পরিচ্ছেদঃ গীবত (পরনিন্দা, পরচর্চা) হারাম

মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَلاَ يَغْتَبْ بَعضُكُمْ بَعْضاً أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتاً فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ

অর্থাৎ, তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশ্ত ভক্ষণ করতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজুরাত-৪৯: ১২)


(২৯৬৮) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে? লোকেরা বলল, ’আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা। বলা হল, ’আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কী? (সেটাও কি গীবত হবে?)’ তিনি বললেন, ’’তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গীবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা ক’রে) বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে।

وَعَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ ؟ قَالَوا : اَللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ قِيلَ : أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ ؟ قَالَ إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدْ بَهَتَّهُ رواه مسلم

وعن ابـي هريرة ان رسول الله ﷺ قال اتدرون ما الغيبة ؟ قالوا : الله ورسوله اعلم قال ذكرك اخاك بما يكره قيل : افرايت ان كان في اخي ما اقول ؟ قال ان كان فيه ما تقول فقد اغتبته وان لم يكن فيه ما تقول فقد بهته رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৭/ আদব

পরিচ্ছেদঃ গীবত (পরনিন্দা, পরচর্চা) হারাম

(২৯৬৯) আবূ বকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী হজ্জে মিনায় ভাষণ দানকালে বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল এবং তোমাদের সম্ভ্রম তোমাদের (আপসের মধ্যে) এ রকমই হারাম, যেমন তোমাদের এ দিনের সম্মান তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের এ শহরে রয়েছে। শোন! আমি কি পৌঁছে দিলাম?

وَعَنْ أَبِـيْ بَكْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ فِي خُطْبَتِهِ يَوْمَ النَّحْرِ بِمِنًى فِي حَجَّةِ الوَدَاعِ إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هٰذَا، فِي شَهْرِكُمْ هٰذَا، فِي بَلَدِكُمْ هٰذَا، أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ متفق عَلَيْهِ

وعن ابـي بكرة ان رسول الله ﷺ قال في خطبته يوم النحر بمنى في حجة الوداع ان دماءكم واموالكم واعراضكم حرام عليكم كحرمة يومكم هذا، في شهركم هذا، في بلدكم هذا، الا هل بلغت متفق عليه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বাকরা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৭/ আদব

পরিচ্ছেদঃ গীবত (পরনিন্দা, পরচর্চা) হারাম

(২৯৭০) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম, ’আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, ’’তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!’’

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। তিনি বললেন, ’’কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্ত হই, এটা আমি আদৌ পছন্দ করি না।’’ (আহমাদ ৩/২২৪,আবূ দাউদ ৪৮৭৭, তিরমিযী ২৫০২, সহীহ আবূ দাউদ ৪০৮২, সহীহ সনদে)

مَزَجَته এর ভাবার্থ হল, তার সাংঘাতিক দুর্গন্ধ ও নিকৃষ্টতার কারণে সমুদ্রের পানিতে মিশে তার স্বাদ অথবা গন্ধ পরিবর্তন ক’রে দেয়। এই উপমাটি গীবত নিষিদ্ধ হওয়া ও তা থেকে সতর্কীকরণের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও পরিণত বাক্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الهَوَى إنْ هُوَ إِلاَّ وَحْيٌ يُوحَى

অর্থাৎ, (আমার নবী) মনগড়া কথা বলে না, (সে যা কিছু বলে) তা প্রত্যাদেশকৃত অহী ব্যতীত আর কিছুই নয়। (সূরা নাজম ৩-৪)

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ : قُلْتُ لِلنَّبِيِّ ﷺ حَسْبُكَ مِنْ صَفِيَّةَ كَذَا وَكَذَا قَالَ بَعْضُ الرُّوَاةِ : تَعْنِي قَصِيرَةً فقَالَ لَقَدْ قُلْتِ كَلِمَةً لَوْ مُزِجَتْ بِمَاءِ البَحْرِ لَمَزَجَتْهُ قَالَتْ : وَحَكَيْتُ لَهُ إِنْسَاناً فَقَالَ مَا أُحِبُّ أنِّي حَكَيْتُ إِنْسَاناً وَإِنَّ لِي كَذَا وَكَذَا رواه أَبُو داود والترمذي وقَالَ حديث حسن صحيح

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت : قلت للنبي ﷺ حسبك من صفية كذا وكذا قال بعض الرواة : تعني قصيرة فقال لقد قلت كلمة لو مزجت بماء البحر لمزجته قالت : وحكيت له انسانا فقال ما احب اني حكيت انسانا وان لي كذا وكذا رواه ابو داود والترمذي وقال حديث حسن صحيح

