পরিচ্ছেদঃ সালামের আদব সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ
আল্লাহ বলেছেন,
يَا أيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتّٰـى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلٰى أهْلِهَا
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। (সূরা নূর ২৭)
তিনি অন্যত্র বলেন,
فَإذَا دَخَلْتُمْ بُيُوْتاً فَسَلِّمُوْا عَلٰى أنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً
অর্থাৎ, যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন। (সূরা নূর ৬১)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوْهَا
অর্থাৎ, যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর। (সূরা নিসা ৮৬)
তিনি আরো বলেছেন,
هَلْ أَتَاكَ حَدِيْثُ ضَيْفِ إبْرَاهِيمَ الْمُكرَمِيْنَ، إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ
অর্থাৎ, তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ’সালাম।’ উত্তরে সে বলল, ’সালাম।’ (সূরা যারিয়াত ২৪-২৫)
(৩২৩৮) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, ’সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কী?’ তিনি বললেন, (ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا أنَّ رَجُلاً سَأَلَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ : أَيُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ ؟ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ সালামের আদব সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ
(৩২৩৯) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের একটি আলামত এই যে, লোকেরা কেবল পরিচিত লোককে সালাম দেবে।
وعن عبد الله بن مسعود قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ إِذَا كَانَتْ التَّحِيَّةُ عَلَى الْمَعْرِفَةِ
পরিচ্ছেদঃ সালামের আদব সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ
(৩২৪০) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ যখন আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। তখন তাঁকে বললেন, ’তুমি যাও এবং ঐ যে ফিরিশতামণ্ডলীর একটি দল বসে আছে, তাদের উপর সালাম পেশ কর। আর ওরা তোমার সালামের কী জবাব দিচ্ছে তা মন দিয়ে শুনো। কেননা, ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্ততির সালাম বিনিময়ের রীতি।’ সুতরাং তিনি (তাঁদের কাছে গিয়ে) বললেন, ’আসসালামু আলাইকুম’। তাঁরা উত্তরে বললেন, ’আসসালামু আলাইকা অরহমাতুল্লাহ’। অতএব তাঁরা ’অরহমাতুল্লাহ’ শব্দটা বেশী বললেন।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ ﷺ قَالَ : اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولئِكَ ـ نَفَرٍ مِنَ المَلاَئِكَةِ جُلُوسٌ ـ فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ فَإنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيتِكَ فَقَالَ : السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ فَقَالُوا : السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ فَزَادُوهُ : وَرَحْمَةُ اللهِ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ সালামের আদব সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ
(৩২৪১) আবূ উমারা বারা’ ইবনে আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি (কর্ম করতে) আদেশ করেছেনঃ (১) রোগী দেখতে যাওয়া, (২) জানাযার অনুসরণ করা, (৩) হাঁচির (ছিঁকের) জবাব দেওয়া, (৪) দুর্বলকে সাহায্য করা, (৫) নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা, (৬) সালাম প্রচার করা, এবং (৭) শপথকারীর শপথ পুরা করা।’
وَعَنْ أَبِي عُمَارَةَ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِسَبْعٍ : بِعِيَادَةِ المَرِيْضِ وَاتِّبَاعِ الجَنَائِزِ وَتَشْمِيتِ العَاطِسِ وَنَصْرِ الضَّعِيفِ وَعَوْنِ المَظْلُومِ وَإفْشَاءِ السَّلاَمِ وَإبْرَارِ المُقسِمِ متفقٌ عَلَيْهِ هَذَا لفظ إحدى روايات البخاري
পরিচ্ছেদঃ সালামের আদব সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ
(৩২৪২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে লাগবে? (তা হচ্ছে) তোমরা আপোসের মধ্যে সালাম প্রচার কর।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لاَ تَدْخُلُوا الجَنَّةَ حَتّٰـى تُؤمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتّٰـى تَحَابُّوا أوَلاَ أدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ ؟ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ সালামের আদব সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ
(৩২৪৩)আবূ ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্নদান কর, আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ এবং লোকে যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
وَعَنْ أَبي يُوسُفَ عَبدِ اللهِ بنِ سَلاَمٍ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُولُ يَا أيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الأرْحَامَ وَصَلُّوا والنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الجَنَّةَ بِسَلاَم رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح
পরিচ্ছেদঃ সালামের আদব সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ
(৩২৪৪) আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে বড় চোর সে, যে নামায চুরি করে; তার রুকূ-সিজদা পূর্ণরূপে করে না। আর সবচেয়ে বড় বখীল সে, যে সালাম দিতে বখীলি করে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْرَقُ النَّاسِ مَنْ يَسْرِقُ صَلاتَهُ لا يُتِمُّ رُكُوعَهَا وَلاَ سُجُودَهَا وَأَبْخَلُ النَّاسِ مَنْ بَخِلَ بِالسَّلامِ
পরিচ্ছেদঃ সালামের আদব সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ
(৩২৪৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে বড় অক্ষম সে, যে দু’আ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে এবং সবচেয়ে বড় কৃপণ সে, যে সালাম দিতে কৃপণতা করে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَعْجَزُ النَّاسِ مَنْ عَجَزَ فِي الدُّعَاءِ، وَأَبْخَلُ النَّاسِ مَنْ بَخِلَ بِالسَّلامِ
পরিচ্ছেদঃ সালামের আদব সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ
(৩২৪৬) তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা’ব হতে বর্ণিত, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) এর কাছে আসতেন এবং সকালে তাঁর সঙ্গে বাজার যেতেন। তিনি বলেন, ’যখন আমরা সকালে বাজারে যেতাম, তখন তিনি প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতা, স্থায়ী ব্যবসায়ী, মিসকীন, তথা অন্য কোন ব্যক্তির নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাকে সালাম দিতেন।’ তুফাইল বলেন, সুতরাং আমি একদিন (অভ্যাসমত) আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে বাজারে যেতে বললেন। আমি বললাম, ’আপনি বাজার গিয়ে কী করবেন? আপনি তো বেচাকেনার জন্য কোথাও থামেন না, কোন পণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন না, তার দর-দাম জানতে চান না এবং বাজারের কোন মজলিসে বসেনও না। আমি বলছি, এখানে আমাদের সাথে বসে যান, এখানেই কথাবার্তা বলি।’ (তুফাইলের ভুঁড়ি মোটা ছিল, সেই জন্য) তিনি বললেন, ’ওহে ভুঁড়িমোটা! আমরা সকাল বেলায় বাজারে একমাত্র সালাম পেশ করার উদ্দেশ্যে যাই; যার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, আমরা তাকে সালাম দিই।’
وَعَنِ الطُّفَيْلِ بنِ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ : أنَّهُ كَانَ يَأْتِي عَبْدَ اللهِ بنَ عُمَرَ فَيَغدُو مَعَهُ إِلَى السُّوقِ قَالَ : فَإِذَا غَدَوْنَا إِلَى السُّوقِ لَمْ يَمُرَّ عَبدُ الله عَلَى سَقَّاطٍ وَلاَ صَاحِبِ بَيْعَةٍ وَلاَ مِسْكِينٍ وَلاَ أحَدٍ إِلاَّ سَلَّمَ عَلَيْهِ قَالَ الطُّفَيْلُ : فَجِئْتُ عَبْدَ اللهِ بنَ عُمَرَ يَوْماً، فَاسْتَتْبَعَنِي إِلَى السُّوقِ فَقُلْتُ لَهُ : مَا تَصْنَعُ بِالسُّوقِ وَأنْتَ لا تَقِفُ عَلَى البَيْعِ وَلاَ تَسْأَلُ عَنِ السِّلَعِ وَلاَ تَسُومُ بِهَا وَلاَ تَجْلِسُ في مَجَالِسِ السُّوقِ ؟ وَأقُولُ : اجْلِسْ بِنَا هاهُنَا نَتَحَدَّث فَقَالَ : يَا أَبَا بَطْنٍ ـ وَكَانَ الطفَيْلُ ذَا بَطْنٍ ـ إنَّمَا نَغْدُو مِنْ أجْلِ السَّلاَمِ فنُسَلِّمُ عَلَى مَنْ لَقِيْنَاهُ رواه مالك في المُوطَّأ بإسنادٍ صحيح