৩৭৮৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৭৮৯-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার পথে বের হয় তথা দায়িত্বগ্রহণ করে, এই মুজাহিদ আমার ও আমার রসূলের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাসের সত্যতা স্বীকারের তাকীদেই স্বীয় ঘর হতে আমার পথে বের হয়েছে, তাকে আমি অবশ্যই পরিপূর্ণ সাওয়াব দান করবো অথবা গনীমাতের মালসহ ঘরে ফিরিয়ে আনবো অথবা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাব। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «انْتَدَبَ اللَّهُ لِمَنْ خَرَجَ فِي سَبِيلِهِ لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا إِيمَانٌ بِي وَتَصْدِيقٌ بِرُسُلِي أَنْ أَرْجِعَهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ وَغَنِيمَةٍ أَوْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ»

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انتدب الله لمن خرج في سبيله لا يخرجه الا ايمان بي وتصديق برسلي ان ارجعه بما نال من اجر وغنيمة او ادخله الجنة

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে ঈমান ও ইখলাসের সাথে জিহাদের উদ্দেশে বের হওয়ার ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যার ভাবার্থ হচ্ছে- যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর প্রতি ঈমান ও রসূলের রিসালাতকে সত্যায়ন করা অবস্থায় জিহাদের উদ্দেশে বের হবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাহাদাতের মর্যাদা প্রদানপূর্বক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, অথবা নেকী ও গনীমাতের সম্পদ সহকারে তাকে নিজ আবাসস্থলে ফিরিয়ে দিবেন।

(انْتَدَبَ اللهُ لِمَنْ خَرَجَ فِي سَبِيلِه) এ বাক্যে ‘ইন্তাদাবাল্লাহু’ অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা জিম্মাদারী বা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, ডাকে সাড়া দিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশে বের হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য (তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর কিংবা নেকী ও গনীমাতের সম্পদ সহকারে বাড়ি ফিরিয়ে দেয়ার) দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

(لَا يُخْرِجُه إِلَّا إِيمَانٌ بِي وَتَصْدِيقٌ بِرُسُلِي) অর্থাৎ- আমার প্রতি ঈমান এবং আমার রসূলগণের বিশ্বাস ছাড়া অন্য কিছু তাকে (জিহাদের উদ্দেশে) বের করেনি। এ বাক্যে ‘রসূল’ শব্দের বহুবচন তথা ‘রুসুল’ শব্দ ব্যবহার করার কারণ দু’টি হতে পারে। (ক) এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, রসূলগণের মধ্যে কোনো একজনের প্রতি বিশ্বাস করা সকলের প্রতি বিশ্বাস করার শামিল। (খ) অথবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মানার্থে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে (‘আরবী ভাষার রীতি অনুসারে কোনো একক ব্যক্তির সম্মানার্থে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে), কেননা তিনি সকল নাবী রসূলদের স্থলাভিষিক্ত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(أَنْ أُرْجِعَه بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيمَةٍ أَوْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ) অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা মুজাহিদের জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যে, তাকে অর্জিত নেকী কিংবা গনীমাত সহকারে ফিরিয়ে দিবেন, অথবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। জিহাদের জন্য বহির্গমনকারীর জন্য আল্লাহ তা‘আলা এ জিম্মাদারী গ্রহণ করেছেন যে, সে সকল অবস্থায় কল্যাণ হাসিল করবে। এ ক্ষেত্রে সে নিম্নোক্ত তিনটি অবস্থার কোনো এক অবস্থায় কল্যাণপ্রাপ্ত হবে। সেগুলো হলো:

১. হয় সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভে ধন্য হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে।

২. অথবা আল্লাহর কাছ থেকে সাওয়াব বা নেকী হাসিল করে প্রত্যাবর্তন করবে।

৩. কিংবা সাওয়াব হাসিলের পাশাপাশি গনীমাতের সম্পদসহ ফিরে আসবে।

(শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৮৭৬)

‘‘আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’’ এ কথার দু’টি অর্থ হতে পারে।

১. নিহত হওয়ার চিহ্ন বা নিদর্শন সহকারে তাকে (সরাসরি) জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর এ মর্যাদা শহীদদের জন্য বিশেষিত, যেমনিভাবে শাহাদাত বরণের পর রিযকপ্রাপ্ত হওয়া তাদের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ অর্থাৎ- ‘‘আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না, বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযক দেয়া হয়’’। (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৬৯)

২. পুনরুত্থানের পর আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর এক্ষেত্রে খাস করে শহীদদের জান্নাতে প্রবেশ করানোর কথা বলার কারণ হচ্ছে তার শাহাদাত বরণ করাই তার সকল গুনাহের কাফ্ফারা-যদিও গুনাহের পরিমাণ অধিক হয়- তবে সেই গুনাহ ব্যতীত, যা দলীল দ্বারা সাব্যস্ত। আর তার যে জিহাদের জন্য বের হয়ে আর ফিরে আসলো না; বরং শাহাদাত বরণ করল, তার অর্জিত নেকীর সাথে তার কৃত পাপের তুলনাই চলে না। আবূ কাতাদাহ কর্তৃক বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীসটি উল্লেখিত ব্যাখ্যাটি সমর্থন করে।

قال جاء رجل إلى رسول الله ﷺ فقال : يا رسول الله أرأيت إن قتلت في سبيل الله صابرا محتسبا مقبلا غير مدبر أيكفر الله عني خطاياي قال رسول الله ﷺ نعم فلما ولى الرجل ناداه رسول الله ﷺ أو أمر به فنودي له فقال رسول الله ﷺ كيف قلت فأعاد عليه قوله فقال رسول الله ﷺ نعم إلا الدين كذلك قال لي جبريل عليه السلام

অর্থাৎ- আবূ কাতাদাহ বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনার মতামত কি? আমি ধৈর্যধারণ করে, সাওয়াবের আশায়, সম্মুখগামী হয়ে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, তাহলে আল্লাহ কি আমার গুনাহসমূহ মিটিয়ে দিবেন? আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হ্যাঁ’’। লোকটি যখন চলে গেল আল্লাহর রসূল তাকে ডাকলেন, অথবা ডেকে আনতে কাউকে আদেশ দিলেন, অতঃপর ডেকে আনা হলো। তখন তিনি বললেন, তুমি কিভাবে (কথাটি) বলেছিলে? লোকটি আবার তার কথা পুনরাবৃত্তি করল। তখন আল্লাহর রসূল বললেনঃ ‘‘হ্যাঁ (অর্থাৎ তা সকল গুনাহের কাফফারা হবে), তবে ঋণ ব্যতীত। জিবরীল (আঃ) আমাকে এমনটিই বললেন’’- (নাসায়ী, হাঃ ৩১৫৬, আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ)। (মুনতাকাল আখবার হাঃ ১০১০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)