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৭/ আদব

পরিচ্ছেদঃ গীবত (পরনিন্দা, পরচর্চা) হারাম

(২৯৭১) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন আমাকে মি’রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল নুচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন করলাম, ওরা কারা? হে জিবরীল! তিনি বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের মাংস ভক্ষণ করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত। (আহমাদ ৩/২২৪, সহীহ আবূ দাউদ ৪০৮২, সহীহ তারগীব ২৮৩৯)

وَعَنْ أَنسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَمَّا عُرِجَ بي مَرَرْتُ بِقَومٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ : مَنْ جِبرِيلُ هَؤُلاَءِ يَا؟ قَالَ : هَؤُلاَءِ الَّذِينَ يَأكُلُوْنَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ رواه أَبُو داود

وعن انس قال : قال رسول الله ﷺ لما عرج بي مررت بقوم لهم اظفار من نحاس يخمشون وجوههم وصدورهم فقلت : من جبريل هولاء يا؟ قال : هولاء الذين ياكلون لحوم الناس ويقعون في اعراضهم رواه ابو داود

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৭/ আদব

পরিচ্ছেদঃ গীবত (পরনিন্দা, পরচর্চা) হারাম

(২৯৭২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ অন্য মুসলিমের উপর হারাম।

وَعَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ كُلُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِمِ حَرَامٌ : دَمُهُ وَعِرْضُهُ وَمَالُهُ

وعن ابـي هريرة ان رسول الله ﷺ قال كل المسلم على المسلم حرام : دمه وعرضه وماله

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৭/ আদব

পরিচ্ছেদঃ গীবত (পরনিন্দা, পরচর্চা) হারাম

(২৯৭৩) আবূ বার্যাহ আসলামী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ’’হে সেই মানুষের দল; যারা মুখে ঈমান এনেছে এবং যাদের হৃদয়ে ঈমান স্থান পায়নি (তারা শোন)! তোমরা মুসলিমদের গীবত করো না এবং তাদের দোষ খুঁজে বেড়ায়ো না। কারণ, যে ব্যক্তি তাদের দোষ খুঁজবে, আল্লাহ তার দোষ ধরবেন। আর আল্লাহ যার দোষ ধরবেন তাকে তার ঘরের ভিতরেও লাঞ্ছিত করবেন।’’ (আহমাদ ৪/৪২০, আবূ দাউদ ৪৮৮২, আবূ য়্যা’লা, সহীহুল জামে’ ৭৯৮৪)

عَنْ أَبِى بَرْزَةَ الأَسْلَمِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِى بَيْتِهِ

عن ابى برزة الاسلمى قال قال رسول الله ﷺ يا معشر من امن بلسانه ولم يدخل الايمان قلبه لا تغتابوا المسلمين ولا تتبعوا عوراتهم فانه من اتبع عوراتهم يتبع الله عورته ومن يتبع الله عورته يفضحه فى بيته

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৭/ আদব

পরিচ্ছেদঃ গীবত (পরনিন্দা, পরচর্চা) হারাম

(২৯৭৪) বারা’ বিন আযেব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সুদ (খাওয়ার পাপ হল) ৭২ প্রকার। যার মধ্যে সবচেয়ে ছোট পাপ হল মায়ের সাথে ব্যভিচার করার মত! আর সবচেয়ে বড় (পাপের) সুদ হল নিজ (মুসলিম) ভাইয়ের সম্ভ্রম নষ্ট করা।

عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرِّبا اثْنانِ وَسَبْعُونَ بَاباً أدْنَاهَا مِثْلُ إِتْيانِ الرَّجُلِ أُمَّهُ وَإِنَّ أَرْبَى الرِّبَا اسْتِطالَةُ الرَّجُلِ فِي عَرْضِ أَخِيهِ

عن البراء بن عازب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الربا اثنان وسبعون بابا ادناها مثل اتيان الرجل امه وان اربى الربا استطالة الرجل في عرض اخيه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৭/ আদব

পরিচ্ছেদঃ গীবত (পরনিন্দা, পরচর্চা) হারাম

(২৯৭৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের চোখে কুটা দেখতে পায়, কিন্তু নিজের চোখে গাছের গুঁড়ি দেখতে ভুলে যায়!

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ يَبْصُرُ أَحَدُكُمُ الْقَذَى في عَيْنِ أَخِيهِ وَيَنْسَى الْجِذْعَ في عَيْنِهِ

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم يبصر احدكم القذى في عين اخيه وينسى الجذع في عينه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৭/ আদব
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে