লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লি‘আন
৩৩১৬-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন লি’আন সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলো, তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যে মহিলা জারজ সন্তান প্রসব করে তাকে স্বামীর বা মালিকের বলে অন্য গোত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়, অথচ সে ঐ বংশোদ্ভূত নয়, দীনের মধ্যে তার কোনই স্থান নেই এবং আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ স্বীয় ঔরসের সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে অথচ সন্তান স্নেহমায়া-মমতার মুখ নিয়ে পিতৃত্ব আশায় চেয়ে থাকে, আল্লাহ তার সাথে সাক্ষাৎ করবেন না এবং (হাশরের ময়দানে) অগ্র-পশ্চাতের সমগ্র মানবসন্তানের সামনে অপমান-অপদস্ত করবেন। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও দারিমী)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَمَّا نَزَلَتْ آيَةُ الْمُلَاعَنَةِ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ أَدْخَلَتْ عَلَى قَوْمٍ مَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ فَلَيْسَتْ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ وَلَنْ يُدْخِلَهَا اللَّهُ جَنَّتَهُ وَأَيُّمَا رَجُلٍ جَحَدَ وَلَدَهُ وَهُوَ يَنْظُرُ إِلَيْهِ احْتَجَبَ اللَّهُ مِنْهُ وفضَحَهُ على رؤوسِ الْخَلَائِقِ فِي الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: এক গোত্রের নয় এমন কাউকে এই গোত্রে প্রবেশ করানোর অর্থ হলো মিথ্যা বংশ সম্পৃক্ত করা। একজন নারীর গর্ভের সন্তানের ব্যাপারে সেই প্রকৃত মূল অবস্থা সম্পর্কে অবগত। তাই এই মহিলা যদি কোনো সন্তানকে মিথ্যা বলে কোনদিকে সম্পৃক্ত করে তবে সে আল্লাহর দীন ও রহমাতের মাঝে থাকবে না। এই সম্পৃক্তকরণ দুইভাবে হতে পারে। তন্মধ্যে একটি হলো, মহিলা গোপনে কারো সাথে যিনা করে তার গর্ভে অন্যের সন্তানকে নিজের বলে দাবী করা। আর এটাই এ হাদীসের মর্ম। আবার তার গর্ভে নিজের স্বামীর ছেলেকেও মিথ্যা বলে অন্যের দিকে সম্পৃক্ত করতে পারে। উভয়টাই অন্যতম কবীরা গুনাহ এবং জঘন্য অপারাধ।
(وَلَنْ يُدْخِلَهَا اللّٰهُ جَنَّتَه) ‘‘আর আল্লাহ তাকে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।’’ কুরআন হাদীসের আলোকে প্রমাণিত যে, মু’মিন যত বড়ই কবীরা গুনাহ করুক না কেন আল্লাহর অনুগ্রহে ক্ষমা পেয়ে বা নির্ধারিত শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে যাবে। তাই ‘উলামায়ে কিরাম হাদীসের এই অংশের ব্যাখ্যা করেন। ‘আল্লামা তূরিবিশতী বলেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ তাকে সৎকর্মপরায়ণ লোকেদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। বরং তাকে দেরীতে প্রবেশ করাবেন অথবা যতদিন চান শাস্তি দিবেন। তবে যদি সে কাফির হয়ে থাকে তখন তার জন্য চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে যাবে। মহিলা এই জঘন্য অপরাধ বৈধ মনে করে করলে হাদীসের বাহ্যিক অর্থই তার ওপর প্রয়োগ হবে এবং সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
(وَأَيُّمَا رَجُلٍ جَحَدَ وَلَدَه وَهُوَ يَنْظُرُ إِلَيْهِ) অর্থাৎ যে নিজ সন্তানকে অস্বীকার করে এবং তার বংশ নাকচ করে অথচ সে তাকে দেখছে। সে তাকে দেখছে বলে তার জানার দিকে ইঙ্গিত। অর্থাৎ সে জানে এটা আসলে তারই ছেলে। জেনেশুনে সে ছেলেকে অস্বীকার করছে। দেখছে বলে, তারা মায়া মমতার কমতি ও কঠোর হৃদয় এবং তার এই গুনাহের বিশালতার দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ নিজের সন্তানকে দেখেও তার একটু মায়ার উদয় হচ্ছে না, বরং সে তাকে অস্বীকার করে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। এই ধরনের পাপী ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা পর্দা দিয়ে তাঁর থেকে পৃথক করে দেন এবং তাকে তাঁর রহমাত থেকে দূরে ঠেলে দেন এবং তাকে সব মানুষের সম্মুখে অপমানিত করেন।
(عَلٰى رُؤُوْسِ الْخَلَائِقِ فِى الْأَوَّلِينَ وَالْاٰخِرِيْنَ) অর্থাৎ সমস্ত মাখলূকের নিকট, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের সমবেত হওয়ার স্থলে তাকে অপমান করবেন। এখানে তার অপমান ও লাঞ্ছনাকে অধিক প্রসার প্রচার করার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)