লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা
৩৯৭৩-[১৪] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে বললেন, আপনার সাহাবীগণকে (বদরের বন্দীদের ব্যাপারে) এ অধিকার দিয়ে দিন, তারা ইচ্ছা করলে বন্দীদেরকে হত্যা করতে পারবে, আর যদি মুক্তিপণ স্বরূপ ধন-সম্পদের বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দিতে চায়, তাও পারবে। কিন্তু মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিলে, আগামীতে কাফিরদের সমপরিমাণ (৭০ জন) নিজেদের মধ্য হতে শহীদ হবে। অতঃপর সাহাবীগণ বললেন, মুক্তিপণ আমরা গ্রহণ করলাম এবং আমাদের মধ্য হতে (আগামীতে সমপরিমাণ) শহীদ হবে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّ جِبْرِيلَ هَبَطَ عَلَيْهِ فَقَالَ لَهُ: خَيِّرْهُمْ يَعْنِي أَصْحَابَكَ فِي أُسارى بدر: القتلَ والفداءَ عَلَى أَنْ يُقْتَلَ مِنْهُمْ قَابِلًا مِثْلُهُمْ قَالُوا الْفِدَاءَ وَيُقْتَلَ مِنَّا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث غَرِيب
ব্যাখ্যা: (اَلْقَتْلَ وَالْفِدَاء) অর্থাৎ- তোমরা বন্দীদেরকে হত্যাও করতে পার অথবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়েও দিতে পার। অর্থাৎ (قَابِلًا) অর্থাৎ- আগত আগামী বছরে আর আগামী বছর বলতে যে বছরে উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। (مِثْلُهُمْ) অর্থাৎ- কাফিরদের থেকে যে সংখ্যা মুক্তি দেয়া হবে, তত সংখ্যায় আগামী যুদ্ধে মুসলিমদের মধ্য হতে শহীদ হবে আর পূর্বে বদর যুদ্ধে কাফিরদের সত্তরজনকে হত্যা এবং সত্তরজনকে বন্দী করা হয়েছিল।
(وَيُقْتَلَ مِنَّا) অর্থাৎ- আগামী বছর আমাদের থেকে তাদের অনুরূপ হত্যা করা হবে। অর্থাৎ- আমাদের পছন্দ হলো- তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করা, আর আমাদের মধ্য হতে কতক নিহত (শহীদ) হওয়া। অতঃপর মুসলিমরা বদরের দিন কাফিরদের থেকে যতজনকে মুক্তি দিয়েছিল উহুদের দিন মুসলিমদের থেকে সে পরিমাণ হত্যা করা হয়। আর বদরের দিন কাফিরদের সত্তরজনকে হত্যা করা হয় এবং সত্তরজনকে বন্দী করা হয়।
মুসলিম এবং তিরমিযী ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ‘উমার থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা বদরের দিন যখন বন্দীদেরকে বন্দী করল, তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর ও ‘উমার -কে বললেন, ‘‘তোমরা এ সকল বন্দীদের ব্যাপারে কী অভিমত পেশ কর?’’ তখন আবূ বাকর বললেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এরা চাচাতো ভাই এবং নিকটত্মীয়! আমি তাদের থেকে আপনার কর্তৃক মুক্তিপণ গ্রহণের বিষয়টি ভাবছি, ফলে তা কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষে শক্তি স্বরূপ হবে। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিবেন, এ আশা করা যায়। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খত্ত্বাব-এর ছেলে! আপনি কী ভাবছেন? আমি বললাম, না, আল্লাহর শপথ! হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আবূ বাকর যা ভেবেছে আমি তা ভাবিনি। তবে আপনি আমাদেরকে সুযোগ দিবেন, এ কথা ভাবছি যাতে তাদের গর্দান উড়িয়ে দিতে পারি। কেননা এরা কুফরীর মূল নেতা। অতঃপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর যা বলেছেন তা ইচ্ছা করলেন, আমি যা বলেছি তা ইচ্ছা করেননি। এদের হত্যা করা হলে কুফ্র নির্মূল হবে। যখন পরবর্তী দিন আসলো তখন আমি দেখলাম আবূ বাকর এবং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে কাঁদছেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে সংবাদ দিন কোন্ জিনিসের কারণে আপনি এবং আপনার সাথী কাঁদছেন? তখন উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি ঐ জন্য কাঁদছি যা তোমার সাথীবর্গের সম্মুখীন হয়েছে বন্দীদের থেকে তারা মুক্তিপণ গ্রহণ করার কারণে। তারা ঐ বৃক্ষটি অপেক্ষা অতি নিকটে তাদের শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আয়াতটির শেষ পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন।
বায়যাভী বলেনঃ আয়াতটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহনকারী যে, নাবীগণ মুজতাহিদ, কখনো তাদের ভুল হয়ে থাকে তবে ভুলের উপর তারা স্থির থাকেন না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ‘‘আল্লাহর তরফ থেকে যদি কোনো সিদ্ধান্ত গত না হতো’’- (সূরা আল আনফাল ৮ : ৬৮), অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে যদি লাওহে মাহফূযে কোনো সিদ্ধান্তের প্রমাণ গত না হতো, আর তা হলো ইজতিহাদের ক্ষেত্রে ভুলকারীকে শাস্তি না দেয়া, অথবা বদরের যোদ্ধাদেরকে শাস্তি না দেয়া, অথবা এমন সম্প্রদায়কে যাদের নিকটে এ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, অথবা যে মুক্তিপণ তারা গ্রহণ করেছে তা অচিরেই তাদের জন্য হালাল হয়ে যাবে। আয়াতে ব্যবহৃত لَمَسَّكُمْ অর্থ- তোমরা যে মুক্তিপণ গ্রহণ করেছ সে কারণে তোমাদেরকে মহাশাস্তি গ্রাস করত। আয়াত ও হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধনে এ বলাও সম্ভব যে, প্রথমত বন্দীদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করার ঐচ্ছিকতা সাধারণভাবে স্বীকৃত ছিল। অতঃপর পরবর্তীতে তা শর্তসাপেক্ষে ঐচ্ছিকতায় পরিণত হয়। [আল্লাহ সর্বজ্ঞাত] (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৬৭)