৎ জান্নাতবাসীরা জান্নাতে পৌছার পর আল্লাহ তা'আলাকে জানার ক্ষেত্রে বিপুল উন্নতি লাভ করবে। তখন তারা শুধু তার প্রশংসাই করতে থাকবে। জান্নাতবাসীদের প্রাথমিক দোআ হবে (سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ) আর সর্বশেষ দোআ হবে (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) এতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর বিশেষ কিছু গুণ-বৈশিষ্টের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। [বাগভী] যেমন, পরাক্রম ও মহত্ত্ব গুণ যাতে যাবতীয় দোষ-ত্রুটি হতে আল্লাহ তা'আলার পবিত্রতার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। আরো রয়েছে ‘সিফাতে করম’ যাতে তার মহানুভবতা, পরিপূর্ণতা ও পরাকাষ্ঠার উল্লেখ রয়েছে। কুরআনুল কারীমের (تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِي الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ) [সূরা আর-রাহমান: ৭৮]
আয়াতে এতদুভয় গুণ-বৈশিষ্টের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ আয়াত এবং এ জাতীয় অন্যান্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা সদা প্রশংসিত। সহীহ হাদীসে এসেছে, “জান্নাতবাসীগণকে তাসবীহ ও তাহমীদ যথা সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহর ইলহাম এমনভাবে করা হবে যেমনিভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ইলহাম করা হবে।” [মুসলিমঃ ২৮৩৫] এটা একথাই প্রমাণ করে যে, মহান আল্লাহ সদা প্রসংশিত। আমরা যদি কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের প্রতি তাকাই তাহলে দেখতে পাব যে, আল্লাহ নিজেকে বিভিন্নভাবে প্রশংসনীয় বলে ব্যক্ত করেছেন। সূরা আল-ফাতিহার তাফসীরে তার বর্ণনা চলে গেছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) সেখানে তাদের বাক্য হবে, ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা’ (হে আল্লাহ! তুমি মহান পবিত্র)![1] এবং পরস্পরের অভিবাদন হবে সালাম।[2] আর তাদের শেষ বাক্য হবে, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)।
[1] অর্থাৎ জান্নাতিগণ সর্বদা আল্লাহর প্রশংসা ও তসবীহ পাঠে রত থাকবে। যেমন হাদীসে এসেছে যে ‘‘জান্নাতিগণের মুখে এমনভাবে তসবীহ ও তাহমীদ স্বয়ংক্রিয় করা হবে, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস স্বয়ংক্রিয়।’’ (মুসলিম) অর্থাৎ, যেমন নিজের কোন ইচ্ছা ব্যতিরেকে যেরূপ শ্বাস-প্রশ্বাস চলতে থাকে, অনুরূপ জান্নাতীদের মুখে কোন ইচ্ছা ছাড়াই আল্লাহর হামদ ও তাসবীহর শব্দ আসতে থাকবে।
[2] অর্থাৎ তারা পরস্পরকে এই (আসসালামু আলাইকুম) বলে সালাম দেবে, ফিরিশতাগণও তাদেরকে সালাম দেবেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান