২৩৩৩

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৩৩-[১১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা গুনাহ করে বলে, ’হে আমার রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও।’ তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, (হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)!) আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন? যে ’রব’ গুনাহ মাফ করেন অথবা (এর জন্য) তাকে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থেক) আমি তাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন, সে গুনাহ না করে থাকল। তারপর আবার সে গুনাহ করল ও বলল, ’হে রব’! আমি আবার গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা এর জন্য শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন, সে কোন গুনাহ না করে থাকল। তারপর সে আবারও গুনাহ করল এবং বলল, হে রব! আমি আবার গুনাহ করেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা অপরাধের জন্য শাস্তি দেন? আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সে যা চায় করুক। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْاِسْتِغْفَارِ وَالتَّوْبَةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ عَبْدًا أَذْنَبَ ذَنْبًا فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ فَاغْفِرْهُ فَقَالَ رَبُّهُ أَعَلِمَ عَبْدِي أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِي ثُمَّ مَكَثَ مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ أَذْنَبَ ذَنْبًا فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ ذَنْبًا فَاغْفِرْهُ فَقَالَ رَبُّهُ: أَعَلِمَ عَبْدِي أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِي ثُمَّ مَكَثَ مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ أَذْنَبَ ذَنبا قالَ: رب أذنبت ذَنبا آخر فَاغْفِر لِي فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِي أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِي فَلْيَفْعَلْ مَا شَاءَ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان عبدا اذنب ذنبا فقال: رب اذنبت فاغفره فقال ربه اعلم عبدي ان له ربا يغفر الذنب وياخذ به؟ غفرت لعبدي ثم مكث ما شاء الله ثم اذنب ذنبا فقال: رب اذنبت ذنبا فاغفره فقال ربه: اعلم عبدي ان له ربا يغفر الذنب وياخذ به؟ غفرت لعبدي ثم مكث ما شاء الله ثم اذنب ذنبا قال: رب اذنبت ذنبا اخر فاغفر لي فقال: اعلم عبدي ان له ربا يغفر الذنب وياخذ به؟ غفرت لعبدي فليفعل ما شاء

