৯০. আল-বালাদ
৯০:১১ فَلَا اقۡتَحَمَ الۡعَقَبَۃَ ﴿۫ۖ۱۱﴾

তবে সে বন্ধুর গিরিপথটি অতিক্রম করতে সচেষ্ট হয়নি। আল-বায়ান

(মানুষকে এত গুণবৈশিষ্ট্য ও মেধা দেয়া সত্ত্বেও) সে (ধর্মের) দুর্গম গিরি পথে প্রবেশ করল না। তাইসিরুল

কিন্তু সে গিরিসংকটে প্রবেশ করলনা। মুজিবুর রহমান

But he has not broken through the difficult pass. Sahih International

১১. তবে সে তো বন্ধুর গিরিপথে(১) প্রবেশ করেনি।

(১) عَقَبَة বলা হয় পাহাড়ের বিরাট প্রস্তর খণ্ডকে এবং দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী গিরিপথকে। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

১১। কিন্তু সে গিরি সংকটে প্রবেশ করল না। [1]

[1] عقبة বলা হয় পাহাড়ের মাঝে মাঝে রাস্তা বা গিরিপথকে। সাধারণতঃ এ পথ বড় দুস্তর, দুরতিক্রম্য ও সংকটময় হয়। এটি মানুষের সেই শ্রম ও কষ্টকে স্পষ্ট করে বুঝাবার জন্য একটি উদাহরণ; যা নেক কাজ করার পথে শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং মনের কামনা-বাসনার বিরুদ্ধে করতে হয়। যেমন পাহাড়ের ঐ পথে চড়া অত্যন্ত কঠিন, তেমনি তার নেক কাজ করাও বড় সুকঠিন। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯০. আল-বালাদ
৯০:১২ وَ مَاۤ اَدۡرٰىكَ مَا الۡعَقَبَۃُ ﴿ؕ۱۲﴾

আর কিসে তোমাকে জানাবে, বন্ধুর গিরিপথটি কি? আল-বায়ান

তুমি কি জান দুর্গম গিরিপথ কী? তাইসিরুল

তুমি কি জান, গিরিসংকট কি? মুজিবুর রহমান

And what can make you know what is [breaking through] the difficult pass? Sahih International

১২. আর কিসে আপনাকে জানাবে—বন্ধুর গিরিপথ কী?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

১২। কিসে তোমাকে জানাল, গিরি সংকট কি?

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯০. আল-বালাদ
৯০:১৩ فَكُّ رَقَبَۃٍ ﴿ۙ۱۳﴾

তা হচ্ছে, দাস মুক্তকরণ। আল-বায়ান

(তা হচ্ছে) দাসমুক্তি। তাইসিরুল

এটা হচ্ছে দাসকে মুক্তি প্রদান। মুজিবুর রহমান

It is the freeing of a slave Sahih International

১৩. এটা হচ্ছেঃ দাসমুক্তি(১)

(১) এসব সৎকর্মের মধ্যে প্রথমে দাসমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এটা খুব বড় ইবাদত এবং একজন মানুষের জীবন সুসংহত করার নামান্তর। বিভিন্ন হাদীসে এর অনেক সওয়াবের উল্লেখ এসেছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে কেউ কোন দাসকে মুক্ত করবে সেটা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তিপণ হিসেবে বিবেচিত হবে”। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/১৪৭, ১৫০]

তাফসীরে জাকারিয়া

১৩। তা হচ্ছে ক্রীতদাসকে মুক্তি প্রদান।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯০. আল-বালাদ
৯০:১৪ اَوۡ اِطۡعٰمٌ فِیۡ یَوۡمٍ ذِیۡ مَسۡغَبَۃٍ ﴿ۙ۱۴﴾

অথবা খাদ্য দান করা দুর্ভিক্ষের দিনে। আল-বায়ান

অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্য দান তাইসিরুল

অথবা দুর্ভিক্ষের সময় আহার্য দান – মুজিবুর রহমান

Or feeding on a day of severe hunger Sahih International

১৪. অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্যদান(১)—

(১) দ্বিতীয় সৎকর্ম হচ্ছে ক্ষুধার্তকে অন্নদান। যে কাউকে অন্নদান করলে তা আরও বিরাট সওয়াবের কাজ হয়ে যায়। তাই বলা হয়েছে, বিশেষভাবে যদি আত্মীয় ইয়াতীমকে অন্নদান করা হয়, তবে তাতে দ্বিগুণ সওয়াব হয়। (এক) ক্ষুধার্তের ক্ষুধা দূর করার সওয়াব এবং (দুই) আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা ও তার হক আদায় করার সওয়াব। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন মুসলিম ক্ষুধার্তকে অন্নদান ক্ষমাকে অবশ্যম্ভাবী করে”। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৫২৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

১৪। অথবা ক্ষুধার দিনে অন্নদান।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯০. আল-বালাদ
৯০:১৫ یَّتِیۡمًا ذَا مَقۡرَبَۃٍ ﴿ۙ۱۵﴾

ইয়াতীম আত্মীয়-স্বজনকে। আল-বায়ান

নিকটাত্মীয় ইয়াতীমকে, তাইসিরুল

পিতৃহীন আত্মীয়কে, মুজিবুর রহমান

An orphan of near relationship Sahih International

১৫. ইয়াতীম আত্মীয়কে(১),

(১) এ ধরনের ইয়াতীমের হক সবচেয়ে বেশী। একদিকে সে ইয়াতীম, দ্বিতীয়ত সে তার নিকটাত্মীয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মিসকীনকে দান করা নিঃসন্দেহে একটি দান। কিন্তু আত্মীয়দের দান করা দুটি। দান ও আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/২১৪, তিরমিযী: ৬৫৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

