পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيْدُ زِينَةَ الْـحَيَاةِ الدُّنْيَا
অর্থাৎ, তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা ক’রে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। (সূরা কাহফ ২৮)
(৩৮১৯) হারেসাহ ইবনে অহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমি তোমাদেরকে জান্নাতীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি যাকে দুর্বল মনে করা হয়। সে যদি আল্লাহর নামে কসম খায়, তাহলে তা তিনি নিশ্চয়ই পুরা ক’রে দেন। আমি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় দাম্ভিক ব্যক্তি।
وَعَنْ حَارِثَةَ بْنِ وَهْبٍ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُولُ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الجَنَّةِ ؟ كُلُّ ضَعِيْفٍ مُتَضَعَّف لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
(৩৮২০) ইয়ায বিন হিমার মুজাশিয়ী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আর জান্নাতী হল তিন প্রকার ব্যক্তি; ন্যায়পরায়ণ দানশীল তাওফীকপ্রাপ্ত শাসক, দয়াবান এবং প্রত্যেক আত্মীয় তথা মুসলিমের প্রতি কোমল-হৃদয়। আর (অশ্লীলতা ও যাঞ্চা) থেকে পবিত্র সন্তানবান ব্যক্তি।
عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ الْمُجَاشِعِىِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ وَأَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلاَثَةٌ ذُو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُتَصَدِّقٌ مُوَفَّقٌ وَرَجُلٌ رَحِيمٌ رَقِيقُ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِى قُرْبَى وَمُسْلِمٍ وَعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيَالٍ
পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
(৩৮২১) আবু আব্বাস সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশ দিয়ে পার হয়ে গেল, তখন তিনি তাঁর নিকট উপবিষ্ট একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মন্তব্য কি?’’ সে বলল, ’এ ব্যক্তি তো এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক। আল্লাহর কসম! সে কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং কারো জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা হবে।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আর এক ব্যক্তি পার হয়ে গেল। তিনি ঐ (উপবিষ্ট) লোকটিকে বললেন, এ লোকটির ব্যাপারে তোমার অভিমত কি? সে বলল, ’হে আল্লাহর রসূল! এ তো একজন গরীব মুসলিম। সে এমন ব্যক্তি যে, সে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, কারো জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা হবে না এবং সে কোন কথা বললে, তার কথা শ্রবণযোগ্য হবে না।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ ব্যক্তি দুনিয়া ভর্তি ঐরূপ লোকদের চাইতে বহু উত্তম।
وَعَنْ أَبِي عَبَّاسٍ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ : مَرَّ رَجُلٌ عَلَى النَّبيّ ﷺ فَقَالَ لِرَجُلٍ عِنْدَهُ جَالِسٌ مَا رَأيُكَ في هٰذَا ؟ فَقَالَ : رَجُلٌ مِنْ أشْرَافِ النَّاسِ هٰذَا واللهِ حَرِيٌّ إنْ خَطَبَ أنْ يُنْكَحَ وَإنْ شَفَعَ أنْ يُشَفَّعَ فَسَكَتَ رسولُ اللهِ ﷺ ثُمَّ مَرَّ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ الله ﷺ مَا رَأيُكَ في هٰذَا ؟ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ الله هٰذَا رَجُلٌ مِنْ فُقَراءِ المُسْلِمِينَ هٰذَا حَرِيٌّ إنْ خَطَبَ أنْ لا يُنْكَحَ وَإنْ شَفَعَ أنْ لاَ يُشَفَّعَ وَإنْ قَالَ أنْ لاَ يُسْمَعَ لِقَولِهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ هٰذَا خَيْرٌ مِنْ مِلءِ الأرْضِ مِثْلَ هٰذَا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
(৩৮২২) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবাদ হল। জাহান্নাম বলল, ’আমার মধ্যে উদ্ধত ও অহংকারী লোকেরা থাকবে।’ আর জান্নাত বলল, ’দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিরা আমার ভিতরে বসবাস করবে।’ অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে ফায়সালা করলেন যে, ’তুমি জান্নাত আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। এবং তুমি জাহান্নাম আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। আর তোমাদের উভয়কেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব।
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي عَنِ النَّبيّ ﷺ قَالَ احْتَجَّتِ الجَنَّةُ والنَّارُ فَقَالتِ النَّارُ : فِيَّ الجَبَّارُونَ وَالمُتَكَبِّرُونَ وَقَالتِ الجَنَّةُ : فِيَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَمَسَاكِينُهُمْ فَقَضَى اللهُ بَيْنَهُمَا : إنَّكِ الجَنَّةُ رَحْمَتِي أرْحَمُ بِكِ مَنْ أشَاءُ وَإنَّكِ النَّارُ عَذَابِي أُعَذِّبُ بِكِ مَنْ أشَاءُ وَلِكلَيْكُمَا عَلَيَّ مِلْؤُهَا رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
(৩৮২৩)আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন মোটা-তাজা বৃহৎ মানুষ আসবে, আল্লাহর কাছে তার মশার ডানার সমানও ওজন হবে না।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَن رَسُولِ الله ﷺ قَالَ إنَّهُ لَيَأتِي الرَّجُلُ السَّمِينُ العَظِيمُ يَوْمَ القِيَامَةِ لاَ يَزِنُ عِنْدَ اللهِ جَناحَ بَعُوضَةٍ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
(৩৮২৪) উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, কালোবর্ণের একজন মহিলা অথবা যুবক মসজিদ ঝাড়ু দিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (একদিন) দেখতে পেলেন না। সুতরাং তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবীগণ বললেন, ’সে মারা গেছে।’ তিনি বললেন, তোমরা আমাকে সংবাদ দিলে না কেন? তাঁরা যেন তার ব্যাপারটাকে নগণ্য ভেবেছিলেন। তিনি বললেন, আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। সুতরাং তাঁরা তার কবরটি দেখিয়ে দিলেন এবং তিনি তার উপর জানাযা পড়লেন। অতঃপর তিনি বললেন, নিশ্চয় এ কবরসমূহ কবরবাসীদের জন্য অন্ধকারময়। আর আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য আমার জানাযা পড়ার কারণে তা আলোময় করে দেন।