ব্যাখ্যা: (فَلْيَفْعَلْ مَا شَآءَ) অর্থাৎ- এমন গুনাহ করতে থাকুক যার পর বিশুদ্ধ তাওবাহ্ থাকে। হাদীসটিতে আছে দ্বিতীয়বার পাপের কারণে প্রথমবারের বিশুদ্ধ তাওবার কোন ক্ষতি সাধন করবে না। বরং তাওবাহ্ তার বিশুদ্ধতার উপর অব্যাহত থাকবে এবং ব্যক্তি দ্বিতীয় অবাধ্যতা থেকে তাওবাহ্ করবে। আর মুনযিরী এমনটিই বলেছেন, (فَلْيَفْعَلْ مَا شَآءَ) এর অর্থ ব্যক্তির অবস্থা যখন এমন হবে যে, সে গুনাহ করবে অতঃপর তাওবাহ্ করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করবে তখন সে যা ইচ্ছা তা যেন করে। কেননা যখনই সে গুনাহ করবে তখন তার তাওবাহ্ ও ক্ষমা প্রার্থনা তার ঐ গুনাহ মোচনের কারণ হবে, তখন গুনাহ তার ক্ষতি সাধন করবে না। ব্যক্তি গুনাহ করবে, অতঃপর ঐ গুনাহ থেকে অন্তর দ্বারা ক্ষমা প্রার্থনা না করে শুধু মৌখিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। অতঃপর গুনাহতেই আবার লিপ্ত হবে নিশ্চয়ই এ বাক্য দ্বারা তা উদ্দেশ্য নয়। কেননা এ ধরনের তাওবাহ্ মিথ্যাবাদীদের তাওবাহ্।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, (فَلْيَفْعَلْ مَا شَآءَ) অর্থাৎ- সে যা ইচ্ছা তাই করুক। এ বাণীর অর্থ অনেকের কাছে জটিল হয়ে পড়েছে যেমননিভাবে হাত্বিব বিন বালতা‘আহ্-এর হাদীসে উল্লেখিত বাণীর অর্থ জটিল অনুভূত হয়েছে। কেননা বাণীটির বাহ্যিক রূপ দেখে মনে হচ্ছে বাদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য প্রত্যেক ধরনের ‘আমল বৈধ এবং ‘আমলসমূহ থেকে তারা যা চায় তা তাদের ইচ্ছাধীন অথচ তা নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কে কয়েকভাবে উত্তর দেয়া হয়েছে। আর সে উত্তরসমূহ থেকে ফাওয়ায়িদ গ্রন্থের ১৬ পৃষ্ঠাতে যা বলেছেন, তা এই নিশ্চয়ই এটা এমন এক সম্প্রদায়কে সম্বোধন যাদের ব্যাপারে আল্লাহ জেনেছেন যে, নিশ্চয়ই তারা তাদের ধর্ম থেকে আলাদা হবে না বরং তারা ইসলামের উপর মারা যাবে তবে কখনো কখনো তারা খারাপ কাজে জড়িত হবে যেমন অন্যান্যরা মন্দ গুনাহের কাজে জড়িত হয়ে থাকে। তবে আল্লাহ তাদেরকে গুনাহের উপর স্থায়ীভাবে ছেড়ে রাখবেন না। বরং তাদেরকে খাঁটি তাওবাহ্ করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পুণ্য কাজ করার তাওফীক দিবেন যা ঐ গুনাহের প্রভাবকে মুছে দিবে। আর এ ব্যাপারে তাদেরকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে অন্যদেরকে নয়, কেননা এটি তাদের মাঝে সুনিশ্চিত হয়ে গেছে। তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে আর তাদের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় এমন উপকরণসমূহ দ্বারা অর্জিত ক্ষমা এ ক্ষমা থেকে বাধা দিতে পারবে না যে, তা ক্ষমার প্রতি নির্ভরশীল হয় ফরযসমূহ নষ্ট করে দেয়ার দাবী করে না। নির্দেশসমূহের সম্পাদনের উপর স্থায়িত্ব হওয়া ছাড়াই যদি ক্ষমা অর্জন হত তাহলে অবশ্যই তারা এরপর সালাত, সিয়াম, হজ, যাকাত ও জিহাদের প্রতি প্রয়োজনমুখী হত না, অথচ এটা অসম্ভব গুনাহের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব হল তাওবাহ্ করা। সুতরাং ক্ষমার শামিল ক্ষমার উপকরণসমূহ নষ্ট করে দেয়াকে আবশ্যক করে না। এর দৃষ্টান্ত হল, অন্য হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (বান্দা গুনাহ করে অতঃপর বলে হে আমার প্রভু আমি গুনাহ করেছি, সুতরাং তুমি আমাকে তা ক্ষমা কর, অতঃপর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন) এ উক্তি। আর এ হাদীসে আছে, (قد غفرت لعبدى فليعمل ما شاء) অর্থাৎ- ‘‘আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম, সুতরাং সে যা চায় তা করুক।’’ অত্র হাদীসে আল্লাহর তরফ থেকে বান্দাকে হারাম ও অপরাধে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়নি।

হাদীসটি কেবল ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে যে, বান্দাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করে দেয়া হবে যতক্ষণ সে গুনাহ করার পর তাওবাহ্ করতে থাকবে। আর এ বান্দাকে এ ক্ষমার ব্যাপারে নির্দিষ্ট করার কারণ হল, আল্লাহ এ বান্দার ব্যাপারে জেনে নিয়েছেন যে, সে কোন গুনাহের উপর স্থায়ী হবে না। বরং যখন সে পাপ করবে তখনই তাওবাহ্ করবে। এমনিভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন অথবা খবর দিয়েছেন যে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ ধরনের উক্তি থেকে ঐ সাহাবী বা অন্য কোন সাহাবী এ ধরনের মনে করেননি যে, তাকে তার গুনাহ এবং অবাধ্যতা ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে এবং ওয়াজিবসমূহ ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে তার প্রতি উদারতা প্রকাশ করা হয়েছে। বরং এ সুসংবাদ পাওয়ার পরে পূর্বাপেক্ষা চেষ্টা, সাধনা, সতর্কতা ও ভয়ে আরো বেশি কঠোর ছিল। যেমন জান্নাতের সংবাদ প্রাপ্ত দশজন। আর এদের মাঝে আবূ বাকর  ছিলেন অধিক সতর্ক ও ভয়কারী, এমনিভাবে ‘উমার (রাঃ)-ও ছিলেন। কারণ তারা জানতেন সাধারণ সুসংবাদ কিছু শর্ত এবং মরণ অবধি সেগুলোর উপর স্থায়ী হওয়ার দ্বারা গন্ডিবদ্ধ এবং সেগুলোর প্রতিবন্ধকসমূহ থেকে বিরত থাকা। তাদের কেউ এ ক্ষেত্রে কর্মে স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারে অনুমতি প্রদান বুঝেননি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)