লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ভাগ-বণ্টন (সহধর্মিণীদের মধ্যে পালা নিরূপণ প্রসঙ্গে)
৩২৩৭-[৯] ’আত্বা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ’সারিফ’ নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর জানাযায় ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে উপস্থিত হলাম। ইবনু ’আব্বাস(রাঃ) উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বললেন, সাবধান! ইনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী, তোমরা যখন কাঁধে তাঁর লাশ বহন করবে, তখন ঝাকি দিও না এবং জোরে নাড়া-চাড়া দিও না, বরং খুব ধীরস্থিরতার সাথে উঠাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নয়জন সহধর্মিণীদের মধ্যে আটজনের জন্য পালা বণ্টন করতেন এবং একজনের জন্য করতেন না। বর্ণনাকারী ’আত্বা (রহঃ) বলেন, আমার জানা মতে সহধর্মিণীর জন্য যার পালা বণ্টন করতেন না, তিনি ছিলেন সফিয়্যাহ্ (রাঃ)। তিনি সহধর্মিণীগণের মধ্যে সর্বশেষ মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
(মিশকাত গ্রন্থাকার বলেন,) ইমাম রযীন বলেনঃ ’আত্বা (রহঃ) ব্যতীত অন্য হাদীস বিশারদগণ বলেছেন, উক্ত সহধর্মিণীর নাম সাওদাহ্ (রাঃ), এটাই অধিকতর সঠিক। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কারণে তাঁকে তালাক প্রদানের প্রসঙ্গে বললে) সাওদাহ্ নিজের প্রাপ্য অংশ (পালা) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে দান করে বলেন যে, আপনি আমাকে আপনার সহধর্মিণীরূপে রাখুন, যাতে জান্নাতে আমি আপনার সহধর্মিণীগণের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি।
عَنْ عَطَاءٍ قَالَ: حَضَرْنَا مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ جَنَازَةَ مَيْمُونَةَ بِسَرِفَ فَقَالَ: هَذِهِ زَوْجَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا رَفَعْتُمْ نَعْشَهَا فَلَا تُزَعْزِعُوهَا وَلَا تُزَلْزِلُوهَا وَارْفُقُوا بِهَا فَإِنَّهُ كَانَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعُ نِسْوَةٍ كَانَ يَقْسِمُ مِنْهُنَّ لِثَمَانٍ وَلَا يَقْسِمُ لِوَاحِدَةٍ قَالَ عَطَاءٌ: الَّتِي كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَقْسِمُ لَهَا بَلَغَنَا أَنَّهَا صَفِيَّةُ وَكَانَتْ آخِرهنَّ موتا مَاتَت بِالْمَدِينَةِ وَقَالَ رَزِينٌ: قَالَ غَيْرُ عَطَاءٍ: هِيَ سَوْدَةُ وَهُوَ أصح وهبت يَوْمهَا لِعَائِشَةَ حِينَ أَرَادَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَلَاقَهَا فَقَالَتْ لَهُ: أَمْسِكْنِي قَدْ وهبت يومي لعَائِشَة لعَلي أكون من نِسَائِك فِي الْجنَّة
ব্যাখ্যা: বর্ণনাকারী ‘আত্বা একজন জালীলুল কদর তাবি‘ঈ, তিনি ইবনু ‘আব্বাস-এর সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। ইবনু ইসহক বলেন, মায়মূনাহ্ (রাঃ) স্বীয় সত্তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীত্ব বরণের জন্য হেবা করে দেন।
মায়মূনাহ্-কে বিয়ের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রস্তাব যখন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছল তখন তিনি একটি উটের পিঠে বসা ছিলেন, তিনি খুশিতে সাথে সাথে বলে উঠেন, (এই) উট এবং উটের উপর যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহ ও তার রসূলের জন্য। কেউ কেউ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নিজেকে হেবা দানকারী ছিলেন আরেকজন। মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেনঃ আমরা বলব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য প্রথম হেবাদানকারী মায়মূনাহ্ (রাঃ)-ই।
সারিফ হলো তান্‘ঈমের নিকটবর্তী একটি স্থান; এখানেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ্-কে বিবাহ করেন এবং তার সাথে বিবাহ বাসর উদযাপন করেন। অতঃপর এই সারিফ নামক স্থানেই তিনি ইন্তেকাল করেন এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। এ ইতিহাস কি বিস্ময়কর! রাস্তার একই জায়গায় আনন্দ-বিষাদের মিলনস্থল। ইবনু আব্বাস উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর লাশ উঠাতে এবং তা বহন করতে বিশেষ সম্মান ও সমীহ প্রদান করেছেন, তার লাশের সাথে সামান্য অবহেলাও যেন না হয়, এ লক্ষ্যক্ষ তিনি সকলকে নির্দেশ করেছেন যে, লাশ বহনে তোমরা ধীরস্থিরতা অবলম্বন করবে, জোরে নাড়া বা ঝাকুনি দিবে না, বরং তার মহান শান ও মর্যাদার প্রতি খেয়াল করে তাকে বহন করবে। তিনি তার মর্যাদার বিশেষ একটি কারণও বর্ণনা করেছেন আর তা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নয়জন স্ত্রীর আটজনের মধ্যে পালা বণ্টন করেন, মায়মূনাহ্ (রাঃ) তার প্রাপ্যটুকু সতীনদের জন্য ছেড়ে দেন।
‘আত্বা বলেনঃ আমাদের নিকট খবর পৌঁছেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্ত্রীর নিকট পালা বণ্টন করেননি তিনি হলেন সফিয়্যাহ্ (রাঃ)। কিন্তু ‘আল্লামা খত্ত্বাবী (রহঃ) তার প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আত্বা (রহঃ)-এর এটা ধারণা সর্বস্বই বটে তবে তা সত্য নয়, যিনি তার পালা হেবা করে দেন তিনি হলেন সাওদাহ্ (রাঃ)। এখানে মূলতঃ ইবনু জারীর (রহঃ)-এর পক্ষ থেকে হাদীসের বর্ণনায় ভুল হয়েছে। কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) অবশ্য উভয় মতের মধ্যে সমন্বয় সাধনে সচেষ্ট হয়েছেন। ইমাম রযীন বলেনঃ ‘আত্বা (রহঃ)-এর কথার চেয়ে অন্যের কথাটিই অধিক বিশুদ্ধ। তা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার জন্য পালা নির্ধারণ করেননি তিনি হলেন সাওদাহ্ (রাঃ), তিনি তার প্রাপ্য পালা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে হেবা করে দেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের মধ্যে সফিয়্যাহ্ (রাঃ) সর্বশেষ মৃত ব্যক্তি, যিনি মদীনায় ইন্তেকাল করেন। তিনি মু‘আবিয়াহ্ -এর খিলাফাতকালে পঞ্চাশ হিজরী সনে রমাযান মাসে ইন্তেকাল করেন, মদীনার বাক্বী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। আর মায়মূনাহ্ (রাঃ) একান্ন হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন। কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, তিনি ছিষট্টি সনে; কেউ আবার বলেছেন, তেষট্টি সনে ইন্তেকাল করেছেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সাতান্ন হিজরী সনে মদীনায় ইন্তেকাল করেছেন, কেউ আটান্ন সনের কথাও বলেছেন। সাওদাহ্ (রাঃ) চুয়ান্ন সনে, হাফসাহ্ (রাঃ) পঁয়তাল্লিশ সনে, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) উনষাট সনে, উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) চুয়াল্লিশ সনে, যায়নাব (রাঃ) বিশ সনে, জুওয়াইরিয়াহ্ (রাঃ) পঞ্চাশ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেছেন।
এ কথা সর্বজনবিদিত যে, খাদীজাহ্ (রাঃ) হিজরতের পূর্বেই মক্কায় ইন্তেকাল করেন। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫০৬৭; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৬৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)