পরিচ্ছেদঃ কোন ভাল জিনিসের সুসংবাদ ও তার জন্য মুবারকবাদ জানানো মুস্তাহাব
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَبَشِّرِ عِبَادِ الَّذِيْنَ يَسْتَمِعُوْنَ الْقَوْلَ فَيتَّبِعُوْنَ أَحْسَنَهُ
অর্থাৎ, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। অতএব সুসংবাদ দাও আমার দাসদেরকে; যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং যা উত্তম তার অনুসরণ করে। ওদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং ওরাই বুদ্ধিমান। (সূরা যুমার ১৭-১৮) তিনি আরো বলেন,
يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُمْ بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَانٍ وَّجَنَّاتٍ لَّهُمْ فِيْهَا نَعِيْمٌ مُقِيْمٌ
অর্থাৎ, তাদের প্রতিপালক তাদেরকে নিজ দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন; যেখানে তাদের জন্য স্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধি রয়েছে। (সূরা তওবা ২১)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
وَأَبْشِرُوا بِالْـجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوعَدُوْنَ
অর্থাৎ, তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ নাও। (হা-মীম সিজদা ৩০)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيْمٍ
অর্থাৎ, অতঃপর আমি তাকে এক ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। (সূরা স্বা-ফফাত ১০১)
তিনি আরো বলেন,
وَلَقدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إبْراهِيْمَ بِالبُشْرٰى
অর্থাৎ, আর আমার প্রেরিত ফিরিশতারা ইব্রাহীমের নিকট সুসংবাদ নিয়ে আগমন করল। (সূরা হূদ ৬৯)
তিনি আরো বলেন,
وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَّرَاءِ إسْحَاقَ يَعْقُوْبَ
অর্থাৎ, সে সময় তার স্ত্রী দণ্ডায়মান ছিল, সে হেসে উঠল তখন আমি তাকে (ইব্রাহীমের স্ত্রীকে) সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের এবং ইসহাকের পর ইয়াকূবের। (সূরা হূদ ৭১)
তিনি আরো বলেন,
فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيٰى
অর্থাৎ, যখন (যাকারিয়া) মিহরাবে নামাযে রত ছিলেন তখন ফেরেশত্মাগণ তাকে সম্বোধন ক’রে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহয়্যার সুসংবাদ দিচ্ছেন। (আলে ইমরান ৩৯)
তিনি আরো বলেছেন,
إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمسِيْحُ
অর্থাৎ, (স্মরণ কর) যখন ফেরেশত্মাগণ বললেন, হে মারয়্যাম! নিশ্চয় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তোমাকে একটি কালেমা (দ্বারা সৃষ্ট সন্তানে)র সুসংবাদ দিচ্ছেন; যার নাম হবে মগৃহ। (আলে ইমরান ৪৫)
এ ছাড়া এ মর্মে অনেক আয়াত রয়েছে, যা অনেকের জানা আছে। আর উক্ত বিষয়ে হাদীসও অনেক বেশী বিদ্যমান, যা বিশুদ্ধ গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে বলে সুপ্রসিদ্ধ। তার মধ্যে কতিপয় নিম্নরূপঃ
(৩৪২৯) আবূ ইব্রাহীম মতান্তরে আবূ মুহাম্মাদ বা আবূ মুআবিয়াহ আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) কে জান্নাতে (তার জন্য) ফাঁপা মুক্তা নির্মিত একটি অট্টালিকার সুসংবাদ দান করলেন; যেখানে কোন হট্টগোল ও ক্লান্তি থাকবে না।
عَن أَبي إِبرَاهِيمَ وَيُقَالُ : أَبُو مُحَمَّدٍ وَيُقَالُ : أَبُو مُعَاوِيَةَ عَبدِ اللهِ بنِ أَبي أَوفَى رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أنّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ بَشَّرَ خَدِيجَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا بِبَيْتٍ في الجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ لاَ صَخَبَ فِيهِ وَلاَ نَصَبَ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ কোন ভাল জিনিসের সুসংবাদ ও তার জন্য মুবারকবাদ জানানো মুস্তাহাব
