৫৭০৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭০৬-[৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মূসা আলায়হিস সালাম ছিলেন খুবই লাজুক স্বভাবের লোক। সব সময় শরীর ঢেকে রাখতেন। লজ্জাশীলতার কারণে তাঁর দেহের কোন অংশ কখনো খোলা দেখা যেত না। বানী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের একদল লোক (এ ব্যাপারে) তাঁকে মারাত্মক কষ্ট দিল। তারা (অভিযোগ এনে) বলল, তিনি যে শরীর ঢেকে রাখতে এত বেশি তৎপর, এর একমাত্র কারণ হলো, তার দেহে নিশ্চয় কোন দোষ আছে। হয়তো শ্বেত (কুষ্ঠ) রোগ রয়েছে কিংবা অণ্ডকোষে একশিরা আছে। মহান আল্লাহ তা’আলা নির্দোষিতা প্রকাশ করার ইচ্ছা করলেন। অতএব একদিন গোসল করার জন্য মূসা আলায়হিস সালাম একা এক নির্জন স্থানে গেলেন এবং পরনের কাপড় খুলে একটি পাথরের উপর রাখলেন এবং অমনি তার কাপড়সহ পাথরটি ছুটে চলল। সাথে সাথেই মূসা আলায়হিস সালাম পাথরটিকে ধাওয়া করলেন; আর চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন, হে পাথর! আমার কাপড়! হে পাথর, আমার কাপড়! শেষ পর্যন্ত পাথরটি বানী ইসরাঈলের এক বৈঠকে এসে পৌছল। ফলে তারা মূসা আলায়হিস সালাম -কে পোষাকহীন অবস্থায় দেখে ফেলল। তারা দেখতে পেল, মূসা আলায়হিস সালাম -এর শরীর আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক সৌন্দর্যপূর্ণ এবং সকলে এক বাক্যে বলে উঠল- আল্লাহর শপথ! মূসা আলায়হিস সালাম -এর শরীরে কোন প্রকারের দোষ নেই। এবার তিনি কাপড়টি নিয়ে পরিধান করলেন এবং (হাতের লাঠি দ্বারা) পাথরকে খুব জোরে মারতে লাগলেন। আল্লাহর শপথ! এতে পাথরের গায়ে তিন, চার কিংবা পাঁচটি আঘাতের দাগ পড়ে গেল। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مُوسَى كَانَ رَجُلًا حَيِيًّا سِتِّيرًا لَا يُرَى مِنْ جِلْدِهِ شَيْءٌ اسْتِحْيَاءً فَآذَاهُ مَنْ آذَاهُ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ فَقَالُوا: مَا تَسَتَّرَ هَذَا التَّسَتُّرَ إِلَّا مِنْ عَيْبٍ بِجِلْدِهِ: إِمَّا بَرَصٌ أَوْ أُدْرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ أَرَادَ أَنْ يُبَرِّئَهُ فَخَلَا يَوْمًا وَحده ليغتسل فَوَضَعَ ثَوْبَهُ عَلَى حَجَرٍ فَفَرَّ الْحَجَرُ بِثَوْبِهِ فَجمع مُوسَى فِي إِثْرِهِ يَقُولُ: ثَوْبِي يَا حَجَرُ ثَوْبِي يَا حَجَرُ حَتَّى انْتَهَى إِلَى مَلَأٍ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ فَرَأَوْهُ عُرْيَانًا أَحْسَنَ مَا خَلَقَ اللَّهُ وَقَالُوا: وَاللَّهِ مَا بِمُوسَى مِنْ بَأْسٍ وَأَخْذَ ثَوْبَهُ وَطَفِقَ بِالْحَجَرِ ضَرْبًا فَوَاللَّهِ إِنَّ بِالْحَجَرِ لَنَدَبًا مِنْ أَثَرِ ضَرْبِهِ ثَلَاثًا أَو أَرْبعا أَو خمْسا . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3404) و مسلم (156 / 2371)، (6147) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان موسى كان رجلا حييا ستيرا لا يرى من جلده شيء استحياء فاذاه من اذاه من بني اسراىيل فقالوا: ما تستر هذا التستر الا من عيب بجلده: اما برص او ادرة وان الله اراد ان يبرىه فخلا يوما وحده ليغتسل فوضع ثوبه على حجر ففر الحجر بثوبه فجمع موسى في اثره يقول: ثوبي يا حجر ثوبي يا حجر حتى انتهى الى ملا من بني اسراىيل فراوه عريانا احسن ما خلق الله وقالوا: والله ما بموسى من باس واخذ ثوبه وطفق بالحجر ضربا فوالله ان بالحجر لندبا من اثر ضربه ثلاثا او اربعا او خمسا . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3404) و مسلم (156 / 2371)، (6147) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: حَيِيًّا(حَيِيًّا سِتِّيرً) - শব্দের প্রথম (ي) যের বিশিষ্ট এবং তাশদীদমুক্ত এবং দ্বিতীয় (ي) তাশদীদযুক্ত। যার অর্থ: অধিক লজ্জাশীল। (سِتِّيرً) শব্দের (س) অক্ষরে যবর এবং (ت) বর্ণে তাশদীদযুক্ত যের। যার অর্থ পর্দায় ঢাকা। শব্দ দুটিই মুবালাগার সিগাহ যা আধিক্য বুঝায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(فَآذَاهُ مَنْ آذَاهُ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ) অর্থাৎ বানী ইসরাঈলের অনেকে তাকে কথার মাধ্যমে কষ্ট দিতো। অধিক লজ্জাশীল হওয়া, শরীরকে ঢেকে রাখার প্রতি অধিক মনোযোগ দেয়া, তাদের মতো সর্বত্র খোলামেলা চলাফেরা না করাকে তারা খারাপ দৃষ্টিতে দেখত। তারা মনে করত তিনি তাঁর আভ্যন্তরীণ দোষ ঢাকার জন্যই সবার মতো চলেন না, সবার সাথে খোলামেলা গোসল করেন না। তারা মনে করত মূসার শরীরে হয় কুষ্ঠব্যাধি রয়েছে অথবা তার অণ্ডকোষে একশিরা রোগ রয়েছে। এসব ঢেকে রাখার জন্যই তিনি কারো সামনে শরীর উন্মুক্ত না এবং সবার সাথে গোসল করেন না। কিন্তু মূসা আলায়হিস সালাম লজ্জা ও পর্দার অবস্থা এই যে, নিজেকে দোষমুক্ত বা অপবাদ মুক্ত করার জন্য শরীর উন্মুক্ত করতেন না। কারণ অপবাদ সহ্য করার চেয়ে কারো সামনে বেপর্দা হয়ে গোসল করাই তার কাছে অধিক লজ্জাজনক ছিল। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা ছিল তার প্রিয় নবী কে অপবাদমুক্ত করা। যার কারণে আল্লাহ তা'আলা এ ঘটনা ঘটান। কুরআনে আল্লাহ তা'আলা এই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন -
(یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ اٰذَوۡا مُوۡسٰی فَبَرَّاَهُ اللّٰهُ مِمَّا قَالُوۡا ؕ وَ کَانَ عِنۡدَ اللّٰهِ وَجِیۡهًا) “হে মুমিনগণ! মূসাকে যারা কষ্ট দিয়েছে, তোমরা তাদের মতো হয়ো না। তারা যা বলেছিল, আল্লাহ তা থেকে তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করেছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে ছিলেন মর্যাদাবান।”
(সূরাহ্ আল আহযাব ৩৩ : ৬৯)

ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে মূসা আলায়হিস সালাম -এর স্পষ্ট দু'টি মু'জিযাহ্ বা অলৌকিক নিদর্শন রয়েছে -
[এক] পাথর তার কাপড় নিয়ে বানী ইসরাঈলের সমাবেশের দিকে হাঁটতে শুরু করা।
[দুই] মূসা আলায়হিস সালাম -এর লাঠির আঘাতে পাথরে দাগ বসে যাওয়া। হাদীস থেকে এও প্রমাণিত হয় যে, জড় পদার্থের মধ্যেও অনুধাবন ক্ষমতা রয়েছে। হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, নির্জন অবস্থায় উলঙ্গ হয়ে গোসল বৈধ, যদিও উত্তম হচ্ছে লজ্জাস্থান ঢেকে গোসল করা। এটাই ইমাম শাফি'ঈ, মালিক ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘আলিমদের অভিমত।
হাদীসে আরো জানা যায়, মূর্খ ও নির্বোধদের পক্ষ থেকে অশালীন আচরণের কারণে নবীদের কষ্ট ও এর উপর তাদের ধৈর্য করার বিষয়টিও অত্র হাদীস থেকে জানা যায়। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) ও অন্যরা বলেন, নবীগণ সৃষ্টি, চারিত্রিক ও শারীরিক দোষ-ত্রুটি থেকে নিরাপদ। তারা বলেন, ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় কোন কোন নবীর ব্যাপারে এমন কিছু শারীরিক ত্রুটির বিবরণ যা তাদের প্রতি মানুষের ঘৃণার সৃষ্টি করে, এসব বিবরণের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। (ইমাম নবাবীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ, ২/১৮৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)