وَعَنهُ : أَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ كَانَتْ تَقُمُّ المَسْجِدَ أَوْ شَابّاً فَفَقَدَهَا أَوْ فَقَدَهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَسَأَلَ عَنْهَا أو عَنهُ فَقَالُوا : مَاتَ قَالَ أَفَلا كُنْتُمْ آذَنْتُمُونِي فَكَأنَّهُمْ صَغَّرُوا أمْرَهَا أَوْ أمْرهُ، فَقَالَ دُلُّونِي عَلَى قَبْرِهِ فَدَلُّوهُ فَصَلَّى عَلَيْهَا ثُمَّ قَالَ إنَّ هذِهِ القُبُورَ مَمْلُوءةٌ ظُلْمَةً عَلَى أهْلِهَا وَإنَّ اللهَ تَعَالٰـى يُنَوِّرُهَا لَهُمْ بِصَلاَتِي عَلَيْهِمْ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
(৩৮২৫) উক্ত রাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বহু এমন লোকও আছে যার মাথা উষ্কখুষ্ক ধুলোভরা, যাদেরকে দরজা থেকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। (কিন্তু সে আল্লাহর নিকট এত প্রিয় যে,) সে যদি আল্লাহর উপর কসম খায়, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন।
وَعَنهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ رُبَّ أشْعَثَ أغبَرَ مَدْفُوعٍ بِالأبْوابِ لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
(৩৮২৬) উসামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়ালাম। অতঃপর দেখলাম যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশ গরীব-মিসকীন মানুষ। আর ধনবানদেরকে (তখনও হিসাবের জন্য) আটকে রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে (অন্যান্য) জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমি জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম যে, যারা তাতে প্রবেশ করেছে তাদের বেশীর ভাগই নারীর দল।
وَعَن أُسَامَةَ عَنِ النَّبيّ ﷺ قَالَ قُمْتُ عَلَى بَابِ الجَنَّةِ فَإِذَا عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا المَسَاكِينُ وَأصْحَابُ الجَدِّ مَحْبُوسُونَ غَيْرَ أنَّ أصْحَابَ النَّارِ قَدْ أُمِرَ بِهِمْ إِلَى النَّارِ وَقُمْتُ عَلَى بَابِ النَّارِ فَإِذَا عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا النِّسَاءُ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
(৩৮২৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (নবজাত শিশুদের মধ্যে) দোলনায় তিনজনই মাত্র কথা বলেছে; মারয়্যামের পুত্র ঈসা, আর (বনী ইস্রাঈলের) জুরাইজের (পবিত্রতার সাক্ষী) শিশু। জুরাইজ ইবাদতগুযার মানুষ ছিল এবং সে একটি উপাসনালয় (আশ্রম) বানিয়েছিল। একদা সে সেখানে নামায পড়ছিল। এমন সময় তার মা তার নিকট এসে তাকে ডাকলে সে (মনে মনে) বলল, ’হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (দুটিই গুরুত্বপূর্ণ; কোনটিকে প্রাধান্য দিই, তার সুমতি দাও)।’
সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। আর তার মা ফিরে গেল। পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, ’জুরাইজ!’ সে (মনে মনে) বলল, ’হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (এখন কী করি?)’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তার পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, ’জুরাইজ!’ সে (মনে মনে) বলল, ’হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (এখন কী করি?)’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তখন (তিন তিন দিন সাড়া না পেয়ে তার মা তাকে বদ্দুআ দিয়ে) বলল, ’হে আল্লাহ! বেশ্যাদের মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি ওর মরণ দিও না।’
বনী ইসরাঈল জুরাইজ ও তার ইবাদতের কথা চর্চা করতে লাগল। এক মহিলা ছিল, যার দৃষ্টান্তমূলক রূপসৌন্দর্য ছিল। সে বলল, ’তোমরা চাইলে আমি ওকে ফিতনায় ফেলতে পারি।’ সুতরাং সে নিজেকে তার কাছে পেশ করল। কিন্তু জুরাইজ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করল না। পরিশেষে সে এক রাখালের কাছে এল, যে জুরাইজের আশ্রমে আশ্রয় নিত। সে দেহ সমর্পণ করলে রাখাল তার সাথে ব্যভিচার করল এবং বেশ্যা তাতে গর্ভবতী হয়ে গেল। অতঃপর সে যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ করল, তখন (লোকেদের জিজ্ঞাসার উত্তরে) বলল, ’এটি জুরাইজের সন্তান।’ সুতরাং লোকেরা জুরাইজের কাছে এসে তাকে আশ্রম হতে বেরিয়ে আসতে বলল। (সে বেরিয়ে এলে) তারা তার আশ্রম ভেঙ্গে দিল এবং তাকে মারতে লাগল। জুরাইজ বলল, ’কি ব্যাপার তোমাদের? (এ শাস্তি কিসের?)’ লোকেরা বলল, ’তুমি এই বেশ্যার সাথে ব্যভিচার করেছ এবং তার ফলে সে সন্তান জন্ম দিয়েছে।’
সে বলল, ’সন্তানটি কোথায়?’ অতঃপর লোকেরা শিশুটিকে নিয়ে এলে সে বলল, ’আমাকে নামায পড়তে দাও।’ সুতরাং সে নামায পড়ে শিশুটির কাছে এসে তার পেটে খোঁচা মেরে জিজ্ঞাসা করল, ’ওহে শিশু! তোমার পিতা কে?’ সে জবাব দিল, ’অমুক রাখাল।’ অতএব লোকেরা (তাদের ভুল বুঝে এবং এই অলৌকিক ঘটনা দেখে) জুরাইজের কাছে এসে তাকে চুমা দিতে ও (বরকত নিতে) স্পর্শ করতে লাগল। তারা বলল, ’আমরা তোমার আশ্রমকে স্বর্ণ দিয়ে বানিয়ে দেব।’ সে বলল, ’না, মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও, যেমন পূর্বে ছিল।’ সুতরাং তারা তাই করল।
(তৃতীয় শিশুর ঘটনা হচ্ছে বনী ইস্রাঈলের) এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় তার পাশ দিয়ে উৎকৃষ্ট সওয়ারীতে আরোহী এক সুদর্শন পুরুষ চলে গেল। তার মা দু’আ ক’রে বলল, ’হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে ওর মত করো।’ শিশুটি তখনি মায়ের দুধ ছেড়ে দিয়ে সেই আরোহীর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, ’হে আল্লাহ আমাকে ওর মত করো না।’ তারপর মায়ের দুধের দিকে ফিরে দুধ চুষতে লাগল। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের তর্জনী আঙ্গুলকে নিজ মুখে চুষে শিশুটির দুধ পান দেখাতে লাগলেন। আমি যেন তা এখনো দেখতে পাচ্ছি। পুনরায় (তাদের) পাশ দিয়ে একটি দাসীকে লোকেরা মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা বলছিল, ’তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস!’ আর দাসীটি বলছিল, ’হাসবিয়াল্লাহু অনি’মাল অকীল।’ (আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ও তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।) তা দেখে মহিলাটি দু’আ করল, ’হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না।’
ছেলেটি সাথে সাথে মায়ের দুধ ছেড়ে দাসীটির দিকে তাকিয়ে বলল, ’হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো।’ অতঃপর মাবেটায় কথোপকথন করল। মা বলল, ’একটি সুন্দর আকৃতির লোক পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো। তখন তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আবার ওরা ঐ দাসীকে নিয়ে পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না। কিন্তু তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো! (এর কারণ কি?)’ শিশুটি বলল, ’(তুমি বাহির দেখে বলেছ, আর আমি ভিতর দেখে বলেছি।) ঐ লোকটি স্বৈরাচারী, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আর ঐ দাসীটির জন্য ওরা বলছে, তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস, অথচ ও এ সব কিছুই করেনি। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো।’
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبيّ ﷺ قَالَ لَمْ يَتَكَلَّمْ في المَهْدِ إلاَّ ثَلاثَةٌ : عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَصَاحِبُ جُرَيْجٍ وَكَانَ جُرَيْجٌ رَجُلاً عَابِداً فَاتَّخَذَ صَوْمَعَةً فَكَانَ فِيهَا فَأَتَتْهُ أُمُّهُ وَهُوَ يُصَلِّي فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ فَقَالَ : يَا رَبِّ أُمِّي وَصَلاتِي فَأَقْبَلَ عَلَى صَلاتِهِ فَانْصَرَفَتْ فَلَمَّا كَانَ مِنَ الغَدِ أتَتْهُ وَهُوَ يُصَلِّي فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ فَقَالَ : أيْ رَبِّ أمِّي وَصَلاتِي فَأقْبَلَ عَلَى صَلاتِهِ فَلَمَّا كَانَ مِنْ الغَدِ أتَتْهُ وَهُوَ يُصَلِّي فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ فَقَالَ : أيْ رَبِّ أمِّي وَصَلاتِي فَأقْبَلَ عَلَى صَلاَتِهِ فَقَالَتْ : اَللّٰهُمَّ لاَ تُمِتْهُ حَتّٰـى يَنْظُرَ إِلَى وُجُوهِ المُومِسَاتِ فَتَذَاكَرَ بَنُو إسْرائِيل جُرَيْجاً وَعِبَادَتَهُ وَكَانَتِ امْرَأةٌ بَغِيٌّ يُتَمَثَّلُ بحُسْنِهَا فَقَالَتْ : إنْ شِئْتُمْ لأَفْتِنَنَّهُ فَتَعَرَّضَتْ لَهُ فَلَمْ يَلْتَفِتْ إِلَيْهَا فَأتَتْ رَاعِياً كَانَ يَأوِي إِلَى صَوْمَعَتِهِ فَأَمْكَنَتْهُ مِنْ نَفْسِهَا فَوقَعَ عَلَيْهَا فَحَمَلَتْ فَلَمَّا وَلَدَتْ قَالَتْ : هُوَ مِنْ جُريج فَأتَوْهُ فَاسْتَنْزَلُوهُ وَهَدَمُوا صَوْمَعَتَهُ وَجَعَلُوا يَضْرِبُونَهُ فَقَالَ : مَا شَأنُكُمْ ؟ قَالُوا : زَنَيْتَ بهذِهِ البَغِيِّ فَوَلَدَتْ مِنْكَ قَالَ : أيْنَ الصَّبيُّ ؟ فَجَاؤُوا بِهِ فَقَالَ : دَعُوني حَتّٰـى أصَلِّي فَصَلَّى فَلَمَّا انْصَرفَ أتَى الصَّبيَّ فَطَعنَ في بَطْنِهِ وَقالَ : يَا غُلامُ مَنْ أبُوكَ ؟ قَالَ : فُلانٌ الرَّاعِي فَأَقْبَلُوا عَلَى جُرَيْجٍ يُقَبِّلُونَهُ وَيَتَمَسَّحُونَ بِهِ وَقَالُوا : نَبْنِي لَكَ صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَب قَالَ : لاَ أعِيدُوهَا مِنْ طِينٍ كَمَا كَانَتْ فَفَعلُوا وبَينَا صَبِيٌّ يَرْضَعُ منْ أُمِّهِ فَمَرَّ رَجُلٌ رَاكِبٌ عَلَى دَابَّةٍ فَارِهَةٍ وَشَارَةٍ حَسَنَةٍ فَقَالَتْ أُمُّهُ : اَللّٰهُمَّ اجْعَل ابْنِي مِثْلَ هٰذَا فَتَرَكَ الثَّدْيَ وَأقْبَلَ إِلَيْهِ فَنَظَرَ إِلَيْهِ فَقَالَ : اَللّٰهُمَّ لاَ تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ ثُمَّ أقْبَلَ عَلَى ثَدْيه فَجَعَلَ يَرتَضِعُ فَكَأنِّي أنْظُرُ إِلَى رَسُول الله ﷺ وَهُوَ يَحْكِي ارْتضَاعَهُ بِأصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ في فِيه فَجَعَلَ يَمُصُّهَا قَالَ وَمَرُّوا بِجَارِيَةٍ وَهُم يَضْرِبُونَهَا ويَقُولُونَ : زَنَيْتِ سَرَقْتِ وَهِيَ تَقُولُ : حَسْبِيَ اللهُ ونِعْمَ الوَكِيلُ فَقَالَتْ أمُّهُ : اَللّٰهُمَّ لاَ تَجْعَل ابْنِي مِثْلَهَا فَتَركَ الرَّضَاعَ ونَظَرَ إِلَيْهَا فَقَالَ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِي مثْلَهَا فَهُنَالِكَ تَرَاجَعَا الحَديثَ، فَقَالَتْ : مَرَّ رَجُلٌ حَسَنُ إِلٰهَيْئَةِ فَقُلْتُ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ ابْنِي مِثْلَهُ فَقُلْتَ : اَللّٰهُمَّ لاَ تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ وَمَرُّوا بهذِهِ الأمَةِ وَهُمْ يَضْرِبُونَهَا وَيَقُولُونَ : زَنَيْتِ سَرَقْتِ فقلتُ : اَللّٰهُمَّ لاَ تَجْعَلِ ابْنِي مِثْلَهَا فَقُلْتَ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِي مِثْلَهَا قَالَ : إنَّ ذلك الرَّجُل كَانَ جَبَّاراً فَقُلْتُ : اَللّٰهُمَّ لا تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ وَإنَّ هذِهِ يَقُولُونَ : زَنَيْتِ وَلَمْ تَزْنِ وَسَرقْتِ وَلَمْ تَسْرِقْ فَقُلْتُ : اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِي مِثْلَهَا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
(৩৮২৮) আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ধ্বংস হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম ও উত্তম পোশাকের গোলাম (দুনিয়াদার)! যদি তাকে দেওয়া হয়, তাহলে সে সন্তুষ্ট হয়। আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। সে ধ্বংস হোক, লাঞ্ছিত হোক! তার পায়ে কাঁটা বিঁধলে তা বের করতে না পারুক। ঐ বান্দার জন্য সুসংবাদ যে আল্লাহর পথে নিজের ঘোড়ার লাগাম ধরে প্রস্তুত আছে। যার মাথার কেশ আলুথালু, যার পদযুগল ধূলিমলিন। তাকে পাহারার কাজে নিযুক্ত করলে, পাহারার কাজে নিযুক্ত থাকে। আর তাকে সৈন্যদলের পশ্চাতে (দেখাশোনার কাজে) নিয়োজিত করলে, সৈন্যদলের পশ্চাতে থাকে। যদি সে কারো সাক্ষাতের অনুমতি চায়, তাহলে তাকে অনুমতি দেওয়া হয় না এবং কারো জন্য সুপারিশ করলে, তার সুপারিশ গ্রহণ করা হয় না।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ وَعَبْدُ الدِّرْهَمِ وَعَبْدُ الْخَمِيصَةِ إِنْ أُعْطِيَ رَضِيَ وَإِنْ لَمْ يُعْطَ سَخِطَ تَعِسَ وَانْتَكَسَ وَإِذَا شِيكَ فَلَا انْتَقَشَ طُوبَى لِعَبْدٍ آخِذٍ بِعِنَانِ فَرَسِهِ فِي سَبِيلِ اللهِ أَشْعَثَ رَأْسُهُ مُغْبَرَّةٍ قَدَمَاهُ إِنْ كَانَ فِي الْحِرَاسَةِ كَانَ فِي الْحِرَاسَةِ وَإِنْ كَانَ فِي السَّاقَةِ كَانَ فِي السَّاقَةِ إِنْ اسْتَأْذَنَ لَمْ يُؤْذَنْ لَهُ وَإِنْ شَفَعَ لَمْ يُشَفَّعْ
পরিচ্ছেদঃ দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
(৩৮২৯) উম্মে দারদা (রাঃ) বলেন, আমি আবূদ দারদাকে বললাম, ’কী ব্যাপার তুমিও কেন অমুক অমুকের মতো করে (দুনিয়া বা সম্পদ) তলব করো না?’ তখন তিনি উত্তরে বললেন, ’আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, অবশ্যই তোমাদের পশ্চাতে এমন সংকটময় গিরি রয়েছে যা (পার্থিব সম্পদের বোঝায়) ভারী লোকেরা অতিক্রম করতে পারবে না। তাই আমি ঐ গিরি অতিক্রম করার জন্য হালকা থাকতে চাই।
عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَتْ : قُلْتُ لَهُ مَا لَكَ لاَ تَطْلُبُ مَا يَطْلُبُ فَلاَنٌ وَفُلاَنٌ؟ قَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَقُولُ : ’’إِنَّ وَرَاءَكُمْ عَقَبَةً كَؤُوداً لاَ يَجُوزُهَا الْمُثْقِلُونَ فَأَنَا أُحِبُّ أَنْ أَتَخَفَّفَ لِتِلْكَ الْعَقَبَة