(৩৪৩০) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি নিজ বাড়িতে ওযূ করে বাইরে গেলেন। এবং তিনি (মনে মনে) বললেন যে, ’আজ আমি অবশ্যই আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্যে থাকব।’ সুতরাং তিনি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর রসূল (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। সাহাবীগণ উত্তর দিলেন যে, ’তিনি এই দিকে গমন করেছেন।’ আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর পশ্চাতে চলতে থাকলাম এবং তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত তিনি ’আরীস’ কুয়ার (সন্নিকটবর্তী একটি বাগানে) প্রবেশ করলেন। আমি (বাগানের) প্রবেশ দ্বারের পাশে বসে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেশাব-পায়খানা সমাধা করে ওযূ করলেন। অতঃপর আমি উঠে তাঁর দিকে অগ্রসর হলাম। দেখলাম, তিনি ’আরীস’ কুয়ার পাড়ের মাঝখানে পায়ের নলা খুলে পা দুটো তাতে ঝুলিয়ে বসে আছেন।
আমি তাঁকে সালাম দিয়ে আবার ফিরে এসে প্রবেশ-পথে বসে রইলাম। আর মনে মনে বললাম যে, ’আজ আমি অবশ্যই আল্লাহর রসূলের দ্বার রক্ষক হব।’ সুতরাং আবূ বকর (রাঃ) এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ’আপনি কে?’ তিনি উত্তরে বললেন, ’আবূ বকর।’ আমি বললাম, ’একটু থামুন।’ তারপর আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে নিবেদন করলাম, ’হে আল্লাহ রসূল! উনি আবূ বকর, প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন।’ তিনি বললেন, ’’ওকে অনুমতি দাও। আর তার সাথে জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও।’’ সুতরাং আমি আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললাম, ’প্রবেশ করুন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন।’ আবূ বকর প্রবেশ করলেন এবং কুয়ার পাড়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডান দিকে পায়ের নলার কাপড় তুলে পা দুখানি কুয়াতে ঝুলিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত বসে পড়লেন।
আমি পুনরায় দ্বার প্রান্তে ফিরে এসে বসে গেলাম। আমি মনে মনে বললাম, আমার ভাইকে ওযূ করা অবস্থায় ছেড়ে এসেছি; (ওযূর পরে) সে আমার পশ্চাতে আসবে। আল্লাহ যদি তার জন্য কল্যাণ চান, তাহলে তাকে (এখানে) আনবেন। হঠাৎ একটি লোক এসে দরজা নড়াল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ’কে?’ সে বলল, ’উমার বিন খাত্তাব।’ আমি বললাম, ’একটু থামুন।’ অতঃপর আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে নিবেদন করলাম যে, ’উনি উমার। প্রবেশ অনুমতি চাচ্ছেন।’ তিনি বললেন, ’’ওকে অনুমতি দাও এবং ওকেও জান্নাতের সুসংবাদ জানাও।’’ সুতরাং আমি উমারের নিকট এসে বললাম, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে প্রবেশ অনুমতি দিচ্ছেন এবং জান্নাতের শুভ সংবাদও জানাচ্ছেন।’ সুতরাং তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং কুয়ার পাড়ে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাম পাশে কুয়ায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়লেন।
আমি আবার সেখানে ফিরে এসে বসে পড়লাম। আর মনে মনে বলতে থাকলাম, আল্লাহ যদি আমার ভাইয়ের মঙ্গল চান, তাহলে অবশ্যই তাকে নিয়ে আসবেন। (ইত্যবসরে) হঠাৎ একটি লোক দরজা নড়াল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ’আপনি কে?’ সে বলল, ’আমি উসমান ইবনে আফ্ফান।’ আমি বললাম, ’একটু থামুন।’ তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁর সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, ’’ওকে অনুমতি দাও। আর জান্নাতের সুসংবাদ জানাও। তবে ওর জীবনে বিপর্যয় আছে।’’ আমি ফিরে এসে তাঁকে বললাম, ’প্রবেশ করুন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। তবে আপনার বিপর্যয় আছে।’ সুতরাং তিনি সেখানে প্রবেশ ক’রে দেখলেন যে, কুয়ার এক পাড় পূর্ণ হয়েছে ফলে তিনি তাঁদের সামনের অপর পাড়ে গিয়ে বসে গেলেন।
সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব বলেন যে, ’এ ঘটনা দ্বারা আমি বুঝেছি যে, তাঁদের তিনজনের সমাধি একই স্থানে হবে। (আর উসমানের সমাধি অন্য জায়গায় হবে।)’ (বুখারী ৩৬৭৪, মুসলিম ৬৩৬৭)
এক বর্ণনায় এ সব শব্দাবলী বাড়তিভাবে এসেছে যে, (আবূ মূসা বলেন,) ’আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বার রক্ষার নির্দেশ দিলেন।’ আর তাতে এ কথাও আছে যে, যখন তিনি উসমান (রাঃ) কে সুসংবাদ (ও বিপর্যয়ের কথা) জানালেন, তখন তিনি ’আলহামদু লিল্লাহ’ পড়লেন এবং বললেন, ’আল্লাহুল মুস্তাআন।’ অর্থাৎ আল্লাহই সাহায্যস্থল। (বুখারী ৩৬৯৩, ৬২১৬, মুসলিম ৬৩৬৫)
وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي أَنَّهُ تَوَضَّأَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ خَرَجَ فَقَالَ : لأَلْزَمَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ وَلأَكُونَنَّ مَعَهُ يَوْمِي هَذَا فَجَاءَ الْمَسْجِدَ فَسَألَ عَنِ النَّبيِّ ﷺ فَقَالُوا وجَّهَ هاهُنَا، قَالَ : فَخَرَجْتُ عَلَى أثَرِهِ أسْألُ عَنْهُ حَتّٰـى دَخَلَ بِئْرَ أَرِيسٍ، فَجَلَسْتُ عِندَ البَابِ حتَّى قَضَى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ حَاجَتَهُ وَتَوَضَّأَ فَقُمتُ إليهِ فَإِذَا هُوَ قَد جَلَسَ عَلَى بِئرِ أَرِيسٍ وَتَوَسَّطَ قُفَّهَا وَكشَفَ عَنْ سَاقَيهِ وَدَلاَّهُما في الْبِئرِ فَسَلَّمتُ عَليهِ ثمَّ انصَرَفتُ فَجَلَستُ عِندَ البَابِ فَقُلْتُ : لأَكُونَنَّ بَوَّابَ رَسُولِ اللهِ ﷺ الْيَوْمَ فَجَاءَ أَبُو بَكْرٍ فَدَفَعَ الْبَابَ فَقُلتُ : مَنْ هَذَا ؟ فَقَالَ : أَبُو بَكْرٍ فَقُلتُ : عَلَى رِسْلِكَ ثُمَّ ذَهبْتُ فَقُلتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ هَذَا أَبُو بَكْرٍ يَستَأْذِنُ فَقَالَ ائْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ فَأقْبَلْتُ حَتّٰـى قُلْتُ لأَبي بَكْرٍ : اُدْخُلْ وَرَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُبَشِّرُكَ بِالجَنَّةِ فَدَخَلَ أَبُو بَكرٍ حَتّٰـى جَلَسَ عَنْ يَمِينِ النَِّبيِّ ﷺ مَعَهُ في القُفِّ وَدَلَّى رِجْلَيْهِ في البِئْرِ كَمَا صَنَعَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَكَشَفَ عَنْ سَاقَيْهِ ثُمَّ رَجَعْتُ وَجَلَسْتُ وَقَدْ تَرَكْتُ أَخِي يَتَوَضَّأُ وَيَلْحَقُنِي فَقُلتُ : إنْ يُرِدِ اللهُ بِفُلانٍ – يُريدُ أخَاهُ – خَيْراً يَأتِ بِهِ فَإذَا إنْسَانٌ يُحَرِّكُ الْبَابَ فَقُلتُ : مَنْ هَذَا ؟ فَقَالَ: عُمَرُ بنُ الخَطّابِ فَقُلتُ : عَلَى رِسْلِكَ ثُمَّ جِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ وَقُلْتُ : هَذَا عُمَرُ يَسْتَأذِنُ ؟ فَقَالَ اِئْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ فَجِئْتُ عُمَرَ فَقُلتُ : أَذِنَ وَيُبَشِّرُكَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِالجَنَّةِ فَدَخَلَ فَجَلَسَ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ فِي القُفِّ عَنْ يَسَارِهِ وَدَلَّى رِجْلَيْهِ في البِئرِ، ثُمَّ رَجَعْتُ فَجَلَسْتُ فَقُلتُ : إنْ يُرِدِ اللهُ بِفُلاَنٍ خَيْراً – يَعْنِي أخَاهُ – يَأْتِ بِهِ فَجَاءَ إنْسَانٌ فَحَرَّكَ الْبَابَ فَقُلتُ : مَنْ هَذَا ؟ فَقَالَ : عُثْمَانُ بنُ عَفَّانَ فَقُلتُ : عَلَى رِسْلِكَ وجِئْتُ النَّبيَّ ﷺ فأخْبَرْتُهُ فَقَالَ اِئْذَنْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ مَعَ بَلْوَى تُصِيبُهُ فَجِئْتُ فَقُلتُ : اُدْخُلْ وَيُبَشِّرُكَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِالجَنَّةِ مَعَ بَلْوَى تُصيبُكَ فَدَخَلَ فَوجَدَ الْقُفَّ قَدْ مُلِئَ فَجَلَسَ وِجَاهَهُمْ مِنَ الشِّقِّ الآخَرِ قَالَ سَعيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ : فَأوَّلْتُهَا قُبُورَهُمْ متفقٌ عَلَيْهِ
وَزَادَ في رِوَايَةٍ : وَأَمَرَنِي رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِحِفظِ البَابِ وَفِيهَا : أنَّ عُثْمانَ حِيْنَ بَشَّرَهُ حَمِدَ اللهَ تَعَالَى ثُمَّ قَالَ : اللهُ المُسْتَعانُ
পরিচ্ছেদঃ কোন ভাল জিনিসের সুসংবাদ ও তার জন্য মুবারকবাদ জানানো মুস্তাহাব
(৩৪৩১)আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চারিপাশে বসেছিলাম। আমাদের সাথে আবূ বকর ও উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তথা অন্যান্য সাহাবীগণও ছিলেন। ইত্যবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝ থেকে উঠে (বাইরে) চলে গেলেন। যখন তিনি ফিরে আসতে দেরি ক’রে দিলেন, তখন আমাদের আশংকা হল যে, আমাদের অনুপস্থিতিতে তিনি (শত্রু) কবলিত না হন। এ দুশ্চিন্তায় আমরা ঘাবড়ে গেলাম এবং উঠে পড়লাম। তাঁদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সুতরাং আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। শেষ পর্যন্ত আমি আনসারদের বনূ নাজ্জারের একটি বাগানে পৌঁছে তার চতুর্দিকে ঘুরতে লাগলাম, যদি কোন (প্রবেশ) দরজা পাই। কিন্তু তার কোন (প্রবেশ) দরজা পেলাম না। হঠাৎ দেখলাম বাইরের একটি কুয়া থেকে সরু নালা ঐ বাগানের ভিতরে চলে গেছে। আমি সেখান দিয়ে জড়সড় হয়ে বাগানের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। (দেখলাম,) আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত।
তিনি বলে উঠলেন, ’’আবূ হুরাইরা?’’ আমি বললাম, ’জী হ্যাঁ, হে আল্লাহ রসূল!’ তিনি বললেন, ’’কী ব্যাপার তোমার?’’ আমি বললাম, ’আপনি আমাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অকষ্মাৎ উঠে বাইরে এলেন। তারপর আপনার ফিরতে দেরি দেখে আমরা এই দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি যে, আমাদের অনুপস্থিতিতে হয়তো আপনি (শত্রু) কবলিত হয়ে পড়বেন। যার ফলে আমরা সকলে ঘাবড়ে উঠলাম। সর্বপ্রথম আমিই বিচলিত হয়ে উঠে এই বাগানে এসে জড়সড় হয়ে শিয়ালের মত ঢুকে পড়লাম। আর সব লোক আমার পিছনে আসছে।’ তিনি আমাকে সম্বোধন ক’রে তাঁর জুতা জোড়া দিয়ে বললেন, ’’আবূ হুরাইরা! আমার এ জুতো জোড়া সঙ্গে নিয়ে যাও এবং এ বাগানের বাইরে ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পাঠকারী যে কোন ব্যক্তির সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।’’ অতঃপর সুদীর্ঘ হাদীস তিনি বর্ণনা করেছেন।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : كُنَّا قُعُوداً حَوْلَ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَمَعَنَا أَبُو بَكرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا في نَفَرٍ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مِنْ بَيْنِ أظْهُرِنَا فَأبْطَأَ عَلَيْنَا وَخَشِينَا أنْ يُقْتَطَعَ دُونَنَا وَفَزِعْنَا فَقُمْنَا فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ فَخَرَجْتُ أبْتَغِي رَسُوْلَ اللهِ ﷺ حَتّٰـى أتَيْتُ حَائِطاً لِلأَنصَارِ لِبَني النَّجَارِ فَدُرْتُ بِهِ هَلْ أجِدُ لَهُ بَاباً ؟ فَلَمْ أجِدْ فَإذَا رَبِيعٌ يَدْخُلُ في جَوْفِ حَائِطٍ مِنْ بِئْرٍ خَارِجَهُ ـ وَالرَّبِيعُ : الجَدْوَلُ الصَّغِيرُ ـ فَاحْتَفَرْتُ فَدَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ فَقُلتُ : نَعَمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَا شأنُكَ ؟ قُلْتُ : كُنْتَ بَيْنَ أظْهُرِنَا فَقُمْتَ فَأبْطَأتَ عَلَيْنَا فَخَشِينَا أنْ تُقْتَطَعَ دُونَنَا فَفَزِعْنَا فَكُنْتُ أوّلَ مَنْ فَزِعَ فَأتَيْتُ هَذَا الحَائِطَ فَاحْتَفَرْتُ كَمَا يَحْتَفِرُ الثَّعْلَبُ وَهَؤُلاَءِ النَّاسُ وَرَائِي فَقَالَ يَا أَبَا هُرَيرَةَ وَأعْطَانِي نَعْلَيْهِ فَقَالَ اذْهَبْ بِنَعْلَيَّ هَاتَيْنِ فَمَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الحَائِطِ يَشْهَدُ أنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللهُ مُسْتَيْقِنَاً بِهَا قَلْبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ وَذَكَرَ الحديثَ بطوله رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ কোন ভাল জিনিসের সুসংবাদ ও তার জন্য মুবারকবাদ জানানো মুস্তাহাব
(৩৪৩২) ইবনে শিমাসাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমর ইবনে আ’স (রাঃ) এর মরণোন্মুখ সময়ে আমরা তাঁর নিকটে উপস্থিত হলাম। তিনি অনেক ক্ষণ ধরে কাঁদতে থাকলেন এবং দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরূপ অবস্থা দেখে তাঁর এক ছেলে বলল, ’আববাজান! আপনাকে কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুক জিনিসের সুসংবাদ দেননি? আপনাকে কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুক জিনিসের সুসংবাদ দেননি?’ এ কথা শুনে তিনি তাঁর চেহারা সামনের দিকে ক’রে বললেন, আমাদের সর্বোত্তম পুঁজি হল, এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। আমি তিনটি স্তর অতিক্রম করেছি।
(এক) আমার চেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বড় বিদ্বেষী আর কেউ ছিল না। তাঁকে হত্যা করার ক্ষমতা অর্জন করাই ছিল আমার তৎকালীন সর্বাধিক প্রিয় বাসনা। যদি (দুর্ভাগ্যক্রমে) তখন মারা যেতাম, তাহলে নিঃসন্দেহে আমি জাহান্নামী হতাম।
(দুই) তারপর যখন আল্লাহ তাআলা আমার অন্তরে ইসলাম প্রক্ষিপ্ত করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হয়ে নিবেদন করলাম, ’আপনার ডান হাত প্রসারিত করুন। আমি আপনার হাতে বায়আত করতে চাই।’ বস্তুতঃ তিনি ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু আমি আমার হাত টেনে নিলাম। তিনি বললেন, ’’আমর! কী ব্যাপার?’’ আমি নিবেদন করলাম, ’একটি শর্ত আরোপ করতে চাই।’ তিনি বললেন, ’’শর্তটি কী?’’ আমি বললাম, ’আমাকে ক্ষমা করা হোক---শুধু এতটুকুই।’ তিনি বললেন, ’’তুমি কি জানো না যে, ইসলাম পূর্বের সমস্ত পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়, হিজরত পূর্বের সমস্ত পাপরাশিকে নিশ্চিহ্ন ক’রে ফেলে এবং হজ্জ্বও পূর্বের পাপসমূহ ধ্বংস ক’রে দেয়?’’
তখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা অধিক প্রিয় মানুষ আর কেউ নেই। আর আমার দৃষ্টিতে তাঁর চেয়ে সম্মানীয় ব্যক্তি আর কেউ নেই। তাঁকে সম্মান ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার অবস্থা এরূপ ছিল যে, তাঁর দিকে নয়নভরে তাকাতে পারতাম না। যার ফলে আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, ’আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গঠনাকৃতি কিরূপ ছিল?’ তাহলে আমি তা বলতে পারব না। এ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তাহলে আশা ছিল যে, আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
(তিন) তারপর বহু দায়িত্বপূর্ণ বিষয়াদির খপ্পরে পড়লাম। জানি না, তাতে আমার অবস্থা কী? সুতরাং আমি মারা গেলে কোন মাতমকারিণী অথবা আগুন যেন অবশ্যই আমার (জানাযার) সাথে না থাকে। তারপর যখন আমাকে দাফন করবে, তখন যেন তোমরা আমার কবরে অল্প অল্প ক’রে মাটি দেবে। অতঃপর একটি উট যবেহ ক’রে তার মাংস বন্টন করার সময় পরিমাণ আমার কবরের পাশে অপেক্ষা করবে। যাতে আমি তোমাদের সাহায্যে নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারি এবং আমার প্রভুর প্রেরিত ফিরিশতাদের সঙ্গে কিরূপ বাক্-বিনিময় করি, তা দেখে নিই।
وَعَنِ ابنِ شِمَاسَة قَالَ : حَضَرْنَا عَمْرَو بنَ العَاصِ وَهُوَ في سِيَاقَةِ الْمَوْتِ فَبَكَى طَوِيلاً وَحَوَّلَ وَجْهَهُ إِلَى الجِدَارِ فَجَعَلَ ابْنُهُ يَقُولُ : يَا أبَتَاهُ أمَا بَشَّرَكَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بكَذَا ؟ أمَا بَشَّرَكَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِكَذَا ؟ فَأقْبَلَ بِوَجْهِهِ فَقَالَ : إنَّ أفْضَلَ مَا نُعِدُّ شَهَادَةُ أنْ لاَ إلهَ إِلاَّ الله وَأنَّ مُحَمَّداً رَسُوْلُ اللهِ إنِّي قَدْ كُنْتُ عَلَى أطْبَاقٍ ثَلاَثٍ : لَقَدْ رَأيْتُنِي وَمَا أحَدٌ أشَدُّ بُغضاً لِرَسُولِ اللهِ ﷺ مِنِّي وَلاَ أحَبَّ إليَّ مِنْ أنْ أكُونَ قدِ اسْتَمكَنتُ مِنْهُ فَقَتَلْتُهُ فَلَوْ مُتُّ عَلَى تِلكَ الحَالِ لَكُنْتُ مِنْ أهْلِ النَّارِ فَلَمَّا جَعَلَ اللهُ الإسلاَمَ في قَلْبِي أتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ فقُلْتُ : اُبسُطْ يَمِينَكَ فَلأُبَايِعُكَ فَبَسَطَ يَمِينَهُ فَقَبَضْتُ يَدِي فَقَالَ مَا لَكَ يَا عَمْرُو ؟ قُلتُ: أَرَدتُ أنْ أشْتَرِطَ قَالَ تَشْتَرِطُ مَاذا ؟ قُلْتُ : أنْ يُغْفَرَ لِي قَالَ أمَا عَلِمْتَ أن الإِسلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأن الهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبلَهَا وَأنَّ الحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ ؟ وَمَا كَانَ أحدٌ أحَبَّ إليَّ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَلاَ أجَلَّ في عَينِي مِنْهُ وَمَا كُنْتُ أُطيقُ أَن أَملأُ عَينَيَّ مِنْهُ ؛ إِجلاَلاً لَهُ وَلَو سُئِلتُ أَن أَصِفَهُ مَا أَطَقتُ لأَنِّي لَمْ أَكُن أَملأُ عَينَيَّ مِنْهُ وَلَو مُتُّ عَلَى تِلْكَ الحَالِ لَرجَوْتُ أَن أكُونَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ ثُمَّ وَلِينَا أشْيَاءَ مَا أدْرِي مَا حَالِي فِيهَا ؟ فَإِذَا أنَا مُتُّ فَلاَ تَصحَبَنِّي نَائِحَةٌ وَلاَ نَارٌ فَإِذَا دَفَنْتُمُونِي فَشُنُّوا عَليَّ التُّرَابَ شَنّاً ثُمَّ أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قَدْرَ مَا تُنْحَرُ جَزورٌ وَيُقْسَمُ لَحْمُهَا حَتّٰـى أَسْتَأنِسَ بِكُمْ وَأنْظُرَ مَا أُرَاجعُ بِهِ رُسُلَ رَبّي رواه مسلم