পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৭৯০-[৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, যদি কিছু সংখ্যক মু’মিন আমার সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে না পারার ফলে তাদের মন দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং আমিও তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বাহন সরবরাহ করতে পারছি না। যদি এরূপ সংকটাপন্ন না দেখা দিত, তবে আমি আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে প্রেরিত প্রতিটি সেনাবাহিনীর সাথে অবশ্য গমন করতাম, কোনোটি হতে পিছনে থাকতাম না। যার হাতে আমার প্রাণ, সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় বস্তু হলো- আমি আল্লাহর পথে শহীদ হই, অতঃপর আমাকে পুনরায় জীবিত করা হলে আমি আবার যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে যাই, এবং পুনরায় আমাকে জীবিত করা হোক এবং আবার যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হই, আবার জীবিত করা হোক, আবার শহীদ হই, পুনরায় জীবিত করা হোক, পুনরায় শহীদ হই। (বুখারী, মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْلَا أَنَّ رِجَالًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ لَا تَطِيبُ أَنْفُسُهُمْ أَنْ يَتَخَلَّفُوا عَنِّي وَلَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُهُمْ عَلَيْهِ مَا تَخَلَّفْتُ عَنْ سَرِيَّةٍ تَغْزُو فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ أنْ أُقتَلَ فِي سَبِيل الله ثمَّ أُحْيى ثمَّ أُقتَلُ ثمَّ أُحْيى ثمَّ أُقتَلُ ثمَّ أُحْيى ثمَّ أقتل»
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটিতে জিহাদে অংশগ্রহণ করা এবং আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত বরণ করার ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ হাদীসটিতে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছেন এবং শাহাদাত লাভে ধন্য হওয়ার জন্য কামনা পোষণ করেছেন।
আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: ‘‘মু’মিনদের মধ্যে একদল লোক আমার কাছ থেকে (যুদ্ধ যেতে না পেরে সে) অনুপস্থিত থাকার কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবে, আর আমিও এমন (অধিক) বাহন পাচ্ছি না, যাতে তাদের আরোহণ করাবো- অবস্থা যদি এমন না হত, তাহলে আমি কোনো একটি সারিয়া থেকেও অনুপস্থিত থাকতাম না যেটি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে’’ এ বাক্যে মু’মিনদের কিছু লোক বলতে দরিদ্র লোকেদের বুঝানো হয়েছে, যারা অর্থের অভাবে সওয়ারী বা বাহন সংগ্রহ করতে না পারার কারণে জিহাদের ময়দান থেকে অনুপস্থিত থাকে। সারিয়া হচ্ছে অল্পসংখ্যক সৈন্যের ছো্ট বাহিনী। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৩২৫)
সওয়ারী এবং সফরের অন্যান্য পাথেয় না থাকায় তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে অক্ষম ছিল। এদিকে সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে আল্লাহর নাবীও তাদেরকে বাহন দিতে সক্ষম ছিলেন না। হুমাম-এর বর্ণনায় স্পষ্ট ভাষায় রয়েছে, ‘‘কিন্তু আমার প্রশস্ততা বা সামর্থ্যও নেই যে, তাদেরকে সওয়ারী দিব। আর তাদেরও সামর্থ্য নেই যে, তারা আমার অনুসরণ করে পিছু পিছু আসবে। আর আমার (যুদ্ধে চলে যাওয়ার) পর তাদের মানসিক অবস্থাও ভালো থাকবে না।’’ (ফাত-ল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৭৯৭)
অত্র হাদীসে ‘‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, আবার জীবিত হই, আবার নিহত হই’’ এ কথাটি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বলেছেন। আর শেষবার শুধু বলেছেন ‘‘নিহত হই’’, কিন্তু এরপর ‘‘আবার জীবিত হই’’ কথাটির পুনরাবৃত্তি করেননি। এখান থেকে শাহাদাত বরণের গুরুত্ব ও এর মর্যাদার প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম নববী বলেনঃ এ হাদীসে সুন্দর নিয়্যাতের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, এ হাদীসে আরো রয়েছে উম্মাতের প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দয়া ও সহানুভূতির বর্ণনা। এ হাদীস অনুসারে আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত কামনা মুস্তাহাব এবং এ কথা বলা জায়িয যে, আমি অমুক কল্যাণ লাভের আশা পোষণ করি বা আকাঙ্ক্ষা করি- যদিও জানা থাকে যে, তা অর্জন অসম্ভব। এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, কখনো কখনো কতিপয় কল্যাণকর কাজ পরিহার করতে হয় অধিক প্রাধান্যযোগ্য কল্যাণকর কাজের জন্য, অথবা কোনো ক্ষতিকে প্রতিহত করার জন্য। সাধারণত যা অর্জন করা বা লাভ করা সম্ভব নয়, এমন জিনিসের আশা-আকাঙ্ক্ষা করাও উক্ত হাদীস অনুসারে জায়িয। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৭৯৭)