৫৭০৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭০৫-[৮] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ইবরাহীম আলায়হিস সালাম অপেক্ষা আমরা সন্দেহ পোষণ করার অধিক হকদার। যখন তিনি বলেছিলেন, হে আমার প্রভু! আপনি কিরূপ মৃতকে জীবিত করবেন তা আমাকে দেখিয়ে দিন। আল্লাহ তা’আলা লূত আলায়হিস সালাম -এর ওপর দয়া করুন! (আল্লাহর দীন প্রচারে অসহায়তার দরুন) তিনি একটি দৃঢ় খুঁটির (ব্যক্তি বা দলের) আশ্রয় পেতে চেয়েছিলেন। আর ইউসুফ আলায়হিস সালাম যত দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলেন, এত দীর্ঘ সময় আমিও যদি কারাগারে থাকতাম, তাহলে তখনই আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিতাম। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَحْنُ أَحَقُّ بِالشَّكِّ مِنْ إِبْرَاهِيمَ إِذْ قَالَ: (رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تحيي الْمَوْتَى) وَيَرْحَمُ اللَّهُ لُوطًا لَقَدْ كَانَ يَأْوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ وَلَوْ لَبِثْتُ فِي السِّجْنِ طُولَ مَا لَبِثَ يُوسُفُ لَأَجَبْتُ الدَّاعِيَ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3372) و مسلم (152 / 151)، (382) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: نحن احق بالشك من ابراهيم اذ قال: (رب ارني كيف تحيي الموتى) ويرحم الله لوطا لقد كان ياوي الى ركن شديد ولو لبثت في السجن طول ما لبث يوسف لاجبت الداعي . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3372) و مسلم (152 / 151)، (382) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (نَحْنُ أَحَقُّ بِالشَّكِّ مِنْ إِبْرَاهِيمَ) ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “উলামায়ে কিরাম এই বাক্যের কয়েকটি অর্থ বলেছেন। তন্মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও বিশুদ্ধ উক্তি যা ইমাম আবূ ইবরাহীম আল মুযানী এবং একদল ‘আলিম উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, বাক্যটির অর্থ হলো, ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর জন্য এমন সন্দেহ করা অসম্ভব। কেননা মৃতকে জীবিত করার সন্দেহ যদি নবীদের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে তবে এই সন্দেহ ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর চেয়ে আমার মাঝে প্রবেশ অধিক যথাযথ। অথচ তোমরা জানো আমি সন্দেহ করি না। অতএব এও জেনে রাখ যে, ইবরাহীম আলায়হিস সালাম সন্দেহ করেননি। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখের কারণ হলো, আয়াত থেকে কারো মনে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর প্রতি মন্দ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে এবং আল্লাহর তা'আলার কুদরতের উপর তার দৃঢ় বিশ্বাস সম্পর্কে সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে। আবার রাসূলুল্লাহ (সা.) , ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে তাঁর নিজের ওপর অগ্রাধিকার দেয়ার কারণ বিনয় ও শিষ্টাচারের প্রকাশ। অথবা তিনি আদম সন্তানদের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ এই ওয়াহী আসার আগে হয়তো তিনি এমন বলেছেন।
তাহরীর কিতাবের লেখক বলেন, যখন আল্লাহ তা'আলার বাণী: (... اَوَ لَمۡ تُؤۡمِنۡ....) ..তুমি কি বিশ্বাস করো না...”- (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২৬০); নাযিল হলো; একদল বলে উঠল ইবরাহীম আলায়হিস সালাম সন্দেহ করেছেন, অথচ আমাদের নবী (সা.) সন্দেহ করেননি। তখন নবী (সা.) বলেন, “সন্দেহের বেলায় আমি অধিক উপযুক্ত।” তারপর তিনি (সা.) উপরের আলোচনা করেন। তিনি (সা.) আরো বলেন, আমার কাছে এই বাক্যের দু’টি অর্থ রয়েছে বলে মনে হয়:

[এক] এটা কথার স্বাভাবিক রীতির আলোকে বের হয়েছে। কেননা মানুষ যখন কোন মানুষের ওপর থেকে বদনাম প্রতিহত করতে চায় তখন সে বলে, তাকে যেটা বলছ বা তার সাথে যেটা করছ আমাকে বলো বা আমার সাথে করো। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় লোকটির সাথে এমন আচরণ করতে বারণ করা। অর্থাৎ তার বেলায় এমন বলো না বা এমন করো না।
[দুই] এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা যেটাকে সন্দেহ বলে ভাবছ এটার আমি অধিক উপযুক্ত; কেননা এটা সন্দেহই নয়। এর দ্বারা কেবল অধিক দৃঢ়তা সৃষ্টি উদ্দেশ্য। (ইমাম নবাবীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ, অধ্যায়: ঈমান, ২/১৮৩)

(إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ) ‘রুকনে শাদীদ' বা দৃঢ় আশ্রয়স্থল হলেন আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা; কেননা তিনি সবচেয়ে দৃঢ় ও শক্তিশালী প্রতিরোধকারী আশ্রয়স্থল। হাদীসের মর্ম হলো, লুত্ব 'আলায়হিস সালাম যখন তার মেহমানের ব্যাপারে ভয় করলেন এবং যালিমদের থেকে তাদের রক্ষা করার মতো তার কোন গোষ্ঠী ছিল না, তাই তিনি অক্ষম হলেন এবং তার চিন্তা চরমে পৌছল, তখন তিনি এই চরম পরিস্থিতির শিকার হয়ে বলেন, যদি আমার নিজের শক্তি থাকত তাদের প্রতিহত করার অথবা যদি আমি আমার গোষ্ঠীর আশ্রয় নিতে পারতাম, তবে তোমাদেরকে বারণ করতাম। লূত আলায়হিস সালাম এটা বলে মেহমানের কাছে তার ওযর প্রকাশের ইচ্ছা করেছেন। অর্থাৎ তিনি যদি যে কোনভাবে তাদের থেকে এই অপছন্দনীয় কাজ প্রতিহত করতে পারতেন তবে তাদের সম্মান ও বিপদ প্রতিহতে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা ব্যয় করতেন এবং তাদেরকে রক্ষা করতেন। এখানে আল্লাহ তা'আলার ওপর ভরসা থেকে বিমুখ হওয়ার কিছু নেই। (ইমাম নবাবীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ, অধ্যায়: ঈমান, ২/১৮৩)
(...وَلَوْ لَبِثْتُ فِي السِّجْنِ طُولَ) এখানে নবী (সা.) ইউসুফ আলায়হিস সালাম -এর প্রশংসা এবং তাঁর ধৈর্য সহনশীলতার বর্ণনা দিচ্ছেন। এখানে দাঈ বা আহ্বানকারী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বাদশার দূত যার কথা আল্লাহ তুলে ধরছেন, “বাদশাহ বলল, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। যখন দূত তার কাছে এলে তিনি বললেন, ফিরে যাও তোমাদের প্রভুর কাছে এবং তাকে জিজ্ঞেস করো ঐ মহিলাদের স্বরূপ কী, যারা স্বীয় হস্ত কর্তন করেছিল।” (সূরা ইউসুফ ১২ : ৫০)
ইউসুফ আলায়হিস সালাম এই দূতের ডাকে সাড়া দিয়ে জেলের দীর্ঘ জীবন থেকে পরিত্রাণের জন্য দ্রুত বের হননি বরং অবিচল থেকেছেন, দৃঢ় থেকেছেন। বাদশার কাছে তার জেলে যাওয়ার কারণটি উদঘাটনের নিবেদন করেছেন; যাতে তিনি বাদশাহ ও অন্যদের কাছে নির্দোষ প্রমাণিত হন। তাই নবী (সা.) এটা বলে ইউসুফ আলায়হিস সালাম -এর মর্যাদা ও দৃঢ় মনোবল বর্ণনা করেছেন। ইউসুফ আলায়হিস সালাম -এর মর্যাদা বর্ণনার সাথে তিনি নিজের ব্যাপারে যা বলেছেন তা বিনয় প্রকাশ এবং ইউসুফ আলায়হিস সালাম -এর মর্যাদা অধিক প্রকাশের স্বার্থে।
 (ইমাম নাবাবীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ, অধ্যায়: ঈমান, ২/১৮৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)