১৫। পিতৃহীন আত্মীয়কে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯০. আল-বালাদ
৯০:১৬ اَوۡ مِسۡكِیۡنًا ذَا مَتۡرَبَۃٍ ﴿ؕ۱۶﴾

অথবা ধূলি-মলিন মিসকীনকে। আল-বায়ান

অথবা দারিদ্র-ক্লিষ্ট মিসকীনকে। তাইসিরুল

অথবা ধূলায় লুন্ঠিত দরিদ্রকে। মুজিবুর রহমান

Or a needy person in misery Sahih International

১৬. অথবা দারিদ্র-নিষ্পেষিত নিঃস্বকে,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

১৬। অথবা ধূলায় লুণ্ঠিত দরিদ্রকে। [1]

[1] يوم ذي مَسْغَبَة অর্থাৎঃ ক্ষুধার দিন। ذا متربة মাটি-মাখা বা ধূলায় লুণ্ঠিত। অর্থাৎ, যে দারিদ্রে্র কারণে মাটি বা ধূলার উপর পড়ে থাকে। তার নিজ ঘর-বাড়ি বলেও কিছু থাকে না। মোট কথা হল যে, কোন ক্রীতদাস স্বাধীন করা, কোন ক্ষুধার্ত আত্মীয় অনাথ কিংবা মিসকীনকে খাবার দান করা গিরিপথে চলার মত কঠিন কাজ। যার দ্বারা মানুষ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করতে পারে। অনাথের তত্ত্বাবধান করা এমনিতেই বিরাট পুণ্যের কাজ। কিন্তু যদি সে আত্মীয় হয়, তাহলে তার তত্ত্বাবধান করায় আছে দ্বিগুণ সওয়াব; এক সদকা করার সওয়াব এবং দুই আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ও তার হক আদায় করার সওয়াব। অনুরূপ ক্রীতদাস স্বাধীন করারও বড় ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আজকাল কোন ঋণী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করে দেওয়াও এক প্রকার ঐ শ্রেণীরই কাজ। অর্থাৎ, সে কাজও এক প্রকার فكّ رَقَبة ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৯০. আল-বালাদ
৯০:১৭ ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡمَرۡحَمَۃِ ﴿ؕ۱۷﴾

অতঃপর সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের, আর পরস্পরকে উপদেশ দেয় দয়া-অনুগ্রহের। আল-বায়ান

তদুপরি সে মু’মিনদের মধ্যে শামিল হয় আর পরস্পরকে ধৈর্য ধারণের ও দয়া প্রদর্শনের উপদেশ দেয়। তাইসিরুল

অতঃপর অন্তর্ভুক্ত হওয়া মু’মিনদের এবং তাদের যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারনের ও দয়া দাক্ষিণ্যের। মুজিবুর রহমান

And then being among those who believed and advised one another to patience and advised one another to compassion. Sahih International

১৭. তদুপরি সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দিয়েছে ধৈর্য ধারণের, আর পরস্পর উপদেশ দিয়েছে দয়া অনুগ্রহের(১);

(১) এ আয়াতে ঈমানের পর মুমিনের এই কর্তব্য ব্যক্ত করা হয়েছে যে, সে অপরাপর মুসলিম ভাইকে সবর ও অনুকম্পার উপদেশ দেবে। সবরের অর্থ নিজেকে মন্দ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখা ও সৎকর্ম সম্পাদন করা। مَرْحَمَة এর অর্থ অপরের প্রতি দয়াদ্র হওয়া। অপরের কষ্টকে নিজের কষ্ট মনে করে তাকে কষ্টদান ও যুলুম করা থেকে বিরত হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের উম্মতের মধ্যে এই রহম ও করুণাবৃত্তিটির মতো উন্নত নৈতিক বৃত্তিটিকেই সবচেয়ে বেশী প্রসারিত ও বিকশিত করতে চেয়েছেন। হাদীসে এসেছে, “যে মানুষের প্রতি রহমত করে না। আল্লাহ তার প্রতি রহমত করেন না”। [বুখারী: ৭৩৭৬, মুসলিম: ৩১৯, মুসনাদে আহমাদ: ৪/৫৬২] অন্য হাদীসে এসেছে, “যে আমাদের ছোটদের রহমত করে না এবং বড়দের সম্মান পাওয়ার অধিকারের প্রতি খেয়াল রাখে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়”। [আবু দাউদ: ৪৯৪৩, তিরমিযী: ১৯২০] আরও বলা হয়েছে, “যারা রহমতের অধিকারী (দয়া করে) তাদেরকে রহমান রহমত করেন, তোমরা যমীনের অধিবাসীদের প্রতি রহমত কর তবে আসমানের উপর যিনি আছেন (আল্লাহ)। তিনিও তোমাদেরকে রহমত করবেন।” [আবু দাউদ: ৪৯৪১, তিরমিযী: ১৯২৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

১৭। তদুপরি অন্তর্ভুক্ত হওয়া তাদের যারা ঈমান আনে[1] এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের ও দয়া দাক্ষিণ্যের।[2]

[1] এ থেকে জানা গেল যে, উল্লিখিত সৎকর্ম তখনই উপকারী ও পরকালের সুখের কারণ হবে, যখন তার কর্তা ঈমানদার হবে।

[2] ঈমানদারদের একটা গুণ এই যে, তারা একে-অপরকে ধৈর্য ও দয়া-দাক্ষিণ্যের উপদেশ দেয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে