লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩৩২-[১০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তার বান্দার তওবা্ করায় অত্যন্ত আনন্দিত হন যখন সে তাঁর কাছে তওবা্ করে। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তির খুশীর চেয়ে অধিক খুশী হন, যে ব্যক্তির আরোহণের বাহন মরুভূমিতে তার কাছ থেকে ছুটে পালায়, আর এ বাহনের উপর আছে তার খাবার ও পানীয়। এ কারণে সে হতাশ-নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় আরোহণের বাহন সম্পর্কে একেবারেই নিরাশ হয়ে একটি গাছের কাছে এসে সে এর ছায়ায় শুয়ে পড়ে। এমন সময় সে হঠাৎ দেখে, বাহন তার কাছে এসে দাঁড়ানো। সে বাহনের লাগাম ধরে আর আনন্দে আবেগআপ্লুত হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু। সে আনন্দের আতিশয্যে এ ভুল করে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْاِسْتِغْفَارِ وَالتَّوْبَةِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كانَ رَاحِلَتُهُ بِأَرْضٍ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَمَا هُوَ كذلكَ إِذ هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ: اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (أَشَدُّ فَرَحًا) এক মতে বলা হয়েছে, এ রকম ক্ষেত্রে আনন্দ বলতে সন্তুষ্টি, দ্রুত কবূল এবং উত্তম প্রতিদানকে বুঝায়। (بِتَوْبَةِ عَبْدِه) অর্থাৎ- তিনি তার মু’মিন বান্দার তাওবায় সর্বাধিক সন্তুষ্ট ও সর্বাধিক গ্রহণকারী।
(حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ) অর্থাৎ- ‘‘তোমাদের কারো আনন্দ ও সন্তুষ্টি অপেক্ষা’’। একমতে বলা হয়েছে, আদম সন্তানের গুণসমূহের ক্ষেত্রে পরিচিত আনন্দ, আল্লাহর ওপর প্রয়োগ বৈধ নয়। কেননা তা এমন আনন্দ যা বিজয় লাভের সময় কোন ব্যক্তি নিজ অন্তরে অনুভব করে থাকে, যার মাধ্যমে ব্যক্তির ঘাটতি পূর্ণতা লাভ করে, অথবা এর মাধ্যমে ব্যক্তি তার ত্রুটিকে বাধা দেয় অথবা এর মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজ থেকে ক্ষতি অথবা ঘাটতিকে প্রতিহত করে। আর এটা আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য নয়, কেননা তিনি সত্তাগতভাবে পরিপূর্ণ, অস্তিত্বের দিক দিয়ে অমুখাপেক্ষী, যার সাথে কোন ঘাটতি বা অসম্পূর্ণতা শামিল হয় না। অতএব এর অর্থ কেবল সন্তুষ্টি। সালাফগণ এ থেকে এবং এ ধরনের অন্যান্য বাণী থেকে ‘আমলসমূহের ক্ষেত্রে উৎসাহিতকরণ এবং আল্লাহর কৃপা সম্পর্কে খবর প্রদান উদ্দেশ্য করেছেন। তারা আল্লাহর জন্য এ সকল গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন এবং আল্লাহ তার সৃষ্টজীবের গুণাবলী থেকে পবিত্র তাদের বিশ্বাস থাকার কারণে এ সমস্ত গুণাবলীর ব্যাখ্যা নিয়ে তাঁরা ব্যস্ত হননি।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা‘বীল বা অপব্যাখ্যা নিয়ে ব্যস্ত হয়েছে তার দু’টি পন্থা আছে। দু’টির একটি হল, নিশ্চয়ই তাশবীহ বা সাদৃশ্য যৌগিকের এককের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে তা জ্ঞানগত যৌগিক। বরং সামষ্টিকভাবে সারাংশ গ্রহণ করা হবে আর তা চূড়ান্ত সন্তুষ্টি। তাশবীহ-এর দৃষ্টিতে এর প্রকাশ কেবল শ্রোতার অন্তরে সন্তুষ্টির অর্থ স্থির করা ও পরিকল্পনা করা। আর দু’টি পথের দ্বিতীয়টি হল, উপমা পেশকরণ আর তা হল মুশাব্বাহের জন্য এমন অবস্থাসমূহ পরিকল্পনা করা যে অবস্থাগুলো মুশাব্বাহবিহীর আছে আর সে অবস্থাগুলো থেকে মুশাব্বাহের জন্য উপস্থাপন করা, যা সময়ে সময়ে তার সাথে অনুকূল। আর তা এমনভাবে যে, সেগুলো থেকে কোন বিশৃঙ্খলা হয় না, অর্থাৎ- নিশ্চয়ই তা উপমা পেশকরণ অধ্যায়ের আওতাভুক্ত। আর তা হল অর্জিত অবস্থাকে সন্তুষ্টি সম্পাদনের সাথে সাদৃশ্য দেয়। হাদীসে উল্লেখিত ধরনে যারা সফলতায় রয়েছে তাদের অবস্থার সাথে তাওবাহকারী বান্দার প্রতি অগ্রগামী হওয়াকে সাদৃশ্য দেয়া। অতঃপর মুশাব্বাহকে ছেড়ে মুশাব্বাহবিহীকে উল্লেখ করা।
কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এটা এমন এক উদাহরণ যার মাধ্যমে আল্লাহ কর্তৃক তার তাওবাহকারী বান্দার তাওবাহ্ দ্রুত গ্রহণের বর্ণনাকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই তিনি বান্দার প্রতি ক্ষমা নিয়ে আগমন করেন এবং যার ‘আমলের প্রতি সন্তুষ্টি হন তার সাথে যথার্থ লেনদেন করেন। এ উপমার করণ হল নিশ্চয়ই শয়তানের কব্জাতে এবং বন্দিদশাতে পড়ে অবাধ্যতার দরুন এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। কখনো ধ্বংসের মুখোমুখী হয়। অতঃপর আল্লাহ যখন তার প্রতি দয়া করেন এবং তাকে তাওবাহ্ করার তাওফীক দেন তখন সে ঐ অবাধ্যতার অকল্যাণ থেকে বেরিয়ে আসে, শয়তানের বন্দিদশা এবং ঐ ধ্বংস থেকে মুক্তি পায় যার উপক্রম সে হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তার করুণা ও ক্ষমা নিয়ে বান্দার দিকে অগ্রগামী হয়। পক্ষান্তরে ঐ আনন্দ যা সৃষ্টিজীবের গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত তা আল্লাহর ক্ষেত্রে অসম্ভব। কিন্তু এ আনন্দ শেষ ফলাফলের মুহূর্তে আর তা হল যার প্রতি আনন্দ প্রকাশ করা হয়েছে তার অভিমুখী হওয়া এবং তার জন্য সুউচ্চ স্থান অনুমোদন করা। আর এটি আল্লাহর ক্ষেত্রে সঠিক। সুতরাং ফারহ বা আনন্দ বলে আনন্দের শেষ ফলাফলকে বুঝানো হয়েছে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি সম্পর্কে ফারহ তথা আনন্দের প্রয়োগ রূপকার্থে। কখনো কখনো বস্ত্ত সম্পর্কে তার কারণ দ্বারা বিশ্লেষণ করতে হয় অথবা তার থেকে অর্জিত অবস্থা সম্পর্কে। কেননা যে কোন কিছুর প্রতি আনন্দিত হয় তিনি তার কর্তাকে চাওয়া অনুযায়ী দান করেন সে যা অনুসন্ধান করে তা তার জন্য ব্যয় করে। সুতরাং ফারহ বা আনন্দ দ্বারা আল্লাহর দান এবং তার করুণার প্রশস্ততা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ এর উদ্দেশ্য পূর্ণ সন্তুষ্টি। কেননা পরিচিত ফারহ বা আনন্দ আল্লাহর উপর প্রয়োগ করা বৈধ নয়। পূর্ববর্তী আহলে হাদীসগণ এ ধরনের উদাহরণ থেকে সৎকর্মসমূহে উৎসাহ প্রদান এবং সৃষ্টির গুণাবলী থেকে পবিত্র হওয়ার সাথে সাথে বান্দার উপর আল্লাহর অনুগ্রহের উন্মোচন বুঝাতেন এবং তারা এ শব্দসমূহের অর্থ ও এ নিরাপদ পথ সম্পর্কে অনুসন্ধান চালায়নি। এর থেকে পণ্ডিতের পা পিছলে যাবে এটা খুব কম। তুরবিশতী বলেন, অতঃপর এ উক্তি এবং এর মত আরো উক্তি যা আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। অথচ আল্লাহ জানেন, নিশ্চয়ই এটি এ স্থান ছাড়া যা গত হয়েছে তাতে আদম সন্তানের গুণাবলী সম্পর্কে মানুষ পরস্পর যা জানে তার অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অদৃশ্যময় উদ্দেশ্য বর্ণনার ইচ্ছা করেন তখন ঐ ব্যাপারে ঐ বিষয়ের জন্য কোন অর্থবোধক শব্দ তার অনুগত না হলে তখন সে ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুযোগ রয়েছে এমন এক শব্দ নিয়ে আসার যা উদ্দেশিত অর্থ অপেক্ষা নিম্ন স্তরের। নিশ্চয়ই আদম সন্তান থেকে তাওবাহ্ আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম স্থানে সংঘটিত হয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ বিষয়ে বর্ণনা করার ইচ্ছা করলেন তখন সে সম্পর্কে الفرح (আনন্দ) শব্দ দিয়ে প্রকাশ করেছেন যা তারা তাদের নিজেদের মাঝে অর্থের দিক নির্দেশনা পায়। আর ওটা মূলত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জানিয়ে দেয়ার পর যে, ঐ সমস্ত শব্দের প্রয়োগ আল্লাহর গুণাবলীর ক্ষেত্রে জায়িয নয়। আর ঐ সমস্ত শব্দ বলতে তারা তাদের নিজেদের গুণাবলীর ক্ষেত্রে পারস্পরিক যা জেনে থাকে। আর কারো পক্ষে তার কথাবার্তায় এ ধরনের শব্দ গ্রহণ ও সুযোগ গ্রহণ করা একমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কারো পক্ষে তা হবে না। কেননা তিনি এ ব্যাপারে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সামনে বাড়তেন না। আর এটা এমন মর্যাদা যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্যের জন্য প্রযোজ্য নয়।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলব, প্রত্যেক ঐ সমস্ত গুণ যে ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ বা তার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা দিয়েছেন তা প্রকৃত গুণ রূপক না। আল্লাহ তিনি শুনেন, দেখেন, তিনি যা চান সে ব্যাপারে কথা বলেন এবং যখন চান কথা বলেন, সন্তুষ্ট হন, রাগান্বিত হন, আশ্চর্যান্বিত হন, তার বান্দার তাওবায় আনন্দিত হন। এসব কিছুরই অর্থ জানা তবে তার ধরন অজানা। সুতরাং আমরা এ সমস্ত কিছু তার জন্য সাব্যস্ত করব, তার ধরন বর্ণনা করব না, সৃষ্টজীবের গুণাবলীর সাথে তাঁকে সাদৃশ্য দিব না, তাঁর অপব্যাখ্যা করব না এবং তাঁর অর্থের ত্রুটি করব না।
(كانَ رَاحِلَتُه) কারী বলেন, মিশকাতের অন্য এক কপিতে আছে, (كانت راحلته) ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন : আমি বলব, সহীহ মুসলিমে যা আছে তা হল, (كان راحلته) মুনযীর এবং জাযারী এভাবে নকল করেছেন রাহিলাহ্ বলতে ঐ উট যার উপর মানুষ আরোহণ করে ও সামগ্রী বহন করে।
(طَعَامُه وَشَرَابُه) অর্থাৎ- বাহন চলে যাওয়ার কারণে চূড়ান্ত বিপদের দিকে চিন্তা হবে এবং পাথেয়, পানি না থাকার কারণে নিজের ধ্বংসের আশংকা।
(ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ: اَللّٰهُمَّ أَنْتَ عَبْدِىْ وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ) অর্থাৎ- আল্লাহ তার বাহন তার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে তার প্রতি যে দয়া করেছেন সে কারণে প্রশংসা করার ইচ্ছা করল এবং বলতে ইচ্ছা করল, হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু আমি তোমার বান্দা। অর্থাৎ- সঠিক পদ্ধতি থেকে তার জবান বিচ্যুত হল, ভুল করে বসল এবং ব্যাপক আনন্দের কারণে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার প্রভু। অতঃপর নিশ্চয়ই এ লোকটির আনন্দ চূড়ান্ত পর্যায়ের এমনিভাবে বান্দার তাওবাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। ‘ইয়ায বলেন, এ রকম অবস্থাতে হতভম্ব হয়ে মানুষ যা বলে তার কারণে তাকে পাকড়াও করা হবে না। এর প্রমাণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ ঘটনা বর্ণনা করা।